#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ১৭
———-
কাব্যর হাত খুব শক্ত করে বাধা তার ধবধবে সাদা হাতে দড়ির দাগ পর্যন্ত বসে যাবে এমন গিট বাধা।
কাব্য ঝাপসা চোখে সামনের দিকে তাকালো মেঘার দিকে চোখ পড়তে কাব্য উঠে বসার চেষ্টা করলো মাথাটা ঝিম ঝিম করে ধরেছে কাব্যর সব এলোমেলো লাগছে তার কাছে।
কাব্য হাটু গেড়ে বসলো। মেঘার দিকে তাকালো মেঘার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কাব্যর এমন অবস্থা মেঘার সহ্য হচ্ছে না তার এইসবের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবছে সে।
welcome my son বলে এগিয়ে আসলো মিস্টার শরীফ চৌধুরী।
শরীফ চৌধুরী কে দেখে কাব্য একটুও অবাক হলো না বরং তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বললো,,
কেমন পিতা তুমি নিজের ছেলে আর ছেলের বউকে কিন্ডন্যাপ করেছো।
ওহ আমার সোনা ছেলে তুমি তো জানো আমি নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারি।
মেঘার সাথে তোমার কিসের স্বার্থ আছে বাবা??
হুম আছে কাব্য সব বলছি তোমায় শুনো তাহলে।
আশিকুর চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে আফিয়া চৌধুরী মেঘার মা আর আমি আশিকুর চৌধুরীর অবৈধ্য সন্তান শরিফ চৌধুরী। তিনি আমার মা প্রতি অনেক অন্যায় করেছে আমার মাকে স্ত্রীর অধিকার দেননি সমাজের কাছে আমার মা কে রক্ষিতার নজরে পরিচয় করিয়েছেন। সারাটাজীবন আমার মা কষ্ট ভুগেছে ছেলে হয়ে তার জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। আমার বন্ধু সাইফ কে আমি টাকা দেই যাতে আফিয়া চৌধুরীর সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করে কিন্তু আমার সাথে সাইফ বেইমানি করে সে সত্যি সত্যি আফিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করে নেই যার জন্য আমার একটা লাভ বটে হয় বাবা ওদের মেনে নেয় না বাড়ি থেকে বের করে দেয় ওদের এইসুযোগে আমি বাবার ভালো ছেলে হওয়ার নাটক করি। বাবা আমায় বিশ্বাস করে কাছে টেনে নেয় ব্যবসার সব কাজ আমার হাতে তুলে দেয়। আমি বিভিন্ন ভাবে বাবার ব্যবসাদারে ভেজাল পন্য মিশাতে শুরু করলাম আর কালো ব্যবসায়ী হিসাবে অনেক বড় হয়ে উঠতে লাগলাম। এইসব কিছুই আশিকুর চৌধুরী জানতেন না। যখন তিনি আমার অস্ত্রপাচার হাতে নাতে না ধরলেও গোপনে ধরে ফেলেন তখন তিনি আমার অগোচরে আফিয়ার বড় মেয়ে মেঘার নামে সব সম্পত্তি লিখে দেন। এইসব সম্পত্তি আমি এতবড় করেছি আমি সব করেছি আর তার সব পাবে ওই আফিয়ার মেয়ে মেঘা? পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছিলো নিজের বাবাকে দুতালার সিঁড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম আর সবাই কে বুঝালাম এক্সিডেন্টলি পা পিছলে পড়ে গেছে। আফিয়া আর সাইফ বাবার মৃত্যু খবর শুনে ছুটে আসছিলো রাস্তায় তার এক্সিডেন্ট করিয়ে দেই। এইসব মাঝে আমি মেঘাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু মেঘা নাবালিকা ছিলো তাই ওর যদি কিছুই হয়ে যেতো তো এই সম্পত্তির কিছুই আমি পেতাম না সব সব আমার হাত ছাড়া হয়ে যেতো। আমার সব কিছুই পুতুল জেনে গিয়েছিলো ওকে আমি ভালোবাসি ওকে আমি হারাতে চাইনি কিন্তু ভয় ছিলো যদি সব সবাইকে বলে দেয়? ওকে আমি বাধ্য হয়ে ড্রাগস দিতাম ও সব ভুলে থাকতো নেশায় থাকতো কবির কাব্য থেকে দূরে থাকতো।
