তুই তারারে ভিনদেশী ২ পর্ব-০৭

0
531

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:07

প্রতিদিনের মতো আজও আফরিনের ঘুম ভাঙে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে কিন্তু আজ এখনো মা ঘুম থেকে উঠেনি কি আজব ব্যপার কখনোই তো এত লেট করেনা। কোনো সমস্যা হলো না তো?! কালকে রাতেই বলেছিল বুকের বা পাশে কেমন ভারি ভারি লাগছে। আফরিন ডক্টর ডাকতে চাইলে বারণ করে দেয়। আফরিন তার মার রুমে দরজায় নক করে দেখে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।

ধীর পায়ে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে মা বলে ডাকে কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই। মুহুর্তেই বুকটা ধুক করে উঠে। অনেক ডাকার পরও যখন মায়ের কোনো হেলদোল নেই সে সোজা অন্যাকে কল দেয়, অন্যা আর তার ভাই আসছে। আফরিন তার একটু পরই ফারিনকে কল দেয়

” আপু আম্মুর যেন কি হয়েছে তুই একটু তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয় আমি মাকে নিয়ে যাচ্ছি। অন্যা তোকে হসপিটালের নাম সেন্ড করে দিবে।

ফারিনের মাথায়ও যেন আকাশ ভেঙে পরে। তারাতাড়ি সামির ( ফারিনের হাসবেন্ড) কে বলে বেড়িয়ে পরে। আদিত্যও শুনা মাত্র খাবার ছেড়ে উঠে যায়।

___________

হসপিটাল পৌছে কেবিনের দিকে যেতেই কানে ভেষে আসে, আফরিনের চিৎকার করে কান্না করার আওয়াজ। মুহূর্তেই আদিত্য থমকে যায়। ফারিন দৌড়ে যায় আফরিনের কাছে। অন্যা পাশে বসে আছে। চোখে জল। ফারিন আফরিনকে জড়িয়ে ধরে বলে

” কিছু হবে না। কান্না করবি না একদম। মা ঠিক হয়ে যাবে। আফরিন কান্না করতে করতে বলে

” কিছু ঠিক হবে না। আমি আমার মাথার উপরের ছাঁদ চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।

ডক্টর কিছু সময় আগে হাতের সীড়া চেক করেই বলে দিয়েছে, She is no more । কথাটা শুনা মাত্রই ফারিন আফরিনকে ছেড়ে দেয়। আর কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে সাদা কাপড়ে মুরানো তাদের মায়ের লাশ। সামির ফারিনকে সামলানোর চেষ্টা করছে আর অন্যা আফরিনকে। ফারিনকে কোনোভাবে সামলানো গেলেও, আফরিন

” আম্মু আম্মু বলে কান্না করছে। অহনাও আসছে হসপিটালে রাস্তায় সে। আদিত্য ডক্টরের সাথে কথা বললে জানতে পারে। ঘুমের মাঝে হার্ট এট্যাকে মারা গিয়েছে ফারিনের মা। সব ফর্মালিটিস পূরন করে আদিত্য বাসায় চলে আসে সবাইকে নিয়ে। বাসায় শুখের ছাঁয়া।

সবাই ব্যস্ত, ফারিন, অহনা আর অনেকে কোরআন তিলওয়াত করছে। আফরিনকে গোসল করিয়ে নিয়ে এসেছে অন্যা। শেষ বারের মতো নিজের মাকে দেখে কান্না করে দেয় আফরিন।

আফরিনের এই অবস্থা দেখে আদিত্যও কেঁদে দেয়। আহান আদিত্যর কাঁধে হাত রেখে বলে

” দোস্ত তোকে ভেঙে পরলে চলবে না।কৌশাল বলে

” তুই ভেঙে পরলে আফরিনকে সামলাবে কে?

ফারিনের শাশুড়ী আফরিনের মাথায় হাত রেখে বলে

” কাঁদিস না মা। কিন্তু আফরিন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। যখন আফরিনের মাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয়,, আফরিন শুধু একটা কথাই বলছিল।

” আম্মু, আমাকে ছেড়ে যেওয়না

একপর্যায়ে আফরিন সেন্সলেস হয়ে যায়। ফারিন বসে আছে আফরিনের পাশে হাত ধরে। ডক্টর বলে গিয়েছে আফরিন তার মার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি। ফারিন ভাবছে সেন্স আসতেই আফরিনকে কিভাবে সামলাবে। আদিত্য রুমে আসতেই ফারিন বলে

” আদিত্য তুমি একটু আফরিনের পাশে বসো। আমি নিচে দেখে আসছি। অহনা আর অন্যা একা হাতে পারবে না। আদিত্য মাথা দোলায়

_________

ফারিন চলে যায় আদিত্য চেয়ার টেনে নিয়ে আসে আর বসে পরে আফরিনের কাছে। হাতটা ধরে চুমু খেয়ে তাকায় মেয়েটার মুখের দিকে। ঘন্টা খানিকের মাঝেই কেমন হাসি খুশি মুখটা শুকিয়ে গেছে। গাল বেয়ে পানি পরেছে তার ছাপটা এখনে রয়ে গিয়েছে।

প্রায় রাত ৭ টার দিকে সেন্স ফিরে আফরিনের। তখন রুম সবাই উপস্থিত। আফরিনকে উঠতে দেখে কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তা দেখে আদিত্যসহ সবাই আফরিনের পিছু পিছু যায়। ড্রয়িং রুমে যেতেই আফরিন ভাঙা কন্ঠে ডাকে

” আম্মু!? তুমি কোথায়? দেখনা আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। কিচেন থেকে বেড়িয়ে এসে বলো না এটা একটা খারাপ স্বপ্ন। অ আম্মু। দেখে না আমি বলছি তো আমি আর তোমাকে জ্বালাবো না কই তুমি।

