তবুও ভালোবাসি পর্ব-১৩

0
332

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৩
#রেজওয়ানা_রমা

– তোমাকে একটা জিনিস দেব চোখ বন্ধ করো।
-কেন??
-আহা করো না
-ঠিক আছে।

মেহুল চোখ বন্ধ করে নেয়। রিফা মেহুলের চোখে একটা কাপড় বেধে দেয়। তার পর মেহুলে নিয়ে ভিতরে যায়।

রেস্টুরেন্টের পরিবেশ টা একদম অন্য রকম। ভিতরে ঢুকেই দুই টা দিক আছে। একটা পাশে খোলা আকাশ। আরেক পাশে সাধারণ রেস্টুরেন্টের মত। রিফা মেহুল কে যে দিকে খোলা আকাশ সেই দিক টা তেই নিয়ে গেলো আর বলল যে,

– যতক্ষণ না আমি বলব চোখ খুলবা না ভাবী।
-ঠিক আছে

মেহুল কে রেখে রিফা এক দৌড়ে বের হয়ে এলো। কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মেহুল রিফা কে ডাকতে ডাকতে সামনে এগোতে থাকে। এমন সময় শাড়ী বেধে পড়ে যেতে নিলেই এক জোড়া হাত মেহুলের কোমর জড়িয়ে নেয়।
মূহুর্তেই মেহুল চোখের কাপড় সরিয়ে যা দেখে তাতে মেহুলের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষ টিকে বুকে জড়িয়ে কান্না করে মেহুল। সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষ টিও তার প্রেয়সী শক্ত করে জড়িয়ে নেয় তার বাহুডোরে।মেহুল কোনো কথা বলতে পারছে না শুধু কেদেই যাচ্ছে।

-নীইইইড় কাদছো কেন? এই নীড়
– (কান্না করেই যাচ্ছে)

বেশ কিছুক্ষণ পর মেহুল রিয়ানেত বুকের ওপত থেকে মাথা তুলে। রিয়ান মেহুলের মুখ দুই হাত দিয়ে ধরে বলে,

– এতো সেজেছো কেন? আমাকে পাগল করার ফন্দি তাই না?
– আমি কি জানি নাকি আপনি আসবেন ( লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে)

মেহুলের কপালের ঠোঁট ছুইয়ে বলে,

– ভালোবাসি তোমায়।

মেহুলের মুখে হাসি ফুটে উঠলেও পরোক্ষনেই তা মিলিয়ে যায় ঈশানের কথা মনে পড়তেই। তখনই নিজের কাছ থেকে রিয়ান কে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেয় মেহুল। মেহুলের এমন ব্যবহারে রিয়ান অবাক হয়ে যায়। বলে,

-কি হয়েছে? ( অবাক হয়ে)
-(নিশ্চুপ)
-বলো (গম্ভীর স্বরে)
-না কিছু না।

মেহুল কিছু বলতে চেয়েও বলে না। মেহুল বলতে চেয়েছিল সব টা। কিন্তু কোনো অজানা কারনে কিছুই বলে না। রিয়ান মেহুলের এমন ব্যবহারে বুঝতে পারে মেহুল কেন এমন করছে। তাই রিয়ান দুপা এগিয়ে মেহুলের কাছে যায়। মেহুল এক পা পিছিয়ে যেতেই রিয়ান মেহুলের হাত ধরে এক ঝটকায় মেহুল কে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মেহুল নিজে কে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টায় ব্যর্থ। রিয়ান শক্ত করে মেহুল কে ধরে রেখেছে। মেহুল হাত্র ব্যাথা পেলেও টু শব্দ টিও করর না। অতঃপর রিয়ান রাগে চিৎকার করে বলে,

– কি সমস্যা তোমার? কেউ একজন এসে যা তা বলে গেছে আর তুমি আমার কাছে কিছু শুনেই এমন করছো? কি ভেবেছো তুমি কিছু না বললে আমি জানতে পারবো না?
-(নিশ্চুপ)
-একটা বার আমাকে জানাতে পারতে? আমি কোনো দোষ করলে সেটা আমাকে না জানিয়ে আমার কাছ থেকে দূরে যাচ্ছো। কেন নীড়? আমি কি জানার অধিকার রাখি না?
-(নিশ্চুপ)
-জানতে চাও কেন ঈশান কে মেরেছি?
-কেন?
-ওয়েট।

