#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 32
পরেরদিন সকালে আঁখি ঘুম থেকেই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা করে নেয়। তারপর উপরে এসে রেডি হয়ে নেই। আঁখি রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে আম্মু অলরেডি বসে আছে। শুধু আমার অপেক্ষায় আছে। আমি নিচে নামতেই
-এসেছিস আম্মু। তাড়াতাড়ি চল আয়াজ ফোন দিচ্ছে আমাকে বারবার।
-হুম আম্মু চলো।
শপিংমলে পৌঁছাতে দেখলাম আয়াজরা আগেই চলে এসেছে। আমি গিয়ে আরিফা আপুকে একটা টাইট করে হাগ করলাম। বাট আজিফা আপুকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। তাই আরিফা আপু থেকে জিজ্ঞেস করলাম
-আপু আজিপু আসেনি।
-নাহ আসনি।
-কেন?
-আরে আঙ্কেলের নাকি কি একটা প্রবলেম হয়েছে তাই চিটাগং গিয়েছেন। সাথে ফুফিও গিয়েছে। ইফাজ অফিসে। তাই আজিফা আর আসেনি। এভাবে পুরো বাসা ফাঁকা করে আসাটা ঠিকনা। তাই আর আসেনি।
-ওহ আচ্ছা।
আয়জকে দেখলাম একটা পার্পেল শার্ট পরে এসেছে। বেশ ভালোই মানিয়েছে। যতবার দেখি ততবারই এই ছেলের প্রেমে পড়ি। এরমধ্যে যে আয়াজ কখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি। আয়াজ আমার হাতটা চেপে ধরাই হুঁশ ফিরে আসলো। তাই আয়াজের দিকে তাকাতেই বলল
-সকালে খেয়েছিস?
-হুম খেলামই তো।
-অনেক হট লাগছে তোকে।
-আমি যেনো পুরাই বেক্কল হয়ে গেলাম। কিসের ভিতর কি ঢুকিয়ে দিলো। আপনি বড়ই নির্লজ্জ।
বলতেই একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকলাম। আমি একদিকে দাঁড়িয়ে আছি। কজ আরিপু শাড়ি দেখছে। আমি আর কি করবো। তখনই আরিপু আমাকে ডাক দিলো।
-আরে আঁখি ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে। এদিকে আয়। নে শাড়ী লেহেঙ্গা পছন্দ কর।
কিন্তু আমি ওখানে গিয়ে কনফিউসড হয়ে আছি। কোনটা রেখে কোনটা নিবো। কজ শাড়ী লেহেঙ্গা দুইটাই অসাধারণ। তাই একটা শাড়ী হাতে নিয়ে নিলাম। দেখলাম আয়াজ দূরে কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই জিজ্ঞেস করলাম। কেমন লাগছে। আয়াজ ইশারায় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল টি নিচু করে বুঝালো ভালো হয়নি। এরপর আরো বেশ কয়েকটি শাড়ী লেহেঙ্গা দেখালাম কোনাটাই তার মন মজসে না। শেষে গর্জিয়াছ একটা পার্পল কালারের লেহেঙ্গা চোখে পড়লো। কাজ গুলো খুবি সুন্দর। ওটা হাতে নিয়ে আয়াজের দিকে তাকাতেই বলল ডান। অর্থাৎ মহারাজের পছন্দ হয়েছে।
আরিফা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের দুজনের কান্ডকারখানা নোটিশ করে যাচ্ছে। ভালোই লাগছে। দেন গয়নার দোকানে গিয়ে তাও সেম আয়াজের পছন্দ মতো গয়নাগাটি কসমেটিকস জুতো সবকিছু কিনা হয়েছে। তবে আয়াজের সেরওয়ানিটা আরিপু পছন্দ করে নিয়েছে। পুরো একটাদিন শপিং করতে করতে পার হয়ে যায়।
আসার সময় আয়াজ সবার জন্য খাবার প্যাক করে দেয়। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিতেই চক্ষু যেন চড়কগাছ। কারণ আয়াজের বিশটার উপরে কল আসছে। আর আমি কিনা কি মরার ঘুম ঘুমালাম টেরই পাইনি। চোখের সামনে নিজের দুর্দশা চোখে দেখতে পাচ্ছি। তাই ভয়ে ভয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আয়াজের নাম্বারে কল দিলাম। আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম। ফোন রিসিভ হতেই আয়াজ চিল্লিয়ে বলে উঠলো
-ফোন কোথায় ছিলো।
–আআসলে ঘঘঘুমিয়ে ছছিলাম।
-শপিংমলে আমি বলিনি বাসায় গিয়ে কল দিবি। তাহলে?
