#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১৪
#Writer_Liza_moni
ছি রিফা। তোরা এতো টা নিচ আমি ভাবতেই পারিনি। আমি তো তোদের ভালো মনে করেছিলাম।তোরা এতো জঘন্য ছিঃ। আমি যদি আজ একটু তাড়াতাড়ি না আসতাম তাহলে তোদের এই জঘন্য প্লেনিং টা বুঝতেই পারতাম না।
তুই যা ভাবছিস তা না অনু।অনুর হাত ধরে বললো রিফা।
অনুর রাগে গা কাঁপছে।রিফার হাতটা ঝাড়ি দিয়ে নিজের হাত থেকে ছুটিয়ে নিলো।ছুঁবি না আমাকে। সেদিন তো কী সুন্দর করে অভিনয় করে ছিলি। আমাকে ক্ষমা করে দে অনু। আমি তোর পায়ে ধরবো।ছি।তোরা তো মাহিরের থেকে ও জঘন্য।
শুধু মাত্র পরিক্ষায় আমার থেকে কপি করার জন্য এতো নাটক? বন্ধু হয় নিশ্চয় মুখ ফিরিয়ে থাকবো না এই সুযোগ নিতে চেয়েছিলি?আর ও কি প্লেন করেছিস
তোরা আমার খাতা থেকে লিখে নিয়ে আমার খাতাটা নষ্ট করে দিবি তাও কিনা সময় শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে।ছি ছি ছি। তোরা এতো জঘন্য ছিঃ।ভাগ্যিস পরিক্ষার আগের দিনই তোদের এই কুকর্ম করার কথা জানতে পেরেছি। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া। তোদের মতো ফাউল পোলা মাইয়ারে যেন আমি আমার চোখের সামনে না দেখি।
আর আমার সাথে চিট করার শাস্তি খুব শীঘ্রই পাবি।হয় আমার থেকে আর না হয় প্রকৃতি থেকে। মাইন্ড ইট।
অনু ওদের কাছ থেকে ভার্সিটির ভেতরে চলে গেল।
অনু আজ সময়ের একটু আগেই ভার্সিটিতে আসে। ভার্সিটিতে এসে একটু দূরেই রিফা, কেয়া, শাকিল,শুভ কে কিছু নিয়ে গবেষণা করতে দেখে এগিয়ে যায়।
রিফারা নিজেদের কথায় এতোই ব্যস্ত ছিল যে অনু মে তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথা শুনে নিয়েছে তা কিছুতেই বুঝতে পারেনি।
ওদের এই সব কথা শুনে অনুর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।এরা আবার ও তার বিশ্বাস নিয়ে খেললো? আবার ও প্রতারনা করার জন্য তৈরি হচ্ছিল ? এতো নিচু মনের মানুষ এরা?
ওহ শিট। তোদের কে বলে ছিলাম ও একটু সাবধানে এই সব নিয়ে কথা বলার জন্য। এখন গেলো তো সব।(কেয়া)
তীরে এসে তরী ডুবে গেলো।(শুভ)
ইসস কত্ত কষ্ট করে রিশাদ কে ইমপ্রেস করে ওকে অনুর কাছে পাঠিয়ে এতো সুন্দর অভিনয় করে ব্যা ব্যা করে কান্না করে অনুর সাথে সব ঠিক করে নিয়েছিলাম আর আমাদের অল্প একটু ভুলের জন্য সব শেষ। আফসোসের স্বরে বললো রিফা।
ভূতের মতো কখন যে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারিনি।যা এবার সারা জীবনের জন্য ওর কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম।(শাকিল)
.
ভার্সিটির ফর্মালেটি শেষ করে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ালো।অনু এখন ও বিশ্বাস করতে পারছে না মানুষ ঠিক কতটা জঘন্য হতে পারে। স্বার্থের জন্য মানুষ কত কিছুই না করতে পারে।
অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আসলেই কথা সত্যি যারা এক বার বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদেরকে দ্বিতীয় বার আর বিশ্বাস করা উচিত নয়।মে এক বার বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সে বার বার বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারে।
.
দেখতে দেখতে অনুর পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়। পরিক্ষার সময় অনু মন দিয়ে দিন রাত এক করে পড়াশোনা করেছে। পরিক্ষার বেশির ভাগ প্রশ্নই অনুর কমন পরে।যে সব প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের টপ স্টুডেন্টরা পারেনি সেই সব প্রশ্নের উত্তর অনু খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছে।
পরিক্ষার সময় একাই ছিল অনু।কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। কেউ কথা বলার জন্য আসলেই তাঁকে ইগনোর করেছে সে।কাউ কে বিশ্বাস করতে এখন অনুর ভীষণ ভয় হয়। মানুষ গুলোর সুন্দর মুখের, মিষ্টি কথার আড়ালে যে এতো কুৎসিত চেহারা থাকে বুঝাই যায় না।কারো সাথে কথা বলতেই এখন অনুর বিরক্ত লাগে।
.
তূর্যর আম্মু তূর্যর জন্য পাত্রী পছন্দ করে ফেলেছেন এই কয়েক দিনে। বিয়েটা সামনের মাসেই করাতে চান তিনি। তূর্যকে বিয়ের কথা বলতেই তূর্য রেগে যায়।
“আমি এখন বিয়ে করবো না মা।”
“আরে তুই কী আর ও বুড়ো হয়ে গেলে বিয়ে করবি ?”
“আমি কী এখনই বুড়ো হয়ে যাবো নাকি?”
“দিন দিন তো বুড়াই হইতেছোস। জোয়ান হচ্ছিস তো না?”
“মা এই ভাবে অপমান করার কোনো মানে আছে?”
“তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি আমি।আর কিচ্ছু শুনতে চাই না। সামনের সপ্তাহে বাড়িতে আসবি।মেয়ে দেখে যাবি।মেয়ে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। তোর পছন্দ হবে।”
বলছিলাম কি মা বিয়েটা আর কিছু দিন পর করলে হয় না?
না হয় না। জোয়ান থাকতে থাকতে বিয়ের পিঁড়িতে বস।বুড়া হয়ে গেলে কেউ তোর কাছে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিবে না।মা তোর জন্য কত ভাবি। আমার মত মা তুই কোথায় পাবি বলতো? অন্যদের মা ছেলের বিয়ের বয়স হয়ে গেলে ও সে দিকে পাত্তা দেয় না।ছেলে বললে বিয়ের কথা মা জুতা দিয়ে পিটায়।আর আমি তোর মা হয়ে বিয়ে দিতে চাচ্ছি তার কী একটু ও মূল্য নেই?
আল্লাহ আমাকে যে তোমার মত একটা মা দিয়েছে এর জন্য আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। তুমি কোটিতে এক পিস।
রাখছি?
এই রাখছি মানে তুই মেয়ের ছবি দেখবি না?
না দেখুম না। তোমার ছেলের বউরে তুমি দেখো। আমার কাজ আছে। ভালো থাকো রাখছি।
তূর্য কল কেটে মোবাইলটা বিছানার উপর রেখে কপালে এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।রাত এখন প্রায় দশটা বাজে।
বিয়ে করতে আপত্তি নেই তার। কিন্তু মানুষটা সঠিক হওয়া চাই। একজন মন ভাঙ্গা মানুষ চাই তার। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে হবে। দেখতে হবে মা কার সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে।
.
অনুর কাল সকালে খাগড়াছড়ির বাস আছে। ঘুম আসছে না।ঢাকা ছেড়ে যেতে একটু কষ্টই হচ্ছে তার। কতো সৃত্মি আছে এই শহরের আনাচে কানাচে।কত মায়া এই শহরকে ঘিরে। এই শহরেই তো তাকে মানুষ চিনতে শিখিয়েছে।
অনু মেসের ছাদের এক কোনায় এসি দাঁড়ালো। রাতের এই শহরটা এখন ও কত ব্যস্ত। যানবাহনের হর্নের আওয়াজে চার পাশ মুখরিত।
আগামীকাল সকালে বাড়িতে ফিরে যাবে।বাবা মায়ের কাছে।এই মানুষ গুলো ছাড়া পৃথিবীর কেউ আপন হয় না।
অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ ও আকাশে একটা থালার মত চাঁদ দেখা যাচ্ছে। হাজার তাঁরায় আকাশটা জ্বল জ্বল করছে।
অনু মুচকি হেসে আবার নিচের ব্যস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে বললো ধন্যবাদ প্রিয় শহর। আমাকে মানুষ চেনা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য। তোমার মত একটা শহরে না আসলে বুঝতেই পারতাম না মানুষ স্বার্থের জন্য কত কিছুই না করতে পারে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে মানুষ কি ভাবে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারে।কারো ইমোশনাল নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ কত সুন্দর করে ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে।
এতো কিছু শিখিয়ে,জানিয়ে ,চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় শহর। না জানি আমার মত এই শহরের আনাচে কানাচে আর ও কতো মানুষের মন ভেঙ্গে আছে। কেউ বুঝতে পারেনা তাদের ঠিক আমার মতো। বাড়িতে চলে গেলে তোমাকে অনেক বেশি মিস করবো। তোমার মাঝেই যে একজন ভুল মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।ভালোবেসে ছিলাম সেই ভুল মানুষটিকে।এই শহর যে তার। আমি যে তার শহরের মায়ায় আটকে গেছি।তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা আমি করিনি।যত তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো ততই তার কথা আমার বেশি মনে পড়ে।
তাইতো নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি।কত শত কাজ মে খুঁজে বের করি না থাকলে ও । শুধু তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য। হয়তো ভুলতে পারবো না।কারন সে যে আমার প্রথম ভালোবাসা।এত সহজে তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রথম ভালোবাসা সব সময় ভুল মানুষের সাথেই হয়। খুব কম মানুষের ভাগ্যে প্রথম ভালোবাসার মানুষটিই তার শেষ ভালোবাসা হয়ে সারা জীবন থেকে যায়।
এখান থেকে চলে গেলে খুব বেশি মনে পড়বে ।কত শত দিন ছিলাম তোর মাঝে। সকালে চলে যাবো। তোর মাঝে না ভুল মানুষে ভরে গেছে।একটু সাবধানে থাকিস। আর আমার মত মন ভাঙ্গা মানুষ গুলো কে হারতে দিস না।জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে ও মরে যাওয়ার মত করে ওদের বাঁচতে দিস না। ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করিস। কিছু বেইমান মানুষের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।
.
.
.
সকালে
নিজের সব কিছু রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আবার ও নিজের মেসের রুমে এসে চার দিকে এক বার চোখ বুলিয়ে নিলো।
এতো দিন এই ঘরে থেকে মায়া পরে গেছে। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।যেতে হবেই।এই ঘর, এই জায়গা, এই শহর সব কিছু ছেড়ে নিজের শহরে চলে যাবে। রেজাল্ট দিলে হয়তো এই শহরে আরেক বার আসা হবে কিন্তু এই ঘরে আসা হবে না। আমার এই ঘরে মায়া পড়ে গেছে আর কিছু মানুষের তো আমার মতো বেঁচে থাকা একটা মানুষের উপর মায়া পড়লো না।কত তফাৎ আমাদের মাঝে।
হয়তো এই ঘরের মালিক অন্য কেউ হবে। ঠিক মাহিরের মতো।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাস্তায় এসে রিক্সায় উঠে বসলো। স্টেশনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো।
চলবে,,, 🍁