#ছত্রিশ_ঝামেলা
#পর্ব_১০
শাকিবের ভীষণ অস্থির লাগছে। শেষবার এমন অস্থির লেগেছিল ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্ট বেরোবার আগে। বারবার তার মনে হয়েছে, সে পরীক্ষায় ফেল করবে! পরীক্ষায় ফেল করা নিয়ে তার নিজের কোনো মন খারাপের ব্যাপার ছিল না। টেনশান হচ্ছিল ভাইয়ার জন্য। ভাইয়া তার রেজাল্টের জন্য সেদিন রোজা রেখেছিলেন! শাকিব সেদিন মনে প্রাণে চেয়েছিল সে কোনোরকমে পাশ করে যাক। পরীক্ষা যে তার খারাপ হয়েছিল তা নয়। দুটো পরীক্ষায় সে রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ভুল ফিলাপ করেছিল। এবং পরে তা আবার ঠিক করেছিল। সেবার সে কোনোভাবে উতরে গিয়েছিল, এবার কী হয় কে জানে?
এই মুহূর্তে শাকিব বসে আছে ড্রিম ওয়ার্ল্ড কফিশপে। এখানে সে মার্লিনার সাথে দেখা করতে এসেছে। মার্লিনা গতকালই দেশে এসেছে। যদিও মার্লিনার লায়লার সাথে কথা বলার কথা ছিল। কিন্তু লায়লা ইচ্ছে করেই শাকিবকে পাঠিয়েছে। শাকিব বারবার জানতে চেয়েছে,
-“মার্লিনার সাথে তুমি কেন দেখা করতে চাইছো না?”
-“আমার কেন জানি খুব ভয় করছে শাকিব। মনে হচ্ছে, মার্লিনার সাথে দেখা করতে গেলেই আমি ভয়াবহ কোনো দুঃসংবাদ পাবো।”
-“তুমি এমন ভাবে বলছো যেন মার্লিনা দুঃসংবাদের দূত!”
-“হতেও পারে।”
লায়লার সন্দেহকে শাকিবও উড়িয়ে দিতে পারছে না। মার্লিনা হাসিবের ব্যাপারে কী বলতে চায়? শাকিব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে, খারাপ বা ভালো যে খবরই হোক, সে এটার চাপ লায়লা ভাবীর উপর পড়তে দেবে না। মনে আছে, মিমির জন্মের সময় লায়লা ভাবীর তখন জীবন নিয়ে টানাটানি। ডক্টররা পেটের মধ্যে কোনো বেবীর রেসপন্স পাচ্ছিলেন না। ভাবীর ছিল হাই ব্লাড প্রেশার। ডক্টর বলছিলেন, হয়তো একজনকে বাঁচানো যেতে পারে। অপারেশন থিয়েটারে যাবার সময়ে লায়লা শাকিবের হাত ধরে বলেছিল,
-“শাকিব তোমায় আমায় একটা কথা দিতে হবে।”
-“কী কথা?”
-“কথা দাও, যদি আমি মারা যাই তুমি তোমার ভাইয়াকে আর বিয়ে করতে দেবে না?”
শাকিব হেসেছিল খুব।
-“ভাইয়ার মতো একটা মানুষকে আর কেউ বিয়ে করবে না ভাবী!”
-“তুমি কথা দাও শাকিব, নাহলে আমি অপারেশন থিয়েটারে যাবো না।”
শাকিব কথা দিয়েছিল।
একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কী করে এত ভালোবাসতে পারে? কী করে?
-“হ্যালো, শাকিব!”
