ডাহুক নদীর তীরে পর্ব-১০

0
260

#ডাহুক_নদীর_তীরে (পর্ব-১০)
#হালিমা রহমান

দূরে কোথাও একটা কুকুর উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলো।রাতের নিস্তব্ধতাকে একদম চিড়ে ফালা ফালা করে ফেললো হতচ্ছাড়া প্রাণীটা।এক মুহূর্তের জন্য সোনালীর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে।মনের কোনে জমে তীব্র ভয়।কোনো বিপদ আসতে চললো নাকি?সোনালী দু’ বার আল্লাহর নাম জপে।এই যাত্রায় বেঁচে ফিরতে পারলে এসব কাজ ছেড়ে দিবে–এই প্রতিজ্ঞাও করে মনে মনে।

_” মিস সোনালী, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?”

ফোনের কথা ভুলেই গিয়েছিল সোনালী।ডিপার্টমেন্ট হেডের কথা শুনে দাঁতে জ্বীভ কাটে।ব্যস্ত সুরে বলেঃ” ইয়েস স্যার,শুনতে পারছি।”

_” গিভ মি ইয়োর কোড নম্বর।”

_” এস.এম.জি.ফোর।”

_” ওখানের কী অবস্থা?”

_”এখন অবধি ভালো স্যার।কিন্তু কতক্ষণ এরকম অবস্থা থাকবে তা বলতে পারছি না।”

_” মুখোমুখি হয়েছেন?”

_” জ্বি স্যার।”

_” কেমন লাগলো?”

_” আহমেদ ইউসুফ খুব আকর্ষণীয় একজন পুরুষ।খুব বেশি কথা বলে না বোধহয়।তবে একটা জিনিস আমার চোখে পড়েছে স্যার।”

_” কি?”

_” এখানে একটা মেয়ে আছে।তথা নাম।ওর দিকে ইউসুফ কিভাবে যেন তাকায়।তথার দিকে তাকানোর সময় ওর চোখের দৃষ্টি বদলে যায়।আমার মনে হয়,তথা আহমেদ ইউসুফের পছন্দের একজন মানুষ।”

_” দুজনের দিকেই নজর রাখো।আহমেদ ইউসুফের অতীত ইতিহাস ভুলে যেওয়া না। আরেকটা কথা মনে রেখো, তোমরা সবাই কিন্তু বিপদে আছো।এক পা এদিক-ওদিক করো না।”

_” একটা কথা বলব, স্যার?”

_” বলো।”

_ ” এতো ঝামেলা করার কি দরকার,স্যার? এরচেয়ে বন্দুকের ছয়টা বুলেট ওই হারামজাদার পেটে ভরে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়।ওর মতো শয়তানের বাচ্চা পৃথিবীতে না থাকলে কি হবে?”

_” মিস সোনালী, স্ল্যাং ইউজ করবেন না।এজন্য আপনার শাস্তি হতে পারে।দূরে আছেন বলে ভাববেন না আপনি নিয়ন্ত্রণহীন।”

থতমত খায় সোনালী।মেয়েটার এই এক দোষ। কথার আগে মুখ দিয়ে গালি বেরিয়ে যায়।সোনালী নিচু স্বরে বলেঃ” সরি স্যার। তবে আমার বুদ্ধিটা কিন্তু মন্দ নয়। ”

_” আহমেদ ইউসুফের অপরাধের প্রমাণ নেই। প্রমাণ থাকলে অনেক আগেই তাকে ধরতাম আমরা। প্রমাণ জোগাড় করতেই আপনি সেখানে গেছেন।তাছাড়া, ওর হাত অনেক লম্বা।প্রমাণ ছাড়া একরাতও রাখা যাবে না।তাহলে বুঝতেই পারছেন,প্রমাণ হাতে না আসা পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারব না।”

_” বুঝতে পারছি স্যার।”

_ ” নজর রাখুন ওর উপর।বিন্দু পরিমাণ প্রমাণ মিললেই,টিম বি তাদের কাজ শুরু করে দেবে।আপনিও ঢাকা ফিরতে পারবেন।তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন,আহমেদ ইউসুফ যেকোনো সময় দেশ ছাড়তে পারে।দেশ ছাড়লে আমরা আর কিছুই করতে পারব না।তাই দেশে থাকতেই যা করার করতে হবে।”

_” আমাদের হাতে বোধহয় এখনো একমাস সময় আছে স্যার।”

_” বলা যায় না।সব কাজে ইউসুফ উপস্থিত থাকে না।সাবধানে থাকবেন মিস সোনালী। আশা করছি সফলতার সাথে কাজ শেষ করার পর আবার আপনার সাথে দেখা হবে।”

_” ইনশা….”

