তুই আমার কাব্য পর্ব-১০

0
1912

#তুই_আমার_কাব্য 🍂

#Writer: Anha Ahmed
#Part: 10
.
🍁
.

মেঘলা হাত দিয়ে জামা খামছে ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণপর আশেপাশে আর কারো উপস্থিতি টের পেলো না। পেছন ঘুরে দেখে কেউ নেই। আশেপ্শে খুজেও কাউকে পেলো না। ফিরে আসছে তখনই সামনের টেবিলে একটা রঙিন কাগজ দেখতে পেলো। কাগজটা তুলে নিয়ে দেখলো বেশ সুন্দর করে লেখা,

– মিস ইউ মেঘবতী। কাল তোমায় অনেক মিস করেছি। এভাবে হঠাৎ করে ঘায়েব হয়ে যেয়ো না। বুকের বাম পাশটায় তিন ইঞ্চি ক্ষত করে রেখেছো। চোখ দুটো একদিন না দেখলে সোজা সেই ক্ষততে গিয়ে কড়া নাড়ে। বিশ্বাস কর মারা যাবো একদিন। আর চিঠিতে লিখে যাবো এই মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী। দায় নিতে পারবে তো?

মেঘলা চিঠিটা হাতে নিয়ে ড্যব ড্যব করে তাকিয়ে আছে। কে এ ছেলে? চেনা নেই জানা নেই এভাবে হুটহাট নিজের উপস্থিতি এমন ভাবে বুঝিয়ে দিয়ে যায় যে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দেয় শুধু হার্টবিট টা ছাড়া। ওটা ঠিক ওল্টোটা করে। সব থেকে তেজ কাজ করর তখন। মেঘলা খেয়াল করলো এখনো খুব দ্রুত হার্ট বিট করতেছে। বুকের ওপর হাত রেখে চেপে ধরেছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। মেঘলা যেনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখনই কই থেকে যেনো একটা রঙ্গিন ঘুড়ি এসে পড়ে। আচমকা এমন হওয়ায় মেঘলা একটু চমকিয়ে যায়। ঘুড়িটা মূলত জানালা দিয়ে এলো। এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু ঘুড়ি কোথা থেকে এলো তার উৎস পেলো না। ঘুড়িটা উল্টিয়ে দেখলো চিরকুট। চিরকুটা খুললো তাতে লেখা,

– ইস্! এতো জোড়ে কেউ হার্ট চেপে ধরে? যা হচ্ছে তা হতে দাও। আমার উপস্থিতি তোমার হার্ট জানিয়ে দিচ্ছে তাকে আটকানো তোমার বশে নেই আর। ওটা আমার যে। আমার যাদুর বশে। শুধু শুধু বেচেইন হয়ো না।

মেঘলা এবার আরো অস্থির হয়ে ওঠলো জানার জন্য যে কে এ? দৌড়ে বাহিরে গিয়ে লাইব্রেরির আশে পাশে খুঁজা শুরু করলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য। কাউকে তো দূর কারো চুলের টিকিটাও পেলো না। তখনই আবার উপর থেকে একটা মোড়ানো কাগজ সোজা মাথার উপরে পড়লো। মেঘলা বেশ বুঝতে পারলো এইটা আরেকটা চিরকুট। খুলে দেখলো তাতে লেখা,

– এতো উৎসাহ আমায় নিয়ে? আমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য এতো অস্থির? আমি না চাইলে আমায় খুঁজে তুমি পাবে না মেঘবতী।

মেঘলা কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থেকে ওপরে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে দৌড় লাগালে। ছাদের ওঠেও কোনো লাভ হলো না। হয়তো ভুল যায়গায় চলে এসেছে। নামতে যাবে তখনই খেয়াল করলো ছাদে একটা কলম পড়ে আছে। মেঘলা দ্রুত কলমটা ওঠিয়ে নিলো। আর মনে মনে বলে,

