চৈত্রিকা পর্ব-৫২+৫৩

0
364

#চৈত্রিকা (৫২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________

৩৭.
সাদিক নাসিমার ম’ত্যুর আজ দুদিন। নিবিড় যেহেতু অর্থিকে নিতে এসেছিলো তাই সে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই চয়ন রেগে যায়। সে কিছুতেই অর্থিকে নিবিড়ের সাথে যেতে দিবে নাহ। দিবে নাহ মানে দিবে নাহ। সকাল থেকে বাড়িতে এই নিয়ে চেচামেচি শুরু হয়েছে। পল্লবী, শিমুল বার বার চুপ করতে বললেও কারোর কথা কানে নিচ্ছে না চয়ন। বাড়ির লোকদের সাথে সাথে জমিদার বাড়ির সকল কাজের মানুষগুলোও ঝামেলা দেখছে। বরং তারা উৎসুক দৃষ্টিতেই দেখছে। যেনো জমিদার বাড়ির এসব ছোট খাটো ঝামেলা তাদেরকে মজা ই দিচ্ছে। চৈত্রিকা নিশ্চুপ। আপাতত সে কিছু বলবে নাহ৷ নিবিড় হাত বগলদাবা করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই খানিকটা দুরে দাঁড়িয়ে অর্থি নখ কা’মড়াচ্ছে আর পিট পিট করে নিবিড়, চয়নের দিকে তাকাচ্ছে। চয়ন বলেই যাচ্ছে আর নিবিড় মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনে যাচ্ছে। অর্থিকে নখ কা’মড়াতে দেখে অর্পিতা মাথায় আস্তে করে একটা গা’ট্টা মা’রে। অর্থি চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই অর্পিতা ফিসফিস করে বলে,

‘বিয়ে হয়ে গেছে অথচ বাচ্চাদের মতো নখ কা’মড়ানোর মতো স্বভাব যায় নাই? নিবিড় ভাই কিছু বলে না তোরে?’

অর্থি সেসব কথা পাত্তা দিলো নাহ। বরং ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিজেও ফিসফিস করে বলে, ‘কথা বলো না ছোট ভাবী। আব্বাজান আর উনার কথা শুনতে দেও! মাষ্টারমশাই কি বলবে এটা শোনো!’

অর্পিতা আর কিছু না বলে নিজেও মনোযোগী শ্রোতার মতো তাকায়। কয়েক সেকেন্ড বাদেই অর্থি অর্পিতার হাত চেপে ধরে বলে, ‘এই আপু! মাষ্টারমশাই আমাকে নিয়ে যাবে তো? আব্বাজানের কথা শুনে আবার আমাকে রেখে যাবে না তো?’

অর্থির হঠাৎ এমন করায় অর্পিতা খানিকটা চমকায়। বুকে থু থু দিয়ে কটমট করে তাাকায়। দাতে দাত চেপে বলে, ‘নিজেই বলিস কথা না বলে কি হচ্ছে তা দেখতে আর নিজেই কানের ১২ টা বাজিয়ে দিচ্ছিস! আর একবার ভাবী, একবার আপু ডাকিস কেন? যেকোনো একটা ডাক!’

অর্থি ঠোঁট উল্টে নিবিড়ের দিকে তাকায়। তারপর মিনমিনিয়ে বলে, ‘আসলেই ভাবীরা ননদকে দেখতে পারে নাহ। এজন্যই তুমি আমাকে এমন বকো! আর তুমি তো আমার ভাবী+আপু দুইটাই তাই জন্যই আমি গুলিয়ে ফেলি। একেকবার একেকটা বলি।’

অর্পিতা ঠোঁট চেপে হাসে। অর্থির দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। চয়ন তখনো বলে যাচ্ছে। চয়ন চুপ করে গেলেই নিবিড় মাথা তুলে তাকায়। ছোট্ট করে বলে,

‘আমাদের ফিরতে হবে আব্বাজান। আমার ছুটির সময় সীমা শেষ। এর থেকে বেশি থাকলে হয়তো আমার চাকুরীটাই টিকবে নাহ। আশা করছি আপনার বলা শেষ!’

চয়ন ক্ষে’পে ওঠে। হুং’কার ছেড়ে বলে, ‘যাবে নিজে যাও! আমার মেয়েকে তোমাকে দিবো নাহ।’

নিবিড়ের শান্ত কন্ঠের জবাব, ‘আপনি জমিদার হলেও আমার বউকে আমার সাথে যাওয়া থেকে আটকানোর ক্ষমতা নেই আব্বাজান। অর্থি আমার বিয়ে করা বউ। আপনি কেমন করে আটকাবেন?’

