তবুও ভালোবাসি পর্ব-১০

0
345

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১০
#রেজওয়ানা_রমা

কাপা কাপ হাতে মেহুল ফোন রিসিভ করে
– হ্যা-হ্যা-হ্যালো
– মেহুল ইসলাম নীরা বলছেন?
-জ্বী
-আপনার নামে একটি পার্সেল আছে। কিন্তু ম্যাম আপনাকে এসে নিয়ে যেতে হবে।
-পার্সেল! আমার নামে?
-জ্বী
-আচ্ছা কোথায় আসতে হবে?
-এড্রেস টি এসএমএস করে দিয়ে দিচ্ছি ম্যাম
-ওকে।
-জ্বী।

ফোন টা কেটে মেহুল ভাবছে কিসের পার্সেল। কে পাঠিয়েছে? যাবো কি যাবো না।এসব ভাবতে ভাবতে মেহুল নিচে নামছে। এখন রাত ১০ টা বাজে। সেই সকালে মেহুল কে নিয়ে গিয়েছিল মিরা। তাও সবাই কে মিথ্যা বলে। আর মেহুলের বাড়ি ফিরতে প্রায় ৮ টা বাজে।মেহুল নিচে গিয়ে দেখে মা সবার জন্য খারার রেডি করছে। মেহুল কে দেখে বলে,
-কিরে নিচে এলি কেন। আমি তো তোর খাবার টা রুমেই দিয়ে আসতাম
-কেন মা? আমি তোমাদের সাথে কি ডিনার করতে পারব না?
– কেন পারবি না। তুই গিয়েছিলি ঘুরতে। নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত। তাই বলছিলাম
– আমি ঠিক আছি। চল আমি সাহায্য করছি তোমাকে

মেহুল আর মেহুলের শাশুড়ি দুইজন মিলে রাতের খাবার রেডি করে সবাই কে ডাকে। সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেয়। ডিনার শেষে মেহুল তার শাশুড়ি কে বলে
-মা তুমি যাও আমি গুছিয়ে রাখছি সব।
-তুই পারবি সব?
– হ্যাঁ আমি পারব। তুমি যাও রেস্ট না। সারাদিন তো কাজ করো। এখন যাও তো। আমি দেখছি এদিক টা।
– ঠিক আছে( মেহুলের থুতনি তে হাত দিয়ে চুমু খায়ে)

