চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা পর্ব-৩৫+৩৬

0
583

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৫
____________

মিতুল বারান্দায় বসে গুনগুন করছিল। এর মাঝেই দেখলো জোহানের গাড়ি প্রবেশ করছে বাড়ির ভিতর। কিছুক্ষণ আগেই তো জোহান ক্লাবে যাবে বলে বেরিয়ে গেল! তাহলে আবার ফিরে এলো কেন?
মিতুল ব্যাপারটা বুঝতে দৌঁড়ে নিচে চলে এলো। প্রবেশ দরজার সামনে মুখোমুখি হলো জোহানের।

“কী ব্যাপার? তুমি না ক্লাবে যাবে বলে বের হলে, তাহলে ফিরে এলে কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“হ্যাঁ। আমার যে সকল বন্ধুদের ক্লাবে যাওয়ার কথা ছিল, তার ভিতরে একজনের এক্সিডেন্ট হয়েছে!”

মিতুল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বলে উঠলো,
“এক্সিডেন্ট? কার এক্সিডেন্ট হলো? তার অবস্থা কি মারাত্মক?”

জোহান একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
“ওহ মিতুল, তুমি তো এমন করে বলছো যেন আমার ফ্রেন্ড বিমান এক্সিডেন্ট করেছে। ওর কোনো গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়নি। সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছে।”

“সাইকেল?”

জোহান হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

মিতুল জিজ্ঞেস করলো,
“আঘাত পায়নি সে?”

“হাত একটুখানি ছিলে গেছে।”

মিতুল দুঃখ প্রকাশ করলো,
“আহারে! ওনার জন্য…”

“মিতুল…” মিতুলের কথার মাঝে রেশমী সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ডেকে উঠলো ওকে।

মিতুল থেমে গেল। ডাক অনুসরণ করে সিঁড়ির দিকে তাকালো।

“আমার রুমে এসো।” রেশমী মিতুলকে রুমে আসতে বলে চলে গেলেন।

ভয়ের দানা জমতে শুরু করলো মিতুলের মনে। রেশমী আন্টি কেন ডাকছে? জোহানের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে সেজন্য?
মিতুল জোহানকে বললো,
“আচ্ছা, তোমার কী মনে হয়? তোমার মম কেন ডাকছে আমাকে?”

“কেন ডাকছে সেটা আমি জানবো কী করে? গিয়ে দেখো।” কণ্ঠে বিরক্তি ঝরিয়ে চলে গেল জোহান।

মিতুলের নিজের উপর নিজের বিরক্ত লাগছে। কী দরকার ছিল বারান্দা থেকে এখানে এসে জোহানের সাথে কথা বলার? রেশমী আন্টি ডেকে নিয়ে কী বলবেন এখন? ও নিশ্চিত এতক্ষণ জোহানের সাথে কথা বলছিল সে ব্যাপারেই কিছু বলবে রেশমী আন্টি।
মিতুল ভয়ে ভয়ে রেশমী আন্টির রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভয় করছে ওর। বুঝতে পারছে না এত ভয় পাচ্ছে কেন! এখানে ভয় পাওয়ার কী আছে? রেশমী আন্টি যদি সত্যিই এই ব্যাপার নিয়েই কিছু বলে, তবে মুখের উপর জবাব দেবে। বলবে,
“জোহানের সাথে কথা বলা কি আমার অপরাধ? একটা মানুষের সাথে কথা বলা অপরাধ হিসেবে গণ্য হলো কবে? কে এই অপরাধের উদ্ভাবন করেছে? তুমি?”

হ্যাঁ, বলে দেবে মুখের উপর। মিতুল আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। মিতুল নিশ্চিত ছিল রেশমী আন্টি জোহানকে নিয়ে প্রশ্ন করবে। কেন কথা বলেছে, কী কথা বলেছে এসব জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু রেশমী আন্টি তা করলেন না। তিনি বললেন,
“কানাডা এসে আমাদের বাড়িতে থাকতে, তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো মিতুল?”