ফারিন ওড়ানা দিয়ে মুখ চেপে কান্না করছে। অহনা চোখের জল মুছে এগিয়ে আসে আফরিনের কাছে। আফরিনকে বলে

” এভাবে ভেঙে পরলে চলবে? আফরিন অহনাকে জড়িয়ে কেঁদে দেয় অহনা আফরিনের মাথায় হাত বুলায়। আফরিন বলে

” আমি শেষ আমি কাকে আম্মু বলবো?? অন্যা এসে বলে

” বারে আমার মা কি তোর মা না? তুইনা মামুনি ডাকিস। আদিত্যর আফরিনকে এইভাবে দেখে সহ্য হচ্ছে না। তাই সে সেখান থেকে সোজা ছাঁদে চলে যায়। আহান আর কৌশালও পিছু পিছু যায়।
আহান আদিত্যর নাম ধরে ডাকতেই আদিত্য বলে

” জানিস তো এই পর্যন্ত আমি যতবার আফরিনকে দেখেছি আমার সামনে কখনো কাঁদতে দেখেনি। আজ কেমন সব এলোমেলো লাগছে। এটা কি সেই আফরিন যার মুখে হাসি লেগেই থাকত? কৌশাল বলে

” দেখ আদিত্য আফরিনের এমন রিয়েক্ট করা স্বাভাবিক। পাখির বাচ্চা যেমন মা ছাড়া নীড় থাকতেও নীড়হীন পাখির মতো আফরিনেরও একই অবস্থা। এখন ওকে এইসব থেকে বের হতে তোকে সাহায্য করতে হবে।

আদিত্য লম্বা শ্বাস ফেলে

__________

আজ ১ দিন হতে চললো গলা দিয়ে একটা দানা অব্দি নামেনি আফরিনের। আফরিনকে হাজার চেষ্টা করার পরওখায়নি। তা দেখে এবার আদিত্য খাবার নিয়ে আসে। আদিত্য আফরিনের পাশে বসে বলে

” দেখ আফরিন এখন যদি আন্টি থাকতো তোমাকে দিত দুই তিনটা। আচ্ছা বলতো তার এই ছোট মেয়েটা যে না খেয়ে আছে তার কি ভালোলাগবে? আন্টি তো তোমার সাথেই আছে? তার দোয়া তার ভালোবাসা। এখন খেয়ে নাও তো।

আফরিন আদিত্যর দিকে তাকায়। আদিত্য ইশারায় খেতে বলে। আফরিনও আদিত্যর হাত থেকে খেতে লাগে কিন্তু কান্নার ফেলে খাবার গলা আটকে যাচ্ছে। আদিত্য তা দেখে বলে

” মার দিব আরেকবার কান্না করলে। ফারিন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাথে সামির। সামিরের দিকে তাকিয়ে খুব কষ্টে একটা হাসি দেয়। এখন তার ভেঙে পরলে চলবে না আফরিন এখন তার দায়িত্ব।

___________

রুম অন্ধকার করে বসে আছে আফরিন রুম

হঠাৎ করেই রুমে আদিত্য আসে পর্দা গুলো টেনে দিলেই একফালি রোদ এসে প্রবেশ করে রুমে। আফরিন নিচে বসে বসে মাথা গুজে কান্না করছিল। সাথে আদিত্যার মা, ফারিন অন্যা আসে সবাই আসে। অহনা বলে

” এই আফরিন জানিস কি হয়েছে? ঐ আহান না আবার আরেকটা মেয়েকে বাইকে করে ঘুরাতে নিয়ে গিয়েছে। তুই একটু বকে দেতো। হারামি।

আফরিন তাও চুপ তা দেখে অন্যা বলে

” জানিস আফরিন কৌশাল বাদরটার বাইকের চাকা আজ আমি পান্ঞ্চার করে দিয়েছি। ভালো করিছি না বল?

এতেও আফরিনের হেলদোল নেই। আদিত্য আফরিনের কাছে গিয়ে পাশে বসে সবাইকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে আর আফরিনকে বলে

” আন্টিকে অনেক মিস করছ?? আফরিন আদিত্যর দিকে কান্না ভরা মায়ার দৃষ্টিতে তাকায়। তা দেখে আদিত্য পা বাড়ায় আফরিনের মার রুমের দিকে সবাই শুধু ভাবছে আদিত্য কি করতে যাচ্ছে!?

আদিত্য একটা শাড়ি নিয়ে এসেছে। এটা দেখা মাত্রই আফরিন চিনে ফেলে এটা তার আম্মুর। আদিত্য ফারিনকে বলে

” ভাবি আফরিনকে শাড়ি পরিয়ে রেডি করে দাও বেরুবো। অহনা আহানকে কল দিয়ে আসতে বলো।

আফরিন রাজী না হলেও ফারিনের শাশুড়ী মা আর ফারিন জোর করে আফরিনকে শাড়িটা পরিয়ে দেয়। শাড়ীটা সুবজ রঙের আর কালো রঙ আচলের ।

আফরিনের মনে হচ্ছে তার মা তার সাথে। শাড়ীটায় সে তার মার গায়ের গন্ধ পাচ্ছে। এবার আফরিন বুজতে পারছে আদিত্য কেন তাকে তার মার শাড়ী পরতে বললো। আফরিন সেটা পরেছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে । আদিত্য রুমে নক করে। আফরিনের সামনে আসতেই আফরিন আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে

” থ্যাংক ইউ। আদিত্য আশাপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। আফরিনের হাত ধরে একটা চুমু দিয়ে……

চলবে…?