তুই হবি আমার পর্ব-১১

0
1787

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__১১

রোজকে একটা বেঞ্চের ওপর হেলান দিয়ে বসিয়ে মাথায় পানি ঢেলে দিতে লাগলো কুহু। আর স্টাফকে বললো মেডিসিন আনতে। রোজ চোখ বুজে ঠোট নাড়াচ্ছে,,

কুহু : রোজ কিছু বলছো..? কিছু বলবে আপু.?
রোজ : মে,,ঘ,,রো,,দ্দু,,র।

কুহু : ( জ্বরের ঘোরেও মেয়েটা মেঘকে খুজছে আর মেঘ.? ও ওকে দুরে সরানোর চেষ্টা করছে। আজ একটা ভবিষ্যৎ বাণি আমিও করতে পারি মেঘ। রোজের কাছে তোকে হারতে হবেই। এই মেয়েটা তোকে তোর থেকে কেড়ে নেবেই। তোর বন্ধু হয়ে এটা আমি জানি আর তুইও জানিস। ) মেঘ বাইরে আছে। তুমি চোখ বুজে থাকো কিছুক্ষন।

রোজের জ্বর ১০৩ ডিগ্রী। রোজকে বসিয়ে কুহু আরাভকে কল করে,,
— কি রে আবার ফোন দিস্ কেন.? তোর ভাবিরে খুজতাছি দেখোস না.?
— ব্যাটা ভেজাল আলিজারে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয় রোজের অবস্থা খারাপ। মে বি হসপিটালে নিতে হবে। জ্বর বাড়ছে ১০৩সবে
— সামান্য পায়ে ব্যাথায় তো এমন হওয়ার কথা না। ওর হয়েছেটা কি.? তুই একটু ওয়েট কর আমি আলিজাকে নিয়ে আসছি।
— কাম ফাস্ট

হসপিটালে,,,
ডক্টর : পায়ে ইন্ফেক্শন হয়েছে। হয়তো ওই কাঁচে বিষজাতীয় কিছু ছিলো। যাই হোক আমরা পায়ের ক্ষতটা পরিষ্কার করে কিছু মেডিসিন দিয়েছি। তিনচারদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। পায়ের ব্যাথা কমতে একটু সময় লাগবে,, হাটার জন্য চাপ লেগে কাঁচের ছোট টুকরো ঢুকে গেছিলো পায়ে সেটা বের করে সেলাই দিতে হয়েছে।

আলিজা : ঠিক আছে আংকেল।
ডক্টর : তো আলিজা মামনি ও তোমার কি হয়.? তখন থেকে দেখছি তুমি কাঁদছো।

আলিজা : ও আমার বোন। রোজ।
ডক্টর : কি? ও বউমনির মেয়ে.? কিন্তু ওকে তো অনেকদিন আগে

আলিজা : ও বাড়ি ফেরেনি। আমরা এক কলেজে পড়ি তাই আমার সাথে ওর যোগাযোগ আছে।

ডক্টর : মেয়েটাকে তোমার মা তিলে তিলে শেষ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তোমার মতো বোন থাকতে সেটা অসম্ভব। এভাবেই ওর পাশে থেকো। কখনো ছেড়ে যেও না।

আলিজা : হুম। ও ঠিক হয়ে যাবে তো..?
ডক্টর : তোমাদের দোয়া যে আছে ওর সাথে। ঠিক না হয়ে কোথায় যাবে.? যাও গিয়ে দেখা করে আসো। বাই দ্যা ওয়ে মেঘরোদ্দুর কে.? রোজ ওকে খুজছে।

কুহু : মেঘ আসছে।
ডক্টর : হুম

???
এদিকে মেঘের সামনে আধমরা হয়ে পড়ে আছে একটা ছেলে। মেঘের হাত স্টিক। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। ওর চারপাশে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে কিছু গার্ডস।

মেঘ : এর চোখদুটো আমার চাই। আর জিব্হাটাও। গরম সিক নিয়ে আসো।

গার্ডস : উনি কি করেছেন স্যার.? আর এমন নিষ্ঠুর ভাবে মারবেন কেন.?
মেঘ : আমার রোজের দিকে তাকানো আর ওর নামে আজেবাজে কথা রটানোর মতো জঘন্য কাজ টা যখন করেছে তখন শাস্তি তো পেতেই হবে।