চয়ন এবার রুখে আসে। মুখে যা আসে তাই বলতে থাকে। উপস্থিস সবার কান ঝা ঝা করে ওঠে। অর্থি কান চেপে ধরে নিস্তেজ কন্ঠে বলে, ‘চুপ করেন আব্বাজান। এসব ভাষা ব্যবহার করবেন নাহ।’

নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে থাকে। এ পর্যায়ে প্রহর কথা বলে। চোখ বন্ধ করে শান্ত অথচ জোড়ালো কন্ঠে বলে, ‘নিবিড়ের সাথে এধরণের ব্যবহার করে নিজেকে ছোট করবেন না আব্বাজান। নিবিড় এ বাড়ির জামাই। আপনার নিজের মেয়ে জামাই। তার সাথে এধরণের ব্যবহার কি আপনার শোভা পায়? এসব করে আপনি পারবেন অর্থির ওর সাথে যাওয়া আটকাতে? পুরো গ্রামের সামনে ওদের বিয়ে হয়ছে।’

‘বিয়ে হয়ছে তো কি করবো আমি? তোমাকে নিষেধ করেছিলাম না বিয়ে দিতে! দিয়েছো কেনো?’

‘যা করা উচিত ছিলো সেইটাই করেছি আব্বাজান। এখন এসব করে লোক না হাসিয়ে ওদের যেতে দেন।’

চয়ন তেতে ওঠে। প্রহর নিবিড়কে বলে, ‘সব গুছিয়েছো দুজন?’

নিবিড় ছোট্ট উত্তরে জানায় তারা সব গুছিয়েছে। প্রহরের ব্যবহারে চয়ন রেগে গেলেও আর কিছু বলে নাহ। আপাতত তার পা’পের সঙ্গীরা কেউই নেই। তাই তার যা করতে হবে খুবই সাবধানে। মনে মনে ক্রো’ধের পাহাড় জমিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। প্রহরের নির্দেশে নিবিড় আর অর্থি তৈরী হতে চলে যায়। চয়ন ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,

‘কাজটা ঠিক করছো নাহ প্রহর!’

প্রহর জবাব দেয় নাহ। হলরুম নীরবতায় ছেয়ে যায়। মিনিট ত্রিশেক বাদেই হাজির হয় নিবিড় অর্থি। চয়নের দিকে এক পলক তাকিয়েও অর্থি সেদিকে যাওয়ার সাহস পায় নাহ। চুপচাপ ঘুরে চলে আসে। নিবিড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অর্থির হাত। সবার থেকে বিদায় নিয়ে সদর দরজা পেড়োতে পেড়োতে শক্ত প্রতিজ্ঞা নিয়ে বলে,

‘তোমার এই হাত যেভাবে ধরেছি ওভাবেই আজীবন ধরে থাকবো। তোমাকে সুখের বদলে কখনো দুঃখের অশ্রু ঝড়তে দেবো নাহ। কথা দিলাম!’

অর্থি কান খাড়া করে প্রত্যেকটা কথায় শুনলো। চোখ পিটপিট করে একবার নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। মনে শান্তি অনুভব করে। ভেতর থেকে কেউ যেনো চিৎকার করে বলে,

‘অর্থি তুই ভালোবেসে ভুল করিসনি। এই যে মাষ্টারমশাইটা তোকে সত্যিই ভীষণ ভালোবাসে। ভীষণ! এতো ভালো কি তোকে কেউ আদৌও বাসতো?’

৩৮.
১ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে অর্থি আর নিবিড় পা রাখে শহরে। অর্থি খোলা আকাশের নিচে মৃদু হাওয়ায় আশে পাশে তাকায়। এই শহরেই তার ছোট্ট সংসার হবে। সে ছোট ছোট হাতে সব সামলাবে। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে সে এখনো তেমন একটা পারদর্শী নয় সব কাজে। পল্লবী টুকটাক শিখালেও তার বেশ হিমশিম খেতে হয়। মন খারাপ হয়ে যায় মুহুর্তেই। নিবিড় অর্থির হাত ধরেই ছোট্ট একটা ঘরের সামনে আসে। অর্থি আশে পাশে নজর বুলিয়ে দেখে। ইট পাথরে তৈরী ছোট্ট একটা ঘর। পাশে বিশাল বড় বাগান। নানান ফুলের সমাহার। ছোট, বড় কত গাছ! অর্থি মুগ্ধতা নিয়ে তাকায়। নিবিড় ঘরের দরজা খুলে অর্থিকে ডাকে। অর্থি চমকে জবাব দেয়,

‘জ্বি মাষ্টারমশাই!’

