#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে_2
#Part_05
#Ariyana_Nur
মুহূর্তের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো কারোর মাথাই কিছু ঢুকছে না।নুহা আশুকে ধরে কান্না করছে।মনে হচ্ছে আঘাত আশুর না নুহার শরীরেই লেগেছে।
নুহা আর সাইফ যখন আশুদের অনেকটা সামনে চলে এসেছিলো তখনি ফুল স্পিটে একটা বাইক নুহাদের পাশ কেটে এসে আশুর সমনে দিয়ে যাওয়ার সময় আশুর হাতে নাইফ দিয়ে আঘাত করে চলে গেলো।যেতে যেতে একটা মোড়ানো কাগজ ওদের দিকে ছুড়ে ফেলে গেলো।আশু হাত ধরে আহ্ শব্দ করতেই নুহা চিৎকার করে আশুর নাম নিয়ে দৌড়ে চলে আসলো আশুর কাছে।
আশুর হাত দিয়ে গরগর রক্ত বের হচ্ছে।নীল তাড়াতাড়ি রুমাল বের করে আশুর হাত বেধে দিল।কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না।রক্ততে রুমাল ভিজে চুপচুপা হয়ে গেলো।নুহা আশুর হাতে আঘাত দেখে পাগলের মত করছে।নুহাকে কেউ সামলাতে পারছে না।আশু নিজের হাত এমন তাজা রক্তে চুপচুপ করতে দেখে তার মাথা ঘুরতে লাগলো।মুহূর্তের মধ্যে সব অন্ধকার দেখতে লাগলো।
আশু সেন্সলেস হয়ে পরে যাওয়ার আগেই নীল আশুকে ধরে ফেলল।এক মুহূর্ত দেরি না করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।নুহাও সে দিকে ছুটলো।সাইফ সেদিকে পা বাড়াতে গিয়ে আশেপাশে চোখ বুলাল।কেননা সাইফ তখন স্পষ্ট দেখেছে বাইকের থেকে কিছু একটা তারা এদিকে ছুড়ে মেরেছিল।আশেপাশে চোখ বুলাতেই একটা মোড়ানো কাগজ দেখতে পেল।কাগজটা তুলে নিয়ে সে সামনের দিকে পা বাড়ালো।
____________________________
কিছুক্ষন হল আশুর জ্ঞান ফিরেছে।আশু হাসপাতালের বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে।পাশে নুহা নাক টেনে কান্না করে যাচ্ছে।পাশেই সাইফ আর নীল দাড়িয়ে আছে।তাদের মুখে রয়েছে চিন্তার ছাপ।আশু নুহার হাত ধরে বলল…..
—আপি….
এভাবে কান্না কেন করছো বল?দেখ আমি ঠিক আছি।আর ডাঃ ও তো বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই হাত ঠিক হয়ে যাবে।তাহলে এমন কান্না কেন করছো তুমি?
নুহা চোখ মুছে ধরা গলায় বলল….
—বেশি কথা কম বল।দেখেছিস হাতে কতক্ষানি চোট লেগেছে।আবার বলে ঠিক আছি।আমি বুঝত পারছিনা কেন ঐ লোকগুলো এমন করলো।তুই কি ক্ষতি করেছিলি তাদেও।
সাইফ পকেট থেকে কাগজটা বের করে বলল….
—তা তো এটা পড়লেই জানা যাবে।
নীল অবাক হয়ে বলল….
—মানে!
সাইফঃঐ লোকগুলো পিচ্ছিকে আঘাত করার পর এই কাগজটা ওর দিকে ছুড়ে মেরেছিল।তা আসার সময় আমি নিয়ে এসেছিলাম।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—ক-কি লিখা আছে কাগজে?
নীল সাইফ এর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করল।
কাগজটাটে লাল কালি দিয়ে লিখা….
“ভালোই তো আছিস আমাকে কস্টে রেখে।তুই কি ভেবেছিস,আমার ভাইকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিজে স্বামী,সংসার নিয়ে সুখে থাকবি।তা তো আমি হতে দিব না।তুই আমার ভাইকে সরিয়েছিস আমি না হয় তোর বোনকে সরালাম।ভাববি না নিশানা মিস হয়েছে।আজ এইটুকু ট্রেলার ছিল।পুরো শো না হয় পরেই দেখিস।আমাকে চিনতে পেরেছিস তো?”
