#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে_2
#Part_11
#Ariyana_Nur
নুহার কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে আশু।নুহা আশুর মুখের দিকে তাকিয়ে পরম মমতায় আশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আশুকে চুপচাপ থাকতে দেখে নুহা বলল….
—কি হয়েছে তোর?তোকে এমন দেখা যাচ্ছে কেন?
আশু আরেকটু নুহার কোলে গুটিয়ে শুয়ে বলল…
—তুমি এমন কেন আপি?
নুহা কপালে ভাজ ফেলে বলল….
—কেমন???
আশু কিছু না বলে চুপ করে রইল।নুহা আবার জিগ্যেস করল…..
—বললিনা কেমন?
—কিছু না।
নুহা পুনরায় কিছু বলবে তার আগেই রুনা ধুমধাম করে ওদের রুমে এসে গাল ফুলিয়ে ওদের সামনে বসে পড়ল।রুনাকে দেখে আশু অবাক হয়ে নুহার দিকে তাকাল।নুহা রুনাকে একবার ভালো মত পর্যবেক্ষণ করে বলল….
—কি হয়েছে রুনা?
রুনা তেজী গলায় বলল…
—কি হয় নাই হেইডা কও।আমার মাথায় আগুন লাগছে আগুন।
আশু দুষ্টমির শুরে বলল….
—তাহলে এই আগুন নিভাতে মাথায় কি ঢানবো?পানি,পেট্রল নাকি বালু?
রুনা কাদো কাদো হয়ে বলল….
—ছোড বউমনি তুমি আমার মজা লইতাছো?আমার মাথায় কিন্তু সত্য সত্যই আগুন লাগছে।
নুহা আশুর দিক চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…
—সব সময় তোর ফাজলামো না করলে হয় না।সিরিয়াস বিষয়েও তোর ফাজলামো।
আশু উঠে আয়েশ করে বসে বলল….
—রুনাপুই তো অধের্ক কথা বলছে।পুরো কথা না বললে বুঝবো কিভাবে কতটা সিরিয়াস বিষয়।
রুনাঃকি কমু দুঃখের কথা কও।আমার এক খালায় ফোন দিছিল।সে কয় কোন ছেমরায় নাকি আমারে পছন্দ করে।আমারে বিয়া করার লিগা কুত্তা পাগল হইয়া গেছে।আমি তো প্রথমেই খালারে না কইরা দিছি আমি এহন বিয়া করুম না।আমি না করছি তাও আমার কথা হুনে নাই খালায়।কয় যদি না দেহা করি তাইলে তার সম্মান থাকবো না।আমি এহন কি করুম কও।
আশু এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে রুনার কথা শুনছিলো।রুনার কথা শেষ হতেই আশু বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল….
—ওও এই ব্যপার।
রুনা কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে বলল….
—আমি এদিকে চিন্তায় মরতাছি আর তোমার কাছে সামান্য মনে হইতাছে?
নুহাঃওর কথা বাদ দাও তুমি।আমার মনে হয় তোমার দেখা করা উচিত।যেহেতু এখানে সম্মান জরিয়ে আছে।আর দেখা করলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।
আশু নিজের হাতের নখ খুটতে খুটতে বলল….
—আপি ঠিক বলেছে তোমার তার সাথে দেখা করা উচিত।আর দেখা করতে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও।
নুহা কাপাল ভাজ করে বলল…..
—তুই ঐ খানে গিয়ে কি করবি?
আশু শয়তানি হাসি দিয়ে বলল….
—আমি না গেলে খাতির দারি করবো কি ভাবে।আমার রুনাপুকে দেখতে আসবে আর আমি একটু খাতির দারি করবো না তা কি হয়।রুনাপু তুমি এক কাজ করো তাকে আমাদের বাসার পাশের কোন এক রেস্টুরেন্টে আসতে বল।
নুহা রাগি গলায় বলল….
—তোর মাথায় যে শয়তানি বুদ্ধি চলছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি।তোমার ওখানে যাবার দরকার নেই।
আশু নুহার কথায় পাত্তা না দিয়ে পিছন থেকে রুনার গলা জরিয়ে ধরে বলল….
