তার শহরের মায়া ২ পর্ব-৩২

0
680

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৩২
#Writer_Liza_moni

আপনি আমার কথা একদম শুনেন না। আমি না বলেছি আমার সাথে দেখা না করতে?

আমি এত ভদ্র প্রেমিক নই।আপনি বললেই যে আমি শুনবো,সেটা আপনি কি করে ভাবেন?

বেলকনি থেকে অনু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা তূর্যর দিকে।
তুর্য মুচকি হেসে বললো,

এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই আপনার সাথে দেখা করার লোভটা সামলাতে পারলাম না। এতে কি আমার অন্যায় হয়ে গেছে মহারানী?

না আপনার কিছুই হয়নি যা হয়েছে সব আমারই হয়েছে। বিড় বিড় করে বলে অনু রুমে চলে গেল।

তূর্য যা চেয়েছিল তা পেয়ে গেছে।তাই সে বাইক স্টার্ট দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেল।হাতে অল্প কয়দিন সময় আছে বন্ধুদের দেওয়ার মতন। এর পরে চাকরিতে জয়েন করলে আর আড্ডা দেওয়া হবে না।তাই এই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে বন্ধুদেরকে সময় দিচ্ছে।

অনু আপাতত এখন অন্য সব চিন্তা মাথায় আনছে না। তার মন ধ্যান জ্ঞান সবকিছুই এখন পড়াশোনা কে ঘিরে। এক্সাম এ ভালো করতে হবে। নিজেকে ভালো করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।এটাই তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। মন যদি এখন অন্য দিকে চলে যায় তাহলে আর পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যাবে।না।তুর্য কে ভালো লাগে তাই বলে আবেগকে এতটা প্রশ্রয় দেওয়া একদমই উচিত নয়।আবেগ কন্ট্রোল করতে শেখো জীবন সুন্দর হবে। জীবনে চলার পথে অনেক মানুষকে ভাল লাগতে পারে। তার মানে এই নয় যে তাদেরকে মনে করে নিজের স্বপ্নটা বিসর্জন দিবে। নিজের ইচ্ছে গুলো পূরণ করবে না।

জীবনটা আমার অন্যের নয়। অন্যরা পাড়েই সাজানো গোছানো জীবনটাকে এলোমেলো করে দিতে। তাই মানুষকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করতে নেই। সে যতই মহান হোক না কেন, যতই বিশ্বাসের যোগ্য হোক,দিন শেষে কিন্তু সেই বিশ্বাসের মানুষটাই বেইমানি করে।

সব ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেই। ভালোবাসা বেশি প্রকাশ করে ফেললে তো সস্তা হয়ে যায়।তাই তূর্য কে না হয় আমি মনে মনে ভালোবাসলাম। প্রকাশ করলাম না।এতে তো আর আমার ভালোবাসা কমে যাবে না বরং বাড়বে।
.
.
দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে। সময় তো নিজের গতিতেই চলে।সে তো আর কারো জন্য অপেক্ষা করে না যেমনটা মানুষ অপেক্ষা করে অন্য এক মানুষের জন্য। কিন্তু সময়ের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা একদমই যায় না। সময় দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করে না। তার কাছে অপেক্ষা জিনিসটা একদমই অপছন্দের।

প্রত্যেকটা এক্সাম খুব ভালোভাবেই দেয় অনূ।এ কয়েকদিন তুর্য আড়াল থেকেই তাকে দেখেছে।একটু আকটু বায়না হয়তো করতো দেখা করার জন্য। কিন্তু অনু কখনও তা হতে দেয়নি। তূর্যর বায়না গুলোকে অসমাপ্তই রেখেছে। কেননা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু বায়না অসমাপ্ত থাকাটাই বেটার। এতে হয়তো দুইজনের ভালো থাকাটাই নির্ভর করে।

তিয়াসের অফিসে জয়েন করেছে তূর্য।আর কয়দিনই বা বেকার থাকা যায়?অনুকে তো এবার বিয়ে করতে হবে তাই না?

রাত প্রায় দশটা হবে ব্যালকনিতে বসে আছে তূর্য। একা একা বসে থাকতে খুবই বিরক্ত লাগছিল তার। মাথায় শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে অনুকে কল করলো।অনু তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরীক্ষা শেষ এখন তো বাড়ি ফিরতে হবে। পরশুদিন খাগড়াছড়ির পথে রওনা দিবে অনু। তূর্য সেই ব্যাপারটা জানে না।অনু যায়নি তাকে।তূর্যর ফোন পেয়ে খুশি হয় অনু।
এতক্ষণ খুব মিস করতেছিলাম যাই হোক, নিজে থেকেই কল করছে।আমাকে আর কল করতে হয়নি খুবই ভালো মানুষ।আমাকে কত্ত বুঝে।

একা একা বোর লাগছিল তাই ভাবলাম আপনাকে একটু বিরক্ত করি।
আচ্ছা আপনি আমাকে কী পেয়েছেন বলেন তো?

আপনি তো আমার ভবিষ্যৎ বউ লাগেন।
হ্যাঁ বিয়ে না করেই আপনি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন। একদিন দেখবেন আমি আপনার ঘুমের মধ্যে পানি ঢেলে দিব।তখন আপনার ঘুমটাও ভেঙ্গে যাবে সাথে আপনার স্বপ্নটাও।

নানা এমন কইরেন না আমি তো চাই সারা জীবন এই স্বপ্নটা দেখতে কিন্তু এতে তো আপনাকে দরকার আমার। থাকবেন আমার সাথে সারাজীবন?

