তুই তারারে ভিনদেশী ২ পর্ব-০৯

0
509

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:09

হঠাৎ মাঠের মাঝে মাথা চক্করে দিয়ে উঠে আফরিনের চোখে অন্ধকার দেখে। যেই না মাথা ঘুরে পরতে যাবে অমনি আদিত্য দৌড়ে এসে ধরে ফেলে। আর কৌশালকে বলে

” তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে আয়। জলদি। কৌশাল বলে

” এই রোদে না রেখে ওকে ক্যান্টিনে নিয়ে চল। আদিত্য কিছু না ভেবেই কোলে তুলে নেয় আফরিনকে। ভার্সিটির সবাই কানাকানি করছে আদিত্য আর আফরিনকে নিয়ে। আফরিনকে চেয়ারে বসিয়ে চোখে মুখে পানি দিতেই হুশ আসে।

সামনে আদিত্যকে দেখে বলে

” আপনি এখানে!? আদিত্য সেই সব বাদ দিয়ে বলে

” আমি সব জায়গাই এখন এইটা বলো, এভাবে মাথা ঘুরে পরলে কেন? রাত জাগছো? নাকি খাওয়া দাওয়ার প্রতি আবার সেই হেলামি কোনটা??

অন্যা কৌশালকে ধাক্কা দিয়ে বলে

” এই ওদের মধ্যে কি চলছে? কৌশাল বলে

” প্রেম প্রেম গন্ধ চলছে। অন্যা বলে

” হায় আমি যদি এমন একটা কেয়ারিং বিএফ পেতাম!! কৌশাল বলে

“শুনলাম তোর শহরে আজকাল হলুদ খামে নীল চিঠির কাড়াকাড়ি?💌

অন্যা বলে

” তো আপনার কি? কৌশাল বলে

“ভাবিস তাই বলে কি হিংসায় আমি জ্বলে মরি? অন্যা

ভাব নিয়ে বলে

ভাবিস না যে তোকে বলেই দিবো ভালোবাসি,
কারণ আমার শহরে ভালোবাসায় চরম এলার্জি।😅

—ঘাসফড়িং

কৌশাল বুঝতে না পেরে বলে


মানে? তোমার না বিএফ আছে!?

” না ব্রেকআপ হয়েছে, আসলে আমি বিরক্ত কারণ আমি যখনই ভাবি হয়তো সম্পর্কটা ঠিক যাচ্ছে তখনই সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়। কৌশাল বলে

” আমাকে তো চোখে পরে না। দেখ এই গরুর মতো চোখ গুলো দিয়ে দেখ আমাকে।

অন্যা ভেংচি কেটে আদিত্যর দিকে তাকায়।

আদিত্য শ্বাসন করছে আফরিনকে

” এই যে মিস আপনার সমস্যা কি? হুমম!? খাওয়া দাওয়া না করে কি এমন কাজ করছ? আফরিন চুপ। আদিত্য বলে

” তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলো না। চলো আজ আর ক্লাস করতে হবে না সবাই একসাথে রেস্টুরেন্টে লান্ঞ্চ করব।

আফরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ধমক দিয়ে বলে

” একবার বলেছি আর বলতে পারবো না। আহান আর অহনাও চলে এসেছে তখন। আদিত্য সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পরে রেস্টুরেন্টের জন্য।

______________

ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে আফরিন আর অন্যা দুজনেই বকবক করে মাঠ পেরিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল , তাদের কথার মূল কারণ ছিল আহান আর অহনার এনগেজমেন্ট। দু’জন দুজনের পরিবারকে তাদের ব্যাপারে বললে কেউ আপত্তি করেনি। ৩ মাস পর তাদের এনগেজমেন্ট। কিন্তু মথাটা ঘুরাচ্ছিল আফরিন। সকালে তাড়াহুড়োয় কিছু মুখে দেয়নি
। অহনা আসবে একটু পরে আহানের সাথে সে কথা বলছিল। তাই কাবাবের হাড্ডি হয়নি আফরিন আর অন্যা। আদিত্য আর কৌশালও তাদের পিছু পিছু আসছিল।