-মমনে ছিলো না। প্লিজজ সসরি।
-আয়াজ কোনোরকম চোখ অফ করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার ট্রাই করে। তারপর বলে উঠলো। হুুম ওকে।
আয়াজকে শান্ত হতে দেখে আঁখি স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো।
-কি করছিস?
-ঘুম থেকে উঠলাম।
-সকালে নামায আদায় করেছিস?
-হু করেছি।
-গুড! যা এবার উঠে নাস্তা করে নে।
-খালামনি আর আঙ্কেল আসবে নাকি আজকে?
-হুম। বিয়ের ডেট দেওয়ার জন্য।
-ওহ।
-রাখছি তাহলে।
-আচ্ছা। বাই।
-হুম বাই।
বিকেলে খালামনি আর আঙ্কেল আসবে তাই বাসায় ভালো মন্দ রান্না হচ্ছে। আর আমি আম্মুর সাথে রান্নাঘরে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছি। যাতে তাড়াতাড়ি হয়ে যায় এইজন্য।
রোজিনা চৌধুরী আলতাফ চৌধুরী আসতেই, আঁখি ট্রেতে রেডি করা নাস্তাগুলো আম্মুর হাতে দেয়। দেন আম্মু নাস্তা গুলো তাদের কাছে নিয়ে গিয়ে বসে একসাথে খোশগল্প করতে থাকে। আর বিয়ের ডেটটাও ফিক্সড করে ফেলে। অর্থাৎ নেক্সট উইকের ১০তারিখ।
এর মধ্যে পুরো এক সপ্তাহটা কেটে যায়। আজ আঁখি আর আয়াজের গায়ে হলুদ। দুইজনেরই একসাথে মেহেন্দি প্রোগ্রাম টা হচ্ছে। আঁখি হলুদ রঙের একটা ভারি লেহেঙ্গা পরেছে। গলায় একটা নেকলেস, কপালে টিকলি, হাত ভর্তি চুড়ি, কাঁচা ফুল দিয়ে হেয়ার স্টাইল করা। হাতের বাহুতে কাঁচা ফুলের বাহু বন্ধনিতে মেয়েটাকে যেনো পরীর মতে লাগছে। আয়াজ ও আঁখির সাথে মেচিং করে পাঞ্জাবি পরেছে। দুজনকে এতই সুন্দর লাগছে যে হলে সকল মানুষ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। দুইজন যেন দুজনার জন্য তৈরী। বেশ মানিয়েছে।
আজিফা, ইফতি, আরিফা, ইফাজ সহ আরো অনেকে সবাই নাচের তালে তাদের বরণ করে ভিতরে প্রবেশ করাই। দুর থেকে রোজিনা চৌধুরী এবং নুরী রহমান ছেলেমেয়ে দুটোকে দেখে কয়েকফোটা চোখের পানি ফেললো। আর মনে মনে দোয়া করলো সারাজীবন যেন এভাবেই একসাথে থাকতে পারে ছেলেমেয়ে দুটো। কারো বদনজর যেন তাদের উপর না পড়ে।
সবাই একসাথে ছবি তুলছে। আর নাচগানে মেতে উঠেছে। কেক কাটাকাটি শেষ হতেই শুরু হয়ে গেলো ছেলে মেয়েদের গ্রুপ ডান্স। সবার ডান্স শেষ হতেই এবার এলো আয়াজ আর আঁখির লাস্ট পারফোমেন্স। আয়াজ আর আঁখিকে একসাথে কাপল ডান্সের জন্য আমন্ত্রণ জানাতেই তারা ধীরে সুস্থে এগিয়ে। মিউজিক অন হতেই তারা নাচ শুরু করে দেয়। মঞ্চের পাশেই ছোট বাচ্চারা আতশ বাজি ফাটাচ্ছে। আর বড়রা সবাই তাদের নাচের তালে হটাৎ হটাৎ তালি দিয়ে উঠে। আর জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে উৎসাহ দিতে থাকে।
এরই মাঝে আয়াজ সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে নাচের তালে তালে আঁখির কানে কানে ফিসফিস করে বলে…
আমাকে মেরে ফেলার ধান্দা করেছিস নাকি। মনতো চাচ্ছে এখনি বাসর করে ফেলি। আঁখি অবুঝের মতো প্রশ্ন করলো..
