তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-১২

0
109

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
SuMon Al-Farabi
#১২তম_পর্ব
দরজা খুলে যখন ভিতরে গেলাম তখন মেয়েটি রুমের এক কোনায় চুপসে বসে আছে।
– কি হয়েছে!
– এখানে কিছু একটা ছিলো। আমি দেখেছি।
– কিন্তু এখানে তো কিছুই নেই।
– আমি দেখেছি বললাম তো।
গত দিনের মতো আজকেও ভাবী মেয়েটিকে নিয়ে তাদের রুমে গেলো এবং স্যার কে ঐ রুমে থাকতে বললো। আমিও ধীরে ধীরে রুমে চলে আসলাম। কিছুটা সময় পর স্যার আমার রুমে আসলো।
– আপনি এখনো ঘুমান নি!
– ঐ রুমটায় কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে।
স্যারের মনেও ভুতের ভয় চলে আসছে। সেটা স্যারের কথা বলার ধরন দেখেই বুঝতে পারলাম।
– তুমি যদি কিছু মনে না করো তবে তোমার এখানে আমি আজ ঘুমাই?
– কিছু মনে করার কি আছে! আপনি শুয়ে পড়ুন।

স্যার শুয়ে পড়ার কিছুটা সময় পর হঠাৎই স্যার বললো- মেয়েটি যদি আসলেই এইসব কাজের সাথে জড়িয়ে থাকে তবে তাকে এমন শাস্তি দিবো যাতে করে ওর ভাইয়ের উচিত শিক্ষা হয়।
– শাস্তি তো মেয়েটা পাবে। তো রাইয়ানের এতে কিভাবে শিক্ষা হবে!
– ছেলেরা বোনকে অনেক ভালোবাসে। ও তুমি বুঝবে না ঘুমাও।

কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম সেটা ঠিক বুঝতে পারিনি। তবে যখন চোখ খুললাম তখন বাসায় বেশ কিছু মানুষের কথর শব্দ শুনতে পেলাম। উঠতে যাবো তখন কেউ একজন আমায় ধরে বললো- সাবধানে উঠুন। আপনি বার বার ভুলে যান কেন যে আপনি অসুস্থ।
ঠিকমতো খেয়াল করলাম। এটা রুহী।
– আপনি আমার রুমে কি করছেন!
– আপনার রুমে রাসফিকে ডাকতে এসেছিলাম। সেই সময় দুজন লোক আসে। তখন ভাইয়া এসে বলে গেলো এখানে থেকে বের হওয়ার দরকার নেই। তাই তখন থেকে এখানেই বসে আছি।
– আমায় ডাকতে পারতেন।
– আপনি ঘুমাচ্ছেন জন্য ডাকি নি। তবে ঘুমের মাঝে আপনাকে একদম নিষ্পাপ শিশুর মতোই দেখয়।
কথার মোড় ঘুরিয়ে দিতে বললাম- লোকগুলো কখন আসছে!
– কিছুক্ষণ আগে।
আমার বুঝতে বাকী রইলো না কে আসছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে একজন পুলিশ অফিসার হয়েও যে নিজের বোনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে বসবাস করে এই জানো*য়ার গুলোর সমাজে। যেখানে সমাজের ধর্তাকর্তা তারাই।
– আমি বাইরে যাচ্ছি। আপনি এখানেই বসে থাকুন।

রাইয়ান আর ওর বন্ধু এসেছে। রাইয়ান ওর বোনের সাথে কথা বলছে কিন্তু ওর বোন কিছুই বলছে না। মনে হচ্ছে মুখে তালা এটে দিয়েছে।

বেশ কিছুটা সময় চেষ্টা করার পর ও যখন ওর মুখ থেকে কিছু বের করতে পারলো না তখন রাগ করে স্যার কে বললো- এর সাথে যা করার করেন। জেল দিন ফাসি দিন যা ইচ্ছে শাস্তি দিন আমি আর কিছু বলতে আসবো না।
মেয়েটা এখনো শুধুই কেঁদে যাচ্ছে। রাইয়ান চলে গেলো।
ওদের চলে যাওয়া শব্দ শুনে রুহীও রুম থেকে বের হয়ে মেয়েটির কাছে গিয়ে বসে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
– সুমন,
– হ্যাঁ স্যার।
– তুমি কি বের হবে আজ?
– কোথায়!
– তোমার বের হওয়ার দরকার নেই। তুমি বাসায় থাকো এবং এই মেয়েকে চোখে চোখে রাখবে আমি থানায় যাচ্ছি।
– ঠিক আছে স্যার।