কাগজের লেখাটুকু পরে নীল হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইল।সবাই চুপ করে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই।কাজটা যে কার হতে পারে কারো আর বুঝতে বাকি নেই।নুহার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।আশু কিছুক্ষন থ’মেরে বসে থেকে ডুকরে কান্না করতে লাগল।সাইফ আশুর মাথায় হাত রেখে আশুকে সান্তনা দিয়ে বলল….
—পিচ্ছি!এভাবে কান্না করছিস কেন?আমি আছি তো।আমি থাকতে কারো সাধ্য নেই আমার পিচ্ছি বোনটাকে কেউ কিছু করবে।আজকের জন্য সরি।সামনে থেকেও কিছু করতে পারলাম না।পারলে এই আপরাধী ভাইটাকে ক্ষমা করে দিস।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—মা-মামাকে ছে-ছেড়ে দি-দিন।
নুহার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে নুহার দিকে তাকালো।
আশুঃআপি তুমি এগুলো কি বলছো?মাথা ঠিক আছে তোমার?
নীলঃবউমনি তুমি কি বলছো একবার ভেবে দেখেছো?
সাইফঃসব ঠিক হয়ে যাবে। আমি থাকতে আর কোন সমস্যা হবে না।
নুহা চেচিয়ে বলল….
—আপনিই তো পুরো সমস্যা।নতুন করে আর কোন সমস্যা কি হবে।কে বলেছিল আমাদের জীবনে আসতে।মামা আমাকে পাচার করে দিতে চেয়েছিল দিত।কে বলছিল আপনাকে তখন মহান হয়ে আমাকে বাচাতে।আমার জন্য দয়া দেখাতে।আমার জন্য আজ আশুর এই অবস্থা।দুদিন পরে আপনাদেরও ক্ষতি হবে।তাও আমার জন্য।সেদিন যদি আপনারা আমাদেকে ঐ ভাবে বিয়ে না করতেন তাহলে এই দিন আসতো না।আমি ভালো না থাকলেও আমার বোনটাতো ভালো থাকতো।আর আপনারাও ভালো থাকতেন।আপনি প্লিজ মামাকে ছেড়ে দিন।আমি চাইনা কোন ঝামেলা।প্লিজ….
কথাগুলো বলে নুহা আবার কান্না করতে লাগলো।নুহা উল্টা-পাল্টা কি বলছে তা নুহাও জানে না।তার মাথায় যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে।
(আশুঃতোমারা অনেকেই কালকে আমাকে দোষ দিয়েছো,বকেছো।আমি না হয় একটু তিড়িং বিড়িং বেশিই করি।কিন্তু এখানে আমার দোষ কোথায়🥺🥺)
সাইফ এর পুরো চেহারা লাল হয়ে রয়েছে।সাইফ কিছুক্ষন থ’মেরে দাড়িয়ে থেকে কোন কথা না বলেই কেবিনের বাহিরে চলে গেলো।আশু আর নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নুহার দিকে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।নুহা কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে গেলো।
বাড়িতে এসে নুহা কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।জ্ঞান ফেরার পরে সাইফ কে দেখেনি নুহা।এমন কি তাদের সাথে বাড়িতেও আসে নি সাইফ।তখন নুহা ভয়,রাগের মাথায় সইফকে ঐ সব কথা বললেও এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।মনের মাঝে অপরাধ বোধ কাজ করছে।নুহার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।
(অনেক সময় আমরা রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা অনেক কিছুই বলে থাকি।তখন আমরা কি বলছি বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই বুঝতে পারি আসলে আমাদের এই কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি।আর আমাদের ঐ কথার আঘাতে যে কারো হৃদয় রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে তা তখন না বুঝলেও পরে বুঝতে পারি।তখন যতই সরি বলি না কেন তাদের মনে যে দাগ লেগেছে তা কি সহজেই মোছা যাবে?)
বর্তমানঃ
ড্রিইংরুমের সোফায় বসে একের পর এক মদের গ্লাস খালি করছে একজন।নাহিদ ভয়ে ভয়ে বলল….
