#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে_2
#Part_07
#Ariyana_Nur
—চুপ….আর একটাও কথা না।দুটোকে মন চাচ্ছে পচা পানিতে ফেলে হাবুডুবু খাওয়াতে।দিন দিন বড় হচ্ছে না বাচ্চা হচ্ছে।
নুহার ধমক শুনে আশু আর নীল দুজন মুখে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।ওদের দেখে মনে হচ্ছে ক্লাসের মধ্যে দুষ্টুমি করার জন্য স্যার বকেছে।নুহা বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলল….
—কি শুরু করেছো তোমরা?তোমরা কি আমার প্রবলেম স্লভ করতে এসেছো নাকি তোমাদের এই টম এন্ড জেরির ঝগড়া দেখাতে?
নীল নিচু শুরে বলল….
—বউ মনি আমি তো তোমাকে আইডিয়া দিচ্ছিলাম।কিন্তু ওই তো….(আশুকে দেখিয়ে)
আশুঃহুহ কি যে আমার আইডিয়া দিচ্ছিলেন তা তো দেখলাম।একেবারে বেকার আইডিয়া।
নুহাঃআচ্ছা ওর আইডিয়া তো বেকার।তাহলে তুই একটা ভালো আইডিয়া দে তো….(রাগি গলায়)
আশু এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল…..
—ভাইয়াকে দু’বক্স চকলেট কিনে দিয়ে সরি বল।তাহলেই দেখবে ভাইয়ার রাগ পানি হয়ে গেছে।(খুশি হয়ে)
নুহা দাতে দাত চেপে বলল….
—তোর ভাইয়াকে কি তোর মত পিচ্ছি পোলাপান মনে করেছিস।যে চকলেট পেয়ে ধ্যেই ধ্যেই করে আমাকে মাফ করে দিবে।
নুহার কথা শুনে আশু মুখটা একটু খানি করে দাড়িয়ে রইল। লীন কিছুক্ষন আশুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হু হা করে হাসতে লাগলো।কোন রকম হাসি থামিয়ে বলল….
—বউ মনি তুমি এই পিচ্ছিদের কাছে কেন আইডিয়া চাচ্ছো।পিচ্ছি মানুষ এর থেকে ভালো কিই বা আইডিয়া দিবে।
নুহা নীল এর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নীল হাসি থামিয়ে আবার গুড বয় এর মত চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।
তিন জন আবার সেই গভীর চিন্তায় ডুব দিন।আশু রুম জুরে পায়চারী করছে আর আইডিয়া বের করছে।হঠাৎ আশু উওেজিত হয়ে বলল….
—পেয়ে গেছি হান্ডেটে হান্ডেট র্পাসেন্ট কাজে দেয়ার আইডিয়া।
নীল আর নুহা আশুর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালেই আশু বলল…
—তুমি এক কাজ করো, ভাইয়াকে পিছন থেকে টাইট করে জরিয়ে ধরে সরি বলে দিবে।ব্যস ভাইয়ার রাগ পানি হয়ে যাবে।
নুহা আমতা আমতা করে বলল….
—ত-তোর এই বুদ্ধি তোর কাছে রাখ তা কাজে দিবে না।
আশুঃ কেন কাজে দিবে না।তুমি একবার ট্রাই তো করে দেখ।
নুহা কাচুমাচু করে বলল….
—লাগবে না ট্রাই করা।আমি এমনেই জানি।
আশুঃকেন এতে সমস্যা কোথায়?
নুহা আমতা আমতা করে বলল….
—আ-আমি এ-এটা করতে পারবো না।তাছাড়া এটা কাজেও দিবে না।
আশুঃ কেন পারবে না।আরে ভাই একবার ট্রাই করেই তো দেখো।দেখতে সম্যসা কোথায়।যদি কাজে লেগে যায়।
নীলঃহ্যা বউমনি এটা করে দেখতে পারো।আইডিয়া টা খারাপ না।আমি আবার ভালোকে ভালো বলে উৎসাহ দিতে জানি।কারো মত ভালোকে খারাপ বলে উল্টিয়ে ফেলে দেই না।(ভাব নিয়ে)
আশু কটমট করে নীলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল….
—আপনাকে আমি পরে দেখে নিব।
নীল বাকা হেসে ফিসফিস করে বলল….