‘কোথায় হারিয়ে গেছিলে?’

অর্থি মাথা নত করে হাত দিয়ে ঈশারা করে। নিবিড় ফুলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। অর্থির কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে বলে, ‘এনে দিবো আমি৷ তখন মন ভরে দেখো! আপাতত আমার ফুল তোমার ছোট্ট ঘরে প্রবেশ করো। নিজের সংসার নিজে বুঝে নিয়ে আমাকে শান্তি দাও।’

অর্থি লজ্জায় মাথা তুলে তাকায় নাহ। ঘরের দিকে তাকিয়ে ভেতরে যায়। পিছু পিছু নিবিড়ও যায়। ঘরটা খুব বেশি বড় নাহ। একপাশে শোবার ঘর আরেক পাশে ছোট্ট রান্নাঘর। তবে বেশ পরিপাটি, গোছানো। ঘরে প্রায় কমবেশি সবই আছে। অর্থি অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকাতেই নিবিড় উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,

‘পছন্দ হয়েছে?’

অর্থি হাসে৷ মাথা নাড়ায়। নিবিড়ের ঠোঁট আপনাআপনিই প্রসারিত হয়ে যায়। হাতের কাপড়ের ব্যাগ নিচে রেখে বলে, ‘তোমার মাষ্টারমশাইয়ের এর চেয়ে বেশি কিছু করার সামর্থ্য নেই। যতটুকু পেরেছে এবং পারবে তাতে তোমাকে সম্পূর্ণ সুখ দেওয়ার চেষ্টা করবে।’

‘আমার অতো বিলাসিতার প্রয়োজন নেই মাষ্টারমশাই। আপনি এমনই থাকুন আজীবন আমি তবেই সুখী।’

নিবিড় হয়তো এমন কিছুই আশা করেছিলো। তাই কথার পিঠে আর কিছু বললো নাহ। অর্থির হাতে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘তুমি গিয়ে আগে গোসল করে আসো! আমি ততক্ষণে দেখি রান্না বসিয়ে দেই!’

অর্থি অবাক হয়। কন্ঠে অবাকতা ধরে রেখে বলে, ‘আপনি রান্না করবেন? পারেন মাষ্টারমশাই? আপনার করতে হবে নাহ। আমি করে দিচ্ছি।’

নিবিড় চোখ রাঙায়। চোখে মুখে গম্ভীরতা টেনে এনে বলে, ‘তোমাকে বলেছি কিছু করতে? আমি ৩ মাস একা ছিলাম না! তখন টুকটাক শিখে নিয়েছি। তুমি গোসল করে আসো! যাও জলদি!’

অর্থি কিছু বলার সাহস পায় নাহ। শুধু গাল ফুলিয়ে নিবিড়ের দেখানো গোসলখানার দিকে এগোয়। নিবিড় সেদিকে তাকিয়ে হাসে। আপাতত গরম গরম ভাত আর ডিম ভাজা দিয়েই চালাতে হবে। বিকেলে সে টাটকা বাজার করে নিয়ে আসলে তখন অন্যকিছু রান্না হবে।

নিবিড়ের ভাত রান্নার মাঝামাঝি সময়েই অর্থির গোসল শেষ হয়। নিবিড় তখন মন দিয়ে ডিম ভাজার জন্য পেয়াজ, মরিচ কুঁচি করছিলো। অর্থি মিনমিনে স্বরে ডাকে,

‘মাষ্টারমশাই!’

নিবিড় নিজের কাজে মন দিয়েই জবাব দেয় ‘হু!’

‘কাপড় কই শুকাতে দেবো?’

‘বাহিরে দেখো দড়ি টাঙানো আছে! ওখানে দিয়ে আসো।’

অর্থি ‘আচ্ছা’ বলেই বাহিরে চলে আসে। আশে পাশে নজর বুলিয়ে নিজের শাড়ি মেলে দেয় দড়িতে। ঠিক তখনই একটা মেয়ে হুড়মুড় করে অর্থিকে ডিঙিয়ে ঘরের দিকে যেতে নেয়। অর্থি চমকায়, ভড়কায়। মেয়েটাকে চিনতে পারে নাহ। মেয়েটা এক পলক তার দিকে তাকায় বিরক্তি নিয়ে। তারপর পরই চলে যায় ঘরে। অর্থি বেশ অবাক হয়। নিজেও কৌতুহল বশত পিছু পিছু ঘরে আসে। মেয়েটা ঘরে ঢুকেই বেশ আনন্দিত স্বরে বলে,