_______________

আজ মাসখানিক হয়ে গিয়েছে সেই ঘটনার। আফরিন নিজেকে বললে ভুল হবে আদিত্য আফরিনকে সামলে নিয়েছে। ফারিন আফরিনকে আদিত্যদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে আফরিন বলে সে যাবে না। সে এখানেই থাকবে তার মার স্মৃতি নিয়ে। বাসাটা সম্পূর্ণ আফরিনদের, নিচের ৬ ছয়তালা ভাড়া দেওয়া ছিল। তাই আর আর্থকি অবস্থা নিয়ে কোনো রকম সমস্যা নেই।

____________

আফরিনকে আদিত্য বলে

” হেটে যেতে পারবে?? নাকি!!! আফরিন বলে

” হুমম যেতে পারব। আদিত্য আফরিনের হাত ধরে উঠতে সহায্য করে। আফরিন শুধু তাকিয়ে দেখছে আদিত্যকে। এই মানুষটা বরই অদ্ভুত কেমন খেয়াল রাখে। আদিত্য আফরিনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে

” কি হয়েছে কিছু বলবা? আফরিন ইশারায় বলে না।

অহনা আহান কে বলে

” আদি ভাইয়ার থেকে কিছু শিখতে পারে না?? বিয়ের পর কেয়ারলেস হলে খাবার জুটবে না কপালে।

আহান হাসি দিয়ে বলে

” সমস্যা নাই ফুডপান্ডা আছে। অহনা রাগী চোখে তাকালে একটা হালকা ফ্লাইং কিস দিয়ে বলে

“চলো।

_________★___________

রেস্টুরেন্টে বসে আছে সবাই। আদিত্য ওয়েটার ডেকে খাবার অর্ডার দিতে বলে সবাইকে। আহান আর অহনা ফ্রাইড রাইস চিলি চিকেন অর্ডার করে । আর অন্য কৌশালও সেম। আদিত্য বলে

” দুইটা চিজি পাসতা, আর ভেনিলা আইসক্রিম । আফরিন মুচকি হাসে। এই একমাসে আদিত্য তাকে কতটা চিনে ফেলেছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই বেড়িয়ে পরে বাইক নিয়ে।অন্যা কৌশাল এক বাইকে। অহনা আর আহান এক বাইকে। আদিত্য আর আফরিন আদিত্যর বাইকে।

আদিত্য আফরিনকে বাসায় ছাড়তে আসলে শুরু হয় শেষ পথে ঝুম বৃষ্টি। ব্যস্ত শহরে হঠাৎ করে ঝুম বৃষ্টি। আফরিন এই বৃষ্টিটাকে উপভোগ করতে চায় তাই হাত মেলে দেয়। আদিত্য বলে

” আফরিন ভালো ভাবে ধরে বসো নয়তো পরবে।

আফরিন আদিত্যর কথা শুনে আদিত্যকে ধরে বসে। আদিত্য বাইকের গতি বাড়িয়ে দেয় আর মিনিট ২ পর তারা বাসায় চলে আসে। আদিত্য অনেকটা ভিজে গিয়েছে আর আফরিনও। আফরিন বলে

” বাসায় আসুন বৃষ্টি কমলে রাতে খাওয়া দাওয়া করে তারপর না হয় । আদিত্য মুচকি হাসি দিয়ে বলে

” আচ্ছা তুমি যাও আসছি। আফরিন মেন ডোর ওফ না করে সোজা রুমে চলে যায় বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে তাই শাওয়ার নিতে হবে। ডোর ওপেন রেখেছে আদির জন্য । একটা কালো নরমাল ড্রেস চুলগুলো মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে আফরিন।

চুল মুছতে মুছতে চলে আসে ড্রয়িং রুমে। দেখে আদিত্য ভেজা চুল নিয়ে বসে আছে। আর টিভি দেখছে। আফরিন চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলে

” এই যে মিস.। আদিত্য আফরিনের দিকে তাকায়। দেখে তার সামনে দাড়িয়ে আছে এক রূপসী। আদিত্য আফরিনের দিকে আসতে আসতে বলে

