তবু সুর ফিরে আসে পর্ব-২২+২৩

0
2159

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

২২তম পর্ব

ন‌ওশাদ কিছুক্ষণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নিশাল আর হেরার সাইকেল চালানো দেখলো ! দুজন হেসে হেসে সাইকেল চালাচ্ছে!
ওরা দুজন বাসার গেটে ঢুকে যাওয়ার পর সে নিজেও দ্রুত গেটের ভিতরে ঢুকলো ! বাসার সব কাজের লোকজন এতক্ষণ মজা করে হেরা আর নিশালের সাইকেল চালানো দেখছিল স্যার কে দেখে দ্রুত সরে গেল সবাই !
হেরার সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে হঠাৎ উঠে বসলো ন‌ওশাদ ! হেরা এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে গেল সাইকেল নিয়ে বেসামাল হয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে লনের ঘাসের উপর পড়ে গেল ! নিশাল পাপাকে দেখে অবাক হয়ে গেল !
হেরা পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঘাসের উপর পড়ে আছে!
পাপা তুমি তো আন্টিকে ব্যথা দিয়ে ফেললে !
সরি হেরা , ন‌ওশাদ হেরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ! ব্যথা পেয়েছো ! দেখি !
হেরা কে হাত ধরে টেনে তুলল ন‌ওশাদ ! হেরা পা ফেলতে পারছে না !
ন‌ওশাদ ঘাবড়ে গেল ! দেখি পা ঝাঁকি দাও ! নিশাল এসে হেরাকে ধরলো !
পাপা তুমি এটা কি করলে ? হঠাৎ করে এভাবে কেউ পিছনে উঠে, আন্টি ব্যথা পেয়ে গেল তো !
আরে আমি তো দেখলাম তোমার আন্টি খুব ভালো সাইকেল চালাচ্ছে তাই ভাবলাম আমাকে নিয়েও চালাতে পারবে !
হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে ! নিশাল এসে ওকে পাশ থেকে ধরলো ! দেখি বেশি ব্যথা পেয়েছো তুমি ?
হেরা নিশালের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল !
নিশাল বুঝে গেল আসলে তেমন কিছু হয়নি পাপাকে নার্ভাস করার জন্য আন্টি অভিনয় করছে !
ন‌ওশাদ হেরাকে লনে রাখা একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল ! আনারের মা দৌড়ে বরফ নিয়ে এসেছে!
কোথায় লেগেছে দেখি , বেশি ব্যথা পেয়ে গেছো ? আমি বুঝতেই পারিনি এতটা ব্যথা পেয়ে যাবে ! ন‌ওশাদ অপ্রস্তুত হয়ে বলল।
হাঁটুতে লেগেছে হেরা ?
হুম!
একটু পা টা ঝাকি দাও !
পারছি না নাড়াতে ,কাতর হয়ে হেরা বলল!
নিশাল মিটমিট করে হাসছে ! আন্টি ভালোই অভিনয় করে পাপাকে নার্ভাস করে দিচ্ছে ! ওর খুব মজা লাগছে!
সরি হেরা ! ন‌ওশাদ হেরার পায়ে হাত দিতেই হাত সরিয়ে দিল হেরা !
আরে না ধরলে ঠিক করে বুঝবো কিভাবে কোথায়, কতটুকু ব্যথা পেয়েছো ?
না না পায়ে হাত দিবেন না আপনি !
আরে বোকা মেয়ে দেখি !
হেরা দাঁড়িয়ে গেল ! নিশাল হো হো করে হাসছে !
কি হলো ? ন‌ওশাদ ছেলে আর হেরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
পাপা আন্টি কোন ব্যথা পায়নি তোমার সঙ্গে মজা করছিল !
কি সত্যি ! তুমি ও জানতে ?
হুম , আন্টি আমাকে ইশারা করেছে আগেই !
ভালোই তো দুজন দল বেঁধে আমাকে বোকা বানালে !
হেরা লজ্জা পেয়ে গেল !
পাপা তুমি রাগ করোনি তো আন্টি সাইকেল চালাচ্ছিল দেখে ?
অবশ্যই রাগ করেছি , এটা কেমন কথা বাড়ির ব‌উ সাইকেল চালাচ্ছে !
ন‌ওশাদের কথা শুনে হেরা ঘাবড়ে গেল !
পাপা সরি আন্টি কে বকো না প্লিজ !
ন‌ওশাদ নিশাল আর হেরা কে পাশ কাটিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল !
হেরার ভয় করছে ন‌ওশাদ রেগে গেছে ! নিশাল হেরার পাশে দাঁড়ালো , তুমি টেনশন করছো কেন পাপা কারো উপর রাগ করে না কখনো !
কিন্তু মন খারাপ করে আছেন তো !
চলো দেখি !
ওরা দুজন এসে দেখে ন‌ওশাদ স্যুট টা খুলে সোফায় বসে পেপার পড়ছে !
নিশাল পাপার পাশে বসলো , পাপা প্লিজ আন্টি ভয় পাচ্ছে তোমাকে !
ন‌ওশাদ তাকিয়ে দেখে হেরা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ! যেকোনো সময় কেঁদে ফেলবে!
হেরা লজ্জায় মরে যাচ্ছে!
নিশাল তোমার আন্টিকে বলো আমাকে পিছনে নিয়ে সাইকেল চালালেই সে ক্ষমা পাবে !
নিশাল হেসে দিল , আমি বলেছিলাম না আন্টি পাপা রাগ করে নেই !
তোমরা দুজন অভিনয় করতে পারো আমি দেখলাম আমিও পারি কিনা ! ন‌ওশাদ হাসছে! আর হেরা তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিলে আমি তো ভেবেছিলাম না জানি কত ব্যথা পেয়েছো!
ঘাসের উপর পড়েছি তাই ব্যথা পাইনি , রাস্তায় পড়লে ব্যথা পেতাম!
ভালোই তো দুজন সাইকেল চালাচ্ছিলে আমার খুব মজা লাগছিল দেখে !
অনেক বছর পর চালালাম আমি , হেরা বলল!
সাইকেল চালানো , সাঁতার কাটা একবার শিখলে কেউ ভুলে না বুঝলে !
আমাকে সাইকেল চালানো , সুইমিং পাপা শিখিয়েছিলে তাই না পাপা ?
হুম ! তখন তুমি ছয় বছর হবে !
হুম।
ন‌ওশাদের খুব ভালো লাগছে নিশাল অনেক দিন পর এভাবে ওর সঙ্গে গল্প করছে । হেরার সঙ্গে কত সহজ হয়ে গেছে ও ! দুজন সাইকেল চালাচ্ছে এমন ঘটনা ঘটবে সে কল্পনাও করেনি !
আনারের মা চা এনে দিলো !
এই চা খাব না আমাকে এই সময় তোমার আম্মার চা বানিয়ে দেয়ার কথা আনারের মা !
আমি দিচ্ছি বলে হেরা উঠে দাঁড়ালো !
এখন না আগে ফ্রেশ হব তারপর খাব ! নিশাল তুমিও খাও আমার সঙ্গে চা ?
ঠিক আছে !
হেরা উঠে গেল কিচেনের দিকে !
ওদের কথার মাঝখানে কেয়ারটেকার রিয়াজ নিশালের দুই ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলো ড্রয়িং রুমে !
নিশাল বন্ধুদের দেখে উঠে গেল !
ন‌ওশাদ ছেলের বন্ধুদের দিকে আগ্রহী চোখে তাকাচ্ছে ! খুব কম‌ই ছেলের বন্ধুদের দেখা পায় সে !
পাপা ওরা আমার ফ্রেন্ড দাইয়ান আর মেহরাব কলেজে দেখেছো ওদের !
আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল !
ওয়ালাইকুমুস সালাম ! কেমন আছো তোমরা ? ওয়াও তোমাদের সঙ্গে দেখি গিটার আছে !
জ্বি আংকেল শেহজাদ টিউন করে দিবে তাই নিয়ে এলাম !
এসো এসো বসো তোমরা!
নিশাল বাবা তুমি কিন্তু কখনো আমাকে শোনাও না বাজিয়ে !
আংকেল শেহজাদ অনেক ভালো বাজায় কিন্তু !
ওরা বেশি বেশি বলছে , পাপা যে কত ভালো গিটার বাজাতে পারে তোরা জানিসই না !
অনেক অনেক বছর আগে টুকটাক বাজাতাম এখন আর সেই ক্ষমতা নেই !
প্লিজ আংকেল দেখুন না চেষ্টা করে আবার !
আরে না না !
প্লিজ পাপা প্লিজ দারুন হবে ! তুমি গতবছর ই তো রেজোয়ান আংকেল আর সুমনা আন্টির এনিভার্সারি পার্টিতে তোমার ফ্রেন্ড দের গিটার বাজিয়ে শুনিয়েছিলে আমি কিন্তু ছিলাম সেখানে!
ন‌ওশাদ ছেলের মুখের দিকে তাকালো , মনে মনে ভাবছে এই তো সুযোগ ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক টা সহজ করার ! যা সে এত গুলো বছর থেকে চাইছে !
ঠিক আছে দাও দেখি গিটার ,কি হয় অবস্থা দেখাই যাক !
এক সেকেন্ড পাপা আমার গিটার টা নিয়ে আসছি ,বলেই নিশাল নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিল !
ন‌ওশাদ নিশালের সঙ্গ টা উপভোগ করছে ! একটা মাত্র সন্তান তার , তার সঙ্গে দূরত্ব সহ্য করতে কষ্ট হয় খুব ! এবার ছুটিতে এসে নিশাল অনেক কাছে এসেছে ! আগে তো এসেই বীথির বাসায় চলে যেতো যখন তখন ! আর নয়তো পড়ছে , নয়তো বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গেছে এবার ওর কাছে আসছে নিশাল, এটা অনেক বড় পাওয়া তার জন্য!
নিশাল ছুটে এলো তার গিটার নিয়ে ! পাপা এটা দিয়ে বাজাও !
ন‌ওশাদ ছেলের হাত থেকে গিটার নিয়ে কিছুক্ষণ টুং টাং করলো তার প্রিয় ‘ আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দুজনে ‘ গানটার কয়েক লাইন বাজালো এবং গাইলো !
নিশাল বন্ধুদের সামনে পাপার গান গাওয়াটা খুব উপভোগ করছে ! মেহরাবের গিটার টা নিয়ে সেও পাপার সঙ্গে একটু বাজানোর চেষ্টা করছে!
ন‌ওশাদ বলল,নিশাল কর্ড হবে সি মেজর, এ মাইনর, এফ মেজর জি মেজর ঠিক আছে ওকে স্টার্ট !
ওকে পাপা !
বাবা আর ছেলে গিটার বাজাচ্ছে খুব মনোযোগ দিয়ে !
ন‌ওশাদের মনে হচ্ছে কাউকে দিয়ে যদি ভিডিও করে রাখতে পারতো এই মুহুর্ত টা ! কিন্তু কিছু ইচ্ছে পূরন করা সম্ভব হয়ে উঠে না সব সময় ! এরকম একটা সন্ধ্যা হঠাৎ এই বাসায় এসেছে ভাবতেই ন‌ওশাদের ভালো লাগছে !
হেরা কিচেন থেকে বের হয়ে ডাইনিং এ বসে দেখছে বাবা আর ছেলে গিটার বাজাচ্ছে ! মানুষটা এত সুন্দর করে গিটার বাজায় ! যদিও সে গিটারের কিছুই বুঝে না কিন্তু তবুও তার কাছে মনে হচ্ছে কি অদ্ভুত সুন্দর হচ্ছে বাজানো ! কত কি পারে উনি ! সবচেয়ে ভালো লাগছে নিশাল ওর বাবার সঙ্গে খুব আনন্দ নিয়ে বাজাচ্ছে ! হেরা দূর থেকে উপভোগ করছে ,থাক ওরা কিছুটা সময় নিজেদের মতো !
হেরা আনারের মা কে দিয়ে ডাইনিং এ নাস্তা সাজিয়ে উপরে উঠে এলো বুবু তাকে ডাকছে সেই খবর পেয়ে !

