#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_10
Writer::Shaanj Nahar Sanjida
।
।
বিকেলে
আমি মোচরা মুচরি করতে করতে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি বিকেল চারটা বাজে।
শিট বেশি ঘুমিয়ে ফেললাম মনে হচ্ছে!ছায়াকে তো বলেছিলাম ডাক দিতে না তাই বোধহয় মেয়েটা আর আমাকে ডাক দিল না।এখন কি পত্র পক্ষ এসে পড়েছে?আমি কি তাদের আসা মিস করলাম?দূর এখানে বসে বসে ভাবলে হবে না।গিয়ে দেখেই আসি।
বলেই দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসলাম।
বেরিয়ে আসতেই দেখি সামনের দরজা খুলে আভি বেরিয়ে আসলো।
আভি তুমি এই রুমে থাকো?(আমি অবাক হয়ে)
দেখে তো মনে হচ্ছে আমরা একে অপরের বিপরীত রুমে থাকি।(আভিও অবাক হয়ে)
হুম।আমারও তাই মনে হয়।তুমি আর আয়ুশই কি এই রুমে থাকো?(আমি আর আভি হাঁটতে হাঁটতে)
না।আমি আয়ুশ আর বর থাকবে এই রুমে।তোমাদের রুমে?(আভি)
আমাদের রুমে ছায়া আমি আর বর পক্ষের একজন মেয়ে।(আমি)
তাহলে ডালিয়া কোথায় থাকে?আমি তো ভেবেছিলাম তোমাদের সাথে থাকবে!(আভি)
না।আমি ছায়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও বলছে ডালিয়া নাকি তুলি আর তিশার থাকে থাকবে।ঈশানি আন্টি নাকি বলে দিয়েছে।(আমি)
ওহ।আচ্ছা।(আভি)
এখন।এখন কি ঘুম থেকে উঠলে?(আমি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
হুম।তুমি?(আভিও সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
আমিও।কেমন ঘুম হলো তোমার?(আমি)
দুপুরে তো বেশি ঘুমাই না।সেই তুলনায় ভালোই হয়েছে।তোমার?(আভি)
আমার তো যেখানে সেখানে যখন তখন ঘুম সব সময় ভালোই হয়।(আমি হিহি করে হেসে)
তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তা গাল লাল হয়ে আছে কেনো?কারো সাথে ঘুমের সময় মারপিট করেছ নাকি?তোমার তো ভরসা নেই।(আভি হাসি দিয়ে)
আমি কি পাগল ঘুমের মধ্যে মারপিট করবো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
আমার কোনো সন্দেহ নেই।তুমি পাগল।(আভি মনে মনে)
এইটা মশা কামড় দিয়েছে!(আমি গালে হাত দিয়ে)
কামড় বলো না।বলো কিস করেছে!ভালোবেসে মশা তোমাকে পাপ্পি দিয়েছে। দিনে দুপুরে মশার সাথে রোমান্স করো লজ্জা করে না।(আভি আমাকে খেপানোর চেষ্টা করে)
তুমি কিন্তু এখন বেশি বেশি করছো!বলছে কামড় দিয়েছে আর তুমি বলছো কিস করছে।কি অসভ্য লোকরে বাবা!(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)
আমি অসভ্য আর তুমি কি! মশার সাথে কিস করে বেড়ায়।দুনিয়াতে মানুষের অভাব তো?(আভি হাসতে হাসতে)
আজ পেয়েছি তোমাকে জঙ্গলী রানী।আজ আর ছাড়াছাড়ি নেই।তোমাকে খেপানোর সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়!(আভি মনে মনে)
দেখুন বেশি হয়েছে যাচ্ছে।এখন কিন্তু আমি কিছু একটা করে বসবো বলে দিলাম।(আমি)
আমরা ঝগড়া করতে করতে নিচে নেমে আসলাম।এখন সিড়ির কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুজন কোমর বেঁধে ঝগড়া করছি।
কী করবে?মশাকে বিয়ে করবে?করো কিস তো করেই ফেলেছো হাফ বিয়ে তো হয়েই গেছে।(আভি)
ওইটা কামড় ছিলো কিস না?(আমি খানিকটা চিৎকার করে বললাম)
কিসের কিস?কিসের কামড়?কে কাকে কামড় দিয়েছে?কে কাকে কিস করেছে?
