#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_23
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
কিরে তোর এত দেরি করলি যে?(কলি)
কিছু না মা চলো।(ছায়া)
আচ্ছা।ঠিক আছে।
বলেই কলি আর ছায়া গাড়িতে উঠে বসলো।
একটা গাড়িতে আমাদের মা বাবা।আরেকটা গাড়িতে আমরা সবাই।
গাড়িতে ছায়া আর আকাশ একটু বেশিই ক্লোজ লাগছিলো।যদিও আমার এতে কোনো সমস্যা নেই।তবে আয়ুশ সারা রাস্তা চুপ ছিলো এইটাই আমার চিন্তার বিষয় আয়ুশ আবার ছায়া আর আকাশ ভাইয়ার সম্পর্কে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে কিনা? তবে হ্যা।এইটা থেকে বেশী আমার এখন নিজের পরিস্থিতির নিয়ে চিন্তা।কি করে সামাল দিবো হানিমুন আমি?এইটা ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আভির দিকে তাকালাম।
আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।আমিও এক কথাই ভাবছি।(আভি গভীর চিন্তায় মগ্ন)
পরেই এয়ার পোর্ট এ সবাইকে বিদায় নিয়ে ফ্লাইটে উঠলাম।বলির পাঠা যখন হয়েই গেছি তখন কিসমত নিয়ে আর কান্না করে লাভ নেই।আমদের হানিমুনে পাঠাচ্ছে তো কি আমরা হানিমুন না করলেই তো হলো।এই ফাঁকে একটা ট্রিপ দিয়ে আস্তে পারবো চট্রগ্রাম কক্সবাজার সব।
।
।
কক্সবাজার এর হোটেলে যেতে আমাদের বিকেল হলো।তাই ভাবলাম একটু ফ্রেশ হয়ে জিরিয়ে পরে বরং তৈরি হয়ে সেমিনারে যাবো।আমার কথায় আভিও সায় দিল।
।
।
রুমে
আভি!কোনটা আমার সুট কেস?(আমি দুটো সুট কেসের দিকে তাকিয়ে)
দেখো না হবে একটা?(আভি ওর লেপটপের দিকে তাকিয়ে)
ফ্লাইটেও দেখলাম লেপটপ টিপছ এখনও টিপছ।মনে হচ্ছে লেপটপের সাথে হানিমুন করতে আসছো।(আমি কোমরে হাত দিয়ে আভির দিকে তাকিয়ে)
দেখো,, না আমি তোমার সাথে হানিমুন করতে আসছি না লেপটপের সাথে।এমনকি আমরা হানিমুন করতেও আসি নি।বুঝলা?(আভি ভ্রু কুঁচকে)
আচ্ছা। যাই হোক।একটু লেপটপ রেখে আমার হেল্প ও তো করতে পারো!(আমি)
বুঝেছি তুমি আমাকে শান্তি মত কাজ করতে দিবে না!(আভি)
না।দেবো না।
বলেই আমি আভিকে টেনে তুলি।
আভিও হাসতে হাসতে বললো
পাগলী একটা।
।
।
এই নাও তোমার সুট কেস!এইবার খুশি তো?(আভি আমাকে সুট কেস ধরিয়ে দিয়ে)
হুম।খুশি অনেক খুশি।(আমি)
তাহলে এখন রেস্ট নিয়ে পরে না হয় রেডি হই?কি বলো?(আভি)
হ্যা।যদি তোমাকে আমার সতীন পারমিশন দেয়।(আমি মুখ ভেংচি দিয়ে)
মানে?(আভি অবাক হয়ে)
মানে তোমার লেপটপ!(আমি)
হ্যা হ্যা।(এক গাল হেসে) ও আচ্ছা।হা তোমার সতীন পারমিশন দিবে।(আভি)
আচ্ছা।দেখুন এখানে একটাই বেড কোনো সোফা নেই।সো আমি তোমাকে আমার সাথে বেডে ঘুমানোর পারমিশন দিলাম।(আমি গর্ব করে)
থ্যাঙ্ক ইউ। ম্যাম এখন একটু নেড়ে শুয়ে পড়ি।যদি আপনার পারমিশন হয়।(আভি ভ্রু কুঁচকে)
ওকে ওকে।(আমি হাসতে হাসতে)
পরেই আমরা দুজন শুয়ে পড়লাম।আর শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
।
।
সন্ধ্যায়
আভি আমি না হয় দায়িত্ব জ্ঞানহীন!কিন্তু তুমি?তুমি তো দায়িত্ববান।এতক্ষন কী করে ঘুমালে?আর তোমার সাথে আমিও।এখন তো আমরা লেট!(আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে)
আলহাদুলিল্লাহ।অবশেষে তুমি বুঝতে তো পারলে তুমি দায়িত্ব জ্ঞানহীন।(আভি হেসে)
খুব হাসি পাচ্ছে না?(আমি রেগে)
হুম।কিন্তু এখন হাসার সময় নেই।এখন তাড়াতাড়ি রেডি হই।(আভি)
ওকে ওকে।
বলেই আমি আর আভি কোনমতে রেডি হয়ে।সেমিনারে পৌঁছে গেলাম সেমিনারটি এই হোটেলে হবে বলে আমদের একটু সহজ হলো।না হলে আমাদের কপালে আরো দুঃখ থাকতো।অলস জুটি হলে যা হয় আর কি?
