তার শহরের মায়া পর্ব-০৪

0
866

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৪
#Writer_Liza_moni

দেখো অনু তোমার সাথে আমি তিন বছরের সম্পর্কে ছিলাম ঠিকই কিন্তু তোমার প্রতি আমার ওতো টা ও ভালোবাসা জন্ম নেয় নি। তোমার রুপ আমার মনকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেনি। তোমাকে ঠকাতে আমি চাই নি। তনু কে যখন প্রথম দেখেছিলাম তখনই সে আমার হৃদয়ে জায়গা দখল করে নিয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম বিয়ের পর তোমাকে সব জানিয়ে দিতে।

তিন বছর আপনি আমার সাথে কেমনে এতো নিখুঁত ভাবে অভিনয় করে গেছেন?
১মাস ২ মাস না ৩,৩টা বছর আপনি অভিনয় করলেন কেমন করে? একটা মানুষ কতোটা নিচ হলে তিন টা বছর রিলেশন করে বলে আমার জন্য তার মনে এতো টা ও ভালোবাসা জন্ম নেয় নি। সিরিয়াসলি?

রাগে অনুর গা রিরি করছে।অনু মাহিরের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো

আমার ইমোশন নিয়ে খেলার অধিকার তোকে কে দিয়েছে ? প্রথম দেখায় একজন কে মনে জায়গা দিতে পারলি অথচ তিন টা বছর আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে আমাকে ভালোবাসতে পারিস নাই তুই?তোরে কে অধিকার দিছে বাজি ধরে আমার জীবন নষ্ট করার?

অনু পাঞ্জাবির কলার ছাড়ো দাঁতে দাঁত চেপে বললো মাহির।

অনু ঠাসস করে মাহিরের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিল। মাহির গালে হাত দিয়ে রাগী চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।

চোখ নিচে নামিয়ে কথা বল। তোর মতো বেয়াদব ছেলের জন্য এই এক চড় কোনো ব্যাপার না। তুই জানিস না মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান। তোর বাপ মা কী তোকে এই শিক্ষা দিছে?আর কী জানি বলেছিলি আমাকে তুই ঠকাতে চাস নাই। তার মানে কি তুই আমাকে ও বিয়ে করতি? তুই এতো টা নিচ যে এতো বড় একটা ভুল করার পর ও তোর মাঝে কোনো অনুশোচনা নেই। আমি যদি বিয়ের দিন তোকে না দেখতাম তার আগে যদি দেখতাম তাহলে কোনো দিন ও তোর মতো থার্ড ক্লাস ফালতু ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে হতে দিতাম না।

তুই একটা বার ও ভেবে দেখছোস তনু আপু যদি তোর এই কীর্তি কলাপ জানতে পারে ও কতোটা কষ্ট পাবে। তার স্বামীর সাথে তার আদরের ছোট বোনের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তার স্বামী বাজি ধরে তার বোনের সাথে রিলেশন করে তার বোনটাকে একটা জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছে।এই সব কিছু জানার পর ও তনু আপু আপনার মতো একটা নিকৃষ্ট মানুষের সাথে থাকবে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?

তনু জানতে পারে এই সব কথা মাহিরের মাথায় ছিল না একদম না।সব কিছু জানার পর যদি তনু সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে আমি কী করবো? একটা বাজির জন্য সব কিছু শেষ উফফ। এতো বড় ভুল আমি কেমনে করছি?

শুনেন মিস্টার মাহির রেদওয়ান
আমার সাথে আপনি যা করেছেন তার ক্ষমা আপনি কোন দিন ও পাবেন না। মহান আল্লাহ পাক ও আপনার এই পাপের ক্ষমা করবেন না।আর জানেন তো খারাপের কখনো ভালো হয় না। কোনো দিন ও না। ভালোবাসা কে কখনো ঘৃনা করা যায় না। তবে আপনার মতো কিছু মানুষের জন্য আমার মতো কিছু মানুষের কাছে ভালোবাসা মানেই ধোঁকা, কষ্ট, যন্ত্রণা,ঘৃণার বস্তু। আপনাকে আমি যতোটা ভালোবাসতাম তার থেকে ও বেশী ঘৃণা করি।তনু আপু আজ না হয় কাল সব জানতে পারবে কারণ সত্যি কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না।সময় হলে আপনি ঠিক আপনার পাপের শাস্তি পাবেন।
মনে রাইখেন।

মাহির চুপ করে অনুর কথা শুনে যাচ্ছে। মেয়েটা কে সে সব সময় শান্তশিষ্ট দেখেছে। কথা কম বলতে দেখেছে।আজ প্রথম দেখলো অনু কতোটা রেগে যেতে পারে। শান্ত মেয়েটা কতোটা অশান্ত হয়ে যেতে পারে। কথা কম বলা মেয়েটা আজ কতো গুলো কথা বললো।

