#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_16
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বুজে নিলাম।এখন আর কেদে লাভ নেই।যখন যা হওয়ার হয়ে গেছে তখন তাকে মেনে না নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।আমি চোখ বুজতেই আভি আমার হাত ধরলো।আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।আমিও জোরপূর্বক হাসি দিলাম।এখন আমারই আমাদের ভরসা।
যেহেতু বিয়ে হয়েই গেছি।আমরা আমাদের বড়ো ছেলের বউকে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে চাই।তাই আস্থা সরাসরি আমাদের বাসায় যাবে!তোমার কোনো আপত্তি আছে সুমাইয়া?(আদি)
না।বাড়ির বউ বাড়িতেই যাবে।এটাই আমারও ভালো মনে হয়।(সুমাইয়া)
আমি শুধু চুপ চাপ উনাদের কথা শুনে যাচ্ছি।কথা বলার কোনো অধিকার এখন আমাদের নেই।আদি আঙ্কেল রোহান আংকেলের কাছে গেছে বিদায় নিতে
রোহান আমাদের যেতে হবে!(আদি)
আদি।বিয়েটা পর্যন্ত থেকে যা।(রোহান)
না।এখন বিয়ের মধ্যে আনন্দ করার কোনো ইচ্ছে আর মন মানসিকতা কোনোটাই আমাদের নেই।এখানে থাকলে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।এর থেকে ভালো আমরা সবাই চলে যাই।(আদি)
কিন্তু ভাই?(ঈশানি)
কোনো কিন্তু না ঈশানি।আদি ঠিকই বলছে।এখন এটাই সবার জন্য ভালো।(সুমাইয়া)
আমারও মনে হয় আমাদের চলে যাওয়া উচিত।(কলি)
আপনারাও চলে যাবেন?(রোহান)
হুম।এখানে আর থাকতে পড়ছি না। মাফ করবেন আমাদের।(জিসান)
ঠিক আছে তাহলে আর আপনাদের আটকাবো না।আপনাদের এখন স্বাভাবিক হতে হবে।আমি যাওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
বলেই রোহান আর নিহাল গাড়ি আনতে বেরিয়ে গেলো।
।
।
আমি স্থির হয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি।আভি আমার পাশেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আমাদের দুজনের মাঝেই কোনো কথা নেই।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি এমন সময় মা আসলো আমার কাছে
আস্থা।মা তুই কি রাগ করে আছিস?
বলেই মা আমার গালে হাত দিতে আসলো তখনই আমি নিজের মুখ ফিরিয়ে নিলাম।জানি এইটা ঠিক হয়নি কিন্তু আমিও মানুষ যখন আমার উনাকে সব চেয়ে প্রয়োজন ছিল উনার বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল তখন উনি আমার পাশে ছিলো না।
কলি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
যখন তুই কোনো মেয়ের মা হবি তখন বুঝবি মেয়ের সম্মান কত গুরত্বপূর্ণ।(কলি)
আমি ওকে বিশ্বাসও করবো।(আমি)
আভি শুধু চুপ করে শুনছে।
তখনই রোহান আঙ্কেল এসে আমাদের বললো গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে গেছে।তাই আমি এক মুহূর্ত সেখানে না দাড়িয়ে চলে গেলাম বাহিরের গাড়িতে
যাওয়ার সময় বাবার সামনে পড়লাম।বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগে সেখান থেকে চলে আসলাম।এসেই সোজা গাড়িতে গিয়ে বসি।
।
।
ভিতরে
আমার মেয়ের খেয়াল রেখো বাবা।আর ওর রাগ ঠান্ডা হলে ওকে নিয়ে বাসায় এসো।(জিসান)