আর কথা বলতে পারে না সোনালী।তাড়াতাড়ি লাইন কেটে ফোনের আলো বন্ধ করে।ঘামে মেয়েটার পরনের শার্টটা ভিজে গেছে।একে গুমোট আবহাওয়া তার উপর ভয়।সোনালীর অবস্থা পুরো নাজেহাল।সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে থাকে।হৃৎপিণ্ডের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে সোনালী আল্লাহকে ডাকে।পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা অশ্বত্থ ও কৃষ্ণচূড়া গাছের পিছনে নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নেয়।কোনোক্রমেই এখন সে ধরা পড়তে চায় না।
জমিদার বাড়ির পাকা রাস্তাটুকুতে দুই জোড়া জুতোর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।মসৃণ পথে বিশ্রি শব্দ তুলে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইউসুফ ও মামুন।সোনালী ঘাড়টাকে একটু নিচু করে বাড়ির লোহার গেটের দিকে তাকায়।গেটটা এখনো তালা দেওয়া।এরা গেট দিয়ে আসেনি।বাড়ির ভিতরের কোনো এক জায়গা থেকে এসেছে।সোনালী যখন বাইরে এসেছে তখন এরা কেউ বাড়িতে ছিল না-এটা নিশ্চিত।তবে কি এবাড়িতে কোনো গুপ্তকক্ষ আছে?অথবা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো এমন কোনো ঘর আছে?প্রাচীন আমলের বাড়িতে এসব টর্চার সেল থাকাই স্বাভাবিক।আগের দিনের রাজা-বাদশাহ-জমিদারেরা অপকর্ম করার জন্য হরহামেশাই এসব তৈরি করতো। তাছাড়া, আহমেদ বংশের জন্য এসব স্বাভাবিক বিষয়। জমিদার আহমেদ জুলফিকার যেদিন জমিদার হয়েছিলেন,সেদিন নাকি ভোরবেলাতেই এক কৃষককে একশ চাবুক মেরে আধমরা করে ফেলেছিলেন।দরিদ্র কৃষকের অপরাধ ছিল অতি সামান্য। সকালবেলা ক্ষেতে যাওয়ার সময় তারসাথে জমিদারের দেখা।দরিদ্র-বৃদ্ধ কৃষক জমিদারকে চিনতে পারেননি। তাই রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঝুকিয়ে কুর্নিশ না করে বৃদ্ধ তাড়াহুড়ো করে ক্ষেতে চলে যাচ্ছিলেন।এটাই চোখে লাগে জমিদারকে।বৃদ্ধের এতোবড় দুঃসাহস দমিয়েছেন চাবুক দিয়ে। এতো গেল একদিনের কথা।তার সময়ে এদিকের মানুষের অবস্থা ছিল সবচেয়ে শোচনীয়।আবার মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এই আহমেদ জুলফিকার ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। বৃদ্ধ বয়সেও মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেননি।প্রায় প্রতিদিন এখানে নারকীয় অত্যাচার চলতো।এ গ্রামের বহু বীর সন্তানের রক্ত মিশে আছে এ বাড়ির মাটিতে।এরকম একটা বাড়িতে টর্চার সেল বা পাতাল ঘর থাকাটা স্বাভাবিক।ইউসুফ ও মামুন কি সেখানেই ছিল নাকি অন্যকোথাও ছিল?নাকি এরা বাড়ির পিছনে জঙ্গলে ছিল।এতো এতো চিন্তার ভার নিতে পারে না সোনালী।একটুখানি মাথা তুলে কেবল ইউসুফ ও মামুনের দিকে তাকিয়ে থাকে।ডানহাত জিন্সের পকেটের ভিতর ঢুকিয়ে রিভলবারটাকে শক্ত করে চেপে ধরে।কোনোভাবে ধরা পড়লেই গুলি চালিয়ে দেবে।অকারণে এদের হাতে মরবে কেন?