পাশ থেকেই তুলি বললো।
আমি আর আভি দুজনই তুলির দিকে তাকিয়ে আবার একে অপরের দিকে তাকালাম।আমরা দুজনই অবাক কেউই তুলিকে এই জায়গাতে ভাবতে পারি নি।
বলো?কি কথা হচ্ছিলো তোমাদের মধ্যে?আস্থা ক্ষেপে আছে কেনো? আর তুমিই(আভি) বা এভাবে হাসছো কেনো?(তুলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
আভি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বলে ফেললাম,,,
কিছুনা তুলি!আমরা এমনি মজা করছিলাম।আচ্ছা তুমি তো বাহিরে বের এসেছো? বর পক্ষ কি এসে পড়েছে?(আমি)
না।এখনও আসে নি।উনারা ফোন দিয়ে বললো কাচা রাস্তার মাথায় আছে আর পনেরো মিনিটের মধ্যে চলে আসবে।(তুলি)
আচ্ছা।তুমি বরং তোমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলো আমি চললাম।
বলেই আমি বাহিরে বের হয়ে গেলাম।কেনো জানি মনে একটু কষ্ট হতে লাগলো।কিন্তু কষ্টের মাত্রা এতই ছোটো যে অন্য খেয়ালে তা ধামাচাপা পড়ে গেলো।সেদিকে নজর না দিয়ে আমি বাহিরে বেরিয়ে সবার সাথে বর পক্ষের অপেক্ষা করতে লাগলাম।
।
।
অন্যদিকে
আমি কখনও আভিকে এমন প্রাণ খুলে হাসতে দেখি নি।যখন ও আমার সাথে ছিলো তখনও এমন প্রানবন্ত হাসি দেয় নি।সবসময় জোর করে হাসি দিয়ার চেষ্টা করতো।আজ দুদিনের পরিচয়ে সেই মেয়ের সাথে ও মন খুলে হাসছে।কেনো জানি আমার মনে হচ্ছে আমি আভিকে হারিয়ে ফেলবো!এইসব কি ভাবছি আমি?হারাতে হবে কেনো?ওকে তো আমি ভালোবাসিই না।ওকে তো আমি শুধু ব্যাবহার করছি।আমার কাজ হয়ে গেলে আমি ওকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো।কিন্তু কেনো ওই মেয়ের সাথে ওকে দেখে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো?নাকি সত্যি সত্যি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।মিথ্যা নাটক করতে করতে না জানি ওর মায়ায় পরে গেছি?না মায়ায় পড়লে চলবে না।আমাকে আমার লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে।
তুলি মনে মনে এইসব ভাবছে তখনই আভি ওকে ধাক্কা দিয়ে।
কী হলো তুলি বলো?কিছু বলতে চাও তুমি?(আভি)
কী!ওহ হা।(তুলি)
কী হলো?কি ওহ হা করছো?কিছু কি বলার আছে তোমার?আমি তোমাকে আগেই বলছি যদি তা আস্থাকে নিয়ে হয় তাহলে সত্যিই আস্থা আর আমার মধ্যে কিছু নেই।তুমি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝছো!(আভি)
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আভি।(তুলি)
মানে?(আভি অবাক হয়ে)
মানে তুমি কোনদিন আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারো না।আমি জানি তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো।আমাকে ক্ষমা করে দিও।তখন আস্থার সাথে তোমাকে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তুমি তো জানো আমার ভালোবাসার ভাগ আমি কাউকে দেই না।তুমি শুধু আমার।তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।তোমাকে আমার অন্য কারো সাথে সহ্য হয় না।
বলেই তুলি আভিকে জড়িয়ে ধরলো।
সত্যিই বলছো?তুমি আমার উপর আর রাগ করে নেই?(আভি তুলিকে জড়িয়ে ধরে)
হুম।আমি আমার ভালোবাসার প্রতি কি করে রাগ করে থাকি?আর কোনো দিন এমন কিছু করবে না।প্রমিজ?(তুলি)
আমি প্রমিজ করছি তুলি।আর কোনোদিন এমন ভুল হবে না।(আভি)
আভি আর তুলি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।
অন্যদিকে বাহিরে দরজার পাশে আমি দাড়িয়ে আছি আমি।
কেনো জানি বাহিরে মন টিকলো না!তাই ভিতরে চলে আসলাম।কিন্তু আসার পরই দেখলাম তুলি আর আভি নিজেদের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝি ভাঙছে।তাই ওদের বিরক্ত না করে দরজায় কোনায় লুকিয়ে ছিলাম এখন তো ওদের মিল হয়ে গেছে কিন্তু আমার মন কেনো এতো ভারী লাগছে।আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।কিন্তু কেনো জানি খুব অদ্ভুত লাগছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে আমার এই গ্রামে কি অক্সিজেন কম নাকি?আমি কি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি?আমার তো শ্বাসকষ্ট ছিলো না!তাহলে কেনো এমন হচ্ছে।তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি তো নিজেই তুলি আর আভির সম্পর্ক ঠিক করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু এখন যেহেতু এইটা আপনি আপনি হয়ে গেছে ঠিক তাহলে আমার মুখে হাসি নেই কেনো?
