তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব-০৪

0
883

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা(উপন্যাস)
#পর্ব:4
#Suraiya_Aayat

শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো আয়াশ, নূর বিছানার ওপর বসে আছে, নতুন বউ তাই কেউ কখনো ওকে কোন কাজও করতে বলবেনা তাই ঘরবন্দী হয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক ৷আয়াশ বেরিয়ে আসতেই নূর এটা লম্বা শ্বাস নিলো, ফর্মালিনের গন্ধটা আর পাওয়া যাচ্ছে কি তাই বোঝার চেষ্টা করছে ৷ নাহ ! আর গন্ধটা নাকে আসছে না, তখন গন্ধটা এতো তীব্রভাবে ওর নাকে এসে পৌচ্ছাছিলো যে ও সহ্য করতে পারছিলো না, আর কিছুখন আয়াশের শরীরের সাথে লেপ্টে থাকলে হয়তো ও ওখানেই জ্ঞান হারাতো ৷ আয়াশ বেরিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো তারপর ড্রয়ার থেকে একটা লেন্স বার করে নিয়ে চোখে পরতে শুরু করলো ৷ নূর যেন অবাক হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রয়লো , এমনিতেই আয়াশের হালকা বাদামী রঙের চোখ তার ওপর লেন্স পরার প্রয়োজনীয়তা নূর বুঝতে পারলো না ৷ বিছানা থেকে ধড়ফড়িয়ে নেমে আয়াশের থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বলল
” এটা কি ? আপনি লেন্স পরেন?”

আয়াশ লেন্সটা আরেক চোখে পরে নিয়ে নূরের দিকে তাকালো ৷ আয়াশের চোখটা আগের তুলনায় অন্যরকম লাগছে ৷ আগের থেকেও একটু বেশিই বাদামী আর আকর্ষনীয় ৷ আয়াশ নূরের দিকে প্রশ্ন ছূড়ে বলল
” লেন্স বোঝোনা ,ফর্মালিনের গন্ধ সহ্য হয় না , কি কি সহ্য করতে পারো তুমি বলবে ? লাভ টর্চার ?”

কথাটা বলতেই আয়াশ ক্রমশ নূরের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যেতে লগলো , নূর ও ভয়ে পিছাতে লাগলো , এবং একটা সময় নূরের দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেল ৷ আয়াশ নূরের থেকে খানিকটা দূরত্ব রেখেই দাড়িয়েছে ৷
” কি হলো বলো, লাভ টর্চার ভালো লাগে ? আমি তো এখনো কিছুই শুরু করলাম না, আর এখনই এতো ভয় আফু সোনা !”

নূর আমতা আমতা করে বলল
” সামান্য লেন্স পরেন কেন সেই প্রশ্নটা রেছিলাম আর আপনি তা থেকে অন্য কথায় কেন চলে আসলেন?”

আয়াশ হেসে বলল
” তোমাকে দেখলেই না বড্ড ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, মনে হয় যে তোমাকে যদি একদম গিলে খেয়ে ফেলতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার শান্তি হতো ৷”

নূর কাঁপাকাঁপা গলায় বললো
” আপনি কি ভ্যাম্পায়ার নাকি যে সবসময় এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলেন ৷ আমার তো এখন সন্দেহ জাগে যে আপনি আদেও মানুষ কি না ৷”

