তুই হবি আমার পর্ব-১৭

0
1623

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__১৭

আরীবদের বাড়ির ছাদের রেলিং ঘেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সাদিয়া। চোখ বেয়ে পড়ছে রাগের অশ্রুজল। মেঘকে অপমান করার পর কোনো কিছুই ভালো লাগছে না ওর। একদিন কেটে গেছে। কুহু যতবার এসেছে সাদিয়া ততবারই ওকে মিথ্যা কথা বলেছে। এতো মিথ্যা বলে আজ ক্লান্ত ও। পেছন থেকে সুমি এসে ওর কাধে হাত রাখলো। সাদিয়া পেছন না ঘুরেই জিজ্ঞাসা করলো,,

সাদিয়া : শপিং এ যেতে হবে তাইনা.?
সুমি : হ্যা। রেডি হতে বলেছে আমাদের আরীব নিজে যাবে।

সাদিয়া : মেঘরোদ্দুর রাও থাকবে.?
সুমি : ওর বন্ধুর বিয়ের শপিং,, হয়তো থাকবে। সেদিনের জন্য খারাপ লেগেছে অনেক তাইনা.?

সাদিয়া : রোজ হলে খারাপ লাগতো। কিন্তু আমি সাদিয়া আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা বলতে কিছু নেই। আর কষ্ট পাওয়াও আর আমার ডিকশোনারিতে নেই। তাই চিন্তা করো না।

সুমি : তোর রোজ নামটা অনেক কিউট। গোলুমলু,, বাচ্চা টাইপের,,, মনটা ভালো হয়ে যায় নামটা শুনলে ।

সাদিয়া : আর আমার রাগ হয়। এই নাম আর কখনো আমার সামনে উচ্চারণ করবে না। আমার আম্মু আমার নাম সাদিয়া রেখেছিলো তাই এখন ওটাই আমার নাম।

সুমি : আচ্ছা বাবু ঠিক আছে।
সাদিয়া : আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে বেবি /বাবু লাগে.? দাভাই কখনো আমাকে বাবু ডাকেনি আর তুমি প্রতিনিয়ত ডাকো।

সুমি : কেন ডাকি জানিস.?
সাদিয়া : জানার ইচ্ছা নেই তবে শোনার ইচ্ছা আছে। বলো কেন ডাকো।

সুমি : আমি কখনো বেবি কনসিভ করতে পারবো না।
কথাটা শোনামাত্র সাদিয়া পেছন ঘুরে সুমির দিকে তাকালো। সুমির চোখে পানি। সুমি চোখ মুছে সাদিয়ার মাথায় হাত বোলাতেই সাদিয়া বলে উঠলো।

সাদিয়া : তাই বলে আমাকে বেবি ডাকবা.? দুইদিন পর তো আমারই দুইটা তিনটা করে বেবি হবে। তখন নাহয় ওদের নিয়ে ডেকো। ওদের মানুষ করার সব দায়িত্ব কিন্তু তোমার। ইশশ আমি পটি ক্লিন করতে পারবো না। গন্ধ

সাদিয়ার কথায় ফিক করে হেসে দিলো সুমি। সাদিয়া আবার বললো,,
সাদিয়া : দাভাই জানে.?
সুমি : হুম। জানিস মাঝে মাঝে আমি ভাবি তোর দাভাই কেন আমাকে বিয়ে করলো,, কি আছে আমার যা আমি ওকে দিবো.? দুইবছর আগে আমার জরায়ুতে ক্যান্সার হয় তখন থেকেই তো ও সবটা জানতো তবুও নিজের এতো বড় ক্ষতি করলো।

সাদিয়া : ভালোবাসে তোমাকে। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অনেক কাহিনি শুনেছো এখন আমার দাভাই তোমাকে লাইভ দেখাচ্ছে। কতো ভাগ্যবতী তুমি যে আমার মতো ননদ সরি দাভাই এর মতো জামাই পেয়েছো।

সুমি : হুম। কিন্তু তুই কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস। আগে বল সেদিনের জন্য কষ্ট লাগছে.?
সাদিয়া : উহু। রাগ হচ্ছে। ওতোগুলো মানুষের সামনে আমার কপালে কিস করলো ও,, ওর সাহস কতো বড়। এর শোধ তো তুলবোই।

সুমি : তুই ওকে পাগল বললি তখন আরাভের চেহারাটা দেখার মতো ছিলো। বেচারা অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিলো,,, আহারে।