—স্যার!অনেক তো ড্রিঙ্কস করলের।আর করলে তো নিজেকে আপনি আর কন্ট্রোল করতে পারবেন না।এবার তো রাখুন।
লোকটি মাতাল গলায় বলল….
—আজ তো আমি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে চাচ্ছি না নাহিদ।আজ আমি খুশি ভীষন খুশি।আচ্ছা নাহিদ একটা কথা বলো তো,আমার সবাইকে কষ্ট পেতে দেখলে এতো খুশি কেনো লাগে?তোমারও কি আমার মত অন্যের কষ্ট দেখলে খুশি লাগে?
নাহিদ বিরবির করে বলল….
—আমি কি তোর মত আধ পাগল,সাইকো নাকি।যে অন্যের কষ্ট দেখলে খুশি লাগবে।
লোকটা নিভুনিভু চোখে নাহিদ এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—তুমি আমার মত অন্যের কষ্ট দেখল সান্তি পাও।তাই না?
নাহিদ মদের বোতল গুলো অন্য জায়গায় সরিয়ে বলল….
—স্যার।আপনার নেশা ধরে গেছে।আর খেতে হবে না এবার রেখে দিন।
—হোক নেশা।আমিও তো চাই তার নেশায় ডুব দিতে।কিন্তু পারি না,পারি না।আমি চাই…..
আর কিছু বলার আগেই লোকটা চোখ বুজে নিল।ভাড়ি নিশ্বাসের আওয়াজ শুনতেই নাহিদ বলল…..
—মর তুই।এই নেশাই ডুইবা মর।কোন সাধে যে তোর চাকরি আমি নিছিলাম।দাড়া তুই খালি বিয়াডা কইরা লই।তারপরে তোর এই চাকরিরে আমি লাথি মাইরা চইলা যামু।বড়লোক হওয়নের শখ আমার মিট্টা গেছে।আগেই ভালো ছিলাম সারাদিন কাজ কইরা চাইড্ডা ডাল ভাত খাইয়া তো নিস্চিন্তে ঘুমাইতে পারতাম।তার পরেও তো তোর এই গোলামি করতে হইতো না।আল্লাহ্ আমারে আমার লোভের ফল হাড়ে হাড়ে পাওয়াইয়া দিতাছে।তওবা করলাম মনের মত কাউরে পাইলেই আমি ফুরুৎ হমু।তখন তোর এই চাকরিরে সালাম।
নাহিদ এতিম একজন ছেলে।ছোটবেলায় বাবা মা মারা যাবার পর চাচার কাছেই বড় হয়েছে।পড়ালেখা কোন রকম একটু করেছে।সারাদিন কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে তার দিন ভালই চলতো।আস্তে আস্তে খারাপ লোকদের চক্করে পরে তার মনে লোভ চলে আসে।লোভে পরেই সে তাদের কাছ থেকে খবর নিয়ে বহুত কষ্ট করে এই চাকরিটা পায়।পড়াশুনা না জানা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হয় না।কেননা তাদের কাজে পড়াশুনা না হিসাবটা ঠিক করে করতে পারলেই চলে।আর নাহিদের কাজ হলো সারাদিন ওর স্যারের পিছনে ঘুরে বেড়ানো।প্রথম প্রথম এই কাজ ভালো লাগলেও এখন সে নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত।সব সমই নিজেকে গালাগাল করে।সব সময়ই চায় এখান থেকে পালিয়ে যেতে।কিন্তু খারাপ পথে একবার ঢুকলেই কি সহছে বের হওয়া যায়?
