ডেস্টিনি পর্ব-০৪

0
336

#ডেস্টিনি
পর্ব-৪
#tani_tass_ritt

সূর্যের আলো নিলয়ের চোখে পড়তেই নিলয় কপাল কুঁচকে ফেললো। মাথা প্রচন্ড ধরে আছে। নিলয় মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো। মাথা কেমন যেনো ঝিম ঝিম করছে। নিলয় পাশে তাকাতেই চমকে গেলো।
পাশে রিশা শুয়ে আছে। শুয়ে আছে বললে ভুল হবে। মরার মতো পরে আছে। ফর্সা মুখ টায় লাল লাল ছোপের দাগ। সাদা শরীর কেমন যেনো নীল হয়ে আছে।
নিলয়ের মাথা ঘুরে গেলো। পরোক্ষণেই মনে পরলো তার কাল রাতের কথা। তার মানে রাতে নেশার ঘোরে সে এতো বড় সর্বনাশ করে ফেলেছে মেয়েটার। মেয়েটাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
নিলয় রিশার গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। নিলয় জলদি করে উঠে ড্রেস পরে,রিশাকে কোনোরকমে জামা কাপড় পরিয়ে বেড়িয়ে পরলো হসপিটালের উদ্যেশ্যে। ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে। রিশা এখনো অচেতন। সে তার ভালোবাসার মানুষটার এতো বড় ক্ষতি করে ফেলেছে। কোনোদিনো নিজেকে মাফ করতে পারবে না সে।
রিশাকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করলো। ডক্তর নিলয়ের বন্ধু হওয়ায় কোনো প্রশ্ন করলো না।

” প্লিজ ওকে বাচাঁ বন্ধু। ”
” হুম দেখছি।”
বলেই ডক্তর কেবিনে ঢুকে গেলো।

নিলয় এক এক করে রিদিতা, নিলয়ের মা সবাইকে কল দিয়ে বললো হসপিটালে আসতে।

নিলয় পায়চারি করছে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার। সে কি করতে গিয়ে কি করে ফেললো! রিশার যদি কিছু হয়ে যায়। নাহ আর ভাবতে পারছে না।

এতোক্ষনে সবাই হসপিটালে এসে পরলো।
রিদিতা এসেই নিলয়কে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে রিশার? ”

নিলয় কিছু বলতে পারছেনা। কি বলার ই বা আছে তার। যে সে রিশাকে রেইপ করেছে!

রিদিতা রেগে বললো,” কি ব্যাপার বলছিস না কেনো? কি হয়েছে আমার বোনের? ”

নিলয় এবার মাটিতে বসে পরলো। তার শরীরে যেনো সমস্ত শক্তি হারিয়ে গিয়েছে।
সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ” আপু আমার জন্য রিশার আজকে এই অবস্থা। আমি ওর রেইপ করেছি আপু।আমি রেইপ করেছি। প্লিজ আপু তোমরা রিশাকে বাঁচাও। লাগলে আমাকে মেরে ফেলো। প্লিজ আমার রিশাকে বাঁচাও। ”

রিদিতা যেনো থ খেয়ে গেলো। উপস্থিত সবাই থমকে গেলো। কেউ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

নিলয় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। রিদিতার কি যেনো হলো সে নিলয়কে এলোপাতারি মারতে লাগলো।

তখনি ডক্টর বেরিয়ে এলো। রিদিতা জলদি উঠে ডক্তরের কাছে এলো।
” আমার বোন কেমন আছে? আমি ওকে দেখবো প্লিজ ডক্তর।”

“দেখুন অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার জন্য পেসেন্টের অবস্থা ক্রিটিকাল।আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো রোগীকে বাঁচানোর।”

বলেই ডক্তর চলে গেলো।

রিশার মা হাউমাউ করে কাঁদছেন। রিদিতা যেনো কাঁদতেও ভুলে গেছে। নিলয় ঠাই বসে রইলো।

নিলয়ের বাবা মা ও মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। এইদিকে আরহান ও বেরিয়ে পরেছে। খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। অতিরিক্ত ঝড়ের জন্য মাঝ পথেই তারা থেমে গিয়েছিলো।