সাদিয়া : বেস্ট ফ্রেন্ড তো কষ্ট পেয়েছে। নাও এবার চলো রেডি হয়ে নেই। আমি থ্রিপিচ পড়বো,, তুমিও তাই পড়ো।

সুমি : গাউন পড়।
সাদিয়া : গাউনে ছোট বাচ্চা মনে হয়। মাঝে মাঝে পড়ি ওটাই ঠিক আছে।


গাড়ির সামনের সিটে বসে আছে সাদিয়া আর আরীব,, পেছনে সুমি আর কুহু।
কুহু : সাদিয়া তোমরা কি ৭মাস আগেও এখানে এসেছিলে.?

সাদিয়া : হুম। এসেছিলাম দাভাই এর কাজে। ইনফ্যাক্ট সেদিন একটা এক্সিডেন্টও হয়েছিলো। জানো মেয়েটার স্পট ডেথ হয়েছিলো।

কুহু : মেয়েটা কে জানো.?
সাদিয়া : না তো।

কুহু : রোজ ছিলো। যার জন্য তোমাকেও আমরা ঘুলিয়ে ফেলেছি। আমার বন্ধু মেঘ এর অবস্থা এমন হয়েছে।

সাদিয়া : ওহহ। তা মেয়েটা এক্সিডেন্ট কেন হলো.? মানে কিভাবে হলো.?
কুহু : ট্রাকের সাথে। আচ্ছা বাদ দাও। তোমার চেহারার সাথে আমাদের রোজের অনেক মিল। ধরতে গেলে কার্বনকপি যাকে বলে।

সাদিয়া : সেটা তো বুঝতেই পেরেছিলাম সেদিন। সো আরীব আমাদের আর কতক্ষন লাগবে.?

আরীব : ১৫মিনিট। পৌছেই গেছি প্রায়। তুমি কি কি কিনবে.?
সাদিয়া : এই ১৫-২০দিনের ড্রেসই কিনতে হবে। কিছুই আনিনি। আর হ্যা আমাদের সব প্রাইজ আমরাই দিবো। সো আগ বাড়িয়ে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আরীব : কিন্তু…
সাদিয়া : সাদিয়া যা বলে তাই করে মিস্টার আরীব। আপনি টাকা দিলে একটা ড্রেসও আমার সাথে আসবে না।

আরীব : কথায় কথায় এতো রাগ করো কেন বুঝি না। ঠিক আছে তোমার টাকা তুমি দাও। সেলেব্রেটি মানুষ আমার টাকা নিবা কেন.?

কুহু : এটা তো ঠিক না সাদিয়া। আমারও তো তোমাকে কিছু দিতে ইচ্ছা করতে পারে। এভাবে বললে আমার মনও তো খারাপ হবে।

সাদিয়া : তুমি দিলে সমস্যা নাই।
আরীব : একই বাড়ি থেকে টিম বানাচ্ছো। এটা ঠিক না সাদিয়া। আমার চেয়ে আমার বোন তোমার কাছে বেশি হয়ে গেলো.? জানু তুমি কিছু বলো,,

সুমি : আমি কি বলবো,, ও যা বলে তাই তো করে। আমি কিছু বললে আমার সাথে রাগ দেখাবে।

কুহু : ওকে তোমরা অনেক ভয় পাও তাইনা.?
সুমি : ভীষন। কারন ওর কথার আগে রাগ আর হাত চলে। বাবাহ আমাদের কলেজে ওর নাম শুনলেই সবাই ভয়ে কাঁপে। ছেলেরা ওকে দেখলেই মাথা নিচু করে নেয়। আর জানো ও পড়াশোনায় অনেক ভালো। কলেজের টপার বলে কথা।

কুহু : ( রোজ তো নাম্বার ওয়ান ফাঁকিবাজ ছিলো। পড়াশুনা করতো না বললেই চলতো। রোজের সাথে একেবারে সব মিল নেই। কিন্তু চালচলন আর চেহারা.? )

সাদিয়া : কুহু আপু তুমি বিয়েতে কি পড়বা.? ল্যাহেঙ্গা নাকি বেনারসি..?? ঢাকার জামদানি বেনারসি গুলো কিন্তু অনেক সুন্দর। তোমার প্রিয় রং কি.?