আয়াশ উচ্চস্বরে হেসে বলল ” কোন ভ্যাম্পায়ার না,তবে আমি হলাম মানুষরুপী ডেভিল ৷ বুঝলে আফু সোনা ?”
কথাটা বলে নূরের কানে আলতো করে কামড়ে সেখানে ওর দাঁতের দাগ বসিয়ে দিলো ৷ নূর ” আহহ ” শব্দ করে আয়াশকে ধাক্কা মেরে আয়নার দিকে ছুটে যেতে নিলেই আয়াশ নূরের হাত ধরে ফেলল আর বলল ” এরকম চিহ্ন আরো অনেক পাবে ৷ বলেছিলাম না তোমার শরীরে চিন্থতে ভরে যাবে ৷ মেক ইট কাউন্ট ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷ নুর এখনো কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ কালকে আয়াশ কোমরে আচড় দিয়েছিলো সেটা নূরের মনেই নেই ,রাত্রে যখন জ্বালা করছিলো সেই কাটা জায়গাটা তখন ও গুরূত্ব দেইনি তাই হঠাৎ আচড়টার কথা মনে পড়তেই আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ পেট থেকে শাড়িটা আলতো করে সরিয়ে সেই আচড়ানো স্থানটা দেখতে লাগলো ৷ চার আঙুল আচড় পড়েছে সেখানে যা এখন বাদামী বর্ন ধারন করেছে আর অচড়ের আশেপাশের জায়গাগুলো হালকা লাল আভা নিয়েছে ৷ নুর মন খারাপ করে শাড়িটা দিয়ে কোমরটা ঢেকে নিয়ে কানের দিকে তাকালো ৷ কানে দাঁতের দাগ পড়েছে, তা দেখে নূর দীর্ঘ নিশ্বাস নিলো ৷ বিছানায় বসে খানিকখন চোখ বন্ধ করে সবকিছু ভাবার চেষ্টা করলো ৷ আয়াশকে নিয়ে ইতিমধ্যে ওর মাথায় অনেক প্রশ্ন গেথে গেছে যা নূর প্রথম থেকে ভাবছে,,,

প্রথমত,,,, আয়াশের জোর করে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা কেন হলো ?

দ্বিতীয়ত,,,,আয়াশ কি ওকে আদতেও ভালোবাসে নাকি তার কোন স্বার্থে এমন করছে ?

তৃতীয়,,,,, উনি এমন অদ্ভুত কেন? চোখে লেন্স লাগান কেন? উনি কি সবসময়ই এমন লেন্স পরে থাকেন?

চতুর্থ,,,,ওনার ঘরে গোপন কক্ষের প্রয়োজনীয়তাই বা কেন?

পঞ্চম,,,,উনি কিছু করেন না পেশাগত দিক থেকে, তাহলে ওনার শরীরে ফর্মালিনের গন্ধ কেন?ফর্মালিন তো মরা বস্তু সংরক্ষনের জন্য ব্যাবহার করা হয়,,,,

কথাটা ভেবে নূর আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না, ও যতদূর ভেবেছে তাতেই ওর মনের মাঝে এক অজানা ভয় ঢুকে গেছে ৷ আয়াশকে নিয়ে জানার কৌতুহল বাড়ছে , দুদিনে মানুষটাকে যতদূর চিনেছে সে অনেক রহস্যময় আর এতো সহজে নূরের কাছে ধারা দেবে, না ৷ নূর অস্থিরতায় পাইচারি করতে লাগলো, বিড়বিড় করে একটা কথায় বারবার বলতে লাগলো ,,,,
” জানতে হবে, আমাকে জানতেই হবে যে উনি আসলে কে? উনি কি করেন? নিজেকে নূরের সামনে এমন অদ্ভুত প্রমান করছেই বা কেনো , আসলেই কি উনি এমন অদ্ভুত ব্যাক্তিত্বের?

অনেক ভেবেও কোন উত্তর পেলো না দেখে নূর বিরক্ত হয়ে বিছনায় বসে পড়লো ৷
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নূর , হঠাৎ কিছু একটা এসে ওর গায়ে পড়তেই ও চমকে গেলো, পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা কাগজের বানানো ছোট প্লেন ৷ নূর সেটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতেই চোখ পড়লো ,যেটাতে কোন ছবি খুব স্পষ্ট ভাবে প্রিন্ট করা আছে যা কাগজটার সম্পূর্ণ ভাজ না খুললে বোঝা সম্ভব না ৷ নূর দ্রুত কাগজটা খুলতেই দেখলো দুটো চোখের ছবি রয়েছে , একটা ঘন বাদামী আর এটা হালকা বাদামী ৷ তার নীচে লেখা আছে
” চোখের বিন্যাস দেখে বোঝা মুশকিল কে আসল আর কে ছদ্মবেশী ৷ ”
লেখাটা নূরের কাছে সম্পূর্ণটা ধাঁধার মতো লাগলো, কিছুই বুঝলো না লাইনটা পড়ে তাই আরো বেশ কয়েকবার পড়লো তবুও লাভ হলো না দেখে কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিয়ে বলল
” আপনার ব্রেন ঠিক কতোটা ফাস্ট মিস্টার আয়াশ আমি তা জানতে চাই এতো নিঁখুত কাজ !”

আয়াশের বাবা হুইলচেয়ারে বসে আছেন আর ওনার সামনে সোফাতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ রেখে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে আয়াশ ৷ আয়াশের বাবা তিনি তার মুখ থেকে চিন্তার রেশটা হালকা কটিয়ে বললেন
” বৌমা দেখতে কেমন রে? তোর খালামনি বললেন যে বৌমা নাকি মাশাআল্লাহ ৷”

আয়াশ চোখ বন্ধ রেখেই বললো
” একটা মানুষের যেমন দেখতে হয় তেমনই , ধরতে গেলে মানুষই ৷”

উনা আয়াশের এমন উদাসীন কথা বার্তা শুনে বললেন
” এসব কি কথা আয়াশ সে তোমার বউ , তোমার বাকিটা জীবন চলার সঙ্গী ৷ নাকি শুধুমাত্র তুমি পুরোনো কথা রাখতেই তাকে বিয়ে করেছো , তোমার তার প্রতি কোন অনুভূতি নেই কোনটা ?” খানিকটা রুক্ষ কন্ঠে বললেন কথাগুলো ৷
আয়াশ এবার ওনার দিকে তাকিয়ে বলল
” লেন্স পরলে আমাকে একটু অদ্ভুত দেখায় তাইনা ?”

উনি পুনরায় বিরক্তিমাখা ভঙ্গিতে বললেন
” আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আয়াশ ৷”

আয়াশ এবার ওর জায়গা ছেড়ে উঠে জানালার পর্দাটা সরিয়ে বলল ” কতোদিন আর এভাবে নিজেকে আড়াল করে রাখবে ?”
আয়াশের বাবা রুগ্ন কন্ঠে জবাব দিলেন
” তুমি তো জানোই সব তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করছো কেন? যেদিন সে ফিরবে সেদিন ৷”

আয়াশ ও একটা মুচকি হেসে টেবিলের ওপর থাকা বইটা হাতড়াতে হাতড়াতে বলল
” আমারও সেম ৷ তুমি খুব ভালো করেই জানো যে আমি কি চাই, তাই যেদিন আমিও সুখের আলো দেখবো সেদিন সেও আমার সাথে সুখের আলো দেখবে ৷ তবে তাকে কষ্ট দিতে আমার বেশ ভালো লাগে, আমার নিজের যেন অদ্ভুত এক পৌশাচিক আনন্দ লাগে ৷ ”

” সবাইকে তোমার এই জীবনের জটিল ঘটনা চক্রের সাথে জড়িওনা আয়াশ সে একটা মেয়ে তার ও মন বলে একটা জিনিস আছে , বারবার কষ্ট পেতে পেতে মানুষ কঠিন হয়ে যায় ৷ আজ তোমার মাকে আমি এমন কষ্ট দিলে তুমি সহ্য করতে পারতে ?”

মুহূর্তেই আয়াশ ভয়ংকর কন্ঠে বলল
” কিন্তু সে নেই তো !”
আয়াশের চোখের কোনে জল জমে আসছে ধীরে ধীরে ৷
উনি মাথাটা নীচু করে নিলেন ৷ আর নরম কন্ঠে বললেন
” মেয়েরা হয় ফুলের মতো তাদেরকে কষ্ট দিতে নেই , এই কথাটা মাথায় রেখো ৷”
তখনই আয়াশ একটা মুচকি হেসে বলল
” H2+O= H20 ” how easy….যদি সব রহস্য যদি জলের মতো সহজ হতো তাহলে একটা সমীকরন প্রতিষ্ঠা করতে কোন অনুঘটকের প্রয়োজন হতো না ৷”

কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে এলো ৷

#চলবে,,,,,