প্রায় ৬-৭ ঘন্টা হয়ে গেলো। রিশার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। ডক্তর বলেছে রিশার জ্ঞান না ফেরা অব্দি কেউ কিছু বলতে পারছে না।

নিলয় রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো হাটছে। হসপিটালে থাকার শক্তি সাহস কোনোটাই তার নেই। নিলয় হাটতে হাটতে কখন নিজের বাসার সামনে এসে পরলো খেয়াল করলো না। বাসায় এসে নিজের চেয়ার টেবিলে যেয়ে বসলো। একটা কাগজ কলম নিলো। তার হাত কাঁপছে। কলমটাও যেনো ঠিক করে ধরতে পারছে না। কিন্তু এখন হাত কাঁপলে তো চলবে না। তাকে যে শেষ কথাটা রিশাকে জানাতেই হবে।

সে কাঁপা কাঁপা হাতে লিখা শুরু করলো,

রিশা পাখি,
আমি জানি আমি তোর অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছি। তোর সামনে যাওয়ার সাহস যে আমার আর নেই রে।আমি কি করে তোর সামনে দাঁড়াবো। আমি যে তোকে পাগলের মতো ভালো বাসিরে। জানিস যেদিন থেকে ভালোবাসা কি বুঝেছি শুধু তোকেই ভালোবেসেছি। আমার বাবা আর তোর বাবা ফ্রেন্ড থাকায় আমাদের মধ্যেও ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিলো।কিন্তু এই ফ্রেন্ডশিপ যে কবে ভালোবাসায় পরিণত হলো তা নিজেও বুঝিনি। আচ্ছা তুই কি কোনো দিন ও বুঝিসনি আমার ভালোবাসা! নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে ছিলো। জানিস সব থেকে বড় ধাক্কা কবে খেলাম যেদিন তুই এসে আমাকে বললি যে তুই রিদিতার আপুর বেস্টফ্রেন্ড শুভ্র কে ভালোবাসিস। এটা জানার পর আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো। কিন্তু আমিও যে তোকে বড্ড ভালোবাসতাম রে। সেদিন থেকে কতো ট্রাই করেছি তোদেরকে আলাদা করার। কিন্তু না কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছিলোনা। তোদের ভালোবাসা দিনদিন যেনো বেড়েই যাচ্ছিলো। আর আমার বুকে আগুন জ্বলছিলো। তাই আমি ওত পেতে বসে রইলাম যে করেই হোক শুভ্রকে আমি রাস্তা থেকে সরাবই। যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন সুযোগ ও পেয়ে গেলাম। কিন্তু আফসোস ঐদিন রিদিতা আপুও সাথে ছিলো। কিন্তু আমার যে শুভ্রকে মারতেই হবে। সেদিন হরতাল থাকায় বাহিরে এমনিতেও মারামারি হচ্ছিলো।আমি এই সুযোগ নিলাম। লোক ভাড়া করলাম।ভিরে শুভ্রের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলাম। রিদিতা আপুর ডান হাত টা আমার জন্যই পুড়ে গিয়েছিলো। তোর জন্য আমি খুনিও হয়ে গেলাম রে। কিন্তু তুই তো আমাকে সব থেকে বড় শক দিলি যখন তুই আমার ই বড় ভাইকে বিয়ে করে আমার ই বাসায় এলি। বিশ্বাস কর কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো। নিজেকে কি করে সামাল দিবো। একবার ও ভেবেছিলাম নিজের ভাইকেও মেরে ফেলি। কিন্তু নিজের ভাইকে কি করে মারবো বল। বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করে তোর রেইপ করিনাই রে। নেশার ঘোরে আমি এতো বড় অপরাধ করে ফেলেছি। তোকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছায় নিজেকে সামাল দিতে পারিনাই রে। জানি কোনো দিনও আমাকে মাফ করতে পারবিনা। আমিও তোর সামনে দাঁড়াতে পারবোনা।আল্লাহ হয়তো আমাকে আমার ই পাপের শাস্তি দিচ্ছে। তুই যখন চিঠিটা হাতে পাবি হয়তো অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।
আচ্ছা আমি কি ভালোবাসার যোগ্য ছিলাম না? আমাকে না হয় একটু ভালোবাসতি!

অভাগা নিলয়।

চলবে……