আস্থা অনেক হয়েছে তোর।এখন ওদের জীবনে আর বারোটা বাজানোর দরকার নেই।আমি বরং ওদের খুশিতে খুশি হয়ে যাই।আমাকে হাসতে হবে।আমি প্রেকটিস করি হাসা।
হি হি।
দূর কি দিন এসে পড়ছে।হাসির ও প্রাকটিস করতে হয়।আমি হাসতে পারছি না কেনো? ও আমি পাগল হয়ে যাবো।হাসা এতো মুশকিল কেন?
আমি হাসবো বলেই আবার হা হা করে হাসার প্রাকটিস করছিলাম তখন আভি আর তুলি বাহিরে বেরিয়ে এলো
আস্থা তুমি এখানে কি করছো?(তুলি)
তুমি এখানে হা হা করছো কেনো?(আভি অবাক হয়ে)
আসলে আমি হাসতে পারছি না।আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।আমি পাগল হয়ে যাবো।
বলেই আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে সবার সাথে গেটে গেলাম।
পাগলী একটা!(আভি হাসতে হাসতে)
তুলি আভি র দিকে তাকিয়ে আছে।
এই পাগলীই নাকি তোমাকে তার প্রেমে পাগল করে দেয়।
।
।
গেটে বর পক্ষের লোক এসে পড়েছে।সবাই তাদেরকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে।অন্যদিকে ডালিয়া তো নিহাল ভাইয়াকে(বর)পেয়ে যেনো আমাদের ভুলেই গেছে।আরেকদিকে তাকিয়ে দেখি তুলি আর আভি একে অপরের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে।ওদের অনেক খুশিই লাগছে।আবার অন্যদিকে তাকাতেই দেখি ছায়া আর আয়ুশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে আসছে।
বুঝলাম না কি হচ্ছে কি?সবাই এমন জোড়ায় জোড়ায় কেনো?আমার জোড়া নেই।এইজন্য এদের মধ্যে নিজেকে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা মনে হচ্ছে।এদিকে হাসতে পারছি না।অন্যদিকে কান্না করার হাজারটা কারণ দিয়ে দিলো আমাকে।কিন্তু সব চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে আভি আর তুলির জুটি দেখে।তুলি যেনো আমার সামনে আভিকে নিয়ে একটু বেশিই শো অফ করছে।মনে হচ্ছে তুলিকে বোম মেরে তুলার মত উড়িয়ে দেই।
দূর কি সব বাজে চিন্তা করছি!আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো এখানে থাকলে।আমি বরং মার কাছে যাই।উনি যদি আমাকে কোনো আইডিয়া দেন হাসার।
বলেই মার কাছে গেলাম।
ঈশানি আন্টি আর রোহান আঙ্কেল নিহাল ভাইয়ার বাবা মার সাথে কথা বলছে।আর বাবা আদি আঙ্কেল,,রাইশা আন্টি আর রামিন আঙ্কেল বাকি আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলছে। এই ফাঁকে মা,,সুমাইয়া আন্টি আর অন্যান্য মহিলারা তাদের জন্য চা নাস্তার ব্যাবস্থা করছে কিচেনে।সুমাইয়া আন্টি চা দিয়ে বসার ঘরে গেলো।
মা কিচেনে নুডুলস পাস্তা রান্না করছে।আর উনাকে হেল্প করছে বাকি মহিলারা।তখনই আমি কিচেনে ঢুকলাম।ঢুকেই দেখি মা অনেক বেস্ত।
আমি গিয়ে উনার পাশে দাড়িয়ে বললাম,,,
মা,,,,(আমি)
হুম!(কলি মুচকি হেসে)
মা,,,,(আমি)
হুম!(কলি হাসি বন্ধ করে)
মা,,,,(আমি)
হুমমম!(কলি বিরক্ত করছি)
মাআআ,,,,,(আমি একটু টান মারে)
এখন কিন্তু খুন্তি দিয়ে মারবো!কানের সামনে কখন থেকে মা মা করে যাচ্ছিস।বল কি হয়েছে?(কলি ধমক দিয়ে)
এদিকে আমি হাসতে পারছি না।অন্যদিকে সবাই আমাকে কাদাতে ব্যাস্ত।যতসব।(আমি নেকা কান্না করতে করতে)
হয়েছে তোর?এই নে নুডুলস বসে বসে খেতে থাক।আর বল কি হয়েছে?কোনো নেকামি না করে সোজাসুজি বলবি।না হলে কিন্তু সত্যি সত্যি খুন্তি দিয়ে মারবো।
বলেই নুডুলসের একটা বাটি ধরিয়ে দিলো।আর আমি মনে সুখে খেতে শুরু করলাম।আসলে আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।আর আমার ক্ষিদে পেলে আমি এমনই পাগলামি করি।আর তা মা জানে।এইজন্যই তো সবাই বলে সব সমস্যার একটা সমাধান আর তা হচ্ছে মা।
।
।
চলবে,,,,