—একদম চিন্তে করবে না।আমি সব সামলে নিব।তুমি শুধু যাবার জন্য হ্যা বলে দাও।বেটাকে এমন শিক্ষে দিব দ্বিতীয় বার তোমার নাম নেওয়ার আগে চৌদ্দবার ভাববে।
রুনাঃতা না হয় বুঝলাম।কিন্তু ঐ ছেমরারে রেস্টুরেন্টে ফেস্টুরেন্টে কেন আসতে কমু?
আশুঃআরে রেস্টুরেন্টে না আসলে খাতির দারির সাথে পকেট কিভাব সাফ করবো।
রুনাঃযদি কোন সম্যসা হয়?আর তোমারে কি ছোড দাদায় আমার লগে যাইতে দিব?
আশুঃআরে চিন্তা কইরো না।তোমার ছোড দাদায় আমারে যাইতেও দিব ভালাও কইবো।
____________________________
সাদের এক কোনে উদাস মনে দাড়িয়ে রয়েছে নীলাভ।মনের মধ্যে ঘুরঘুর করছে হাজারো প্রশ্ন।কোন বোন যে কোন বোনের জন্য এমন করতে পারে তা ওর জানা ছিল না।আচ্ছা সব বোনরাই কি এমন নাকি শুধু নুহাই এমন?ওর যদি একটা বড় বোন থাকতো তাহলে সেও কি নুহার মত তাকে ভালোবাসতো,আগলে রাখতো? আর একটা মা কিভাবে এমন পাষাণ হতে পারে?কিভাবে নিজের প্রিয় মানুগুলোর সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে?নিজের কলিজার টুকরো মেয়েদেরর সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করতে কি একটুও তার বুক কাপেনি?একটুও কি তাদের ময়াভরা চেহারা দেখে তার কষ্ট হয়নি?ঐ অমানুষটার কথায় চক্রে পরে কি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছিলো?তার বিবেক কি একবারো তাকে বলে নি তুই ভুল করছিস?সেদিন তার যেমন ব্যবহার দেখলাম তা দেখে মনে তো হয় না তার মধ্যে কোন মায়া মমতা বাকি আছে।যদি থাকতো তাহলে কখনো কোন মা নিজের চোখের সামনে নিজের মেয়েদের খারাপ লোকদের সাথে বিয়ে হতে দেখে মৃত্যুর ভয়ে চুপ করে বসে থাকতো না।
নীলের ভাবনার মাধ্যেই কাধে কারো হাতের স্পর্স পেল।নীল এর এই স্পর্স চিনতে ভুল হলো না।নীল সামনের দিকে উদাস মনে তাকিয়ে বলল…
—মানুষের জীবন এমন কেন ভাইয়া?সবাই ভালোবাসতে, ভালো ব্যবহার করতে এমন কিপনতা কেন করে?মা কে দেখো আমি নিজের ছেলে না হওয়া সর্তেও আমাকে আর তোমাকে কখনো আলাদা চোখে দেখে না।এমনি কি তোমার চেয়ে আমাকে বেশি আদর করে। আর এদিকে বউমনি আর পিচ্ছি নিজের আপন মায়ের কাছ থেকেও ভালোবাসা,স্নেহ মমতা কিছুই পায় নি।তাদের একটু ভালোবাসা দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত?
সাইফ রেলিং এর উপর হাতের ভর ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল….
—মানুষের জীবন কেন এই পৃথিবীর মানুষেই বড় অদ্ভুত।আশুদের সাথে যা হয়েছে তাতে আন্টিকে নাকি তার ভাইকে সব থেকে বেশি দোষী সাভস্ত করবো বলতে পারছিনা।মানুষ যখন ডিপ্রেশনে থাকে তখনই মানুষনে ব্রেন ওয়াস করতে সুবিধে হয় এবং খুব সহজেই মানুষকে ব্রেন ওয়াস করা যায়।আন্টি তার মা,ভাইকে হাড়িয়ে পুরো ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো।তার এই সুযোগ নিয়ে তার ভাই এর আরো সুবিধে হয়েছে তাকে ব্রেন ওয়াস করার।আন্টি তখন তার হিতাহিত জ্ঞান সব হাড়িয়ে ফেলেছিল।তাই তার ভাই তাকে যেভাবে বুঝিয়েছে সে সেভাবেই বুঝেছে।এখানে দুজনই দোষী।কেউ কম কেউ বেশি।
সাইফ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল….
