#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_৪৫
মেঘা আয়াজের দিকে তেড়েমেরে গিয়ে বলে,”আজব দুনিয়ার নিয়ম।সমাজের চোখে আমি বাচ্চা মেয়ে।
তবে ইসলামের দৃষ্টিতে আমি একজন সাবালিকা বালিকা। আর ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মেয়ে সামনে থেকে এগিয়ে নিজের বিয়ের কথা বলতেই পারে।
এখানে বেহায়াপনার কিছু নাই।আর আমার বাপের পাপের শাস্তি সে পাবে।আমি আপনাকে বিয়ে করে তার
পাপের ছায়াতল থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই।”
আয়াজ বলে,”দুনিয়াতে ছেলের অভাব পড়ে নাই।
আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না!মানে পারবো না!”
মেঘা তো পুরোই নাছোড়বান্দা সেও আয়াজকে বিয়ে না করে আজ দম নিবে না।
এদিকে পুরো বাড়ির মানুষের মাথায় হাত।যে মেয়েটা সারাদিন চুপচাপ থাকে। যার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় না।সেই মেয়ে আজ হঠাৎ এমন করে আয়াজকে বিয়ে করার জন্য পাগলামি করছে এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব?
মেঘার মা মেঘাকে বোঝাতে অনেক চেষ্টা করে তবে মেঘা তার মাকে একটা কথায় বলে,”অন্যের সংসার ভেঙ্গে যখন নিজের ঘর বাধছিলে তখন কি একবার ও চিন্তা করেছিলে এমন দিনের কথা?আমি তো তোমার মতো অন্যের সংসার ভাঙ্গছি না।একজন ডির্ভোস প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিয়ে করছি!সেদিন যখন ঐ পিচ্চি মেয়েটার কথা ভাবতে যাওনি।ঠিক তেমন আজ নিজের মেয়ের কথাটা ভুলে যাও।”
অয়ন খান মেঘার এমন ব্যবহারের জন্য নিজের হাত তোলে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য।তবে তার আগেই আয়াজ মেঘার হাত ধরে সেখানে থেকে সরিয়ে নেয়।
এবার আয়াজ কর্কশ কন্ঠে বলে,”আপনার এমন ব্যবহার শোভা পায় না মামা।আপনি জীবনে যে ভুল করেছেন তার শাস্তি অবশ্যই পাবেন।আপনার সন্তানেরা যখন আপনাদের কাছে থেকে দূরে যেতে চাইছে।
তখন আমার উচিৎ তাদের সাহায্য করা।”
অয়ন খান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াজ আয়াশের দিকে তাকাই।আয়াশ আয়াজের চোখের ভাষা বুঝতে পারে।আয়াশ মেঘা আর আয়াজের হাত ধরে সোজা বাড়ির বাহিরে চলে যায়।
অয়ন খান তার বোন মমতা খান কে বলে,”আপা তোমার ছেলের এতো সাহস হয় কি করে?আমার মেঘা মা কে নিয়ে ও বাহিরে চলে গেলো।আজ ফিরে আসুক ওর খবর আছে।”
মমতা খান বলে,”তোরা দুজনে এখনো এতো উচুঁ স্বরে কথা বলছিস কি করে?তোরা যা করেছিস তার জন্য দেখছি তোদের মাঝে বিন্দু পরিমাণ অনুশোচন বোধ নেই!”