গেস্ট রুমের দরজা খোলাই ছিল ! সামনে দাড়াতেই বুবু হাত ইশারায় ভেতরে ডাকলো !
কিসের শব্দ পাচ্ছি ?
বুবু নিচে এসে দেখেন আপনার ভাই কি করছে ?
কি ?
ছেলের সঙ্গে গিটার বাজাচ্ছে !
তাই ! বাজাক , ছেলেটাকে খুব ফীল করে বাবু !
জ্বি বুবু ! চা বানানো হয়েছে বুবু নিচে আসেন সবার সঙ্গে চা খাবেন চলুন ! দুলাভাই কোথায় ?
তোমার দুলাভাই বন্ধুর বাসায় গিয়েছে আসেনি এখনো ! আমি শুয়ে থাকব রাতে ঘুমাতে পাড়িনি এখন শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে !
খারাপ লাগছে বুবু ?
না জেট লেগ কাটেনি এখনো !
চা রুমে নিয়ে আসি ?
কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও চা !
ঠিক আছে বলে হেরা ঘর থেকে বের হয়ে গেল!

নিচে ন‌ওশাদ ছেলে আর তার বন্ধুদের সঙ্গে তখন‌ও কথা বলছে ! গিটার বাজানো এখন বন্ধ !
হেরা কে দেখে ন‌ওশাদ বলে উঠলো ,
হেরা তোমার চা কি রেডি ?
জ্বি আসুন সবাই !
চলো বাবারা তোমাদের আন্টি চা নিয়ে অপেক্ষা করছে বাকি গল্প চা খেতে খেতে করা যাবে চলো !
জ্বি আংকেল !
হেরা কে দেখে ওরা সালাম দিলো !
নিশাল বলল, ওরা আমার কলেজের ফ্রেন্ড আন্টি !
ভালো আছো ,বসো তোমরা !
হেরা নিজে সবাই কে চা নাস্তা তুলে দিলো !
তুমি খাবে না হেরা ?
আন্টি তুমিও বসো এখানে!
এখন ইচ্ছে করছে না ,পরে খাব !
ন‌ওশাদ শুধু চা খেয়ে উঠে পড়ল ! বাবারা তোমরা গল্প করো আমি উঠলাম !
জ্বি আংকেল !
নিশাল কিছু লাগলে পারুল কে বলো !
ঠিক আছে !
হেরাও ন‌ওশাদের পিছনে পিছনে উপরে উঠে গেলো !
ওরা চলে যেতেই নিশালের বন্ধুরা ওকে ধরলো !
তুই বলিস নাই কেন আংকেল এত সুন্দর গিটার বাজায় ?
বললে কি হতো?
পাপা অনেক কিছু পারে কিন্তু সেসব এখন আর প্রেকটিস করে না, এখন শুধু বিজনেস আর টাকা নিয়ে ব্যস্ত !
সবাই একটা সময় টাকা নিয়ে ই ব্যস্ত থাকে । তুই আমিও এই বয়সে তাই করব !
তবে শেহজাদ, আন্টি কিন্তু খুব প্রিটি দেখতে !
হুম, ভালোও খুব ! একটু সহজ সরল টাইপের বুঝে কম !
কম বোঝাই ভালো ! অনেক সময় স্টেপ মম রা অনেক ঝামেলা বাজ থাকে সেরকম না হলেই হয় ?
না রে দাইয়ান সেরকম না ! আমার কেয়ার করে খুব !
তাহলে তো তুই লাকি শেহজাদ!
আচ্ছা আন্টি ডাকিস বুঝি ?
তাহলে কি ডাকবো , এত কম বয়সী একজন কে কি আম্মু , আম্মা ডাকা যায় নাকি ! আমি আর কাউকে মাম্মা ডাকতে পারব না কখনো !
মাম্মা না ডাক অন্য কিছু ডাক ! কিন্তু আন্টি ডাকা টা কেমন দেখায় ! পাপা আর আন্টি কেমন শোনায় শেহজাদ !
বাদ দে আমার রুমে চল‌!
না উঠতে হবে ! মা চিন্তা করছে বাসায় !
ফোন দিয়ে বল আসবি আধা ঘন্টা পরে !
আজ থাক আরেক দিন আসব !
ঠিক আছে চল এগিয়ে দিয়ে আসি তোদের ! আর গিটার টা থাক পরে পাঠিয়ে দিব আমি !
ঠিক আছে !
বন্ধুদের নিয়ে নিশাল গেটের দিকে এগিয়ে গেল!