রেশমী আন্টির প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল মিতুল। ও কী ভাবলো আর রেশমী আন্টি কী বললো! এত দিন পর এ কী প্রশ্ন করছেন রেশমী আন্টি? কানাডা এসেছে কতদিন হয়ে গেছে। এখন এতগুলো দিন পর এই প্রশ্ন করছে রেশমী আন্টি? কিন্তু হঠাৎ কেন জিজ্ঞেস করছে এসব কথা? এর কী উত্তর দেবে এখন? মিতুল মনে মনে কথা সাজিয়ে ফেললো। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“অসুবিধা! অসুবিধা হবে কেন? আমার তো এখানে থাকতে এমন একটা ফিল হচ্ছে, যেন আমি নিজ বাড়িতে আছি। মোটেই অসুবিধা হচ্ছে না আমার।”

মিতুল মনে মনে নিজেকে বাহবা না দিয়ে পারলো না। বললো,
‘বাহ, মিতুল বাহ। এক্সট্রা লবণ দিয়ে খুব সুন্দর বুঝই তো দিতে পারিস তুই।’
মনে মনে হাসলো মিতুল।

রেশমী আন্টি ওয়ার্ডোবের দিকে এগিয়ে গেলেন। দুটো চকলেট বক্স এবং একটা সাইড ব্যাগ বের করে মিতুলের কাছে এলেন। চকলেট এবং ব্যাগ মিতুলের হাতে দিয়ে বললেন,
“ব্যাগটা পছন্দ হয়েছিল। তাই তোমার জন্য কিনে আনলাম। পছন্দ হয়েছে তোমার?”

রেশমী আন্টির ব্যবহারে আবেগে জর্জরিত হলো মিতুল। রেশমী আন্টি ওর জন্য ব্যাগ, চকলেট কিনেছে? মিতুল আপ্লুত কণ্ঠে বললো,
“থ্যাঙ্ক ইউ আন্টি। খুব খুব পছন্দ হয়েছে আমার।”

রেশমী আন্টি হেসে চুমু খেলো মিতুলের কপালে। রেশমী আন্টির প্রতি যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিমেষে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল মিতুলের। এত ভালো একজন মানুষকে ও কালকে খারাপ ভেবেছিল। ছি! নিজের ভাবনার প্রতি নিজেরই রাগ হচ্ছে এখন।