এবার মরিয়ম খান বলে,”বউমা তোমার ভাইয়ের এতো সাহস এসেছিল কোথায় থেকে?সে আমার বাড়ির নাতবউ কে খুন করার চেষ্টা করেছিল? ”
মমতা খান বুঝতে পারে তার ভাইয়ের এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য সবার সামনে তার মাথা নত হয়ে গেছে।
অরিন এতো সময় চুপচাপ থাকলেও এবার মুখ খুঁলে বলে,”মা আজকের পর যদি তুমি মামার সাথে কোনোরকমের যোগাযোগ অথাবা সম্পর্ক রাখো। তাহলে আজকের ভুলে যেও অরিন নামের তোমার কোনো মেয়ে ছিলো।আমি মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ হতে পারি।তার মানে এটা নয় যে বড়লোক আত্মীয়াদের সব বড় বড় পাপ মুখ বুজে সহ্য করবো।”
মমতা খান মেয়ের মুখের দিকে হ্যা করে তাকিয়ে আছে।
অরিন বলে,”এইভাবে তাকিয়ে লাভ নেই মা।
তোমার ভাইকে তো পুলিশের কাছে দিয়ে আসা উচিৎ।তবে পুলিশের কাছে দিয়ে লাভ নেই।
আমাদের দেশে তো গরিবের জন্য বিচার নেই।
ভাগ্যিস আজকের এই কাহিনী শোনার জন্য রোহান সহ আমার শ্বশুরবাড়ির কেউ নেই এখানে।
নয়তো আমার যে টুকু সম্মান আছে সবটা মাটিতে মিলিয়ে যেতো।”
অরিনের এবাড়িতে নিশ্বাস নিতেও দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই তাড়াতাড়ি সে বাবার বাড়ি ছেড়ে প্রস্থান করে।
এদিকে অর্ণাকে নিয়ে শাহেদ মিয়াঁ বাড়িতে চলে আসছে।অর্ণার মুখ চোখের অবস্থা দেখে আয়না বেগম প্রশ্ন করে, ”কি রে মা তোর মুখ চোখের এই অবস্থা কেনো?
আয়াশ কি কোনো কারণে তোকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে?”
অর্ণা মামীর এমন কথা শুনে ছলছল নয়নে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শাহেদ মিয়াঁ শক্ত কন্ঠে বলে,”আরে হায়না বেগম নিজের কথায় লাগাম টানো।মেয়েটার সাথে পুলিশসুলভ আচরণ না করে ঘরে নিয়ে যদি সম্ভব হয় বিশ্রামের ব্যবস্থা করো।প্রশ্নের তীরটা না হয় পড়ে নিক্ষেপ করবে।”
আয়না বেগমের বুঝতে বাকি রইলো না!
ঐ বাড়িতে কিছু তো বড় ধরনের হয়েছে।
যার জন্য তার স্বামীর কথার ধরণ বদলে গেছে।
এখন আর কথার জলঘোলাটে করার মানে হয় না।
অর্ণা কে সাথে করে আয়না বেগম ঘরে নিয়ে যায়।
অর্ণা ফ্রেশ হয়ে অল্পপরিমাণে খাবার খেয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে।তার ইচ্ছা না থাকলেও খাবার খেতে হচ্ছে।
তার মধ্যে থাকা প্রাণটার জন্য।অর্ণার এতো চিন্তার মাঝেও নিজের পেটে হাত দিয়ে কারো অস্তিত্বের আভাষে মনটা ভালো হয়ে যায়।
তবে নিজের সাথে হওয়া এতো অন্যায়ের পর ও অর্ণা আল্লাহ উপর থেকে ভরসা একটু এদিকে সেদিকে হয়নি।তাই তো হয়তো এতো ধৈর্যশীল হয়ে আয়াশের মতো ছেলেকে জীবনসাথী হিসাবে পেয়েছে।
অন্যদিকে সুমু আর ভালো নেই!তার ভাইয়ের বউ সব সময় তাকে নানাভাবে মানুষিক হোক বা শারীরিক ভাবে হোক সব ভাবে অত্যাচার করে।সুমুর জীবটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।সুমুর বাবা মা আর সুমুর সাথে ভালো ব্যবহার করে না।তারা বলে,”এটা হয়তো তোর পাপের শাস্তির শুরু।আরো কতো শাস্তি তোর কপালে লেখা আছে তা কেউ জানে না।”
সুমু এখন বুঝতে পারে সে আয়াজের থেকে দূরে আছে বলেই তার পরিণাম এমন।যদি আয়াজ তাকে ডির্ভোস না দিতো তাহলে হয়তো এমন কিছুই হতো না।
সেদিন যদি নিজের ভুলের ক্ষমা চেয়ে আয়াজের পা জড়িয়ে ধরতাম তাহলে অবশ্যই আয়াজ আমাকে মাফ করে দিতো।কখনো ডির্ভোস দিতো না।
এসব বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর আবারো বলে,”আয়াজ কোথায় তুমি?তোমার সুমু ভালো নেই!
