টিপ টিপ বৃষ্টিতে পর্ব-০৩

0
414

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আদিত্য শুভর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ওর সুইটহার্টকে বলে উঠলো, ‘ সুইটহার্ট তোমাকে খুব তারাতারি রুচি ঠিক করার ডক্টর এর কাছে নিয়ে যেতে হবে। দিন দিন বয়স, চেহারার সাথে রুচি টাও হারিয়ে যাচ্ছে। ‘

আদিত্যের কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসছে।

আদিত্যের নানু ওর কথা গায়ে না মেখে সামনে বসা ঐশীর দিকে বিরক্তকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। এই মেয়েকে উনার একদম পছন্দ না।

পড়ন্ত বিকেলে আরক্তিম গোধূলীবেলা।লাল কমলা সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। ছাঁদের কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ঐশী আর পূর্ণা।

আদিত্য আর সোনিয়া আপু আছে। সুরভি আর ওর ভাইয়ারা চলে গেছে।

পূর্ণাঃ আপু তুক্কো ভাবি কফি করে নিয়ে আসি..?

ঐশীঃ তুই কষ্ট করে আনতে হবে না। আমি না হয় নিয়ে আসি তুই বস।

পূর্ণা ঐশীকে কিছু না বলে এক দৌড়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।

ঐশী ফোনটা হাতে নিয়ে বন্ধু মহলে কল দিলো।
আসতে আসতে মৌ,দীপ,দীপ্তি,শান্ত,অথৈ সবাই এড হলো। এরা সবাই ঐশীর কলিজার টুকরো ফ্রেন্ড। মানুষিক শান্তির আরেক নাম হলো বেস্ট ফ্রেন্ড।

দীপঃ ঐশী আফা তো আমগোরে ভুলে গেছেন।
শান্তাঃ জান্স তুমি জামাই পাইয়া তোমার জান্স কে ভুলে গেলা। কষ্ট পাইলাম।
মৌঃ শা*লা ফ্লার্ট বাজ চুপ থাক।
শান্তঃ মৌ এর বাচ্চা ফ্লার্ট বাজ কারে কছ হা..? তোর লগে এখনো ফ্লার্ট করছি…?
মৌঃ সুযোগ পাইলে কাউরে ছারস তুই।
ঐশীঃ এই একদম চুপ!! কি শুরু করছোস তোরা। আমার বিয়ের দিন একটা কেও দেখলাম না কেনো…?

দীপঃ আন্টি আপনি তো জানেন আমি আর দীপ্তি নানুর বাড়িতে ছিলাম। নানুর অবস্থা খুব খারাপ ছিলো।

ঐশীঃ আন্টি!! আর বাকি গুলা..?

মৌ, শান্ত, অথৈ নিজেদের সমস্যার কথাও বললো।

ঐশী মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। না এসে ওরা ভালোই করেছে। অন্তত শুভ স্যারের সাথে ওর বিয়েটা দেখেনি।

দীপঃ সাইলেন্ট প্লিজ আজ কি হইছে জানিস সবাই…?

সবাই… কি..????

দীপঃ আমাদের অথৈ খালাম্মা এত চুপ কেন কতো সবাই..?

মৌঃ শা*লা এত পেঁচার মতো পেঁচাস ক্যা..?

শান্তঃ ওই শাঁকচুন্নি তুই আমাদের কোন বইনরে বিয়া করছস হ্যা…? সবাইকে শা*লা ডাকোস ক্যা..?

দীপ্তিঃ ভাই তোরা একটু চুপ কর আল্লাহ রাস্তে।

অথৈঃ দীপের বাচ্চা তুই যদি মুখ খুলে একটা কথা বলছ তোর মুখ আমি বাংলা সিনেমার নাইকার মতো তুক্কো নায়কের মতো এক বারি দিয়ে স্মৃতি ভুলায় দিমু….

অথৈর কথা শুনে বন্ধু মহলে হাসির ট্রোল পড়ে গেলো।

ঐশীঃ এই দীপ কি হয়েছে বল তো..??

অথৈঃ এটা একদম ঠিক হবে না দীপ!! তুই যে ওই দিন সিনিয়র আপুর হাতে থাপ্পড় খেতে যাচ্ছিলি আমি কিন্তু বাঁচাইছি।

দীপঃ তাই তো তোর থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই সবাইকে বলতেছি। কাল হা*** এমন অবস্থা করমু দেখিস শুধু।

মৌঃ কেউ আমারে বলবা আসলে কি হইছে..?

দীপঃ আজ কে কলেজ থেকে আসার সময়। আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দেখি ঠাসস করে আওয়াজ আসলো। তাকিয়ে দেখি আমাদের অথৈ খালা গালে হাত দিয়ে ড্যাবড্যাব করে এক পুলার দিকে তাকায় আছে। পুলাটা রেগে আরো কি কি বলে চলে গেলো। কিন্তু আমাদের খালাম্মা সিনেমার নাইকাগোর মতো মুগ্ধ হয়ে তাকায় আছে। সিনেমায় নায়ক নাইকাকে চুম্মা টুম্মা দিলে যেমন হয় আরকি।

দীপ্তিঃ ওহ মাই গড!! কত রোমাঞ্চকর কাহিনি ঘটে গেছে। ইসসস আমি কই ছিলাম..? ছেলেটা কেমন ছিলো রে..??নিশ্চয়ই খুব হ্যান্ডসাম।

দীপ্তির কথা শুনে সবাই রেগে বলে উঠলো, ‘ বেচারি থাপ্পড় খেয়ে বেকা হয়ে আছে আর তুই আসছিস ছেলে কেমন জানতে। শুধু শুধু কি তোরে মফিজের বউ কই..?