(লোভ মানুষকে কি না করাতে পারে।লোভে পরে মানুষ ছিনতাই,চুরি,ডাকাতি,দু নম্বরি ব্যবস্যা কত কিছুই না করে।এমনি লোভে পরে মানুষ খুন করতেও তাদের হাত কাপে না। “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” এক কথাটা সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে।যদিও কখন শয়তানের ধোকায় পরে আমাদের মনের মাঝে বিন্দু মাএ লোভ চলে আসে।তাহলে যেন আমরা সাথে সাথেই আল্লাহ্ এর কাছে তওবা করে তার থেকে বাচার পানাহার চাই।)
#চলবে,
#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে_2
#Part_06
#Ariyana_Nur
রাত ১২বেজে ১৭মিনিট। নুহা রুমের মধ্যে পায়চারী করছে।তার মাথায় নানার দুশ্চিন্তা ভর করেছে।তার দুশ্চিন্তার কারন হল সাইফ।সে এখনও বাড়িতে ফিরে নি।এই দুই মাসে কখনও সাইফকে এতো রাত অব্দি নুহা বাড়ির বাহিরে থাকতে দেখে নি।খাবার টেবিলে মিসেস চৌধুরী সাইফ এর কথা জিগ্যেস করলে নীল বলে,ও নাকি ওর কোন বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে।সেখান থেকেই ডিনার সেরে বাসায় আসবে।নীল এর কথার উপরে মিসেস চৌধুরী কিছু না বললেও নুহার বুঝতে বাকি নেই সাইফ কেনো বাড়িতে ফিরে নি।
নীল ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে। আশুর ঐ রক্তাত্ব হাত বার বার চোখে ভাসছে।চোখের সামনে আশুর এই অবস্থা হলো অথচ নিজে কিছুই করতে পারলো না তার জন্য নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।আশুকে এক পলক দেখার জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোন ভাবেই তা সম্ভব না।কেননা মিসেস চৌধুরী আশু অসুস্থ দেখে আজ আশুর কাছে ঘুমিয়েছে।
দরজা খোলার শব্দে নুহার ধ্যান ভাঙে।সামনে দিকে তাকাতেই দেখে সাইফ রুমে ঢুকেছে।নুহা সাইফকে দেখে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।সাইফ এর অগোছালো চুল,শার্টের এক হাতা কনুই পযর্ন্ত ফোল্ড করা,আরেক হাতা কিছুটা উপরে উঠানো।চোখ, মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে রয়েছে।চোখ গুলোও ফোলা ফোলা।সাইফ এর এই রুপে নুহা বড় সড় একটা ক্রাশ খেলো সাইফ এর উপর।সাইফ কোন কথা না বলে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।ওয়াসরুমের দরজা লাগানোর শব্দে নুহার হুস এলো।নুহা নিজেকে গালাগাল করতে করতে বলল…
—ছিহ্…নুহু।তোর এতো অধোপতন হয়েছে।নিজের বরের দিকেই লুচু মেয়েদের মত তাকিয়ে ছিলি।আবার বড়সড় একটা ক্রাশও খালি।তাও আবার এই রাগি লুক দেখে।ছিহ্.. তোর উপরে।তোকে টিনের চশমা পরাতে হবে।নুহা কতক্ষন নিজেকে গালাগাল করে আবার নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো….
—দেখেছি বেশ করেছি।আমার বর আমি দেখবো কার কি হুহ।তার উপর শুধু আমার অধিকার।যেই লুকেই ক্রাশ খাই না কেনো তাতে কার বউ এর কি হুহ।
নুহা কিছুক্ষন একা একাই বকর বকর করে নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলল….
—আজ হয়েছে কি আমার।কিছুক্ষন আগেও মাথায় কত শত চিন্তা ঘুরপাক করছিলো।সাহেব যে আমার উপর রেগে আছে সে খবর আছে আমার।তাকে কি ভাবে মানাবো তা না ভেবে আজাইরা চিন্তা ভাবনা শুরু করছি।আল্লাহ রহম করো।আর তার মান একটু তাড়াতাড়ি ভেঙে দিও।আমিন,ছুম্মা আমিন।
সাইফ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে কোন কথা না বলে চুপচাপ বাম হাত কপালে দিয়ে শুয়ে রইল।নুহা কাচুমাচু করে সাইফ এর সামনে এসে আমতা আমতা করে বলল….
—আ-আপনার কি ম-মাথা ব্যথা করছে মলম লাগিয়ে দিব?
