তার শহরের মায়া পর্ব-১৩

0
722

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১৩
#Writer_Liza_moni

অনু ভার্সিটির সামনে রিক্সা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে দিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই রিশাদ আর রিফাকে দেখতে পেল। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

রিফা কে কান্না করতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।রিশাদ রিফার কাঁধে হাত দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
রিশাদের চোখ অনুর দিকে পড়তেই রিশাদ হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো।

অনু মাথা নাড়িয়ে না বললো।রিশাদের চোখের দিকে তাকিয়ে রিফা ও পেছনে ফিরে তাকিয়ে অনু কে দেখতে পেয়ে তার দিকে ছুটে গেল।রিশাদ পকেটে হাত ঢুকিয়ে রিফা আর অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।

রিফা কান্না করতে করতে অনুর কাছে এসে অনু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।অনু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো রিয়েকশন করলো না।

রিফা কান্না করতে করতে বললো
বিশ্বাস কর অনু আমি এই কয়েক দিন ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি কেউ ঠকালো ঠিক কতটা কষ্ট হয়। আমাকে তুই মাফ করে বোন। বিশ্বাস কর আমি যদি সত্যি বুঝতে পারতাম যে মাহিরের বাচ্চা তোর সাথে অভিনয় করছে। আমি বুঝতে পারলে কখনো তোকে কষ্ট পেতে দিতাম না।

ঐ মাহির তোর সাথে এতো নিখুঁত করে অভিনয় করেছে যে আমরা বুঝতে পারিনি।রিশাদ এই কয়েক দিন আমার সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিল। তোর কষ্ট টা উপলব্ধি করানোর জন্য। আমি সত্যিই বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা হারানোর কত কষ্ট।

আমাকে মাফ করে দে প্লিজ বোন। তুই যদি চাস তাহলে আমি তোর পায়ে ধরবো।তোরে ও আমি খুব ভালোবাসি দোস্ত।

অনু রিফার গালে ঠাসসস করে এক চড় মারে।অনুর চোখ ও ভিজে গেছে। কিন্তু চোখের পানি গুলো গড়িয়ে পড়তে দেয়নি।

রিফা গালে হাত দিয়ে চোখ ভর্তি জল নিয়ে অনুর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।রিশাদ ও অবাক হয়েছে ভীষণ।অনুর কান্ডে।

অনু রিফাকে জড়িয়ে ধরে বললো
খুব তো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে শিখে গেছিস তো। কত্ত বড় সাহস তোর আমার পা ধরবি?
তুই কি ভাবিস তুই আমার পা ধরে সালাম করলে তোরে আমি সালামি দিমু?

অনুর কথায় রিফা হেসে দিল।
তুই যে কিপটা তুই আমাকে সালামি দিবি ও না।

অনু মুচকি হেসে রিফার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো ভুলে যা কালো অতীতের কথা।আর এমন কিছু করিস না যেন আবার ও নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলিস।

রিশাদ অনুদের কাছে এসে বললো যাক দুইজনের মান অভিমান মিটেছে।

গতকাল রাতে রিশাদ ভাইয়া কে হঠাৎ করে দেখে আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

কেন আমি কী ভূত না বাঘ?

আরে না। হঠাৎ করে এতো দিন পর আপনাকে দেখে একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছিল। এখন ঠিক আছে।

ভার্সিটির সময় হয়ে গেছে যাও।

রিফা অনুর হাত জড়িয়ে ধরে ভার্সিটির ভেতরে চলে গেল।
রিফা আর অনুকে এক সাথে দেখে কেয়া,শুভ, শাকিল এগিয়ে আসলো।অনুর সামনে এসে মাথা নিচু করে বললো সরিরে দোস্ত।আমরা বুঝতে পারি নি।মাফ করে দে।

অনুর খুব হাসি পাচ্ছে ওদের ইনোসেন্ট মুখের ভাব দেখে। তবু ও মুখটাকে গম্ভীর করে রাগী গলায় বললো
আর কখনো এমন ভুল করলে সোজা জেলে দিবো।মনে রাখিস। কেয়া খুশিতে অনুকে জড়িয়ে ধরলো।
তোদের সবাইকে খুব ভালোবাসি রে।
.
বিকালের দিকে মাহির অফিস থেকে বাড়িতে এসে দেখলো তনু শাড়ি চুড়ি পরে তৈরি হয়ে আছে।

মাহির মুচকি হেসে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানা থেকে মোবাইল আর মানি ব্যাগ টা নিয়ে তনুর দিকে দাঁত কেলিয়ে বললো চলুন ম্যাডাম।