গার্ডস : স্যার এই যে সিক।

মেঘ সিক হাতে নিয়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো। ছেলেটা ভয়ে চোখ বুজে আছে। মেঘ এগিয়ে গিয়ে মেঘ চোখের পাতার ওপর দিয়েই সিকটা চোখে ঠেসে ধরলো। ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠলো ছেলেটা। মেঘ আরো জোরে চেপে ধরে একটানে সিকটা তুলে নিলো,, চেলেটার চোখ তাপে গলে গলে পড়ছে। মেঘ আরেকটা সিক নিয়ে ছেলেটার আরেকটা চোখ তুলে ফেললো। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে ও। মেঘ এবার ধীরে ধীরে ছেলেটা পাশে গিয়ে বসলো।

মেঘ : আমি ছাড়া কেউ আমার রোজকে কষ্ট দিতে পারবে না। ওকে কষ্ট দেওয়ার একমাত্র অধিকার আমার । অনেক সাহস করে ফেলেছে তোদের বস। শান্তশিষ্ট মেঘকে মেনে নিতে পারেনি। তোর লাশটা হাতে পেলে ঠিকই জানবে যে রোদ আগের মতোই আছে। আগের মতোই সাইকো মার্ডারার। আন্ডারগ্রাউন্ডের মাফিয়া কিং। যে রোদের নাম শুনলে সবাই ভয়ে কাঁপে তুই তার কলিজার দিকে কুনজর দিয়েছিস তাকে কষ্ট দিতে আজেবাজে কথা ছড়িয়েছিস। তোকে কিভাবে বাঁচতে দেবো বল.? ও হ্যা তোর জিব্হাটাই তো নেইনি।

মেঘ ছেলেটার পেটে পা দিয়ে জোরে চাপ দিতেই ছেলেটার জিব্হা বাইরে বেরিয়ে আসে। মেঘ বাহাতে সেটা ধরে হ্যাচকা টান দেয় আর সাথে সাথে চারিদিকে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। মেঘ জিব্হাটা পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। আর গার্ডসদের ওর্ডার দেয় ছেলেটার শরীরে রোদের সাইন রেখে দিতে। গার্ডসরা ছেলেটার শরীরে গরম লোহা দিয়ে চেপে ধরে লিখে দেয় “রোদ ইজ ব্যাক টু হার ওন ক্যারেক্টার..গেট রেডি ফর দ্যা ওয়ার ”

হাত মুখ ধুয়ে সবে তোয়ালেতে মুখ মুছছে মেঘ। এমন সময় কুহু ফোন দিলো ওকে।
— রোজ কেমন আছে.?
— বারবার তোর নাম নিচ্ছে। ছেলেটার ব্যবস্থা করা শেষ হলে তাড়াতাড়ি আয়।
— হয়ে গেছে। আমি আসছি।
— ভদ্র সেজে আসিস। তোর হিংস্র রূপ দেখলে ও ভয় পাবে। তার চেয়ে বেশি সন্দেহ করবে। তখন লুকিয়ে থাকা তোর জন্য কষ্টকর হবে।
— জানি। চিন্তা করিস না। আমি মেঘ হয়ে যাবো। রোজ কখনো রোদকে দেখতে পারবে না। রোদের হিংস্রতার সামনে কখনো আসবে না ও।

???
হসপিটালে কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে আছে মেঘ। রোজের পায়ে যে পয়জেন পাওয়া গেছে সেটাও বলেছে কুহু।

মেঘ : ওরা জেনে গেছে আমার দূর্বলতা কি। আর এটা রোজের জন্য অনেক রিস্কি। যেটা লুকাতে চেয়েছি সেটাই সামনে চলে এলো,,

কুহু : এটা সত্য নাও হতে পারে। হয়তো তোকে মারার জন্যই কেউ এসেছিল। ভুল করে

মেঘ : আমি রোজের পায়ের কথা না রোজের কথা বলছি। ওরা রোজের ব্যাপারে সব জেনে গেছে । ইমিডিয়েটলি এটা পাবলিশ করতে হবে যে আমি রোজকে ভালোবাসি না।

কুহু : পাবলিশ করবি কিভাবে.? প্লানিং কি?
মেঘ : রোজকে তুই কনভাইন্স করবি আমাকে প্রপোজ করার জন্য। আগেও অনেক মেয়ে আমাকে প্রপোজ করেছে ওদের বোঝাতে হবে রোজ তাদের মধ্যেই একজন। তাদের মতোই একজন।