– নাহ্! আমি ভুল যায়গায় আসি নি। সঠিক জায়গায়ই এসেছি তবে ভুল সময়ে। তুমি এখানেই ছিলে। কে তুমি? সামনে কেনো আসছো না? যে কেউই হও না কেনো সামনে তো তোমাকে আসতেই হবে। খুঁজে তো তোমায় বের করবোই আমি। ছাদটা রেলিং ছাড়া ছিলো। মেঘলা আনমনা হয়ে হাটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে কন্ট্রোল করতে না পেরে পরেই যায়। তবে কোনোমতে ছাদের কার্নিশ ধরে রাখে। মেঘলার প্রাণ যেনো যায় যায় অবস্থা। গলা ধরে আছে। চেয়েও কেনো জানি কোনো শব্দ করতে পারছে না। নিচের দিকে তাকাতেই আত্মা কাপুনি দিয়ে ওঠছে। দুতালা বিল্ডিংয়ে ছাদ। এখান থেকে পড়লে মৃত্যু হবে কিনা জানে না তবে হাত পা নিশ্চয় ভাঙ্গবে। তখন কি হবে ভাবতেই মেঘলার চোখ পানিতে ভরে ওঠে। তখনই অনুভব করে কেউ ওর হাত ধরেছে। মেঘলা উপর দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য। কাব্যর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। পাশাপাশি রাগেরও কিছু ছায়া পড়েছে। কোনোমতে ওকে ওঠিয়ে জোড়ে আফ ছাড়লো। এদিকে মেঘলাও দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে। নিশ্বাস সম্পূর্ণ নিতে পারে নি তার আগেই চমকিয়ে উঠলো কাব্যের ধমকে,

– এই মেয়ে! তুমি এখানে কি করছো হ্যা? কখনো দেখা যায় জানে মারতে বসো আবার কখনো মরতে। আর কি কোনো কাজ নেই তোমার? এই মারা অথবা মরা নিয়েই থাকো? কি আজকে কাউকে মারতে পারো নি বলে কি নিজেই মরতে গিয়েছো? এতোই যখন মরার সখ হয়েছে বাসায় গিয়ে মরো। বাসায় যাও গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে বিশ কিনে খাও আর না হলে এই যে গলার ওড়নাটা ওটা দিয়ে ফাঁসি নাও। ভার্সিটিতে মরতে এসেছো? আমাদের ফাঁসানোর ভালোই ফন্দি এঁটেছো।

মেঘলা কি বলবে ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না। এরকম একটা অবস্থায় কাব্য ওকে এইভাবে এতোগুলো কথা শুনাতে পারে তা আশা করে নি। এমনিতেই ভয়ে কান্না পাচ্ছে তার মধ্যে এতো বকা। কান্না কি থামিয়ে রাখা যায়? আর এদিকে কাব্যর চোখ দিয়ে যেনো জ্বলন্ত লাভা বেরোচ্ছে। এতো কথা শুনিয়েও মন ঠান্ডা হচ্ছে না। মেঘলার চোখের পানি দেখে আরে রাগ ওঠে গেলো। আবারো বলে থাকে,

– এই কান্না বন্ধ কর। ভ্যা ভ্যা করে কিছু হলেই কান্না করবে না। আই সেইড স্টপ ক্রায়িং। না হলে টেনে একটা চড় লাগাবো।

মেঘলা এবার জোড়েই কান্না করে ওঠলো। কান্না করতে করতে হেঁচকি তুলে বসে পড়লো। সুন্দর করে জোড়াশিং করে বসে কান্না করতে থাকে। আচমকা ওভাবে বসে পড়া দেখে কাব্য কপাল কুচকে ওর তাকায়। তারপর নিজেও ওর সামনে বসে পড়ে। মেঘলা ব্যপারটা খেয়াল করে কাব্যর দিকে তাকাতেই দেখে হাল্কা হাসছে। মেঘলা তাকাতেই হাসি বন্ধ করে দেয়। মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে কাব্য আবার বলে,

– কথা বলছো না কেনো? কিছু জিজ্ঞাসা করছি। নাকি বোবা হয়ে গেছো? আর এইভাবে এখানে বসে পড়লে কেনো?