‘নিবিড় ভাই আপনি কখন আসলেন? আর এসেই রান্না বসিয়েছেন কেনো? এতো কষ্ট করতে হবে! আমাকে ডাকলেই তো আমি করে দিতাম।’

অর্থির ভ্রদ্বয় আপনা আপনি কুঁচকে যায়। হাত বুকের ওপর আড়াআড়ি ভাবে রেখে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় কি হচ্ছে তা দেখার জন্য। নিবিড় যেনো মেয়েটির কন্ঠ শুনে বেশ বিরক্ত হলো। নিজের এতো মনোযোগের কাজ রেখে বিরক্তির কন্ঠে বলে,

‘আমার নিজের কাজ আমার নিজের করা-ই বেশি পছন্দ। আপনাকে আগেও বলেছি আর এখনও বলছি আমার বিষয়ে নিজের মাথা ঘামানো বন্ধ করেন। তাছাড়াও আমার খেয়াল রাখার জন্য আমার বউ আছে। আপনার কিছু বলার থাকলে বলেন নয়তো আসতে পারেন!’

মেয়েটা অপমানিত বোধ করলো। অর্থির অদ্ভুত কারণেই মেয়েটাকে পছন্দ হলো নাহ৷ তার মাষ্টারমশাইয়ের প্রতি এতো দরদ কেনো দেখাবে! কে এই মেয়ে? অচেনা মেয়েটি মিনমিনিয়ে বলে,

‘আপনি কাজ করছিলেন তাই…’

নিবিড় মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে অর্থিকে ডাকে৷ শান্ত গলায় বলে, ‘অর্থি এদিকে আসো আর তৃষ্ণা! এটা আপনার ভাবী। আমার বউ অর্থি।’

অর্থি এগিয়ে আসে। তৃষ্ণার দিকে তাকায় অদ্ভুত ভাবে। তৃষ্ণাও যে তাকে খুব একটা পছন্দ করেনি তা বুঝতে বেগ পেতে হলো নাহ। তৃষ্ণা কিছু না বলেই চলে যায়। অর্থি একবার সেদিকে তাকিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকায়৷ ছোট্ট করে জিজ্ঞেস করে,

‘এটা কে?’

‘বাড়িওয়ালার মেয়ে!’

অর্থি মনে মনে ফুঁসে ওঠে। মুখে কোনোরুপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিবিড়কে সরিয়ে নিজে বসে পড়ে। ডিম ভেঙে মরিচের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে শান্ত ভাবে বলে,

‘হয় এই বাড়ি ছাড়ুন নয়তো এই মেয়ে যেনো আমার ঘরের আশে পাশে না আসে। নয়তো আমি বড় ভাবীজানের মতো হাতের কাছে যা পাবো তাই গলার ভেতর চা”’লিয়ে দিবো।’

৩৯.
বিকেল বেলা চৈত্রিকা আর প্রহর হাঁটতে বেড়িয়েছে। আজ কি মনে করে দুজনে এক সাথে বের হয়েছে তা জানা নেই কারোরই। হাঁটতে হাঁটতে প্রহরই প্রথমে মুখ খোলে,

‘মুখ ভার কেনো? কি হয়েছে?’

অজানা কারণেই চৈত্রিকার মন বি’ষিয়ে আছে। নিজেও জানে না কেনো এই বিষণ্নতা। তাই দৃষ্টি এদিক ওদিক করে অলস গলায় বলে, ‘ভালো লাগছে নাহ জমিদার সাহেব। একটু মামির কাছে নিয়ে যাবেন? আমার একটু মায়ের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে। ফেরার সময় একবার সাথীর কবর দেখে যাবো।’