—বাদদে এসব কথা।আগে বল আশুকে কেন আঙ্কেল এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলি।আর আশু যখন সব জানতে চাইলো তখনি বা কেন ওকে জোর করে নিয়ে আসলি না।নুহা যেহেতু ওর থেকে সব গোপন করেছে তাহলে নিশ্চই এর পিছনে কোন কারন আছে এই কথাটা কি তোর মাথায় আসেনি।দেখছিস তো ও সব শুনার পর কেমন ভেঙে পরেছে।
সাইফ এর এমন গম্ভীর কথা শুনে নীল কপালে ভাজ ফেলে সাইফ এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল…
—সে সব কথা পরে হবে।আগে বল তুমি এতো কিছু কি করে জানো?তুমি কি আমাদের পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছ?
সাইফ কোন হেরফের না করে বলল….
—হ্যা লাগিয়েছি।
নীল অবাক হয়ে বলল….
—গোয়েন্দা লাগিয়েছো মানে?
—মানে খুব সহজ।আমি আশুর পিছে লোক লাগিয়েছি যে সব সময় দূর থেকে আমার কাছে আশুর খবরা খবর জানায়।
—কেন???
— তোর না জানাই ভালো।
নীল বুঝতে পারলো এখন হাজার জিগ্যেস করলেও সাইফ ওকে কিছু বলবে না। তাই সে বিরক্ত হয়ে বলল….
—তা না হয় নাই বললে।তোমার মাথায় কি চলে তুমিই ভালো জানো।কিন্তু একটা কথা তোমার ঐ বডিগাড তো বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারেনি তাহলে বাড়িতে বসে কি কথা বলেছি তা তুমি কিভাবে জানো???
—আঙ্কেল বলেছে।
—বাহ্ বাহ্ খুব ভালো।এক মেয়ের জামাই এর কাছে আরেক মেয়ের জামাই এর নামে নালিশ করে।আমার শশুর মশাই তো একটা হেব্বি চি….
সাইফ নীলের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই নীল কথা থামিয়ে তোতলিয়ে বলল….
—মা-মানে ব-বলতে চাচ্ছিলাম বহুত ভালো বহুত।হে-হে….
—বেশি চালাকি করতে হবে না।তোকে আমি রগে রগে চিনি।
—চালাকি করে পার পেলাম কই।ধরেই তো ফেললে😔
সাইফ নীলের মাথায় গাট্টা মেরে বলল….
—ড্রামা বাজ।চল নিচে চল।
__________________________
রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি চেয়ারে বসে রয়েছে আশু আর রুনা।আশু উপর দিয়ে সাহস দেখালেও ভীতরে ভীতরে খুব ভয় পাচ্ছে।কেননা সে বহুত কষ্টে মিসেস চৌধুরীকে রাজি করিয়ে এখানে এসেছে সাইফ,নুহা আর নীলকে না জানিয়ে।
নিলয় আশুদেরকে ফলো করে রেস্টুরেন্টে ঢুকে আশুদের সাইডের একটা টেবিলে বসলো।একটু আগে নিলয় আশুকে একা একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় দেখে তার স্যার কে ফোন করে খবরটা জানাতেই সে বলল, আশুদেরকে ফলো করতে।নিলয়ও তার স্যার এর কথা মত আশুদের কে ফলো করতে লাগলো।
কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর আশু বিরক্ত হয়ে বলল….
—রুনাপু কই তোমার ঐ দেওয়ানা।এখনো আসছে না কেন?
রুনা এতোক্ষন নিলয়কে লক্ষ করছিলো।নিলয় যে বার বার আড়চোখে ওদের দিকে তাকাচ্ছিল তা রুনার চোখ থেকে এড়ায় নি।রুনা নিলয়কে দেখিয়ে বলল…
—ছোড বউমনি আমার মনে হইতাছে ঐ ছেমরাই হইবো।(নিলয়কে দেখিয়ে)
আশু নিলয়রে দিকে তাকিয়ে বলল….