নাক টেনে হেঁচকি নিয়েই মেঘলা এবার উত্তর দিলো,

– আ আ আসলে হাত পা খু খুব কাঁপছিলো দাঁ দাঁড়িয়ে থেকে। কান্না করতে পার পারছিলাম না তা তাই।

– এ্যা

কাব্য মেঘলার কথায় ভ্যবাচেকা খেয়ে যায়। ও ভাবতেই পারে নি মেঘলা এমন ধরনের উত্তর দেবে। কাব্য খেয়াল করলো মেঘলার হাতের ছুলে গেছে বেশ খানিকটা। পা টা দেখা যাচ্ছে না তাই বুঝতেও পারছে না ব্যাথা পেয়েছে কিনা। কাব্য এবার নরম গলায় মেঘলাকে বলে,

– তোমার হাতে লেগেছে। চলো মেডিসিন লাগাতে হবে।

মেঘলা কিছুক্ষণ কাব্যর দিকে তাকিয়ে থেকে ওঠে কাব্যের পিছনে পিছনে যেতে থাকে। মেঘলা ওঠে দাড়ালে পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো সেখানেও কিছুটা ছুলে গেছে। বেশকিছুক্ষণ কার্নিশ ধরে রাখায় হাতে তালু আর টেনে তোলার জন্য হাতের কুনুইয়ের কাছে বেশ ছুলে গেছে। মেঘলাকে নিয়ে রেষ্টরুমে গিয়ে একটা সিঙ্গেল বেডে বসিয়ে ফাস্টএইড বক্স এনে একটা চেয়ার টেনে মেঘলার মুখোমুখি বসে মলম লাগিয়ে দেয়। মেঘলা প্রথমে ভেবেছিলো খুব জ্বলবে কিন্তু একটু জ্বলে নি। শুধু পরিষ্কারের সময় একটু ধরেছিলো। মলম লাগানোর সময় কাব্য ফু দিয়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। মেঘলা এক ধ্যানে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্যর চোখ কেমন যেনো লালচে হয়ে আছে। মাঝে মাঝে যেনো হাত কাঁপছে। যেনো ভয় পাচ্ছে ব্যাথা লেগে যাওয়ার। মেঘলার হঠাৎই খেয়াল আসলো কাব্য, হ্যা ওর সামনে কাব্য বসে আছে। কাব্য ওর সাথে এতো ভালো বিহেব করছে। ওকে সাহায্য করছে। ভাবতেই যেনো অবাকের চূড়ায়। কাব্য আলতো সুরে বলে,

– ব্যাথা লাগছে?

মেঘলা কোনো কথা বলছে না কারণ সে আপাতত অবাকের দুনিয়ায় আছে। কাব্য জোড়ে ডাক দিতেই মেঘলা হকচকিয়ে ওঠলো। কাব্য আবার জিজ্ঞাসা করে,

– ব্যাথা করছে কি এখনো?

– না

– জুতো টা খুলে পা ওপরে তোলো।

– কেনো?

– তোমার জুতোটা খুব পছন্দ হয়েছে গার্লফ্রেন্ডকে দেবো।

কথাটা যে কাব্য বেঙ্গ করে বলেছে তা মেঘলার বুঝতে সামান্য বেগ পেতে হয় নি। তাই সেও তার মতো করেই উত্তর দেয়,

– তো আমার জুতা কেনো? কিনে দিন। ছবি তুলে নিয়ে যান। আমার জুতা দিতে পারবো না।

কাব্য চোখ ছোট ছোট করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলার কেনো জানি খুব ভয় লাগলো। তাই বাধ্য মেয়ের মতো জুতা খুলে পা ওপরে নিলো। কাব্য যেই পায়ের দিকে হাত বাড়ালো তখনই মেঘলা চিৎকার করে বলে,

– এমা কি করছেন? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?

– তুমি অনেক বড় মানুষ তো তাই সালাম করে পায়ের ধুলো নিবো।

কাব্য আবার বেঙ্গ করে কথাটা বলে। মেঘলাও তো কিছু কম যায় না। তাই সেও বলে,

– ওহ্ আচ্ছা! তাহলে নিন নিন। এমন সুযোগ তো বার বার পাবেন না। অনেক ভাগ্য আপনার যে আমার পায়ের ধুলো পাচ্ছেন।

কাব্য মেঘলার কথা শুনে আবার পায়ের দিকে হাত বাড়াতেই মেঘলা এবার পা টান দিয়ে নিয়ে বলে,

– পায়ে দিয়েন না। আপনাকে এমনিতেই আর্শিবাদ করে দেবো কেমন হে হে।

– পায়ে কি স্বর্ণ রৌপ্য লাগিয়েছো যে হাত দেওয়া যাবে না।

– হ্যা তার থেকেও বেশি। মেয়েদের পায়ে ছেলেদের হাত দিতে নেই। দিলেও স্বামী স্ত্রীর পায়ে ঘটনাচক্রে যেমন এমন সময়ে যে স্ত্রী আঘাত পেয়েছে তখন স্বামী ঔষধ লাগিয়ে দেবে এর জন্য দিতে পারে। আপনি তো পর পুরুষ আপনি কেনো দেবেন? আমার স্বামী দেবে।