রুহী মেয়েটা কে নিয়ে রুমে চলে গেলো। এদিকে আমিও ফ্রেশ হয়ে খাওয়া করলাম।
ভাবী রাসফিকে নিয়ে স্কুলে গেছে। তাই এই প্রথম ভাবীর রুমে ঢুকলাম। বিছানায় বসে দুজনেই।
– আপনি একটু আমার সাথে আসুন।
আমি ডাকতেই উঠে চলে আসলো। মেয়েটিকে নিয়ে আমার রুমটায় আসলাম।
– আপনার নাম কি!
-লুবা।
– হাসনাহেনাকে চিনেন!
– মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
– কিভাবে চিনেন!
এখন আবার চুপচাপ।
– আমি জানি আপনি আপনার ভাই এবং স্যার কে ভয় পেয়ে কোনো কথা বলেন নি। কিন্তু আমায় ভয় পেতে হবে না। আপনি প্লিজ বলুন। তাহলে আপনাকে আর এভাবে থাকতে হবে না। হাসনাহেনা কি আপনার বান্ধবী ছিলো!
– না। এর আগে মিঞা বাড়ি নিয়ে এলাকায় অনেক আলোচনা হয়েছে সেই থেকে চিনি।
দরজায় ঠকঠক শব্দ ।
– ভিতরে আসুন।
রুহী চায়ের কাপ হাতে ভিতরে আসলো।
– এসব কেন!
– চা খেতে খেতে গল্প করলে ভালো লাগবে। তাই নিয়ে আসলাম।
– আমরা গল্প করছি না। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছি।
– তবুও চা তো খারাপ কিছু না।
– ওহ আচ্ছা। আপনি কাল ঐ বাসায় গিয়েছিলেন কেন! ( লুবা কে বললাম)
লুবা চুপচাপ হয়ে শুধু রুহীর দিকে তাকাচ্ছিলো।
– আপনি তো চা দিলেন। এখন রুমে যান।
– রুমে ভয় লাগছে আমার। বাসায় তো আর কেউ নেই।
লুবার দিকে তাকিয়ে বললাম – উনি অনেক ভালো মেয়ে সমস্যা নেই আপনি বলুন।
– ঐ লোকটার কাছো আমার একটা ভিডিও ছিলো।
– মানে!
– মানে ঐ লোকটার ফোনে আমার একটা বাজে ভিডিও ছিলো। যখন জানতে পারি ঐ বাড়িতে মা*রা গেছে তখন আমি মোবাইল খুঁজতে সেখানে গিয়েছিলাম। যাতে ভিডিও টা ডিলিট করতে পারি। নয়তো ভিডিও টা পাবলিক হলে আমার মান সম্মান কিছু থাকতো না।
– লোকটা মাঝ বয়সী। উনার সাথে আপনার তেমন কোনো সম্পর্ক থাকার তো কথা না। তবে কিভাবে!
– ঐ লোকের ডিসপেনসারিতে একজন গায়নী বিশেষজ্ঞ কিছুদিন রুগী দেখেছিলো। সেখানে আমি ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সেখানের ওয়াশরুম ব্যবহার করি। সেখানে থেকে কিভাবে যেন আমার বাজে ভিডিও ধারণ করে। এরপর আমি রাজশাহী চলে যাই কিন্তু ফিরে আসার পর উনি আমার সাথে যোগাযোগ করে আমায় ব্লাকমেইল করে।
– কিন্তু আমি তো শুনেছিলাম উনি অনেক ভালো একজন মানুষ।
– মুখোশ তো সবাই পড়তে যানে। আমি অনেক দিন উনাকে টাকা দিয়েছি।
– বাসায় জানাতে পারতেন।
– জানালে ভিডিও পাবলিক করবে বলে।
– এরপর!
– এরপর তো গত রাতে সেখানে গিয়ে তারপর থেকে এখানেই। তবে আমি জানতাম না সেখানে পুলিশ পাহাড়ায় ছিলো।
– এখন বুঝতে পারলাম সেদিনের লা*শের কাছে চিরকুটটা আসলে কি কারণে ছিলো।
– কিসের চিরকুট!
– তেমন কিছু না। আপনি আপনার ভাইয়ার সাথে কথা বললেন না কেন!
– ভাইয়া জানলে খুব মারবে আমায় বলি নি জন্য।
-কেন মারবে! উনি অন্য ঘরের মেয়ের সাথে এর থেকেই জঘন্য কাজ করেছেন সেখানে উনার ঘরের মেয়ের সাথে এমনটা হওয়া তো স্বাভাবিক বিষয়।

রুহী হা করে তাকিয়ে আমাদের কথা শুনছে। রুহীর দিকে তাকিয়ে বললাম – নিজেকে একটু সাবধানে রাখবেন, কোথায় যাচ্ছেন, কি করছেন সব কিছুতেই খুব গভীর খেয়ল রাখবেন। নিজেই নিজের শাসক হবেন। নয়তো সমাজ কিন্তু আপনাদের মেয়েদেরকে বাঁচতে দিবে না। নারী সম্মান শুধু বই আর হাদিসেই মানায় মানুষ এখন বই পড়ে সার্টিফিকেট এর জন্য শেখার জন্য নয়। আর হাদিস সে কথা বাদেই দিলাম। সাবধানে চলবেন সব সময়।
রুহী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।

এখন রাত।
আজকেও স্যার আমার পাশে শুইছে। লুবার সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা বললাম। স্যার শুধু চুপ করে শুনলো।
কিছুক্ষণ নিরবতা এরপর হঠাৎ স্যার বললো- সবগুলো হ*ত্যা একাই করছো নাকি সাথে অন্য কেউ ছিলো!
তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম। স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

To be continue….