ন‌ওশাদ ফ্রেশ হয়ে এসে ইজি চেয়ারে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে! হেরা ন‌ওশাদের কাছে এসে দাঁড়ালো !
প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে বুঝলে !
তাই ? কখন থেকে, ওষুধ দিব?
দুপুরের পর থেকেই করছে !
আপনি তো বলেননি ! রুমে এসে রেস্ট করা উচিত ছিল !
না হেরা , আজ আমার মনটা খুব ভালো ! আজ কোন শারীরিক কষ্ট আমার কাছে কিছু না , আমার ছেলে আজ কত আনন্দ নিয়ে আমার সঙ্গে সময় কাটিয়েছে । এরকম মুহূর্তের জন্য আমি বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি !
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই ?
দাও !
হেরা ন‌ওশাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে !
হেরা আজ নিশালের সঙ্গে কাটানো সময় টা আমার লাইফের একটা কাঙ্ক্ষিত সময় ! কি যে ভালো লাগছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না!
আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছিলাম ! আপনাকে সরি বলতে চাইছি !
কেন ?
আমি সাইকেল চালিয়েছি আর কখনো এমন করব না !
আমি রাগ করেছি তোমাকে কে বলল বোকা ! আমি সত্যিই খুব মজা পাচ্ছিলাম তোমাদের দুজনকে দেখে ! নিশাল আর তুমি হেসে হেসে সাইকেল চালাচ্ছো আমার তো খুব ভালো লেগেছে! তোমাদের সঙ্গে চালাতে ইচ্ছে করছিল!
ও ভয় পাচ্ছিলো আমি পড়ে যাই যদি !
আমার ছেলেটা বুকে অনেক অভিমান নিয়ে আছে হয়তো আমার জন্য, আমার খুব কষ্ট হয় জানো এটা ভাবলেই !
আপনি ভুল জানেন ! আপনার ছেলে আপনাকে অনেক ভালোবাসে ! আজ আমাকে কি বলল‌ জানেন ?
ন‌ওশাদ হেরার হাত ধরে হেরা কে নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো ! বলো কি বলেছে নিশাল ?
আমাকে বলল, আন্টি পাপার কি হয়েছে ? পাপা মাম্মা কে খুব মিস করছে ! আমার রুমে এসে মন খারাপ করে বসে থাকে ।
এই কথা বলেছে ? ন‌ওশাদ অবাক হয়ে বলল!
আরো বলল পাপার খেয়াল রেখো , মন খারাপ থাকলে পাপা অসুস্থ হয়ে যায় !
তোমাকে আমার খেয়াল রাখতে বলেছে ?
হুম !
ন‌ওশাদের চোখ আনন্দে ছলছল করছে !
হেরা আমি তো পারি না তুমি নিশাল কে সময় দিও প্লিজ !
হেরা ন‌ওশাদের চোখের পানি টা মুছিয়ে দিল !
আপনি কেন পারেন না ? কয়টা দিন থাকে ছেলেটা সেই সময় একটু চেষ্টা করবেন ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকার !
কত কাজ আমার হেরা !
কিসের কাজ ? ছেলের চেয়েও বেশি ?
না আমার ছেলের চেয়ে বেশি আর কিছুই না ! ছেলেটা আমার জান হেরা !
তাহলে ?
তুমি ঠিক কথাই বলেছো আমি ওর সঙ্গে বেশি সময় কাটাবো !
বুবু কি বলেছেন আমাকে জানেন ?
কি ?
আপনার ছেলে মানে আমার ছেলে !
তাই ?
হুম ! আর এই চেইন কেন দিয়েছে সেটাও বলেছে ! হেরা লজ্জায় লাল হয়ে বলল !
কেন হেরা ?
আপনি তো জানেন !
তাও শুনি তোমার কাছ থেকে !
থাক শুনতে হবে না !
ন‌ওশাদ হাসছে !
শুনি না !
আপনার মেয়ে হলে তাকে দিতে বলেছে !
বুবুর ইচ্ছা গুলো কেমন বুঝলে তো ! মাথা নষ্ট টাইপের।
হেরা তোমাকে নিজের পড়াশোনা করতে হবে এখন ! বুবুর কথা শোনার অনেক সময় পড়ে আছে সামনে !
জ্বি !
আচ্ছা আপনি এত ভালো গিটার বাজাতে পারেন !
এটাকে ভালো বলে না বুঝলে ! ক্যাডেট কলেজে যখন পড়তাম তখন বন্ধুদের সঙ্গে শিখেছিলাম তারপর বুয়েটে পড়ার সময় টুকটাক বাজাতাম। ও বয়সে সব ছেলেরাই গিটার , কীবোর্ড শিখে যতটুকু ততটুকুই !
আমাকে একদিন শোনাবেন !
আচ্ছা ঠিক আছে শোনাব যাও !
আনারের মা দরজায় নক করছে ! হেরা গিয়ে দরজা খুলে দিল!
আম্মা স্যার ক‌ই ?
এসো ভেতরে !
আনারের মায়ের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার চাপ ! কি হয়েছে আনারের মা ?
স্যার রিয়াজ ভাই বলল, ভাইয়া বন্ধুদের বিদায় দিতে বাসার বাহিরে গেছে এখনো আসে নাই !
কি ! কতক্ষণ হয়েছে ?
আধা ঘন্টা !
ওর মোবাইল এ ফোন দিচ্ছি দাঁড়াও !
স্যার মোবাইল খাওয়ার টেবিলের উপর রাইখা গেছে !
কি বলছো এসব ! ন‌ওশাদ উঠে দাঁড়ালো ! রিয়াজ কোথায় ? দারোয়ান দেখেছে কোন দিকে গেছে ? ন‌ওশাদ ছুটে ঘর থেকে বের হলো ! পিছনে পিছনে হেরা ও আসছে !
নিচে নেমে দেখে রিয়াজ উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে !
ন‌ওশাদ রিয়াজেকে দেখে বলল,কতক্ষণ হয়েছে বাহিরে গেছে ?
স্যার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল দারোয়ান বলল, একটু পর দেখে ভাইয়া নাই আবার বাসায় ও ঢুকে নাই !
আমি না তোমাকে বলেছি একজন কাউকে ওর সঙ্গে সারাক্ষণ রাখতে !
স্যার সবুজ থাকে বাসার বাহিরে গেলে ! এখন তো ভাইয়া বাসায়ই ছিল !
এখন সময় নষ্ট না করে লোকজন কে পাঠাও আশেপাশে দেখার জন্য !
জ্বি স্যার ! রিয়াজ ছুটে গেল !
ন‌ওশাদ টেনশন করছে ! হেরা ওর বন্ধুদের সঙ্গে চলে যায়নি তো নিশাল ?
না মনে হয় ওদের সঙ্গে গেলে বলে যেত, গাড়ি নিয়ে যেত !
সেটাই তো !
বুবু এসে ঢুকলো ড্রয়িং রুমে কি হয়েছে ?
নিশাল বন্ধুদের বিদায় দিতে বাসার বাহিরে গিয়েছিল এখনও ফিরে আসেনি , হেরা বলল!
টেনশন করিস না বাবু আশেপাশেই আছে হয়তো !
বুবু তুমি জানো না কেন টেনশন করি !
ন‌ওশাদ গেটের দিকে যাওয়ার জন্য পোর্চের নিচে এসে দাঁড়াতেই দেখে নিশাল একটা কুকুরের বাচ্চা সহ বাসায় ঢুকছে ওর পিছনে পিছনে রিয়াজ আর তার লোকজন !
ন‌ওশাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ! ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে!
পাপা দেখো কি পেয়েছি ? নিশাল খুব এক্সাইটেড!
কোথায় ছিলে বাবা , আমরা সবাই টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম !
সরি পাপা ! আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে বাসায় ঢুকব দেখি এই কুকুরের বাচ্চা টা আমার পায়ের কাছে ! আমি ভাবলাম কার বাসার কুকুর, ওমা সে আমার পায়ের কাছে বসে আছে যায় না ! আশেপাশে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েই দেরি হয়ে গেল !
কার কুকুর ?
জানি না পাপা ! সব বাসায় বলে এসেছি কারো হলে নিয়ে যাবে !
এটা কি কুকুর পাপা ?
মনে হচ্ছে লেব্রাডর !
ওয়াও কারো না হলে আমি রেখে দিব ওকে !
কুকুর বাসায় রাখা নিষেধ বাবা ! ধর্মীয় নিষেধ আছে, তোমাকে তো মানতেই হবে!
বাসায় ঢুকাবো না , প্লিজ পাপা !
তোমার মাম্মা কুকুর পছন্দ করতো না কিন্তু !
আমার খুব ইচ্ছা করছে পাপা প্লিজ না বলো না ! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
আচ্ছা ঠিক আছে, আগে দেখো কার কুকুর ?
থ্যাঙ্কস পাপা ! আন্টি কোলে নিবে ?
না বাবা আমি কুকুর ভয় পাই ! হেরা পিছিয়ে গেল !
আরে আসো আমার সঙ্গে, খুব ছোট ও কিছু করবে না তোমাকে !
না না আমার ভয় লাগে ! হেরা লাফিয়ে উঠলো!
নিশাল হেরার কাছে এসে কুকুর টা কোলে দিতে চাচ্ছে ! হেরা খুব ভয় পাচ্ছে !
প্লিজ আন্টি !
প্লিজ নিশাল না !
হেরা ন‌ওশাদের পিছনে লুকিয়ে গেল !
ন‌ওশাদ ওদের দেখে মজা পাচ্ছে!
সবাই হেরা আর নিশালের দিকে তাকিয়ে হাসছে !
বীথি ঠিক তখনই নিশালের সঙ্গে দেখা করতে বাসায় এসে হাজির হয়েছে !
গাড়ি থেকে নেমে নিশাল আর হেরার হাসাহাসি দুষ্টামি দেখে পুরো স্তম্ভিত সে !