।
।
সেমিনারে
সেমিনারে আভি ঢুকেই আভির হাবভাব সেই লেভেলে চলে গেছে সেমিনারে এতো সুন্দর বক্তৃতা দিয়েছে যা দেখে আমি অবাক।এখন বুঝেছি।কেনো আমার সতীন লেপটপেকে নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি করেছে কেনো!এই বক্তব্য যেনো উনি দিতে পারে আর এই বক্তব্য দিয়েই উনি সেমিনারের হিরো হয়ে গেলো।আর এইদিকে আমি?থাক নিজের কুপ্রশংসা করে আর লজ্জা পেতে চাই না।
একে একে সবাই সবার বক্তব্য দিলো।অনেকক্ষন ডিসকাশন চললো।এখন যে যার মতো সেমিয়ারে চলাফেরা করছে।আমিও একটা ড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি।তখনই আভি আসলো
দেখলে কেমন তাক লাগিয়ে দিলাম সেমিনারে!বলেছিলাম বাবাকে এই সেমিনার থেকে বেশি এক্সপিরিয়েন্স আছে আমাদের!(আভি গর্ব করে)
হ্যাআআআ।লেট লতিফের মুখে এই কথা মানায় না।(আমি ভ্রু কুঁচকে)
তুমি কি জেলাস আমি বাজি মাত করেছি বলে?(আভি মুচকি হাসি ভ্রু কুঁচকে)
না।আমি জেলাস নই।কারণ তোমার প্রফিট মানেই আমার কোম্পানির প্রফিট যেহেতু এইটা আমাদের যৌথ কাজ(আমি)
তাহলে?তাহলে তুমি কেনো নারাজ?(আভি)
আমি এই জন্য নারাজ কারণ তুমি ওদের পেয়ে আমাকে যেনো ভুলেই গেছো।আমাকে কোনো অ্যাটেনশন দিচ্ছ না!(আমি মুখ ফুলিয়ে)
ওরে বাবা।এই জন্য আপনার মন খারাপ! তা একটা প্রশ্ন করি?(আভি আমার কাছে এসে)
কী প্রশ্ন?(আমি)
আমার অ্যাটেনশন কেনো পেতে চাও তুমি?!(আভি)
আমি,,,
বলেই আমি থেমে গেলাম।সত্যিই তো আমি কেনো উনার অ্যাটেনশন পেতে চাই? উনি তো আমার জন্য কেউ না!কিছু না।তবুও কেনো উনার মনোযোগ অন্যদিকে গেলে আমি রেগে যাই?কেনো উনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য আমার এতো ইচ্ছা জাগে!