সুন্দরী বাংলায় ইংরেজির প্রবল টান। শাকিব ফিরে তাকালো। মার্লিনা চলে এসেছে। ছিপছিপে গড়নের বাদামী চুলের গম্ভীর চেহারার মেয়ে। এধরনের গাম্ভীর্য সাধারণত স্কুলের অঙ্ক শিক্ষকদের চেহারায় দেখা যায়। তারপরও কোথাও যেন সবটা ছাপিয়ে এক টুকরো স্নিগ্ধতা উজ্জ্বল ফুটে আছে।
শাকিব উঠে দাঁড়ালো।
মার্লিনা হাত বাড়িয়ে দিলো।
-“তোমাকে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। আমি তোমার কাছে ক্ষমা কামনা করছি।”
-“ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। আমার এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছিল।”
শাকিব হাত বাড়ালো। তার ভেতর ভেতর নিঃশ্বাস আটকে আসছে। মার্লিনা কি ভয়াবহ কোনো দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে? মার্লিনা মোবাইল ফোন বের করে কাউকে ফোন করলো।
শাকিবের সামনেই সে একজনকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললো। তার মানে মার্লিনা একা আসেনি।
-“তুমি যদি কিছু মনে না করো আমি কি তোমার জন্য কফি অর্ডার করতে পারি?”
-“হিসেবে গেলে কিন্তু তুমি অতিথি। আমি হোস্ট।”
-“আমি কোনো হিসেবে যেতে চাইছি না শাকিব।”
মার্লিনার কণ্ঠস্বরে নিস্তেজ স্বাভাবিকতা।
মার্লিনা ওয়েটার ডেকে দুজনের জন্য কফি অর্ডার করলো।
-“তুমি কি আর কিছু নেবে?”
-“আমার কিন্তু এই কফিটাই শেষ হয়নি।”
শাকিব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কথা শুরু করলো। নিজের ভেতরের নার্ভাসনেসটা সে কিছুতেই বুঝাতে চায় না মার্লিনাকে।
-“আপনি কবে এসেছেন?”
-“গতকাল! আসলে আমি গতকালই দেখা করতাম। মিসেস লায়লা সময়টা পেছালেন।”
-“আপনি আমায় চিনলেন কী করে?”
-“তোমার ইউনিভার্সিটিতে আমি যোগাযোগ করেছি। ওরা তোমার সমস্ত ডিটেল আমায় পাঠিয়েছে। মিসেস লায়লা যে শেষমুহুর্তে আমার সাথে দেখা করতে চাইবেন না আমি জানতাম। তাই আমি অনেকটা প্রিপারেশন নিয়েই এসেছি।”
-“আসলে, ভাবীর লাস্ট মোমেন্টে একটা কাজ এসে গেল।”
মার্লিনা হাসলো।
-“হাসিবের চেহারার সাথে তোমার অনেক মিল আছে! তোমাদের কণ্ঠস্বরও কিন্তু একই রকম। তুমি যে এখানে এসেছো, হাসিব জানে?”
-“কেউই জানে না। এমনকি আমার মাও নয়। তুমি বলেছিলে গোপনীয়তা রক্ষা করতে।”
মার্লিনা কফিতে তিনটা সুগার প্যাকেট নিলো।
-“এভাবে চমকে তাকিয়ো না। আমি তোমার সাথে এখন যে আলোচনাটা করবো সেখানে আমার অনেক এনার্জি দরকার। আমি কিন্তু ব্যাগে করে চকলেটও নিয়ে এসেছি।”
মার্লিনা ব্যাগ থেকে অনেকগুলো চকলেট বের করে টেবিলে রাখলো৷
-“তুমি চকলেট নিতে পারো।”
মার্লিনা বেশ দুশ্চিন্তার সাথে কফিতে চুমুক দিলো। তারপর কিছুক্ষণের নীরবতা।
-“তুমি এত কষ্ট করে তোমার কাজের থেকে সময় বের ছুটে এসেছো আমার কথা শোনবার জন্য, এজন্য আমি তোমার কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
শাকিব হাসলো।
-“আপনার বাংলা কিন্তু বেশ ভালো। কোথায় শিখেছেন?”
মার্লিনা মলিন হাসলো। ভীষণ অনিচ্ছার হাসি।
-“হাসিব আমায় শিখিয়েছে। আমি ওর বাংলার ছাত্রী বলতে পারো। ও কিন্তু টিচার হিসেবে খুব কড়া।”
-“ভাইয়ার সাথে আপনার কতদিনের পরিচয়?”