কেমন আছো বিথী ?
জ্বি দুলাভাই ভালো আছি ! হেরা তুমি কেমন আছো ?
জ্বি আপু ভালো আছি ! বাচ্চা রা কেমন আছে আপু?
ভালো ! বুবু আসছে শুনলাম !
ন‌ওশাদ বলল,হুম ! যাও উপরেই আছে বুবু দেখা করে এসো !
যাব আগে নিশালের সঙ্গে দেখা করে নেই!
কোথা থেকে একটা কুকুরের বাচ্চা নিয়ে এসেছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত সে !
আপনার ছেলে এবার এত ব্যস্ত দুইদিন হয়েছে এসেছে আমার কাছে আসেনি !
সেরকম কিছু না বুবু এসেছে আর ওর স্যার এসেছিল কালকে তাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে যেতে সময় পায়নি ! তুমি কথা বলো নিশালের সঙ্গে আমি রুমে গেলাম ডিনার করে যেও আমাদের সঙ্গে !
না দুলাভাই চলে যেতে হবে বাচ্চাদের বাসায় রেখে এসেছি !
ঠিক আছে ! হেরা একটু উপরে আসো তো বুবুর ঘরে ! ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে উপরে উঠে গেল!
আপু আগে চা খান , হেরা বীথির দিকে চা এগিয়ে দিল !
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বীথি বলল,নিশাল কোথায় গেল ?
কুকুর ধরেছে ড্রেস চেঞ্জ করে হাত ধুয়ে আসছে !
আমি ওর রুমে যাচ্ছি !
জ্বি আপু !
হেরাও বিথীর সঙ্গে উপরে উঠে এলো ! বিথী নিশালের ঘরে গিয়ে ঢুকলো !

নিশাল হাত মুখ ধুয়ে ,গেঞ্জি চেন্জ করছে ! তখন‌ই বীথি ঢুকলো ওর ঘরে !
কি ব্যাপার নিশু আমার কাছে এখনো যাওয়ার সময় হলো না তোমার ?
খালামনি সরি রাগ করো না ! আসার পরদিন ফুপি আসলো আর রুমী ভাইয়া এসেছিল পড়াতে আর আজ ভাবছিলাম যাব কিন্তু তুমি ই তো চলে এলে !
হুম ঐ মেয়ের সঙ্গে সাইকেল চালাচ্ছো আমার সঙ্গে দেখা করার সময় কোথায় ?
আন্টি খুব ভালো সাইকেল চালায় জানো দুজন খুব এনজয় করেছি ! পাপা আসার পর কি‌ হয়েছে শুনলে হাসবে তুমি !
চুপ করো ! বীথি ধমক দিলো ! ঢং । মেয়ের দেখি কান্ড জ্ঞান নাই সাইকেল চালায় !
সাইকেল চালালে কি সমস্যা ?
তুমি বুঝবে না নিশু !
পাপা তো খুব মজা পেয়েছে !
তোমার পাপা তো কচি ব‌উ পেয়ে সে যাই করে তাতেই মজা পাচ্ছে , আহ্লাদ করছে !
ছিঃ খালামনি এসব কি বলছো !
ভুল কিছু বলছি না !
প্লিজ পাপাকে নিয়ে আমার সামনে কিছু বলবে না ! নিশাল কঠিন মুখে বীথির দিকে তাকালো !
কেন ? তোমার পাপা কিভাবে পারলো এই বয়সে এরকম একটা মেয়ে কে বিয়ে করতে ? গ্রাম্য একটা মেয়ে ! অসহ্য !
খালামনি পাপার রাইট আছে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার ! আর আমি মনে করি পাপা ভুল কিছু করেনি ! মাম্মা তো কখনো আর ফিরে আসবে না , পাপা সারাজীবন একা কিভাবে বাঁচবে ?
একা কোথায় তুমি আছো , বাড়ি ভর্তি লোকজন আছে !
আমিই তো থাকি না আর কাজের লোকজন কি মাম্মার অভাব পূরণ করতে পারবে ? পাপা ছয়টা বছর একা কাটিয়েছে , অনেক কষ্ট হয়েছে ! অসুস্থ হলে কেউ দুই মিনিট পাশে বসে থাকে না !পাপার বুঝি কষ্ট হয় না ! বুড়ো হবে যখন তখন কে দেখবে পাপাকে ?
তুমি দেখতে !
দাদা ভাই কে কি পাপা সারাক্ষণ দেখতে পারে ? সেই রাজু ভাই আর আনারের মা দেখে !
তুমি তোমার পাপার বিয়ে তে খুব খুশি নিশু ?বীথি কঠিন মুখে নিশালকে প্রশ্ন করলো!
খুব !
বাহ্ ! দারুন তো !
খালামনি এত রিয়েক্ট করার কিছু নেই ! পাপার লাইফে একটা মানুষ লাগে যাকে নির্দ্বিধায় সব পাপা বলতে পারবে আর সেটা ওয়াইফ ছাড়া আর কেউ হতে পারবে না !
তুমি তো খুব আপন হয়ে গেছো সেই মেয়ের !
জানি না কিন্তু আমার উনাকে পছন্দ হয়েছে ! সারাক্ষণ বাসায় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ! পাপার , আমার আর দাদাভাইয়ের কত যত্ন করছে ! পাপাকে হ্যাপি দেখে আমারও ভালো লাগছে !
হয়েছে আর শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার ! নিশাল বাচ্চা আমার তুমি বুঝতে পারছো না ঐ মেয়েকে, তুমি যত কিছুই বলো ঐ মেয়ে কখনো তোমার ভালো চাইবে না দেখো !
কি এসব বলো খালামনি ?
হ্যাঁ , এখন তোমার পাপা কে দেখানোর জন্য ভালো সাজছে । কয়দিন পর নিজের একটা ছেলে মেয়ে হলেই তোমার সঙ্গে কি ব্যবহার করে দেখবে !
পাপার একটা বেবি হলে ভাল‌ই হবে কি বলো খালামনি ? আমার ফ্রেন্ড দের সবার ভাই বোন আছে আমার ই কেউ নেই দারুন হবে তখন! নিশাল হাসতে হাসতে বলল।
গাধা ছেলে তুই এত অবুঝ কেন ? তোমার আরো ভাই বোন হলে তোমার বাবার এসব সম্পত্তি সব ভাগ হবে তুমি কি পাবে তখন ?
মাম্মা আর পাপার যদি আরো ছেলে মেয়ে থাকতো তখন‌ও তুমি এই কথা বলতে খালামনি ?
সেই ভাই বোন আর হেরার বাচ্চা কি এক হলো ?
আমার কাছে সবাই আমার ভাইবোন ই ! প্লিজ খালামনি আগ বাড়িয়ে এত কথা বলো না তো ! পাপা কিংবা আন্টি শুনলে কষ্ট পাবে !
নিশাল আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমাকে দেখে ! দুই দিনে এই মেয়ে তোমাকে জাদু করেছে বুঝি !
ধুর খালামনি !
না গ্রামের মেয়ে রা এসব জাদু টোনা জানে ! আমার তো খুব ভয় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে !
চলো খালামনি ফুপির ঘরে যাই !
আমার কথা শুনো ! কালকে আমার বাসায় দুপুরে খাবে তোমার সঙ্গে কথা আছে আমার !
আচ্ছা ঠিক আছে ! এখন চলো ওদিকে যাই !
রাগে গজগজ করতে করতে বীথি রুম থেকে বের হয়ে ন‌ওশাদের বোনের রুমে ঢুকলো ! সে পারুলের কাছ থেকে আগেই শুনেছে হেরা ন‌ওশাদের রুমে থাকছে কালকে থেকে!
ন‌ওশাদ , হেরা সবাই ওখানে বসে গল্প করছে !
বুবু কেমন আছেন ?
আমি ভালো আছি বীথি ! তোমার কি খবর ?
ভালো ! অনেক দিন পর এলেন !
হ্যাঁ ! এবার এসেছি হেরাকে দেখতে ! বাবু এত দিন পর নিজের বলে কাউকে এ বাড়িতে এনেছে তাই দেখার জন্য চলে এলাম !
আপনার ভাই বুবু পাকা বিজনেস ম্যান আমার বোন সমবয়সী ছিল হঠাৎ মাঝপথে ছেড়ে চলে গেছে বলে এবার কম বয়সী বিয়ে করেছে লং লাস্টিং হয় যেন ! নিজের কথায় বীথি নিজেই হাসছে ! ন‌ওশাদ তাকিয়ে আছে বীথির দিকে ! হেরা চুপ করে আছে! কিন্তু নিশাল খুব বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল রুম থেকে !
জান্নাত আজমী বললেন,বীথি দোয়া করো ওদের জন্য তাহলেই হবে !
জ্বি বুবু!
ন‌ওশাদের ফোনে ড্রাইভার বাহারের ফোন এলো তখন !
হ্যালো বাহার !
স্যার একটু আসবেন নিচে জরুরি কথা ছিল !
কি কথা ?
স্যার একটু আসেন স্যার !
অপেক্ষা করো !
ন‌ওশাদ বুবুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আসছি বুবু তোমরা কথা বলো !
নিচে নামতেই বাহারের সঙ্গে দেখা ।
কি ব্যাপার বাহার কি সমস্যা ? গাড়ি ঠিক আছে ?
স্যার গাড়ি ঠিক আছে !
তাহলে ?
বাহার চোখ মুখ শুকনো করে বলল, স্যার ঐদিন কুষ্টিয়ায় আম্মাদের এলাকার চেয়ারম্যান আমার নাম্বার রাখছিল আসার সময় ! আমি না বুইঝা তারে নাম্বার টা দিয়া দিসি !
এখন কি হয়েছে সেটা বলো ?
এই মাত্র চেয়ারম্যান সাব ফোন দিসে আমারে ! আম্মার নানার অবস্থা খুব খারাপ !
তাই ! উনার নাম্বারে কল দাও তো , আমি কথা বলব !
স্যার !
বাহার চেয়ারম্যান এর নাম্বারে ডায়াল করলো ! ওপাশে ধরতেই ,
চেয়ারম্যান সাব আমার স্যার কথা বলব আপনার সঙ্গে নেন কথা বলেন !
জ্বি চেয়ারম্যান সাহেব ন‌ওশাদ আজমী বলছি , কি হয়েছে সাইফুল ইসলাম স্যারের ?
স্যার আপনি ভালো আছেন?
জ্বি আমি ভালো আছি !
সাইফুল স্যার কয়েকদিন থেকেই খুব অসুস্থ ছিলেন আজ খুব বাড়াবাড়ি অবস্থা ,আমি শুনে দেখতে এসে দেখি খুব খারাপ অবস্থা !
ন‌ওশাদ বলল,চেয়ারম্যান সাহেব আপনি কষ্ট করে একটা কাজ করবেন আমার জন্য?
প্লিজ একজন লোক দিয়ে স্যার কে এম্বুলেন্স এ করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিবেন ! আমি স্যারের চিকিৎসা করাতে চাই ! এটা আমার দ্বায়িত্ব !
স্যার উনার অবস্থা এতটাই খারাপ, মনে হয় না ঢাকায় পাঠানো যাবে !
তারপরও আপনি একটু দেখবেন কিছু করা যায় কিনা ! কুষ্টিয়ায় চিকিৎসা করানো তো যাবে অন্তত । আপনি সেই ব্যবস্থা করেন আপনি টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না । আমি টাকা পাঠাচ্ছি আপনার কাছে !
আপনি চিন্তা করবেন না স্যার আমি উনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি !
ন‌ওশাদ বলল,আর একটা কথা আপনি কি এখন উনার কাছে ?
জ্বি স্যার উনার বাড়ির সামনে !
আমি দুই মিনিট পর ফোন দিচ্ছি আপনাকে আপনি উনার সঙ্গে আমার ওয়াইফের কথা বলিয়ে দিবেন আপনার ফোনে !
জ্বি স্যার !
ন‌ওশাদ দৌড়ে দোতলায় উঠে এলো ! বুবুর ঘরে ঢুকে দেখে হেরা সবার সঙ্গে গল্প করছে !
ন‌ওশাদ হেরার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টান দিলো , এসো আমার সঙ্গে !
জ্বি ! হেরা অবাক হয়ে গেল !
আসো তো আমার সঙ্গে কাজ আছে ! হেরা সবার সামনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে ! ন‌ওশাদ ওকে টেনে ওদের রুমে নিয়ে গেল !
বীথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে !
জান্নাত আজমী বলল, জরুরি কিছু হবে হয়তো ! তুমি বসো বীথি !
বীথি মনে বলল, অসহ্য ঢং !

