তুমিময় আসক্তি পর্ব-০৮

0
1169

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৮”

-“” দোলা দুপুরে সবার জন্য রান্নাবান্না শেষ করে ফ্রেস হতে যায়। রুদ্র বাইরে গেছে। জাহির চৌধুরী তার ঘরে আর জেসমিন চৌধুরী সেও তার ঘরে।

-জেসমিন চৌধুরী তার ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে দোলা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে রুদ্রর ঘরের দিকে যাচ্ছে। জেসমিন চৌধুরী একটা ডেভিল হাসি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।
–“দোলা ফ্রেশ হয়ে এসে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকে। দোলার ডাকে জাহির চৌধুরী জেসমিন চৌধুরী সবাই ডাইনিং-এ আসেন।

– জেসমিন চৌধুরীর মুখ থেকে যেনো হাসি সরে না। তার হাসিটা অনেকটা রহস্যময় যেটা দোলার চোখ এড়ায় না। দোলাও একটা মুচকি হাসি দেয় সে হাসির বিপরীতে।

– সবাই খেতে বসলে দোলা নিজ হাতে সব খাবার সার্ভ করে দেয়। জাহির চৌধুরী দোলাকেও খেতে বলে একসাথে বসে। কিন্তু দোলা জানায় সে পরে খাবে। জেসমিন চৌধুরী অপেক্ষা করে আছে জাহির চৌধুরীর খাওয়ার জন্য।

– জাহির চৌধুরী খাবার মাখিয়ে মুখে দেন। এতে যেনো জেসমিন চৌধুরীর মুখের হাসিটা আরো গাঢ় হয়ে যায়। কিন্তু সে হাসিটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না। কারণ, জাহির চৌধুরীর তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া দেখে জেসমিন চৌধুরীর ভ্রু কুচকে আসে। মুখটা মলিন করে জাহির চৌধুরীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

– দোলা মা মুরগীর মাংসটা অনেক দারুণ হয়েছে কিন্তু। তোর রান্নার প্রশংসা শুনেছিলাম রাশেদের থেকে আজ তার প্রমাণ পেলাম। আসলেই অনেক ভালো রান্না করিস তুই বলে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয় সে। দোলা মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু জেসমিন চৌধুরী এখনো এক লোকমা ভাতও মুখে তুলেননি৷ অবাক হয়ে জাহির চৌধুরীর দিকেই তাকিয়ে আছে।

– একি ফুপি আপনি খাচ্ছেন না কেনো? বাবার খাওয়ার দিকে নজর না দিয়ে আপনাকেও দেওয়া হয়েছে সেটা খান। রসিকতা করে বলে দোলা।

– দোলার কথায় জেসমিন চৌধুরী কপাট রাগ দেখিয়ে বলে আমি কেনো ভাইজানের খাবারে নজর দিতে যাবো। শুনো একদম আমার সাথে মজা করতে আসবে না, কথাটা বলে জেসমিন চৌধুরী ভাত মাখিয়ে মুখে দিতে তার চোখ রসগোল্লার ন্যায় হয়ে যায়। মুখের মধ্যে খাবার নিয়ে সে না পারছে চিবোতে আর না পারছে ফেলতে। জেসমিন চৌধুরীর অবস্থা থেকে মুচকি হাসে দোলা।

– কিছুখন থাকার পর জেসমিন চৌধুরী উঠে দৌড় দেন ওয়াসরুমের দিকে।

– আসলে কি হয়েছে বলি….

– দোলা যখন ফ্রেশ হতে যায় তখন জেসমিন চৌধুরী রান্না ঘরে গিয়ে দোলার রান্না করা ডাল, মুরগীর মাংসে অনেক লবণ মিশিয়ে দেয়। কিন্তু দোলা সেটা বুঝে যায় জেসমিন চৌধুরীকে রান্নাঘর থেকে বেরোতে দেখে। কারণ, জেসমিন চৌধুরী ভুলেও কখনো রান্নাঘরে পা রাখেন না এটা সে সার্ভেন্টের থেকে শুনেছে। তাই হঠাৎ রান্নাঘরে তাকে দেখে দোলার সন্দেহ হয়।

– দোলা খাবার টেস্ট করে দেখে ডাল আর মাংসে অনেক লবণ তখনই দোলা বুঝে যায় এটা কার কাজ। এরপর রুদ্রর জন্য তুলে রাখা খাবার দোলা নিয়ে যায় জাহির চৌধুরীর জন্য। আর জেসমিন চৌধুরীকে দেয় তার লবণ দেওয়া খাবার। যার জন্য জাহির চৌধুরী কিছুই বুঝতে পারে না৷ কিন্তু জেসমিন চৌধুরী তার নিজে জালে নিজে ফেসে যায়। তিনি চেয়েছিলেন দোলাকে জাহির চৌধুরীর সামনে অপমান করতে রান্না নিয়ে, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠলো না।

– জেসমিন চৌধুরীকে উঠে চলে যেতে দেখে জাহির চৌধুরী ভ্রু কুচকে বলে ওর আবার কি হলো। না খেয়ে দৌড় দিলো কেনো?