______________

আজকের দিনটি ফুরফুরা ধরণের লাগছে মিতুলের। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। গাছে গাছে চোখ জুড়ানো ফুলের সমারোহ। আর সেই সাথে আবার রঙিন প্রজাতির ওড়া উড়ি। সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ওখানে আবার ওক গাছের ডালে নীল পালকের একটি পাখি লেজ নাড়াতে নাড়াতে কণ্ঠে মিষ্টি সুর তুলে ডাকছে। মিতুলের কাছে বেশ লাগছে কিন্তু পাখির ডাকটা। মিতুল মোবাইল বের করে ছবি তুললো পাখিটার। পাখিটা সেই অনেকক্ষণ ধরে এখানে বসে আছে। উড়ে যাচ্ছে না। মিতুলের মনে হচ্ছে ওকে সঙ্গ দিতেই বসে আছে পাখিটা। বাহ! এই কানাডার পাখি গুলোও দেখছে খুব বুদ্ধিমান। মিতুল এসে দোলনায় বসলো।
সকাল বেলা উঠে একবার এই গার্ডেনে এলেই মন ভালো হয়ে যায় ওর। যদিও কালকে থেকে ওর মন খুব ভালোই আছে। জোহান ওর জন্য আতশবাজির ব্যবস্থা করেছিল, সেটা ভাবতেই বার বার পুলকিত হয় ও। তাছাড়া রেশমী আন্টি যে আচরণ করলো কাল। রেশমী আন্টির এতগুলো দিনের মধ্যে সব থেকে বেশি আন্তরিক আচরণ বোধহয় কালই ছিল। কালকের পর থেকে রেশমী আন্টির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আরও বেড়ে গেছে ওর। সত্যিই খুব ভালো রেশমী আন্টি! তার দেওয়া চকলেট খেয়ে টেস্ট করেছে রাতে। বেশ ইয়াম্মি চকলেট! মিতুলের হঠাৎ ইচ্ছে হলো জোহানকেও এই মজাদার চকলেট খেতে দেয়। আচ্ছা জোহান এখন কোথায় আছে? মিতুল ঘাড় ঘুরিয়ে জঙ্গলের দিকে তাকালো। জোহান সম্ভবত এখন জঙ্গলের ভিতর নিজের টাইম হাউজে আছে। কারণ, রুমে দেখেনি জোহানকে। মিতুল বুঝতে পারে না বাড়ি ছেড়ে টাইম হাউজে থাকায় কী এমন মজা আছে? একা একা একটি ঘরে কার ভালো লাগে থাকতে? জোহান কীভাবে থাকে? ও হলে জীবনেও থাকতে পারতো না।
মিতুল দোলনা থেকে নেমে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে জঙ্গলের রাস্তা ধরলো।
হাঁটতে হাঁটতে এসে গেল জোহানের টাইম হাউজে। এসে বেশ অবাকই হলো আজকে। জোহানের টাইম হাউজের দরজা পুরোপুরি খোলা। এর আগে যতবার এসেছে, ততবারই দেখেছে দরজা বন্ধ। আজকে দরজা খুলে রেখেছে যে, কাহিনী কী?
মিতুল কোনো শব্দ না করেই ধীর পা ফেলে ঢুকলো জোহানের টাইম হাউজের ভিতর।
কিচেন থেকে জোহান এবং আরও একটা পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে আসছে। কণ্ঠটি বেশ পরিচিত পরিচিত ঠেকছে। কার কণ্ঠ? মিতুল ধীর পায়েই এগিয়ে এলো কিচেনের দিকে। কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখলো জোহানের সাথে সাদাত আঙ্কল। সাদাত আঙ্কলকে দেখে অবাক হলো মিতুল। সাদাত আঙ্কল? সাদাত আঙ্কলের কণ্ঠ চিনতে পারেনি ও? মিতুলের নিজেকে এই মুহূর্তে অকর্মণ্য মনে হলো। সাদাত আঙ্কলের কণ্ঠ কীভাবে না চিনে পারে ও? মিতুল কিছুক্ষণ চুপি চুপি তাকিয়ে রইল বাবা-ছেলের দিকে। বাবা ছেলে মিলে অমলেট তৈরি করছে। ভীষণ হাসাহাসি চলছে দুজনের মাঝে। বাহ! সুন্দর একটা দৃশ্য! ও এসেছে তা কেউ টের পায়নি। চায়ও না আর টের পাক ও এসেছে। বাবা এবং ছেলের ভালোবাসার মাঝে নিজেকে ঢোকানো একেবারেই অনুচিত মনে হচ্ছে ওর কাছে। মিতুল চুপি চুপি বেরিয়ে এলো টাইম হাউজ থেকে। মনে হচ্ছে সাদাত আঙ্কল নিজের ছেলেদের প্রতি ভীষণ যত্নশীল। খুব ভালোবাসে ছেলেদেরকে। তা না হলে এত ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে এমন ভাবে সময় দিতো?
মিতুল টাইম হাউজ থেকে কিছুটা দূর চলে আসতেই পিছনে খুবই ছোট করে শুনতে পেল জোহানের ডাক,
“হেই তুলতুল!”

মিতুলের পা না চাইতেই দাঁড়িয়ে গেল। জোহান কীভাবে টের পেল ও এখানে এসেছে? ও তো কোনো শব্দ করেনি টাইম হাউজে থাকতে।

জোহান দৌঁড়ে এলো মিতুলের কাছে।
“হেই, আমাকে না জানিয়ে চুপিচুপি চলে যাচ্ছ কেন আমার টাইম হাউজ থেকে?”

“তুমি তোমার ড্যাডের সাথে ছিলে, তাই ভাবলাম তোমাদের ডিস্টার্ব না করি।”

“বুঝলাম। কিন্তু তুমি এসেছিলে কেন আমার টাইম হাউজে?”

মিতুল হকচকিয়ে গেল। কেন এসেছিল ও জোহানের এখানে? নিজেই তো জানে না সঠিক। জোহানকে কী বলবে?
মিতুল কিছু বলার আগে জোহানই বলে উঠলো,
“আমাকে ছাড়া থাকতে পারছিলে না, তাই না? মিস করছিলে খুব, তাই না?”

জোহানের কথা শেষ হতে না হতেই মিতুল বললো,
“মোটেই না। তোমাকে মিস করবো কেন? তোমার টাইম হাউজে একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি আমি। সেটাই খুঁজতে এসেছিলাম।”

“ও আচ্ছা। একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছিলে আমার টাইম হাউজে? তো কী জিনিস হারিয়ে ফেলেছো তুমি? নিজের মন?”

