তার শহরের মায়া পর্ব-০৯

0
850

#তার_শহরের_মায়া😍
#পার্ট_৯
#Writer_Liza_moni

আটটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠায় তনু শোয়া থেকে উঠে এগিয়ে গেল দরজা খুলে দেওয়ার জন্য।

মাহির তো এখন আসবে না।ওর তো ফিরতে দেরী হবে। তাহলে এই সময় আবার কে এলো?

তনু দরজা খুলে সামনে তাকাতেই তূর্য বলে উঠলো
সারপ্রাইজ ভাবি।

আরে তূর্য যে। কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ ভাবী আপনি?

আলহামদুলিল্লাহ।আসো, আসো ভেতরে আসো।

তূর্য ভেতরে এসে ড্রইং রুমের সোফায় বসে পরলো। আমি অনেক ক্লান্ত ভাবী।এক গ্লাস পানি দেন। ঠান্ডা কিন্তু।

তনু মুচকি হেসে রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে এক গ্লাস শরবত গুলে নিয়ে এসে তূর্যর হাতে দেয়।

Thank you so much vabi

তূর্য শরবত টা খেয়ে তনুর উদ্দেশ্যে বললো
ভাইয়া কোথায়?

তোমার ভাইয়া একটু কাজে গেছে বাহিরে। একটু পরেই চলে আসবে।

বউ মা কার সাথে কথা বলছো?কে আসছে বাড়িতে? বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে এগিয়ে আসেন মাহিরের মা।

তূর্য দেখে তিনি খুব খুশি হোন। আরে তূর্য যে কেমন আছো?

আসসালামুয়ালাইকুম মামি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?

ওয়ালাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ বাবা ভালো আছি। বাড়ির সবাই কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো।মামা কোথায়?দেখছি না যে।

তোমার মামার শরীর টা একটু খারাপ লাগছে তাই ঘুমিয়ে গেছে।

ওহ আচ্ছা।

বউ মা তূর্য কে গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দাও।ও একটু রেস্ট করুক। অনেক দূর থেকে আসছে।

আচ্ছা মা। তূর্য ভাই আসো আমার সাথে।

তূর্য মুচকি হেসে ব্যাগ নিয়ে তনুর পিছু পিছু চললো।তনু তূর্য কে রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো
তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও কিছুক্ষণ। আমি খাবার গরম করে ডাক দিবো।

আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী।

তনু মুচকি হেসে চলে যাওয়ার সময় আবার পেছনে ফিরে মুখটাকে মলিন করে বললো তূর্য ভাইয়া শোনো,,,

তূর্য পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললো হুম বলুন ভাবী।

অনুর তো আজ আসার কথা ছিল। ওকে কি দেখেছিলে আসতে?

হ্যাঁ।অনু আর আমি এক সাথেই আসছি।

ওহ আচ্ছা। তোমার সাথে অনু কে ও নিয়ে আসতে।

উনি আসতে চায় নি।তাই আমি জোর করিনি।

ওহ।কি যে হয়েছে মেয়েটার ? আমার সাথে ও কথা বলছে না।

তনু রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে অনুর নাম্বারে কল দেয়।
অনু তখন ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ঘুম আসছে খুব। মোবাইলের রিং বেজে উঠায় ভ্রু কুঁচকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে তনুর নাম্বার দেখে মুখটা মলিন করে ফোনের দিকে চেয়ে আছে কখন কল কাটবে।কল কেটে যাওয়ার সাথে সাথেই মাকে কল দিলো।

মা কল রিসিভ করতেই অনু বলে উঠলো
তনু আপু কে আমায় আর কল দিতে বারন করবা। এতো দিনে আমাকে মনে না করলেও খুশি হবো। এতো দিন যখন কল দেয়নি এখন ও কল না দিলে আমি কিছু মনে করবো না।

কেন কি হয়েছে?

কিছু না।যেটা বলছি সেটা করো না হলে তুমি ও আমাকে আর ফোন দিবা না।দিলেও আমি ধরবো না।মাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অনু কল কেটে মোবাইল বন্ধ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে আবার শুয়ে পরলো।

অনু চায় না তার বোনের সংসারটা ভাঙ্গুক। একটা সংসার মসজিদ সমতুল্য। চাইলেই তা এতো সহজে ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব না। তনুর সাথে কথা বললে তার পুরনো ক্ষত তাজা হয় উঠে।দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট হয়।একা থাকাই ভালো মনে করে অনু।

তূর্য ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সারাদিন বাসে বসে থাকতে থাকতে পিঠ ব্যথা করছে তার। বিছানায় শুয়েই যেন স্বর্গের শান্তি অনুভব হলো।

অনুর নাম্বারে আবার ও কল দিলে বন্ধ পায় তনু।
হঠাৎ করে অনুর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।তনু কল করায় অনু যে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সে।অনুর এমন এভয়েড করা মানতে পারছে না তনু। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। ছোট একটাই বোন তার।আর কোনো ভাই বোন নেই। ভীষণ ভালোবাসে অনু কে সে। হঠাৎ করে মেয়েটার এমন পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তনু।

কলিং বেল বেজে উঠলো আবার।তনু জলদি করে চোখের পানি মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিল।
মাহির তনু কে দেখে মুচকি হাসলো।তনু কে হালকা জড়িয়ে ধরে বললো কী হয়েছে জানটা?
মন খারাপ যে?