– কি জানি বাবা। আপনি খান আমি দেখছি বলে দোলা ওয়াসরুমে দিকের যায়।
– জেসমিন চৌধুরী ওয়াসরুমে গিয়ে বারবার কুলকুচি করতে থাকে। এত পরিমাণ লবণ দিয়েছে যে মুখ পুড়ে যাচ্ছে যেনো তার লবণের আকর্ষণে.

– দোলা হাসি মুখে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই হাত ভাঁজ করে।
– জেসমিন চৌধুরী মুখ ধুয়ে পিছু ঘুরতে দোলাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। চোখ মুখে তার রাগের আভাস বিদ্যমান।

– এই মেয়ে তুমি আমার খাবারে কি মিশিয়েছো। সত্যি করে বলো তুমি আমার খাবারে লবণ দিয়েছো তাই না? কপাট রাগ দেখিয়ে বলে জেসমিন চৌধুরী। দোলা এখনো গা ছাড়া ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেসমিন চৌধুরীর মুখের দিয়ে তাকিয়ে।

– আমি এখনই গিয়ে ভাইজান কে বলব ওয়েট। তুমি আমার উপর হিংসা করে আমার খাবারে লবণ মিশিয়েছো বলে জেসমিন চৌধুরী দোলাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে জাহির চৌধুরীর কাছে।

– দোলা মুখে রহস্য হাসি নিয়ে জেসমিন চৌধুরীর পিছু পিছু যায়।

– জাহির চৌধুরী তো আয়েস করে খাচ্ছে তখনই জেসমিন চৌধুরীর গগনবিদারী চিৎকার করতে করতে ডাইনিং-এ যায়।

– কি হয়েছে জেসু। এমন করে চিৎকার করছিস কেনো ভরদুপুরে। আর না খেয়ে চলে গেলি কোনো?
– কি করে খাবো ভাইজান যদি খাবারে লবণ মিশিয়ে দেওয়া হয় তো।

– জেসমিন চৌধুরীর কথায় জাহির চৌধুরী অবাক হয়ে বলে মানে?
– মানে এই তোমার আদরের বউমা আমার উপর হিংসা করে আমাকে খেতে দেবে না বলে আমার খাবারে লবণ মিশিয়েছে। আমার মুখটা পুড়ে যাচ্ছে লবণে। আসতে না আসতে আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়ার চিন্তা এই মেয়ের।। না খায়ে মারতে চাই আমাকে। সারাজীবন আমি এই সংসারের জন্য খেটে গেলাম আর আজ কি-না আমাকে অপমান করা৷
এর থেকে ভালো তুমি আমাকে সরাসরি বলে দাও, আমি চলে যায় তাও এমন করে ভাতে মেরো না আমাকে আকুতি করে বলে জেসমিন চৌধুরী।

– দোলা তো সেই লেভেলের অবাক হয়ে জেসমিন চৌধুরীর অভিনয় দেখছে৷ কি নিখুঁত অভিনয় একটা মানুষ করতে পারে সেটা জেসমিন চৌধুরীকে না দেখলে হয়তো দোলা জানতো না।

– “”” জেসমিন চৌধুরীর এমন ন্যাকাকান্নার আহাজারি দেখে জাহির চৌধুরী বিরক্তমাখা দৃষ্টি করে মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ বের করে বলে স্টপ জেসু। কি যা-তা বকছিস তখন থেকে। দোলা কেনো তোর খাবারে লবণ মেশাতে যাবে? কত সুন্দর রান্না করে ও জানিস৷ একবার খেয়ে দেখ ভালো করে মুখে লেগে থাকবে স্বাদ, মুখে হাসি নিয়ে বলে জাহির চৌধুরী।

– হ্যাঁ সেটাই তো লেগে আছে এখনো মুখে লবণের ঝাঁঝালো স্বাদ। আমার মুখটাই পুড়ে গেলো মনে হয় লবণে। আর তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি তোমার এই আদরের বউমার নামে। তুমি না চিনতে পারো কিন্তু আমি এই মেয়েকে হাড়ে হাড়ে চিনে ফেলেছি। ও তোমার কাছে ভালো সেজে থাকে এই সম্পত্তি হাতানোর জন্য সেকি বুঝি না আমি।