ওর রাগ ঠান্ডা হলে ও আসবে বলে আপনার মনে হয়? আপনি আপনার মেয়েকে আমার থেকে ভালো চিনেন। ও যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত ও খান বাড়িতে আসবে না।আমি ওকে আসতে দিবো।আমার স্ত্রীকে আমি আসতে দিবো না।ছায়া আস্থার জিনিস পত্রগুলো গুছিয়ে নিয়ে এসো তোমাদের সাথে।আস্থা তোমাদের থেকে একটা জিনিসও নিবে না।
বলেই আভিও গিয়ে গড়িয়ে বসে পড়লো।
হয়েছে আপনার(গ্রামের প্রধান) শান্তি? আপনার কথা মত আমরা আমাদের ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।এখন আপনার কলিজা ঠান্ডা হয়েছে।(জিসান কাদতে)
জিসান নিজেকে সামলা।(আদি জিসানকে ধরে)
কী করে সামলাবো বল।আমার কলিজার টুকরা আমার আস্থা আমাকে ভুল বুঝে আমার সাথে অভিমান করে চলে গেলো।শুধু মাত্র উনাদের জন্য। ও ভেবেছে আমরা ওকে বিশ্বাস করিনি।কিন্তু আমার যে নিজের উপর থেকে ওর উপর আস্থা আছে।শুধু উনি(গ্রামের প্রধান) আমাদের ছেলে মেয়েকে মারার হুমকি দিয়ে এই বাড়ি উনার লোকবল দিয়ে ঘেরাও করেছে বলে আমাদের জোর করে ওদের বিয়েটা দিতে হলো।আর আমরা বলতেও পারি নি ছেলে মেয়ে দুটোকে কেনো আমরা এমন করেছি।যদি বলতাম আস্থা আর আভি কখনও রাজি হতো না।আরো গ্রামের প্রধান এর সাথে মারপিট লেগে যেতো এখানে খুন খারাবা হয়ে যেত।এখন এইসব পরিস্থিতি তো আটকে রাখা গেলেও মেয়েটা আমাকে ভুল বুঝেছেন।কি করবো আমি এখন?(জিসান কাদতে কাদতে)
জিসান ঠিক হয়ে যাবে।আস্থা বুদ্ধিমান।রাগ থামলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন ছেলে মেয়ে দুটোকে একটু সময় দে।(আদি)
হুম।এইটাই তো এখন উপায়।(জিসান)
পরেই সবাই যার যার প্যাকিং করে।গাড়িতে করে ঢাকার পথে পাড়ি দিলো।তিনটা গাড়ি ঠিক করা হয়েছে।একটাতে আমি,,আভি আর আয়ুশ।আরেকটাতে আদি আংকেল আর সুমাইয়া আন্টি।আরেকটাতে মা,,বাবা আর ছায়া।আমাদের গাড়ি হচ্ছে যেই গাড়ি দিয়ে আমি আর আভি এক সাথে এসেছিলাম। ভাগ্যের কি পরিহাস এখনও সেই এক গাড়ি দিয়ে এক সাথে যাচ্ছি।শুধু গাড়িটা চালাচ্ছে আয়ুশ।
আর বাকি দুটো গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে।
।
।
আমি পিছনের সিটে বসে বসে বাহিরের আবহাওয়া দেখছি।আর পুরনো সেই কথা গুলো মনে হচ্ছে।আর সব থেকে বেশি মনে হচ্ছে বাড়ির কথা।বাহিরে কাটানো সেই মুহূর্ত গুলো।এখন আর বাবার বকা খেয়ে ঘুম থেকে উঠা হবে না।মা এসে বাবার বকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না।মাঝ রাতে আর বাহিরেও যাওয়া হবে না।দেয়াল টপকে বাসায় ফিরব না।পেয়ারা গাছ বেয়ে আর রুমে যেতে পারবো না।ছায়াকেও রাত জেগে অপেক্ষা করতে হবে না কখন আমি আসবো আর ও আমাকে টেনে তুলবে।ছায়া,,,ছায়া একা রুমে কি করে থাকবে ও তো আমাকে ছাড়া থাকতেই পারে না ও তো কোনো দিন একা থাকেই না।আমিও কি ভাবছি? একটা সময় আসে যখন পাখিকে উড়া শিখতে হয় যতই সে উচ্চতাকে ভয় পাক না কেনো?ছায়াকে ও বড়ো হতে হবে।এইসব ভাবতেই জানালার বাহিরে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাদতে শুরু করলাম।কেনো জানি কান্না থামছেই না।চোখ ব্যাথা করছে কান্না করতে করতে।তবুও করেই যাচ্ছে।
আভি আস্থার দিকে তাকিয়ে দেখে আস্থা কাদঁছে।কিন্তু এখন ওর কিছুই করার নেই।আস্থাকে কি বলে শান্তনা দিবে তা এখন ওর অজানা।তাই আস্থাকে কাদতে দেয়াকেই ভালো মনে করলো।