ন‌ওশাদ হেরা কে রুমে নিয়ে চেয়ারম্যান এর নাম্বার এ ফোন দিল ! তারপর হেরার দিকে মোবাইল টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, কথা বলো !
কে ?
দেখো কে ?
হেরা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশে খুব ক্ষীণ একটা গলা শুধু বলল, হেরা !
হেরা চিৎকার দিয়ে উঠলো, নানা ভাই !

( চলবে )

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

২৩ তম পর্ব

হেরা চিৎকার দিয়ে উঠলো , নানা ভাই !
তুমি কেমন আছো নানা ভাই ? ওপাশে হেরার নানা খুব চেষ্টা করে যাচ্ছে একটু কথা বলতে ! আজ দেড় মাস তিনি এই কন্ঠ টা শোনার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন ! জীবন কি তাকে আর একটু সময় দিবে না শেষ বারের মত প্রিয় নাতনি র সঙ্গে কথা বলতে !
হেরা !
কেমন আছো তুমি নানা ভাই ?
ভালো!
তুই ?
আমি অনেক ভালো আছি নানা ভাই অনেক ! হেরার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেকে সামলাতে তার !
ন‌ওশাদ খুব ভালো রে !
খুব ভালো নানা ভাই খুব ভালো ! আমার সামনে আছে ! তুমি চিন্তা করো না আমি এখানে খুব ভালো আছি !
সব সময় ভালো থাকবি !
হুম থাকব !
ন‌ওশাদ কে ভালো রাখবি !
হুম ! হেরা কান্নার দমকে কথা বলতে পারছে না! ন‌ওশাদ ওর ঘাড়ে হাত রাখালো !
হেরা !
বলো নানা ভাই ?
এখানে কখনো আসবি না মনে আছে না আমার কথা গুলো !
হুম মনে আছে !
আমি নেই শুনলেও কাদবি না শুধু দোয়া করবি !
নানা ভাই !
খুব ভালো থাকিস খুব । আমার দোয়া থাকবে সঙ্গে ! ন‌ওশাদ কোথায় ?
কথা বলবে , দিচ্ছি !
হেরা ন‌ওশাদের দিকে ফোন টা এগিয়ে দিল !
ন‌ওশাদ ফোন টা হাতে নিলো,
স্যার আপনি চিন্তা করবেন না চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে ! আমি আসব আপনার কাছে !
দরকার নেই ! তুমি হেরা কে দেখো শুধু !
আপনি চিন্তা করবেন না , ও ভালো আছে !
আমি জানি ! ও খুব দুঃখি মেয়ে তুমি দেখে রেখো !
আপনি আমার উপর ভরসা রাখবেন স্যার !
আমি জানি তুমি ওকে ভালো রাখবে! আর কথা বলতে পারলেন না হেরার নানা আবার শ্বাস কষ্টের মত শুরু হয়ে গেছে উনার !
চেয়ারম্যান সাহেব ফোন টা কানে তুলে নিলো !
স্যার আপনি চিন্তা করবেন না এম্বুলেন্স শহর থেকে র‌ওনা হয়ে গেছে ! স্যার কথা বলতে পারছেন এখন শ্বাস কষ্টের মত হচ্ছে একটু পর আবার কথা বলেন উনার সঙ্গে!
দরকার নেই পরে কথা বলব, আমি আপনার আপডেটের অপেক্ষায় থাকব চেয়ারম্যান সাহেব !
জ্বি স্যার আমি জানাচ্ছি ! স্যার আপনি কি সাইফুল স্যারের ছেলেদের কারো সঙ্গে কথা বলবেন ?
না আমি আপনি ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইছি না ! আপনি কাইন্ডলি স্যারের চিকিৎসা টা শুরু করেন আমার লোক কালকে কুষ্টিয়া পৌঁছে যাবে ! তখন স্যারের সকল দায়িত্ব আমার লোক নিয়ে নিবে !
স্যার আপনি চিন্তা করবেন না সাইফুল স্যার আমারো স্যার ছিল আমি আমার দায়িত্ব টাও পালন করব !
থ্যাঙ্কস চেয়ারম্যান সাহেব !
ন‌ওশাদ ফোন কেটে তাকিয়ে দেখে হেরা সোফায় বসে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে ! হেরার মাথায় হাত রাখলো সে ! হেরা প্লিজ কাঁদে না !
আমার কষ্টে বুকটা ভেঙে যাচ্ছে কেন ?
আমার দিকে তাকাও !
আমি চেয়ারম্যান সাহেব কে বলে দিয়েছি , স্যার একটু স্ট্যাবল হলেই ঢাকায় নিয়ে আসবে ! এখন স্যারের ট্রিটমেন্ট করা আমার দায়িত্ব ! স্যার ভালো হলে এই বাসায় রেখে দিব কেমন তোমার কাছে! পারবে না আমাদের সঙ্গে তোমার নানার টেক কেয়ার করতে তুমি ?
হেরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, পারব !
এখন কান্নাকাটি করো না প্লিজ !
হুম !
ন‌ওশাদ হেরার মাথায় হাত রাখলো ! দোয়া করো যেন স্যার ভালো হয়ে যায় !
হেরা চোখের পানি ওড়নার কোনা দিয়ে মুছলো !

