তুই আমার কাব্য পর্ব-১৫

0
1819

#তুই_আমার_কাব্য 🍂

#Writer: Anha Ahmed
#Part: 15
.
🍁
.

বৃষ্টি হওয়াতে ছাদ কিছুটা পিছলে হয়েছিল। মেঘনার তেরে কাব্যর দিকে আসার সময় পা পিছলে ধপাস করে পড়ে যায়। মেঘলার পরে যাওয়া দেখে কাব্য ঘাবড়ে গিয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। মেঘলা পরে গিয়ে কাব্যর চিল্লানো শুনে ওর দিকে কাঁদো কাঁদো করে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট উল্টিয়ে অসহায় চাউনিতে চেয়ে থাকে। কাব্য মেঘলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এক পা এগিয়েছে তখনই মেঘলার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে সাথে সাথে হাসি লুকিয়ে ফেলে। একটা ছোট শ্বাস নিয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে চোখগুলো ছোট করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে এক হাত বাড়িয়ে দেয়। মেঘলা প্রায় কেঁদেই দিতো যদি কাব্যর হাসি দেখতে পেতো। মেঘলা কাব্যর রিয়েকশন বুঝার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কাব্যর মুখের কোনো ভাবান্তর না দেখে নিজেকেও স্বাভাবিক করে নিয়ে হাত ধরতে যাবে তখনই কাব্য আবার হাতটা সরিয়ে বলে,

– দুঃখিত! এ হাত যার তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ায়ে দেয় না। তোমার মতো মেয়েকে তো একদমই না।

বলেই হাত পকেটে নিয়ে নেয়। মেঘলা কাব্যর কাজে বোকা বোনে গেলো। তারপরই অনুভব করে ওকে অপমান করা হলো। চোখগুলো উপরের দিকে করে গাল ফুলিয়ে কাব্যর দিকে তাকিয়ে ধুম করে ওঠে হনহন করে হেটে বেড়িয়ে গেলো। দুই তিন সিড়ি নেমে আসতে মেঘলার যেনো মনে হচ্ছে কেউ হাসছে। ছাদের দরজা দিকে ওকি দিয়ে দেখে কাব্য ফোন নিয়ে ব্যস্ত। মেঘলা রাগে ফুলে গটগট করে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে জামা চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে যায়।

গতকাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সকালের আবহাওয়াটা খুবই নরম। উষ্ণ আলো। ঠান্ডা বাতাস নেই তবে ঠান্ডা ঠান্ডা একটা ভাব বিরাজ করছে চারপাশে। জানালাটা খোলা থাকায় অবাধে আলো রুমের ভেতর প্রবেশ করছে। তবে আলোর তীব্রতা শূন্য থাকায় মেঘলার মুখ ছুলেও ঘুমকে ছুতে অক্ষম। পাতলা একটা কম্বল নিয়ে গুটিশুটি করে বেঘরে ঘুমোচ্ছো মেঘলা। ঘুমের মাঝেই চোখটা হালকা খুলে এক পাশ থেকে অন্য পাশ হয়ে শুয়ে পরে। পরক্ষণেই সাথে সাথে ওঠে আগের পাশে ওঠে বসে পড়ে। কেনো যেনো মনে মেঘলার মনে হলো কেউ ছিলো এখানে। এক মুহুর্তের জন্য যেনো কারো উপস্থিতি সে টের পেয়েছে। মেঘলা বেশ চমকিয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ এ নিয়ে ভাবতে থাকে। তখনই রুমে মেহের ডুকে। মেহের ডুকে মেঘলাকে বসে থাকতে দেখে এক গাল হাসি দিয়ে মরনিং উইশ করে,

– গুড মরনিং!! কেমন হয়েছে ঘুম?

মেঘলার ঘুম ঘুম ভাবটা এখনো যায় নি। কোলে বালিশ নিয়ে তাতে দু হাত ভর করে বসে আছে। মেহেরের কথা শুনে উত্তর দেয়,

– হুম মরনিং।

– কি এখনো ঘুম ভাঙ্গে নি ভালো করে?

– নাহ্! আরো ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। কটা বাজে রে?

– সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আরো ঘুমাবি? ভার্সিটি কি যাওয়ার নিয়ত নেই?

– হুম হুম আছে। যাবো তো।

– আচ্ছা আয়!

মেহের চলে যাচ্ছিলো তখনই আবার মেঘলার দিকে ঘুরে জিজ্ঞাসা করে,

– কিরে মেঘলা! তোকে না কালকে আমি অন্য ড্রেস দিয়েছিলাম? তুইতো অন্যটা পড়েছিলি। চেঞ্জ করলি কেনো?