আয়ুশও তাকিয়ে তাকিয়ে আস্থার কান্না দেখছে।কেনো জানি ওর ছায়ার কথা মনে হচ্ছে।ছায়াও তো আস্থার বোনই তবে কি ছায়াও এমন করে কেঁদেছে?যখন ও আয়ুশ এর সত্যিটা জেনেছে?ছায়া তো আস্থা থেকে দূর্বল। ও হয়তো আরো বেশি কেঁদেছে।কিন্তু আমার এখন ছায়ার কথা মনে পড়ছে কেনো?ছায়ার কান্না করার কথা আমি কেনো চিন্তা করছি।আমি কি কোনো ভাবে ছায়ার মায়ার পরে গেছি?না আয়ুশ কি ভাবছিস?wake up man
মনে মনে বলেই আয়ুশ আবার ড্রাইভ এ মনোযোগ দিলো।
।
।
অন্যদিকে
বাবা তুমি এইসব কেনো করলে?তোমার এই কাজের জন্য এখন আস্থা আর আভির বিয়ে হয়ে গেলো?(তুলি রাগে)
আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।(রামিন শয়তানী হাসি দিয়ে)
মানে?তুমি না শুধু আস্থা আর আভির বাবার সম্মান নষ্ট করতে চেয়েছিলে?(তুলি অবাক হয়ে)
হ্যা।সম্মান নষ্ট তো করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তার সাথে ওদের সম্পর্কও।(রামিন শান্ত গলায়)
সম্পর্ক কি করে নষ্ট করবে?সম্পর্ক তো এখন আরো ভালো হয়ে গেলো।আগে বন্ধু ছিল এখন বেয়াই হয়ে গেলো সম্পর্ক কোন দিক দিয়ে খারাপ হলো?(তুলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
এই জন্যই তো তুই এতো কাচা খেলোয়াড় আমার মা।আভি তোকে পাগলের মত ভালোবাসে তাইনা?(রামিন)
হুম।কিন্তু তার সাথে এর কি সম্পর্ক?(তুলি)
এখন শোন আমি তোকে আমার পুরো প্ল্যানটা বলি,,,
আমি আভি আর আস্থার বিয়েটাই চেয়েছিলাম।কারণ আভি তোকে ভালোবাসে তাই না?আর তুই আমার মেয়ে।আর এই জন্যই জিসান আমার উপর রাগের বশে আমার মেয়ে আর আভির সম্পর্ক ভেঙ্গে দিলো।আর ভেঙ্গে দিয়ে ওর মেয়ে আস্থার সাথে জোর করে বিয়ে দিলো।যাতে আভি আস্থার সাথে বিয়ে করে তোকে একা ফেলে দেয়।সেই প্ল্যান জিসান করছে।আর তুই কষ্ট পেলে তো আমিও কষ্ট পাবো?এইটাই জিসান চায়।(রামিন)
কিন্তু জিসান আঙ্কেল তো এমন কিছুই করে নি?(তুলি অবাক হয়ে)
করে নি তো!কিন্তু এখন আভি যখন এই সবের সত্যিটা খুঁজতে যাবে তখন ওর সামনে এই সত্যটাই আসবে।আমি জানি আভি এমন একটা ছেলে যে কোনো কিছুর শেষ না দেখে ছাড়ে না।আর ও যখন জানবে ওর ভালোবাসার মানুষকে জিসান আলাদা করেছে!তখন ভাবতে পারছিস কি কিয়ামত করবে আভি?(রামিন শয়তানী হাসি)
কিন্তু এতে সম্পর্ক ভাঙবে কি করে?(তুলি)
যখন আভি এই সব জানবে তখন আস্থাকে ও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।আর আদি ওর ছেলের সাথে এমন নোংরা খেলার জন্য জিসানকে কখনও ক্ষমা করবে না।আর যদি করেও তাহলে আভির সাথে ওর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে।আর আদি কখনও ছেলের সাথে সম্পর্ক শেষ করবে না।এখন এই ক্ষেত্রে জিসান আর আদি নয়তো আভি আর আদি।একটা সম্পর্ক তো ভাঙবেই।আর যদি প্ল্যান বেশি সফল হয় তাহলে দুটোয় ভাঙবে।(রামিন)
আর সেটা কি করে?(তুলি)
আদি আস্থাকে অনেক আদর করে।আভি যদি আস্থাকে ছেড়ে দেয় তাহলে আদি আর আভির সম্পর্কও ভেঙ্গে যাবে।আর আদি আর জিসানের তা তো ভাংবেই।এইবার দেখি আদি তুই কার সাইড নিস। তখন তো আমার আর জিসানের মধ্যে তুই জিসানের সাইড নিয়েছিলি।এখন ছেলে আর বন্ধুর মধ্যে কার সাইডে নেস আমি দেখবো?(রামিন)
।
।
চলবে,,,^_^