মিতুলের হৃদপিণ্ড যেন আচমকা দুলে উঠলো। হার্টবিট বাড়তে শুরু করলো দ্রুত। আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না জোহানের সামনে। এখনই বাড়ি চলে যাবে এখান থেকে।
মিতুল ঘুরে হাঁটা দিলেই জোহান এসে পথ আটকে ধরলো।
“কী হলো? কিছু না বলে চলে যাচ্ছ কেন? বলো, কী হারিয়ে ফেলেছো তুমি এখানে?”

মিতুল টের পাচ্ছে ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জোহানের সামনে কিছুতেই আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। মিতুল কিছু না বলে জোহানকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া দিলো।
জোহান আবারও বাঁধা দিলো ওকে। রুখে গেল ওর পা। জোহান একটু ঝুঁকে বললো,
“ব্যাপার কী মিতুল, বলো তো? আজকে এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছ কেন তুমি?”
জোহানের প্রশ্নের কোনো উত্তর এলো না মিতুলের থেকে। জোহান বললো,
“আচ্ছা, যাক বাদ দিই এসব। শোনো, কালকে তো ক্লাবে যাওয়া হয়নি। তাই আজকে ক্লাবে যাচ্ছি আমি। ক্লাবের কোনো মেয়ের সাথে ছবি তুলে, তোমাকে পাঠানোর দুঃসাহস কি দেখতে পারি আমি? না কি…”

মিতুল জোহানের কথার মাঝেই বলে উঠলো,
“তোমার যা খুশি তাই করো।”
বলেই পাশ কাটিয়ে দৌঁড়ে চলে এলো মিতুল।

জোহান পিছন থেকে ডাকলো,
“হেই তুলতুল! তুমি তো দেখছি সত্যিই পালিয়ে যাচ্ছ। কেন? আমার থেকে পালাচ্ছো কেন? আমাকে মিস করো বলেই তো এসেছিলে, তাহলে আবার পালিয়ে যাচ্ছ কেন?”

______________

আব্বুর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল মিতুলের। এর মাঝেই নিচ থেকে ভেসে আসে রেশমী আন্টির উচ্চৈঃকণ্ঠস্বর। মিতুল প্রথমে গ্রাহ্য করতে চাইলো না সেসব। কিন্তু রেশমী আন্টির চ্যাঁচানো গলা থেকে থেকে ভেসে আসছিল কানে। এবার আর গ্রাহ্য না করে পারলো না মিতুল। ভয় হলো ওর। হঠাৎ কী হলো যে রেশমী আন্টি এমন চ্যাঁচামেচি করছেন?
মিতুল আব্বুকে বললো,
“আব্বু আমি পরে ফোন করবো তোমায়। নিচে একটা জরুরি কাজ আছে আমার। এখন রাখি আমি।”

মিতুল আব্বুকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। তারপর দ্রুত পায়ে ছুটে এলো। হলরুমে নামার আগে ওর পা সিঁড়িতেই থমকে গেল। প্রথমেই চোখ পড়লো জোহানের উপর। রেশমী আন্টির সামনে কিছুটা মাথা নত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে জোহান। মাথা একটু নুইয়ে রাখলেও হলরুমের আলোক বাতিতে ওর মুখ দেখা যাচ্ছে। মুখের জায়গায় জায়গায় লাল দাগের উপস্থিতি! মিতুলের অন্তর কেঁপে উঠলো! আবারও মার খেয়েছে জোহান?

(চলবে)

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৬
____________

হলরুমে সবাই উপস্থিত। রেশমী, সাদাত, জায়িন, ক্যামিলা সবাই। রাবার্তা নেই। নিজ বাড়িতে গিয়েছে সন্ধ্যা নাগাদ। রেশমীর সামনে নত মুখে দাঁড়িয়ে আছে জোহান। সাদাত কিছুটা ওদিকে সরে দাঁড়ানো। জায়িনও কিছুটা দূরে। এর মাঝে সবাই চুপ, কেবল রেশমী উচ্চ গলায় কথা শোনাচ্ছে জোহানকে। তার মেজাজ অতিরিক্ত খারাপ। আজকে আবার মারামারি করেছে জোহান। তাও আবার জনবহুল স্থানে। ভাগ্যিস ক্লাবে একজন পরিচিত ব্যক্তি মারামারিটা গুরুতর হওয়ার আগেই ইনফর্ম করেছিল তার কাছে। ক্লাবে মারামারির খবরটা পেয়েই ক্লাবে গিয়ে ক্যামিলা নিয়ে এসেছে জোহানকে। নয়তো এই মারামারির জন্য আজকে পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত যেতে হতো। ছেলেটা দিনকে দিন এত উগ্র হয়ে যাচ্ছে যে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে।

