#জৈষ্ঠ্যের_প্রেম (পর্ব-১)
ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
১.
মামাতো বোনের বিয়েতে গিয়ে মামাতো ভাইয়ের বন্ধুকে মন দিয়ে বসে মৌসন্ধ্যা। প্রেম ভালোবাসা বি রো ধী মৌসন্ধ্যা যে কখনো এমন হঠাৎ করেই কাউকে ভালোবেসে ফেলবে, কারো প্রেমে পড়বে সেটা তো সে নিজেও কখনো ভাবেনি।
আজ মৌসন্ধ্যার মামাতো বোন জুনের গায়ে হলুদ। মৌসন্ধ্যারা এসেছে দুপুরের দিকে। তার বাবা সাথে আসেননি, তিনি বিয়ের দিনই আসবেন। মৌসন্ধ্যা তার মা আর বড় ভাই মাহতিম এর সাথে এসেছে। তারা এসে দেখে তার নানা-নানু, মেজো মামারা, সেজো মামারা, ছোট মামারা এবং তিন খালামণির পরিবার সহ সবাই এখানে আরো আগে থেকেই অবস্থান করছে। জুন হলো মৌসন্ধ্যার বড় মামার মেয়ে। বড় মামার এক ছেলে আর এক মেয়ে, মেজো মামার দুই ছেলে আর এক মেয়ে, সেজো মামার তিন ছেলে আর ছোট মামার দুই মেয়ে। আর এদের মধ্যে বড় মামার ছেলে মেয়েদের সাথেই তার কোনো সখ্যতা নেই। কেননা, তারা ছোটবেলা থেকেই তারা ঢাকায় বড় হয়েছে। বড় মামার বেশ বড় ব্যবসায়। পড়ালেখা শেষে চাকরীতে না ঢুকে তিনি ইট, সিমেন্ট, বালু এসবের ব্যবসায় করেন। যার ফলে তিনি বেশ ধনী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে ঢাকায় জমি কিনে বড় বাড়ি তৈরি করলেন। বন্ধুদের সাথে শেয়ারে দুই তিনটা পনেরো/ বিশ তলা বিল্ডিং করলেন। নিজস্ব দুই তলা শপিং মল ও আছে তার। বলা চলে তাহাদের টাকা ছিনিমিনি খেলে। তাই অতিরিক্ত ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকে তারা দুই ভাই-বোন একটু অন্য ধাঁচের হয়ে উঠেছে। তারা সবার সাথে মিশেনা, কথা বলেনা। তাদের সাথে একটা রক্তের সম্পর্ক থাকার পরেও সেটা দূরেরই মনে হয়। তবে মৌসন্ধ্যার অন্য মামাতো ভাই বোন গুলো খুবই মিশুক। তারা সবাই মৌসন্ধ্যার খুব কাছের। বিশেষ করে মেজো মামা আর ছোট মামার মেয়ে গুলো। মেজো মামার মেয়ে বর্ষা আর সে সমবয়সী। দুজনেই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। তবে মৌসন্ধ্যার মতো বর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি। তাকে তার বাবা নর্থ সাউথে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল তাই। তবুও দুই বোনের দূরত্ব নেই কোনো। হুটহাটই দেখা করে তারা। কখনো কখনো হল ছেড়ে মৌসন্ধ্যা মেজো মামার বাসায় দিনের পর দিন বেড়াতে থাকে। অথচ তার হলের কাছা থাকা বড় মামার বাড়িতে সে তার ভার্সিটি লাইফ শুরু হওয়ার পর একবারও আসেনি বা কেউ তাকে ডাকেনি। বড় মামি মাঝে একদিন কল করে বলেছিলেন যেতে মৌসন্ধ্যা অ’স্ব’স্তি বোধ করায় আর গেল না। এরপর মামি আর কখনো বলেননি। অভিমান করে বলেননি ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। তিনি হয়তো না পারতেই বলেছেন আর সেও যায়নি। তাই তিনি আর বলেননি। কারণ মন থেকে চাইলে তিনি সেদিন যখন মৌসন্ধ্যা যায়নি তখন তাকে অন্তত একবার হলেও কল করে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতেন-