– জাহির চৌধুরী এবার জোরের সাথে বলে উঠেন শাট আপ জেসু। আর একটা বাজে কথা নয় দোলাকে নিয়ে। তাছাড়া কে কোন স্বভাবের তা আমার ভালো করে জানা আছে। তোর থেকে শিখতে বা জানতে হবে না। কোথায় লবণ দেখি দেখা আমাকে বলে জাহির চৌধুরী জেসমিন চৌধুরীর তরকারির বাটিটা নিয়ে মুখে দিয়ে রাগীলুকে রক্তবর্ণ চোখে তাকায় জেসমিন চৌধুরীর দিকে৷

– জাহির চৌধুরীর এই বিহেভের মানে বুঝতে পারে না জেসমিন চৌধুরী।
— “” কি হয়েছে ভাইজান? তুমি আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো?

– কোথায় লবণ তোর খাবারে? জাহির চৌধুরীর কথায় জেসমিন চৌধুরী অবাক হয়ে বলে কোথায় মানে তরকারির মধ্যেই আছে। কেনো তুমি পাচ্ছো না?

– নে তুই আবার খা তারপর বল লবণ কোথায় বলে তরকারির বাটিটা এগিয়ে দেয় জেসমিন চৌধুরীর দিকে। জেসমিন চৌধুরী একটু তরকারি মুখে দিয়ে চমকানো চোখে তাকায় দোলার দিকে৷ দোলা তো ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে গা ছাড়া ভাব নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে৷

– তোকে শেষবারের মতো সাবধান করছি জেসু। নেক্সট টাইম দোলাকে কোনো বাজে কথা বলার সাহসটাও দেখাবি না। এখন তো দেখছি সমস্যা ওর না৷ সমস্যা তোর৷ তুই তো ওকে সহ্যই করতে পারছিস না৷ দেখ ও এই বাড়ির বউ। এই বাড়ির সব কিছুতে ওর অধিকার আছে। তাই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবি এরপর থেকে আশা করি বলে জাহির চৌধুরী রাগ করে চলে যান সেখান থেকে।

– বাবা খেয়ে যান। রাগ করে চলে যাবেন না পেছন থেকে বলে দোলা৷।

– জেসমিন চৌধুরী এতখন মাথা নিচু করে ছিলো। জাহির চৌধুরী চলে যেতেই কটমটে চোখে দোলার দিকে তাকিয়ে বলে আমার সাথে গেম স্টার্ট করেছো। অনেক পুরাতন খেলোয়াড় আমি তাই ভালোই ভালোই বলছি কেটে পড়ো নাহলে কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে৷ তবে একটা কথা মানতে হবে তোমার দম আছে বটে। যতটা সাদাসিধে ভেবেছিলাম তোমায় আসলে তুমি ততটা সাদাসিধে নও। অনেক চালাক আর ধুরন্তবাজ মেয়ে একটা ।

– দোলা মুখের হাসিটা চওড়া করে আফসোসের সুর নিয়ে বলে ইসস খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ফুপি শাশুমা? আমারও না অনেক খারাপ লাগছে আপনার জন্য। এত সুন্দর করে সব প্ল্যান করলেন অথচ কি হলো দেখুন। ফেইল আপনি ইস।

– মজা লাগছে না খুব। আমাকে অপমানিত হতে দেখে খুব মজা লাগছে এর মূল্য তোমাকে খুব বাজে ভাবে চোকাতে হবে দেখে নিও বলে জেসমিন চৌধুরী চলে যেতে নিলে দোলা পেছন থেকে হেয়ালিপণা নিয়ে বলে লবণ মিশ্রিত তরকারিটা হাওয়া হলো কি করে শুনবেন না?

– দোলার কথায় জেসমিন চৌধুরী থেমে যায়। বিষ্ময় চোখে তাকায় দোলার দিকে। দোলা নিজ হাতের নখ দেখতে দেখতে বলে তেমন কিছুই না। ওই আপনি উঠে চলে যাওয়ার পরই আমি ওই তরকারিটা সরিয়ে ভালোটা রেখে দিই। বাবাতো খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে ছিলেন তাই খেয়াল করেনি এদিকটা৷। তবে আমি রান্নাটা সত্যি অনেক ভালোই করি। আপনি মিস করেন গেলেন। পোড়া কপাল আপনার কথাটা বলেই দোলা একটা হাসি দিয়ে চলে যায় তার ঘরে। আর এইদিকে জেসমিন চৌধুরী রাগে ফুসতে থাকে।