মিতুল এখনও সিঁড়ির বাকি ধাপগুলো অতিক্রম করে হলরুমে পা ফেলেনি। সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে আছে। চোখ জোড়াতে ভয়, আতঙ্ক ছেয়ে আছে। আর সেই সাথে মায়ার আনাগোনা। মায়া হচ্ছে ওর জোহানের জন্য। জোহানের মার খাওয়া চেহারা দেখে কষ্ট হচ্ছে ওর। বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। কেন যেন সহ্যই করতে পারছে না। এতক্ষণ জোহানের চেহারাতেই ডুবে ছিল মিতুল। রেশমী আন্টির তির্যক কণ্ঠে জাগতিক হুঁশে ফিরে এলো এবার।

রেশমী আন্টি জোহানকে তিরিক্ষি, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলছেন,
“তুমি কি শপথ নিয়েছো যে তুমি জীবনেও শুধরাবে না, সারাজীবন উশৃঙ্খল আর উগ্রই থাকবে? আর কত? আর কতবার এমন করবে তুমি? বার বার নিষেধ করেছি তোমায়। তোমাকে বলেছিলাম না ওরা যত যাই করুক না কেন তুমি চুপ থাকবে সব সময়? ওরা মারলে চুপচাপ হজম করবে সেটা। তাহলে ওরা নিজেরাই এক সময় অতিষ্ট হয়ে তোমায় বিরক্ত করা বন্ধ করে দেবে। তুমি…”

“তাই মম? এটাই বলেছিলে তুমি আমাকে?”
জোহান মমের কথার মাঝেই কথা বলে উঠলো। নিচু করে রাখা মাথা তুলে মমের দিকে তাকালো সরাসরি।

“নয়তো কী বলেছিলাম? বার বার এটাই বুঝিয়েছি তোমাকে। কিন্তু না, তোমাকে এটা বুঝিয়ে বলেও কোনো লাভ হলো না। তুমি শোনোনি আমার কথা। তুমি তো কথা শোনার ছেলে নও। তুমিও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে বেড়াচ্ছ ওদের। তুমি নিজেই একবার ভেবে দেখো জোহান, কতটা উশৃঙ্খল জীবনযাপন করছো তুমি। তোমার এই মারামারির ঝামেলার জন্য পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে গেছো তুমি আমাদের। বলো, এত উগ্র, বাজে কেন হয়েছো তুমি? তোমার এমন উশৃঙ্খলতার জন্য একদিন লোকের কাছেই মুখ দেখানো দায় হয়ে পড়বে আমাদের!”

জোহান ম্লান হাসলো। ওর দৃষ্টি এখনও মমের উপর নিবদ্ধ। লাল হয়ে থাকা চোখ দুটোতে হঠাৎ পানি এসে ভীড় জমালো ওর। বললো,
“আমার এমন জীবন-যাপন করার জন্য তুমি নিজেই কি দায়ী নও মম? উগ্র! বাজে! আমি তো এমন ছিলাম না মম। হয়ে গেছি হঠাৎ করে। নিজ ইচ্ছাতেই হয়ে গিয়েছি।”
বিরতি নিলো জোহান। তারপর বললো,
“…’আমি চুপ থাকলে ওরা এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দেবে’ হ্যাঁ, এই কথা তুমি বলেছিলে আমায়। কিন্তু সেটা আগের কথা ছিল তোমার। এরপর তো অন্য কিছু বলেছিলে তুমি। তোমার এর পরের কথা ছিল,
“…’নিজের ঝামেলা নিজে মেটাতে পারো না তুমি? তোমার এই ঝামেলা নিয়ে বসে থাকার মতো সময় আমার হাতে নেই। ওরা তোমাকে মারে, তুমি পারো কী? এরপর আর কোনো কমপ্লেইন করবে না আমার কাছে। নিজেরটা নিজে বুঝে নাও’। এটাই তো বলেছিলে তুমি।”

রেশমী ছেলের কথা শুনে বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে গেল। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। তার ছেলে এগারো বছর আগে, তার বলা কথাকে হুবহু অনুকরণ করেছে। এগারো বছর আগে ছেলেকে এই কথাগুলো বলেছিল সে। জোহান এই কথাগুলো এগারো বছর ধরে ঠিকঠাক মনে রেখেছে!