-‘আসছো না কেন? আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। তুমি কী একা আসতে ভ’য় পাচ্ছো? তবে গাড়ি পাঠিয়ে দেই, তুমি চলে আসো। কোনো না না কিন্তু আমি শুনব না।’
কিন্তু আফসোস তিনি এটা কখনোই বলেননি আর বলবেন কিনা সন্দেহ আছে। মৌসসন্ধ্যার সাথে মামাতো বোন জুন আর মামাতো ভাই গ্রীষ্মের তেমন মিলবন্ধন না থাকলেও তার বাকি তিন মামার ছেলে-মেয়েদের সাথে আর খালামণিদের ছেলে-মেয়ের সাথে বেশ ভাব আছে। তারা তারা খুব আপন। মৌসন্ধ্যারা হয়তো আর্থিক দিক থেকে তাদের তুলনায় দু’র্ব’ল হওয়ার ফলেই এত দূরত্ব! অবশ্য তারা কখনো এমন কিছু করেনি। এটা কেবলই তার ধারণা। সে নিজেও তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইচ্ছুক নয়। কেন যেন তাদেরকে এড়িয়ে চলতে পারলেই ভালো লাগে তার কাছে। তবে সবসময় সম্ভব হয় না। যেমন আজ! আজ তো তাদের বাড়িতেই সে এসে পড়েছে। এখানে এখন আরো কত মানুষ! সবাই জুনদের মতোই বড়লোক। তারউপর জুনের নানারবাড়ির সকল আত্মীয়ও আছে। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে বসে আছে মৌসন্ধ্যা।
তবে হঠাৎ করেই কী যেন হলো! বিকেলের দিকে সবাই তোড়জোর শুরু করল হলুদের জন্য। সাজগোজ সহ নানান আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সেই সময় একদল ছেলে মেয়ে হৈ চৈ ফেলে বাড়িতে প্রবেশ করল। মৌসন্ধ্যা তখন নিচে বসার ঘরেই ছিল। তার সাথে বর্ষা আর ছোট মামার বড় মেয়ে চৈত্র ছিল। চৈত্র এবার এইচএসসি দিয়েছে। চৈত্রের ছোট বোন এপ্রিল এসএসসি দিয়েছে। এরা চারজন সবাই পিঠাপিঠি বলেই একসাথে থাকে সবসময়। এখন অবশ্য এপ্রিল নেই। সে জুনের সাথে পার্লারে গিয়েছে। জুনের সবচেয়ে আদরের হলো এপ্রিল। এপ্রিল যেন জুনের আপন ছোট বোন! এত আদর করে যে মাঝে মাঝে চৈত্রেরও মনে হয়না যে এপ্রিল তার বোন।
হৈ চৈ করে আসা ছেলে-মেয়ে গুলো হলো গ্রীষ্মের বন্ধু। অবশ্য এরা একটাও অল্প বয়সী ছেলে মেয়ে নয়। যুবক যুবতী বলা চলে। প্রত্যেকের বয়স যে সাতাশ পার হয়েছে তা এমনিতেও বোঝা যায়। কেননা এরা এখন পড়াশোনা করছেনা। গ্রীষ্মের মতোই চাকরি বাকরি করছে। জুন গ্রীষ্মের ছোট বোন। অর্থাৎ মির্জা বংশের বড় সন্তান গ্রীষ্ম, ভালো নাম নিয়ায ওয়াহাব মির্জা। জুনকে বেশ কয়েকবার দেখলেও মৌসন্ধ্যার সবচেয়ে কম দেখা হয়েছে গ্রীষ্মর সাথেই। গ্রীষ্মর বন্ধুদের মধ্যে একজনকে দেখে মৌসন্ধ্যার বুকের ভেতরটা কেমন ধ ক ধ ক করতে থাকে। ছেলেটার নাম নাকি আহরার। আহরার একজন ছটফটে মানব। চঞ্চল প্রকৃতির আহরারকে আড়চোখে বেশ কয়েকবার পরখ করে নিল মৌপ্রিয়া। ছেলেটা এই হাসছে তো এই হাসাচ্ছে। লম্বা, সুঠামদেহী, আকর্ষনীয় চেহারার ছেলেটিকে এক দেখাতে মনেই হয়না সে এতটা মিশুক! নিজে থেকে এসে মৌসন্ধ্যাদের সকলের সাথে পরিচিত হয়েছে। মৌসন্ধ্যার নাম জিজ্ঞেস করতেই যখন সে তার নাম বলল তখন আহরার চমকে বলল,
-‘মৌসন্ধ্যা? এই নামের অর্থ কী!’
