#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#তীব্রস্রোত
#পর্ব ১১
.
.
সুপ্তি তার হাতে ব্য”থা নিয়ে দু-তিন দিন আর বাড়ি থেকে বের হলো না, সে বাসায়ই রইল, তার আম্মু তাকে কোনো কাজ করতেও দেয়নি এই কয়েক দিন। সুপ্তি সারাদিন বসে শুয়ে পড়াশোনা করেই কাটিয়ে দিয়েছে দিন গুলো। সুপ্তি একটু বোর ফিল করছিল, কারণ এই ২২/২৫ দিন তো অনেক হৈচৈ করেই কাটিয়েছে সে, বাট এখন একা একা ক্লাসেও যেতে পারছে না সে, তার আব্বু আম্মু তাকে রেস্ট নিতে বলেছে দুদিন তাই।
দু-তিন দিন পর থেকে সুপ্তি ভার্সিটিতে যেতে শুরু করে দিলো, তার হাতের ব্যা’ন্ডেজ টাও এখন আর নেই, সেদিন ডক্টর আঙ্কেল গিয়ে সুপ্তিকে দেখে আসলো আর খুলে দিয়ে আসলো সুপ্তির ব্যা”ন্ডেজ।
প্রায় ১০ দিন পড়ে একদিন সন্ধ্যায় সুপ্তি বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে ব্যস্ত সময় পার করছিল, এমন সময় হঠাৎ তার ফোনের কল রিং বেজে উঠল। সে ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখল তার মুঠো ফোনে তীব্র নামটা স্পষ্ট, সে ফোন রিসিভ করে বলে উঠল।
…..আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন বেয়াই?
…..ওয়ালাইকুম আসসালাম। বেয়াইন মোটেও ভালো নেই।
…..কেনো কী হয়েছে বেয়াই?
…..আজ কতটা দিন আপনি গিয়েছেন একটু ফোন দিয়েও তো জিজ্ঞেস করলেন না, আমি কেমন আছি?
…..ওহ এই কথা? বেয়াই আসলে আমি কাউকে ফোন দিয়ে ডি’স্টার্ব করতে পস্তুত নই। তাতে সে আমার দুলাভাই এর ভাই ই কেনো না হোক।
…..আমি তো আপনার আপন বেয়াই হই, আমার খোঁজটা নেওয়া কী উচিৎ নয়?
…..হ্যা বুঝতে পারছি তালতো ভাই হন এইতো।
…..হোয়াট? কী বললেন বেয়াইন? আমি আপনার ভাই কেনো হতে যাবো?
…..আরে আপনি তো আমার তালতো ভাই ই হন।
…..আমি কেনো আপনার ভাই হতে যাবো? আপনি তো আমার বেয়াইন হন।
……আরে আপনি তো দেখছি ক্ষে”পে যাচ্ছেন?
…..না ক্ষে”পে যাবো কেনো? কিন্তু আমি কেনো আপনার ভাই হতে যাবো এটাই বলছিলাম।
…..ওহ ভাই হবার ইচ্ছে নেই বলতে চাইছেন?
…..হ্যা যখন উপর ওয়ালাই বোন দেয়নি তবে আর ভাই হওয়ার ইচ্ছেও নেই।
….তাই, তবে তো এই সম্পর্কটা উপর ওয়ালাই বানিয়ে দিয়েছেন তালতো ভাই।
….. আবার? যান আপনার সাথে আর কথাই বলব না।
এই বলে তীব্র ফোনের কল কে’টে দিলো। আর সুপ্তি একা একাই হাসতে রইল।
.
তার দু-দিন পরে সকাল সকাল হটাৎ সুপ্তির ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো।
ম্যাসেজ।
আমার সাথে কী একটু দেখা করা যাবে?
তবে বিকেল ৫টায় এই ঠিকানায় …….. চলে আসবেন।
সুপ্তি দেখল ম্যাসেজটা স্রোতের ছিলো। সে বুঝতে পারছে না কেনো ডাকা হয়েছে তাকে?
