ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-১৫

0
3184

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_15
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


আমি,,ছায়া আর নিতু আপু নিচে নামলাম।
সবার মুখে মুখে এখন আমাদের নিয়ে কথা হচ্ছে।কেউ কেউ তো আমার চরিত্র নিয়েও কথা বলছে।আর এইসব কথা শুনে মার কান্না আরো বেড়ে উঠছে।ঈশানি আর সুমাইয়া আন্টি মাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আমি মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছি বলে কিছু কিছু গ্রামের মহিলা বলছে,,
লজ্জা শরম একটুও নেই।থাকলে কি আর এতো কিছু করার পড়েও মুখ উচুঁ করে থাকে।আমি হলে তো গলায় ধরি দিয়ে মরে যেতাম।(মহিলা)

আন্টি এই জন্যই আপনি ওর জায়গাতে না।আর আপনার মত মহিলার মরে যাওয়াই উচিত।(ডালিয়া রেগে)

ডালিয়া আস্তে।(নিহাল ডালিয়াকে সামলে)

ছাড়ো আমায় সাহস কি করে হয় উনার আমার মেহমানদের কথা শুনানোর।(ডালিয়া রাগে)

এই মেয়ে গলা নামিয়ে কথা বলো।মেয়েদের বেশি গলা থাকতে নেই।(গ্রামের প্রধান)

আপনি বলার কে হা?বের হোন এই বাড়ি থেকে।(ডালিয়া)

ডালিয়া চুপ।এখানে বড়রা আছে তাদের কথা বলতে দাও।(রোহান)

ডালিয়া চুপ করে রইল।

অন্যদিকে আমার চোখের জল যেনো থামছে না।আমি কেঁদেই যাচ্ছি।যেই আমি কোনো দিন কারো পরোয়া করিনি আজ সেই আমি কেঁদেই যাচ্ছি তাও লোকের কথা শুনে।

এখন ওই ছেলেটা কোথায়?মেয়ের সর্বনাশ করে আবার পালিয়ে গেছে নাকি?(গ্রামের প্রধান)

আভি চৌধূরী ভয়ে পালানোর মানুষ না।(আভি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)

গ্রামের প্রধান আভির দিকে কঠিন নজর দিয়ে তাকিয়ে আছে।আভি ও তার দিকে একই নজর দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

এসেই যখন পড়েছো তাহলে শুনো।এখন তোমাকে এই মেয়ের সর্বনাশ করার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।(গ্রামের প্রধান)

শাস্তির কথা না হয় পরেই বলি আগে বলেন আপনি কি করে জানেন কে আপনাকে এই খবর দিয়েছে।যেহেতু এই বাড়ি থেকে খবর বের হয়েছে তার মানে এই বাড়ির কেউই এইসবের সাথে জড়িত।বলুন কে আপনাকে খবর দিয়েছে?(আভি)

তার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো না।(গ্রামের প্রধান)

আপনাকে তো আমি,,
বলেই আভি উনাকে মারতে গেলো।তখনই আদি আঙ্কেল বলে উঠলো
আভি থামো।উনি কি কখনো বলবে না উনি কি করে জানে?যেহেতু আমরা এই গ্রামে এসেছি আমাদের এই গ্রামের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে।উনার কথা শুনতে হবে।(আদি)

কিন্তু বাবা।আমি আর আস্থা এইসব কিছুই করি নি।আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে।আমরা জানিও না এইসব কিছু।বাবা আমাদের জানতে হবে কে এর পিছনে আছে আমাদের সেই ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করতে।শাস্তি দিলে তাকে দিতে হবে।(আভি)

আভি এখন তাকে খুঁজে বের করতে সময় লাগবে।এখন আমাদের হাতে ওতো সময় নেই।(আদি)

তাহলে তুমি কি করতে চাও বাবা।যে আমাদের ক্ষতি করলো।আস্থাকে চরিত্রহীনা করলো তাকে এইভাবে ছেড়ে দিবে?(আভি নিচের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি বদ্ধ করে আছে)

না।যখন তাকে খুঁজে পাবো তখন দেখা যাবে।এখন তোমরা যে সত্য কথা বলছো তার কোনো প্রমাণ নেই তোমাদের কাছে!আছে কোনো প্রমাণ?(আদি)

এখন নেই।তবে আমরা নির্দোষ তা প্রমাণ করেই ছাড়বো।(আভি দাত চেপে চেপে)

যখন প্রমাণ করবে তখন দেখা যাবে।এখন তোমরা দুজনেই দোষী।তাই তোমাদের দুজনেরই শাস্তি পেতে হবে।(আদি)

কী শাস্তি বাবা?(আভি অবাক হয়ে)