কুহু : এটা ঠিক আছে। তবে রোজকে রিফিউজ করবি তুই.? মেয়েটা যদি রাগের মাথায় কিছু করে.? শুনেছি ও অনেক রাগি।

মেঘ : রাগের মাথায় হয়তো আমাকে ভুলে যাবে, ক্ষনিকের জন্য কষ্ট পাবে। কিন্তু এটা না করলে ওরা ওকে মেরে ফেলবে।

কুহু : কেন যে আমাদের জীবনটা এমন হলো.? শুনলাম একজন CBI অফিসার আমাদের পেছনে লেগেছে,, নাম রাজ। ছেলেটা ওভার স্মার্ট। ভাবছি আমি ওর কেসটা হ্যান্ডেল করবো।

মেঘ : আরাভের মতো আবার প্রেমে পড়ে যাস্ না। দেখতে কিন্তু হট চকলেট বয়।

কুহু : তুই চিনিস ওকে.?
মেঘ : আমাদের সিনিওর ছিলো। তুই কলেজে আসার আগেই উনি কোর্স শেষ করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আমার আগে থেকে সব মেয়ের ক্রাশ রাজ ভাইয়া।

কুহু : এভাবে তারিফ করার মতো কিছু হয়নি। কুহু যাকে তাকে দেখে ক্রাশ খায়না ।
মেঘ : সেটা তো সময় বলবে। ( তোর ভালোবাসা তোর হাতের মুঠোয় কুহু। এবার দেখি তুই ওকে নিজের করতে পারিস্ কিনা। আমার মতো ভুল করিস না রে তাহলে জীবনে সুখ নামক জিনিসটাই ভুলে যাবি। হারিয়ে ফেলবি। )

কুহু : তাহলে আমার কাজ কবে থেকে.?
মেঘ : কাল।। যদি জিতে যাস্ তাহলে বুঝবি তোর কাজে সফল হয়েছিস আর যদি হেরে যাস্ তাহলে বুঝবি জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা জিতে গেছিস। [ মিশনটা তোদের এক করার কুহু। কিন্তু তোরা এখনো জানিস না আমার এসব করার কারন কি.? যাক কিছু কথা না জানাই ভালো। তোদের সবার জীবন সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়ে আমি একা শেষ করবো তাকে যে আমার রোজের দিকে হাত বারিয়েছে। আমি জানি ও শুধু রোজকে খারাপ বানানোর চেষ্টার জন্য এমন করেনি। যে এমন করেছে তার দূর্বলতাও রোজ হয়ে দাড়িয়েছে,, আর রোজের কষ্টটা সে কাজে লাগাবেই। ]

কুহু : শুরু হয়ে গেলো টপারের টপ জ্ঞান দেওয়া। তোর হেয়ালির কাছে হার মানি রে ভাই তাই আর হেয়ালি করে বিভ্রান্ত করিস না। তোর কলিজা ভেতরে আছে ওখানে যা।

মেঘ কুহুর কথায় ঠোট বাঁকিয়ে হাসলো। মানুষ আসলেই সহজ জিনিস সহজ ভাবে বোঝে না। রোজ খুব একটা ভুল বলে না সবসময়। আজ রোজের কথা মনে আসতেই ব্লাসিং হচ্ছে মেঘ। মেঘ কেবিনে ঢুকতেই সবাই বেরিয়ে গেলো। মেঘ রোজের পাশে বস রোজের কপালে হাত রাখলো। রোজের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মেঘ দুহাতে পানি মুছে দিতেই রোজ পিটপিট করে তাকালো।

মেঘ : ঘুমিয়ে পড়। বেশি তাকালে চোখ জ্বলবে।
রোজ : তুমি এতোক্ষন কোথায় ছিলে.? আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো যেও না,, আমার সাথে থেকো

মেঘ: এতো কথা বলিস না। আর আমি কোথাও যাচ্ছি না। এখানেই আছি। সুস্থ হ তারপর দেখিস তোকে কি শাস্তি দেই। সকালে বারবার মানা করেছিলাম হাটতে তবুও সারা কলেজ চড়ে বেরিয়েছিস।

রোজ : আপিলাকে সবাই ভুল বলছে। ওদের বিয়ে দিয়ে দাও প্লিজজ। আমার এই একটা কথা রাখো।আমি আর কখনো কিচ্ছু চাইবো না তোমার কাছে।

মেঘ : ঠিক আছে। সৌরভদের সাথে আরাভদেরও বিয়ে হয়ে একই দিনে একই জায়গায়। এবার খুশি.?

