তুমিময় আসক্তি পর্ব-০৯

0
1174

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৯”

–“” রুদ্র চিৎকার করে একজন সার্ভেন্ট কে ডাকেন। রুদ্রর চিৎকার শুনে সবাই চমকে উঠে। দোলা বুঝতে পারে না তার এমন চিৎকার করার কারণ।

– কি হলো বলতো দোলা মা। রুদ্র এমন চিৎকার করছে কেনো? জাহির চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন দোলাকে কৌতুহল নিয়ে।
– তোমার ছেলের আবার কারণ লাগে মামু। যখন তখন চিৎকার করে দিলে হলো। কিন্তু ব্রো’ হঠাৎ চিৎকার করছে কেনো।। বউমণি তুমি কি কিছু করেছো? তানিয়ার প্রশ্নে দোলা ভাবান্তর হয়ে বলে কই না তো।
এর মধ্যে একজন সার্ভেন্ট হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে ম্যাডাম ছোট সাহেব আপনারে ডাকে। তাড়াতাড়ি যান৷ অনেক রেগে আছে দেখলাম।। সার্ভেন্ট এর কথায় দোলা একটা শুকনো ঢোক গিলে তানিয়া আর জাহির চৌধুরীর দিকে তাকায়। আর ওরাও দোলার দিকে ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে। কিন্তু দোলা বুঝতে পারছে না যে রুদ্র তাকে কেনো ডাকছে। সে তো কিছু করেনি। তখনই দোলার মনে পড়ে তার শাড়ির কথা। দোলা এক ছুটে রুমের দিকে যায়।

–দোলার কান্ডে জাহির চৌধুরী আর তানিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
–” ব্যাপার টা কি হলো? তানিয়ার প্রশ্নে জাহির চৌধুরীও কৌতুহল ভরা কন্ঠে বলে কিছুই বুঝলাম না। আচ্ছা তোর মায়ের সাথে দেখা করে আয়। তানিয়াকে বলে জাহির চৌধুরী। তানিয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায় মায়ের ঘরে।

– রুদ্র রাগী লুকে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। দোলা ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দ তার। দোলা বুকে হাত দিয়ে একটা টানা শ্বাস ছেড়ে ভেতরে যায়। দোলা ভেতরে প্রবেশ করতেই রুদ্র কটাক্ষ কন্ঠে বলে What is this? দোলার ব্লাউজ ধরে জিজ্ঞেস করে। দোলা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে ব্লাউজ।
– রুদ্র দোলার কথায় অবাক হয়ে তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে শাড়ির পরিবর্তে ব্লাউজ ধরে ফেলেছে।। রুদ্র তাড়াতাড়ি করে সেটা ফেলে দেয় নিচে। রুদ্র কাজে দোলা মুখ চেপে হাসে৷

– রুদ্র লজ্জা পেয়ে যায় কিছুটা তার কাজে৷
– এই সব কি হ্যাঁ? এটা কি জামা কাপড় দেওয়ার জায়গা শক্ত কন্ঠে বলে রুদ্র৷
— দেখো রুমে থাকতে দিয়েছি বলে এই না, যা ইচ্ছে তাই করবে। এটা তোমার বস্তি পাওনি। যা খুশি করে রাখবে। আমি যেনো নেক্সট টাইম বারান্দায় জামা কাপড় না দেখি। ইডিয়ট একটা।

– রুদ্রর বলা শেষের কথায় দোলার রাগ হয়৷ তাই সে রাগ দেখিয়ে বলে দেখুন যখন যা ইচ্ছে হবে তাই বলবেন এটা কিন্তু ঠিক না। ভেজা জামা কাপড় কোথায় দেবো আমি। শুকানোর জন্য তো একটা জায়গা লাগে নাকি৷ আমি তো বাড়িতে বারান্দায় দিতাম। তাই এখানেও কথাটা বলে থেমে যায় দোলা।

– এটা তোমার সো কলড বারান্দা পাওনি ওকে। এটা আমার রুম আমার বারান্দা। আর সব কিছু আমার মতো হবে। একদম নোংরা করার চেষ্টা করবে না। যত সব আজাইরা প্যারা আমার উপর। এরপর থেকে ছাদে দিয়ে আসবে তোমার জামা কাপড় বুঝেছো।