যেহেতু জিসান তোর মেয়ে এই পরিস্থিতে আছে তারমানে তুইই আমার ছেলেকে শাস্তি দে।(আদি)

হুম।জিসান আঙ্কেল আমার সাবধান হাওয়া উচিত ছিলো।এখন আপনি আমাকে চাইলে যেকোনো শাস্তি দিতে পারবেন।(আভি মাথা নিচু করে)

শাস্তি?কি শাস্তি?কেনো শাস্তি দিবে?আমরা কিছু করি নি।বাবা কি শাস্তি দিবে আভিকে?কেনো দিবে?(আমি বাবার কাছে গিয়ে)

আস্থা বাবাকে যা করার করতে দে।(কলি)

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

তোমাকে আমার মেয়ে আস্থাকে বিয়ে করতে হবে।(জিসান)

আমি,,আভি সহ সবাই অবাক।

বাবা এইসব কি বলছো বিয়ে?এইটা অসম্ভব।(আমি অবাক হয়ে)

তুই একদম চুপ।একটা কথাও বলবি না।মানসম্মান ডুবিয়ে কোন মুখে কথা বলিস।(জিসান রাগে)

বাবা।আমি কিছু করিনি।বিশ্বাস করছো না কেনো তুমি?আভি কে আমি বিয়ে করতে পারবো না। ও অন্য একজনকে ভালোবাসে আমি ওর থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নিতে পারবো না।তুমি আমাকে অন্য শাস্তি দাও বাবা।(আমি বাবা আর মায়ের পায়ে ধরে)

তাহলে তোর সাথে আমাদের সম্পর্ক শেষ।আজকের পর থেকে তুই আমাদের মেয়ে না।(কলি কঠিন গলায়)

মা।এইসব কি বলছো?তোমাদের ছাড়া আমার বেচেঁ থাকা অসম্ভব।আমি কি করে থাকবো তোমাদের ছাড়া?(আমি পায়ে ধরে কাদতে কাদতে)

যদি আমাদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে চাস তাহলে আভিকে বিয়ে কর।
এখন তোর কাছে দুটো রাস্তা আছে আস্থা
এক আভিকে বিয়ে কর!দুই আমাদের সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ।(কলি স্থির গলায়)

আজ যেনো আমার পরিবার আমারই নেই।বাবা মায়ের পায়ে পরে চিৎকার করে কাদছি কিন্তু উনারা আজ আমার কোনো কান্নাই শুনতে পারছে না।আজ আমার চোখের জল আমার মা বাবার পাথর মনকে গলাতে পারছে না।আমি হতাশ হয়ে আভির দিকে তাকালাম।আমার কান্নায় আভির চোখও যেনো ছলছল করছে।


অন্যদিকে আভি আস্থার চোখ থেকে চোখ ফিরিয়ে তুলির দিকে তাকালো।তুলির চোখে শুধু রাগ আর ঘৃণা দেখতে পেলো।তারমানে তুলিও ওকে বিশ্বাস করছে না।নিজের ভালোবাসার ভরসা এতো দূর্বল দেখে আভি সত্যিই অনেক হতাশ হলো।
আভি উপর দিকে তাকিয়ে
আজ কেউ আমাদের বিশ্বাস করছে না।আমরা নির্দোষ তা শুধু মাত্র প্রমাণের কারণে আজ তা কেউ বিশ্বাস করছে না।নিজের ভালোবাসার মানুষও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।এখন মনে হয় সত্যিই হেরে যাচ্ছি।সব চেয়ে কষ্ট হচ্ছে আস্থার কান্না দেখে।মেয়েটাকে কোনোদিন আমি কাদতে দেখি নি।যে মেয়ে সবাইকে সাহস যোগায় আজ সেই মেয়ের সাহস ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।যে সব সময় স্ট্রং ছিলো আজ সে কাচের মত ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে।না আস্থা তোমাকে আর আমাকে ভাঙলে চলবে না।তোমাকে আর আমাকে স্ট্রং হতে হবে।যাতে করে আমাদেরকে যে এই অবস্থায় এনে দাড় করিয়েছে তাকে আমরা শাস্তি দিতে পারি।(আভি মনে মনে)

পরেই আভি গিয়ে আস্থাকে কলি আর জিসানের পায়ের কাছ থেকে তুলে নিলো।

যে কাজ করে নি সে কাজের ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমার স্ত্রী কখনও কারো পায়ে পড়বে না।হোক সে তার আপন বাবা মা।(আভি কঠিন গলায়)

আমি আভির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আভি এইসব কি বলছে!ওর স্ত্রী মানে? কে ওর স্ত্রী?আমি?তার মানে কি ও আমাকে বিয়ে করবে?কিন্তু কেনো আভি?তুমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসো কেনো আমার জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিবে।(আমি মনে মনে)