প্রহর নিঃশব্দে চৈত্রিকার হাতের মাঝে নিজের হাত নেয়। আঙুলের মাঝে আঙুল গলিয়ে দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকে। চৈত্রিকা ধরে রাখা হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নেয়। প্রহরের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসে। প্রহরের দৃষ্টি সামনে। দুজনে এগিয়ে আসে সাথীদের বাড়ির কাছে। বাড়ি পুরো শুনশান। চৈত্রিকা আর প্রহর বাড়ির ভেতর গিয়ে দেখে দরজা খোলা। চৈত্রিকা ‘মামী’ বলে কয়েকবার ডাকে। অপরপক্ষ থেকে কোনো জবাব আসে নাহ। চৈত্রিকা ভ্রু কুঁচকে ঘরের মাঝে উঁকি দেয়। নাহ কেউ নেই। চৈত্রিকার ভেতরটা মিনিট খানেকের মাঝেই অস্থির হলো। প্রহরকে দাঁড়াতে বলে পাশের বাড়িতে যায় সনিয়া বেগম আর আজম আলীর খোঁজ আনতে। পাশের বাড়ি থেকে জানায় সকাল থেকেই সনিয়া বেগম কিংবা আজম আলীকে কোথাও কেউ দেখেনি। চৈত্রিকার মাথা কাজ করাা বন্ধ করে দেয়। তার দ্রুত চলা মস্তিষ্ক যেনো ধরতে পেরেছে সনিয়া বেগম আর আজম আলী বি’পদে আছে। কিন্তু কেমন বি’পদ! কোথায় তারা? আবার তার জন্য এই মানুষগুলো কোন বি’পদে পড়েছে!’

চলবে..

#চৈত্রিকা (৫৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________

চৈত্রিকা উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে আসে প্রহরের কাছে। সনিয়া বেগম আর আজম আলী কোথায় তা ভেবেই মাথা ঘুরে যাচ্ছে তার। প্রহর তখন আজম আলীর বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চৈত্রিকাকে এভাবে ছুটো আসতে দেখে ভীষণ চমকালো। চৈত্রিকা প্রহরের শার্টের কোণা আঁকড়ে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘মামা মামীকে কেউ সকাল থেকে কোথাও দেখেনি জমিদার সাহেব। কোথায় গেলো ওরা? ওরা-ওরা কোনো বিপদে পড়েনি তো? এখন কি হবে জমিদার সাহেব?’

প্রহর মনে মনে চমকালেও বাহিরে প্রকাশ করলো নাহ। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। শক্ত হাতে চৈত্রিকাকে আগলে নিয়ে এক হাত রাখে চৈত্রিকার গালে। উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ছুটতে থাকা দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি মিলিয়ে আশ্বস্ত করে বলে,

‘শান্ত হও! আগে শান্ত হও। আমি আছি তো! কিচ্ছু হয়নি মামা মামির। কিচ্ছু হবে নাহ।’

চৈত্রিকা শান্ত হতে পারলো নাহ। মস্তিষ্ক চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গেছে। বার বার দৃষ্টি এদিকে ওদিক করতে থাকে। বিড়বিড় করে কি যেনো আওড়াতেই থাকে। প্রহর বোঝে চৈত্রিকা এখনও শান্ত হতে পারেনি। কোনো কথা ছাড়াই চৈত্রিকাকে আগে শক্ত করে জাপ্টে ধরে। বার বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

‘কিচ্ছু হয়নি তো। শান্ত হও আগে! এমন করো না চৈত্র।’

চৈত্রিকা মিনিট খানেকের মাঝেই শান্ত হয়ে যায়। প্রহরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকে। ক্লান্ত মস্তিষ্কে চাপ দিতে পারে নাহ। শরীরের ভার ছেড়ে দেয় সম্পূর্ণ প্রহরের ওপর। প্রহর তখনো শক্ত হাতে আগলে আছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। বার বার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। প্রহর যখন বোঝে চৈত্রিকা শান্ত হয়েছে তখন ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়। চৈত্রিকা নিশ্চুপ হয়ে যায়। তার মাথার মধ্যে চলতে থাকে মামা মামি কোথায়! এক মা’কে সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে এবার তার মায়ের মতো আগলে রাখা মামিকেও হারাতে হবে কি? প্রহর চৈত্রিকার হাত শক্ত করে ধরে রাস্তা দিয়ে এগোতে শুরু করে। শান্ত কন্ঠে বলে,

‘চলো!’

চৈত্রিকা জবাব দেয় নাহ। পুরোটা রাস্তা দুজনে নিশ্চুপ ভাবে আসে। জমিদার বাড়িতে ঢুকেই পল্লবী আর শায়লাকে প্রথমে নজরে আসে। পল্লবী এগিয়ে আসতেই প্রহর ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

‘আম্মাজান! চৈত্রিকার মামা মামি বাড়িতে নেই। কেউ কোনো খোঁজ জানে নাহ। আপনি একটু চৈত্রিকাকে সামলান। আমার যেতে হবে!’