পাকা রাস্তাটুকুতে পা না থামলেও, বাড়ির কাঠের দরজার সামনে এসে পা থেমে যায় ইউসুফের। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকে বিশাল দরজার দিকে।ইউসুফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মামুনও দাঁড়িয়ে যায়।বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করেঃ” ঘরে যাবেন না স্যার?”

_” দরজাটা খোলা কেন, মামুন?তুমি কি এই দরজা দিয়ে বেড়িয়েছিলে?”

_” না স্যার।আমি তো পিছনের দরজাটা ব্যবহার করেছিলাম”

_” তাহলে এটা কে খুললো?”— কথা বলতে বলতেই চারদিকে চোখ বুলায় ইউসুফ।অনেক অন্ধকার দেখে মোবাইলের আলো জ্বেলে নেয়।আলো ঘুড়িয়ে এদিক-ওদিক দেখে।কিন্তু কোনোকিছুই নজরে আসে না তার।মামুন আশ্বস্তের সুরে বলেঃ” কেউ নেই স্যার। আমিই বোধহয় ভুলে দরজাটা লাগাইনি।অকারণে চিন্তা করছেন আপনি।”

_”এই ভুলটা আর কখনো করবে না।রাত নামার সাথে সাথেই দরজা আটকে দেবে।মনে রাখবে এখানে কিন্তু কোনো গার্ড নেই।বিপদ কোনদিক দিয়ে আসে তা বলা যায় না।আগে থেকেই সতর্ক হতে শিখো।”— শেষদিকে খানিক কঠিন শোনায় ইউসুফের কন্ঠ।মামুন ইউসুফের কথার শেষে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়। ইউসুফকে প্রবেশ করার জন্য দরজা খুলে দেয়।ইউসুফের পিছে পিছে সেও ঢুকে।ইউসুফের সামনে খুব নির্বিকার আচরণ করলেও ঘটনাটা খুব ভাবাচ্ছে মামুনকে।কাহিনিটা কি হলো?মামুন তো দশটার দিকেই দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছিল।নাকি দেয়নি?বিভ্রান্ত হয়ে যায় মামুন। কপাল কুঁচকে দরজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে।ঘন্টাখানেক আগে দরজা লাগিয়েছিল না লাগায়নি তা মনে করতে পারে না।

_” মামুন, ডিরেক্টরের দিকে নজর রেখো তো।একপাল শক্তিমান ছেলে নিয়ে এখানে শুটিং করতে এসেছে।আহাম্মক কোথাকার।”

_” ওকে স্যার।”

ইউসুফ উপরে চলে গেলে মামুনও দরজা আঁটকে দেয়।তবে মাথা থেকে বিভ্রান্তিটুকু ঝেড়ে ফেলতে পারে না।কাল থেকে ভালোভাবে নজর রাখতে হবে।এ বাড়িতে কয়েকটা সিসি ক্যামেরা আছে।কিন্তু জিনিসগুলো নষ্ট।একা থাকতো বলেই কখনো সিসি ক্যামেরার দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।তাই একবার নষ্ট হওয়ার পর আর নতুন করে লাগানো হয়নি।বিরাট ভুল হয়ে গেছে।ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রাখা উচিৎ ছিল।তবে ভুলের জন্য খুব বেশি অনুতপ্ত হয় না মামুন।বিকল্প খুঁজে নেয় মুহূর্তেই।কালকে থেকে সবার উপর নজর রাখবে।কারো উল্টো-পাল্টা কাজ-কর্ম চোখে পড়লেই কট করে ধরে ফেলবে।এই ভেবে নিচ তলায় তার জন্য বরাদ্দ ঘরে চলে যায়।মামুন নামের ছেলেটা আহমেদ ইউসুফের যোগ্য শিষ্য বটে।