মেহুল কে ছেড়ে দিয়ে রিয়ান জোরে জোরে ডাকছে,
-রিফা রিফা
– হ্যাঁ ভাইয়া।

রিফার হাত ধরে টানতে টানতে মেহুলের সামনে নিয়ে আসে। আর বলে,
-শুনে নাও এর কাছে ঈশান কে কেন মেরেছি

ঈশানের নাম টা শুনতেই ভয় পেয়ে আতকে উঠর রিফা। চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। যেন কোনো একটা ভয়ংকর ভূতের নাম শুনেছে।

-রিফা তুমি ঈশান কে চেনো? (মেহুল)
– ( মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়)
-কিভাবে চেনো? ঈশান কে তোমার ভাইয়া কেন মেরেছে রিফা? বলো প্লিজ চুপ করে থেকো না। ( উত্তেজিত হয়ে)
-ওই শয়তান টা কে মেরে ফেলে নি এটাই ওর ভাগ্য। আমার ভাই হয়ে তো ছেড়ে দিয়েছে অন্য কেউ হলে ওর লাশ টাও খুজে পেতো না কেউ।
– মানে? কি করেছে যে এই ভাবে ওর গায়র হাত তুলেতে হয়েছে? শুধু মাত্র আমাকে ভালোবেসেছিল তাই? তাই তোমারা ওকে এইভাবে মারলে? ছিহ!! রিফা ছিহ!!!
-ভাবী!!! কি বলছো তুমি? ঈশানের সাথে আমার ২ বছরের সম্পর্ক। খুব বিশ্বাস করতাম। একদিন ওকে আমি অন্য একটা মেয়ের সাথে ছিহ!
– অন্য একটা মেয়ের সাথে? কি বলো
– সেদিন আমি আর আমার একটা ফ্রেন্ড কলেজের সামনে পার্কে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে,

অতীত,
রিফা আর রিফার ফ্রেন্ড ঝুমু পার্কে গিয়েছিল হাটতে। হাটতে হাটতে তারা পার্কের একদম নির্জন জায়গায় চলে যায়।তাই তারা আর সামনে না গিয়ে ফিরে আসে। এমন সময় দেখে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে বসে গল্প করছে। আর ছেলেটি গল্পে গল্পে বার বার মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়। মেয়েটি বার বার হাত সরিয়ে দিলেও ছেলেটি আবারও এমন কাজ করতেই থাকে। এমন দৃশ্য দেখে রিফার বেশ রাগ হয়। তাই সে তাদের সামনে চলে যায়। রিফার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। চোখে অন্ধকার দেখছে। এই ছেলে টি আর কেউ নয় সে ঈশান। ঈশান রিফা কে দেখে তারাতারি উঠে রিফা কে বলে,

-তুমি এখানে?
-ভুল সময়ে চলে এসেছি তাই না?
– তুমি যা ভাবছো এমন কিছুই নয় রিফা( রিফার হাত ধরে)
-একটা কথাও বলবে না। আমি সব টা দেখেছি ( হাত ছাড়িয়ে) ছিহ! লজ্জা করছে আমার তোমার মত একজন কে আমি ভালোবেসেছি? ছিহ!!

পাশ দাড়িয়ে থাকা মেয়ে টি ঈশান কেএকটা থাপ্পর দিয়ে স্থন ত্যাগ করে। আর ঈশান গালে হাত দিয়ে চেয়ে রয় মেয়ে টার চলে যাওয়ার দিকে। মেয়ে টা চলে গেলে রিফাও চলে যেতে নিলেই ঈশান হাত ধরে ফেলে। এক হাত দিয়ে রিফার দুই হাত পিঠের সাথে ধরে আর একটা হাত দিয়ে রিফার মুখ চেপে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
দূর থেকে ঝুমু দেখে গাড়ির পিছু নেয় আর কাউ কে ফোন করে বলে তারাতারি আসতে।
.
.
.
.
#চলবে