জানি তুমি ফিরবে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
657

#জানি_তুমি_ফিরবে
[১৬ ও শেষ পর্ব]
লেখক- শহীদ উল্লাহ সবুজ

তিশাকে নিয়ে নিহান তার বাসায় চলে গেলো। তিশা নিহানের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে অঝোরে কান্না করতে থাকে। কান্না করতে করতে বালিশ বাজিয়ে ফেলে তিশা। অন্যদিকে ধ্রুব মন খারাপ করে বসে আছে। শুধু ধ্রুবনা সবাই মন খারাপ করে বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা আসছেনা। ধ্রুবকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে সেটাও কেউ খুঁজে পাচ্ছেনা।

তারপর যে যার রুমে চলে গেলো। জয় আর সিয়াম ধ্রুবর রুমে এসে ধ্রুবকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল — চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।

— আর কি ঠিক হবে বল? আমাকে কেনো মিথ্যা সান্ত্বনা দিচ্ছিস? সব তো শেষ হয়ে গেলো। আমার তিশা অন্য কারো হয়ে গেলো।

— দেখ ভাই আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে। তোকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই। রাত হয়েছে আমরা চলে যাচ্ছি। নিজের খেয়াল রাখিস।

এই কথা বলে ওঁরা ধ্রুবর বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। ধ্রুব একটা একটা রুমে বসে আছে। বার বার তিশার মুখ ধ্রুবর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ধ্রুব কিছুতেই তিশাকে ভুলতে পারছেনা। ধ্রুব এবার বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

অন্যদিকে তিশা রুমের দরজা বন্ধ করে কান্না করছে। নিহান তিশার জন্য খাবার নিয়ে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিশাকে ডাকতে থাকে। একটু পরে তিশা দরজা খুলে দেয়।

নিহান — তিশা অনেক্ষন হয়েছে কিছু খাওনি এখন এই খাবার গুলো খেয়ে নাও। নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবে।

— আমি অসুস্থ হলে আপনার কি? আমি না খেয়ে মরে যাবো তাও আপনার বাসায় এক গ্লাস পানিও আমি স্পর্শ করবোনা।

— এসব পাগলামি করছো কেন তিশা? খাবার খেয়ে নাও।

— এই খাবার আমার গলা দিয়ে নামবেনা। আমি জানিনা মানুষটা খাচ্ছে কিনা। আমি জানি মানুষটা আমার জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে একা থাকতে দিন প্লিজ।

নিহান আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। তিশার এমন অবস্থা দেখে নিহানের ও অনেক খারাপ লাগছে। নিহান গিয়ে বাহিরে একটা চেয়ারে বসে রইলো।

এই দিকে ধ্রুব বাহিরে গিয়ে এক পেকেট সিগারেট নিয়ে বাসায় ফিরল। ধ্রুব বাসার ছাদের উপরে চলে গেলো। তিশার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো মনে পড়ছে খুব ধ্রুবর। তার চোখের পানি পড়ছে অঝোরে। ধ্রুব এবার একের পর এক সিগারেট খেতে থাকে। এতো সিগারেট খেয়েও তিশার নেশা কিছুতেই কাটছে না। ধ্রুব সব সিগারেট শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়। ধ্রুব খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরের উপরে বসে থাকে। আরে সে এই ভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।

রাত তখন ২টা বাজে তিশা এখনো কান্না করছে। নিহান রুমে এসে দেখে তিশা এখনো কান্না করছে। নিহানের আর এসব সহ্য হচ্ছেনা। এবার নিহান তিশার কাছে এসে বলল — সরি তিশা।

তিশা কোনো কথা না বলে কান্না করেই যাচ্ছে।

নিহান আবার বলল — আমি জানতাম না তোমারা দুজন দুজনকে এতো ভালোবাস। আমি এমন ভালোবাসা নষ্ট করতে চাইনা। আমি বুঝতে পারছি আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলছি তোমাদের সাথে। আমি যেটা আশা করছিলাম সেটা ভুল। আমি বুঝতেই পারিনি তুমি এখন অন্য কাওকে ভালোবাস। আমার তিশা তো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। আমি ভুল কাওকে নিয়ে আসছি। কিন্তু তিশা আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা যেখানে জোর করে আদায় করা যায়না সেখানে আনার জোর খাটানো টা উচিৎ হয়নি। আমি কালি তোনাকে ধ্রুবর কাছে দিয়ে আসবো।

নিহানের কথা শুনে তিশা কান্না বেজা চোখের নিহানের দিকে তাকিয়ে বলল — সত্যি বলছেন আপনি? আপনি আমাকে আমার ধ্রুবর কাছে নিয়ে যাবেন?