হাত-পা-মেরুদন্ড-ঘাড় সব একসাথে গুটিয়ে বসে ছিল সোনালী।বাড়ির দরজা বন্ধ হতেই হাত-পা ছড়িয়ে মাটিতে লেপ্টে বসে পড়ে সে।এতোক্ষণের আটকে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়ে।হাঁপড়ের মতো উঠা-নামা করে তার বুক।আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা দম নেয়।বাম হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁটের উপর জমে থাকা ঘামগুলো মুছে নেয়।তারপর পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছে নেয় সারা মুখ,গলা,ঘাড়। বেশ কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সোনালী।বাড়ির সব আলো নিভে গেছে।আশপাশটা পুরো ভূতের বাড়ির মতো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন,পথ ভুলে ভুল করে সোনালী মানুষের রাজ্য ছেড়ে ভূতের রাজ্যে চলে এসেছে।এখনই ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করবে,নুপুরের আওয়াজ পাওয়া যাবে,মানুষের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসবে দূর থেকে।ভূতের ছবিগুলোতে তো এসবই দেখায়।অবশ্য এসব ঘটনা ঘটলেও খুব বেশি অবাক হবে না সোনালী।এই শয়তানের বাড়িতে জ্বিন-পরী না অস্বাভাবিক। অন্ধকারেই পাপাচারে পূর্ণ বাড়ির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে সোনালী।সবকিছুর শেষ আছে।আহমেদ ইউসুফের পাপেরও শেষ আছে।তার শেষটাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে সোনালী।হাতেনাতে শুধু ধরার অপেক্ষা।প্রমাণগুলো একবার হাতে আসুক শুধু।রিমান্ডের মার আর বিখ্যাত ডিম থেরাপি কি জিনিস,তা হাড়ে হাড়ে বুঝবে এই হারামজাদা।বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আরেকচোট হাসে সোনালী। দরজা-জানলা সে থোড়াই কেয়ার করে।এক পথ বন্ধ হয়েছে তো কি হয়েছে? আরো কত পথ আছে।আগে-পিছে নজর বুলিয়ে বাড়ির পিছনে পা বাড়ায় মেয়েটা।নিশাচর প্রাণীর মতো উবে যায় সারি সারি বয়স্ক গাছের আড়ালে।

***

খোলা জানলা দিয়ে ঝুপ করে এক চিলতে আলো ঢুকলো ঘরের ভিতর।আকাশে তেজি সূর্যের খরখরে রোদ।তপ্ত রোদ চোখ-মুখ ছুঁয়ে দিতেই ঘুম ভেঙে যায় তথার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।দেয়াল ঘড়ির দিকে একবার নজর দেয়।সাতটা বাজে সবে।আজকে বোধহয় খুব গরম পড়বে।সাতটা বাজেই সূর্যের তাপে ত্বক পুড়ে যায়।তথা একবার সোনালীর দিকে তাকায়।উপুর হয়ে শুয়ে আছে মেয়েটা।ঘামে পিঠ ভিজে আছে।তথা নেমে জানলায় পর্দা টেনে দেয়।সোনালীকে ডাকে না আর।মেয়েটা ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক।
তৃপ্তি সহকারে ঘুমাতে পেরে শরীরটা খুব ফুরফুরে লাগছে তথার।ব্রাশ করে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুতেই শরীরে আলাদা প্রশান্তি আসে।এদিকের পানি অনেক ঠান্ডা যা এই গরমে স্বস্তি দেয়।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই খুব ক্ষুধা পেয়ে গেল তথার।হাম্মামখানা থেকে বেরিয়ে রুম থেকে পার্টস নেয়।এবাড়িতে রুমে রুমে গোসলের জায়গা নেই।গোসল করতে হয় দোতলার এককোনে অবস্থিত হাম্মামখানায়।এটা নাকি আগে অন্দরমহলের মেয়ে -বউদের গোসলের জায়গা ছিল।বিশাল এক ঘরে বালতিতে বালতিতে পানি রাখা।এখন অবশ্য দুটো ঝর্ণা ও সাত-আটটা পানির কল আছে।এগুলো নতুন লাগানো হয়েছে।
তথা নিচে নেমে কাউকেই দেখতে পায় না।কেউ বোধহয় ঘুম থেকে উঠেনি এখনো।তথা এদিক-ওদিক নজর বুলিয়ে বাড়ির বাইরে পা রাখে।দিনের আলোয় সবটা চকচক করছে।বিশাল কয়েকটা নারিকেল গাছ আছে এখানে।উঠোনের থেকে একটু দূরে গেলেই বিশাল এক পুকুর নজরে পড়ে।ঘাট বাধানো পুকুর।ঘাটের একাংশ ভেঙে ইট বেরিয়ে আছে।একটা আমগাছ হেলে আছে পুকুরের পানির দিকে।একটা গাছের সরু পাতা বেরিয়ে আছে ঘাটের পাশ দিয়ে।গাছটা চিনে তথা।ওদের গ্রামে এটাকে পাটিগাছ বলে।ঘাস দিয়ে পুরো জায়গাটা পূর্ণ হয়ে আছে।পুকুরটা অব্যবহৃত। তথার খুব ভালো লাগলো এদিকটা।তথাদের ব্যস্ত শহরে সকালের এমন স্নিগ্ধ দৃশ্য দেখা যায় নাকি?পুকুরের দিকে ভালোভাবে তাকাতেই শাফিনকে চোখে পড়ে।ওপাড়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তথার দিকে।তথা চোখ ফিরিয়ে নেয়।শাফিনকে তার মোটেও পছন্দ না।লোকটার কথা-বার্তা কেমন যেন নিম্নশ্রেণীর। প্রথমদিন তথাকে কি বাজে ইঙ্গিতটাই না করলো!তথা নাকি সুন্দর বলে চান্স পেতে কষ্ট হয়নি।ছিঃ! কি বাজে কথা।