সুপ্তি স্রোত কে কয়েক বার ফোন দিলো বাট স্রোত ফোন রিসিভ করল না। সুপ্তি বিকেল দিকে রুমের ভেতর পাইচারি করছিল, কী করবে সে এই ভেবে ক্লান্ত, বা তার আম্মু কেই বা কী বলে বের হবে? সুপ্তি অনেক ভাবল বাট তার ভাবনায় এমন কিছু এলো না তাই সে ফোন হাতে নিয়ে একটা ম্যাসেজ লিখে সেন্ড করে দিলো।
ম্যাসেজ
স্যরি বেয়াই আমি আসতে পারব না।
আম্মু কোনো ভাবেই এখন বের হবার পারমিশন দিবে না।
তাই আমার পক্ষ থেকে স্যরি আপনার কিছু বলার থাকলে ফোনেই বলেন।
এই ম্যাসেজ সেন্ড করে সুপ্তি নিজের বাকি কাজে মন দিলো।
রাত তখন ১টা বাজে সুপ্তি তখন নিজের বিছানায় ঘুমে বিভোর হয়ে ছিলো। এমন সময় হঠাৎ করেই সুপ্তির ফোনে এক সাথে কয়েকটা ম্যাসেজ চলে এলো, যার জন্য সুপ্তির ঘুম ভেঙে গেল, তখন ঘুম ঘুম চোখে সুপ্তি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল স্রোতের ম্যাসেজ এমনিতেই এত রাত, তার মধ্যে ঘুম ভাঙল, চট করেই সুপ্তির মাথা গরম হয়ে গেল। সুপ্তির ম্যাসেজ চেক করে আরও মাথা গরম হয়ে গেল।
ম্যাসেজ
তুমি কেনো এমন করলে?
তুমি জানো আমি তোমার সাথে
কথা বলব দেখে কত অপেক্ষায় ছিলাম।
এটা কিন্তু মোটেই তুমি ঠিক করো নি।
স্যরি আপনি কী বলছেন? কাকে বলছেন?
আপনি কী জেনে বুঝে বলছেন যা বলছেন?
হ্যা আমি জানি তুমি সুপ্তি,
আমি তোমাকেই বলছি।
তুমি জানো আজকের দিনের জন্য
আমি কতটা অপেক্ষা করে ছিলাম?
কত শত আয়োজন করেছিলাম?
বাট কেনো? কীসের জন্য?
আমি তোমাকে কিছু বলতে চাইছিলাম।
নিজের মনের কিছু কথা,
যা প্রকাশ করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে আমার জন্য।
কী এমন কথা যার জন্য এত রাতে আপনি আমার ঘুম ভাঙালেন?
তুমি ঘুম ভাঙানোর কথা বলছ?
আর আমি যে সেই কবে থেকে না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছি?
সেই খবর রেখেছ তুমি?
সেই খবর আমি কেনো রাখব?
তুমি না রাখলে কে রাখবে?
তোমার জন্যেই তো আমার ঘুম গুলো হারিয়ে গেছে।
তুমি জানো? বাসায় তোমার আর তীব্রর বিয়ের কথা চলছে?
হোয়াট? আপনি কী বললেন?
হ্যা আমি দু-দিন আগেই ভাইয়া আর ভাবীকে বলতে শুনেছি।
তোমার আর তীব্রর বিয়ের কথা।
দ্যাখো আমি কিছুই জানি না, আর জানতে ও চাইনা,
আমি শুধু তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই।
কী কথা?
কেনো তুমি বোঝো না কী বলতে চাই?
নাহ বুঝি না, আর বুঝতেও চাইছি না।
আপনার যা বলার সরাসরি বলেন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
তুমি সবই বুঝে না বোঝার ভান করে যাচ্ছ।
আপনার যদি কিছু বলার থাকে মাত্র ২ মিনিট আছে
আপনার কাছে এরপর আমি ফোন অফ করে ঘুমাব,
তাই যা বলার দুই মিনিটের ভেতর বলেন।
না হয় আমি ফোন অফ করছি।
এই নাহ নাহ আমি বলছি বলছি।
জ্বি বলেন?
আমি তোমার সাথে বাকিটা জীবন কা’টাতে চাই।
তোমাকে পাশে নিয়ে হাতে হাত রেখে বাকিটা পথ চলতে চাই।
আমি তোমাকে মন থেকে একটা কথা বলতে চাই
আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
আমার শুধু তোমাকে চাই।
সুপ্তি ম্যাসেজ চেক করে থ মে’রে গেল। এগুলো কী বলছে স্রোত? তার মাথা ঠিক আছে তো? নাকি সে’ন্স হারিয়ে গেছে। নাকি নে’শা করে মা’তাল হয়েছে? সুপ্তি এমন ম্যাসেজ দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ল। কী সব আবোলতাবোল বলে যাচ্ছে স্রোত? সুপ্তির মাথা ভ ভ করে ঘুরছে
আপনি কী নে’শা করেছেন?