—ওকে নো প্রবলেম বেবি।যখন দেখার ইচ্ছে হবে চলে এসো আমার কাছে।(চোখ মেরে)
আশু নীলের দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—তাহলে এটাই ফাইনাল আপি।পরে যদি এই আইডিয়া কাজে না দেয় তখন না হয় অন্য আইডিয়া বের করা যাবে।
নুহা কাচুমাচু করে বলল…
—এটা কাজে দিবে না।অন্য আইডিয়া বের করো।
আশুঃআন্তাজেই কাজে দিবে না।একবার করে তো দেখো।সম্যসা কোথায় তাই তো বুঝছিনা।(বিরক্ত হয়ে)
নুহা মনে মনে বলল….
—সম্যসা তোর ভাইয়ের মাথায়।আমি তোদের কিভাবে বলি যে,আজ কত কষ্ট করে লজ্জা-শরম সব বিক্রি করে তাকে জরিয়ে ধরে সরি বললাম। ঘাড়ত্যেড়া কিছু না বলেই চলে গেলো।হুহ ভাব বেশি।নেহাত ভুলটা আমার। তা না হলে তার রাগ ভাঙাতে আমার বয়েই গেছে।
রুনা এতোক্ষন বাহিরে দাড়িয়ে সব কথা শুনছিলো।এবার আর চুপ করে থাকতে না পেরে রুমে এসে বলল….
—আরে ছোড বউ মনি বড় বউমনি তো আজ সকালেই বড় দাদারে জরাইয়া ধইরা কাইন্ডা কাইট্টা সেরি কইছে।কিন্তু বড় দাদায় তো কিছু না কইয়াই গেছে গা।
রুনার কথা শুনে আশু আর নীল গোল গোল চোখ করে নুহার দিকে তাকিয়ে রইল।নুহা নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….
—এরে…এতো এবার আমার হাটে হাড়ি ভেঙে দিল।এখন এ দুটোর থেকে কিভাবে বাজবো।
নুহা কপট রাগ দেখিয়ে রুনাকে বলল….
—তুমি আমাদের রুমে উকি দিতে গিয়েছিলে কেন?জানোনা কারো রুমে উকি দেওয়া ভালো না।
রুনাঃ উকি দিতে যামু ক্যান।দরজা খোলা ছিলো আমি দেখছি।তুমি লজ্জা পাইয়ো না।আমিই তো।আর চিন্তা কইরো না আমি কাউরে কমু না।আমি কিন্তু তোমারে একটা জব্বর বুদ্ধি দিতে পারি।
নুহাঃসবাইকে বলে দিয়ে এখন বলছো বলবে না।ভালো বেশ ভালো।আর তোমার ঐ জব্বর বুদ্ধি না তোমার কাছেই রাখো।লাগবেনা কারো বুদ্ধি আমার।
নুহা রাগ দেখিয়ে হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলো।রুনা,আশু,নীল একে অপরের দিকে তাকিয়ে হু-হা হাসতে লাগলো।
নুহা রুমে এসে সোফায় মুখ গোমরা করে বসে সকালের কথা ভাবতে লাগলো।
ফ্লাসব্যাকঃ
আজ সকালে সাইফ যখন বাহিরে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিল।তখন নুহা গুটিগুটি পায়ে সাইফ এর পিছনে দাড়িয়ে কাপাকাপা হাতে সাইফকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল…
—সরি….
আমার ভুল হয়ে গেছে।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।আমি প্রমিস করছি আর কখনো এমন হবে না।আর রাগ করে থাকবেন না প্লিজ।
কথাগুলো বলার সময় নুহার চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল।
সাইফ শক্ড হয়ে দাড়িয়ে নুহার কথা শুনছিলো।একটু পর সাইফ নুহাকে ছাড়িয়ে নুহার দিকে ঘুড়ে নুহার চোখের জল মুছে দিল।কিছু বলবে তার আগেই পাশের মিররে বাহিরে রুনাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই চলে গেলো।নুহা সাইফ এর এমন ব্যবহারে সাইফ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
_____________________
সাইফ বাহিরের থেকে এসে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।কিন্তু কোথাও নুহাকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে বলল….
—নিচেও দেখলাম না।রুমেও নাই।গেলো কোথায়?মনে হয় আশুর রুমে।
বেশি কিছু না ভেবে ওয়াসরুমে দিকে পা বাড়ালো।সাইফ ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসলো।
এদিকে নুহা দোয়া দুরুদ পরে ওদের বুদ্ধি মত রুমে প্রবেশ করলো।আস্তে আস্তে সাইফ এর সামনে গিয়ে কাপা কাপা হাতে সাইফ এর দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল…
—আন্নের কাইল্লা চা।
সাইফ মনে করেছে নুহা রুমে ঢুকেছে।তাই সে এতোক্ষন চোখ বন্ধ করেই ছিলো।কিন্তু এমন একটা কথা শুনে সাইফ ফট করে চোখ খুলে তাকালো।সামনের বাংলা কাপড় পরা,লম্বা করে ঘোমটা দেওয়া একজন মহিলাকে দেখে গম্ভীর গলায় বলল….