-‘অর্থ নেই। আমি জানি এটা একটা ফুলের নাম।’
-‘আমি আগে কখনো শুনিনি। আর ফুলটাও দেখিনি। অথচ এই নামের ফুল আছে মানুষও আছে।’
-‘আমিও আগে আহরার নামটা শুনিনি।’
মৌসন্ধ্যার কথায় একটু রা’গ প্রকাশ পেল। হয়তো তার নাম নিয়ে আহরারের কৌতূক তার ভালো লাগেনি। আহরার ব্যাপারটা ধরতে পারল। তবুও হেসে বলল,
-‘শুনবে কীভাবে! সবার নাম তো আমার নামের মতো সুন্দর হয়না। যাই হোক, আহরার অর্থ হলো স্বাধীন।’
খোঁচা লাগল মৌসন্ধ্যার গায়ে। তবুও বলল,
-‘ভালো।’
ব্যস! এই এতটুকু কথা। যার মধ্যে টক মিষ্টি ঝাল সবই ছিল। হয়তো এর ফলেই মৌসন্ধ্যার তার প্রতি ভালোলাগার উদয় ঘটে। এত লোকের ভীড়ে মৌসন্ধ্যার মাথা ধরে গেল। তারপর মা এসে বকাবকি করতে থাকেন যে কেন সে এখনও তৈরি হলো না! একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হবে! পার্লার থেকে দুইটা মেয়ে পাঠিয়ে দিল জুন। যাতে বাড়ির অন্যান্য মেয়েরাও সাজতে পারে। বাড়ির প্রায় সব মেয়ে সাজলেও সাজেনি কেবল মৌসন্ধ্যা। মেক আপ করা তার পক্ষে সম্ভব না। কারণ তার এলার্জি আছে। চাইলেও করতে পারবেনা সে। তাই চুপচাপ সে শুধু শাড়িটাই পড়ল। হলুদ উপলক্ষে জুনের পছন্দ মতো সব মেয়েরা পড়বে কাঁচা হলুদ রঙের সিল্কের শাড়ি কোনো ছাপার কাজ নেই। একদম স্ট্রেইট! ব্লাউজ হলো সোনালী রঙের। আর ছেলেদের সবার হলুদ পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা। জুন আজকালকার ফ্যাশন ফলো করেনি। হলুদে সে হলুদ রঙটাই রেখেছে। সব কিছু হবে হলুদ আর হলুদ। জুনের কথা, হলুদে আবার অন্য রঙ কেন আসবে? তাই মোট চল্লিশটা শাড়ি আর পঞ্চাশটা পাঞ্জাবী আনালো সে। শাড়ির কাপড়টা এত ভালো! মৌসন্ধ্যা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নেড়ে চেড়ে দেখে। তার শাড়িটা এত পছন্দ হয়েছে!
২.
শাড়ি পরিধান করে মৌসন্ধ্যা গেল চৈত্রদের রুমে। সেখানে বাকি সবাই আছে। পার্লারের মেয়েরাও আছে। তারা সবাইকে সাজাচ্ছে। যেহেতু মৌসন্ধ্যার সাজার নেই তাই সে ঘুরে ঘুরে দেখছে। চৈত্র মৌসন্ধ্যাকে দেখে বলল,
-‘আহারে! আমাদের আপা সাজতে পারছেনা। খারাপ লাগছে তোমার জন্য আপা।’
-‘চুপ কর বে’য়া’দ’ব! আমার সাজগোজ করা লাগেনা।’
বর্ষা বলল,
-‘হুম তাই তো! আমাদের মৌ এমনিতেই সুন্দর।’
হঠাৎ করেই কেউ বলে উঠল,
-‘আরে এটা জৈষ্ঠ্য না?’