কুহু : পিংক।তোমার.?
সাদিয়া : নীল, কালো। আচ্ছা বিয়েতে ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষ কারা.? রাজ ভাইয়ার নাকি কেউ নাই।

আরীব : আমরা সব ছেলেরা রাজের টিমে। আর তোমরা মেয়েরা কুহুর টিমে।

সাদিয়া : তাহলে রেডি থাকুন। পকেট থেকে অনেক টাকা খসবে। গেট ধরা থেকে খাট ধরা সব কিছুর জন্য ডিফরেন্ট ডিফরেন্ট এমাউন্টের প্লানিং করবো।

কুহু : বেশ হবে। এদের নাকানিচুবানি খেতে দেখলে আমার বিয়ে স্বার্থক। অনেক জ্বালিয়েছো তোমরা এবার তোমাদের পালা চান্দু।

আরীব : বেয়াদব মেয়েরা।
সাদিয়া : ওই আপনার সাহস তো কম না। মেয়েদের বেয়াদব বলছেন।

আরীব : কুহুকে বলেছি। তোমাকে বলবো আমার মাথা খারাপ নাকি.?
সাদিয়া : “মেয়েদের” বলেছেন। আমি কি মেয়ে না নাকি.?

আরীব : বাবাহ তুমি মেয়ে..? যাক স্বীকার করলে তাহলে। এতোদিন তো ছেলে ভাবতাম। আচার আচরণ কথাবার্তা সবই তো ছেলেদের মতো।

সাদিয়া : আরীববববববববব।
হঠাৎ ব্রেক কসায় চুপ হয়ে গেলো সাদিয়া। সামনে তাকাতেই টিনাদের দেখতে পেলো। এটা সেই টিনা যে রোজকে ক্লাসের প্রথমদিনই অপমান করেছিলো। কিন্তু ওরা কি করছে ওখানে.?

আরীব : তোমরা যাও আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।

কুহুদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে গেলো আরীব। সাদিয়া কুহুদের সাথে মলে ঢুকেই আবার বেরিয়ে আসলো। টিনাদের পেছনের বেঞ্চটাতে বসে আছে ও। টিনাদের কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে ওরাও শপিংএ এসেছি,, & শপিং অলরেডি শেষ। এখন মজা করার জন্য এখানে দাড়িয়ে আছে সবাই।

টিনা : অলঅয়েজ ছেলেরা মেয়েদের টিজ করে। সো গাইস আজ আমরা ছেলেদের টিজ করবো। তোরা মুরগি খোজ আমি গ্রিল করার জন্য রেডি।

ফ্রেন্ড : অকে।

সাদিয়া : এরা এখনো শোধরালো না। যাক ফ্রিতে মুভি দেখি। দেখি কিভাবে ছেলেদের টিজ করতে হয়।

ফ্রেন্ড : টিনা ওই দেখ।ওই ছেলেটা।

সাদিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো একটা সাদামাটা,, বোকাসোকা চশমা পড়া ছেলে। ঘাড়ে একটা সাইড ব্যাগ মাথায় তেল চুপচুপ করছে।

টিনা : আচ্ছা শোন। আমি এখন ছেলেটার পাশ দিয়ে যাবো,, আর আমাদের ধাক্কা লাগবে আমি বসে পড়বো বাকিটা তো বুঝতেই পারছিস।

ফ্রেন্ড : একদম টিনু।

সাদিয়া : এটা তো ঠিক না। যতই হোক বিনাকারনে ছেলেটা সবার সামনে অপমানিত হবে। ওদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটাকে দুচারটা চর থাপ্পড়ও মারবে। কোনো বড়লোকের বখাটে ছেলে হলে মেনে নিতাম কিন্তু ওকে দেখে তো ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে মনে হচ্ছে।

সাদিয়া উঠে টিনার সাথে হাটতে লাগলো,, সাদিয়ার চুল ছেড়ে দেওয়া আর মুখের ওপর কিছুটা চুল থাকায় ওর মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। টিনা ছেলেটার কাধে ধাক্কা দিয়ে বসে পড়ে ছেলেটাকে গালি দিতে লাগলো। ছেলেটা বারবার সরি বলছে।

টিনার এক বন্ধু এসে ছেলেটাকে চর মারার জন্য হাত তুলতেই সাদিয়া ওদের সামনে চলে আসে। আর থাপ্পড়টা সাদিয়ার গালে পড়ে

ফ্রেন্ড : সরি আপু বুঝতে পারিনি। আর তুই তোর সাহস হলো কিভাবে ওকে ধাক্কা দেওয়ার.?