—এই কে আপনি?কোন সাহসে আপনি আমার রুমে ঢুকেছেন?
—কথা পরে কইয়েন।আগে আন্নের এই কাইল্লা চা ধরেন।মোর হাত পুইড়া যাইতাছে আন্নের এই চা ধইরা রাখতে রাখতে।আর আন্নে মোর লগে এভা কইরা কতা কইতাছেন ক্যান।(শুর পাল্টিয়ে)
সাইফ রাগি গলায় বলল….
—কফির মগ ধরবো মানে?আপনি ভাবলেন কি করে বলা নেই কওয়া নেই আপনি কফি নিয়ে আসবেন আর আমি সেই কফি খাব।আগে বলুন কে আপনি?
নুহা কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে নেকা কান্না করে বলল….
—এ-হা মোর আল্লাহ্ মুই কই যামু গো….মোরে উঠাইয়া নাও গো..মোর শোয়ামী মোরে চিনে না গো…
প্রথম বার নুহার কন্ঠ সাইফ চিনতে না পারলেও এবার ঠিকি চিনতে পেরেছে।সাইফ কিছুক্ষন নুহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে নুহাকে পর্যবেক্ষণ করে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।নুহার এই সব কান্ড দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগলো নুহা তার মান ভাঙানোর জন্য আর কি কি করতে পারে তা দেখার।
সাইফ গম্ভীর গলায় বলল….
—আশ্চর্য তো।ভদ্রতা জানেন না।এখানে এভাবে কান্না করছেন কেন?
—না কাইন্দা কই যামু।মোর শোয়ামী মোরে চিনে না।এই দুক্কু আমি কারে দেখামু গো….এহন আমার কি হবে।আল্লাহ্ গো….মোরে পথ দেহাও গো…..
নুহা ন্যেকা কান্না করছে আর মনে মনে বলছে….
—নুহুরে তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।শিখলি এক অন্চলের ভাষা।আর এখানে এসে সব গুলিয়ে ফেলেছিস।দুই তিন অন্চলের ভাষা এক সাথে মিশিয়ে জগা খিচুড়ি পাকাচ্ছিস।
রুমের বাহিরে আড়াল থেকে রুনা,আশু,নীল তিন জন নুহার এই কাহিনী দেখে মিটমিট করে হাসছে।আর এদিকে সাইফ বহুত কষ্টে হাসি লুকিয়ে মুখে গম্ভীর্য বজায় রেখেছে।
#চলবে,
#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে_2
#Part_08
#Ariyana_Nur
সাইফ ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে।ঘড়িতে ৮:১৫বাজে।এতোক্ষন পযর্ন্ত ও পরে পরে ঘুমালো অথচ নুহা তাকে একবারও ডেকে দিলো না তার জন্য মনে মনে একটু রাগ করল।পুনরায় ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই ফ্রেস হতে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেল।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সাইফ এর রাগ আরো দ্বিগুন হয়ে গেলো।কেননা প্রতিদিন নুহা সাইফ অফিসে যাওয়ার আগে সাইফ এর কাপড় কাবাড থেকে বের করে রাখে।আর দরকারি সব কিছু গুছিয়ে বেডের এক কোনে রেখে দেয়।আজ কোন কিছুই রাখা নেই।সাইফ কাবাড থেকে কাপড় বের করতে গিয়ে কাবাডের অর্ধেক কাপড় এলোমেলো করে ফেলল।নুহাকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেল।সাইফ নিজের উপর বিরক্ত হয়ে বলল….
—আগেতো নিজের সব কিছু নিজের হাতেই গুছিয়ে রাখতাম।এই দুই মাসে এমন আগোছালো কি করে হলাম?