সাইফ কোন কথা না বলে চুপ করে শুয়ে রইল।নুহা অনেকটা সাহস সন্চয় করে আবার কিছু বলবে তার আগেই সাইফ এর ডান হাতের দিকে চোখ পরতেই তার আত্মা কেপে উঠল।সাইফ এর ডান হাত কেমন থেতলিয়ে গেছে।অনেক জায়গায় রক্ত জমাট বেধে আছে।মনে হচ্ছে কোন শক্ত কিছুতে অনবরত ঘুষি দেবার ফলে এমনটা হয়েছে।এটা দেখার সাথে সাথে নুহার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো।নুহা কাপা কাপা হাতে সাইফ এর হাতের উপর হাত রাখতেই সাইফ ঝাড়া দিয়ে নুহার হাত সরিয়ে ফেলল।নুহা অস্রু ভেজা চোখে সাইফ এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—আ-আপনার হ-হাত এ-এমন হয়েছে কিভাবে?ঔষধ লাগাননি কেন?
সাইফ গম্ভীর গলায় বলল…
—ঔষধ লাগালেই যদি সব ক্ষত ভালো হয়ে যেত তাহলে তো ভালোই হত।
সাইফ এর কথার মানে বুঝতে নুহার ভুল হলো না।নুহা কথা না বাড়িয়ে মলম এনে সাইফ এর হাতে লাগাতে নিলেই সাইফ পুনরায় নুহার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয় রাগি গলায় বলল….
—কে বলেছে তোমাকে মলম লাগাতে?আমি বলেছি?আমার জন্য করুনা করতে হবে না।কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে না দিলেও চলবে।
শেষের কথাটা তাচ্ছিল্যের শুরে বলল সাইফ।
নুহা সাইফ এর কথা শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে বলল….
—স-সরি…
আসলে তখন আমি কথাগুলো আপনাকে ঐ ভাবে বলতে চাইনি।রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।পারলে ক্ষমা করে দিবেন।
কথাগুলো বলে নুহা চুপচাপ লাইট অফ করে শুয়ে কান্না করতে লাগলো।
সাইফ কোন কথা না বলে চুপ করে শুয়ে রইল।নুহার এই কান্না সাইফকে আরো বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে।তারপরেও মুখ ফুটে কিছু বলছে না।
______________________
আজ ছুটির দিন।সবাই বাড়িতে।কিন্তু সাইফ সকাল বেলা কাজ আছে বলে বেড়িয়েছে।এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো তার পরেও আসার খবর নেই।
নীল আশুর হাতের ব্যন্ডেজ চেন্জ করে দিচ্ছে।আশু চোখমুখ খিচে চুপচাপ বসে বসে চোখের জল ফেলছে। আশুর এই অবস্থা দেখে নীলের কষ্ট হতে লাগলো।নীল আশুকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল….
—তুমি যে এতো ডরপোক তা আগে জানতাম না তো।
আশু এক চোখ খুলে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল….
—আপনি ডরপোকের কি দেখলেন?
—এই যে এতোটুকু একটু ব্যন্ডেজ করাতে গিয়ে কান্না কাটি করে অস্থির হয়ে যাচ্ছো।আসলে পিচ্ছি হলে যা হয় আর কি।(শুর টেনে)
আশু কপট রাগ দেখিয়ে বলল….
—এই খবরদার আমাকে পিচ্ছি বলবেন না।আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।এবার টেনে উঠবো।সামনে এস এস সি দিব।এর পর কলেজে যাব।হুহ আসছে আমাকে পিচ্ছি বলতে।
নীল অবাক হওয়ার ভান করে বলল….
—ও এম জি!তুমি তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছো পিচ্ছি।
—আপনি আবার আমাকে পিচ্ছি বলছেন?আমার এই পিচ্ছি পিচ্ছি শুনতে ভালো লাগে না।আমাকে শুধু পিচ্ছি ভাইয়া বলবে তার মুখেই ভালো লাগে বুঝেছেন।
নীল ব্যন্ডেজ করা শেষ করে ব্যন্ডেজের উপর আদর দিয়ে বলল….
—ওকে শুধু পিচ্ছি বলবো না।আমি তোমাকে পিচ্ছি বউ বলে ডাকবো।হ্যপি….
নীলের কথা আশুর মাথায় কিছুই ঢুকলো না।বেচারী শক্ড হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
—বেন্ডেজ চেন্জ করে দিয়েছো ভাইয়া?