— “” রুদ্র আর রাজ বসে আছে একটা কফিশপে। রাজ বিরক্ত রুদ্রর উপর। কারণ, রুদ্র রাজকে অযথায় বসিয়ে রেখেছে দুই ঘন্টা। মিটিং অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এরপর রুদ্র রাজকে নিয়ে এখানেই বসে আছে। আর একটু পর পর কফির অর্ডার দিছে।

– আর কতখন এইভাবে বসে থাকবো আমরা? বিরক্ত সূচক দৃষ্টি নিয়ে বলে রাজ রুদ্রকে।

– রুদ্র অসহায় ফেস করে বলে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি গেলেই ওই মেয়েটার মুখোমুখি হওয়া। আবার ঝামেলা। আমার আর ভালো লাগছে না এই সব। কি বিপদ ঘাড়ে এসে জুটেছে আল্লাহ। আমি যে কেনো ড্যাডের কথা মতো বিয়ে করতে গেলাম।। আগে যদি জানতাম এই ঝামেলা এসে আমার ঘাড়ে পড়বে তাহলে কখনোই আমি বিয়েতে রাজী হতাম না।

– জানিস ওই মেয়ে আমাকে কি বলে?
–“রাজ আগ্রহ নিয়ে বলে কি বলেছে?

– আমাকে পুলিশের ভয় দেখায়। বলে রুদ্রনীল চৌধুরী নাকি বিয়ে করে বউকে অত্যাচার করে। ভাব একবার মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে রুদ্র।
– রুদ্রর কথায় রাজের হাসি পায় খুব। কিন্তু রাজ রুদ্রর সামনে হাসতে পারে না। তাই মুখে হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে।

– আমি আগেই জানতাম এই মেয়ে সেই রকম চালাক। রুদ্রনীল চৌধুরী যে কিছুকে ভয় পাইনা এটা ওই মেয়ের জানা নেই, ভাব নিয়ে বলে রুদ্র।

– তাহলে কেনো ভয় পাচ্ছিস তুই? রাজের হঠাৎ এই প্রশ্নে রুদ্র ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে কই ভয় পাচ্ছি। আসলে সোসাইটিতে আমার একটা রেপুটেশন আছে। আমি চাইনা একটা ফালতু মেয়ের জন্য আমার এত দিনের গড়ে তোলা সম্মান এক নিমিষে শেষ হয়ে যাক কথাটা রাগী কন্ঠে বলে রুদ্র।

– তুই কিন্তু বেশি বেশি বলছিস আর করছিস রুদ্র। মেয়েটাকে এই ভাবে কষ্ট দিস না। দেখ বিয়ে তো হয়ে গেছে এটা তুই আর কোনো ভাবে এড়িয়ে যেতে পারবি না৷ তাহলে কেনো এমন করছিস। হ্যাঁ মানছি বিয়েটা তোর ইচ্ছেতে হয়নি৷ কিন্তু বিয়ে তো করেছিস তুই। তাহলে এবার মানতে সমস্যা কোথায়।। আস্তে আস্তে মানিয়ে নে- না। আমার মনে হয় দোলা মেয়েটা অনেক ভালো। তুই কয়েকটা মানুষের জন্য সবাইকে এক পাল্লায় মাপিস না প্লিজ।।

— স্টপ রাজ রেগে বলে রুদ্র। তুই ওই মেয়ের হয়ে আমার কাছে সাফাই গাইতে আসবি না প্লিজ। আমি চাই না একটা বাইরের মেয়ের জন্য আমাদের এতদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাক। আমার জীবনে কোনো মেয়ের ভুমিকা নেই আর না থাকবে৷ আই হেট দেম বলে রুদ্র উঠে দাঁড়ায় এরপর রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে বাসায় যা৷ আমিও বাসায় যাবো বলে রুদ্র দু কদম এগিয়ে আবার পিছু ঘুরে রাজ’কে সরি বলে বড় বড় ধাপে বেরিয়ে যায় কফিশপ থেকে। রাজ রুদ্রর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷

–” দোলা আলমারিতে তার জামা-কাপড় ভাঁজ করে রাখছে। রুদ্রর অনুমতি ছাড়ায় তার পোশাক গুলো রুদ্রর পোশাকের একপাশে রাখে। এর মধ্যে রুদ্র আসে ঘরে৷ দোলাকে ঘরে দেখে রুদ্রর বিরক্তর সহিত ভ্রু কুচকে আসে। রুদ্র দোলার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। দোলা এতখন আড় চোখে সবই লক্ষ্য করছিলো। রুদ্রকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো তাই দোলা আর রুদ্রকে বিরক্ত না করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। দোলা আপাতত চাই না রুদ্রকে জ্বালাতে।

– দোলা ড্রয়িং রুমে আসতে দেখে জাহির চৌধুরী বসে পত্রিকা পড়ছেন। আসেপাশে কেউ নেই। মুলত এখন বিকেল টাইম হওয়ায় যে যার ঘরে ঘুমাচ্ছে।

– দোলা গিয়ে জাহির চৌধুরীর একটু দূরে একটা সোফায় বসেন। দোলাকে দেখে জাহির চৌধুরী মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে, দোলা মা এক কাপ চা করে দিবি?