পল্লবী চমকে যায়। সনিয়া বেগম আর আজম আলী নিখোঁজ শুনে তারও ঢের বোঝা হয়ে যায় এসবের পিছনে কার হাত! প্রহর দ্রুত চৈত্রিকার হাত ছেড়ে উল্টো ঘুরতে নিলে চৈত্রিকা হাত টেনে ধরে। ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

‘কোথায় যাচ্ছেন আপনি? যাবেন নাহ।’

প্রহর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। পল্লবীর দিকে এক পলক তাকিয়ে চৈত্রিকার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ‘আমি আসবো তো চৈত্র। ছাড়ো হাত! আমি চলে আসবো খুব তাড়াতাড়ি।’

চৈত্রিকার মন মানে নাহ। প্রহর হাত ছাড়িয়ে চলে যায়। বিষন্নতা ঘিরে রাখা মনটা আরো বেশি বিষন্ন হয়। চোখ উপচে কান্নারা চলে আসে। ভেজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রহরের যাওয়ার পানে। পল্লবী হয়তো বোঝে! চৈত্রিকার গালে হাত রেখে সামান্য হাসে। ছোট্ট করে বলে,

‘চিন্তা করো নাহ। প্রহর ঠিক তোমার মামা মামিকে খুঁজে নিয়ে আসবে। এখন ঘরে চলো!’

চৈত্রিকা কোনো কথা-ই বলে নাহ। শুধু প্রহরের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে। পল্লবী চৈত্রিকাকে তাদের ঘরে নিয়ে যায়। চৈত্রিকার অশান্ত মনে আরো অশান্তির সৃষ্টি হয়ে গেছে৷ বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে! খুব খারাপ কিছু হবে!

৪০.
প্রহর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে চলে আসে নিজেদের বাগানের সাথে টিনশেড বাড়িতে। যেখানে চয়ন এই সময় থাকবে! প্রহর বড় একটা শ্বাস নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। চয়নের সাথে আরো দুজন লোক বসে তখন ‘তাস’ খেলায় মত্ত। প্রহরকে দেখে চয়ন বাঁকা হাসে। ব্যাঙ্গাত্মক কন্ঠে বলে,

‘বড় পুত্র! খেলবে নাকি?’

প্রহর কিচ্ছুটি বলে নাহ। বাকি দুজন লোকের দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। শীতল কন্ঠে আওড়ায়,

‘বাহিরে যান দুজন!’

প্রহরের কথা অমান্য করার মতো দুঃসাহস তাদের নেই। তাই হুকুম মেনে কোনো রকমে উঠে চলে যায়। চয়ন মাথা এলিয়ে দেয় খাটের সাথে। নিজ থেকেই আবার বলে,

‘ওদের বের করে দিলে কেনো প্রহর? তুমি বুঝি সত্যিই খেলবে?’

প্রহর এ প্রশ্নের জবাব দেয় না। সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিজে প্রশ্ন করে, ‘আজম আলী আর তার বউ কোথায় আব্বাজান?’

চয়ন একটুও চমকায় নাহ। অবাক হয় নাহ। সে যেনো আগে থেকেই জানতো এমন কিছু হবে! চয়নের চুপ থাকা আর স্বাভাবিক মুখশ্রী প্রহরের চোয়াল শক্ত করে দেয়। বুঝতে বাকি থাকে নাাহ চয়ন ইচ্ছে করে করছে এসব। প্রহর ফের শুধায়,

‘ওরাা কোথায় আব্বাজান?’

‘তুমি জেনে কি করবে?’

প্রহর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। চয়ন দেখে তা। তবে একটা শব্দও বলে নাহ। প্রহর নিজেই বলে, ‘আব্বাজান আমি আপনার সকল পা’পের জায়গা চিনি। আমি নিজ থেকে খুঁজে বের করলে তা যে খুব একটা ভালো হবে নাহ তা আপনিও জানেন আর আমিও জানি। তবুও যদি আপনি এটাই চান তবে আমি এটাই করবো। যা চাচ্ছেন তা কখনোই হবে নাহ। চৈত্রিকা কিন্তু এতো দুর্বল নয়। ‘ও’ সবকিছু পেরিয়েই পা’পের শা’স্তি দেবেই।’