—হইবো মানে তুমি সঠিক জানো না।ছেলের ছবি দেখো নাই?ছবি পাঠায় নাই?
রুনা অসহায় মুখ করে বলল….
—আমার তো আম পারইন্না মোবাইল(বাটন ফোন)টাছ মোবাইল কিনছিলাম। চালাইতে পারি না দেইখা রাইখা দিছিলাম।চার্জ না খাওয়াইতে খাওয়াইতে মইরা গেছে।তুমিই কও আম পারইন্না মোবাইলে কেমনে কমু খালারে ঐ ছেমরারর ছবি পাডাইতে।
—তাহলে এখন কি হবে?
—আরে খালায় পোলার কতা যেমন যেমন কইছে পুরা মিল্লা গেছে এই পোলার লগে।তোমার বিশ্বাস না হইলে তুমি মিলাইয়া দেহো।তালগাছের মত খাম্বা,বডগাছের মত ভোটকা,মটকির মত পেট ,আলকাতরার মত চুল,মাইট্টা পাতিলের মত গায়ের রং,তাওয়ার মত চেপ্টা চেহারা,কোদালের মত দাত,চোখ গুলো তো…..
আশু রুনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলল….
—থামো থামো আর বলা লাগবে না।তুমি যেই বিবরন দিয়েছো জন্মেও এমন বিবরন আমি কারো কাছে শুনি নি।
—ছোড বউ মনি তু…..
আশু রুনাকে থামিয়ে বলল…..
—প্লিজ আর কিছু বরো না।তাহলে আমি ঐ লোককে কথার ছলে তাড়ানোর বদলে উরকি ধুরকি মারই লাগামু।
রুনা খুশি হয়ে বলল…..
—বাহ্ বউমনি!তুমি দেহি আমার মত কতা হিগ্গা গেছো।
আশু রুনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই রুনা চুপ করে বসে রইল।আশু কয়েকটা বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সাভাবিক করে নিলয়ের দিকে পা বাড়ালো।
#চলবে,
#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে_2
#Part_12
#Ariyana_Nur
বিপদ যখন আসে চারোদিক দিয়ে ঘিরে আসে।এক দিকে কুমির আরেক দিকে বাঘ।জলে নামলে কুমিরের ভয় না নামলে বাঘের ভয়।কি রেখে কি করবে বুঝা বড় দায়।
নিলয়ের অবস্থা অনেকটা এমন।নিলয় পারছেনা আশুর এখান থেকে পালিয়ে চলে যেতে তার স্যার এর ভয়ে।আবার এখানে বসে আশুর এই অত্যচারও সহ্যও করতে পাচ্ছে না।বেচারা নিলয় পরেছে ফাটা বাশের চিপায়।
একটু আগে আশু কথা নেই বার্তা নেই নিলয়ের সামনে এসে চেচিয়ে বলল…..
—হাই জিজু।
নিলয় পানি খাচ্ছি আশুর এমন চেচানো কথা শুনে তালুতে উঠে গেল।নিলয় জোরে জোরে কাশতে লাগলো।আশু রুনাকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই রুনা নিলয়ের পিছনে গিয়ে ওর পিঠে ও মাথায় জোরে জোর চাপর মারতে লাগলো।রুনার চাপর খেয়ে নিলয়ের জান যায় যায় অবস্থা।নিলয় কোন মত নিজেকে সামলিয়ে রুনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই রুনা একটু লজ্জা পাবার ভান করে মিষ্টি হেসে বলল….
—ধন্যবাদ দিতে হইবো না।ওকে…..
নিলয় রুনার এই লাজুক চেহারা দেখে ছোট খাট একটা স্লিপ খেলো।নিলয় রুনাকে ভালোভাবে একবার দেখে নিয়ে মনে মনে বলল….
—মাইয়াডা দেখতে তো ভালোই।কিন্তু হাতে মনে হয় একটু জোর বেশিই।এমন ভাবে চাপর মারছিলো মনে হচ্ছে আমার হাড্ডি মাংস এক সাথে চেপ্টা হইয়া গেছে।
নিলয়কে রুনার দিকে এভাবে তাকেয়ে থাকতে দেখে আশু গলা পরিষ্কার করে বলল…..
