#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১০
#Writer_Liza_moni
সব বন্ধু, বন্ধু হয় না। কিছু বন্ধু রুপি শয়তান ও আছে।
রিফাদের উদ্দেশ্যে কথা টা বলে অনু বইয়ের দিকে নজর দেয়।
রিফা অনুর সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে।অনুর সাথে তার ৪ বছরের বন্ধুত্ব। সেটা যে এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে তা কখনো ভাবেনি সে।
শোন অনু এই ভাবে রেগে থাকলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে?(শাকিল)
মাহির ভাইয়া যা করছে তা ওনার দোষ।আমরা কি করেছি?(কেয়া)
তুই এমন ভাব নিচ্ছিস যেনো আমরা মাহির ভাইকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম?(শুভ)
প্লিজ দোস্ত এমন করিস না।🥺
অনু বইটা টেবিলের উপর রেখে উঠে দাঁড়ালো।
শাকিল কি জানি বলেছিলি এই ভাবে রেগে থাকলে সব ঠিক হবে নাকি?তাই তো ?
শোন এই ভাবে রেগে থাকলে সব সমাধান হবে না। কিন্তু তোদের মতো কিছু বন্ধু রুপি বেইমানের থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।আর আমার কি রাগ করা টা স্বাভাবিক না? আমার সাথে কী হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে এই বিষয়ে তো তোরা জানতি।
আর কেয়া তুই বলছিস এই কথা? শুধু মাহির আমার সাথে বেইমানি করছে? তোরা কিছুই করিসনি? তোরা কী জানতি না মাহির আমার সাথে বাজি ধরে রিলেশনে গিয়েছিল?
আমরা ভেবেছিলাম মাহির ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে।যার জন্য তিন বছর রিলেশন কনটিনিউ করেছে।তাই তোকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিনি।
হাহা কেউ আমার ইমোশন নিয়ে খেলছিল আর তোরা জেনে ও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিস নি রিফা?
আর যাই হোক তোর কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি। হোক না রিলেশনটা অনেক দিনের। আমাকে জানাতে তো পারতি। বলতে তো পারতি মাহির আমার সাথে বাজি ধরে সম্পর্কে জড়িয়েছে। কেন বলিস নি?
শুভ তুই কী জানি বললি? আমি এমন ভাব নিচ্ছি যেন তোরা মাহিরকে শিখিয়ে দিয়েছিস এমনটা করতে।হতে ও তো পারে তোরা সবাই মিলে বাজি ধরে ছিলি।
এই বারের মতো মাফ করে দে না বোন।আর এমন ভুল হবে না।
অনুর হাত ধরে আকুতি করে বললো রিফা।
অনু তাচ্ছিল্য হেসে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রিফার উদ্দেশ্যে বললো
আর এমন ভুল করতে দিলেই করিস। তোদের আমি আমার বন্ধু কম ভাই বোন ভাবতাম বেশি। কিন্তু সেই তোরাই আমাকে এই ভাবে ঠকালি?
আর একটা সুযোগ দে অনু।(কেয়া)
আমি বেইমানদের দীত্বিয় বার সুযোগ দিই না।এই রুলস আমার জীবনে নেই। বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে আর বিশ্বাস ফিরে পাওয়া যায় না। তোরা আমার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিস।
প্লিজ অনু বোন একটা বার বিশ্বাস করে দেখ প্লিজ।(শাকিল)
আর এক বার প্লিজ অনু।(শুভ)
আমার আর ঠকার ইচ্ছে নেই।২ মাস পর ফাইনাল পরীক্ষা। তোরা তোদের মতো থাক আর আমাকে আমার মত করে থাকতে দে।দিন শেষে এইটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আপন বলতে কেউ নেই পরিবার ছাড়া। কিন্তু মাঝে মাঝে পরিবারের মতো মানসিক যন্ত্রণা কেউ দেয় না।দিন শেষে নিজেই নিজের আপন জন।নিজেই নিজের ভালো বন্ধু।নিজেই নিজেকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। নিজের সাথে নিজে কখনো বেইমানি করা যায় না। একদম না। তোরা আমার লাইফে এসে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিস। বুঝিয়ে দিয়েছিস সবাই আসলে সত্যিকারের বন্ধু হতে পারে না।
আমাকে একা থাকতে দে।যদি কোনো দিন মনে করিস আমি আবার তোদের মাঝে ফিরে যাবো তাহলে ভুল। আগের অনুমেঘা রাজমিম আর এখন কার নতুন করে গড়ে উঠা অনুমেঘা রাজমিমের মধ্যে অনেক তফাৎ দেখতে পাবি। এখনকার অনুমেঘার জীবনে কোনো বেইমান থাকবে না। না মানে না। ভালো থাকিস। আল্লাহ হাফেজ।আর জোর করে ও আমার মুখ থেকে একটা কথা ও বের করতে পারবি না।
অনু বসে পড়লো।বই মেলে আবার বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো।
অনুর জেদ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানা আছে ওদের সবার।অনু যখন বলেছে কথা বলবে না সম্পর্ক রাখবে না তার মানে না।
সবার খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে করছে মাহিরের মেরে ফেলতে।ওর জন্য যতো সমস্যা।
.