কাব্য মেঘলার কথায় দাঁত কড়মড়িয়ে হাতে মলম বেশি করে নিয়ে পায়ে জোড়ে করে ঢলে দেয়। মেঘলা আহ্ করে শব্দ করে ওঠে। তেমন ব্যাথা না পেলেও ব্যাথা পেয়েছে। কাব্য হাতে একটা নাপা ধরিয়ে দিয়ে বলে,

– এইটা খেয়ে নিবা। এরপর থেকে মরতে হলে বাসায় গিয়ে মরবে। এখানে এসে কতগুলো জিনিস খামোখা নষ্ট হলো।

কাব্য গটগট করে চলে গেলো। মেঘলাও বেড়িয়ে এলো। ওখান থেকে বেড়িয়েই পায়ে ব্যাথার কারণে হাটঁতে অসুবিধা হচ্ছে বলে এদিক ওদিক তনুকে খুঁজছিলো হেল্পের জন্য। কারণ আশার সময় কাব্য হেল্প করেছিলো। খুঁজতে খুঁজতে দেখলো আবির আসছে। আবিরকে ডাক দিতে যাবে তার আগেই আবির মেঘলাকে অস্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে দেখে ছুটে চলে আসে। ব্যস্ত সুরে বলে,

– কি হয়েছে মেঘলা? এভাবে হাঁটছো কেনো? পায়ে ব্যাথা পেয়েছ?

– হ্যা ভাইয়া সামান্য। আসলে জুতো পড়ার কারণে আরো ব্যাথা লাগছে তাই হাঁটতেও পারছি না। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা রিকশা ঠিক করে দেবেন?

– রিকশা লাগবে না। আমি বাইকে এগিয়ে দিচ্ছি।

– না না ভাইয়া তা লাগবে না।

– মেঘলা! আমি তোমার পর কেউ না। এতোদিন তোমার কাছে ছিলাম তখন যেমন তেমন বিহেভ করতে ঠিক আছে। এখন অন্তত এমন পর পর বিহেভ করো না। প্লিজ।

মেঘলা আর কিছু না বলে আবিরের কথায় সম্মতি জানায়। আবির মেঘলাকে সযত্নে ধরে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসিয়ে রেখে বাইক আনতে যায়। আবির বাইক নিয়ে এসে মেঘলাকে সাবধানে বসতে বলে। মেঘলা সাবধানে বসে পেছনের সিটটা শক্ত করে ধরে বসে। আবির ব্যপারটা বুঝে বলে,

– ধরে বসো, পড়ে যাবে। কয়দিন পর জড়িয়ে ধরে বসতে হবে এখন না হয় কাঁধটা ধরে বসো।

মেঘলা বেশ বুঝতে পারে আবির কেনো কথাটা বললো। মাথা নিচু করে চোখ খিচে বন্ধ করে বসে থাকে। আবির মেঘলার হাত পেছন থেকেই টান দিয়ে কাঁধে বসাতেই মেঘলা ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে। আবির ব্যস্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে মেঘলার হাত ধরে দেখে বেশ ছুলে গেছে আর টান দেয়ায় রক্ত বেড়িয়েছে। আবির মেঘলার হাত আলতো করে ধরে বলে,

– মেঘলা কিভাবে এতো ব্যাথা পেলে? কোথায় গিয়েছিলে? আই এম সরি। না জেনে আবারো ব্যাথা দিয়ে দিলাম।

মেঘলা খেয়াল করলো আবিরের চোখেও সেই ব্যাথারই চিত্র যেমনটা কাব্যর চোখে ছিলো। আবির ব্যান্ডেজ এনে হাতে ব্যন্ডেজ করে মেঘলাকে নিয়ে চলে যায়। আর এদিকে এক জোড়া অগ্নিচক্ষু ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে কারণ হাতটা দেয়ালে গাধা একটা একটা লোহার সাথে চেপে রেখেছে। এক একটা রক্তর ফোটা যেনো রাগের বাস্তব প্রতিবিম্ব।

চলবে…..❤

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। হ্যপি রিডিং 💜