#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ৬ষ্ঠ
———–
মেঘার ঘরে ধীমি ধীমি পায়ে মিশু এসে ঢুকলো।
সে কিছুই না বলে চুপচাপ মেঘার পাশে শুয়ে পড়লো।
!
!
!
পর্দার ফাক দিয়ে আলোর ছোঁয়া এসে ছুঁয়ে দিলো মেঘাকে। হালকা নড়ে চরে উঠলো মেঘা পাশ ফিরতে দেখলো গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে মিশু তারপাশে
মেঘা মুচকি হেসে মিশুর মাথায় হাত রাখলো
কত সুন্দর বোন আমার ঘুমান্ত মুখ টা দেখলে মনে হয় সেই ছোট মিশু আছে অবুঝ মেয়েটি।
বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকানিতে গেলাম। চারিদিক টা পরিষ্কার। সময়ের সাথে চলা মানুষ গুলো ছুটে চলেছে। তাদের কাজের সাথে তাল মিলাতে তাদের তো চলতে হবে সময়ের সাথে বড্ড যুদ্ধ সবার।
!
!
!
আপু,,। মিশু চোখ ডলতে ডলতে ডাকলো তার কথায় ঘুরে তাকলাম, তার কাছে এসে বসলাম
—তোর কি আমার উপর অভিমান হয়েছে মিশু??
—-না কই?
—-আচ্ছা আমার দিকে তাকা,
মিশু আমার দিকে ঘুরে তাকালো
তুই ছাড়া আমার আর আপজন কে আছে বলতো তুই ভাবলি কেমনে করে তোকে আমি ভালোবাসি না তোর কেয়ার নেই না।
—আমি কি এইসব বলেছি আপু?
—কিছুই কথা বলতে হয় না রে ভাব সাব দেখে বুঝে নিতে হয়।
—-মিশু একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো,, আপু আমায় নাকি হোস্টেল পাঠায় দিবে??
—-কে বলেছে??
—-আয়েশা খালা।
—-তুই তো জানিস ওনি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কথা বলেন, তাই বলেছে হয়তো।
—-আপু কেউ আমায় পছন্দ করে না কেনো সবাই অবহেলা করে কেনো??
আমি হালকা হেসে মিশুর মাথায় হাত রাখলাম আর বললাম, জানিস যখন মানুষের খুব প্রিয় কেউ তাকে অপছন্দ, অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে তখন প্রথম প্রথম মানুষ খুব কষ্ট পায় এবং চায় যে সব ঠিক হয়ে যাক । কিছুদিন পর সে সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যায়। আর অনেকদিন পরে সে আগের চেয়েও অনেকবেশী খুশি থাকে যখন সে বুঝতে পারে যে কারো ভালবাসায় জীবনে অনেক কিছুই আসে যায় কিন্তু কারো অবহেলায় সত্যিই কিছু আসে যায় না।
তেমনি তোর কেনো কারো অবহেলায় যায় আসবে পাগলি??
—-হুম তোমার মতো মোটা ভারী জ্ঞানী কথা বলতে পারি না ঠিকি কিন্তু তোমার কথা ঠিক বুঝি বুঝলা।
হুম হুম এখন চল নাহোয় আয়েশা খালা বলবে, আমি তো সময়ের সাথে চলি বাপু।। দুইজনে একসাথে বলে উঠলাম আর খিলখিল করে হাসলাম।
!
!
!
আমি আর মিশু নিচে আসছি আসতে দেখলাম সিঁড়ির কাছে কাব্য ভাইয়া খাতা হাতে দারিয়ে আছে, ভ্রুকুচকে খুব মনযোগ সহকারে তিনি হিসাবের খাতা দেখছেন। আর হিসাব মিলাচ্ছেন।
বাড়ি ভর্তি ডেকেরেশোনের লোক কেউ ফুল সাজাচ্ছে কেউ বা লাইটিং এর কাজ করছে সব মিলিয়ে বাড়ি ঘড় পুড়া অগুচ্ছালো হয়ে উঠেছে।
!
!
!
অভ্র ভাইয়া আমাদের সাথে এসে বললেন কি ব্যাপার দুই বোন আজ এক যায়গায়?
—-আমি হালকা হাসার চেষ্টা করলাম যদি ও ইচ্ছা ছিলো না।
—-কেনো আমরা হতে পারি না বুঝি,, মিশু মুখ ভেংচিয়ে বললো।
—-হুম হতো পারো আজ চোখে পড়লো তাই বলছি।
—আপনার তো আজ বাসায় দেখলাম তাই হয়তো আপনি লক্ষ করছেন বুঝলেন।
—মিশু তুমি খুব ভাগ্যবতী জানো কেনো??