“তোমার ওই কথার জন্যই আমি পাল্টে গিয়েছি মম। অন্যরকম হয়ে গিয়েছি আমি। আগের জোহানের থেকে পুরো ভিন্ন। আগের জোহান কেমন ছিল? শান্ত, নম্র, ভদ্র। সব সময় নীরব শান্তশিষ্ট থাকতো। কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলতেও হাজার বার ভাবতো।
আর আজকের জোহান? তোমার ওই কথার জন্যই আগের সেই শান্ত, নীরব জোহানের থেকে আজকের এই জোহান সৃষ্টি হয়েছে। তোমার ওই কথার পর থেকেই বেশ চঞ্চল হয়ে উঠেছি আমি। তোমাদের ভাষায় ‘উগ্র এবং উশৃঙ্খল’!
ঠিক আছে মম, তোমার পরের কথা না হয় বাদ দিলাম। আগের কথাটাই ধরি। আমি চুপ থাকলে ওরা আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দেবে। হ্যাঁ চুপই তো ছিলাম আমি। দিনের পর দিন মার খেয়েও মাথা তুলে একটা কথা বলিনি ওদের। কিন্তু কী হয়েছিল তাতে? ওরা কি আমাকে মারা বন্ধ করে দিয়েছিল? না। বরং আরও সুযোগ পেয়ে বসেছিল। আর সুযোগটা মূলত তুমিই সৃষ্টি করে দিয়েছিলে। প্রথম প্রথম যখন আমি তোমাকে এসে বলেছিলাম, স্কুলের কিছু ছেলেরা বাজে বিহেভ করে আমার সাথে। তখন তুমি গ্রাহ্য করলে না সেসব। বললে, ‘ওরকম হতেই পারে। মানিয়ে নাও।’
ধীরে ধীরে যখন ওরা আরও বাজে হয়ে উঠলো। মারলো আমাকে। তখন বললে, ‘দুই একটা চড় থাপ্পড়ে কী হয়? চুপচাপ মার খাও। তোমার নীরবতা দেখে বিরক্ত হয়ে ওরা নিজেরাই চলে যাবে।’
বেশ, তোমার কথা মতো থাকলাম আমি চুপ। নিয়ম করে চুপ থাকলাম, নিয়ম করে মার খেলাম, অপদস্থ হলাম, আর নিয়ম করে তোমার কাছে কমপ্লেইন জানাতে থাকলাম। আর তুমিও নিয়ম করে তোমার ধরা বাঁধা কথাগুলো শোনাতে লাগলে বিরক্ত কণ্ঠে।”
এই পর্যন্ত বলে থামলো জোহান।

মিতুলের মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কী শুনছে এসব?