বীথি জান্নাত আজমী র সঙ্গে ন‌ওশাদের বিয়ের প্রসঙ্গ তুললে!
বুবু যত কথাই বলেন , এই বিয়ের সবচেয়ে বড় দাম দিবে নিশাল !
কেন ?
একদিন হেরার বাচ্চা হবে !
তো সমস্যা কোথায় ?
সমস্যা তখনই হবে বুবু আপনি আমি কেউ থাকব না , নিজের বাচ্চা পেলে নিশালকে অবাঞ্চিত ভাববে না হেরা এর কি গ্যারান্টি ?
পৃথিবীতে কোন কিছুর কি গ্যারান্টি দেয়া যায় বীথি ?
সেটাই তো বলছি !
সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও !
তাই তো দেখছি এ ছাড়া তো আর কোন উপায় নেই !
এটাই সবার জন্য মঙ্গল ! বাবু কি যথেষ্ট নয় তার ছেলের জন্য ? তোমরা যে কি ভাবো আমি বুঝি না !
জান্নাত আজমী চুপ করে র‌ইলেন।
ডিনার করে যাবে কিন্তু !
না বুবু মেয়েরা বাসায় বুয়ার কাছে !
ও আচ্ছা তাহলে আটকাবো না তোমাকে ! এবার সংসার টা সুন্দর করে করছো তো বীথি !
জ্বি বুবু দোয়া করবেন !
সব সময় করি তুমি আমার নিশালের কত যত্ন করেছো তোমার জন্য মন থেকে দোয়া করি বোন !
বীথি মনে মনে বলল, চেয়ে তো ছিলাম খালা না নিশালের মায়ের দায়িত্ব টা নিতে ! আপনার ভাই ই তো রাজি হলো না ! এখন গাইয়া মেয়ে বিয়ে করে আহ্লাদ করে ।‌ সবার সামনে দিয়ে হাত ধরে টানাটানি করে ! আদিখ্যেতা !
বীথি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল ! আসি তাহলে বুবু !
ঠিক আছে এসো তুমি আমি আছি ! গ্রামের বাড়ি যাব শ্বশুর শ্বাশুড়ি র আত্মার শান্তি চেয়ে মিলাদের আয়োজন করি সব সময় । এটা করে ফিরে আসব আবার ! বাবু যাবে ব্যাঙ্কক ও যাওয়ার আগেই চলে আসব ! হেরা নয়তো একা থাকবে কিভাবে এই বাসায় বলো !
দুলাভাই কবে যাবে ব্যাঙ্কক ?
এই সপ্তাহে ই !
ঠিক আছে আসব তখন বুবু !
যুথী কে ও আসতে বলো !
জ্বি !
বীথি উঠে গেল ! একবার ভাবলো ন‌ওশাদের সঙ্গে দেখা করে যাবে !
মনে মনে বলল ধুর ! তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল !

রাতে ন‌ওশাদকে চেয়ারম্যান সাহেব ফোন দিয়ে জানিয়েছে কুষ্টিয়ার একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে হেরার নানাকে ! ওখানে একটু স্ট্যাবল হলেই ঢাকায় নিয়ে আসা যাবে তার আগে সম্ভব না ! ন‌ওশাদ শোয়েব কে বলে দিয়েছে একজন দায়িত্বশীল লোককে কালকে সকালে কুষ্টিয়া পাঠিয়ে দিতে । চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সে করবে ওখানে ! ন‌ওশাদ শুধু চেয়ারম্যান এর উপর ভরসা করে থাকতে চাইছে না !
শোয়েব নিজেই যেতে চেয়েছিল ন‌ওশাদ বলে দিল ওর যাওয়ার দরকার নেই দায়িত্বশীল কাউকে পাঠালেই হবে !
রাতে রুমে ঢুকে দেখে হেরা ঘর অন্ধকার করে জায়নামাজে বসে আছে ! ন‌ওশাদ জোর করে ডিনার করাতে নিয়ে গিয়েছিল , সামান্য কিছু খেয়েই চলে এসেছে সে ! বুবু ও কিছুক্ষণ স্বান্তনা দিল হেরাকে !
ন‌ওশাদ ইচ্ছে করে আলোটা জ্বালালো না ! বোঝা যাচ্ছে কান্নাকাটি করছে হেরা ! ন‌ওশাদের ও খারাপ লাগছে খুব! ওর ইচ্ছে করছে হেরা কে নিয়ে যেতে ওর নানার কাছে ! নামাজ থেকে উঠলে আর একবার বুঝিয়ে বলবে সে যদি রাজি হয় তাহলে কালকে সকালেই হেরাকে নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়বে ! একবার চোখের সামনে নানাকে দেখলে ওর মনটা শান্ত হবে আশাকরি !
হেরা নামাজ শেষ করে উঠেছে ! বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে কিছু একটা খোঁজ করছে আশেপাশে !
কিছু খুজছো ?
হ্যাঁ ! আমার ইনহেলার টা !
শ্বাস কষ্ট হচ্ছে ?
কাশি হচ্ছে !
হঠাৎ !
ও একটু মনে হচ্ছে খারাপ লাগছে ! ঠান্ডা পানি দিয়ে ওজু করেছি গলাটা বসে গেছে!
কান্নাকাটি করেছো তাই বসে গেছে ,ঠান্ডার ওষুধ খেয়েছো !
ওষুধ লাগবে না !
হেরা ইনহেলার টা নিয়ে মুখে স্প্রে করলো সোফায় বসে ! ন‌ওশাদ ওর পাশে গিয়ে বসলো !
তুমি এত বেশি মন খারাপ করো না হেরা ! স্যার এখন ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে আছে রাতটা যাক দেখবে ভালো খবর আসবে ! তুমি কালকে আবার কথা বলবে ! এক কাজ করি চলো আমরা কালকে ভোরে র‌ওনা হয়ে যাই !
না !
না কেন ? আমরা তো গ্রামে যাব না কুষ্টিয়া শহরে থাকব !
আমি ও বাড়ির কারো সামনে যেতে চাই না !
ও বাড়ির কাউকে তোমার দেখার দরকার নেই তুমি তোমার মত নানাকে দেখবে আমি তোমার সঙ্গে থাকব ! প্লিজ হেরা তোমাকে দেখলে তোমার নানার ভালো লাগবে খুব !
আচ্ছা ঠিক আছে !
তাহলে সকাল সকাল আমরা বেড়িয়ে পড়ব কেমন !
জ্বি !
এখন ঘুমিয়ে যাও আমাদের সকাল সকাল উঠতে হবে !
হেরা চুপচাপ শুয়ে পড়লো !
ন‌ওশাদ‌ও ঘড়িতে এলার্ম সেট করে শুয়ে পড়লো এর দেড় ঘণ্টা পর মাঝ রাতে ফোনের রিং এ ঘুম ভাঙলো ওর ! তাকিয়ে দেখে চেয়ারম্যান এর ফোন ! ন‌ওশাদের মনে একটা আশঙ্কা এসে ভর করলো, খারাপ কিছু নয়তো !
হ্যালো চেয়ারম্যান সাহেব ! গলাটা নামিয়ে কথা বলছে ন‌ওশাদ।
সরি স্যার এত রাতে ডিস্টার্ব করলাম, পাঁচ মিনিট আগে সাইফুল ইসলাম স্যার মারা গেছেন ! ডাক্তারের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। বয়স হয়েছিল যথেষ্ট !
আমি বুঝতে পেরেছি!
আপনারা কি আসবেন স্যার ?
আমি আপনাকে জানাচ্ছি !
ঠিক আছে স্যার !
ফোন রেখে ন‌ওশাদ উঠে বসলো ! হেরা ঘুমাচ্ছে ! ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওকে কি এখন‌ই খবর টা দিবে, ভাবছে সে ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে ! ন‌ওশাদ উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো ! বাহিরে খুব কুয়াশা পড়েছে সঙ্গে অনেক শীত ! দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে রুমের ভিতরে ঢুকে গেল সে ! হেরার কাছে গিয়ে ওর গায়ে কমফোর্টার টা ঠিক করে দিল ! কি আরামে ঘুমাচ্ছে ! তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টা আজ চিরদিনের মত এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে এখনো সে জানে না ! কতটা কষ্ট মাখা একটা দিন তার জন্য অপেক্ষা করছে আজ ! এরকম একটা অন্ধকার রাতে সেও তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টাকে হারিয়ে ছিল তাই সে জানে কোথায় কষ্ট হয় !
ন‌ওশাদ হেরার কাছে গিয়ে বসলো ! ঘুমন্ত হেরার মাথায় হাত টা রাখতেই হেরা চোখ খুলে তাকালো !
কিছু বলবেন ?
না তোমাকে দেখছিলাম !
কেন যেন বুকের ভেতরে একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে , মনে হচ্ছে দম টা আটকে আসছে !
শ্বাস কষ্ট?
সেই টাইপের না ! বুঝাতে পারছিনা আপনাকে বুকে কেমন চাপ দিয়ে ব্যথা হচ্ছে আবার পরোক্ষনেই মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে সব ফাঁকা !
ঠিক হয়ে যাবে হেরা তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো ! ন‌ওশাদ হেরার গালে হাত রাখলো।
একটু পর পর ঘুমটা ভেঙে যাচ্ছে !
আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই !
আপনি সারাদিন অফিস করবেন আমার জন্য জেগে থাকতে হবে না ! আর কতক্ষন পর তো এমনি উঠে যেতে হবে ! আচ্ছা আপনি যে বললেন নানা ভাই কে এই বাসায় রাখবেন , মামা রা আপত্তি করে যদি ওদের কি বলবেন ?
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে আছে ওর কথার কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না !
আপনি দেখবেন একবার ঠিক চিকিৎসা পেলে নানা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে ! আমি এখানে এনে অনেক যত্ন করবো ! কোন কষ্ট পেতে দিব না ! অনেক কষ্ট করেছে নানা ভাই আমার জন্য এবার একটু শান্তিতে থাকুক ! আমার কি যে ভালো লাগছে আপনার কথা টা শুনে আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না ! আপনি এত ভালো কেন বলুন তো , আমার জন্য কত কি করছেন ! আগে আমাকে বাঁচিয়েছেন এখন নানা ভাই কে সুস্থ করতে চাইছেন ! আপনি আসলেই একজন অন‌্যরকম মানুষ ! ন‌ওশাদ হেরার হাত ধরলো !
তুমি অনেক ভালো হেরা !
কি যে বলেন আমি আপনার নখের ও যোগ্য না ! আচ্ছা আমরা কখন বের হয়ে গেলে ভালো হবে বলুন তো ! আমরা কি কালকেই সঙ্গে করে নানা ভাই কে নিয়ে আসতে পারব এই যেমন ধরুন এম্বুলেন্সে করে ?
ন‌ওশাদ চুপ করে দেখছে হেরা কে, কিভাবে খবর টা দিবে সে বুঝতে পারছে না !
নানা ভাই আমাকে দেখে খুব অবাক হবে , এত সুন্দর কাপড় পড়ে এত গয়না পড়া আমাকে দেখলে তো নানা ভাই হাসবে । বলবে তুই সত্যিই ব‌উ হয়ে গিয়েছিস হেরা !
ন‌ওশাদ হেরার হাত টা শক্ত করে চেপে ধরলো ! হেরা আমরা মানুষরা খুব অসহায় একটা প্রাণী আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হলে কি হবে আমাদের চেয়ে বেশি অসহায় আর কোন প্রাণী নেই ! কারণ কি জানো , আমাদের ভেতরে কষ্ট আছে, আমাদের ভেতরে প্রিয়জনকে হারানোর ভয় আছে , আর আমরা আশা করি, স্বপ্ন দেখি এসব কিছু আমাদের অসহায় করে দেয় আমাদের দূর্বল করে দেয় !
ঠিক বলেছেন আপনি !
আমরা আমাদের প্রিয়জনকে হারিয়ে বছরের পর বছর কষ্টে থাকি আর কোন প্রাণী থাকে না ! তারা কিছুক্ষণ পর জীবনের প্রয়োজনে জীবনকে এগিয়ে নেয় ! হেরা আমার মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো মানুষ না হয়ে পাখি হলেই ভালো হতাম ! কষ্ট কম থাকতো !
হেরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,ওদের ও কষ্ট আছে হয়তো !
থাকলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে না ! হেরা পৃথিবীর কঠিন রূপ মানুষ ছাড়া আর কেউ সবচেয়ে বেশি অনুভব করে না ! একদিন মরে যেতে হবে এটা মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী হয়তো জানেই না ! আমরা মানুষ রা সেই সত্য টা খুব যত্ন করে ভুলে থাকি !
হেরা ন‌ওশাদের সব কথার মানে বুঝতে পারছে না যদিও, তবু ন‌ওশাদের কথা গুলো শুনতে ওর ভালো লাগছে ! মন থেকে অজানা ভয়টা কমে যাচ্ছে !
হেরা আল্লাহ যাকে সুস্থ করে তুলতে চান তার কোন চিকিৎসার ও প্রয়োজন হয় না আবার যাকে এই পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে চান পৃথিবীর কোন চিকিৎসা, আয়োজন তাকে আটকে রাখতে পারে না ! তোমার নানা ভাই আমাকে কোন চেষ্টাই করার সুযোগ দেননি ! আমি খুব চেয়েছিলাম উনাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করাব তারপর এখানে আমাদের কাছে রাখব কিন্তু কিছুই করার সুযোগ দেননি তিনি আমাকে হেরা !
হেরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ন‌ওশাদের দিকে , মানে ?
স্যার নেই হেরা ! রাত তিনটার দিকে স্যার চলে গেছেন !
ন‌ওশাদ ভেবেছিল হেরা খবর টা শুনে হয়তো চিৎকার দিয়ে কাঁদবে ! কিন্তু হেরা শুধু তাকিয়ে আছে ওর দিকে ! কিছুই বলছে না !
তুমি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো ?
হুম !
তুমি আর আমি সকাল হলেই কুষ্টিয়া যাব ঠিক আছে!
গিয়ে আর কাকে দেখব বলুন ? আমার জন্য তো কেউ অপেক্ষা করে নেই ! আমার জীবনের একটা পার্ট ক্লোজ হয়ে গেল তাই না ! আমার জন্য ভাবে , আমাকে ভালোবাসে এমন কেউ আর র‌ইলো না পৃথিবীতে ! ন‌ওশাদ হেরা কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে !
হেরা এভাবে বলো না ! জানেন এতটুকু ছোট যখন আমি তখন নিজের কাছে নিয়ে এসেছিল নানা ভাই ! হাত ধরে অক্ষর শিখিয়েছে , পড়তে শিখিয়েছে । নিজে হাতে খেতে পারতাম না মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছে ! এরকম শীতের রাতে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো । আমার ছোট ছোট হাত গুলো নিজের গায়ের ওমে গরম করে দিতো ! রাতে ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলে সূরা পড়ে ফুঁ দিয়ে দিতো ! স্কুলে ক্লাস নেয়ার সময় আমি সঙ্গে সঙ্গে থাকতাম নানার ! বাবার আদর পাইনি নানা ভাই ই আমাকে বাবার আদর , নানার আদর , মা চলে যাওয়ার পর মায়ের আদর দিয়েছে ! আমার এমন কপাল, যন্ত্রণা আর দুশ্চিন্তা ছাড়া জীবনে কিছু ই দিতে পারিনি নানা ভাই কে ! ন‌ওশাদ নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে আছে হেরা কে। হেরা ন‌ওশাদের বুকে ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে।
আমরা ভোর হ‌ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে যাব কেমন !
কোথায় , আর গিয়ে কি হবে ?
তুমি শেষ বারের মত তোমার নানাকে দেখবে !
নাহ্ যে চোখ আমাকে দেখে শান্তি পাবে না তার কাছে গিয়ে আর কি লাভ বলুন ! আমি চেয়েছিলাম একটু শান্তি দিতে নানা ভাই কে সেটা যখন আর সম্ভব না এখন নানার কথা মত আমি আর ওখানে যাব না !
দেখবে না ?
থাক জীবিত মুখটাই আজীবন আমার চোখে ভেসে থাকুক!
ঠিক আছে তুমি যা চাইবে হেরা !
হেরা কাঁদছে !
ন‌ওশাদ ওকে বাঁধা দিচ্ছে না ,কাদুক কেঁদে কেঁদে হালকা হোক !

