তার শহরের মায়া ২ পর্ব-১৫

0
604

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৫
#Writer_Liza_moni

এনি,,
তূর্য এনির কেবিনে গিয়ে ওর বেডের পাশে বসে এনি কে ডাকলো।

এনি চোখ পিটপিট করে তূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এনির।এনির মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া।হাতে ব্যান্ডেজ।এনি কে এই অবস্থায় দেখে তূর্যর খুব খারাপ লাগছে। মেয়েটা কেন এত অবুঝ?রাত প্রায় ১১ টা বেজে ৩৭ মিনিট।

এনি তুমি কেন এমন পাগলামি করো বলো তো? তোমার আব্বু আম্মুর কথা একবার ও ভেবে দেখেছো? তুমি তাদের একমাত্র সন্তান। তোমাকে হারিয়ে ফেললে ওনারা কি নিয়ে থাকবে বলো? তুমি তো যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে।

আমার তোমাকে চাই তূর্য।আর কিচ্ছু চাইনা। তুমি কেন আমাকে পছন্দ করো না? কেন আমাকে একটু ও ভালোবাসো না?কী করলে আমাকে তুমি ভালোবাসবে বলো না।

তুমি ছোট নও এনি। আচ্ছা বাদ দাও।আর কখনো এমন কাজ করবে না। কথা দাও,

তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমি এমন কাজ করবো।আরো হাজার বার করবো।

তূর্যর রাগ উঠছে এনির কথায়। কিন্তু নিজেকে এখন শান্ত রাখতে হবে। তূর্য গাল ফুলিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর মুচকি হেসে এনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
আগে তুমি সুস্থ হয়ে নাও। তার পর আমরা এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলবো।

কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন এনির মা। ছোট থেকে তার পছন্দের সব কিছু পেয়ে গেছে এনি।বড্ড জেদি হয়েছে মেয়েটা। কিছু কিছু সময় মা বাবার অতি আশকারায় ছেলে মেয়ে উচ্ছান্ন যায়। চাওয়া মাত্রই সব সময় সব কিছু দিতে নেই। তূর্য কী সুন্দর আমার মেয়েটাকে শান্তনা দিয়ে দিলো।
.
.
ভার্সিটিতে গিয়ে অনু রিফার পিঠে ঠাসস করে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,
যাবি আমার সাথে?

রিফা বুঝতে না পেরে বললো,
কোথায় যাবো?

মরতে।

আমার এত শখ নাই।এত তাড়াতাড়ি মরলে কেমনে হবে?

মৃত্যু আসলে আটকাতে পারবি না। এখন চল আমার সাথে।কেয়া কে ও ডেকে নে।

কেয়া ওর বয় ফ্রেন্ড এর সাথে আছে।নয়া নয়া প্রেম।

নয়া নয়া প্রেম কখন?পূরোনো না?

ঐ হলো একটা।আমার আর শাকিলের মতো তো আর পাঁচ বছরের প্রেম না।

আচ্ছা বাবা বাদ দে। এখন চল তো আমার সাথে।
অনু রিফার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।

কোথায় যাচ্ছি তা তো বল,

হসপিটালে।

রিফা বুকে থুতু দিয়ে বললো,
আল্লাহ বাঁচাও। আমি হসপিটালে যাবো না। হসপিটালের ভেতরে কেমন একটা গন্ধ আছে।যেটা নাকে গেলে আমি বমি করে ভাসিয়ে দিবো।

অনু একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে রিফার দিকে তাকিয়ে বললো,
একদম নাটক করবি না।মাক্স পরে নে।
.
.
হসপিটালে ডাক্তারের সামনে হাতে রিপোর্ট নিয়ে বসে আছে অনু। একটু আগেই ডাক্তার স্পষ্ট করে বললেন অনুর রক্ত শুন্যতা আছে।

শুনুন এত ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।
আপনি যদি চান বা আপনার পরিবার যদি চায় তাহলে আমরা আপনাকে রক্ত নিতে সাহায্য করতে পারি। আপনার উচিত এই মাসেই এক ব্যাগ রক্ত নেওয়া।কারন আপনার শরীরে রক্তের পয়েন্ট কম।আই থিংক আপনি ঠিক মতো খাবার খান না।ফলের আশে পাশে ও যান না?না হলে এত চিকন মানুষ হয়?

ডাক্তারের কথা শুনে অনু মনে মনে বললো,
শালার ভূড়িয়ালা টাকলা ডাক্তার ও মজা নিলো?আজ চিকন বলে ইসস।

কিন্তু ডাক্তার আমাদের ফ্যামেলিতে o+ রক্ত কারো কাছে নেই। মানে আমার সাথে কারো রক্ত মিলে না।

এই বিষয়ে নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আপনি রেট কিসেন সোসাইটি তে যোগা যোগ করতে পারেন।তারা সাধারণ মানুষকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করেন।

Thank you doctor uncle। আমি আমার আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো।

হ্যাঁ অবশ্যই। রিপোর্ট কার্ডে আমার নাম্বার আছে। আপনি কল করে কনফার্ম করে দিয়েন।যে আপনি রক্ত নিতে চান।আর হ্যাঁ রক্ত না পেলে ও আমাকে জানিয়ে দিবেন। আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো ভালো রক্ত যোগাড় করতে।

হ্যাঁ অবশ্যই। আসি আঙ্কেল। আসসালামুয়ালাইকুম।
অনু ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসার পর একটা নার্স ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন কে জিজ্ঞেস করলেন,
আচ্ছা স্যার,
আপনি মেয়েটাকে এত সাহায্য করতে চাইছেন কেন? না মানে আমি যত টুকু দেখেছি আপনি কখনো কোনো রোগি কে এই ভাবে সাহায্য করতে চান নি। তাহলে?

ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ থেকে চশমাটা খুলে টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন,
একটু আগে যে মেয়েটা এসেছিল।ওর বয়সী আমার ও একটা মেয়ে ছিল। ভয়াবহ একটা বাস এক্সিডেন্টে আমার মেয়েটা মারা যায়।তাও রক্তের অভাবে। আমি তখন দেশে ছিলাম না।তাই আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি।
.
.
বেলা ১১টা। তূর্য এখন ও পরে পরে ঘুমাচ্ছে। গতকাল বেশ রাত করে বাড়ি ফেরায় তূর্যর উপর বোম হয়ে আছে তূর্যর মা।ছোট থেকেই ছেলে মেয়েদের যেমন আদর করেছেন ঠিক তেমন শাসন ও করেছেন। রাত প্রায় আড়াইটা বাজে তূর্য বাড়ি ফিরে।এত রাত সে করতে চায়নি। কিন্তু এনির কান্না কাটি করে তূর্য কে আসতেই দিতে চায় নি।আর তার জন্যই বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেছে।

রান্না ঘর থেকে তূর্যর মা চেঁচিয়ে যাচ্ছেন,
নবাবের ছেলে আমার।রাত করে বাড়ি ফিরবে আর সারাদিন বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাবে। কাজ কর্ম তো কিচ্ছু নাই।সারা দিন টই টই করে ঘুরে বেড়াবে আর বাপ ভাইয়ের হোটেলে বসে গিলবে।নবাব পুত্র আসছেন আমার বাড়িতে।

মায়ের বক বক শুনে ঘুম ভাঙ্গে তূর্যর। মিনিট দুয়েক চুপ করে শুয়ে রইলো সে।আর চিন্তা করতে লাগলো মা এত ফায়ার হয়ে আছে কেন?

তূর্য ব্যাপারটা বুঝার জন্য জোরে জোরে কয়েক বার জুঁই কে ডাকতে লাগল।
জুঁই ফুল,ঐ জুঁই ফুল।

তূর্যর গলার স্বর শোনার জন্যই যেন ওত পেতে বসে ছিলেন তূর্যর মা।যেই তিনি তূর্যর গলার স্বর শুনতে পেয়েছেন তখনই শুরু হয়ে গেল তার একশেন।খুন্তি হাতে তেড়ে আসেন তূর্যর রুমের দিকে।

রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ বন্ধ করেই তূর্য বলতে লাগলো,
জুঁই ফুল মা এত ফায়ার হয়ে আছে কেন? এমন করে চিল্লাচ্ছে যেন আমার কানের সাথে সাথে এখনি সব কিছুর কান বয়রা হয়ে যাবে।

তূর্যর মা ফ্যান অফ করে দিলেন। তূর্য বিরক্তিকর শব্দ করে বললো জুঁই এর বাচ্চা ফ্যান কেন অফ করলি?

তূর্যর মা নিচু গলায় বললো,
নবাব জাদা আপনার মতো কি আমার মেয়ে কাজ কাম বাদ দিয়ে আপনার হুকুম শোনার জন্য বসে আছে?

তূর্য দরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে দুই হাত দিয়ে চোখ ডলে মায়ের দিকে তাকালো। মায়ের হাতে খুন্তি দেখে তূর্য বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে কোনায় চলে গেল।

আরেএএ আম্মু,
আমি না এখন বড় হয়ে গেছি? তুমি আমাকে মারার জন্য খুন্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো?এত পাষান আমার মা জননী?
এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।

কয়টা বাজে দেখেছিস?এত রাত করে বাড়ি ফেরার অনুমতি কে দিয়েছে তোকে? সারা রাত কই ছিলি তুই? আমার চিন্তা হয় না?

তূর্য কয়েক পা এগিয়ে আসতেই তূর্যর মা খুন্তি উঁচু করে ধরলেন। তূর্য পিছিয়ে গিয়ে বললো,
ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। তোমার কাছে যে আমি এখন ও বাচ্চা ছেলে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
আসলে ব্যাপারটা হলো তোমাদের কে ঐ দিন একটা মেয়ের কথা বলছিলাম না ঐ মেয়েটা আমার জন্য সুইসাইড করতে গেছিলো।করছিলো ও। হাতের রগ কেটে কী একটা অবস্থা।মরতে মরতে বেঁচে গেছে।ঐ মেয়ের জন্যই তো এত রাত হলো।

কী সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা। কলিজা কত বড়। সুইসাইড করতে গেছিলো।মা গো মা। আমাকে মেয়েটার সাথে দেখা করাইস তো।

তূর্য মায়ের কাছে এসে মায়ের পাশে বসে বললো,
কেন? তুমি কি করবা?

ওই মেয়েরে একটু দেখমু।

তূর্য বা হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো কে এলোমেলো করে দিয়ে বিড়বিড় করে বললো কেনো যে বলতে গেলাম? এখন যদি এনির অভিনয়ে মা গলে যায়। তাহলে কি হবে?যে করেই হোক মাকে এনির সাথে দেখা করাবো না। উটকো সব ঝামেলা আমার কপালেই লেখা থাকে কেন বুঝি না।

চলবে,,,, 🍁