জোহান আবার বলতে শুরু করলো,
“একটা বাচ্চা স্কুল বুলিংয়ের স্বীকার হলে তার পাশে সবার আগে কে থাকে? তার পরিবার থাকে। তুমি কি আমার পাশে ছিলে মম? তুমি সব কিছু জানার পরেও কি কোনো দিন জানতে চেয়েছিলে আমার স্কুলে থাকাকালীন সময়গুলো কীভাবে পার হয়? তুমি কি কোনো দিন বুঝতে চেষ্টা করেছিলে আমার মানসিক অবস্থা? তুমি কি কখনো একটু খোঁজ নিয়েছিলে, আমি ভালো আছি কি না? বুলিংয়ের জন্য তুমি কি কোনো দিন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলে? কোনো টিচারের সাথে কথা বলেছিলে এ ব্যাপারে? আমি ছোট হয়েও এটা বুঝতাম যে, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে এটা জানানো উচিত। বার বার তোমাকে অভিযোগ করতে বলতাম আমার স্কুলে। এই প্রব্লেমটা সলভ করে দিতে বলতাম তোমাকে। কিন্তু তুমি কিছুই করোনি! কিছু করবে কীভাবে, তুমি তো আমার সাথে হওয়া বুলিংয়ের ব্যাপারটাকে কোনো দিন গুরুত্বই দাওনি! এমনকি এ ব্যাপারে আমার ড্যাডকে জানতেও নিষেধ করে দিয়েছো আমায়। ড্যাড তো অফিস নিয়েই ব্যস্ত থাকতো সারাদিন। খুব কমই সে অবসর সময় কাটাতো। রাতে ড্যাড বাড়িতে ফিরতো। আর তুমি বিকেলেই নিষেধ করে দিতে যেন ড্যাডের কানে আমার স্কুল সম্পর্কিত কিছুই না পৌঁছায়। আমিও বলতাম না কিছু ড্যাডকে। চাইতাম না ড্যাড সারাদিন কাজ করে এসে আবার এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করুক। ড্যাড আমার মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখে কিছু জিজ্ঞেস করলে নানা ভাবে মিথ্যা বলে আমি কাটিয়ে নিতাম ব্যাপারটা। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, আমি চাইতাম না আমার এই ব্যাপারটা ড্যাড সলভ করুক। আমি সবসময় সব কিছুতে তোমাকে আমার পাশে চাইতাম। চেয়েছিলাম তুমি সলভ করো এই ব্যাপারটা। কিন্তু তুমি বড্ড উদাসী ছিলে আমার প্রতি। আমার কোনো কিছুতেই আগ্রহ দেখাতে না তুমি। গ্রাহ্য করতে না! আমি বলেছিলাম যদি আমার স্কুলে এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা না করো, তবে অন্য একটা স্কুলে ট্রান্সফার করো আমায়। তুমি সেটাও করোনি। তুমি ছোটবেলা থেকেই খুব উদাসী ছিলে আমার প্রতি! কেন মম? কেন এরকম করতে তুমি আমার সাথে?”

জায়িনের আর সহ্য হলো না জোহানের এসব। ও বিরক্ত হয়ে এগিয়ে এলো জোহানের কাছে। বললো,
“এনাফ জোহান। যথেষ্ট বলেছিস। অভদ্রতা বাইরে গিয়ে দেখা। মমের সাথে এমন উচ্চ গলায় কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে তোকে?”

হঠাৎ করে ওর এবং মমের মাঝে জায়িনের আগমন জোহানেরও সহ্য হলো না। ও প্রায় গর্জে উঠে বললো,
“তুমি চুপ করো ব্রাদার। আমি আমার মমের সাথে কথা বলছি। এমন একটা ভাব করো না যেন, মম শুধু তোমার একার।”

রেশমী এতক্ষণে কথা বলে উঠলো।
“বড়ো ভাইয়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না সেটা? সেটাও কি ভুলে গেছো তুমি?”

জোহান বললো,
“বাহ, মম! ব্রাদারকে এইটুকু বললাম দেখেই তোমার গায়ে লেগে গেল? আর আমি? ব্রাদার যখন আমায় কিছু বলে তখন তো তুমি কিছু বলো না! যেন কিছু শুনতেই পাও না তখন।”

রেশমী ক্ষুব্ধ গলায় বলে উঠলো,
“জোহান, ইউ ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট।”

“কী করবো মম? আমি মানুষটাই যে এমন। কিছু বললেই লিমিট ক্রস হয়ে যায়।”

রেশমী স্বামীর দিকে তাকালেন।
“দেখলে সাদাত, তোমার ছোট ছেলে কীভাবে কথা বলছে আমার সাথে? এরপরও কি তুমি বলবে তোমার ছেলে খারাপ হয়ে যায়নি?”
রেশমী স্বামীর থেকে উত্তরের আশায় বসে থাকলেন না। জোহানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“সত্যি সত্যি জঘন্য হয়ে গেছো তুমি। ছি! ভাবতে পারিনি এতটা অধঃপতন হবে তোমার।”

জোহান চিৎকার করে বলে উঠলো,
“হ্যাঁ, আমি জঘন্য। আর এভাবেই ভালো আছি আমি। স্বস্তি অনুভব করছি। যখন আমি ভালো ছিলাম তখন তো তুমি ফিরে তাকাওনি। তাই জঘন্য হয়ে নিজের ভালো থাকার রাস্তাটা খুঁজে নিয়েছে আমি। সারাজীবন এ রাস্তাতেই চলবো আমি।”