– দোলাও হাসার চেষ্টা করে বলে এমন করে বলছেন কেনো বাবা। আপনি বসুন আমি এখনই নিয়ে আসছি বলে দোলা উঠে দাঁড়াতেই কেউ একজন ঝড়ের বেগে এসে দোলাকে জড়িয়ে ধরে বউমনি বলে।

– ঘটনা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেছে যে দোলা কিছু বুঝে ওঠার সময়ই পায়না।

– দোলা অবাক হয়ে জাহির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। জাহির চৌধুরী ও দোলার দিকে বিষ্ময় চোখ তাকিয়ে। আর মেয়েটা দোলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে হাসি মুখে।

– তানিয়া মা তুই? জাহির চৌধুরীর কথায় তানিয়া দোলাকে ছেড়ে দিয়ে জাহির চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলে কেমন আছো মামু। কতদিন পর দেখছি তোমাকে।। এই তুমি কিন্তু আগের থেকে অনেক স্মার্ট হয়ে গেছো রহস্য কি হুম?? ভাবান্তর হয়ে বলে তানিয়া।

– তানিয়ার কান্ডে জাহির চৌধুরী হেসে উঠেন সাথে দোলাও। কিন্তু দোলা এখনো বুঝতে পারছে না এই মেয়েটা কে আর তাকে কেনো বউমণি ডাকছে।

– জাহির চৌধুরী মুখের হাসিটা মিলিয়ে বলে আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি তোর উপর তানি।
– তানিয়া মুখটা মলিন করে বলে প্লিজ মামু রাগ করো না৷ আমি বিয়ের একদিন আগেই আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাঝখানে বাবার একটা জরুরি মিটিং পড়ে গেলো। কি আর করার ফ্লাইট কেঞ্চেল করলাম।

– তানিয়ার কথায় জাহির চৌধুরী আগ্রহ নিয়ে বলে কোথায় তানভির। এসেছে সে?

– তানিয়া মুখটা থমথমে করে বলে না মামু৷ বাবা তাও আসতে পারেনি। কোম্পানির কি একটা ঝামেলা হয়েছে। সেটা মিটিয়ে আসবে৷ তাই আমি একাই চলে আসলাম।
– বেশ করেছিস৷ এবার আমার দুই মেয়ে মিলে বাড়িটা মাতিয়ে রাখবে হেসে বলে জাহির চৌধুরী।

– তানিয়ার দোলার দিকে নজর যেতেই দেখে দোলা কৌতুহল ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দোলার মুখের রিয়াকশন দেখে তানিয়া হেসে বলে আমাকে চিনলে না তাই তো?
– দোলা সাবলীল ভাবে মাথা নাড়িয়ে না বলে। দোলার এমন কান্ডে জাহির চৌধুরী হেসে বলে এটা জেসুর মেয়ে তানিয়া রে দোলা মা। আমার একমাত্র ভাগ্নী।

— জেসমিন চৌধুরীর মেয়ে কথাটা শুনে দোলা আরেক দফা অবাক হয়। কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে কিহ ফুপির একটা মেয়ে আছে?

– হুম। তোমার ফুপি শাশুড়ির মেয়ে আছে। আর সেই মেয়ে হলাম আমি। যদিও আমি মায়ের সাথে থাকি না। বাবার সাথে আমেরিকা থাকি।।
– দোলা হাসার চেষ্টা করে বলে ওহ। সরি ভাই প্রথমে চিনতে পারিনি।

– ইটস ওকে। কিন্তু আমি তোমাকে ঠিকই চিনেছি৷ তুমি না অনেক কিউট দেখতে। ব্রো নিশ্চয় তোমাকে দেখে পাগল হয়ে গেছে। তানিয়ার কথায় দোলা লজ্জা পায় সাথে মুখটা ফ্যাকাসেও হয়ে যায়৷ তখনই উপর থেকে রুদ্রর চিৎকার শোনা যায়। যে চিৎকারে চৌধুরী বাড়ি কেঁপে উঠে যেনো পুরো..

চলবে..