এবারে মার্লিনা নড়চড়ে বসলো। লম্বা বক্তৃতা শুরুর আগে আমরা যেমন বসি তেমন।
-“দেখো শাকিব, আমি খুব বড় করে ভূমিকা টানবো না৷ বাংলায় আমার শব্দ ভান্ডার খুব অল্প। তাই কথাগুলোও আমি খুব সংক্ষিপ্ত করে তোমায় বলবো।
কথাগুলো যদিও আমি মিসেস লায়লাকেই শুধু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার মনে হয়েছে তিনি হয়তো এতটা মেন্টাল শক নিতে পারবেন না।”
শাকিব কফিতে চুমুক দিলো। একটু আগেই মিষ্টি লাগা কফিটা তার কাছে বিষের মত ঠেকলো।
-“তোমার ভাইয়ার সাথে আমার পরিচয়, ওর একটা ফটো এক্সিবিশনে। আমি তোমার ভাইয়ার আঁকা একটা ছবি কিনবো বলে ওর পেছনে পড়েছিলাম। রোজ ওকে ফোন করতাম। ও বিরক্ত হতো। কিন্তু আমি এতটাই নাছোরবান্দা হয়েছিলাম যে শেষ পর্যন্ত ছবিটা সে আমায় এমনিই দিয়ে দিয়েছিল। ব্যস, তারপর থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু। আমাদের প্রায় প্রতিটি উইকএন্ডেতেই দেখা হতে শুরু করলো। উইকএন্ডে ও সারাদিন ছবি আঁকে। আমরা দূরে কোথাও বেড়াতে যাই।হাসিব ছবি আঁকে, আমি দেখি। লাস্ট কিছুদিন যাবত আমি খেয়াল করছি হাসিব অসুস্থ। কিছুদিন পরপর ওর বাঁ-হাত ফুলে যাচ্ছে। আমরা ডক্টরের সাথে কনসাল্ট করি। ডক্টর বললেন, লাংসে পানি জমেছে।লাংস্ থেকে পানি ক্লিয়ার করাও হলো। এবং সেই একই ঘটনা পরবর্তীতে আবার ঘটলো।হাসিবকে জিজ্ঞেস করলে ও বললো, এটা খুব সাধারণ অসুখ। কিন্তু আমার খুব সন্দেহ হচ্ছিল ওর অসুস্থতা নিয়ে। ওর ডক্টরের সাথে যোগাযোগ করে আমি ওর মেডিকেল রিপোর্টস যোগাড় করলাম। এবং রিপোর্ট দেখে ভীষণ অবাক হলাম। সে লাংস্ ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেকেন্ড স্টেজ। কেমো চলছে, কিন্তু অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমি ওকে বললাম, বাড়িতে জানাতে। ও বলেছে, জানালে তোমরা দুশ্চিন্তা করবে। তাই আমি বাধ্য হয়ে কথা বললাম। আমার মনে হয়, হাসিবের এই অবস্থায় তোমাদের পাশে থাকা দরকার। বিশেষ করে মিসেস লায়লার। আফটার অল শি ইজ হিজ লিগ্যাল ওয়াইফ। তুমি কি একবার হাসিবের সাথে কথা বলবে?”
শাকিব অপ্রস্তুত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। এবং আবারও বসে পড়লো।
-“তুমি কথাগুলো আগে জানাওনি কেন?”