—শুধু ঐ দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না জিজু।এদিকে ও দেখুন।আমিও কিন্তু আছি।
নিলয় আশুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….
—জিজু কে???
আশু নিলয়ের মুখোমুখি হয়ে বসে বলল….
— আপনিই তো আমার জিজু।আমার আপুর কল্পনার রাজপূএ।আমার আপু কল্পনাতেই আপনার দিওয়ানী হয়ে গেছে।তাই তো দেখছেন না, না দেখেই আপনাকে কিভাবে চিনে ফেলেছে।এখন আপনার সামনে এসে কেমন লাজ্জা পাচ্ছে।আপু আপনাকে এক পলক দেখেই পুরো ফিদা হয়ে গেছে।(মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে)
(আশু নিলয়কে ঐ ছেলেকে মনে করে কথাগুলো বলল।আর নিলয় আশুর কথা শুনে ভিতরে ভিতরে ফুলে ফুটবল হয়ে গেল।ও মনে করছে রুনা ওকে প্রথম দেখাই ফিদা হয়ে গেছে।কোন মেয়ে একবার ওকে দেখে ফিদা হয়ে সরাসরি ওর সাথে কথা বলতে চলে এসেছে এই খুশিতে নিলয় নিজের হিতাহিত জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলল।নিলয় খুশি হয়ে বলল….
—-সত্যিই তিনি আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে।
আশু মুচকি হেসে বলল…..
—তা আবার বলতে।বিশ্বাস না হলে আপনিই জিগ্যেস করে দেখুন।
নিলয় রুনার দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখলো রুনা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।
তা দেখেই নিলয় আরো খুশি হয়ে গেলো।মনে মনে বলল….
—আল্লাহ্ আমার দোয়া কবুল করছে।আমি আজকেই মসজিদে ১০০টাকা দিমু।
নিলয় বসা থেকে উঠে রুনাকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল….
—বসুন বসুন।দাড়িয়ে রয়েছেন কেন?
রুনাও লজ্জা পাবার ভান করে মিষ্টি হেসে চেয়ারে বসে ধন্যবাদ দিন।
নিলয় কিছু না বলে নিজের জায়গায় বসে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
ওরা কিছুক্ষন টুকটাক কথা বলার পর নিলয় বলল…
—কি খাবেন বলুন।
রুনা মিষ্টি হেসে মাথা নিচু করে বলল….
—না না আমরা কিছু খাবো না।
নিলয় মনে মনে বলল….
—থাক খাওয়া লাগবো না।আমার টেকা বাচবো।
আশু রুনাকে চিমটি কেটে বলল….
—সে কি আপু খাবে না কেন?জিজু এতো করে বলছে,না খেলে তো তার খারাপ লাগবে। তাই না জিজু….(শুর টেনে)
নিলয় আশুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….
—আমি তো একবার বললাম।এই মাইয়া কতো বার শুনলো?
আশুঃদেখেছেন জিজু… আপু এখনি আপনার টাকা বাচাতে চাচ্ছে।আপনার কি টাকা কম আছে বলুন?
নিলয় ভাব নিয়ে বলল….
—টাকা বাচানোর কিছু নেই।আমার তো বহুত টাকা আছে।কি খাবে তোমরা শুধু বল।
আশু মুচকি হেসে বলল….
—সো সুইট জিজু।
____________________________
নুহা সাইফ এর মেসেজ পেয়ে গেডের সামনে আসতেই দেখে সাইফ দাড়িয়ে আছে।নুহা সাইফকে দেখে দূত পায়ে সাইফ এর সামনে চলে আসে।সাইফ এর দিকে এক পলক তাকিয়ে সাইফ এর সাথে কোন কথা না বলেই গাড়িতে উঠে বসল।নুহার এই কাজে সাইফ অবাক হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে নুহাকে জিগ্যেস করল….
—কি হয়েছে তোমার?শরীর ঠিক আছে তো?
নুহা কোন কথা না বলে ঝড়ের গতিতে সাইফ এর গলা জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।নুহার এমন কান্না দেখে সাইফ নুহাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল।কিন্তু কোনভাবেই নুহাকে নিজের থেকে ছাড়াতে পারলো না।সাইফ নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল…..