কথাটা শেষ করতে না করতেই টিনার ফ্রেন্ড ছেলেটাকে চর মারে। দ্বিতীয় বার চর মারতে গেলেই সাদিয়া ওর হাত ধরে বসে। ছেলেটা নাক টেনে কাঁদছে।

ফ্রেন্ড : একি আপনি আমার হাত ধরছেন কেন.? ছাড়ুন ওই ছেলেটাকে আগে উচিত শিক্ষা দেই। এসব ছেলেদের ছাড় দিলে ওরা পার পেয়ে যাবে।

সাদিয়া : আগে আমাকে থাপ্পড় মারার শাস্তি সম্পর্কে শিক্ষা দেই,, তারপর আমার ভাইকে তোমরা উচিত শিক্ষা দিও।

বাতাসে সাদিয়ার মুখের সামনে থেকে চুল সরে গেলো । আর রোজকে দেখে ওদের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেলো।

ফ্রেন্ড : রোজ তুমি..??
সাদিয়া : উহু রোজ না,,আমি সাদিয়া।

ফ্রেন্ড : যাই হোক দেখো সরি বললাম তো। এবার সড়ো।
সাদিয়া : আগে উচিত শিক্ষা দেই।

বলেই মেয়েটার হাত চেপে প্যাচ দিয়ে পেছন ঘুরিয় দাড় করালো। তারপর পায়ে প্যাচ দিয়ে ছেলেটার সামনে হাটু গেড়ে বসালো,,

সাদিয়া : সরি বলো ওকে।
টিনা : ও কেন সরি বলবে.? ভুল ছেলেটা করেছে। আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।আর আমরা যা করেছি তা একদম ঠিক। ওকে ছেড়ে দাও।

সাদিয়া মেয়েটিকে দাড় করিয়ে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় দিলো। বাকি মেয়েদুটোর মধ্যে একজন এসে সাদিয়ার চুল ধরতেই সাদিয়া পা পেছনে দিয়ে মেয়েটার পেটে লাথি দিলো। মেয়েটা একটা লাঠি উঠিয়ে সাদিয়ার হাতের ওপর বারি দিতেই সাদিয়া মুচকি হেসে মেয়েটাকে ছেড়ে দাড়ালো

সাদিয়া : বাবাহ অন্যের ভুলের জন্য মারলে কিছু না আর নিজেরা ভুল করে দুইটা থাপ্পড় খেয়ে লাঠি নিয়ে চলে এসেছো.?কখনো কোনো মেয়েকে মারিনি,,ইভেন ভাবতেও পারিনি তোমাদের মতো মেয়েও আছে। যাক যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে আসো,, আর আমাকে মারো। নাহলে আমি মারতে শুরু করলে ৬মাসের আগে হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারবে না।

টিনা উঠে একটা রিভলভার বের করে সাদিয়ার মাথায় ঠেকালো,,
টিনা : টিনাকে তুমি চেনো না। আমার বাবা যে কতো পাওয়ারফুল সেটাও জানো না তুমি।

ছেলেটা : আপু ওনাকে ছেড়ে দিন। সব ভুল আমার। আপনারা আমাকে মারুন। তবুও এই আপুটাকে ছেড়ে দিন।

সাদিয়া : ভুল মানুষের কাছে ভুল জিনিস বের করেছো। ভেবেছিলাম বিড়াল,, শিখিয়ে পড়িয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বুঝিনি তোমরা কুকুর। যে কুকুরের লেজ টানলেও কখনো সোজা হয়না।

সাদিয়া কনুই দিয়ে টিনার পেটে গুতা দিতেই টিনার হাত থেকে রিভলভার পরে যায়। সাদিয়া রিভলভার উঠিয়ে বুলেটগুলো ফেলে দিলো।

সাদিয়া : সবার হাতে সবকিছু মানায়না। এবারের মতো মাফ করে দিলাম। ওকে সরি বলে চলে যাও।

টিনা : ইমপসিবল।
সাদিয়া : উফফ। এই ক্যারাটে জানো..?ফাইটিং জানো.? মিনিমাম কাউকে মারার,, কোথায় মারলে মানুষ দূর্বল হয় জানো.?