চয়ন ক্রুদ্ধ হলো। তবে মুখে কিছুই বললো নাহ। প্রহর উল্টো ঘুরে চলে আসতে নিলে চয়ন শক্ত, মোটা রড দিয়ে আঘাত করে প্রহরের মাথায় আর পিঠে। মাথার ভেতরটা যেনো মুহুর্তেই নড়ে ওঠে। প্রহর ঢুলে পড়ে যায়। চোখের সামনে সবটা আবছা হয়ে ওঠে। বার বার মাথা নাড়িয়ে দৃষ্টি স্পষ্ট করতে চাইলেও করতে পারে নাহ। আবছা দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখতে পায় চয়নের হাসি। প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘আপনি নিজের প্রতিজ্ঞা রাখেননি। আমার কাছেও আর আশা কইরেন না আব্বাজান।’

আর কিছু বলতে পারে নাহ। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে মেঝেতে। চয়ন ভেতর থেকে ডাকতেই বাহিরে দাঁড়ানো দুজনে ভেতরে আসে। প্রহরের নিস্তেজ শরীরটা মেঝে থেকে উঠিয়ে বস্তার মাঝে নেয়। উদ্দেশ্য কোনো এক পা’প!

৪১.
সারাদিনে অফিস করে ক্লান্ত নিবিড় বাড়িতে ঢুকেই আগে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অর্থি তখনো বিছানার কোণায় বসে আছে দাঁতে দাঁত চেপে। ভীষণ ভাবে সে তার মাষ্টারমশাইয়ের ওপর রেগে আছে। ভীষণ মানে ভীষণ। নিবিড় কোনো মতে ক্লান্ত গলায় বলে,

‘অর্থি! এক গ্লাস পানি দাও তো!’

নিবিড়ের ক্লান্ত কন্ঠে অর্থির মায়া হয়। সব রাগ ধুলোয় মিশিয়ে ছুটে গিয়ে আগে পানি আনে। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

‘এই নিন পানি! আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে মাষ্টারমশাই?’

নিবিড় এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলেও এবার চোখ মেলে তাকায়। ক্লান্ত ভঙ্গিতেই হাসে। অর্থির হাত থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে তা শেষ করে। তারপর কোনো কথা ছাড়া-ই অর্থিকে টেনে বসায় বিছানায়। অর্থির কোলে নিজের মাথা গুজে দিয়ে অলস গলায় বলে,

‘আমি একটু ঘুমাই! তুমি এভাবেই থাকো।’

অর্থি বার কয়েক চোখের পলক ফেলে। শুকনো ঢোক গিলে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে, ‘গোসল করবেন না? আগে গোসল করে আসুন! তারপর খেয়ে না হয় ঘুমান!’

নিবিড় শুনলো। মন না চাওয়া স্বত্বেও নিজের জায়গা ছেড়ে উঠতে হলো। অর্থি নিজেই নিবিড়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দেয়। নিবিড় হাসে। বোকা অর্থি সংসারী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার তো এই মেয়ের বোকা কথা শুনতেই বেশি ভালো লাগে। কবে আবার বোকা কথা বলবে? নিবিড় ঠোঁট উল্টে তাকায়। হুট করে এমন করায় অর্থি খানিকটা চমকায়। চোখ ছোট ছোট করে বলে,

‘কি হয়েছে মাষ্টারমশাই?’

‘একটু বোকা বোকা প্রশ্ন করো তো অর্থি!’

অর্থি যেনো বোকা হয়ে যায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন করে?’

নিবিড় মুহুর্তেই হেঁসে ওঠে। প্রাণবন্ত হাসি হেঁসে অথির গোছানো চুল এলোমেলো করে দেয়। তারপর অর্থির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজে চলে যায় গোসলখানায়। অর্থি শুধু তাকিয়ে দেখে। যখন তার বোধ হয় নিবিড় তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়েছে তখন হুট করেই লজ্জা পায়। চুপচাপ এসে বিছানা ঠিক করে নিবিড়ের জন্য খাবার সাজায়। নিবিড় গোসল সেড়ে আসলে ভেজা কাপড় ওভাবেই রাখে অর্থি। নিবিড়কে খেতে বসতে বলতেই ঘরের দরজায় টোকা পড়ে। নিবিড় ভ্রু কুঁচকায়। বাহির থেকে শব্দ আসে বাড়িওয়ালার বউয়ের। নিবিড় দরজা খুলে দিয়ে সালাম দেয়। মহিলা সালাম নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। অর্থি তখন গোসলখানা থেকে বের হচ্ছে। অর্থিকে দেখেই তিনি বলেন,

‘এটা তোমার বউ নিবিড়?’