তনু মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললো কই কিছু হয়নি তো। এমনিতেই ভালো লাগছিল না।

মাহির রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তনুর উদ্দেশ্যে বললো এক গ্লাস পানি দাও না।

এখনই আনছি।তনু গিয়ে মাহিরের জন্য পানি নিয়ে আসে।মাহিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
এই নিন ।

মাহির পানির গ্লাস টা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিল।(শয়তান তো পানি এক নিঃশ্বাসেই খায়😅)

তূর্য ভাইয়া এসেছেন।

তাই নাকি । কখন আসলো?

এই তো কিছুক্ষণ আগেই।

দেখা করে আসি।

এখন না। আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। তার পর দেখা করেন আর গল্প করেন কিচ্ছু বলবো না।

আচ্ছা ঠিক আছে। বউয়ের আদেশ তো মানতেই হবে।

তনু মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে গেল। খাবার গরম করতে।

মাহির ফ্রেশ হয়ে এসে গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়।
তূর্য কে শুয়ে থাকতে দেখে বললো
কীরে ব্যাটা কখন আসলি? আমাকে একটু জানালি ও না?

তূর্য শোয়া থেকে উঠে বসলো। এমনিতেই জানাইনি। আজকে আসবো সেটা ও তো জানতাম না।

মাহির বিছানায় গিয়ে বসে বললো
জানতি না কেন?

আমার ছুটি শেষ হবার কথা আর ও পরে ছিল। কিন্তু অফিস থেকে হরতাল ফোন দিয়ে আজকেই আসতে বললো।

ও আচ্ছা।আর কেউ আসেনি তোর সাথে?

আসছে তো।

কে?

অনু তোর শালি। আমি আর অনু এক সাথেই পাশাপাশি সিটে বসে আসছি।মিরাকেল।

কথা গুলো মাহিরের করেন কুহরে পৌঁছাতেই মাহিরের বুকে ধক করে উঠলো।

অনু আসছে এখানে?

না। তোর শালিকে কতো বার যে বলছি কিন্তু আসেনি।(মিছা কথা। তূর্য খালি একবার জিজ্ঞেস করেছিলো অনু কে।কতো বড় মিথ্যুক দেখছো🤭)

ওহ আচ্ছা।

তূর্য ভাইয়া কে নিয়ে খেতে আসেন।ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে কথা টা বলে উঠলো তনু।

আয়। খাবার খাওয়ার জন্য বাক পড়ছে।
তূর্য মুচকি হেসে মাহিরের সাথে চলে গেল ডিনার করতে।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বন্ধ। রাতের কথা মনে পড়তেই ভ্রু কুঁচকে মোবাইল অন করে সময় দেখে নিলো।৮টা ৪৫ বাজে।১০টার দিকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।কাল রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল। এখন খুব ক্ষিদা ও লাগছে তার।
শোয়া থেকে উঠে আড়মোরা ভেঙ্গে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
অনু যে মেসে থাকে সেখানে নিজের রান্না নিজেকে করতে হয়। এই জন্য অনুর একদম ভাল্লাগে না। কখন যে পরিক্ষা শেষ হবে সে চিন্তা করছে সে।

ফ্রেশ হয়ে এসে ওড়না ভালো করে গায়ে দিয়ে মেসের সামনে একটা মুদির দোকান আছে সেখানে যায় সে। এতো দিন না থাকায় রান্না করার জন্য কিছুই নেই।
দোকান থেকে ৪ টা ডিম,২কেজি ময়দা, ৫০ টাকার চা পাতা আর দুধের গুঁড়ো কিনে নিয়ে গেলো সে।আপাতত সকালের জন্য এই গুলো হলেই হবে। ভার্সিটি থেকে আসার সময় না হয় বাজার করে নিয়ে আসবে।

অনু মেসে গিয়ে কোমরে ওড়না গুঁজে নিয়ে পরোটা আর ডিম ভাজি করে বানিয়ে নিলো। তার পর চা বানিয়ে খাওয়া শুরু করে দিল।

খাওয়া শেষ হলে সব কিছু পরিষ্কার করে ধুয়ে রেখে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল গোসল করে নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে তৈরি হয়ে নিল সে।মেস থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াল রিক্সার জন্য।
.
তূর্য সকালের নাস্তা করে তার গন্তব্যে রওনা দিল অনুর আগেই।

অনু অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করার পর একটা রিক্সা পেলো।সেটাতে উঠে পড়লো সে।১০টা২০ এর দিকে ভার্সিটিতে এসে পৌঁছায় অনু।
ভার্সিটির ওখানে একটা বাদাম গাছের নিচে তার বন্ধু রুপি শয়তান গুলো কে দেখতে পেয়ে অনু ডোন্ট কেয়ার ভাব করে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যায়।অনু কে দেখতে পেয়ে রিফা,শাকিল,কেয়া,শুভ এগিয়ে আসে।

অনু দোস্ত দাঁড়া। অসহায় কন্ঠে বললো রিফা।

অনু বোন আমাদের কথা একটু শোন।

অনু পেছন ফিরে ও তাকায় না। সোজা ক্লাসে গিয়ে বসে পড়ে ।
সবাই ওর পিছনে পিছনে আসলে ও অনু পাত্তা দেয় না।

চলবে,,, 🍁