সাইফ ছোট খাটো একটা যুদ্ধ করে রেডি হয়ে নিচে গেলো।নিচে এসে নুহাকে না দেখে তার মেজাজ আরো চওড়া হয়ে গেলো।কোন রকম নাস্তা করে আফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।
এতোক্ষন আড়াল থেকে নুহা সাইফকে পর্যবেক্ষণ করছিল।সাইফ চলে যেতেই নুহার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল।কালকের ঐ অদ্ভুত কান্ড কারখানা করেও নুহা সাইফ এর মান ভাঙাতে পারেনি।তাই আজ ও ইচ্ছে করেই সাইফকে ডেকে উঠায়নি।আর কাবাডে সাইফ এর কাপড় এলোমেলো করে রেখেছে।যাতে কাপড় না পেয়ে সাইফ নিজের থেকে নুহাকে ডাকে।কিন্তু না….সাইফ নুহার আসায় এক বালতি পানি ফেলে চলে গেলো।
__________________________
আশুর স্কুলের সামনে নীলাভ গাড়ি পার্ক করে আশু দিকে তাকায়ি দেখে আশু গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আশু আজ স্কুলের জন্য বাড়ি থেকে নীল এর সাথে বের হওয়ার পর স্কুলে না এসে অন্য এক জায়গায় যাওয়ার কথা বলেছিলো নীলকে।কিন্তু নীল আশুকে সরাসরি না বলে দিয়ে আশুকে নিয়ে স্কুলে চলে আসে।তাতেই বেচারী রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে। নীলাভ আশুর গাল টেনে দিয়ে বলল….
—এভাবে গাল ফুলিয়ে রেখেছো কেন?ক্লাস করার কি ইচ্ছে নেই নাকি এখানে এভাবেই বসে থাকবে?
আশু গালে হাত বুলিয়ে কটমট করে নীলাভের দিকে তাকিয়ে বলল….
—আপনি খুব খারাপ,ভীষন পচা।কথা বলবো না আমি আপনার সাথে।
কথাটা বলে আবার গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল।
নীলাভ মুচকি হেসে বলল….
—বুঝেছি আমার পিচ্ছি বউটা আমার উপর রাগ করেছে।তা আমি কি জানতে পারি তার এই রাগের কারন কি?
আশু কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইল।
—কথা বলবে না আমার সাথে?
আশু মাথা নাড়িয়ে না বলল।
—তুমি যেখানে যেতে চাও সেখানে নিয়ে গেলোও না?
আশু ফট করে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল….
—সত্যি আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?
নীল আশুর নাক টেনে দিয়ে বলল….
—হুম নিয়ে যাব।
আশু খুশি হয়ে বলল….
—তাহলে চলুন।দেরি করছেন কেন?
—জ্বি-না ম্যাম।এখন না।আপনার ছুটির পরে আপনি যেখানে যেতে চাইবেন আমি আপনাকে সেখানেই নিয়ে যাব।
আশু ঠোট ফুলিয়ে বলল….
—একদিন ক্লাস বন্ধ দিলে কিছু হবে না।
—একদিন!কদিন ধরে ক্লাস বন্ধ করছো সেই খবর আছে তোমার?তাছাড়া আমার একটা জরুরী কাজ আছে।তোমার ছুটি হতে হতে আমি আমার কাজ শেষ করে চলে আসতে পারবো।
আশু মন খারাপ করে বলল….
—ঠিক আছে।আসি…..
আশু গাড়ির ডোর খুলতে নিলে নীল আশুর হাত ধরে বলল….
—মন খারাপ?
আশু মাথা নিচু করে গম্ভীর গলায় বলল….
—না…
—সাবধানে থাকবে।কারো সাথে কোন ঝামেলায় জড়াবে না।আর হ্যা পড়াশুনায় ফাকিবাজি দিয়ো না।আর বাদরের মত বেশি নাচানাচি করবে না।(নীল আশুকে রাগানোর জন্য শেষের কথাটা বলল)
আশু নীলের হাত থেকে নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলল….
—বাদরের মত নাচানাচি আপনি করেন আমি না।ঠিক টাইমে চলে আসবেন।আর এসে গাড়ি থেকে নামবেন না। মনে থাকে যেন।যদি ঊনিশ বিশ হয় তাহলে আপনার একদিন আমার যেই কয়দিন লাগে।
আশু রাগি গলায় কথাগুলো বলে গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে গেডের ভিতরে চলে গেলো।আশুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নীল মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
_______________________________
সাইফ অফিসে আসার পর থেকেই সবার সাথে রাগ দেখাচ্ছে।কেন এমন করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।সব কিছুতেই তার বিরক্ত লাগছে।ফোন হাতে নিয়ে বাড়ির নাম্বারে ডায়েল করল।কিন্তু কয়েকবার ফোন দেবার পর ফোন না ধরায় বিরক্ত হয়ে শব্দ করে ফোনটা রেখে দিল।সাইফ দুহাত দিয়ে চুলগুলো টেনে চোখ বন্ধ করে সামনে ফাইলগুলো উপর মাথা রাখলো।
কিছুক্ষন পর মাথায় কারো কোমল হাতের ছোয়া পেতেই সাইফ ঝটপট মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কেননা সামনে নুহা দাড়িয়ে আছে।নুহা সাইফ এর চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে বলল….