-বাসর কি?
-আয়াজের মাথায় হাত।
-কি?
-কিছুনা।
-কিছু না মানে? আপনি না বললেন কি বাসর না টাসর?
-ও কিছুনা। বাদ দে। দেখ সবাই আমাদের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।
-আয়াজের কথায় আঁখি সামনে ঘুরে তাকালো।
আর এদিকে আয়াজ বেচারা মনে মনে বলছে এই মেয়েতো আমার বাসর রাতের সব প্লানেই পানি ঢেলে দিয়েছে। যে মেয়ে কিনা বাসর বুঝেনা তাকে কিভাবে? উফফ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি কাল রাতে আমার সেই লেভেলের কাটকোড় পোড়াতে হবে। কিন্তু যায় হয়ে যাকনা কেন কালকে আমি তোকে আমি ছাড়ছি না। আমার এতদিনের প্রতীক্ষা এতো সহজে ভেস্তে দিতে পারিনা। না বুঝলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ম্যাথমেটিকসের মতো করে বুঝামো। তাও ছাড়মু না। আমার ২৫ বছরের সাধনা। হায় দুঃখ। কেউ আমারে এক গ্লাস দুধ আর এক প্লেট আনারস দে খেয়ে মরে যায়।
চলবে
#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 33
আয়াজ আঁখির নাচ শেষ হতেই সবাই করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। হাসি আনন্দের মধ্যে দিয়ে গায়ে হলুদের প্রোগ্রামটা শেষ হয়।
পরেরদিনই বিয়ে। সারারাত কেউ ঘুমাইনি বিধায় সারা সকাল সবাই পরে পরে ঘুমোচ্ছে। বেলা বারোটা বাজতে চললো এখনো কেউই উঠার নাম নিশ্বাস নেই শুধু বড়রা ছাড়া। নুরী রহমান ঘড়ি দিকে তাকিয়ে আঁখিকে ডাকতে যায়। কি মেয়েরে বাবা? নিজের বিয়ে নিজেরই খবর নেই। পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। পার্লারে যে যেতে হবে সেই খেয়ালকি আর আছে? কখন উঠবে রেডি হবে। উফফ সব আমারই জ্বালা। এই মেয়ে কি করে সংসার করবে বুঝতে পারছিনা। এসব বিড়বিড় করতে করতে আঁখির রুমে গেলো।
-আঁখি! আঁখি! এই মেয়ে উঠ। আর কতো ঘুমাবি। উঠ উঠ।
-কি হয়ছে। এমন করো কেন?
– উঠে ফ্রেশ হয়েনে। বারোটা বাজতে চললো সে খবর কি আছে?
– কোনোরকম চোখটা খুলে উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে ওয়াশরুমের দিকে পা বারালাম। দেন ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম। মোবাইলটা হাতে নিতেই আয়াজের কল আসলো।
– আসসালামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুসসালাম। কি করছিস? এইতো মাত্রই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম।
-নাস্তা করেছিস?
-হ্যাঁ করলামতো। আপনি খেয়েছেন?
-হুমম
– কি করছেন?
-এইতো বাইরের দিকটা সামলাচ্ছি। ইফাজ একা একা এতোকিছু পারছেনা।
-ওহ আচ্ছা।
এরমধ্যে নুরী রহমানের ডাক পরতেই আঁখি আওয়াজ করে উঠলো..