এই কথা শুনে মৌসন্ধ্যা চমকে গেল। পুরুষ গলা পেতেই সে স ত র্ক হয়ে উঠল। রুমে যে আরো কেউ আছে সে খেয়ালই করেনি। সে দেখল রুমে চার পাঁচটা ছেলেও রয়েছে। সবার চেহারা খেয়াল করল না। মৌসন্ধ্যা তার দিকে তাকালো যে হঠাৎ কথা বলেছে। ছেলেটা বর্ষার বড় ভাই শ্রাবণ। শ্রাবণ বিছানায় অর্ধশোয়া অবস্থায় আছে আর তার দুই পাশে মৌসন্ধ্যার খালাতো ভাই মুকিত আর সেজো মামার ছেলে সাবাব। সবকয়টা মিটিমিটি হাসছে। এরা এত জ্বা’লায় মৌসন্ধ্যাকে!
মৌসন্ধ্যার আরেকটি নামও আছে। যেই নামে তাকে তার নানারবাড়ির সবাই চিনে। নামটা হলো জৈষ্ঠ্য! এই নামের পেছনে বড় ইতিহাস রয়েছে। জৈষ্ঠ্যের নানা হাফিজ মির্জা একটু অন্য ধরনের মানুষ। তার নানান উ’দ্ভ’ট শখ রয়েছে। এর মধ্যে একটা শখ হলো ছেলে-মেয়েদের, নাতি নাতনিদের কিছু স্পেশাল নামকরণ করা। মৌসন্ধ্যার মা আর মামাদের নাম ফুল আর ফল দিয়ে রেখেছেন তিনি। তবে সবই ডাকনাম। কাগজে কলমে তাদের সেই নাম নেই। তিনি নাতি নাতনিদের বেলায় রাখলেন মাসের নাম। ইংরেজী মাসের নাম, আরবী মাসের নাম, বাংলা মাসের নাম আর তারই সাথে ঋতুর নাম। গ্রীষ্মের থেকে শুরু হয়ে এপ্রিলে গিয়ে থেমেছে। অবশ্য এটা একদিকে খুবই সুন্দর লাগে। হাফিজ মির্জা নিজের ছেলের ঘরের নাতি নাতনিদের নামকরণে সে হস্তক্ষে’প করলেও তার মেয়ের ঘরের কোনো নাতি নাতনির প্রতি তা করেননি। কেননা তিনি মনে করেন তাদের নাম তাদের দাদারাই রাখলে ভালো হয়। মজার ব্যাপার হলো তিনি মনে মনে তাদেরও নাম রেখেছে। তবে মৌসন্ধ্যার নামটা হঠাৎ করেই প্রকাশ হয়ে গেল। সেটা অনেক আগের কথা যখন মৌসন্ধ্যা দুই মাসের ছোট বাচ্চা। তার নানাবাড়িতে তার মা বেড়াতে গিয়েছিলেন তাদেরকে নিয়ে। তখন মৌসন্ধ্যাকে তার নানা নানুর রুমে রেখে তারা বোনেরা সবাই আর ভাইয়ের বউরা সবাই মিলে উঠোনে বসে গল্প করছিল। রুমে কেউ ছিল না। হাফিজ মির্জা দরজার সামনে বসে নখ কাটছিলেন। হঠাৎ মৌসন্ধ্যা ঘুম থেকে জেগে উঠে কান্না করতে থাকে। বাহিরে থাকায় কেউ শুনছিল না। হাফিজ মির্জা মৌসন্ধ্যার মাকে ডাকতে থাকেন। মৌসন্ধ্যার নানুকেও ডাকতে থাকেন কেউ আসছিল না। তিনি ছোট্ট মৌসন্ধ্যাকে এক পলক দেখে হেঁটে গেলেন উঠানের দিকে। সেখানে সবার আড্ডার আসরে চেঁচি’য়ে বললেন,
-‘এই! তোরা এখানে আর ওইদিকে তোদের জৈষ্ঠ্য কাঁদে। যা কান্না থামা!’