মেহুল সব গুছিয়ে রেখে শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে উপরে আসে। এসে সোজা ওয়াসরুমে যায়।
এদিকে রিয়ান মেহুল কে কল করেই যাচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না। সন্ধ্যা থেকে ফোন অফ ছিল। মেহুল বাসায় এসে ফোন অন করেছে। আর এই দুই ঘন্টায় রিয়ান ২০০ বার এর বেশি কল দিয়েছে কিন্তু কেউ রিসিভ করে নি।আর এখনো করছে না। রিয়ান এতো বেশি চিন্তায় ছিল যে সে একবারও তার মা বা বোন কে কল করে নি। রিয়ান ওদের কথা ভুলেই গিয়েছিল।মেহুল ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে যায়। চুল গুলোর খুবই বাজে অবস্থা হয়ে আছে। চুল চিরুনী করে বেনী করে নেয়। রুমের লাইট অফ করে বেলকনী তে চলে আসে। গ্রীল ধরে ভাবছে রিয়ান কি করে এত নীচ হতে পারল। এইভাবে আমার বিশ্বাস ভেঙে দিল। কিন্তু রিয়ান কে এসব কিছুই জানতে দিব না। বুঝতেই দিব নে না আমি সব টা জানি। এইবার শুরু হবে আমার নাটক। হঠাৎ কি ভেবে রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখে ২০০ এর ওপরে মিসড কল। তাও আবার রিয়ান। মেহুল বেশ অবাক হয়। এত বার কেন কল করেছে? কিছু না ভেবেই কল ব্যাক করে। রিয়ান কল রিসিভ করেই এক নাগাড়ে বলে যায়,
-নী-নীড় নীড় তুমি ঠিক আছো? ফোন ধরছিলে না কেন। কত বার ফোন করেছি টেনশনে পাগল যাচ্ছি আমি। কমন সেন্স নেই। একটা বার তো রিসিভ করতে পারতে। আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম নী…
-ব্যাস। থামুন। অনেক হয়েছে। (রেগে)
-মানে। তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়ে..
– হ্যাঁ জানি। আমার জন্য আপনার যে চিন্তা হয় সেটা আমি বুঝি। না হলে এত বার ফোন করে কেউ হিহিহি
-তুমি হাসছো নীড়?
– হাসবো না? আপনি এতো ভয় পেয়েছেন কেন বলুন তো। আমি তো ঠিকই আছি। আর সারাদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই আর ফোন করা হয় নি। আর…
– জাস্ট শাট আপ নীড়। কোথায় ছিলে সারাদিন?
– আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড মিরা আপুর সাথে। কেন আপনার সাথে তো আপু কথা বলছে তাহলে জিজ্ঞাসা কেন করিছেন?
-ও আমার সাথে কথা বলেছে সেটা তুমি জানো?
-হুম। আমার কাছ থেকেই তো ফোন নিয়ে গেল। আপনি যখন ফোন দিলেন তখন আপু ফোন নিয়ে বলল যে দাও আমি কথা বলছি তাই আর কি
-ও তোমার সামনে কথা বলে নি?
-না।
-ওহ। এই জন্য কিছুই জানো না তুমি।
– হুম(জানি অনেক কিছুই কিন্তু আপনি এখন জানবেন না আর কোনো কিছুই।মনে মনে)
-আর কখনও যাবে না আমাকে না বলল
-আপু অনেক ভালো। আপনি চলে গিয়েছেন আপু জানত না। আপু আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল। যখন জানতে পারে আপনি চলে গেছেন তখন বলল যে আমাকে সাথে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবেন। আমি যেতে চাই নি কিন্তু উনি জোর করে নিয়ে গেলেন। মা আর রিফাও বলল তাই…
– তাই আমার পারমিশন ছাড়া চলে গেলে? কিভাবে নীড়? ( একটু রেগে)
-সরি। আমার আপনাকে জানানো উচিত ছিল।
– তুমি ঠিক আছো তো?
– হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। কিন্তু কেন বলুন তো?
– সত্যি কথা বলো। তুমি কিছু লুকাচ্ছো
– কি- কি লুকাবো। কি লুকানোর আছে বলুন তো
– তুমি জানো মি.. ( থেমে গিয়ে)
(না না ওকে এখন এসব বলার দরকার নেই। ও হয়তো এখনো কিছু জানে না)
-কি হলো বলুন
– কিছু না। খেয়েছো?
– হুম
– ওকে ঘুমাও। গুড নাইট
-গুড নাইট
ফোন কেটে রিয়ান ভাবছে মেহুল মিথ্যা কেন বলল? কেন লুকাচ্ছে মিরা কে। এত কিছু লুকিয়ে রাখলো কেন? মিরার সব সত্যি কেন বলল না? কি চলছে মিরার মাথায়? আর মেহুলই বা কেন এমন করছে। নীড় যতই মিথ্যা বলো সত্যি টা লুকাতে পারবে না তুমি। হাহাহা…..

আর মেহুল নিজে নিজেই বলে এইবার দেখতে থাকো কি কি হয়। আমি আপনাকে কিছুই জানতে দিব না। বুঝতেও দিব না যে আমি সব জেনেছি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহুল গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে যায়। আর ওদিকে রিয়ানের চোখে ঘুম নেই। সে কিছুইতে এটা মানতে পারছে না যে মিরা কিছুই করে নি। যদি সত্যি মিরার ভালো উদ্দেশ্য থাকত তাহলে সে আমাকে ফোন করে এমন বিহেভ করত না। কি প্লান করেছে মিরা। এইসব ভাবতে ভাবতে কাকে যেন কল করে রিয়ান। আর কিছু একটা প্লান করে।
ফোন কেটে রিয়ান এক প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলে অনেক কিছুই করব কিন্তু কেউ কিছুই জানবে না হা হা হা
এইবার ঘুমিয়ে পড়ে রিয়ান।
সকালে,
.
.
.
.
#চলবে,