— হুম। এবার খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো না হলে শরীর খারাপ করবে৷ ধ্রুবর কথা ভেবে অন্তত কিছু খাও৷

— ঠিক আছে। আমি একটু ধ্রুবর সাথে কথা বলব প্লিজ৷ যানি ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে।

— না কাল একবারে গিয়ে কথা বলবে। এখন খাবার খেয়ে নাও৷

তিশা নিজের চোখের পানি মুছে খাওয়ার খেতে শুরু করলো। আর নিহান তিশার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিশা ঘুমিয়ে পড়ে। আর নিহান বাহিরে গিয়ে চেয়ারের উপরে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। তিশা খুশি মনে রেডি হয়ে বসে থাকে। একটু পরে নিহাব এসে তিশাকে নিয়ে বের হয়ে চলে যায় ধ্রুবর বাসার উদ্দেশ্যে। তিশা অনেক খুশি কারণ সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা দুজনেই ধ্রুব বাসার সামনে চলে গেলো। বাসার সামনে গিয়ে দরজার মধ্যে কলিং বেলে চাপ দিতেই ধ্রুবর আম্মু এসে দরজা খুলে দেখে নিহান দাঁড়িয়ে আছে। আর তিশা নিহানের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।

ধ্রুবর আম্মু নিহান কে দেখে বলল — কি জন্য আসলে তুমি? দেখতে আসলে আমারা সবাই কতটা কষ্টে আছি তাইনা? আমাদের সংসার ভেঙে কোনো দিন সুখী হতে পারবে না তুমি।

— আন্টি আমার কথাটা শুনুন।

— আর কি শুনাবে তুমি? দুইটা জীবন তোমার জন্য নষ্ট হয়ে গেলো।

— আন্টি আমি তিশাকে নিয়ে আসছি।

এর পর তিশা পিছন থেকে বেরিয়ে এসে ধ্রুবর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

নিহান বলল — আন্টি ধ্রুব কই?

এর মধ্যে মিজান সাহেব ও চলে আসলো। মিজান সাহেব নিহান কে কিছু বলতে যাবে তখন তিশা মিজান সাহেব কে থামিয়ে দিয়ে সব ঘটনা বলল৷ ধ্রুবর আম্মু ধ্রুবকে ডেকে নিয়ে আসে। ধ্রুবর পুরো চোখ মুখ শুখিয়ে গেছে। ধ্রুব এসে দেখে তিশা এসেছে। ধ্রুব সব কষ্ট ভুলে গিয়ে সবার সামনে তিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে৷ আর তিশার কপালে গালে চুমু খেতে থাকে।

তিশা ধ্রুবকে বলল — আপনার এই অবস্থা কেন? শরীরের কোনো যত্ন নিলেন না কেন?

— তুমি ছিলে না তাই। তুমি না থাকলে আমি মরে যাবো তিশা। তোমাকে ছাড়া বেচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব।

— আমি ফিরে চলে আসছি। আর আমাদের কেউ আলাদা কর‍তে পারবেনা।

এবার ধ্রুবর চোখ পড়লো নিহানের দিকে। নিহান কে দেখে ধ্রুব তিশাকে ছেড়ে দিলো। নিহান ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — I’m sorry ধ্রুব। আমি হেরে গেলাম তোমাদের ভালোবাসার কাছে। আমি বুঝতে পারিনি তোমরা দুজন দুজনকে এতোটা ভালোবাস। আমাকে তুমি পারলে ক্ষমা করে দিয়। আমি তোমাদের ভালোবাসার মাঝে কাটা হয়ে থাকতে চাইনা। আমি তোমাদের দুই হাত এক করে দেওয়ার জন্য এসেছি। আর আমি তিশাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো এক্ষনি।

ধ্রুব পকেট থেকে ডিভোর্স প্যাপার বের করে সিগনেচার করে তিশার দিকে এগিয়ে দেয়। তিশাও সিগনেচার করে দেয়। এবার ধ্রুব একটা ফোন দিয়ে হুজুর নিয়ে আসলো। আর তিশা আর ধ্রুবর আবার বিয়ে দেওয়া হলো। বিয়ে শেষ করে নিহান তিশাকে ধ্রুবর হাতে তুলে দিয়ে বলল — ধ্রুব তিশাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম ওকে দেখে রেখো। ও যেনো কখনো কোনো কষ্ট না পায়। আর তোমরা ভালো থেকো। তোমাদের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।

এবার ধ্রুব নিহানকে জড়িয়ে ধরে বলল — নিহান আমিও সরি। তোমার সাথে আমিও অনেক বাজে ব্যবহার করছি৷

— এটা কোনো ব্যাপার না তোমার যায়গায় আমি হলেও সেম কাজ করতাম। যাইহোক তোমরা সুখী হও আমি সেটাই চাই। ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ।

এই কথা বলে নিহান নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। এখন সবাই অনেক খুশি। ধ্রুব তিশাকে জড়িয়ে ধরে সবার সামনে।

এর মধ্যে কেটে গেলো এক বছর। তিশার কোল আলো করে আসলো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে। একদম তিশার মতো দেখতে হয়েছে। আর খুব ভালো ভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন। দুজন দুজনের পাশে সব সময় থাকে।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিশা আর ধ্রুব খাটের উপরে বসে আছে৷ তখন ধ্রুব তিশাকে বলল — চলো এবার আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার কাজ শুরু করি!

— একদম না। চুপ থাকো।

— না চলো শুরু করি।

এই কথা বলেই ধ্রুব লাইট অফ করে দিলো। আর তারা ডুবে গেলো ভালোবাসার অতল সাগরে। এই ভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন। এই ভাবেই টিকে থাকুক তাদের ভালোবাসা অবিরাম।

____________সমাপ্ত___________