হাফিজ মির্জার কথা শুনে সবাই থ মেরে তাকিয়ে থাকে। জৈষ্ঠ্য আবার কে! হাফিজ মির্জা মৌসন্ধ্যার মা চামেলি বেগমকে বলেন,
-‘এই! তোর মেয়েটা কাঁদে তুই এখানে কী করিস! যা যা বাচ্চাটার কাছে যা।’
সবাই বুঝতে পারল হাফিজ মির্জা মৌসন্ধ্যারও একটি নাম রেখে ফেলেছেন। তারপর থেকেই তার নাম সবার কাছে জৈষ্ঠ্য হয়ে গেল। তবে সবাই তাকে জৈষ্ঠ্য বলে ডাকেনা। জৈষ্ঠ্য বলে যারা ডাকে তারা মূলত তার নামটা নিয়ে মজা উড়িয়ে বলে। যা মৌসন্ধ্যার মোটেও ভালো লাগেনা! এই যেমন এখন শ্রাবণের মুখের টিটকিরিটা সে স’হ্য করতে পারল না। সে ক্ষে’পে বলল,
-‘শ্রাবণ ভাই! একদম ওই নামে ডাকবেন না। এখানে এখন অনেক বাহিরের মানুষও আছে। মজা উড়াবে আমাকে নিয়ে।’
-‘বাহিরের মানুষ আর কে! আমরা আমরাই তো! পার্লারের মেয়ে গুলোও তো চলে গেলো। আর আছে কে! আমি, বর্ষা, চৈত্র, মুকিত, সাবাব আর গ্রীষ্ম ভাই। বাহিরের কে?’
গ্রীষ্ম ভাই শুনেই মৌসন্ধ্যা চমকে উঠল। গ্রীষ্মকে সে খেয়াল করেনি। ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখল বিছানার পাশে ডাবল সোফাটায় হেলান দিয়ে বসে আছে একজন গম্ভীর যুবক। তার মুখে হাসি নেই। নেই কোনো কথা। দেখে বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ ক্লান্ত। তবে এই ক্লান্তি নিয়ে সে চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেনা বরং ফ্যালফ্যাল করে মৌসন্ধ্যাকেই দেখছে। গ্রীষ্মকে দেখে মৌসন্ধ্যার অ’স্ব’স্তি হলো। গ্রীষ্মের তাকিয়ে থাকা দেখে সে বেশ ল’জ্জাও পেল। রুম থেকে চলে যেতেই বর্ষা পথ আ’ট’কায়। বলে,
-‘কই যাচ্ছিস? বস না! আমরা গল্প করব। কত্তদিন পর সবাই একসাথ হয়েছি। তাছাড়া আজকে গ্রীষ্ম ভাই আছে। সময় যখন পেয়েছি তখন ভালো ভাবেই লুফে নেই।’
-‘তো গল্প কর না তোরা! আমি কী করব? আমি যাই।’
চৈত্র ফট করে বলে উঠল,
-‘এই মৌপু তুমি কী গ্রীষ্ম ভাইকে দেখে ল’জ্জা পাচ্ছ?’
এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই হো হা করে হেসে উঠল। হাসল না মৌসন্ধ্যা। সে সরাসরি গ্রীষ্মের দিকে তাকালো। অবাক করা ব্যাপার হলো গ্রীষ্ম তার দিকেই অপলক তাকিয়ে আছে আর তার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি। এবার সত্যিই ল’জ্জা দ্বিগুণ হয়ে গেল। সে চৈত্রকে ধ’ম’কে বললে,
-‘বাজে কথা বলিস কেন? আর এমন করে বললে আমি তোদের সাথে কথাই বলব না।’
মৌসন্ধ্যা চলে গেল রুম থেকে। বর্ষা চৈত্রের মা’থায় চা’টি মেরে বলল,
-‘যাহ! কী আবল তাবল কথা বলিস না তুই।’
শ্রাবণ আর মুকিত হাসছেই! কোনো থামাথামি নেই। যেন বিরাট এক মজার কা’ন্ড ঘটে গেল।
#চলবে।