_” কামিনী ফুল, আপনি এদিকে কি করছেন?”

তথা হতাশ চোখে তাকায় ইউসুফের দিকে।আবার কামিনী ফুল।হাহ! কতবার বলবে,ওর নাম তথা।তথা খানিক বিব্রত হয়ে বলেঃ ” আপনি আবার ভুল করছেন।আমি কামিনী ফুল নই,আমি তথা।”

_” আচ্ছা,বাদ দিন।এদিকে কি দেখছেন?এটা তো দেখার মতো পুকুর না।”

_” এদিকটা খুব সুন্দর।”—তথা অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।লোকটা মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর।খুব বেশি তাকিয়ে থাকা যায় না।চোখ ধাধিয়ে যায় একদম।

_” এদিকেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি কোথাও যাবেন?”

_” এখানে কোনো খাবারের দোকান পাওয়া যাবে? যেকোনো একটা শুকনো খাবারের প্রয়োজন ছিল আমার।”

_” আপনার ক্ষুধা পেয়েছে?”

_” হ্যাঁ, কিছুটা পেয়েছে।”

_” তাহলে চলুন কিছু খেয়ে আসি।এদিকে নাকি একটাই চায়ের দোকান আছে।অবশ্য আমিও খুব বেশি একটা চিনি না। ”

ইউসুফের সাথে পা মেলায় তথা।কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করেঃ” আপনি কি গ্রামে ছিলেন না কখনো?জন্মের পরেই ঢাকা চলে গেছেন?”

_” আমার জন্ম তো এইদেশে না।বিদেশে জন্মেছি আমি।”

_” কোন দেশ?”

_” পাকিস্তান।আমি জন্মগত পাকিস্তানী।আমার বাপ-দাদারা এদেশের হলেও আমি পাকিস্তানের। আপনাদের দেশের মানুষেরা আমার বংশের সবাইকে মেরে ফেলেছে।শুধু আমার বাবা-মাই বাঁচয়ে পেরেছেন ওদের হাত থেকে।”

_” কেন?আপনার বংশ কি এমন করেছিল?আপনারা না জমিদার ছিলেন?–তথার আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।তা দেখে মুচকি হাসে ইউসুফ। তথার দিকে নির্নিমেষ চেয়ে উদাস গলায় বলেঃ” আমরা বংশগত রাজাকার।মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বংশের সবাই শান্তি কমিটির সদস্য ছিল।যুদ্ধের শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতেই তাদের প্রাণ গেছে।”

চলবে….