রোজ ঠোটের রেখা চওড়া করে হাসলো। মেঘ রোজের চোখ মুছে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

মেঘ : ( মাফিয়াদের ভালোবাসা অনেক কঠিন রে রোজ। তাদের ভালোবাসায় কেয়ারিং যতটা গভীর ততটাই ভয়ংকর তাদের সেই মানুষটার ভালোবাসা পাওয়ার লোভ যাকে সে ভালোবাসে। বলেছিলাম না তোকে ঘৃনা করি.? সেই একটা শব্দের জন্য তিলে তিলে নিজেকে এভাবে গড়েছি। কলেজের প্রথম দিন বলেছিলি আমার কাপুরুষতার জন্য তোর করুনা হয়। কিন্তু আমার এই মাফিয়া জগৎটা যে শুধু তোর জন্যই সৃষ্টি হলো। তার কি হবে.? তোর থেকে তৈরি জগতে আজ তোকে নিয়েই ভয়। কেন আসলি আমার জীবনে.? ভুলতেই তো চেয়েছিলাম তোকে কেন আবার পুরোনো ব্যাথাটা জাগিয়ে দিলি.? কি করে বোঝাবো কতোটা ভালোবাসি তোকে.? তুই আমার জন্য কি.? আমি যে নিজেই তোকে কষ্টের আগুনে পোড়াচ্ছি। নিজেও পুড়ছি। আমাকে ভুলে যেতে পারবি তো.? পারবি নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে আমিহীনা.?) মনে মনে।

বিকালে ঘুম ভাঙতেই মেঘকে পাশে দেখতে পেলো ও। রোজের হাতটা জরিয়ে ধরে বিছানায় মাথা রেখে বসে বসে ঘুমোচ্ছে। মেঘের সিল্কি ব্রাউন চুলগুলো সারা কপালে লেপ্টে আছে। গালে ছোট ছোট করে সাইজ করা চাপদাড়ি,, আজব ব্যাপার মেঘের ঠোটের বাম সাইডে ঠিক ঠোটে ওপর একটা তিল,, লোভনীয় তিল। তিলটা ঘিরে রয়েছে অনেক পুরোনো স্বৃতি।

♠♠ মেঘ আর রোজ ভিডিও কলে কথা বলছে,, রোজার হাতে আইসক্রিমের বাটি।
— আইসক্রিম খাবা.?
— নাহ তুই খা। এই তোর কপালে তিল ছিলো নাহ.? সেটা কই.? উবে গেলো নাকি
— পাউডার দিয়ে ঢেকে রাখছি। সবাই আমাকে ব্যাঙ করে ওটা।
— ব্যাঙ না ব্যাঙ্গ। তোকে শেখাতে শেখাতে আমি বুড়ো হয়ে যাবো। এবার বল তো আমার চেহারা কেমন.?
— কেন তুমি জানো না.?
— তুই বল
— দাড়াও দেখে নেই।
রোজ মেঘকে ভালো করে দেখছে আর মেঘ একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আইসক্রিমগুলো রোজের সারা গালে লেপ্টে আছে। আর রোজ জিভ বের করে সেটা চেটে চেটে খাচ্ছে। এক অসহ্য রাগ চেপে বসেছে মেঘের। কেন রাগ লাগছে বুঝতে পারছে না ও। তখনই রোজ বলে উঠলো,,
— তোমার মুখে সবকিছুই তো ঠিক ছিলো কিন্তু ঠোটে একটা তিল গজিয়েছি।
— মানে.?
— তোমার ঠোটের উপরে একটা সুন্দর তিল,, মনে হয় কামড়ে উঠিয়ে দেই। দিবো নাকি.? জোড়ে কামড়.?
— না,,,, কি বলিস.? কামড়ে তিল উঠাবি মানে। তিল কি উঠানোর জিনিস.?
— তুমি আমার তিলে কামড় দিসিলা একদিন। আমি তোমার তিলে কামড় দিবোই। কামড়ে কেটে দিবো। হুহ।
মেঘ রোজের কথা শুনে তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে ঠোট ঢেকে ফেললো। তারপর চোখ বড়বড় করে তাকালো। রোজ তখনও খিলখিল করে হাসছে। রোজ আবার বললো,,
— লুকিয়ে লাভ নাই। আমি প্রতিশোধ নিবোই। একদিন তো কামড় দিবোই। দেখো কেটে ফেলবো। তোমার তিলটা আমাকে বড্ড জ্বালায়। বারবার ছুঁতে ইচ্ছে করে।
— দিন দিন আমার ওপর তোর লোভ হচ্ছে। না জানি কবে চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলিস। দেখ আমি কিন্তু মানুষ খাওয়ার কিছু না।
— তুমি বার্গার। মানুষ বার্গার। তোমাকে আমি চকলেট ভেবে খাবো কেন.? বার্গার ভেবে কামড়ে কামড়ে খাবো। সবার আগে ওই তিলটা।তিলের বার্গার ওটা।
♣♣