আমি ভাবছি তখনই আভি আমার নাকে টান মারে
আহ্(আমি অবাক হয়ে)
দেখো!তোমাকে কতো সহজে কনফিউজ করা যায়।আমি তো এমনি এমনি বলেছিলাম।আর তুমি কতো গভীর চিন্তায় পড়ে গেছো।আচ্ছা যাই হোক এই ছোট্ট মাথায় এতো চিন্তা করো না।
বলেই আভি হাসতে লাগলো।
আমি কি বলবো ভাবছি!যদিও আভির কথা গুলো মজার ছলে বলা কিন্তু এইটা তো সত্যিই।আমি এটাকে মজা হিসেবে নিতে পারছি না।আমি সত্যিই ওর অ্যাটেনশন চাই যেটা শুধু আমারই হোক।
আমি গভীর চিন্তায় মগ্ন
তখনই কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরলো।আমি আর আভি দুজনেই অবাক।আভি অবাক কারণ আমাকে যে পিছন থেকে ধরেছে সে একজন ছেলে আর আমি অবাক সেই ছেলেকে দেখে।
জয়?তুই?(আমি অবাক হয়ে)
হ্যা। আমি।সারপ্রাইজ?(জয়)
ভুলেও না আমি বরং শকড(আমি ওর কান ধরে)
আহ্।শাকচুন্নি ছাড়।(জয় চিৎকার দিয়ে)
আমাকে শাক চুন্নি বলা!ভুলেই ছাড়বো না।(আমি আরো জোড়ে চেপে ধরলাম)
আচ্ছা।বাবা ভুল হয়েছে।তুই তো শাকচুন্নি না।তুই তো রানী!আমার আস্থা রানী।(জয় আমার গালে হাত রেখে)
এতক্ষন আভি প্রথমে অবাক হয়ে তারপর রাগে সব দেখেছিল।আস্থাকে কোনো এক ছেলে জড়িয়ে ধরেছে এইটা দেখে আভি প্রথমে অনেক অবাক হয়।কিন্তু ধীরে ধীরে এই অবাক রাগে পরিণত হয় যখন আভি আস্থা আর ওই ছেলের এতো বেশি ক্লোজ কথাবার্তা দেখলো।আর রাগের সীমা তখনই পার হয়ে গেলো তখন যখন সেই ছেলে ওকে আমার আস্থা রানী বলছে।রানী বলছে এতেও আভির কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু আমার বলতেই আভি খুব খেপে যায়।
আর ক্ষেপে গিয়েই জয় আর আস্থাকে ছড়িয়ে বললো
কী হচ্ছে এখানে?(আভি দাত চেপে)
ওহ!আপনি মি আভি!অনেক সুন্দর বক্তব্য দিয়েছেন।স্পটলাইট তো একদম আপনার দিকে!(জয় হাসতে হাসতে)
আভি আমাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো
ধন্যবাদ।কিন্তু আপনি আমার স্ত্রীর সাথে মনে হয় একটু বেশিই ক্লোজ!(আভি নিজের রাগ কন্ট্রোল করে)
আপনার স্ত্রী?আসু তুই উনার স্ত্রী হলি কবে থেকে?(জয় অবাক হয়ে)
অনেক কথা তোকে পরে বলবো।এখন পরিচয় করিয়ে দেই।উনি হচ্ছে আমার হাসব্যান্ড আভি।আর ও হচ্ছে আমার ফুফাতো ভাই জয়। জয়ও একজন বিজনেসম্যান।কিন্তু এখন তুই(জয়)বল তুই এখানে কেনো?(আমি কৌতূহল নিয়ে)
আমিই তো এই সেমিনার অর্গানাইজ করছি।(জয়)
ও what a surprise! Nice to meet you Mr: Joy (আভি হাত বাড়িয়ে)
Same here।(জয় হাত ধরে)
কেনো জানি ওদের সম্পর্ক সাপ আর নেউলি মনে হচ্ছে।না আগুন আর পানি।যায় হোক পরিস্থিতিটা আমার মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না।তাই আমিই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললাম
আভি তুমি তো বলেছিলে তোমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লায়েন্ট এসেছে ওদের সাথে গিয়ে কথা বলো।আমি জয়ের সাথে কথা বলছি।অনেক দিন পরে ওর সাথে দেখা।(আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
আমাকে তাড়ানোর ব্যাবস্থা করছো আস্থা।তোমার খবর আছে।একবার সেমিনার শেষ হতে দাও।আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।(আভি মনে মনে)
পরেই আভি রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো।পরেই আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।এখন না জানি আভি কি ভাবছে?আমি এখন জয়কে তো আর ইগনোর করতে পারবো না।শত হোক ওর সাথে আমার প্রায় একযুগ পর দেখা।আমি নিশ্চিত আভি আমাকে বুঝবে!