তূর্য অফিসে এসে নিজের কাজ শুরু করে দেয়।তূর্যর কেবিনের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে সামনে তাকিয়ে অফিসার কে দেখে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো।
আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আরে ইয়াং ম্যান তুমি এসেছো শুনে তোমার সাথে দেখা করতে চলে এলাম। দাঁড়াতে হবে না বসো।
তূর্য মুচকি হেসে এগিয়ে এসে জামাল উদ্দিন চৌধুরী কে একটা চেয়ার টেনে দিল।
বসুন স্যার। কেমন আছেন?
জামাল সাহেব বসে হাসি খুশি ভাবে বললেন
আমি তো বিন্দাস আছি।
তূর্য শুধু মুচকি হাসলো।
তুমি কেস টা হ্যান্ডেল না করলে অপরাধী কখনোই ধরা পড়বে না। তোমার মতো এতো বুদ্ধিমান মানুষ আর কয়েকটা আছে বলো তো? তুমি এই কেস টা হ্যান্ডেল করতে পারবে বলেই তো তোমার ছুটির সময় শেষ না হতেই ডেকে পাঠালাম।
তূর্য ইনোসেন্ট মুখ করে বললো আমার এই ছুটি কিন্তু সুদে আসলে চাই স্যার।
হাহাহা তোমার বিয়ের সময় তোমাকে আমি ছুটি বাড়িয়ে দিবো। চিন্তা করি ও না।
তো কেস টার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছো?
জী স্যার।রিয়াদ সাহেব আমাকে বলে দিয়েছে সে বিষয়ে।
ধানমন্ডি ১১ এ কিন্তু এই কেসের শুরু। সেখানে মাইন উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি চোরা চালান করে।এমন কি এই বিষয়ে জেনে যাওয়ার কারণে সে তার খুব কাছের মানুষ তার ফুফু কে খুন করে ফেলতে ও এক বার ভাবেনি। তুমি একজন আদর্শ সি আই ডি অফিসার । আমি জানি তুমি এই খুনি এবং এর সাথে জড়িত সকল আসামি কে খুঁজে বের করতে পারবে। এই বিশ্বাস আছে তোমার প্রতি আমার।
আমি চেষ্টা করবো স্যার। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।
তো বিয়ে সাদি কি করবে না নাকি?
স্যারের কথায় তূর্য মুচকি হেসে বললো
বিয়ের কথা আপাতত ভাবছি না স্যার।সময় হলে আপনাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করবো।
হাহা হা
.
অনু ভার্সিটি ছুটির পর বাজারে চলে গেল বাজার করার জন্য।
আঙ্কেল এক কেজি আলু দেন তো।
আমাকে ও দিয়েন।এক কেজি আলু।
চেনা কন্ঠ শুনতে পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় অনু। তূর্য দাঁত কেলিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
অনু একটু বিরক্ত হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো
আপনি এখানে এই সময় কী করেন?
বাজার করতে আসছি। বাড়িতে গিয়ে রান্না করতে হবে তো।বউ নেই বলে নিজেকেই রান্না করতে হয়।আহ জীবন।
আমি তো জানতাম আপনি মিরপুর ২ এ থাকেন। সেখান থেকে এখানে এসে বাজার করছেন কেন?
তূর্য সকালেই বাজার করে নিয়ে গেছে। ধানমন্ডিতে কাজে এসে অনু কে বাজার করতে দেখে মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি উদয় হয়।অনু কে যেহেতু দেখতে পেয়েছে সেহেতু একটু জ্বালানো যায়।
আমি এখানে একটা কাজে এসে ছিলাম।তাই ভাবলাম এখান থেকেই বাজার করে নিয়ে যাই।
বাজার করবেন তো ভালো কথা। আমার পাশে এসে আমি যেখান থেকে কিনছি সেখান থেকেই বাজার করতে হবে?আর কি দোকান নেই?
রেগে যাচ্ছেন কেন বলুন তো?
নিজের কাজ করুন।যান।
তুই এতো ভালো বুদ্ধিমান একজন সি আই ডি অফিসার হয়ে ও এই মেয়ের মতি গতি বুঝতে পারিস না তাওহীদ তূর্য? তাহলে তুই কেমন বুদ্ধিমান রে?জামাল স্যার কেমনে তোরে বুদ্ধিমান বলে? নিজের মনে একা একা বিড় বিড় করতে থাকে তূর্য।
অনু ভ্রু কুঁচকে তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তূর্যর কোনো রেসপন্স না পেয়ে বিরক্ত হয়ে আলুর দাম দিয়ে অন্য দোকানের দিকে চলে গেল।
পেছন ফিরে তূর্য কে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনু বিরক্ত হয়ে বললো
পাগল ছাগল যে কই থেকে আসে।উফফ আজাইরা।
চলবে,,, 🍁