মেঘলা একবার নিজের ড্রেস আরেকবার মেহেরের দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখ নিয়ে বলে,

– কালকে ছাদে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম

– আমরা চলে আসার পর তুই আবার ছাদে গিয়েছিলি কেনো একা?

– আমি! আসলে কি বলতো? নতুন জায়গা তো ঘুম আসছিলো না তাই আর কি।

– ওহ্ আচ্ছা। দেখে শুনে চলতে পারিস না? আচ্ছা তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। খাবার বাড়ছি আমি।

– হুম আসছি রেডি হয়ে একদম।

মেঘলা যেহেতু ড্রেস নিয়ে আসে নি তাই গতকালকের ড্রেসটাই আবার পড়ে রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। মেঘলা নিচে নেমে দেখে সবাই টেবিলে বসে আছে। মেঘলা গিয়ে বসতেই শুভ ওকে মরনিং উইশ করে খাওয়া শুরু করে। মেঘলা খেয়াল করলো সবাই কথা বলছে কিন্তু ওই কাব্য কি বাচ্চি কথা বললো না। কি এটিটিউট ভাবা যায়? মেহমানের সাথে কিভাবে ব্যবহাে করতে হয় তাও জানে না। নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে আর ফোন ঘেটে যাচ্ছে। বজ্জাতের লিডার। মেঘলা আড়চোখে কাব্যকে দেখছে আর বকে যাচ্ছে। হঠাৎই মেঘলার খাবার গলায় আটকে যায়। কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে রিতিমতো পানি বের হয়ে যাচ্ছে। মেহের ব্যস্ত হয়ে ওঠে মেঘলার পিঠ ঘসে দিতে থাকে। শুভ মেঘলার দিকে পানি এগিয়ে দেয়। সবাই মেঘলাকে নিয়ে ব্যস্ত হলেও একজন ঠিকই নিজের দুনিয়ায়ই রয়ে গেছে। আপন মনে ব্রেডে কামড় দিয়ে বলে,

– মানুষকে একটু কম বকলে এরকম আর হয় না। যেমন কর্ম তেমন তার শাস্তি।

কাব্যর কথা শুনে সবাই কাব্যর দিকে তাকায়। কাব্য বুঝতে পেরে নিজে নিজে বলে,

– ফোনে, ফোনে লেখা। সেটাই পড়ছিলাম আর কি।

কথাগুলো কাব্য যে মেঘলাকে বলছে মেঘলা কুব ভালো করেই বুজতে পেরেছে। এমনিতেই কাব্যকে সহ্য হয় না তার মধ্যে আবার এরকম গা জ্বলানো কথা। মেঘলা গিয়ে চেয়ার থেকে ওঠে যায়। মেঘলার এমন রিয়েকশন দেখে মেহের ভরকে যায়। মেঘলা রেগে একটু জোড়েই বলে,

– আপু আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমার যেতে হবে।

মেহের সাথে সাথে বলে,

– দাঁড়া দাঁড়া। একা যাবি কেনো? ভাই ও তো যাবে। ওর সাথেই যাস না বোন।

মেঘলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে কড়মড় করে বলে,

– আমার দুই হাত, দুই পা আছে। শরীরও সম্পূর্ণ সুস্থ। তাই অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন আমার নেই।

– বেশি কথা বলবি না। এইটা নতুন জায়গা তোর জন্য। বাসার থেকে একা যাস পরিচিত বলে। এখানে কি চিনিস তুই? পরে হারায়ে যাবি। ভাইয়ের সাথে যাবি মানে ওর সাথেই যাবি।

– কিন্তু আপু

– মেঘ!!

মেঘলা আর কিছু না বলে চুপ করে গাল ফুলিয়ে বসে পড়ে সোফায়। মেহের কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– ভাই! মেঘলাকে একটু নামিয়ে দিয়ে যেতে পারবে?

কাব্য খাবার খেতে খেতে স্বাভাবিক গলায় জবাব দেয়,

– হুম। কোথায় নামিয়ে দিতে হবে জিজ্ঞাসা কর। কোন ভার্সিটি?

কাব্যর মুখে এমন কথা শুনে যেনো মেঘলার মাথা বাজ ভেঙ্গে পড়ে। ওমা! বলে কি? এমন ভাব যেনো চেনেই না মেঘলাকে জানেই না কিছু। মেঘলা তো চোখ বড় বড় করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেহের মেঘলাকে জিজ্ঞাসা করায় মেঘলা উত্তর দেয়,

– ওনি যে ভার্সিটিতে পড়েন সেটাতেই।

মেহের একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

– তোরা একই ভার্সিটিতে? ভাই তুমি তো বলো নি আগে আমায়?