দীপ্তি গাল ফুলিয়ে চুপ করে রইলো।

আরো অনেক কথা বলে ফোন রেখে দিলো। ফোন রেখে হাসি হাসি মুখে পিছনে ফিরেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।

পিছনে আদিত্য বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।

ঐশী আদিত্যর দিকে একটা ভদ্রতার হাসি দিয়ে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই আদিত্য বলে উঠলো, ‘ আপনি কি শাড়ি পড়তে বেশি পছন্দ করেন..?’

ঐশী আদিত্যের দিকে ফিরে আবারও একটা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ কেনো বলুন তো..?

আদিত্যঃ শাড়ি পড়ে আছেন তাই বললাম। এখনের মেয়েরা তো বিয়ের পর ও শাড়ি পরতে চায় না।

ঐশী বুঝলো এখনো তাদের বিয়ের কথা কিছু বলা হয়নি।

ঐশীঃ হুম ঠিক বলেছেন। বিয়ের আগে তো আমিও পড়তাম না। বলে ঐশী নিচে চলে গেলো।

আর আদিত্যর মাথায় দিয়ে গেলো হাজারটা প্রশ্ন। বিয়ের আগে মানে..!!?

রাত দশটায় শুভ বাসায় এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজে একদম শার্ট শরীরের সাথে লেগে আছে।

একহাতে চুল জারতে জারতে নিজের রুমে ঢুকলো। বাসায় আশার পর নীলা বেগম খুব বকেছেন। বৃষ্টির পানিতে যদি জ্বর চলে আসে!!

শুভ গোসল করে বের হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ আয়নার মধ্যে কাওকে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তারাতারি পিছনে ফিরলো।

বিছানার মধ্যে আয়েশ করে বসে আছে সোনিয়া ।

শুভ রেগে বলে উঠলো, ‘ এই সব কি সোনিয়া আমি একবার বলে দিয়েছি আমার রুমে আমার অনুমতি ছাড়া না আসতে। আর নির্লজ্জ মেয়েদের মতো একটা ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা করছে না..!

সোনিয়া মুচকি হেসে বিছানা থেকে নেমে শুভর সামনে এসে দাঁড়ালো।

শুভর গায়ে শুধু একটা জিন্সের প্যান্ট পড়া।

শুভ রেগে বললো,’ আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও।’

সোনিয়া এখন নিজের হুঁশে নেই। সে যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে৷ ওর কানে যেনো শুভর কোনো কথাই যাচ্ছে না। হঠাৎ সোনিয়া এমন একটা কাজ করলো। শুভ একদম থতমত খেয়ে গেলো।

সোনিয়া আচমকা শুভকে জড়িয়ে ধরলো।

ঐশীর কাল ভার্সিটিতে যেতে হবে৷ আবার কালকে বাড়িতেও যাবে। শাশুড়ীর কাছে যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতে কাল ভার্সিটিতে যেতে পারবে কি-না..? ভার্সিটি থেকে এসে বাড়িতে যাবে।

শুভর রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো একবার উঁকি দিয়ে যাই। বাসায় এসেছে কি-না…
উঁকি দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। বুক কেঁপে উঠল। বুকের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। চোখ মুখ জ্বালা ধরে গেলো। নিজের স্বামীর বুকে অন্য কাউকে দেখার মতো যন্ত্রণা কেমন শুধু এমন পরিস্থিতিতে পড়া একজন নারী বুঝবে। হা এইলোক ওকে বউ হিসেবে মানেনি। তাই বলে আর কিছু ভাবতে পারছে না ঐশী সব কিছু, কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে। এলোমেলো পায়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো ঐশী। জীবন তাকে এই কয়েক দিনে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে।

সোনিয়া আচমকা জড়িয়ে ধরায় শুভ কিছু সময় থমকে গিয়ে ছিলো। প্রথম কোনো নারী ওর এতটা কাছে এসেছে। আচ্ছা প্রথম ওকে জড়িয়ে ধরার অধিকার যেই নারীর সে তো ওর বউ এর হওয়ের কথা ছিলো।হঠাৎ ঐশীর হাসি হাসি মুখটা সামনে বেসে উঠলো। আবার যখন সোনিয়ার কথা মনে হলো রাগে নিজের থেকে সরিয়ে ঠাসস ঠাসস গালে চারটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তাও যেনো রাগ কমছে না। মন তো চাচ্ছে এই মেয়েকে এখন খুন করতে। শুধু বোন বলে ছেড়ে দিলো।

থাপ্পড় খেয়ে মাথা ঘুরে করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে সোনিয়া।

শুভ রেগে বললো,’ তুই কি আমার রুম থেকে বের হয়ে যাবি নাকি আরো কয়েকটা বসাবো গালে।

ভয়ে সোনিয়া দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

শুভ রাগে মাথার চুল মুঠ করে বসে পরলো। খুব রাগ লাগছে কত বড় সাহস ওকে জড়িয়ে ধরে। চোখ বন্ধ করতেই আবার ঐশীর মুখটা বেসে উঠলো। কি হচ্ছে ওর সাথে। এটাই কি স্বামী স্ত্রীর বন্ধন..??