মেঘা আর মিশুর ঠিকানা আমার কাছে ছিলো না ওদের খুঁজতে আমার এতো বছর লেগে গেলো। মিশুর কোনো দরকার আমার ছিলো না তাও মেঘার জন্য ওদের কাছে ভালো হলাম। আশ্রয়ার্থী হয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলাম। এরপর খেলি দ্বিতীয় চাল আস্তে আস্তে পুতুলের ড্রাগস টা বারিয়ে দেই ওর মনের মধ্য মেঘাকে নিয়ে ক্ষোভ আর ঘৃনার বিষ ঢুকিয়ে দেয়। ও মেঘা কে মারতে চায় কিন্তু বার বার তুমি আমার প্লান ফেল করে দিয়েছো কাব্য তুমি। তোমার জন্য আজো মেঘা বেঁচে আছে ওর কিছুই হয়নি। নাহোয় এতোদিনে মেঘাকে মেরে দিতাম আর তা এক্সিডেন্ট বলে চাপিয়ে দিতাম কিন্তু সব কিছুই আমার হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে মেঘাকে কিন্ডন্যাপ করি। এতবছরে আমায় কেউও বাজিমাত দিতে পারিনি তুমি প্রথম যে এই শরীফ চৌধুরীকে মাত দিয়েছো দেখতে হবে রক্ত কার এই আমার তো হা হা হা হা।
বিদৎঘুট ভাবে হেসে উঠলো শরীফ চৌধুরী সিগারেট ধরাতে ধারাতে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
তোমায় বাবা বলতে ঘৃণা হয় আমার ছি তুমি এতো নীচ।
হা হা হা এই সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে গেলে টাকার খুব প্রয়োজন যা আমি তোমাদের দিয়েছি নাহোয় এতো লাক্সেরিক জীবন কাটতে পারতে না।
টাকা দিয়ে সব হয় না বাবা আর সব তো তোমার পাপের টাকা পাপের টাকার ধংস্ব তো হবেই
আমাকে ধংস্ব করতে পারবে না কাব্য কেউ না তুমি না।
বাবা মেঘাকে ছেড়ে দেও বাবা প্লিজ।
আমার কাছে দয়া ভিক্ষা করছো কাব্য ঠিক আছে ছেড়ে দিবো কিন্তু তুমি মেঘাকে বলো সাইন করতে।
কাব্য চিৎকার দিয়ে বললো, মেঘা সাইন করবে না তুমি যদি মেঘা কে এভাবে মেরে ফেলো তাতে তুমি কিছুই পাবে না সব সব এতিমখানায় দান হিসাবে চলে যাবে।
শরীফ চৌধুরী অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো,আমি বেচে থাকতে তা কোনো দিন হবে না কাব্য কোনোদিন না।
শরীফ চৌধুরী মেঘার সামনে গিয়ে দারালো ইশারায় মেঘার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিতে বললো, শরীফ চৌধুরী মেঘার চুলের ঝুটি ধরে নিয়ে এসে কাব্যর সামনে ফেললো।
মেঘার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কি নিষ্ঠুর পরিহাস হচ্ছে তার সাথে।
শরীফ চৌধুরী বলতে লাগলো আমি সব করতে পারি সব নিজের ছেলেকে মারতে দ্বিধাবোধ করবো না আমি। মেঘা তুমি তো স্বামীকে ভালোবাসো তাই না মা তোমার কাছে কোনটা বেশি সম্পত্তি না স্বামী।
কিছুই লোককে ইশারা করতে তারা কাব্যকে মারতে আরম্ভ করলো।
কাব্য চুপচাপ মার খাচ্ছে আর মেঘা শব্দবহ কান্না করছে।
একসময় কাব্য লোকদের ইশারা করে বললো,
১মিনিট আমি আমার বউকে কিছুই বলতে চাই।
কাব্যর এমন ব্যবহারে সবাই অনেক অবাক হলো সাথে মেঘাও কান্না থামিয়ে এক দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকালো কাব্য বললো,,
তুমি যে আমায় ভালোবাসো সেটা পুড়া দুনিয়া জানো শুধু আমি জানি না? এটা তো ঠিক না মেঘা
আপনি এমন অবস্থায় মজা করছেন?