-হ্যাঁ আম্মু
-আজিফা ফোন করেছে আমাকে। তোকে নাকি ফোনে বিজি পাচ্ছে তাই। পার্লারের যাওয়ার জন্য বের হতে বলল।
-ওকে আম্মু।
এরপর নুরী রহমান চলে গেল। আর আঁখি আয়াজকে বাই বলে লাইন কেটে দিলো। রেডি হয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পার্লারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
কনবেনশন হলে যখন আঁখি প্রবেশ করে আয়াজ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে? এটা কি তার বউ? বিশ্বাসই করতে পারছেনা। হা হয়ে আছে। যেনো একটা খয়েরী হুর পরী। অসম্ভব কিউট লাগছে। আয়াজকে এমন ব্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফাজ আয়াজের পেটে চিমটি কেটে বলল.. এভাবে কি দেখিস? নজর লাগবেতো ভাবীর!
-দূর শালা।
আয়াজও আঁখির সাথে মেচিং করে একটা শেরওয়ানি পরে। শেরওয়ানির বুকের দিকে কাজটা জাস্ট ওয়াও। কাজটা যেনো আয়াজের সৌন্দর্য দিগুন বাড়িয়ে দিলো। আঁখি আয়াজকে এভাবে দেখে জাস্ট ফিদা হয়ে গেলো।
আঁখিকে নিয়ে গিয়ে আয়াজের পাশে দাড় করিয়ে দেয়। ফটোগ্রাফার দুজনকে বিভিন্ন পোজে পিক তুলতে লাগে।
তাদের কাপল পিক তোলা শেষে ফ্যামিলির বাকিরা সবাই তাদের সাথে পিক উঠায়। এরপরই আসে বিয়ে পড়ানোর পালা। আয়াজকে কবুল বলতে বললেই খুব শান্ত ভাবে সুন্দর করে কবুল বলে দেয়। কিন্তু আঁখিকে যখন বলতে বলে তখন যেনো বিষন লজ্জা ভয় কেমন অদ্ভুত ফিলিংস হয়। প্রায় আধাঘন্টা সময় নিয়ে কবুল বলে। কবুল বলার সাথে সাথেই সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। কাজী যখন আঁখিকে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার জন্য কলমটি হাতে দেয়। তখন আঁখির হাতটি অসম্ভব কাঁপছে। এই একটি সাইন তার জীবনটা অন্যজগতে পা দিবে। সারা জীবনের জন্য বাঁধা পরে যাবে আয়াজের বাঁধনে। এই মূহুর্তটা যে একটা মেয়ের জন্য কি পরিমান ভয়ংকর তা শুধু সেই জানে। টপটপ করে চোখের পানি রেজিস্ট্রার পেপারে পড়ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে বহুত কষ্টে সাইনটা করে।
টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। আঁখি আর আয়াজকে পাশাপাশি বসানো হয়। কিন্তু আঁখি কিছুতেই খেতে পারছে না। কজ একেতো এতো ভারি ভারি গহনা তারউপর একদম মোটেও তার খাওয়াতে মন মজসে না। খেতেই ইচ্ছে করছে না। তবুও আয়াজ জোর করে নিজের হাতে বেশখানিকটা খাইয়ে দেয়।
বিদায়বেলায় নুরী রহমান মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে। আঁখিও মাকে আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। পুরো রাস্তা আঁখি হেঁচকি তুলে কেঁদে কেঁদে আসে।
বাসায় আসতে সবাই খুব সুন্দর বরন করে আঁখিকে রুমে দিয়ে আসে।
আঁখি যেনো চরম অবাক। এই রুমমটাতে এতো ফুল কেন? বাট খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু এতো সাজানো কেন? বিয়ে বাড়িতে কি বাড়ির সাথে সাথে বেডরুমও কি সাজানো হয় নাকি? কই কখনো তো দেখিনি। কি জানি! ঘুরে ঘুরে আঁখি পুরো রুমটা দেখতে লাগে। এমন সময় আয়াজ ভিতরে রুমে ঢুকে। ঢুকেই দেখে তার প্রিয়তমা অবাক হয়ে রুমটা দেখছে। আয়াজ ভালো করেই বুঝতে পারে যে, তার প্রিয়তমার এসব নিয়ে কোনো ধারণা নেই? না থাকারই কথা। বয়সইবা কতটুকু হয়েছে। সবেইতো এসএসসি দিলো। বুঝার বয়স শুরু হতেই সংসার জীবনে পদার্পণ করে ফেলেছে।
আয়াজ দরজাটা লক করে আঁখির পাশে এসে দাড়ালো।
-এই ভারি গহনা জামা খুলে ফ্রেশ হয়ে আয়।
-অনেক ভারি একা একা পারছিনাতো!