-“আমি জেনেছি অনলি থ্রি উইকস। এর মাঝেই কিন্তু আমি তোমাদের নক করেছি।”
শাকিব বিভ্রান্তের মতো বললো,
-“আমি তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করতে পারছি না মার্লিনা৷”
-“আমি কিন্তু এখন তোমাকে এর থেকেও অবিশ্বাস্য কিছু কথা বলবো শাকিব।হাসিব আর আমি খুব ভালো বন্ধু। ঠিক যতটা ভালো বন্ধুত্ব হলে একজন আরেকজনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে ঠিক ততটা ভালো বন্ধু।”
-“আমি বুঝতে পারছি মার্লিনা।”
-“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি শাকিব। আমাদের ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে এতটুকুর মধ্যে কথাটা শেষ করতে পারলে ভালো ছিল। কিন্তু এখানে আমাকে অত্যন্ত ব্যথার সাথে আরও কিছু কথা যোগ করতে হচ্ছে। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে আমরা খুব তাড়াতাড়ি একে অপরের ভীষণ কাছাকাছি চলে এলাম। একটা নিট এন্ড ক্লিন নির্ভরতার জায়গা তৈরি হলো আমাদের মাঝে।
এতটুকু পর্যন্ত সবটুকু ঠিক ছিল। কিন্তু এর মাঝে একদিন আমাদের মাঝে ভুল হয়। এক উইক এন্ডে হাসিব আর আমি বেড়াতে যাই। উদ্দেশ্য হাসিব ছবি আঁকবে। সেদিন হুট করেই ওয়েদার খুব খারাপ করে গেল। আমরা একটা কটেজ ভাড়া করে সেদিন সেখানে থেকে গেলাম। সেখানে মদ্যপ অবস্থায়, তুমি বলতে পারো একদম অবচেতনভাবে আমরা শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হই। ইনফ্যাক্ট যখন আমি আর হাসিব সচেতন হই তখনো সে বিষয়ে আমরা কেউই এতটা নিশ্চিত ছিলাম না। শুধু প্রশ্ন ছিল, আমাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে? কিছু কী হয়েছে? আমরা দুজনেই প্রচ্ছন্নভাবে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম। আমি আবারও বলছি আমরা এ ব্যাপারে একদমই নিশ্চিত ছিলাম না।
রেয়’কে আমি যখন কনসিভ করি, আমি খুবই আশ্চর্য হই। দেখো, আমি একটা মাত্র পুরুষের বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ নারী নই। সুতরাং তুমি জানো কোনো রিস্ক রেখে আমি আমার আনন্দ খুঁজি না। আমার তখনই মনে হলো, এই অঘটনটা আমার হাসিবের সাথেই ঘটেছে। কারণ শুধু সে রাতের ব্যাপারটাই আমি মনে করতে পারছিলাম না। হাসিব অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। এ পিওর হার্টেড গাই। তাই এবরশানের মতো একটি ব্যাপারে আমি গেলাম না। ভাবলাম, সন্তান এলে একজন ভালো মানুষেরই এলো। এবং রেয়’র জন্মের পর আমি খুব অবাক হলাম। ওর চোখ দুটো দেখতে একদম হাসিবের মতো। কৌতূহল থেকেই আমি ওদের ডি এনএ টেস্ট করি। তখন আমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারি হাসিব ইজ মাই চাইল্ডস বায়োলজিকাল ফাদার।”
-“ব্যাপারটা ভাইয়া কখন জানে?”
-“ওকে আমি এখনো বলিনি। এবং বলবোও না। কারণ রেয়’র কাস্টাডি নিয়ে আমি একদম চিন্তা করছি না।আমি জানি আমাদের দেশে ও ভালো লাইফ পাবে। আমি ভালো চাকরি করি। আই আর্ন ভেরি হ্যান্ডসাম এমাউন্ট। আমার চিন্তা হাসিবকে নিয়ে। ওর সারভাইভ করা নিয়ে। রেয় যখন বড় হবে তখন হাসিবকে অন্তত আঙ্কেল হিসেবেও যাতে পায়।”
-“আমি আপনার কথা কেন বিশ্বাস করবো। আমি কী করে বিশ্বাস করতে পারি?”
মার্লিনা ফোন করে তার সাহায্যকারী মেয়েটিকে ডেকে আনলো, যাকে সে একটু আগেই বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছিল। মেয়েটি বেবি ক্যারিয়ারে করে রেয়’কে নিয়ে এসেছে। রেয়’র বয়স দু’বছর! রেয় হাত-পা ছুড়ে কাঁদছে। শাকিব কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
-“ও রেয়?”