অনুর সব প্রশ্নের উত্তর কী দিবে বুঝতে পারছে না মাহির।তাই চুপ করে রইলো।

অনু আবার ও বলতে লাগলো

কী আজ আপনার মুখে কোনো কথা নেই কেন? আমার প্রশ্নের জবাব দিন আপনি।রিফা যদি আমাকে সব না জানাতো আমি তো কখনোই আপনার আসল চেহারা চিনতে পারতাম না।যখন বলতেন ভালোবাসি প্রিয়তমা আহ হা তখন মনে হতো এই কথাটায় বুঝি সত্যি কতো আবেগ জড়িয়ে আছে। নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছে আমার আপনার মত একটা কুত্তা মার্কা ছেলেরে আমি কেমনে বিশ্বাস করলাম।কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করে দেয় অনু।
আমার সাথেই কেন আপনি এমন করলেন? তিন টা বছর যদি এই নাটক না করতেন তাহলে আমি আজ এই ভাবে ভেঙ্গে পড়তাম না।

চোখের পানি মুছে অনু আবার বললো
একটা সময় আসবে দেখিয়েন আপনার সামনেই আমি ভালোবাসার শহরে ডুবে থাকবো তখন আপনি নিজে ভালোবাসা পাবার জন্য ছটপট করবেন কিন্তু কেউ আপনাকে ভালোবাসা তো দুরের কথা ফিরে ও তাকাবে না ।
বলে অনু ছাদের দরজা খুলে নিচে নেমে গেল। মাহির স্তব্দ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।

.
কীরে তনু অনু কোথায়?আসার পর থেকে তো একবার ও দেখিনি।

আম্মু অনু আছে এখানে কোথাও। একটু পরেই এসে তোমার সাথে দেখা করবে।

অনু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে নিল ভালো করে।ঐ বেইমানের জন্য আর চোখের পানি ফেলবো না আমি।

বোনের রুমে এসে মুচকি হেসে বললো

সরি গো আম্মু এতক্ষণ ধরে আসতে পারিনি দেখে।

কী এমন মহা কাজ করে ফেলেছে আমার ছোট মেয়েটা একটু শুনি।

অনু মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
তোমার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আমাকে কি কেউ কাজ করতে দিবে বলো ?

নতুন ভাবি চলো তুমি , আমি আর অনু আপু সহ অন্য সব মেয়েদের কে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে তোমার শ্বাশুড়ি মা।

আচ্ছা ঠিক আছে জুঁই আমি আর তুমি আপুকে নিয়ে যাই চলো।
(জুঁই হলো তুর্যর বোন।)

ঠিক আছে অনু আপু।

অনু আর জুঁই মিলে তনু কে ডেকরোশনের ওখানে নিয়ে যায়। খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে জুঁই চলে যায় অন্যদের ডাকার জন্য।

কীরে অনু আমাকে বসিয়ে দিয়ে তুই দাড়িয়ে আছিস কেন?বোস আমার সাথে।

অনু মুচকি হেসে তনুর পাশে বসে পড়লো।

কিছুক্ষণ পর সবাই এসে খাবার টেবিলে বসে পড়লো।
মাহির ছাদ থেকে নেমে তনুদের খাবার টেবিলের একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দিকে তাকিয়ে।

তুর্য মাহির কে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে এগিয়ে গেল।

কিরে ভাই মন খারাপ নাকি?এই ভাবে দাড়িয়ে আছিস যে?

এমনি।

আয় আয় তোর বউ শালি সবাই বসে গেছে খাওয়ার জন্য তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?চল

তুর্য মাহিরের হাত টেনে ধরে তনুদের খাবার টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো।

মাহির কে দেখে তনু মুচকি হাসলো।
আর অনু মাহির কে দেখে ও না দেখার ভান করে হাত দিয়ে ভাত নাড়তে লাগলো।

মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে তনুর উদ্দেশ্যে বলল
লেগ পিসটা দিবো?

আমি লেগ পিস খাই না।অনু কে দেন।

মাহির অনুর প্লেটে লেগ পিস টা দিতে গেলে অনু চোখ গরম করে শান্ত কন্ঠে বলে যার তার হাতের দেওয়া জিনিস আমি খাই না।

যার তার বললি কেন অনু? উনি তোর দুলাভাই হয়।

আসলে তনু আমি আমার একটা মাত্র শালির আবদার পূরণ করতে পারেনি বলে এই কথা বলছে।

কী আবদার?

আর বইলো না ও আমার কাছে আইস্ক্রিম খেতে চাই ছিল কিন্তু আমি তো ব্যাস্ত ছিলাম তাই এনে দিতে পারিনি আর আমার শালিটা রাগ করেছে।

কতো সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যা বলতে জানে হাহ।
মনে মনে বললো অনু।
.
ভাই একটা জি এফ খুঁজে দে না।

তুর্য এই বিয়েতে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে কোনো একজন কে পটিয়ে নে।

আরে ভাই জিয়াদ সুন্দর মেয়ে দিয়ে কী করবো রুপ ধুয়ে পানি খাবো নাকি?

তাহলে কেমন মেয়ে চাই তোর?

আমার একটা মন ভাঙ্গা মানুষ চাই।যাকে প্রচন্ড ভালোবাসতে শিখিয়ে কেউ ছেড়ে গেছে।যে সত্যি বুঝে ভালোবাসার মানে।সে নিজে ঠকে বুঝে গিয়েছে কাউকে ঠকালে কতো টা কষ্ট হয়। আমার তাই মন ভাঙ্গা একজন মানুষ চাই।

চলবে,,,, 🍁