আদিত্যের মন শরীর কোনোটাই ভালো লাগছে না। নিজেকে খুব ছন্নছাড়া, একা লাগছে। সে এখনো সেই উত্তর খুজে পেলো না। খালামুনিকে কয়েক বার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ফিরে এসেছে। কি না কি ভেবে বসে। কিন্তু এই বাড়ির মানুষগুলো আর আগের মতো স্বাভাবিক না। কিছু কি হয়েছে..??

_____★_____★______★______

আজ খুব তারাতারি ঘুম থেকে উঠে ঐশী নামাজ পড়ে নিলো। তারপর রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো।

শুভ আর ঐশী আলাদা রুমে থাকে৷ শুভকে অনেক বলেও রাজি করাতে পারেনি শুভর আম্মু এক রুমে থাকার জন্য।

শুভ উল্টো ওর আম্মুকে বলে দিয়েছে এই বিয়ের বিষয় যেনো আর কেউ না যানে।

সকালের নাস্তা শেষ করেই আদিত্য চলে গেলো ওর খুব ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে। সোনিয়া যায়নি সে আরো কয়েকদিন থাকবে।

শুভ নাস্তা করে যাওয়ার সময় ওর আম্মু বললো আজ ঐশীকে নিয়ে শশুর বাড়ি যেতে হবে।

শুভঃ ভার্সিটি থেকে এসে যাবো। বলেই বেরিয়ে গেলো।

ঐশী ওর শাশুড়ী কে বলে নিজেও বেরিয়ে গেলো। যদিও নানি শাশুড়ী অনেক ঝামেলা করতে চেয়ে ছিলো।

ঐশী ভার্সিটিতে আজকে শাড়ি পড়ে এসেছে। খুব সুন্দর লাগছে। হঠাৎ প্যান্ট শার্ট পড়া বাইক নিয়ে ঘোরাফেরা করা মেয়েটা হঠাৎ শাড়ি পরতে দেখে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

ঐশী কারো দিকে না তাকিয়ে সবাইকে খুজছে। একটু দূরে চোখ যেতেই দেখলো সবাই গাছের নিচে বসে আছে।
ঐশী ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই শান্ত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, ‘ দুস্ত এই ললনা কে…?”

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে এই প্রথম শাড়ি পড়া অবস্থায় ঐশীকে দেখলো। নবীন বরন অনুষ্ঠানে ও কখনো ঐশী শাড়ি পড়ে আসেনি।

ঐশী শান্তর মাথায় গাঁট্টা মেরে পাশে বসে পরলো।

অথৈঃ দুস্ত তোরে তো হেব্বি ভাল্লাগছে। আমি মেয়ে হয়েও ক্রাশ খাইছি।

মৌঃ আমরা মেয়ে হয়েও ক্রাশ খাইলাম এবার ভাব আমাদের দুলাভাই এর কি অবস্থা। বলেই চোখ মারলো।

ঐশীঃ পাম দেওয়া শেষ…
দীপঃ তুই কি গাড়ি যে পাম দিবো।
ঐশীঃ কু*ত্তা আমি গাড়ি হমু কা। এখন বল অথৈর ওই নাগর কই।
অথৈঃ কু*ত্তি নাগর কি?? ওই পুলারে পাইলে আমি ফুটবল খেলুম।
দীপঃ ফুটবল খেলতে পারোস তুই…?
অথৈঃ আ…ম আমি ফুটবল পারি না তো কি হইছে ক্রিকেট খেলমু।

দীপ্তিঃ হিহিহি
অথৈঃ একদম হাসবি না। কেউ আমাকে ভালোবাসে না।
ঐশীঃ ছেলেটাকে চিনিস..??
অথৈঃ আমাদের সিনিয়র।
ঐশীঃ ওহহ আচ্ছা। চল..
অথৈঃ কোথায়..?
ঐশীঃ আগে তো আয় সবাই।

সবাই মিলে দাঁড়িয়ে আছে দুই তোলায়।
দীপ্তঃ ওই তো আসতেছে।
ঐশীঃ সত্যি এটা তো??
অথৈঃ হুম এটাই।
ঐশীঃ দে ডেলে।
এক বালতি ময়লা সাবানের পানি ঢেলে দিলো ঐশী দুতলা থেকে।

নিচে চেচামেচির আওয়াজ শুনে সবাই দুতলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। আর শান্ত বালতিটা লুকিয়ে ফেললো।
নিচে গিয়ে যা দেখলো এক একটার চোখ চড়কগাছ।
ঐশী মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কি হলো…?

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।