সেদিনের কথা মনে পড়তেই হেসে উঠলো রোজ। রোজের হাসির শব্দে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। মেঘ উঠে রোজের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। রোজ তখনো হাসছে।

মেঘ : হাসছিস কেন.?
রোজ : তিলের বার্গার।
নামটা শুনতেই ভীষম খেলো মেঘ। মেঘ উঠে পানির গ্লাস আনলো।

রোজ : নাম শুনেই ভীষম খেলে.? এখন আবার পানি খাচ্ছো.? এতো খেলে মোটা হয়ে যাবে। আমার বেশি মটু পছন্দ না হু।

মেঘ : পানি আমার জন্য না। তোর জন্য তখন থেকে হাসছিস গলা শুকিয়ে গেছে না.? নে পানি খা। আমি আরাভকে বলছি খাবার আনতে।

রোজ : ফুচকা খাবো।
মেঘ : মার চিনিস.? এখন ফুচকা খাবি.? চিকেন স্টু আনবে তাই খাবি।

রোজ : অসুস্থ মানুষকে ধমকাও.? খারাপ লাগে না.?
মেঘ : তাকেও তো মনে রাখতে হবে যে সে অসুস্থ। কথা না শুনলে ধমক তো দিবোই। আর শোন আপাতত পা নাড়াবি না। যা লাগবে আমাকে বলবি। কাল ডিস্চার্য হলে তোকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো।

রোজ : তাই নাকি.? তো তোমার বাড়ি কোন পরিচয়ে থাকবো সেটা ঠিক করছো.? বাই দ্যা ওয়ে তুমি আমার এতো টেক কেয়ার কেন করছো.?

মেঘ : তুই আমার বন্ধু তাই। আচ্ছা তুই থাক আমি একটু আসছি।

মেঘ বাইরে আসতেই কুহু ভেতরে যায়। আর মেঘ আরাভ যায় কলেজে।
কুহু : কেমন আছো রোজ.?
রোজ : এই তো ভালো। তুমি.?

কুহু : আমি তো এখনো সিঙ্গেল আছি। যাই হোক, কিছুদিন ধরে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ভাবছিলাম।
রোজ : কি আপু.?

কুহু : মেঘের প্রতি তোমার ফিলিংসটা কি.? দেখো তুমি বাচ্চা মেয়ে। সবকিছু যে বুঝবা তেমনও না। হতেই পারে যেটাকে বন্ধুত্ব ভাবছো,, যেটা তোমার আবেগ,, যেটাকে মোহ ভাবো, সেটাই তোমার ভালোবাসা।

রোজ : আবেগে গা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো মেয়ে আমি না আপু। ছোটবেলায় যখন মেঘরোদ্দুর আমাকে সাপোর্ট করতো তখন ভাবতাম ও আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। যখন আমাদের রাগ হতো,, ঝগড়া হতো আর যোগাযোগ বন্ধ রাখতাম তখন দূরত্বটা বুঝিয়ে দিতো এই কাছের বন্ধুটাই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। প্রিয় মানুষ। যখন মেঘরোদ্দুর আমাকে ছেড়ে চলে আসে তখন মেঘরোদ্দুরের শূণ্যতা আমাকে বুঝিয়েছে যে আমি ওকে কতটা চাই,,, কতটা ভালোবাসি। আর এটা ভাবনা না অনুভুতি,,, বোঝার ক্ষমতা।