টিনা : নাহ,,,
সাদিয়া : কিচ্ছু জানো না অথচ আমাকে মারতে চাও.? আচ্ছা আসো। মারো।

টিনা উঠে সাদিয়ার পেটে একটা ঘুসি দিলো। সাদিয়া হাই তুলে আবার ইশারা করলো মারতে। টিনা আবার হাত তুললে কেউ এসে ওর হাত ধরে ফেলে।

সাদিয়া : আপনি..??
মেঘ : টিনা ওকে সরি বলে বাড়ি যাও।

টিনা : কিন্তু এরা..? এদের সরি বলবো কেন.? ভুল ওদের।
মেঘ : যা বলেছি তাই করো। নাহলে তোমার বাবার অবস্থা কেমন হবে তা কল্পনাও করতে পারবে না।

টিনা : সরি। বাট আই উইল সি ইউ।
সাদিয়া : আমাকে যতোখুশি দেখো। কারন মাটিতে দাড়িয়ে চাঁদকে দূর থেকেই দেখা যায়। কখনো ছোয়া যায় না। তোমাকে একটা গুতো দিয়েছিলাম বলে ঘুসিটা হজম করে নিলাম। পরেরবার চুপ থাকবো না। কথাটা মনে রেখো

ছেলেটা : সরি আপু আমার জন্য আপনাকে ওরা।
সাদিয়া : কোনো ব্যাপার না। ওরা প্লানিং করে তোমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো তাই একটু ঝামেলা হলো। এখন তুমি যাও।

ছেলেটা চলে যেতেই মেঘ সাদিয়ার হাত চেপে ধরলো। ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো ও।

সাদিয়া : আহহ,, হাত ছাড়ুন।
মেঘ খেয়াল করলো সাদিয়ার হাত লাল হয়ে আছে। ও দৌড়ে গাড়ি থেকে আইসব্যাগ এনে সাদিয়ার হাতে চেপে ধরলো।

মেঘ : তোকে কতবার বলেছি কোনো ঝামেলায় জড়াবি না। কথা শুনিস না কেন..?? কষ্ট পেতে অনেক ভালো লাগে তাইনা.? দেখলি তো হাতের কি অবস্থা করে ফেলেছিস। আমাকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পাস তুই,, কেন করিস এমন,, রোজ।

সাদিয়া চট করে হাত সরিয়ে ফেললো,,
সাদিয়া : মিনিমাম ম্যানার্স নাই..?? একে তো হাত ধরে টানাটানি করছেন তারওপর তুই তোকারি করছেন।

মেঘ : সরি। তবুও হাতটা দিন। ব্যাথা পাচ্ছেন তো। কষ্ট হচ্ছে আপনার।আচ্ছা আপনি নিজেই দিন আমি চলে যাচ্ছি।

সাদিয়া : আমিও যাবো।
মেঘ : আসুন।

সাদিয়া : একদিন চেয়েছিলাম তোমার সাথে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কাটাতে,, হয়তো এখনো এই অবাধ্য মনটা সেটাই চায়। কিন্তু কষ্ট হয় খুব,, খুব কষ্ট হয় বুকের ভেতরে মেঘরোদ্দুর। কেন ওমন করলে সেদিন। আর এখনই বা এমন আছো কেন.? কোথায় সেই আপুটা.?

মেঘ : আপনার বিয়ে কবে.?
সাদিয়া : সবে তো ক্যারিয়ারের শুরু। আগে নিজের পায়ে দাড়াই। তারপর ওসব চিন্তা।

মেঘ : খুব সুন্দর গান আপনি। আপনার অনেক গান শুনেছি।
সাদিয়া : ধন্যবাদ। ( একসময় তোমার কাছে গান শোনার জন্য কতো বায়না করতাম। অথচ কখনো শোনাওনি। এবার দেখো তোমার চেয়ে কতো ভালো গান গাই আমি হু। অনেক দাম দেখাতে। তোমার কচুর গানের জন্য।) আপনি গাইতে পারেন.? ইনফ্যাক্ট গান.?

মেঘ : আমার গান শুধুমাত্র একজনের জন্য। আমার ভালোবাসা,, আমার জীবনের জন্য।
সাদিয়া : ওহহ ( ওই আপুটা,,, তাহলে এতো নাটক করার মানে কি,,, ছেলেরা এমনই হয়। যত্তসব। তোর বাচ্চা ১৪টা হবে দেখিস তোরে জ্বালায় পুড়ায় শেষ করবে। বউ এর চামচা )

মেঘ : ওরা শাড়ির দোকানে আছে।

সাদিয়া দোকানটা ভালো করে দেখছে। ঠিক তখনই ওর চোখে পড়ে একটা নীল নেটের শাড়ি। সাদিয়া শাড়িটা নামাতে বলবে এমন সময় কুহু ওটা দেখাতে বলে।

কুহু : ভাইয়া দেখ এটা কতো সুন্দর। বউভাতের রিসেপশনে এটা পড়বো।
মেঘ : ওই শাড়িটা বাদ দিয়ে অন্যগুলো নে। ওটা আমার পছন্দ হয়েছে। ওটা আমার বউ এর জন্য নিবো।

সাদিয়া : কেন.? ওটা কুহু আপু আগে পছন্দ করেছে ওটা আপুই নিবে।

মেঘ : কুহু ওটা নেবে না। আর কাউকে নিতেও দিবো না।

সাদিয়া : ইচ্ছার কথা.? ওটা আমি নিবো। পারলে ঠেকান। ভাইয়া ওটা প্যাক করে দিন।
মেঘ : এটা ঠিক না। ওটা আমার পছন্দ হয়েছে।

সাদিয়া : এটা সবার আগে আমি পছন্দ করেছি তারপর আপু। আপনি অন্যটা পছন্দ করুন। এটা আমার। শুধু আমার। আরীব ওনাকে বলুন এটা আমার।

আরীব : ( মেঘ কি ইচ্ছা করে এমন করলো..? কুহুকে তো কখনো ও কোনোকিছুতে মানা করে না। আর সাদিয়া যে ওটা পছন্দ করেছে সেটা মেঘ বুঝলো কিভাবে..? ) মেঘ

মেঘ : আচ্ছা নিন। একটা শাড়ির জন্য কান্নাকাটি করার দরকার নেই। আচ্ছা আপনার কাছে টাকা আছে তো.? পরে কি পছন্দের সাথে আমাকে টাকাও দিতে হবে.?

সাদিয়া : ইউ। আমার কাছে সব আছে।
সাইড ব্যাগ দিকে তাকাতেই সাদিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ব্যাগ কোথায়.?

সাদিয়া : আমার ব্যাগ.? ওখানেই তো টাকা ছিলো। আমার ব্যাগ কোথায় গেলো। আপনি নিয়েছেন.?

মেঘ : আমাকে দেখে কি চোর মনে হয়.?( যতই নিজেকে আড়াল করিস রোজ,, তোকে চিনতে আমি ভুল করিনি,, এখনো আগের মতোই আছিস কোনোকিছু গুছিয়ে রাখতে শিখিসনি। আইসব্যাগ নিতে গিয়ে যে ভুলে তোর সাইডব্যাগ আমার হাতে দিয়েছিস সেটা মনে করতে আজ সারাদিন লাগবে তোর। ) আরীবভাই এসব কি.? তোমার গেস্ট টাকা না এনেই আমাকে চোর বানাচ্ছে.?

আরীব : সাদিয়া আমি পে করে দিচ্ছি।
সাদিয়া : লাগবে না আমার শাড়ি। আমি যখন বলেছি আপনার টাকা নিবো না তখন নিবো না। আর আপনি.? নিজের বউকে শাড়ি দিবেন বলে এমন করলেন তাইনা.? নিন আপনার শাড়ি।কিনবো না কিছু।

শাড়ি রেখে রেগে চলে গেলো সাদিয়া। সুমিও ওর পিছু পিছু গেলো।

কুহু : এবার প্রমাণ পেলি তো ভাইয়া..?? যে ও রোজ । মেঘের রোজ। তুই আর ওর সাথে নিজেকে জড়াস না।

আরীব : কিন্তু সাদিয়া..? ও তো কিছু বলেনি।
কুহু : ও চায় মেঘকে কষ্ট দিতে। হয়তো জেদ করে তোকে বিয়েও করে নেবে কিন্তু কখনো কি সুখি হতে পারবি তোরা..? তোদের তিন তিনটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এখনো কি বুঝতে পারছিস না রোজ কেন তোকে ইগনোর করে.? রোজ এখনো মেঘকেই ভালোবাসে। এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি।

আরীব : মেঘকে সেদিন বলেছিলাম যদি পারি তাহলে মেঘের কাছে রোজকে ফিরিয়ে দিবো। ও যদি রোজ হয় তাহলে আমি কখনো আমার ভালোবাসার দাবি নিয়ে ওর কাছে যাবো না। আর যদি সাদিয়া হয় তাহলে ওর থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।

চলবে,,