—এতো কাজের পেশার নিজের উপর কেনো নাও। যদি নিজে ঠিক না থাকো তাহলে কিভাবে সবাইকে হিটলার গিড়ি রুপ দেখাবে। অসুস্থ হলে তো এতোগুলো কর্মচারীর সবাই ফাকিবাজি শুরু করবে।বলবে আমাদেরর হিটলার বস অসুস্থ এখন আমরা ইচ্ছে মত ফাকিবাজি দিতে পারবো।কেউ আমাদের উপর কাজের জন্য আর হিটলার গিড়ি করতে পারবে না।বুঝেছো….
চুলগুলো আবার কিছুটা এলোমেলো করে দিয়ে।
সাইফ অবাক হয়ে বলল….
—তুমি এখানে??
নুহা মুচকি হেসে সাইফ এর সামনের টেবিলের উপর বসে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল…..
—বাহ্ অফিস তো ভালোই পরিপাটি করে রেখেছেন।তা সাহেব আমার রুমটাকে এমন গরুঘড় বানিয়ে এসেছেন কেন?
সাইফ গম্ভীর গলায় বলল….
—রুমটাকি তোমার একার নাকি?
নুহা এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল…..
—হুম।রুমটাও আমার রুমের মানুষটাও।
—এখানে কিভাবে এলে।তোমাকে আমার কেবিনে কে ঢুকতে দিয়েছে?
—দরজার বাহিরের একজন লোক তো আমাকে ঢুকতেই দিতে চাচ্ছিল না।বলে কি স্যার এখন ভীষন রেগে আছে।আগে স্যার এর পারমিশন নিয়ে আসি তারপরে না হয় স্যার এর সাথে দেখা করবেন।বিনা পারমিশনে স্যার এর কেবিনে ঢুকরে স্যার রাগ করবে।আমিও বলে এসেছি আপনার স্যার এর বস আমি।আমি তার কেবিনে গেলে তিনি রাগ করবেন না।উল্টো তার সব রাগ হাওয়া হয়ে যাবে।
সাইফ নুহার কথাশুনে ভ্রু কুচকে নুহার দিকে তাকিয়ে বলল….
—জ্বর টর বাধিয়েছো নাকি উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছো?
নুহা গাল ফুলিয়ে বলল….
—সরাদিনে তো কিছুই খাইনি উল্টাপাল্টা আবার কি খাব।
সাইফ রেগে বলল…..
—কটা বাজে দেখেছো?সারাদিনে কিছু খাওনি কেন?নিজের একটু কেয়ার করলে কি এমন ক্ষতি হয় তোমার?এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?
নুহা ছলছল চোখে সাইফ এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—তুমি আছো তো…..
সাইফ নুহাকে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো।উল্টো দিকে ঘুরে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে লাগল।
নুহা গুটিগুটি পায়ে সাইফ এর সামনে এসে সাইফকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আর কত অভিমান করে থাকবে?সরি তো….
ভুল না হয় করেই ফেলেছি তাই বলে কি একটুও ক্ষমা করা যায় না।সাস্তি দিলে তো আর কত দিবে?প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।তোমার মায়াবী পরিকে ক্ষমা করে দাও।
কথাগুলো বলে নুহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।
সাইফ কিছু না বলে নুহাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নুহার চোখের জল মুছে দিয়ে নুহাকে জরিয়ে ধরল।
(আল্লাহ্ গো মান-আভিমান শেষ হইছে)
________________________
পাশাপাশি সোফায় বসে আছে মিঃখান,নীল আর আশু।মিঃখান আর নীল কথা বলছে।আশু চুপ করে বসে আছে।তাদের কথার মাঝেই আশু বলল….
—বাবা…..
মিঃখান কথা থামিয়ে বলল….
—হ্যা মা বল,কিছু বলবি?
আশু নিজেকে শক্ত করে বলল…..
—আমি আমাদের অতীত জানতে চাই।কেনো আর পাচটা পরিবারের মত আমাদের পরিবারটা না।কেনো তোমরা এক সাথে থাকো না।আর কেনই বা মা আপির সাথে এমন ব্যবহার করে।আমি সব জানতে চাই বাবা।
#চলবে,