আয়ুশ?(আভি)

জ্বি ভাই।(আয়ুশ)

কাজী ডেকে নিয়ে আয়।আমি এখনই আস্থাকে বিয়ে করবো!(আভি তুলির দিকে তাকিয়ে)

তুলি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

কিন্তু ভাই?(আয়ুশ অবাক হয়ে গেলো)

যা বলছি তাই কর চুপ চাপ।(আভি)

আয়ুশ চলো।আমিও তোমার সাথে যাই।(নিহাল)

চলো।
বলেই আয়ুশ আর নিহাল কাজী আনার জন্য বেরিয়ে গেলো।

আভি তোমাকে এইসব কিছুই করতে হবে না।আমি কথা বলছি বাবার সাথে।তোমাকে জোর করে কোনো সম্পর্কে থাকতে হবে না।(আমি)

আস্থা আমি জোর করে কিছু করছি না।আমি চাইছি বলেই তোমাকে বিয়ে করছি।না হলে আমাকে কেউ বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারতো না।(আভি)

কিন্তু আভি?তুলি?(আমি)

তোমাকে ওইসব নিয়ে ভাবতে হবে না।এখন আমার সব চেয়ে বড়ো কাজ হলো তোমাকে রক্ষা করা(আভি)

আমাকে রক্ষা করার জন্য?কিন্তু আমি তো এমন ভাবে বিয়ে চাই না।আমি চাই যেই আমাকে বিয়ে করুক সে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করুক।কিন্তু আমার কপাল কি?বিয়ে হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে যেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।আর এমন মানুষের সাথে যে আমাকে ভালোবাসে না।শুধু আমাকে রক্ষা করার জন্য।(আমি মনে মনে)


কিছুক্ষণ পরেই নিহাল আর আয়ুশ কাজী নিয়ে আসলো।

কাজীকে দেখেই বুকটা কেঁপে উঠলো।এখন বিয়ে নিশ্চিত পড়ানো হবে।আমি অনেক আশা নিয়ে বাবার দিকে তাকালাম এইবার অন্তত বাবা যদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তার শাস্তি ফিরিয়ে নেয়।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।বাবার আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।কিন্তু উনার চোখের জল ঠিকই আমার চোখে পড়লো।বাবাও কাদঁছে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার কিন্তু উনিও তো অসহায়।কোনো বাবার কাছে তার মেয়ের সম্মানটাই বেশি।আর আমার বাবা বেতিক্রম না।কিন্তু কষ্ট আমার এই জন্য লাগছে যে বাবা আমাকে এখনও বিশ্বাস করলো না।আর মা উনি তো কাদতে কাদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে।আজ নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে।বাবা মার চোখের জলের কারণ আজ আমি।কিছু না করেও আজ দোষী।নিজেকে এতো স্ট্রং করে কি করতে পারলাম?কিছুই না।সেই কোনো মিথ্যা ঘটনা আমাকে দূর্বুল করেই দিলো।এই জন্যই হয়তো বলে মেয়ের মনোবল ভাঙতে তাদের চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দাও।মনোবল তো ভাঙবেই সাথে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও থাকবে না।আমার আজ নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে।মনে হচ্ছে মা বাবার চোখে জল দেখার আগে যদি আমি মরে যেতে পারতাম।
এই সব ভাবছি আর কাদছি তখনই আভি শক্ত করে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল

আমি স্ট্রং আস্থাকে বিয়ে করবো।দূর্বল আস্থাকে না।এই ঘটনা তোমাকে কিছুতেই ভাঙতে পারে না।সবাই আমাদের অবিশ্বাস করুক তুমি আর আমি তো জানি আমরা নির্দোষ।আমরা প্রমাণ করবো এক সাথে।এখন কবুল বলো আস্থা।(আভি)

আভির কথাতে যেনো ভরসা পেলাম।যাক কেউ অন্তত আমার সাথে আছে।কেউ অন্তত আমাকে বিশ্বাস করলো,,আভি ঠিকই বলেছে।আমাদেরই আমাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।তাই আমিও কবুল বলে এক নতুন শক্তি নিয়ে আভির সাথে দাড়ালাম।


মুহূর্তের মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।কাল পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো আজ সবই উল্টে গেলো।এখন আমি কারো মেয়ে থেকে কারো স্ত্রী হয়ে গেলাম।মুহূর্তে আমার পরিচয় বদলে গেলো।চোখের পলকে কাজ হয় শুনতাম এখন তা দেখেও ফেললাম।যেই সম্পর্ক শুরু হয়েছে না জানি সেই সম্পর্কের পরিণতি কী হয়।শুরু তো ভালো হলো না শেষ কি তার ভালো হবে?


চলবে,,^_^