—মিশু ভ্রু কুচক্রে বললো কেনো??
—তুমি তোমার মা-বাবার বড় সন্তান হওয়ার সাধ গ্রহন করোনি তাই? বড় সন্তান রা কেমন হয় জানো?? পুতুলের মতো যদি পুতুল সুখে থাকে বাবা-মা থাকে পুতুল যদি হাসে বাবা-মা হাসে আর যদি পুতুল কান্না করে বাবা-মা কান্না করে।
অভ্র ভাইয়ার কথা টা মনে দাগ কাটার মতো। কতটা সম্মান করেন আর ভালোবাসেন তিনি তার মা-বাবা কে।
অভ্র ভাইয়াকে টেনে ধরে তার বন্ধুরা নিয়ে গেলো আমি আর মিশু সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসলাম।
নিচে আসতেই বসতে হলো সবার গল্প গুজবে। যে যার গল্প আপন মনে করে যাচ্ছে। মিশু পার্লারের মেয়েটার সাথে প্লান করছে কিভাবে সাজবে।
সব দিকে আমেজ পূর্ন্য অবস্থা।
!
!
!
আয়েশা খালা নিচের রুমে ফুলের ডালা গুলো রাখতে যেতে চাইচ্ছিলো আমি তাকে বাধ্য দিয়ে নিজে নিয়ে গেলাম।
ফুলের ডালা গুলো রাখতে পিছুই ঘুরে দেখলাম কাব্য ভাইয়া দারিয়ে আছে।
আমি মাথা নিচু করে যেতে ধরলাম কাব্য ভাইয়া পথ আগলে দাঁড়ালো।
আমার হাফ বউ আমায় তুমি একটু ভালোবাসো না মুখ ফুলিয়ে বলছেন।
তার কথা আমার মাঝেমধ্যে অদ্ভুত লাগে বড্ড অদ্ভুত লাগে।
কি হলো মনে মনে আবার আমায় নিয়ে ভাবছো ভাববা না একদম ভাববা না তুমি।
কাব্য ভাইয়ার প্রতিটা কথায় আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি তাছাড়া আমার করার কিছুই নেই ও।
মেঘ জানো পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।
তুমিও তাই করছো মেঘ হাহাহাহাহা।
আমি কাব্য ভাইয়ার কথায় ড্যাবড্যাব চোখে তার দিকে তাকাতেই তিনি আমার চোখে চোখ রেখে চোখ টিপ মারলেন।
আমি মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসলাম
অসভ্য ছেলে একটা।
!
!
!
!
কিচেনের ফ্রিজ থেকে কাব্য পানির বোতল বের করে পানি খাচ্ছিলো,
হুট করে তার চোখে পড়লো,,,
একটা চামুচের উপর মাছি কেমন পড়ে মরে আছে চামুচ টাতে দুধ লেগে আছে হালকা অদ্ভুদ মাছি টা মরলো কিভাবে???
কাব্য কে কে কেউ ডাক দিতে কাব্য চলে গেলো সেইদিকে।
!
!
!
হল রুমে সবাই বসে আছে,
কাব্য খুব রাগোনিত্ত হচ্ছে লোক গুলার উপর তাদের গোলাপ ফুল দিয়ে সাজাতে বলেছে তারা ভুল করে গাঁদা ফুল লাগিয়েছে রাগ হওয়া স্বাভাবিক।
কাব্য কাজে খুব ব্যস্ত
কাব্যর ঠিক পাশে মহিলারা আসর করে বসে গল্পগুজব করছে।
আয়েশা খালা সবার জন্য চা ব্যবস্থা করলো কিন্তু মেঘা চা খায় না জেনে তার জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসিয়েছেন তিনি।
মেঘার সামনে গ্লাস টা ধরে বললো নে খেয়ে নে
—আমার একটু খেতে ইচ্ছা করছে না খালা পড়ে খাবো।
মেঘা খাবে না বলা স্বতঃ আয়েশা খালা জোরাজুরি করছে।
অনেকক্ষণ থেকে।
কাব্য তাদের কথায় একটু কান দিলেও পরে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
একটা জিনিষ দেখে তিনি থমকে দারালেন মেঘার হাতে দুধের গ্লাস কিচেনে চামচে দুধ।
এর মানে??
কাব্য হনহন করে এসে মেঘার হাত থেকে নিয়ে গ্লাস টা ফেলে দিলো।
এমন ঘটনায় সবাই কাব্যর দিকে তাকালো,,,,
চলবে__________________