তনু মুচকি হেসে মাহিরের সাথে বাসা থেকে বের হলো।

ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মাহির আর তনু।হাতে হাত রেখে।কিছু দূর এসে মাহির একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে তনু কে উঠতে বললো।তনু রিক্সায় উঠে বসলে মাহির তনুর শাড়ি আঁচল ঠিক করে দিয়ে নিজে ও উঠে বসলো।রিক্সার হুড ফেলে দিয়েছে। মাহির একটু লম্বা বলে।

ফুচকা দেখতে পেয়ে তনু মাহির কে বললো চলো না ফুচকা খাই।

মামা এখানে দাঁড়ান ।

রিক্সা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে তনুকে নিয়ে ফুচকা খাওয়ার জন্য চলে গেল।

ভার্সিটির একটা স্যারের থেকে কিছু নোটস নেওয়ার জন্য অনু আর ওর সব ফ্রেন্ডরা মিলে মিরপুর ২ এ এসেছিল।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ৫ জন কথা বলছিল। হঠাৎ করে অনুর চোখ পড়লো তনু আর মাহিরের দিকে। মাহির তনুকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে।
তা দেখে কষ্ট হলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে অনু।

তনু যেনো তাকে দেখতে না পায় সে জন্য অনু ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো।তনু দেখলে অনুকে ওদের কাছে যেতে হবে যা অনু একদম চায় না।

তনু আর মাহির কে দেখে রিফা বললো দেখ
দেখ একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে বউকে কেমন ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে।

রিফার কথায় অনু বাদে সবাই মাহির আর তনুর দিকে তাকালো।

ইচ্ছে করছে এই বেইমান কে গলা টিপে মারতে।

চল তো এখান থেকে।বাস আসছে আয়।
অনুর ডাকে সবাই গিয়ে বাসে উঠলো। জানলার পাশে বসেছে অনু।বাস মাহির আর তনুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাহিরের চোখ পড়ে অনুর দিকে।অনু তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।তার চোখে হাজারো যন্ত্রনা দেখতে পেল।

অনু কে তনু দেখতে পায়নি।অনু মুচকি হাসলো। মনে মনে বললো আমার বোন টা আগে থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। সুখেই তো আছে।
.
তূর্য বিকেলে ঘুম থেকে উঠে।এতো ঘুম ঘুমিয়েছে যে দিন কোন দিকে গেলো সেই খবর পায়নি।জামাল স্যার ফোন করেছেন অনেক বার।এতো বার ফোন করার কারন কি? তূর্য কল বেক করার সাথে সাথেই হরতাল রিসিভ করে বললো তারাতাড়ি অফিসে আসো।কাল রাতে যে ক্লু দিয়ে ছিলে সেটা অনুসরণ করে খুনিকে ধরতে পেরেছি।চলে আসো ক্রেডিট নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আসছি স্যার।৩০ মিনিটের মধ্যেই।
.
.
.
সময় যাচ্ছে নিজের গতিতে।কারো জন্য থেমে নেই সে। হয়তো কারো খারাপ সময় যাচ্ছে আর কারো ভালো। কিন্তু সময় যাচ্ছে।এক রকম করে হলে ও যাচ্ছে।

আর দুই দিন পর থেকে অনুর ফাইনাল পরীক্ষা। নিজেকে যথা সম্ভব পড়ার মাঝে ব্যাস্ত রাখতে সে।এই দুই মাস রাত দিন এক করে পড়াশোনা করেছে। মাহিরের কথা মাথায় বা মনে আসার কোনো উপায় রাখেনি সে।ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে উঠেছে। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ভীষণ।অন্যের কথা ভাবার সময় নেই তার।

হয়তো হুট হাট বেহায়া মন তাকে মনে করে বসতো। কিন্তু অনু পাত্তা দিত না।

তূর্য এত দিন অনু কে একটু ও বিরক্ত করেনি। হঠাৎ করে দেখা হতো। মাঝে মধ্যে।যদি তূর্য কোনো কাজে ধানমন্ডি যেতো।
কেমন আছেন?
ভালো আছি এইটুকু কথা হতো।

তূর্যর মা তূর্যর বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।২৭ বছর হয়ে গেছে ছেলের। কিন্তু এখন ও বিয়ের কথা মুখ ফুটে বলেনি।আর তূর্য যে মুখ ফুটে বলবেন ও না তা খুব ভালো করেই জানেন তিনি।তাই তুর্য কে না জানিয়ে মেয়ে দেখতে লাগলেন।

৫ টা মেয়ে দেখেছেন। কিন্তু তার ওমন সুন্দর ছেলের জন্য কোনো মেয়েই ওনার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।মেয়ে ভালো হলে তো পরিবার ভালো না।
পরিবার ভালো তো মেয়ে ভালো না।

কি যে এক চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ছেলের বিয়ের চিন্তায় দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।( বেচারি তূর্যর মা😐)

চলবে,, 🍁