” কি হয়েছে? কোনো সমস্যা। আফরিন আদিত্যকে বলে

“যেখানে দাড়িয়ে আছেন সেখানেই থাকেন। আদিত্য বলে

” কেন? আফরিন চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলে।

“এইযে আপনার জুতায় লেগে থাকা কাদা দিয়ে খুব সুন্দর ডিজাইন করছেন। আর করতে হবে না। আদিত্য এক ভ্রু উচু করে বলে

” তাই?? আফরিন আদিত্যর কাছে গিয়ে বলে

” হ্যা তাই আর এই যে তোয়ালে এটা দিয়ে মাথা মুছে ফেলুন নয়তো সর্দি লাগবে, চুল দিয়ে পানি পড়ছে। আপনাকে না কত বার বলেছি হেলমেট পরে বাইক চালাতে।

আদিত্য নিজে আফরিনের দিকে ঝুঁকে ওর সামনে চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়া দেয়। আর ফল স্বরূপ পানি গিয়ে লাগে আফরিনের মুখে। আফরিন নিজের হাতের তোয়ালেটা আদিত্যের মাথায় দিয়ে আদিত্যকে সোফায় বসিয়ে দেয় আর বলে

” চুল মুছুন আর আমি এটা ক্লিন করছি। আদিত্য কিছু বলে না। আফরিন সব ক্লিন করে এসে বসে পরে আদিত্যর পাশের সিঙ্গেল সোফায়। আদি বলে

” সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছি। আফরিন একটা হাসি দিয়ে বলে

” আসেন আপনাকে ছাদে রসিতে ক্লিপ দিয়ে কাপড়ের মতো শুকা দিয়ে আসি।

আদিত্য বলে

” হাউ ফানি। সত্যি ঠান্ডা লাগছে বৃষ্টিও কমার নাম নেই। আফরিন বলে

” চলুন কিচেনে যাই আগে কফি তারপর নাহয় রাতের রান্নার আয়োজন করব। ঠান্ডাও কম লাগবে সময়ও কেটে যাবে। বৃষ্টি কমলে অহনা, অন্যাকেও কল দিব আপনি আহান ভাইয়া আর কৌশাল ভাইয়াকে কল দিয়ে বলে দিয়েন বাসায় আসতে।

বলেই রান্না ঘরের দিকে যায়। আদিত্য আফরিনের পিছু পিছু যেতে যেতে বলে

” কেন কিছু রান্না করবে নাকি? আফরিন বলে

” হুমম খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা। আদিত্য বলে

” আরে বাবা। তুমি রান্নাও পারো? তা পেট ঠিক থাকবে তো। আফরিন রেগে বলে

” আপনার খেতে হবে না যান। আদিত্য বলে

” রাগীনি তোমার রাগে বকুল ফুলের মতো

কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো। সেই ডাগর ডাগর আঁখি।

আফরিন আদিত্যকে বলে

” হয়েছে হয়েছে।

আদিত্য কফি খাচ্ছে আর আফরিনকে জ্বালাচ্ছে। বক বক তো চলছেই। আফরিন বিরক্ত হয়ে একটা কাঁচা মরিচ আদিত্য যখন কথা বলতে যাবে তখন আদিত্যর মুখে পুরে দেয়। আদিত্যও ভুল বসত সেটায় কামড় বসায়। ঝালে বেচারা

” আম্মু বলে চেচিয়ে উঠে। আফরিন হাহা করে হাসতে লাগে বেচারা কফি ফেলে পানি খাচ্ছে।
পানি খাচ্ছে। শেষ আফরিন চিনি খেতে দিলে একটু ঠিক হয়। কি রকম ফাজিল। আদিত্য আফরিনের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আর হুট করেই আফরিনের গালে হালকা কামড় দিয়ে বলে

” এটা তোমার শাস্তি। আর কিচেন থেকে সোজা বেরিয়ে যায়। আফরিন এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

চলবে

গঠন মূলক কমেন্ট করো সবাই