রেশমী আক্রোশ নিয়ে তাকিয়ে আছে। জোহানের সাথে কথা বাড়াতেও ঘৃণা হচ্ছে তার।

“ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি তুমি ব্রাদারের প্রতি যত্নশীল, আর আমার প্রতি উদাস। আমাকে ঘিরে তোমার যা আছে তা সবই উদাসীনতা, আর কিছুই নয়। তুমি ব্রাদারকে প্রচণ্ড ভালোবাসো, অথচ আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার ব্যাপক ঘাটতি।”

রেশমী রাগে চিৎকার করে উঠলেন,
“শাট আপ জোহান! বেয়াদবির একটা সীমা আছে। মুখ বন্ধ করো এখন।”

জোহানও ফের চিৎকার করে উঠলো,
“না, করবো না। বলো কেন? কেন তুমি আমার প্রতি এত উদাস? ব্রাদারকে তুমি এত ভালোবাসো, অথচ আমার দিকে তাকানোরও যেন সময় হয় না তোমার। ব্রাদার বড়ো হয়ে গেছে তারপরও তুমি এখনও ব্রাদারকে যত্ন করে খাইয়ে দাও। আর আমার মনেও পড়ে না ছোটবেলায় তুমি শেষবার কবে খাইয়ে দিয়েছিলে আমায়। কেন মম? কেন? কেন তুমি আমার প্রতি এত কেয়ারলেস? কেন তুমি ভালোবাসো না আমাকে? আমি কি তোমার আসল ছেলে নই?”

জোহান কথা শেষ করতে না করতেই একটা ভারী হাতের থাপ্পড়ে ওর মুখ হেলে গেল।

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আঁতকে উঠলো মিতুল। জেগে জেগে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছে না কি ও?

জোহান মুখ তুলে তাকালো।
জায়িনের রাগে রক্তিম হয়ে যাওয়া মুখ ফুঁটে ওঠে জোহানের জল থলথলে চোখে। ইতোমধ্যে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে ওর চোখ থেকে। জোহান তীব্র রাগ, অভিমান নিয়ে বললো,
“আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার শুধু আমার ড্যাডের। আর কারো নেই। না তোমার আছে ব্রাদার, আর না মমের।” বলতে বলতে জোহান একবার মমের দিকে তাকালো।
তারপর দ্রুত পা ফেলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

রেশমী স্বামীর দিকে তাকালেন। বললেন,
“দেখেছো সাদাত, তোমার ছেলে কতটা উশৃঙ্খল হয়ে গেছে!”
বলে রেশমীও রুমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। মিতুলের পাশ কাটিয়ে উপরে চলে গেলেন তিনি।
সাদাতও রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। দাঁড়িয়ে রইল মিতুল, জায়িন এবং ক্যামিলা। মিতুল কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কী থেকে কী ঘটলো আজকে! রেশমী আন্টি, জোহান… মিতুল ঘরের প্রবেশ দরজার দিকে তাকালো। অস্থির লাগছে ওর। বার বার ঢোক গিলছে। কোথায় বেরিয়ে গেল জোহান? মিতুল সিঁড়ি বেয়ে হলরুমে নামলো। দরজার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। জোহানের জন্য কষ্ট হচ্ছে ওর। হৃদয় কষ্টে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। কোথায় গেছে জোহান? মনে হচ্ছে টাইম হাউজে গেছে। মিতুল জোহানের কাছে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে এগোতে লাগলো। দরজার কাছাকাছি আসতেই পিছন থেকে জায়িনের কণ্ঠ শুনতে পেল,
“ওর কাছে যাওয়ার দরকার নেই। নিজের রাগ, জেদ নিয়ে ওর টাইম হাউজেই পড়ে থাকুক ও।”

জায়িনের কথা কানে আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লো মিতুল। জায়িনের প্রতি হঠাৎ ঘৃণা হলো ওর। নিজের ছোট ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছে! ছোট ভাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। আর সে এখনও এরকম কথা বলছে? কেমন মানুষ জায়িন? মিতুল শুনলো না জায়িনের কথা। দ্রুত বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

(চলবে)