– তুমি আমার পিছে কেনো পড়েছো বলো তো৷ এই বাড়িতে থাকছো ভালো কথা। নিজের মতো থাকো। আমাকে কেনো বিরক্ত করছো বারবার বিরক্ত নিয়ে বলে রুদ্র কথা গুলো

– দোলার এবার খারাপ লাগে খুব রুদ্রর কথায়। চোখে পানি টলমল করছে। কিন্তু তার তো দুর্বল হলে চলবে না। তাই দোলা চোখের পানিটা মুছে দৃঢ় কন্ঠে বলে শুনুন আমার ওই সো কলড বারান্দায় ভালো আপনার বারান্দা থেকে।
– তো যাওনা সেখানে৷ এখানে কেনো আছো? সাবলীল ভাবে বলে রুদ্র।

– যাওয়ার হলে তো চলেই যেতাম। নরম স্বরে বলে দোলা কথাটা।
– শুনো শেষবারের মতো বলছি। এই রুমে থাকবে ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে জ্বালানোর একদম চেষ্টা করবে না। তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে রুদ্র ভেতরে চলে আসে। পেছন থেকে বলে তাড়াতাড়ি এইগুলো সরাও এইখান থেকে।
– দোলা শাড়িগুলো গুছিয়ে ওইখানেই ভাঁজ করতে থাকে। পেছন থেকে আপু বলে ডেকে উঠে রোকন।

– রোকনের কণ্ঠস্বর পেয়ে দোলা চমকে পিছু ঘুরে মুখে হাসি ফুটে উঠে।
– ভাই তুই এখানে বলে দোলা এগিয়ে আসে। রুদ্র শার্ট পড়ছিলো। রোকনকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। রোকনও রুদ্রকে দেখে একটা ঢোক গিলে ভয়ার্ত চোখে তাকায়।
– দোলা রুদ্রর দিকে পাত্তা না দিয়ে রোকনের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। রোকনও বোনকে ঝাপ্টে ধরে। রুদ্র শার্ট পড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

; আপু ওই ছোট সাহেব কি তোকে বকছিলো?
– রোকনের কথায় দোলা চমকে যাওয়া চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে আমাকে কেনো বকবে উনি?.
– রোকন সন্দিহান হয়ে তাকায়।
– না আসতে আসতে তাই মনে হচ্ছিলো। যাই হোক কেমন আছিস আপু। ছোট সাহেব তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তো?

– রোকনের কথায় দোলার চোখ ছলছল করে উঠে। মায়াভরা চোখে তাকায় রোকনের দিকে। ছোট হয়েও বোনের জন্য কত চিন্তা তার। ভাইবোনের সম্পর্ক গুলো এমনই হয়। ভালবাসা, মায়া একটা মানুষকে বড় করে দিতে পারে শারিরীক ভাবে না হোক মানসিক দিক থেকে। যেমন রোকনের হয়েছে দোলার জন্য।

– আমি অনেক ভালো আছি ভাই। এখানে সবাই অনেক ভালো। আমার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি। তুই কেমন আছিস। খেয়েছিস দুপুরে?

– রোকন মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।

– বাবা কেমন আছে ভাই? বাবা এই দুদিন একবারও এলো না তো এই বাড়িতে? মলিন চেহারায় আহত কন্ঠে বলে দোলা কথাটা।
– বাবা ভালো নেই আপু। তুই চলে আসার পর থেকে মন খারাপ করে থাকে সব সময়। জানিস আপু বাবা মনে হয় এখানে ড্রাইভারের চাকরি টা আর করবে না।

– রোকনের কথায় দোলা চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে কি বলছিস? এই চাকরি টা হারালে বাবা একদম নিঃস্ব হয়ে যাবে। কোথাও কাজ পাবে না। এখন কাজের বাজার বড় কঠিন।

– সে কিছু জানি না আমি। কিন্তু বাবা বলছিলো জানিস। মেয়ের বাড়িতে কাজ করা ঠিক হবে না।যত হোক ওইটা মেয়ের শ্বশুর বাড়ি।

– আমার জন্য বাবার এত সমস্যা বলে কান্না করে উঠে দোলা।
– না রে আপু৷ তুই তো কিছু করিস নাই। বরং বাবাই তোকে এখানে জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমি জানি সেটা। তবে বাবা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে একদম ঠিক। আমাদের কষ্ট হলেও মানতে হবে.