আমি আভির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবছিলাম তখনই জয় আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে
কী হলো?এখন বল কাহিনী কি?তুই কি করে পারলি বিয়েটা করতে?(জয় রাগে)
আরে তুই রাগ করছিস কেনো? আমি বলছি তোকে সব
পরেই আমি জয়কে সব খুলে বললাম।
।
।
অন্যদিকে আভি আস্থা আর জয়কে একসাথে এতো ক্লোজ দেখছে আর জ্বলছে।একটার পর একটা ড্রিঙ্কস নিয়েই যাচ্ছে আর খেয়েই যাচ্ছে।আভির এমনিতেই একটুতেই নেশা ধরে যায়।এখন আবার বোতলের পর বোতল খাচ্ছে। ও যেনো নিজের হুশ হারিয়ে ফেলেছি। ও এখন নেশায় বুদ হয়ে গেছে।
।
।
অন্যদিকে
এই হচ্ছে কাহিনী।(আমি)
অনেক অ্যাডভেঞ্চর রয়েছে তোর কাহিনীতে। অবশ্য তোর বিয়ে বলে কথা একটু অ্যাডভেঞ্চর না হলে হয়!(জয় টিটকারি করে)
হ্যা।দুনিয়াতে তো আমি এক মাত্র এলিয়েন।(আমি ভ্রু কুঁচকে)
যাক।অবশেষে তুই স্বীকার করলি।(জয় হাসতে হাসতে)
আমিও হাসতে হাসতে আভির দিকে তাকালাম।তাকাতেই দেখি আভি নেশায় বুদ।
না আরেকটা এলিয়েন আছে(আভির দিকে তাকিয়ে)।শিট এখন ও এখানে কোনো কিছু করলে মানসম্মান শেষ।জয় তুই থাক আমি আভিকে নিয়ে রুমে যাই।
বলেই আমি আভির কাছে গেলাম।গিয়েই ওকে নিয়ে সেমিনার থেকে বেরিয়ে নিজেদের রুমে গেলাম।
আর জয় একাধারে আস্থার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আস্থা।এখন কি আমার তোর উপর গিভ আপ করা উচিত।নাকি তোকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।(জয় মনে মনে)
।
।
রুমে
How dare you আস্থা!তোমার তো সাহস কম না! তুমি কি করে অন্য একটা ছেলের সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলো?(আভি নেশায় দুলতে দুলতে)
আভি তুমি তোমার মধ্যে নেই।এখন একটু শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ো তো।(আমি আভিকে শুয়ে দিতে দিতে)
আমি ঘুমালে তুমি আবার ওই জয়ের কাছে যাবে?(আভি উঠে)
আমি ওর কাছে কেনো যাবো?(আমি অবাক হয়ে)
কারণ তুমি তো ওকে পছন্দ করো।(আভি নেশায়)
আমি বুঝতে পড়লাম।এই আভির সাথে কথা বলে আমার কোনো লাভ হবে না।
আমি যাবো না।তুমি ঘুমাও।(আমি)
না।আজ আমি ঘুমাবো না।আজ তুমিও ঘুমাবে না।(আভি)
তাহলে কি?কাবাডি খেলবো?(আমি রাগে)
যদি বলি তাই।
বলেই আভি আমার দিকে এগুতে লাগলো।
আভি কি হচ্ছে?তুমি এভাবে কেনো এগিয়ে আসছো?(আমি পিছিয়ে যেতে লাগলাম)
কেনো?আজ না আমাদের হানিমুন।আজ রাতে আমরা তাই করবো যা কোনো সাধারণ মানুষ করে।
বলেই আভি এক টানে আমার শাড়ি খুলে ফেললো।
আভি!কি করছো তুমি?প্লিজ স্টপ ইট।(আমি ওকে দূরে ঢেলে দিয়ে)
আজ তোমাকে আমার হতেই হবে আস্থা।একবার তুমি আমার হয়ে যাও তাহলে আর কোনো দিন আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না।
বলেই আভি আমাকে কোলে করে এনে বিছানায় ফেললো।আমি ছুটোছুটি করেও নিজেকে বাঁচাতে পারলাম না।আভি পশুর মতো আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো
।
।
চলবে,,,^_^