কাব্য এবারো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পানির গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জবাব দেয়,

– আমিও আজকে জানলাম। জানতাম না তোমার বোন আমার ভার্সিটিতে পড়ে। আসলে ওসব দিকে নজর দেওয়ার ফালতু টাইম আমার নেই। আর তুমি তো জানো ওসব ছাড়া আমার অনেক কাজ থাকে।

খাওয়া শেষে কাব্য ওঠে গিয়ে সিঁড়িতে ওঠতে যাবে তখন আবার বলে,

– ভাবি আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি। রেডি থাকতে বলো। আমি রেডি হয়ে আসছি।

মেঘলা কাব্যর কথায় যেনো আকাশ থেকে ধপাস করে পড়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মেঘলা মনে মনে ভাবতে থাকতে,

– আচ্ছা আমাকে ভ্রমে ধরেছে না এই খাটাস টাকে? আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে নাকি এইটার? না না আমার পায় নি। আমার পেলে তো কিছু মনে থাকতো না। এই মুরগটারই স্মৃতি হারিয়ে গেছে। না হলে কিভাবে বলে আমাকে চেনে না, দেখে নি। এতোদিন এতো ঘটনার প্রেক্ষিতে কথা হওয়া সত্ত্বেও এতো বড় কথা? ওয়েট ওয়েট! খাটাসটাকে কি কোনো ভাবে আমাকে অপমান করলো?

মেঘলা নাক গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। এই ছেলেটাকে আর নিতে পারছে না মেঘলা। প্রতিটা কদমই কেনো যে অসহ্য লাগছে। কারণে অকারণে যেখানে সেখানে নিরবে অপমান করে যায় সবার সামনে অথচ বলার কোনো অপশন পর্যন্ত রাখে না। কি চালাক রে বাবা!

কাব্য ওপর থেকে আঙ্গুলে বাইকের চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিচে নামতে থাকে। গেটের সামনে এসে পেছন ঘুরে দেখে মেঘলা এখনো বসে আছে। তাি জোড়ে ডাক দিয়ে বলে,

– এই মেয়ে! তোমাকে কি ইনভিটেশনের কার্ড পাঠাতে হবে?

– ধন্যবাদ, লাগবে না।

মেঘলা মেজাজ দেখিয়ে ওঠে গিয়ে কাব্যর আগে বেরিয়ে যায়। কাব্যর বাইকে ওঠে মাঝখানে ব্যাগটা রাখর যেনো শরীরে টাচ না লাগে। কাব্য কিছুদুর যাওয়ার পর গাড়ি থামিয়ে মেঘলাকে নামতে বলে। মেঘলা আশে পাশে তাকিয়ে দেখে একদম অচেনা যায়গা। সে চেনেই না আর চেনার কথাও না। তবুও নেমে জিজ্ঞাসা করে,

– এখানে কেনো নামতে বললেন? ভার্সিটি তো এখনো আসে নি।

– হুম জানি। দাড়িয়ে থাকো। একটা বাস আসবে ওটাতে ওঠবে আর চলে যাবে। ভার্সিটি পৌঁছে যাবে।

– মানে?? ( রেগে)

– বাংলা বুঝো না আগে জানতাম না। তাহলে ইংরেজিতে বলতাম।

– মসকরা করছেন? এরকম অচেনা জায়গায় নামিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন একাি চলে যেতে?

– কেনো? তোমার না দুই হাত দুই পা আছে? ইভেন শরীরও সম্পূর্ণ সুস্থ। তো পারবে না কেনো যেতে?

মেঘলা একবার চোখ বন্ধ করে আবার খোলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি কাব্যর দিকে নিক্ষেপ করে। কিন্তু সেদিকে কাব্যর যেনো কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। সে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। আর এদিকে মেঘলা রেগে বোম হয়ে গেছে। যেকোনো সময়ে যেখানে খুশি ফেটে যেতে পারে। ইচ্ছে করছে কাব্যর সবকটা চুল নিজ হাতে টেনে ছিড়তে। বাইকের টায়ার পাঞ্চার করে দিতে। গ্লাস ভেঙ্গে গুরোগুরো করতে। রাগে কাব্যর চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেলো। পেছন ফিরে তাকাতেই মেঘলার চোখে নেমে এলো ভয়ে তীব্র ছায়া। পা যেনো মুহূর্তেই অবশ হয়ে এলো। হাত পা নরাচরা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে তবুও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শুধু বললো,

– আ আ আপনি???

চলবে…. ❤