– দোলা রোকনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস রে ভাই। অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেছিস।। বাবার দিকে খেয়াল রাখিস আর নিজের যত্নও নিস। এখন আমি নেই যে তোদের সামলাবো।

–” অনেক মিস করি রে আপু তোকে। তোর হাতের রান্না। তোর শাসন,আদর, ভালবাসা সব কিছু মিস করি। তুই কেনো আমাকে একা রেখে চলে আসলি বলতো, কথাটা বলতেই রোকন কান্না করে দেয়। দোলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রোকনকে। দুই ভাইবোনের চোখের পানিতে প্রকাশ পাচ্ছে অভিমান মিশ্রিত ভালবাসা৷

– রাতে তানিয়া জাহির চৌধুরী দোলা বসে আড্ডা দিচ্ছে। জেসমিন চৌধুরী আজ অনেক খুশি তার মেয়ে আসায়। তবে একদিক থেকে তিনি ভীষণ আপসেটও। তানিয়া ঠিক সময় আসলে আজ হয়তো দোলা এই বাড়িতে থাকতো না। এমনটাই মনে হয় তার।

– তানিয়াকে আসতে দেখে রুদ্রও খুশি হয়েছে। রুদ্র এই পৃথিবীতে দুজন নারীকে স্থান দিয়েছে তার জীবনে । তার পিপি আর তানিয়াকে। যাকে সে নিজের বোন বলে ভাবে। তানিয়াও রুদ্রকে ভাই ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনি কখনো। তানিয়া যা আবদার করে রুদ্র তাই দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জেসমিন চৌধুরী এটাকে অন্য চোখে দেখে তানিয়া আর রুদ্রর বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করেন।

– রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে, যে যার ঘরে আসে ঘুমাতে।
– রাত প্রায় ১২ টা। রুদ্র এখনো বাড়ি ফিরেনি। সেই বেরিয়েছে সে। এর মধ্যে আসার নাম নেই তার।

– দোলা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে বিসানায় রিলাক্স হয়ে। সারাদিনে অনেক ধকল গেছে তার উপর। এখন একটা শান্তির ঘুম দরকার। দোলা চোখ বন্ধ করতেই গতরাতের কথা মনে আসে৷ সামনে ভেসে উঠে ঘুম থেকে রুদ্রর টেনে তোলা।

– দোলা চট করে চোখ খুলে উঠে বসে৷
; আজ আবার আমাকে বিসানা থেকে টেনে ফেলে দেবে না তো৷ আমি কি নিচে ঘুমাবো।। ঘুমালে তো রাক্ষস টা এসে টানাটানি শুরু করবে। আমার শান্তির ঘুমের ১৩ টা বাজিয়ে দেবে। এর থেকে ভালো আমি নিচে ঘুমায় বলে দোলা বিসানা ছেড়ে নামতে গিয়ে কিছু একটা ভেবে আর নামে না। আবারও শুয়ে পড়ে বিসানায়। তারপর তলিয়ে যায় বিভোর ঘুমের রাজ্যে

– রাত ১২.৩০। রুদ্র ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে৷ বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে সে।
– রুদ্র ঘরের মধ্যে আসতেই দোলার ঘুমন্ত মায়াবী চেহারাটা সামনে পড়ে। ঘুমন্ত দোলাকে অনেক সুন্দর লাগছে। রুদ্র মাদক চোখে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে।

– রুদ্র আসতে আসতে দোলার কাছে এগিয়ে আসে৷ দোলার থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে দেখে রুদ্র দোলাকে৷
– দোলার অনেক বড় বড় চুল হওয়ায় সে গুলো খাট থেকে নেমে নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ সামনের ছোট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখে ছড়িয়ে আছে। এর জন্য যেনো দোলাকে আরো বেশি মায়াবী দেখাচ্ছে।