এরপর আয়াজ নিজেই হেল্প করে সব গহনাপাতি খুলে। একটা শিপন শাড়ী হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে। আঁখিও তাই করে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে একটাই সেতো শাড়ী পরতে পারেনা। কি করবে এখন? অনেক চেষ্টা করছে বেচারি বাট কিছুতেই পারছেনা। তারউপর শিপন শাড়ী। এদিকে ধরলে ওদিকে পড়ে যায়। কি এক অবস্থা। শেষে আর না পেরে কোনোরকম সাপের মতো পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো।
আয়াজ আঁখির শাড়ী পরা দেখে ফিক করে হেঁসে দিলো। তারপর ঠিক করে পরিয়ে দিলো আয়াজ। শিপন শাড়ী আর ভেজা শরীরে মেয়েটাকে অসম্ভব আবেদনময়ী লাগছে। আয়াজ আর কিছু না বলে নিজেই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে নিলো। এসেই আঁখিকে বলল আয় একসাথে নতুন জীবন শুরু করার আগে দু রাকাত নফল নামায আদায় করেনি। আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবো। আঁখিও মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
তারপর দুজন একাসাথে নামায আদায় করে নিলাম। সালাম ফিরিয়ে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলাম। এরপর জায়নামাজটা গুছিয়ে শুতে যেতেই আয়াজ আমার হাতটা ধরে ফেললো। অসহায় চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে। এই চোখ যেনো আমাকে অন্য কিছু বলছে।
-কি হয়েছে? আপনারকি খারাপ লাগছে?
-নাহ কিছুনা। চল ঘুমাবো।
-হুমম
দুইজনই শুয়ে পরলাম। কিন্তু আয়াজের চোখে যেনো ঘুম নেয়। বারবার এপাশ ওপাশ করছে। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই আয়াজ আমাকে টান দিয়ে তার বুকে ফেলে দিলো। তারপর আমার মুখটা দুহাতের মুটোই নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আজকে আয়াজকে কেমন মাতাল মাতাল লাগছে। আয়াজ আঁখিকে নিচে ফেলে আঁখির উপর উঠে নেশাগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আজকে আয়াজের চোখ যেনো কেমন কেমন লাগছে। এই চোখের ভাষাতো আমি পড়তে পারছিনা। মনে হচ্ছে গভীরভাবে কিছু একটা সে চাইছে আমার কাছে? কিন্তু কি হতে পারে। তখনই আয়াজ আমার গলায় মুখ ঘষতে ঘষতে বলে উঠলো..
-আই ওয়েন্ট ইউ!