নিবিড় এক গাল হেঁসে মাথা নাড়ায়। অর্থি এগিয়ে এসে সালাম দেয়। মহিলাটি জহুরি নজরে পরখ করে কিছু বলতে চেয়েও বলে নাহ। সাধারণ কথা বার্তা শেষ করে গলা পরিষ্কার করে বলে,

‘তোমার কাছে এসেছি একটা দরকারে!’

অর্থির ভ্রু কুঁচকে যায়। তৃষ্ণাকে দেখার পর থেকে তার এই বাড়িওয়ালা, তার বউ কিংবা এই বাড়ি কাউকেই ভালো লাগে নাহ। নিবিড় বরাবরের মতো হেঁসে জিজ্ঞেস করে ‘কি কথা!’ জবাবে ভদ্র মহিলা বললেন,

‘আমার তৃষ্ণার জন্য একটা শিক্ষক খুজতেছি। কিন্তু বিশ্বস্ত কাউকে পাচ্ছি নাহ। বুঝোই তো বাবা! তো তৃষ্ণার থেকে শুনলাম তুমি নাকি ভীষণ ভালো পড়াও! আমার মেয়েটাকে যদি একটু পড়িয়ে দিতে খুব উপকার হতো। না করো না বাবা!’

মহিলার কথা শেষ হতে না হতেই নিবিড় চট করে তাকায় অর্থির দিকে। অর্থি শান্ত দৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে আছে। এই শান্ত দৃষ্টির মানে যে ভ’য়ং’কর তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। নিবিড় ফাঁকা ঢোক গিলে বলে,

‘আমি আপনাকে জানাবো চাচি!’

মহিলাটি খুশি হলেন নাাহ খুব একটা। জোড় দিয়ে বললেন, ‘রাজি হয়ে যেও কেমন!’

নিবিড় কিছু বলে নাহ। মহিলাটি বিদায় নিয়ে চলে যায়। নিবিড় ঘরের দরজা লাগিয়ে আসে অর্থির কাছে। অর্থি কিছু বলে নাহ। চুপচাপ এসে খাবারের জায়গায় বসে বলে,

‘খেতে আসেন!’

নিবিড় টু শব্দও করে নাহ। খেতে চলে আসে। অর্থি নীরবে নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে নিবিড়কেও দেয়। চুপচাপ খেতে শুরু করে। পুরো সময়ে কোনো শব্দ করে নাহ। নিবিড় খাওয়া শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। অর্থি সব গুছিয়ে এসে নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে। অনেকটা সময় পর নিজেই বলে,

‘আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবেন কাল! নয়তো দুদিন পর আপনাকে শুনতে হবে ‘খু’নীর বর আপনি’।’

৪২.
রাত তখন ১১ টার আশে পাশে। প্রহর তখনো ফেরেনি। সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছে৷ পুরো ঘরে পায়চারি করতে থাকে চৈত্রিকা। একবার এই মাথা তো আরেকবার ওই মাথা যাচ্ছে। মনের মাঝে বার বার কু ডাকছে। চিন্তায় মাথা ব্যাথা করছে। বার বার বারান্দায় গিয়ে উঁকি দিচ্ছে প্রহর আসছে কি না তা দেখার জন্য! শেষ বার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়ে একটা অবয়ব। চৈত্রিকা ভালো মতো তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা চয়ন। চয়ন এতো রাতে কোথায় যাচ্ছে তা ভেবেই ভ্রু কুঁচকে যায়। মাথায় হাজারটা চিন্তার পোকা নিয়ে একবার ভাবে চয়নের পিছে যাবে আবার পরক্ষণেই ভাবে যাবে নাহ। কিন্তু মনকে স্থির করতে না পেরে একটা ত’লো’য়া’র নিয়ে জলদি ঘর থেকে বের হয়। আল্লাহর নাম নিয়ে দৌড়ে চয়নের পিছু পিছু যায়। কিছুটা দূরত্ব রেখে চলতে থাকে। একদম গ্রামের শেষ প্রান্তের কাছে এসে একটা পোড়া বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে চয়ন। এভাবে আসাটা যে উচিত হয়নি তা বুঝেও চৈত্রিকা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। সে কিছুতেই পিছিয়ে যাবে নাহ। বড় বড় শ্বাস নিয়ে ছোট ছোট কদমে কদমে বাড়ির কাছে এগিয়ে যায়। ভেতরে প্রবেশ করতেই তরল কিছু এসে পড়ে তার গায়ে। চোখ মুখ বন্ধ করে নিয়ে হাত দিয়ে মুখ আগলায়। পুরো গা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। ভেসে আসছে ক্যারোসিনের গন্ধ।

চলবে..