-“হ্যাঁ।”
মার্লিনা নির্বিকারভাবে রেয়’কে কোলে নিয়ে আদর করে কান্না থামালো।
শাকিব স্থির দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ দেখলো মার্লিনাকে।
কমবয়েসী একটি মেয়ে। চোখের নিচে ক্লান্তির পাহাড় জমে আছে।
-“তোমাদের বন্ধুত্বের শুরুতে তুমি কি জানতে ভাইয়া বিবাহিত?”
মার্লিনা বিষন্ন চোখে তাকালো।
-“আমি জানতাম। ইনফ্যাক্ট মিসেস লায়লা এবং মিমির অনেক ছবিও আমি দেখেছি।”
-“তারপরও তুমি কেন ভাইয়ার কাছাকাছি এলে?”
-“দেখো, আমাদের দেশে এটা একদম ম্যাটার করে না। আমি বলেছি, এটা একটা নিট এন্ড ক্লিন বন্ধুত্ব। উই বিলিভ ইন সেক্সুয়াল লিবার্টি। তারপরও আমি বলছি, ইট ওয়াজ এন অ্যাক্সিডেন্ট। হাসিব এখনো জানে না৷ তাকে আমি গেস করবারও সুযোগ দিইনি। আমি রেয়’র বাবা হিসেবে আমার বর্তমান বিশেষ বন্ধুটিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। হাসিব রেয়’কে মাইজেলের সন্তান হিসেবেই জানে।”
-“তুমি কেন এত নিঃস্বার্থভাবে সব ছেড়ে দিচ্ছো? তুমি ভাইয়াকে বলতে পারতে রেয় ওর সন্তান।”
মার্লিনা হাসলো।
-“আমি এটা বলামাত্রই হাসিব সুইসাইড করবে। হি ইজ এ কমপ্লিট ফ্যামিলি ম্যান। ও ওর বউ ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। ওর ফ্ল্যাটের সমস্ত জুড়ে মিসেস লায়লা এবং মিমির ছবি। আমি ওকে একদম কষ্ট দিতে পারবো না।
হি ইজ এ ভেরি গুড ফ্রেন্ড অফ মাইন।”
মার্লিনা উঠে দাঁড়ালো।
-“আমার কথা শেষ। আমাকে যেতে হবে৷”
-“আমি ভাইয়ার ডক্টরের সাথে কথা বলতে চাই।”
-“শিওর৷ আমি সব ডিটেল তোমাকে মেইল করে দিচ্ছি৷”
শাকিব দু-হাত বাড়ালো।
-“আমি কি রেয়’কে একবার কোলে নিতে পারি?”
মার্লিনা রেয়’কে শাকিবের দিকে এগিয়ে দিলো।
রেয় বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে শাকিবের দিকে।
মার্লিনা কাঠ কাঠ স্বরে বললো,
-“তুমি কি রেয়’র সঙ্গে কিছুক্ষণ একা থাকতে চাও।”
শাকিব জবাব দিলো না। মার্লিনা বেরিয়ে গেল। বিকেলের রোদ পড়তে শুরু করেছে। কাচের দেয়াল পেরিয়ে সেই রোদ রেয়’র নরম গালে এসে পড়ছে।
রেয় হাসছে, শাকিব ফিসফিস করে ডাকলো,
-“হেই হিরো। ইউ আর টোটালি লুক লাইক ইওর ফাদার।”
দূরে কোথাও মিষ্টি বেবি মিউজিক বাজছে।
শাকিব রেয়’র গালে গাল ঠেকিয়ে মাথা দোলাতে লাগলো। তার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে এক মিশ্র অনুভূতিতে। একই সঙ্গে গভীর আনন্দ ও গাঢ় ব্যাথায়। বারবার মিমির মুখটা ভাসছে চোখের সামনে। আহারে বেচারি এমন ভাইয়ের কথা কখনোও কি জানবে না?
চলবে
#তৃধাআনিকা