সারারাত‌ই হেরা কেঁদেছে ! সকালে ননাস থেকে শুরু করে নিশাল বাড়ির প্রতিটি মানুষ ওকে স্বান্তনা দিয়েছে ! ন‌ওশাদ আজ আর অফিস যায়নি ! হেরার পাশে বসে আছে ! হেরা অনেক ভেঙ্গে পড়েছে ! স্বাভাবিক যে মানুষ টা তাকে আগলে রেখেছে, জীবনের সব কিছু শিখিয়েছে , পরম মমতায় জড়িয়ে থেকেছে তার জন্য এরকম কষ্ট হ‌ওয়ার‌ই কথা !
দুপুরের দিকে হেরা ন‌ওশাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমার জন্য আপনি বাসায় বসে র‌ইলেন কত কাজ থাকে আপনার !
আজ সবচেয়ে জরুরি কাজ তোমার পাশে থাকা হেরা !
ন‌ওশাদ বাকি দিনটুকু হেরার কাছেই বসে র‌ইলো ! হেরার শরীর ও খারাপ করেছে ! কান্নাকাটি করে সর্দি ,কাশি শুরু হয়ে গেছে ওর !
দুপুরের দিকে ঘুমাচ্ছে যখন নিশাল দরজায় নক করলো ! ন‌ওশাদ ইজি চেয়ারে শুয়ে আছে।
আসব পাপা ?
এসো !
কি অবস্থা আন্টির ?
ঘুমাচ্ছে এখন !
অনেক কান্নাকাটি করেছে ?
হুম !
সোফায় ঘুমাচ্ছে কেন ?
ন‌ওশাদ এর কি উত্তর দিবে ভাবছে ! থাক ওর যেখানে ভালো লাগে ঘুমাক ! তুমি কি বীথির বাসা থেকে এলে ?
হ্যাঁ পাপা বসি নাই বেশিক্ষণ লাঞ্চ করেই চলে এসেছি ! আন্টির জন্য মন খারাপ লাগছিল !
ন‌ওশাদ ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে ! ছেলেটার মনটা নরম স্বভাবের ! হেরার কষ্ট দেখে খারাপ লাগছে ওর !
যাও রেস্ট নাও বাবা, তোমার আন্টি উঠলে এসো কাছে ওর ভালো লাগবে !
ঠিক আছে আমাকে ডেকো !
হুম!

দুই দিন হেরা সারাক্ষণ সোফায় কমফোর্টার গায়ে জড়িয়ে পড়ে র‌ইলো ! আনারের মা ওর মাথার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে পাশে বসে গল্প করছে ! বুবু এসে আদর করে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর ! এক সন্ধ্যায় দুই দেবর ও ব‌উদের নিয়ে এসে হাজির হয়েছে ! যতটা না হেরার জন্য তারচেয়ে ও বেশি তাদের বড় ভাই আর বোনের সামনে দায়িত্ব টা পালন করছে সেটা দেখিয়ে গেল !
সুমনা এসেছিল ! রেজোয়ান কক্সবাজারে গিয়েছে হোটেলের কাজ দেখতে তাই সুমনা একাই এসেছে !
রাতে ন‌ওশাদ জোর করেই হেরাকে রুম থেকে বের করলো ! লিভিং রুমে নিয়ে পাশে বসিয়ে বুবু আর নিশালের সঙ্গে গল্প করলো ! ডিনারের পর রুমে বসে হেরার দিকে তাকিয়ে বলল , হেরা এভাবে তুমি চুপচাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না !
হেরা ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে আছে ! ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে !
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!
আমি জানি তো । জানো হেরা প্রিয় মানুষ চলে গেলে সবচেয়ে কষ্ট কখন হয় , দেখবে ইচ্ছে করলেও চেহারাটা মনে করা যায় না যখন ! আমি এই ঘরের সব জায়গায় গীতিকে আজ‌ও দেখি । মনে হয় এই তো বেডের ঐ পাশটায় শুয়ে থাকতো ও ! সোফার এখানটায় বসে পেপার পড়তো ! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতো ! কিন্তু ওর মুখটা ঝাপসা দেখি ! মানুষ আর অন্য প্রাণীদের মধ্যে পার্থক্য কি জানো প্রাণীরা বুঝে যায় সে মরে যাবে কয়দিনের মধ্যে কিন্তু মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ ও বুঝে না সঠিক সময়টা ! মানুষ বাঁচতে চায় খুব !
যেদিন গীতি চলে গেল আমি কি জানতাম আমার সকাল টা যেমন শুরু হলো রাতটা শেষ হবে কেমন ? জানতাম না !
বুঝলে প্রতিদিনের মত অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি ! ও এসে আমার পাশে দাঁড়ালো ! আমার খুব মনে আছে , আমাকে বলল তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ন‌ওশাদ !
আমি হেসে বললাম তুমি ভয় পেয়ো না আমি অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাব না !
ও হাসতে হাসতে বলল, সে আমি জানি তোমাকে ! ইদানিং তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে সারাক্ষণ ন‌ওশাদ !
আমি বললাম , তাহলে এক কাজ করি অফিস না যাই বসে থাকি তোমার সামনে !
তা কি হয় ! যাও কালকে লন্ডন যাবে কত কাজ অফিসে তোমার !
আমি বারবার বলেছি চলো গীতি তুমি গেলে না !
ও বলল নিশালের এক্সাম সামনে পরের বার যাব !
বের হয়ে যাব এখানে টেবিল টার কাছে আমি ল্যাপটপ টা নিচ্ছি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো !
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম, কি ব্যাপার সূর্য উঠলো কোন দিক দিয়ে আজ ! যে কাজটা আমি করি সব সময় এবং বকা খাই বুড়ো হচ্ছি কিন্তু রোমান্স কমে না বলে আজ আপনার কি হলো ?
ও বলল খুব ইচ্ছে হলো তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি !
জানো হেরা ঐ শেষ বারের মত আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল ও ! গীতি সব সময় আমি বের হ‌ওয়ার সময় গাড়ি পর্যন্ত যেতো না ! ডাইনিং টেবিল থেকেই ,আমি আসছি বলে চলে যেতাম ! সেদিন ও গাড়ি পর্যন্ত এসেছিল আমি তাকিয়ে দেখি মুখটা শুকনো করে তাকিয়ে আছে ! প্রতিদিন লাঞ্চ করার সময় আমিই ফোন দিতাম খেয়েছে কিনা খোঁজ নিতাম সেদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম কোন ফোন দেইনি । আমি মনে করতে পারি না সেদিন আমি লাঞ্চ করেছিলাম কিনা !
তারপর সন্ধ্যায় ফারহান ফোন দিল হসপিটালে ছুটে গেলাম ! আমি জানতাম না , কল্পনাও করিনি গিয়ে দেখবো সাদা একটা চাদর দিয়ে মুখ ঢাকা সেই মানুষটা কে, যাকে সকালে এইখানে জড়িয়ে ধরে আদর দিয়েছি ! শান্ত হয়ে শুয়ে আছে হসপিটালের বেডে !
হেরা ন‌ওশাদের হাতটা ধরলো , ঘাড়ে মাথা টা রাখলো!
তারপর কত রাতের পর রাত আমি বসে থেকেছি ! গীতির নাম ধরে ডেকেছি ! একা একা কথা বলেছি গীতি কে কল্পনা করে ! নিশালের রুমে ছুটে গেছি ! ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় গীতিকে দেখছি !
প্রিয়জন চলে গেলে তার সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময় গুলো মনে পড়লে সেটাও কষ্ট দেয় ! তাই বলছি তোমার কষ্ট টা আমি জানি ,বুঝি !
হেরা ন‌ওশাদের চোখের পানি টা মুছিয়ে দিলো !
একটা কথা বলতে তোমাকে খুব ইচ্ছে করছে হেরা !
জ্বি বলুন !
ঐ দিন বলেছিলাম না তোমাকে আমি ,এখন আমার বেঁচে থাকার কারন একমাত্র নিশাল !
হুম !
শুধু একা নিশালের জন্য না আমি এখন তোমার জন্যেও বাঁচতে চাই ! তোমার সঙ্গে অনেক দিন সুখে দুঃখে বেঁচে থাকতে চাই ! তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে আমার খুব খারাপ লাগছে ! প্লিজ তুমি আর কষ্ট পেয়ো না ! তোমার নানা তোমাকে এভাবে দেখলে নিশ্চয়ই খুশি হতেন না !
হেরা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, খুব একা লাগছে , মনে হচ্ছে এ পৃথিবীতে আমাকে ভালোবাসতো , আদর , স্নেহ করতো একটা মানুষ সেই আর নেই !
হেরা আমি আছি তারপরও তোমার একা লাগছে ? আর আমার উপর কি তোমার বিশ্বাস নেই !
আছে !
ন‌ওশাদ মুখ ফুটে বলতে পারলো না এ পৃথিবীতে তোমাকে ভালোবাসে আরও কেউ তোমার পাশেই আছে !
হেরা ন‌ওশাদের কোলে মাথা রেখে শুয়ে চোখ মুচছে !
গান শুনবে হেরা ?
আপনি গাইবেন !
না গাইবো না ! আর কেউ গাইবে আমরা শুনবো‌ ন‌ওশাদ মোবাইল এ গান চালু করলো ,
” বেঁচে থাকার জন্যে
দুহাত রাখার জন্যে
অভিমানের জন্যে
কেউ একজন লাগে …
ধরে রাখার কেউ নেই
মনে করার কেউ নেই
মাঝে মাঝে তাই ভিসন একা লাগে ……”

( চলবে)