এই তোমার সমস্যা কি?? যখন আমি মজা করি সেটা তখন তুমি সিরিয়াস ভাবে নেও আর এখন সিরিয়াস ভাবে বলছি আর এখন তুমি বলছো মজা?
আপনায় আমি ভালোবাসি না বুঝেন আপনি।
বুঝেছি। ভাইয়া রা আপনারা সবাই আমাকে মারেন আমার বাবা আমায় ভালোবাসে না সেখানে নিজের বিয়ে করা বউ কি বাসবে??
লোকগুলো কাব্য কে আবার মারতে শুরু করলো। কাব্য রক্তাক্ত হয়ে পড়ে গেলো।
মেঘা দৌড়ে গিয়ে শরফী চৌধুরীর পায়ে পড়লো,,
প্লিজ মামু ওনাকে ছেরে দেও প্লিজ।
আমার কি ভালো লাগে বল মা নিজের ছেলে কে মারতে? তুই সাইন করে দিলেই তো হয়।
আমি করবো যেখানে বলবা সেখানে করবো।
শরফি চৌধুরী মেঘার দিকে কাগজপত্র গুলো এগিয়ে দিলো। মেঘা নিদ্বধায় সাইন করে দিলো
মেঘার সাইন করতে শরীফ চৌধুরী মেঘাকে গুলি থাক করে হাসতে হাসতে বললো,,,আমার সব ব্যাংক ব্যালেন্স ক্রেডিট কার্ড ড্রপ হয়ে গেছিলো তোমার সাইন ছাড়া ব্যাংক আমায় ফাইনানসি দিতো না,আমি আর কোনো টাকা পয়সা সম্পত্তি কোনো কিছুইর প্রয়োগ করতে পারতাম না তাই তোকে প্রানে মারিনি আগে বললে আমার দূর্বলতা টা প্রকাশ হয়ে যেতে যে হা হা হা হা, তোমায় এবার তোমার মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দেই মামুনি?
সময়ের কাটা থেমে গেছে যেনো চারাদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে মেঘা চোখ বন্ধ করে দারিয়ে আছে শরীফ চৌধুরী বিজয়ের হাসি হেসে শুট করলো,
বুলেট এর থেকে দ্বিগুণ তেজে দৌড়ে এসে কাব্য বুলেট এর সামনে দারাতে তার বুক ফুটো করে বিধে গেলো গুলি। গুলির বিকট শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে উঠার অবস্থা, মেঘা চোখ খুলে দেখলো কাব্য তার সামনে হাটু গেরে বেশে আছে। কেউ কাউকে এতো ভালোবাসতে পারে তা মেঘার জানা ছিলো না ভালোবাসাকে বাঁচাতে মৃত্যু এর পরোয়ানা পর্যন্ত করে না।
মেঘা ধপ করে বসে পড়লো,কাব্যককে ধরে শুধু সে কাঁপছে কিছুই বলতে পাড়ছে না।
কাব্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,,
বাবা প্লিজ বাবা তুমি মেঘাকে মেরো না ওকে ছেড়ে দেও।
এটা তো হতে পারে না তোর বাপ কে মাপ করে দে তোর এই ইচ্ছাটুকু রাখতে পারলো না।
শরীফ চৌধুরী আবার মেঘাকে গুলি মারতে যাবে কেউ একজন তার মাথায় বন্ধুক তাক করেতে নিজের হাত থেকে বন্ধুক টা ফেলে দিলো আর কে বন্ধুক ধরেছে দেখতে অবাক হয়ে বললো,,
আয়েশা তুই?