কুহু : তাহলে এতোদিন ওর সামনে আসোনি কেন.?
রোজ : সবার একটা ব্যাক্তিগত সাইট আছে। আমি কখনো কারোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাইনা। কারন আমি জানি ইচ্ছার বিরুদ্ধে, মনের বিরুদ্ধে কাজ করলে কতটা কষ্ট হয়..? ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন তো কোথাও লেখা নেই।

কুহু : মেঘ তোমাকে ভালোবাসে.? যদি না বাসে তাহলে কি করবে.? নিজেকে নিয়ে কিছু ভেবেছো.?
রোজ : হয়তো বাসে… অথবা বন্ধুত্বের জন্য আমার খেয়াল রাখে। বন্ধু ভেবে করলেও এইটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য। আর নিজের আছেটা কি? যে নিজেকে নিয়ে ভাববো.?

কুহু : কিছু বলার ভাষা নেই। কি বলবো.? কাকে বলবো.? যে মেয়েটা সবাইকে বোঝায় তাকে বোঝানো ইমপসিবল।

রোজ : আর কিছু বলবে..? চোখটা বুজে আসছে। ঘুমাবো।
কুহু : ঠিক আছে ঘুমাও। আমি বাইরেই আছি। আলিজারাও আসছে মনে হয়। কিছু লাগলে ডাক দিও। শুনতে পাবো।

কুহু বাইরে বেরিয়েই মেঘকে কল করলো
— প্লান ফ্লপ। রোজ কখনো মুখ ফুটে তোকে ভালোবাসার কথা বলবে না। সাহস আছে কিন্তু জোর করার স্বভাব নেই। মেয়েটা আসলেই অদ্ভুদ।
— জানি তাই প্লান চেন্জ করছি আমরা। রোজকে কষ্ট দেওয়ার বেস্ট উপায় নুরিন। আরাভের টিমের ব্রেভ এজেন্ট। ও আমাদের হয়ে কাজ করবে।
— তারমানে প্লান বি.?দেখ মেঘ রোজ শক্ত মনের মেয়ে ঠিক আছে কিন্তু সহ্য করতে পারবে না এসব। তোরা অন্য প্লানিং কর।
— এর থেকে বেস্ট উপায় তোর জানা থাকলে তুই বল।
—…………
— সবদিকটা ভেবেই এই প্লান করেরেছি আমরা। কাজে দিলে রোজ সেভ হয়ে যাবে আর আমি ডেম সিউর যে এটা কাজে দেবেই।
— রোজ বিশ্বাস করবে.? ওকে তো গতকাল সব সত্যি বলেই দিয়েছিস।
— চোখের সামনে ওমন কিছু দেখলে যে কোনো মেয়েই বিশ্বাস করতে বাধ্য,, তুই শুধু তোর কাজ করবি।
— পারবো না। এসব আমি করতে পারবো না। তোদের কষ্ট আর কতোদিন দেখবো.? আর আমি নিজে তোদের সম্পর্ক ভাঙার কাজে কখনোই পার্টিসিপেট করবো না।
— ইট্স মাই ওর্ডার কুহু। & ইউ হ্যাভ টু ডু ইট। রোদের কথা এবং প্রতিটা অর্ডার মানতে বাধ্য তোরা। বিকজ আমি রোদ, মাফিয়া কিং রোদ। যে ” না ” শুনতে অভ্যস্ত না।
— সরি স্যার। তবে আজ থেকে আপনি আমার কাছে শুধুই মাফিয়া কিং রোদ। যাকে বন্ধু ভাবতাম সেই মেঘ আজ নিজের জেদের আর ক্ষমতার জন্য বিলিন হয়ে গেলো। আমি কাজটা করবো স্যার কারন এটা আমার ডিউটি।

ফোন কেটে দেওয়ালে জোরে একটা ঘুসি দিলো কুহু।
কুহু : তুই কষ্ট পেলেও রোজকে কষ্ট পেতে দিবো না আমি। রোজের সব দায়িত্ব আমি নিবো। তোর এই মিথ্যার জালটা থেকে রোজকে বের করবো আমি। শুধু তোর কাজটা হয়ে যাক। তোকে নিজের ভাই মনে করি মেঘ। আর তাই তোর ভালো মন্দ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তুই না দিলেও আংকেল দিয়েছে আমায়। কথাগুলো তুই ভুললেও, ভুলিনি আমি।

চলবে,,