—কি হয়েছে বলবে তো?না বললে আমি বুঝবো কিভাবে কি হয়েছে তোমার?এভাবে কান্না করছো কেন?
নুহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল…..
—আপনি যাবেন না।আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
—আমি কোথাও যাচ্ছি না।তোমার কাছেই তো আছি।হঠাৎ এমন কথা কেন বলছো?
—ঐ লোকটা বলেছে আপনাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে।
—কে বলেছে?কি হয়েছে বলো আমায়?
নুহা সব বলতেই সাইফ এর চেহারা রাগে লাল হয়ে গেলো।তারপরেও নুহার সামনে নিজেকে যথেষ্ঠ সাভাবিক রেখে নুহাকে দু হাতে আগলে ধরে বলল….
—কেউ তোমার কাছ থেকে আমাকে কেড়ে নিতে পারবে না।এমনকি আমিও কোথাও যাচ্ছি না তোমাকে ছেড়ে।কান্না অফ করো তুমি।
সাইফ এর কথাশুনে নুহার কান্না কিছুটা কমলেও সেই আগের মত বসে রইল।ওর মনে হচ্ছে সাইফকে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে ফেলবে।
নুহার কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছেন না তো?চলুন তাহলে ফ্লাসব্যাক থেকে ঘুরে আসি।
ফ্লাসব্যাকঃ
নুহা তার বান্ধবীদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার মাঝেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।নুহা অপরিচিত নাম্মার দেখে কপাল কুচকে কিছুক্ষন নাম্মারটার দিকে তাকিয়ে রইল।নুহা ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাস থেকে একজন বলল….
—কেমন আছো সান্তরানী??
নুহার লোকটার কথা শুনেই হাত, পা কাপতে লাগলো।কেননা নুহার ফোনের অপর পাশের লোকটি কোন সাভাবিক মানুষ নয়।একজন মানুষিক রুগি,সাইকো।যে নুহাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।কিন্তু আসফিয়া ছেলেটার সম্পর্কে সব জানার পর মানা করে দিয়েছিল।নুহা কেন যেন এই ছেলেকে অনেক ভয় পায়।কেনো এতো ভয় পায় তা সে জানে না।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—আ-আপনি???
লোকটা মুচকি হেসে বলল….
—তাহলে চিন্তে ভুল হয়নি।তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে?বাসার সবাই ভালো তো?
নুহা একটু সাহস জুগিয়ে বলল….
—কেন ফোন করেছেন?
—তুমি কবে আমার কাছে আসবে তা জিগ্যেস করার জন্য।
—মানে???
—এতো মানে মানে করছো কেন?ভুলে যাচ্ছো আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আমি তোমাকে আমার রানী করবো।
—বাজে বকা বন্ধ করুন।আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আর বিয়ে না হলেও আপনার মত ঐ রকম একটা পাগল, সাইকোকে আমি কখনো বিয়ে করতাম না।
সাইকো কথাটা শুনে লোকটি হাসতে হাসতে বলল….
—খুব সাহস বেড়েছে না তোমার?তা এই সাহসের কারন কি তোমার ঐ চিটার জামাই?যে তোমাকে চিটারি করে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।নেহাৎ তখন আমি দেশের বাইরে ছিলাম।তা না হলে কখনো ঐ চৌধুরী তোমার ধারের কাছে আসতে পারতো না।আমার আবার সবাইকে কষ্টে দেখতে ভালো লাগে।তাইতো তোমাকে আমার এখানে নিয়ে আসতে চাচ্ছি।তুমি যদি চলে আসো তাহলে চৌধুরী অনেক কষ্ট পাবে।তাতেই আমার সান্তি।তা না হলে এই সান্ত কোন সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস নিজের কাছে রাখে না।
—উনার সাথে আপনার কিসের শক্রতা?
—তা তোমার না জানলেও হবে।এখন বল তুমি আমার কাছে আসবে কি না?
নুহা শক্ত গলায় বলল….
—না…..
—ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার উনাকে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে দেই।তাহলে এক ঢিলে আমার দুই পাখি মারা হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই সান্ত লাইন কেটে দিল।নুহা কিছুক্ষন থ’মেরে বসে থেকে সাইফ কে ফোন করে আসতে বলল।
#চলবে,