– রুদ্র এর আগে কোনো মেয়েকে এত নিখুঁত ভাবে দেখেনি একজনকে ছাড়া। আজ আবার দোলার দিকে পুর্ণ দৃষ্টি দিলো ঘুমন্ত দোলাকে।

– কিছু সময় যেতে রুদ্রর হুস ফিরে। এতখন সে কি করছিলো ভেবে নিজের উপর রাগ সাথে ঘৃণা আসে৷ রুদ্র মুখকৃতি বদলে যায়। স্বাভাবিক মুখটা লাল আভাভ ফুটে উঠে রাগে। নাকের ডগা শক্ত হয়ে আসে ফুলে।

– রুদ্র দোলাকে আবারও আগের রাতের ন্যায় হাত ধরে জোরে টান দিয়ে উঠায়। তবে এবার আর দোলা নিচে পড়ে না। কারণ দোলা আজ নিজেকে সামলে নেয়।
– দোলা ঘুম ঘুম চোখে রুদ্র দিকে তাকিয়ে দেখে রুদ্র চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু দোলা সে রাগের পাত্তা না দিয়ে ঘুমন্ত কন্ঠে বলে, কি শুরু করেছেন? ঘুমাইলে হাত ধরে টান দেন কেনো? আপনার জন্য কি একটু শান্তি মতো ঘুমাতেও পারবো না বলে একটা লম্বা হাই তুলে দোলা। কাচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় দোলার অস্বস্তি লাগছে খুব।

; রুদ্রর উত্তর না পেয়ে দোলা আবার ঘুমাতে যায় তখনই রুদ্র চিৎকার করে বলে তুমি আমার বিসানায় কেনো ঘুমিয়েছো? তোমাকে না আমি গতকাল বারণ করেছি। আমার বিসানায় তোমার কোনো জায়গা নেই বলেছি না আমি? ঘরে থাকতে দিয়েছি মানে এই না, সব কিছু তুমি অধিকার খাটাবে। নিচে যাও আমি ঘুমাবো৷ বড্ড ক্লান্ত লাগছে। তোমার সাথে বকার মুড নেই।

– তো ঘুমান না। কে বারণ করছে আপনাকে। কিন্তু আমার ঘুমটা কেনো নষ্ট করছেন আপনি ন্যাকাসুরে বলে দোলা।

– ঘুমাবো মানে। কোথায় ঘুমাবো আমি? তোমার পাশে?

; হ্যাঁ তো- সরাসরি জবাব দেয় দোলা।

– শাট আপ। তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমার সাথে এক বিসানায় ঘুমাবো। দেখো রাত করে আমি কোনো সিক্রেট করতে চাই না। ভালোই ভালোই বলছি বিসানা ছেড়ে নামো।

— দেখুন আমিও কোনো ঝামেলা করতে চাইনা৷ তাই বলছি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমার পাশে না ঘুমাতে চাইলে আপনি নিচে যেতে পারেন আমার সমস্যা নেই। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে দোলা।

– হোয়াটট জোরে বলে উঠে রুদ্র কথাটা। রুদ্র চিৎকারে দোলা কানে আঙুল দিয়ে বলে এই সব সময় এমন চিৎকার করবেন না তো। কানটা না শেষ হয়ে যায় কবে আপনার জন্য। আচ্ছা আপনি কি আমাকে কানে কালা করার চিন্তায় আছেন৷ যাতে আপনি আমাকে ইচ্ছে মতো কথা শোনাতে পারেন আর আমি কিছু না বলতে পারি।

– জাস্ট শাট আপ। রসিকতা হচ্ছে আমার সাথে মাঝরাতে। তোমার কি মনে হয় আমি জোক করছি তোমার সাথে। আমি তোমার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি জাস্ট। খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি এবার।

– এই কথা গুলো না, কাল থেকে অনেকবার শুনেছি৷ নতুন কিছু থাকলে বলুন আর নাহলে ঘুমাতে দিন৷ আমার কিন্তু ভীষণ ঘুম পাচ্ছে ।