মাঝে মাঝে তূর্যর কিছু কথা বুকের বা পাশের হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়। কি থেকে কি উত্তর দিবে তা ভেবে পায় না অনু।

অনুর কোনো সাড়া না পেয়ে তুর্য আবার বলে উঠলো, কি হলো কিছু বলছেন না যে?
অনুর সোজা সাপ্টা উত্তর,
কি বলবো?
আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দিন।
সব কথা কি মুখে বলতে হবে?আপনি বুঝেন না? কিছু কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।
ও আচ্ছা বুঝছি আপনি লজ্জা পাচ্ছেন।
আজব,লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

তাহলে বলে দিলেই তো পারেন যে আমার সাথে কি সারাজীবন কাটাতে চান?
অনু নিচু কন্ঠে বললো,হ্যাঁ চাই।
দিয়ে দিলাম উত্তর রাখছি।
এই শুনেন,

এত সময় নেই।ঘুম পাচ্ছে রাখছি।
তূর্য শান্ত গলায় বললো মেঘ পাখি ভালোবাসি ♥️
তুর্যর বলা কথাটা অনুর ভেতরে বাহিরে কাঁপিয়ে তুললো। বুকের বা পাশে হার্ট বিট করতে করতে বের হয়ে আসবে যেন। এত মধুর শুনালো কেন কথাটা? ডান হাত দিয়ে বুকের বা পাশে চেপে ধরে অনু। অন্যরকম একটা ভয় ভালোলাগার সংমিশ্রণ।অনু চট করে কলটা কেটে দিলো।অনুর এহেন কান্ডে অপর প্রান্তে হেসে ফেললো তূর্য।
.
তুর্য দের বাড়িতে আজ বিয়ের আমেজ। তিয়াস
আর জেমির বিয়ে।তূর্য সেই ভোর পাঁচটার দিকে রওনা দিয়েছে খাগড়াছড়ি এর উদ্দেশ্যে। অনু ঢাকা থেকে চলে গিয়েছে খাগড়াছড়ি। ওকে ছাড়া বিয়েতে পার্টিসিপেট করতে ইচ্ছুক নয় তূর্য।মেয়েটা একবার বলেও যায়নি।দেখা ও করেনি। বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিয়ে ব্যাস্ত ছিল তূর্য।তাই দেখা করতে পারেনি।অনু শুধু এক বার কল করে বলে ছিল দেখা করতে। বিয়ের কেনাকাটা করার ফলে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় সেদিন দেখা করতে পারেনি তূর্য।কে জানতো যে মেয়েটা এইভাবে হুট করে তাকে না বলেই চলে যাবে? রিয়ানার থেকে খবর নিয়ে অনুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে।অভিমান জমেছে তার মনে। একটাবার বললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?এত ভালোবাসি বলেই কী এত অবহেলা করে?

জুঁই তূর্য কে দেখেছিস? সকাল থেকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।ওর রুমে ও তো নেই।

আমি ও তো খুঁজছিলাম ওরে। কিন্তু পাইনি কোথাও।

এত সকালে ছেলে টা গেলো কোথায়?

আম্মু ভাইয়া কে ফোন করে জিজ্ঞেস করো কোথায় গেছে। মিসেস তৃনা জুঁই এর কথা মতো তূর্য কে কল করলো। বাড়িতে আত্নীয় স্বজনের ভিড়। ছোট ছোট বাচ্চারা এই দিকে ঐ দিকে ছোটাছুটি করছে।

আজ তিয়াস এর গায়ে হলুদ আর তুই কোথায়?
আম্মু ভাইয়ার তো রাতে হলুদের অনুষ্ঠান হবে তাইনা?

হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?তোর কি কোনো দায়িত্ব নেই? তোর বাবা আমি একা হাতে কতটুকু সামলাবো?

এমন করে বলছো যেনো বিয়ের সব ডেকোরেশন তুমি আর আব্বু করছো।যাই হোক,
আমি সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবো।

কোথায় তুই?সেটা তো বল।এত সকালে উঠে কোথায় গেছিস?
আমি অনুকে আনতে যাচ্ছি।
অনুকে আনতে যাচ্ছি মানে।অনু কোথায়?
খাগড়াছড়িতে।
কখন গেল ওখানে?
আরো 2 দিন আগে।
আর তুই আজ আনতে যাচ্ছিস?যেতে বারন করতে পারলি না?
আমাকে জানায়নি বিচ্ছু মেয়েটা। আমি জানলে তো যেতে দিতাম না।
আচ্ছা সাবধানে যা।রাখছি।
.
অনুর অভীমান হয়েছে তূর্যর উপর।সে নিজ থেকে বলে ছিল একটা বার যেন তার সাথে দেখা করে। কিন্তু তূর্য এত ব্যস্ততা দেখালো যে পাঁচ মিনিট এর জন্য ও দেখা করলো না।

রান্না ঘরে কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে রান্না করতে ব্যস্ত মিসেস আফরোজা।অনু মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মাকে দেখলেই কেন জানি একটা দীর্ঘশ্বাস চলে আসে।

আজ অনুদের বাড়িতে মাহিরের পরিবার কে নিমন্ত্রণ করছেন মিসেস আফরোজা।
মাহিরের বউকে দেখার জন্য এই কুবু্দ্ধি টা মিসেস আফরোজা কে দিয়েছে অনু। মাহিরদের বাড়িতে যাওয়ার একদমই ইচ্ছা নেই।

অনুর কথা শুনে সকাল থেকে একটার পর একটা রান্না করেই যাচ্ছেন মিসেস আফরোজা।আর অনু কে বকে যাচ্ছেন।

অনু সোফায় বসে টিভি দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে। মিসেস আফরোজা রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,
নবাবের মেয়ে,
সোফার উপর পা তুলে বসে চকলেট না খেয়ে আমাকে তো একটু সাহায্য করতে পারিস।

চলবে,,,