নাকি মাথায় খুব জোরে লেগেছে কোনো ভাবে?
আমি পুরাই হুশে আছি।
যা বলছি অনেক ভেবে চিন্তেই বলছি।
হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আর আপনার ভাই তীব্র?
তা জানি না। তবে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
হুম বুঝতে পারছি আপনি হয়ত আমাকে ছাড়া বাঁ’চবেন না তাই তো?
হ্যা তাই সুপ্তি।
আপনি আমার নামটা নিবেন না।
কেমন জানি আপনার সাথে আমার নামটা বেমানান।
তবে একটা কথা বলি, আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
যদি আবারও শুনতে চান? তবে আবারও বলছি
আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
তুমি খুব স্বার্থপর একটা মেয়ে।
তাই? এতদিন তো খুব ভালো ছিলাম।
এখন না বলে দিতেই স্বার্থপর হয়ে গেলাম?
তোমার মন বলতেই কিছু নেই।
যদি থাকত তবে আমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারতে না?
ওহ আচ্ছা? কেনো কে আপনি?
যাকে ভালো না বেসে থাকা যাবে না?
তুমি এভাবে আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারো না?
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
বাট আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
কেনো?
তা বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
মানে? তুমি তীব্র কে ভালোবাসো তাইনা?
আমি তো আপনাকে কোনো নাম বলিনি?
না বললেও আমি বুঝতে পারছি।
তুমি তীব্র কেই ভালোবাসো।
তুমি চাইছ তীব্রর হতে।
একটু বেশিই বুঝে নিয়েছেন।
এত বেশি বোঝা ভালো না।
তবে কে সে?
তাকে জানতে হলে তীব্র আর আপনি কাল সন্ধ্যা ৭টায় আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন। প্রয়োজনে আপনি আপনার ভাবী কেও সাথে করে নিয়ে আসবেন। আমি অপেক্ষা করব আপনাদের জন্য। আর তখনই আমি সবার সামনে আপনাকে তার নাম বলে দেবো।
কিন্তু কে সে নামটা তো বলো?
কাল আসলেই সব জানতে পারবেন।
আর একটা কথা, আপনি আমাকে আপনি করেই বলবেন,
আমি দ্বিতীয় বার আপনার মুখে তুমি শব্দটা শুনতে চাইছি না।
খোদা হাফেজ।
এই বলে সুপ্তি ফোনের ডাটা অফ করে শুয়ে পড়ল। সুপ্তি তাকেই খোদা হাফেজ বলে, যার সাথে তার আর কথা বলার কোনো ইচ্ছে থাকে না, মানে তার কারো সাথে শেষ কথা হলো খোদা হাফেজ। সে কখনো ভাবেনি এমন কিছু হবে, তবে কাল সবাইকে সে নিজের মনের কথা বলবে। সে আর চুপ করে থাকবে না। তাইতো কাল স্রোত কে বাসায় ডাকলো সুপ্তি। তার মনে যা আছে তা কাল বলে দেবে সে সবাইকে। তার বাবা মায়ের কথা ভেবে আর চুপ করে থাকবে না সে। এবার মন খুলে কথা বলবে সে। তার আর এসব কথা ভালো লাগছে না।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সুপ্তির আর সারারাত ঘুম হলো না, খুব বিরক্তি লাগছে সুপ্তির, নিজের কাছেই খারাপ লাগছে তার, সে মন থেকে কাউকে কষ্ট দিতে চায়না, কিন্তু কেনো অন্যরা কষ্ট পাওয়ার জন্য তার কাছে চলে আসে? সে তো চায়নি স্রোত কে এভাবে কষ্ট দিতে? এখন তার তো তেমন কিছুই করার নেই, সে কারো ভালো থাকার জন্য, নিজের ভালো থাকা তো আর নষ্ট করে দিতে পারবে না। শুধু নিজের হলেও কথা ছিলো বাট এখানে সবার ভালো থাকা লুকিয়ে রয়েছে, সুপ্তি পারে না একজনের সুখের জন্য সবার আনন্দ নষ্ট করতে। তাই সে মন খারাপ করেই সারারাত কা’টিয়ে দিলো। কী করবে, কী না করবে ভাবতে ভাবতেই।
।
।
।
চলবে……..।