হ্যা দুলাভাই আমি।
এতো দিন আমার খেয়ে আমার সাথে বেইমানি।
হুউ আপনার মতো নরপিশাচ এর হাত থেকে আমি আমার সন্তান দের রক্ষা করতে এসেছি আপনি একটা নর্দমার কীট যে নিজের সন্তান কে মারতে চায়। আপনার থেকে তো হিংস্র জানোয়ার ভালো সে অন্ততপক্ষে নিজের সন্তান এর ক্ষতি তখন করতে ভাবে যখন সে নিরূপায় থাকে।
মেঘা মা আমার তুই কাব্য কে নিয়ে পালিয়ে যা মা ওকে হসপিটাল নয়ে যা।
মেঘা তাড়াহুড়া করে কাব্য কে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
মেঘা কাব্যকে গাড়িতে তুলে নিজেই ড্রাইভ করে নিয়ে যাচ্ছে কাব্যকে।
মেঘা শুধু কেঁদে চলেছে কাব্যর রক্ত গাড়ির সিট পর্যন্ত ভিজে উঠেছে।
কাব্য অস্পষ্ট সুরে বললো,
এই মেঘ তুমি আমায় ভালোবাসো না না দেখ আমি এখন তোমার থেকে অনেক দূর চলে যাবো তখন তুমি বুঝবা
আপনি প্লিজ এভাবে বলবেন না আপনার কিছুই হবে না।
মেঘ আমি প্রথম দিন থেকে তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি এর শাস্তি এখন পাচ্ছি তুমি আল্লাহ এর কাছে আমার নামে বিচার দিচ্ছো তাই না।
আপনি চুপ করুন এভাবে বলবেন না।
আচ্ছা একটা শেষ কথা বলবা মেঘ?
হুম বলুন।
I love u megh
কাব্য করুন চাউনি নিয়ে মেঘার দিকে তাকালো
মেঘা কান্নামাখা মুখে কাব্যর দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে
খুব জোরে পিছোন থেকে কোনো গাড়ি এসে মেঘাদের গাড়ি টাকে ধাক্কা মারলো,
এতো জোর ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে মেঘা কাব্য গাড়ির কাঁচ গুলার সাথে বাড়ি খেয়ে ছিটকে পড়লো।
কাব্য খুব শক্ত করে মেঘার হাত ধরে ছিলো, কাব্যর হাত থেকে মেঘার হাত টা ছিটকে গেলো।
গাড়ির লাগামহীন আওয়াজের মধ্য শুধু শুনা গেলো
মেঘার চিৎকার কাব্যআআআআআআআআআ
!
!
!
!
!
!
!
১ বছর ৬ মাস পর_________________
সময় সময়ের গতিতে দৌড়ে। সময় একমাত্র স্বার্থপর যে কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
হস্পিটালের ওটির সামনে দারিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে বসে আছে মেঘা। চিন্ততা অস্থিরতায় তার সময় টা কাটছে না।
কবির তার সামনে পায়চারি করছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বিশাল চিন্তায় চিন্তিত।
এতো কিসের চিন্তা করছে তারা তা বুঝে পায় না বাইরে থাকা রঙিন পাখিটা।
পাখিটার দিকে অনেক্ষন ধরে মেঘা তাকিয়ে আছে সে এখন বেশ চিন্তামগ্ন হয়ে ভাবছে পাখি টা কি করছে না করছে তা এখন তার কাছে মেইন বিষয় না বিষয় হচ্ছে মিশু। এইসব আজেবাজে চিন্তা ঝেড়ে মেঘা মিশুর বিষয়টার প্রতি মনযোগী হলো।
ওটির দরজা ঠেলে ডাক্তার বেরিয়ে এসে নিজের মার্কস টা খুলতে খুলতে বললো,,
Congratulations! মিস্টার চৌধুরী আপনার মেয়ে সন্তান হয়েছে আর মা ও বাচ্চা দুইজনে ভালো আছে।
কবির খুশিতে হ্যান্ডশেক করলো ডাক্তার রায়হানের সাথে।
মেঘা লাফালাফি ঝাপাঝাপি করছে সে খালামনি হয়েছে বলে কথা।
যদিও সে ছোট বোনের বাচ্চার খালামনি হয়েছে সে দিকে তার ভাবান্তর নেই বললে চলে।
এই মর্ডান যুগে এমন ছোট ছোট কাহিনী হতে থাকে
চলবে______________