-আমিতো তারই। এতে আবার চাওয়ার কি আছে। আয়াজ আবারো ফিসফিস করে বলে উঠলো আই ওয়েন্ট ইউ। আই কান্ট কন্ট্রোল বেবি। আয়াজ যেনো নিজের মধ্যে নেয়। ঘোরের মাঝে চলে গেলো। নেশাক্ত চোখে আঁখির দিকে চেয়ে আছে আর আদর করছে। প্লিজ? আঁখি কিছু না বুঝেয় আবালের মতো বলে উঠে
-হুম। আসলে আঁখি নিজেই বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে এসব। আয়াজকে আজকে কেমন যেনো লাগছে। এই আয়াজকে তো সে চিনে না। কই আরো অনেক রাততো সে আয়াজের সাথে ঘুমিয়ে ছিলো। কই ওই আয়াজের সাথেতো এই আয়াজের কোনো মিল পাচ্ছে না।
আয়াজ যেনো যততত আঁখির গভীর হতে গভীরে ভালোবাসছে। আঁখি কেমন যেনো আয়াজকে ভিষণ ভয় করছে। আয়াজের চোখদুটো কেমন লাল টকটকে আছে। আঁখি নিজেও মাতাল হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই জানে না বুঝছেও না। শুধু মনে হচ্ছে সে নিজেও কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। যা সে নিজেও জানেনা।
তবে এবার যেন সত্যিই ভিষণ ভয় করছে। কি হচ্ছে এসব? আয়াজকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইছে? বাট পারছেনা। আয়াজ যেনো নিজের মধ্যে নেই? এবার আঁখি কেঁদেই দিলো। ভিষণ জোরেই কেঁদেই দিলো। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। ব্যথা যে আর সইতে পারছেনা। তাই আয়াজে ধাক্কিয়ে খামচিয়ে সরানোর ট্রাই করছে বাট পারছে না। আঁখির খামচিতে আয়াজ যেনো আরো পাগল হয়ে গেলো। আঁখির কাঁদতে কাঁদতে হিঁচকি উঠে গিয়েছে।
আয়াজ নিজের মধ্যেই আসতেই যেনো। ঘাঁবরে গেলো। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ লাল করে ফেলেছে। কি থেকে যে কি হয়ে গেলো। শিট! কেনো যে নিজের মধ্যে কন্ট্রোলটা রাখতে পারনি। বাচ্চা মেয়েটা না জানি কতটা কষ্ট পেয়েছে। আঁখি কাঁদতে কাঁদতেই ওভাবে ঘুমিয়ে গেলো। কজ ভিষণ দূর্বল হয়ে পড়েছে। আয়াজ দেখছে তার মায়া পরীকে। চোখের পানিগুলো সযত্নে মুছে দিলো। তারপর বুকে নিয়ে নিলো। মনের মধ্যে যেন প্রশান্তির বাতাস বইছে। মায়াপরীকে নিজের করে পেয়েছে। কিন্তু ভয়ও করছে না জানি সকাল বেলা উঠে কি কান্ডটাই না ঘটায়। আয়াজের চোখে যেনো ঘুম নেই। ভোরের আযান দিতেই আয়াজের ধ্যান ভাঙলো।
ফ্রেশ হওয়া দরকার। নামায আদায় করতে হবে ভেবেই বিছানার ছাদর সরিয়ে উঠতে দেখলো রক্তে রাঙ্গা হয়ে আছে চাদরের বেশ কিছুটা অংশ। আয়াজ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে প্রিয়তমার দিকে তাকালো। অজান্তেই তার প্রিয়তমাকে আজকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। আম সরি কলিজা। জানি এসবের কিছুই বুঝিসনা। কিন্তু কি করবো বল আমিও নিজেও যে কন্ট্রোল লেস হয়ে গিয়েছি। ওভাবে লেপ্টানো ভিজা শাড়ীতে দেখে নিজেকে যে আর ধরে রাখতে পারিনি। পাখিটা খুব ব্যথা পেয়েছিস! তাই না? আই রেলি সরি বাবুনিটা বলেই মায়াপরীর কপালে চুমু একে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ধীর সুস্থে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ আদায় করে নিলো। আঁখিকে আর আজকে নামাযের জন্য ডাকেনি। শরীরটা ভিষণ দূর্বল হয়ে আছে মেয়েটার। আর তাছাড়া ঘুমিয়েছে ঘন্টা খানিক ও হয়নি। ডাকলেও উঠবেনা। যা ঘুম খাতুরে মেয়ে। নামাজ শেষে আঁখিকে কোলে নিয়ে সোফায় শুইয়ে দিয়ে চাদরটা উঠিয়ে ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে সুন্দর করে বিছানাটা গুছিয়ে নিলো। নয়তো এই মেয়ে ঘুম থেকে এসব দেখে কোন রিয়েক্ট করে আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। এমনিতেও রাতের ঘটনা নিয়ে সকালে কোন সার্কাস শুরু হয় তা নিয়েই মাথা অর্ধেক ঘুরে আছে। এরপর আঁখিকে বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে