তুমিময় আসক্তি পর্ব-০৬

0
1241

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৬”

–” রুদ্র ড্রিংকের অর্ডার করলে রাজ সেটা বারণ করে দেয়। রাজের উপর রেগে যায় রুদ্র এতে।

– কি সমস্যা তোর রাজ? এখন কি আমি ইচ্ছে মতো ড্রিংক’টাও করতে পারবো না?

– না পারবি না তুই, সোজাসাপটা উত্তর দেয় রাজ। রাজের কথায় রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকালে রাজ মুখটা মলিন করে বলে এই সব কি হচ্ছে বল আমায়? তুই মেয়েটার কথা না ভাবিস কিন্তু আঙ্কেলের কথাটা তো একবার ভাব। ওই বাড়িতে আঙ্কেলও আছে ভুলে যাচ্ছিস। আঙ্কেল ড্রিংক করা একদম পছন্দ করে না সেটা খুব ভালো করে জানিস। তার উপর আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আর তুই আজ ড্রিংক করে মাতাল হয়ে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করছিস।

– রাজের কথায় রুদ্রর মনে পড়ে। সত্যি তো তার বাবা ড্রিংক করা একদম পছন্দ করে না। তাছাড়া রুদ্র তো তার বাবাকে কথা দিয়েছে কোনো দিন ড্রিংক করবে না। তাহলে আজ কি করতে যাচ্ছিলো।

– রুদ্র এর আগে প্রায় ড্রিংক করে বাসায় ফিরতেন। রুদ্রর ড্রিংক করা দেখে জাহির চৌধুরী খুবই কষ্ট পেতেন। তিনি কখনোই চান-না তার ছেলে ড্রিংক করুক। জাহির চৌধুরী নিজেও কখনো ড্রিংক করেনি তার কষ্টকে সাময়িকভাবে দূর করার জন্যও। কারণ তিনি মনে করতেন যে, যদি সে ড্রিংক করে বাসায় আসে তাহলে তার ছেলেও একদিন সেটা শিখবে। তাই যতই কষ্ট হোক জাহির চৌধুরী কখনো ড্রিংক এর ধারেপাশে যায়-নি। রুদ্র যখন ড্রিংক করা শুরু করে তখন তিনি কষ্ট পান ভীষণ এটাই। এরপর রুদ্রর থেকে কথা নেয় যে রুদ্র যেনো আর কখনো ড্রিংক না করে। রুদ্রও তার বাবাকে কথা দিয়েছিলো।

-“” রুদ্র বার থেকে বেরিয়ে আসে। সাথে রাজও বেরিয়ে আসে।
— অনেক রাত হয়েছে রুদ্র এবার বাড়ি যা প্লিজ। দেখ রাত প্রায় ১-টার কাছাকাছি। রাজের কথায় রুদ্র অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে আমার বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না রাজ। বাড়ি গেলে ওই মেয়েটার সামনাসামনি হতে হবে আমি জানি৷ আর ওকে আমার সামনে দেখলে মাথা গরম হয়ে যাবে। তখন কি উল্টো পালটা করে ফেলবো নিজেও জানি না। এর থেকে ভালো আমি বাইরে থাকি।

– এইভাবে কতখন রুদ্র? আজ রাতে নাহয় বাড়ি ফিরলি না কিন্তু কাল, পড়শু বাড়ি তো যাওয়ায় লাগবে। তাছাড়া ওই মেয়েটা এখন তোর স্ত্রী বোঝার চেষ্টা কর।

– শাট আপ রাজ জোরের সাথে বলে রুদ্র। ওই মেয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি শুধু মাত্র বাবার জন্য বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি এর বেশি কিছু কেউ-ই আমার থেকে আশা করতে পারবে না। থাক তুই আমি বাড়ি যাচ্ছি। প্রচন্ড মাথা ধরেছে৷ ঘুমের প্রয়োজন বলে রুদ্র হেঁটে গাড়ির কাছে যায়। পেছন থেকে রাজ রুদ্রকে ডেকে বলে অল দ্যা বেস্ট ব্রো৷

– রাজের এই কথার মানে রুদ্র বুঝতে পারে না। তাই একটু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যায়।

– দোলা রুদ্রর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যায় গুটিসুটি মেরে রুদ্রর বিসানার একপাশে। এখন রাত ১টা বেজে ৪৫ মিনিট।

– স্তব্ধ চৌধুরী বাড়ি। সবাই ঘুমে বিভোর শুধু ঘুম নেই জাহির চৌধুরী চোখে। সে খুব ভালো করে জানে রুদ্র এখনো বাড়ি ফিরেনি৷ দোলার সাথে কি হবে এই ভেবে তিনি চিন্তায় আছেন অনেক।

— দোলার কাচা ঘুমটা সবে পাকাপোক্ত ভাবে হতে যাচ্ছে তখনই কেউ একজন হাত ধরে টেনে নিচে ফেলে দেয়। ঘুমের মধ্যে আচমকা এমন হওয়ায় দোলা ভয় পেয়ে যায়। অবাক হয়ে আহত চোখে তাকিয়ে দেখে রুদ্র তার দিকে রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। রুদ্রর চোখ দেখে দোলা ভয়ে গোটা কয়েক ঢোক গিলে শুকনো। দোলা মনে মনে নিজেকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রুদ্রর দৃষ্টি দেখে কোনো কিছুতেই যেনো কাজ হচ্ছে না তার।

– তোমার সাহস হলো কি করে আমার ঘরে আসার। আমার বিসানায় আমার অনুমতি ছাড়া ঘুমানোর অনেকটা চিৎকার করে বলে কথা গুলো রুদ্র৷
– রুদ্রর চিৎকারে দোলা আরো ভয় পেয়ে কুঁকড়ে উঠে।

– একে তো রুদ্রর মাথা ধরেছে খুব তার উপর দোলাকে তার ঘরে দেখে আরো বেশি রেগে যান তিনি।
– দোলা মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে রুদ্র চোখে চোখ রাখে সাহস নিয়ে। কিন্তু দোলার হাত-পা প্রচন্ড রকম কাঁপছে। দোলার ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে পালায় রুদ্রর সামনে থেকে। কিন্তু না তার পালালে চলবে না। দোলার ইচ্ছে করছে রুদ্রকে কিছু বলতে কিন্তু তার মুখ দিয়ে যেনো কথায় বের হচ্ছে না।

– আউট, চিৎকার করে বলে রুদ্র।

– দোলা এবার আর চুপ থাকতে পারে না৷ নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলে, ভদ্র ভাবে কথা বলুন। ভুলে যাবেন না আমি আপনার স্ত্রী। এই ঘরে আপনার যতটা অধিকার আছে ঠিক ততটা অধিকার আমারও আছে। রুদ্রর চোখে চোখ রেখে কথা গুলো বলে দোলা। ভেতরের ভয়টাকে আপাতত সে দমিয়ে রাখে। ভয় যে এখন হচ্ছে না দোলার তা নয়৷ কিন্তু ভয় পেলে তার চলবে না। এই মানুষটাকে নিয়ে তার বাকি পথটা চলতে হবে তাই নিজেকে সাহসী হতে হবে। এই সবই ভাবে দোলা।

– দোলার কথায় রুদ্র অনেক অবাক হয়। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে তোমাকে বিয়ের আগে আমার শর্ত গুলো জানানো হয়নি?
– দোলা কৌতুহলী হয়ে বলে কিসের শর্ত? বিয়েতে আবার কিসের শর্ত থাকে। বিয়ে হলো দুটো মানুষের সারাজীবনের বন্ধন। সেটা শুরু হয় বিশ্বাস ভরসা দিয়ে। কোনো শর্ত রেখে না।

– শাট আপ প্রচন্ড রকম চিৎকার করে বলে কথাটা রুদ্র। রাগে তার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা ফুলে-ফেঁপে উঠে। দোলা রুদ্রর চিৎকারে কেঁপে ওঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে ভয়ে।

– আমি এই বিয়ে মানি না বুঝেছো তুমি। আই হেট ম্যারেজ, আই হেট গার্লস। আমি শুধু মাত্র বাবার জন্য এই বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলাম আর সেটা শর্ত সাপেক্ষ। তোমার কোনো মুল্য নেই আমার জীবনে আর না কোনো মাথা ব্যথা আছে আমার তোমাকে নিয়ে। তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো থাকবো। তবে হ্যাঁ আমার সামনে কখনো আসার চেষ্টা করবে না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

– দোলার কান্না পাচ্ছে খুব৷ চোখ ভরে পানি আসছে। কিন্তু রুদ্রর কাছে এই চোখের পানির কোনো মুল্যই নেই। দোলা চোখের পানি গুলো চোখের মধ্যে নিঃশেষ করার চেষ্টা করে শক্ত কন্ঠে বলে আমি এখানেই থাকবো আর আপনার সাথেই থাকবো। বিয়েটা যার ইচ্ছেতে হোক না কেনো, বিয়ে তো আপনি করেছেন। আমি আপনার স্ত্রী এটা আপনাকে মানতে হবে। বিয়ের মুল্য আপনার কাছে থাকতে না পারে কিন্তু আমার কাছে আছে৷ আপনি বিয়েতে বিশ্বাস করতে না পারেন কিন্তু আমি করি৷ তাই এটা আপনার কাছে খেলা হতে পারে আমার কাছে নয় জোরের সাথেই বলে কথা গুলো দোলা৷ তার ধৈর্যর বাধ ভেঙে গেছে যেনো। রুদ্রর এত অপমানের পরও নিজেকে ঠিক রেখেছিলো সে। কিন্তু এখন আর নয়। দোলার সাথে কেউ কখনো উচ্চস্বরে কথা বলেনি। কিন্তু রুদ্র তার উপর রীতিমতো চিৎকার করে চলেছে। এটা যেনো দোলা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। যদিও সে জানতো তার জন্য এমন কিছু অপেক্ষা করছে। তাই বলে এতো বেশি খারাপ হবে ভাবিনি দোলা।

-শুনো ভালো ভাবে বলছি আমার রুম থেকে বের হও। আমার মাথা ব্যথা করছে। তোমার সাথে কথা বলার রুচি বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই৷ প্লিজ লিভ মাই রুম। আর কখনো এখানে আসার চেষ্টা করবে না।

– কিন্তু কে শুনে কার কথা৷ দোলা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে। মনে মনে তার ভীষণ ভয়ও করছে এরপর রুদ্র কি করে এটা ভেবে। তবে সে এখান থেকে একচুল নড়বে না মনে মনে প্রতিঙ্গা করে দোলা।

-দোলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে কি হলো শুনতে পাওনি আমার কথা। যাও এখান থেকে।

— কোথায় যাবো আমি? দোলার সহজ প্রশ্ন।

– দোলার কথায় রুদ্র রুক্ষ কন্ঠে বলে জাহান্নামে যাও। তাও এখন এখান থেকে বের হও।

– কিন্তু আমি তো জাহান্নামের রাস্তা চিনি না। কোন দিক দিয়ে যেতে হয় ঠোঁট চেপে হেসে বলে দোলা।

–“দোলার এমন কথায় রুদ্র হা হয়ে যায়। রুদ্র তো অবাক হয়ে তাকায় দোলার দিকে। দোলার সাহস দেখে সে রীতিমতো শকড। যে রুদ্রনীল চৌধুরীর চোখের দিকে তাকানোর সাহস পায়না কেউ । সেখানে এই মেয়ে কি-না তার সাথে রসিকতা করছে। মুখে মুখে তর্ক করছে।

– এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার। রসিকতা করছো আমার সাথে। আমি কি ফান করছি তোমার সাথে৷ আমাকে দেখে কি জোকার মনে হচ্ছে। হাউ ডেয়ার ইউ জোক উইথ মি? রাগী কন্ঠে বলে রুদ্র।

– রুদ্র কপাল ধরে বলে নাহ এইভাবে তুমি শুনবে না।ভীষণ রকম জেদী আর ফাজিল মেয়ে তুমি। তুমি কি ভেবেছো এই ভাবে রুদ্রনীল চৌধুরীকে জব্দ করবে। তাহলে বলব ভুল ভাবছো। রুদ্রনীল চৌধুরী মেয়েদের ঘৃণা করে জাস্ট ঘৃণা করে। তাদের জন্য কোনো মায়া দয়া নেই এই রুদ্রনীল চৌধুরীর মনে কথাটা বলে দোলার হাত চেপে ধরে রুদ্র।

– হঠাৎ হাত ধরায় দোলা চমকে উঠে। ভয়ার্ত চেহারায় বলে কি করছেন আপনি? হাত ছাড়ুন আমার।
– রুদ্র দোলার কথায় পাত্তা না দিয়ে হাত টেনে ধরে বাইরে নিয়ে এসে ছুড়ে ফেলে । দোলা টাল সামলাতে না পেরে রুদ্রর ঘরের সামনে পড়ে যায় হুমড়ি খেয়ে। এতে দোলা হাতের একটা অংশে চোট পায়। রুদ্র দোলাকে বের করে দিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দোলা সাথে সাথে উঠে পড়ে রুদ্রর ঘরের দরজা বাড়াতে থাকে আর রুদ্রকে ডাকতে থাকে।

– দরজা খুলুন প্লিজ। আমার একা থাকতে ভয় করে খুব। তার উপর এখানে আলো নেই৷ আমি দরকার হয় বারান্দায় থাকবো তাও আমাকে ঘরে থাকতে দিন৷ আজকের মতো অন্তত থাকতে দিন আমাকে প্লিজ৷ কাল থেকে আমি আপনার ঘরে আসবো না ছোট সাহেব। প্লিজ দরজাটা খুলুন চিৎকার করে বলে দোলা।

– কিন্তু দোলার কথার কোনো কর্ণপাত করে না রুদ্র৷ দোলার কথাকে উপেক্ষা করে শুয়ে পড়ে সে কাঁথা মুড়িয়ে। এইদিকে দোলার রুদ্রর উপর ভীষণ রাগ হতে থাকে। রুদ্রকে মনে মনে হাজার টা গালি দিতে থাকে৷

– বদমেজাজি রাক্ষস একটা। এত মেজাজ কোথায় থেকে আস রে তোর৷ কত অনুরোধ করলাম একবারও শুনলো না। আমিও দোলা তোকে কখনো শান্তি দেবো না এই বলে রাখলাম। আমাকে ঘর থেকে বের করা না -এর শোধ আমি নেবোই। কিন্তু এখন কি করবো। বাইরে কি অন্ধকার রে বাবা৷ এখানে একটা লাইটও দেয়নি কেউ। অবশ্য রাক্ষসরা অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে।

– ধুর কি সব বলছি আমি। এরপর দোলা লম্বা একটা হাই তুলে বলে আমার কত সাধের ঘুমটা নষ্ট করে দিলো রাক্ষসটা৷ দোলা সব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে রুদ্রর ঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে।

– এখানেই থাকবো আমি এক পা নড়বো না। দেখি আমাকে কতখন ঘরে না নিয়ে রাখে৷ বিয়ে করেছিস বেটা আর বউ বাইরে রাখবি মানে৷ আপনার অহংকার যদি আমি ভেঙে গুড়িয়ে না দিয়েছি আমিও দোলা না৷ আপনাকে ঠিক করে তবেই আমি এই বাড়ি থেকে বের হবো এই আমার ওয়াদা আমার কাছে। এরপর দোলা আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে যায় রুদ্রর ঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে।

দূর থেকে দোলা আর রুদ্রর কান্ডকারখানা সবই দেখছিলেন জাহির চৌধুরী। কিন্তু দোলার প্রতিবাদ করায় সে ভীষণ খুশি দোলার উপর। সে বুঝে গেছে একমাত্র দোলায় পারবে রুদ্রর তালে তাল মিলিয়ে চলতে । কিন্তু দোলার জন্য তার খুব খারাপ লাগছে। সারারাত বাইরে থাকতে হবে এটা ভেবে। জাহির চৌধুরী একবার ভাবে দোলাকে অন্য ঘরে যেতে বলবে। কিন্তু কিছু একটা ভেবে তিনি আর কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। তিনি চাই রুদ্র আর দোলার ঝামেলা ওরাই যেনো মিটায়। এর মধ্যে সে যেতে চাই না।

— দিনের আলো উঁকি দেয় চারিপাশে। রাতের আঁধার কাটিয়ে আলো’রা মাথা চারা দিয়ে উঠে আলোকিত করে দেয় সব কিছু। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে চারিপাশ। দোলা এখনো রুদ্রর ঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে৷ অনেক রাত করে ঘুমানোর জন্য দোলা আজ ফজরের নামাজ মিস করে গেছে ঘুমে বিভোর থাকায়।
— জেসমিন চৌধুরী আজ তাড়াতাড়ি উঠে যায় ঘুম থেকে। প্রতিদিন সে লেট করে উঠে। কিন্তু আজ সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় তার। জেসমিন চৌধুরী ফ্রেশ হয়ে রুদ্রর ঘরের দিকে আসে। রাতে সে নিজ ঘরে থাকায় এদিকটা কি হয়েছে কিছুই জানে না। তাই পরিবেশটা কেমন হয়ে আছে জানার জন্য তার তল্লাশি এই সকাল সকাল।

– দোলার ঘুম হাল্কা হয়ে আসে। দিনের আলো চোখে পড়ায় তার আর ঘুম হয় না৷ পিটপিটে চোখে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে। কোথায় আছে সে মুলত সেটাই বোঝার চেষ্টা দোলার। গতরাতের কথা মনে হতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফুকে দোলা। এরপর উঠে দাঁড়াতেই জেসমিন চৌধুরী উপহাস কণ্ঠে বলে আহা গো নতুন বউয়ের কি অবস্থা। কোথায় ভেবেছিলো বিয়ে করে এসে স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকবে৷ এই বিশাল সম্পত্তি ভোগ করে রাজত্ব করবে৷ কিন্তু সে সব আশায় ছাই পড়ে গেলো।

— আমার না তোমার জন্য খুব মায়া হচ্ছে। কি ভেবে এসেছো আর কি হচ্ছে৷ তবে এটা বলতে পারি সামনে আরো কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। রুদ্র তোমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে একদিন এই বাড়ি থেকে দেখো নিও।

– জেসমিনের কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে আসসালামু আলাইকুম ফুপি শাশুমা। দোলার এই উদ্ভুত ডাক সাথে উদ্ভুত ব্যবহারে অবাক হয় জেসমিন চৌধুরী।

– ইসস কত বেলা হয়ে গেছে৷ বিয়ের পরের দিন নতুন বউ এতো বেলা করে ঘুমানো ঠিক না তাই না ফুপি শাশুড়ি? আসলে কি বলুন তো আমি এত বেলা অব্দি ঘুমাও না৷ গতরাতে অনেক দেরি করে ঘুমাবোর ফল এটা। বাসর রাত বলে কথা বুঝতেই পারছেন৷ আমি না যায় সবার জন্য চা বসায়৷ নতুন বউ একটা দায়িত্ব আছে না বলে দোলা এগিয়ে যেতে চাইলে জেসমিন চৌধুরী হুংকার ছেড়ে বলে এই মেয়ে তুমি কি আমাকে উপেক্ষা করছো। আমার কথার জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছো যে৷ কি ভেবেছো এই সব চালাকি করে আমার থেকে পার পেয়ে যাবে।

– ভাইজান রুদ্রকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে তোমার সাথে। তুমিও বলিহারি মেয়ে এক পিস৷ সম্পত্তির লোভে পড়ে বিয়েটা করে নিলে ঠিক। রুদ্র যে মেয়েদের সহ্য করতে পারে না এটা জানার পরও কেনো বিয়ে করেছো এটা কি জানি না আমি ভেবেছো৷ তোমাকে আর কি বলি, সব প্ল্যান তো তোমার বাবার৷ দেখেছে বড়লোক বাড়ি বড় ঘর, মেয়েকে এখানে পাঠিয়ে সে রাজ করবে পরে। বামন হয়ে চাঁদে পা রাখার স্বপ্ন যাকে বলে। কি লোভী বলিহারি তোমরা। সারাজীবন বাড়ির ড্রাইভার থেকে এখন বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তোমার বাবা।

– মুখ সামলিয়ে কথা বলুন ফুপি। ভুলে যাবেন না আপনি যার সম্পর্কে কথা বলছেন সে আমার বাবা৷ আর আমার বাবা কারো সম্পত্তির লোভে আমাকে এখানে বিয়ে দেয়নি৷ বড় সাহেবের কথা উপেক্ষা করতে পারেনি বলে সে এই বিয়েতে রাজী হয়েছে৷ আসলে কি বলুন তো, চোরের মন সব সময় পুলিশ পুলিশ করে। আপনার অবস্থাটাও তেমন কথাটা বলে দোলা আর দাঁড়ায় না। শাড়ি ঠিক করতে করতে নিচে নেমে যায়।

– দোলার কথায় জেসমিন চৌধুরী রাগে রিরি করে উঠে। কি বলে গেলো আমাকে। আমি চোর তাই আমার মন পুলিশের ভয় করে সব সময়। তোমাকে তো আমি এই বাড়িতে এক মুহূর্ত টিকতে দেবো না। খুব চ্যাটাং চ্যাটাং কথা না তোমার। আমি থাকতে এক মুহূর্ত সুখে কাটাতে দেবো না তোমায়৷ আমাকে অপমান করার শোধ আমি নেবো দেখো নিও বলে জেসমিন চৌধুরী রাগে ফুসতে ফুসতে তার ঘরে যায়।

– দোলা ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে যায়। সার্ভেন্টের থেকে সব বুঝিয়ে নিয়ে সবার জন্য নাস্তা করতে থাকে সে। জাহির চৌধুরী সব ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে আসে৷ এর মধ্যে দোলা চা হাতে উপস্থিত হয়।

– কেমন আছেন বাবা? দোলার কথায় জাহির চৌধুরী দোলার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলে এইতো আছি বেশ৷ তা তুই চা নিয়ে এলি যে? বাকিরা কই?

– সবাই আছে বাবা৷ আমি ভাবলাম আজ সবার জন্য নাস্তা বানায়। তাছাড়া আমার তো কোনো কাজ কাম নেই৷ শুধু শুধু বসে থাকতে ভালোও লাগে না।
– খুব ভালো করেছিস। যাক নতুন বউয়ের হাতে নাস্তা পেয়েছি বিয়ের পরের দিনই আর কি চাই রসিকতা করে বলে জাহির চৌধুরী। তার কথা শুনে দোলাও মুচকি হাসে।
– তবে আজই শেষ এটা বুঝেছিস। তোর পড়াশোনা আছে এটা ভুলে যাসনা আবার। বিয়ে হয়েছে বলে যে পড়াশোনা বাদ এমন কিন্তু না। কাল থেকে কলেজ যাবি আগের মতো। পড়াশোনা করবি আর আমার ছেলেটাকে মানুষ করবি এই তোর কাজ। তুই এই বাড়ির পুত্রবধূ না৷ এই বাড়ির মেয়ে বুঝেছিস তুই। দোলা মুগ্ধ নয়নে তাকায় জাহির চৌধুরীর দিকে। এই বাড়িতে একমাত্র এই মানুষ টা তাকে ভালোবাসে৷ আর অনেক ভালো মনের মানুষ। দোলা একদিক থেকে শান্তি পায় এটা ভেবে যে এক বাবাকে রেখে এসে সে আরেকটা বাবা পেয়েছে এখানে৷ বাবার কথা মনে আসতে দোলার মন খারাপ হয়ে যায়।

— চলবে…

❌❌কপি করা নিষেধ,❌❌ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।