সে তার পাপের ফল ভোগ করছে।”
এদিকে অয়ন খান মমাতা খান কে বলে,”আপা তোমার ছেলে আমার মেয়েটা কে সাথে করে কোথায় নিয়ে গেছে?এতো সময় লাগছে কেনো ফিরে আসতে?
আমার আত্মসম্মান বাঁচাতে যা ভুল আমি করেছি আমার মেঘা কোনো ভুল করে নাই।তাই আয়াশের যা শাস্তি আমাকে দিতে বলো আমার মেঘাকে না।”
মমতা খান নিজেই জানে না!তার ছেলে মেঘাকে সাথে করে কোথায় গিয়েছে। তাহলে তার ভাইয়ের কথার কি উওর দিবে সে?
এভাবে আরো কিছু সময় পার হয়ে যায়!
এবার বাড়ির সবার চিন্তা শুরু হয়ে যায়।
অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।
ওদের কারো কোনো খবর নেই।”
একটুপর তিনজন বাড়িতে ফিরে আসে।
বাড়িতে আসার পর মেঘা আয়াজের হাত ধরে থাকে।
অয়ন খান মেঘার কাছে গিয়ে মেয়ের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে শুরু করে।
তখন পেছন থেকে আয়াশ বলে ওঠে,”আরে মিস্টার খান সাহেব!আপনি কোন সাহসে আমার ভাইয়ের কাছে থেকে তার সদ্যবিবাহিত বউকে দূরে সরাতে চেষ্টা করছেন? ”
অয়ন খান বলে,”মানে কি?”
মেঘা বলে,”আয়াজ খান আজ থেকে আমার স্বামী। আয়াশ ভাইয়া আমাদের দুজনকে সাথে করে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়েছে।”
অয়ন খান বলে,”ফাইজলামি হচ্ছে আমার সাথে?
আমার মেয়ের বিয়ে এই আয়াজের সাথে আমি কোনোদিন ও মেনে নিবো না।”
আয়াজ বলে,”আপনি না মানলেও মেঘা আমার বউ।প্রথমে বিয়েতে আমার মতো ছিলো না।
পরে ভেবে দেখলাম কোনো মেয়ে সামনে থেকে এগিয়ে এসে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।
তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
তাছাড়া আমি তো আর সারাজীবন একা থাকতে পারবো না।আমারো একজন সঙ্গীর দরকার।
তাই মেঘাকে নিজের করে নিলাম সারাজীবনের জন্য।
আজকের পর থেকে আপনি আমাদের দুজনকে একসাথে দেখবেন আর লুচির মতো ফুলবেন।
কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারবেন না!”
মেঘা বলে,”বাবা এটাই তোমার আত্মসম্মানের শেষ পরিণাম। যাদের জন্য চুরি করলে তারা কেউ তোমার আপন হলো না।তোমাকে একা করে দিয়ে দূরে চলে যাচ্ছে!আর আজকের পর ভুল করেও আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না।আমার স্বামী তোমাদের সাথে আমার যোগাযোগটা মোটেই ভালো চোখে দেখবে না।”
এরপর আয়াজ মেঘা আর মরিয়ম খান কে সাথে করে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ওরা চলে যাবার পর মমতা খান নিজের ভাই আর তার বউয়ের হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বাহির করে দিয়ে বলে,”আজকের পর মনে করবো আমার কোনো ভাই নেই।মারা গেছে,অথবা কোনোদিন ছিলো না।
আর তোরা ভুল করেও আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না।আজকের পর তোর আর আমার সব সম্পর্কের শেষ এখানে।বলে ওদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।”
‘
‘
‘
চলবে……