– নিচে গিয়ে ঘুমাও। নামো বলছি।

– আমি যাবো না৷ আমি এখানেই ঘুমাবো৷ আপনার সমস্যা হলে আপনি নিচে ঘুমান৷ আমার কোনো প্রবলেম নেই আপনার সাথে ঘুমাতে। মুখ চেপে হাসে কথাটা বলে দোলা।

– বুঝেছি তুমি এই ভাবে শুনবে না বলে রুদ্র দোলার দিকে এগিয়ে আসতে চাইলে দোলা লাফ দিয়ে উঠে বলে, এই দেখুন একদম ভালো হবে না গায়ে হাত দিলে।৷ আমার শরীরের ক্ষত গুলো কিন্তু এখন রয়ে গেছে। আমি কিন্তু সকালে থানায় গিয়ে আপনার নামে অভিযোগ দেবো এই গুলো দেখিয়ে বলে রাখছি।

– দোলার কথায় রুদ্র থেমে যায়। ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে তুমি আসলেই একটা বাজে মেয়ে৷ ষ্টুপিড গার্ল। তবে ভেবো না আমি তোমার সাথে এক বিসানায় ঘুমাবো। তোমার ব্যবস্থা তো আমি আগে করবো বলে রুদ্র একটা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যায়।৷ দোলা একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে শুয়ে পড়ে। রুদ্রর জন্য দোলার একটু খারাপও লাগছে৷ কিন্তু কিছু করার নেই দোলার।। রুদ্র সামনে টিকে থাকতে হলে তাকে এই গুলো করায় লাগবে।

— রুদ্র অনেকখন ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তার ঘুম আসছে না। আসলে সে সোফায় শুয়ে শান্তি পাচ্ছে না। রুদ্র উঠে বসে পড়ে বিরক্ত নিয়ে। ঘর অন্ধকার প্রায়। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোর আবছা দেখা যাচ্ছে সব কিছু।

; রুদ্র মাথা উঁচু করে দেখে দোলা ঘুমিয়ে গেছে নাকি। রুদ্র কিছুখন তাকিয়ে থাকার পর বুঝতে পারে দোলা ঘুমিয়ে গেছে। কারণ দোলা একদম নড়াচড়া করছে না। রুদ্র বালিশটা নিয়ে আস্তে আস্তে খাটের কাছে গিয়ে বালিশটা রেখে দোলার থেকে দূরে শুয়ে পড়ে পাশ ফিরে।

– রুদ্র তোর কি দিন আসলো৷ একটা বাচ্চা মেয়ে তোকে এইভাবে ফাঁসিয়ে দেবে ভাবিনি। নিজেকে নিজে বলে রুদ্র। এরপর সেও পাড়ি দেয় ঘুম রাজ্যে। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমরা খুব সহজেই ধরা দেয় রুদ্রর কাছে।
রুদ্র ঘুমিয়ে গেলে দোলা ঘুরে রুদ্রকে দেখে মুচকি হাসে। দোলা এতখন জেগেই ছিলো। কিন্তু সেটা রুদ্রকে বুঝতে দেয়নি। জেগে থেকেই রুদ্রর কান্ড দেকে লুকিয়ে হাসতে ছিলো দোলা।

– আমি একটু একটু করে আপনার সকল অভিমান শেষ করে দেবো ছোট সাহেব। যে মেয়েদের আপনি হীন চোখে দেখেন৷ একদিন তাদেরকেই আপনি রেস্পেক্ট করবেন মন থেকে। কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে মেয়েদের কেনো আপনি সহ্য করতে পারেন না। কেনো এত ক্ষোভ মেয়ে জাতির প্রতি। এরপর দোলাও ঘুমিয়ে যায়।

— চারিদিকে দিনের আলোয় ভরে উঠছে।। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে কলরব তুলেছে। শীতল হাওয়ারা ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। এখনো পুরোপুরি দিনের আলো ফুটেনি। দোলার ঘুম ভেঙে যায় এই সময়। দোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাইনা। কারণ থাই দিয়ে পর্দা সরানো আছে। দোলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে পাঁচটা বাজছে। দোলা নামাজের জন্য তাড়াতাড়ি করে উঠতে গিয়ে বাধে আরেক বিপত্তি…

চলবে….