নুহা ওদের সামনে এসে কথাটা বলল।
নুহার কথায় আশুর হুস এলো।আশু নীলের দিকে একবার তাকিয়ে নড়েচড়ে চুপ করে বসে রইল।নীল সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে নিচু গলায় বলল….
—জ্বী বউমনি।
ওদের এমন ব্যবহারে নুহার মন খারাপ হয়ে গেলো।আসলে কালকের ঐ ঘটনার পর থেকে আশু নুহার সাথে কথা বলছে না।নীল টুকটাক কিছু বললেও গম্ভীর মুখে বলছে।নুহা মাথা নিচু করে বলল….
—সরি…..
তোমাদের ভাইয়াকে কষ্ট দেবার জন্য।তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তাই না হয় তখন উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি।তাই বলে সবাই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।তোমাদের ভাইয়াকেও অনেক বার সরি বলেছি।তার পরেও সে রাগ করে আছে।আমি না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছি তার জন্য তো ক্ষমাও চাচ্ছি।তার পরেও তোমরা……
থাক আর তোমাদের কে ডিস্টাব করবো না।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
কথাগুলো বলে নুহা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আশু আর নীল কিছু না বলে নুহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
______________________
সন্ধ্যার পর থেকে আশুর রুমে বসে আশু,নীল,নুহা গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে।তাদের চিন্তার মূল কারন হলো কিভাবে সাইফ এর মান ভাঙাবে।
ও আপনাদেরকে তো বলাই হয়নি আশু আর নীল দুজন নুহার সাথে মান অভিমান সব শেষ করে এখন নুহাকে টিপর্স দিতে বসেছে সাইফ এর রাগ ভাঙানোর জন্য।
নীলঃবউমনি তুমি এক কাজ করো।একগুচ্ছো লাল গোলাপ নিয়ে ভাইয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে লাভ ইউ বলে দাও।তাহলেই দেখবে ভাইয়ার রাগ পানি হয়ে গেছে।গোলাপ নিয়ে চিন্তা করো না।আমি মেনেজ করবো।(ভাব দেখিয়ে)
আশুঃবুদ্ধি সুদ্ধি সব কি বিক্রি করে দিয়েছেন?আরে আমিও কি বলছি আপনি তো এমনেই মাথা মোটা।আপনার থেকে ভালো কিই বা আর আশা করা যায়।(রাগ দেখিয়ে)
নীলঃকেনো?এখানে খারাপ কোথায়?বউমনি তুমি এমনটা করেই দেখ একশতে একশ র্পাসেন্ট কাজে দিবে।
আশুঃঘোড়ার ডিম কাজে দিবে।আপি তুমি ভুলেও এমন করো না।
নীলঃএখানে খারাপ কোথায় তাই তো বুঝছিনা।
—জীবনে শুনেছেন মেয়েরা আগে প্রপোজ করে।আগে ভাইয়া প্রপোজ করবে তার পরে না হয় আপি করবে।
—কেন,কেন?তোমরা মেয়েরা সব সময় এটা কেন আশা করো ছেলেদেরকেই আগে প্রপোজ করতে হবে।মেয়েরা আগে করলে দোষের কি?
—নিয়ম বলে একটা কথা আছে।কিন্তু আপনার মত মাথামোটার মাথায় এসব ঢুকবে না।হুহ….
—তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।
—আপনার মান আছে যে আপমান করবো।মাথামোটা একটা।
ব্যস শুরু হয়ে গেলো তাদের যুদ্ধ।নুহা একবার নীলের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার আশুর দিকে।নুহা মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে এদের নিয়ে কি আমি আমার প্রবলেম স্লভ করার জন্য বসেছি নাকি তাদের ঝগড়া দেখার জন্য।
নুহা কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে বসে থেকে দাড়িয়ে জোরে ধমক দিয়ে বলল…..
—চুপ…..আর একটাও কথা না।
(আপনাদের কি মনে হয় আশু আর নীলের বুদ্ধি নুহার কাজে দিবে?নাকি নুহাকে আরো ফেসাদে ফেলবে?)
#চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)