তুমিময় আসক্তি পর্ব-১০

0
1213

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১০”

-“” দোলার ঘুম ভাঙ্গতেই উঠে যেতে নেয় তখনই ওড়নায় টান পড়ে আবার শুয়ে পড়ে দোলা। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে রুদ্র দোলার ওড়না’টা হাতের মধ্যে পেচিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে৷ দোলার মুখে এক চিলতে হাসির রোদ উঁকি দেয় রুদ্রকে এমন শান্ত হয়ে ঘুমাতে দেখে। রুদ্রকে এখন যে কেউ দেখলেই প্রেমে পড়তে বাধ্য। ঘুমন্ত চেহারায় মাধুর্য যেন উপচে পড়ছে।

– কিছুখন তাকিয়ে থাকার পর দোলার নামাজের কথা স্বরণে আসতে ওড়নার চিন্তায় পড়ে যায়। রুদ্র যেভাবে ওড়না’টা ধরে আছে। তাতে বের করা সহজ হবে বলে মনে হয়না। তারপরও দোলা চেষ্টা করে ওড়না’টা রুদ্রর হাত থেকে বের করার। কিন্তু দোলা ব্যর্থ হয়ে অসহায় চোখে ওড়নার দিকে একবার আরেকবার রুদ্রর দিকে তাকায়৷

– রুদ্র একটু নড়েচড়ে উঠে ওড়না টা আরো শক্ত করে ধরে ঘুমায়।

– দোলা একটা ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে বালিশে মাথা রেখে বলে যেটুকু আশা ছিল এবার সেটাও গেলো। এই রাক্ষস টা কখন উঠবে আর আমি কখন উঠে নামাজ পড়ব। আবার ওড়নাটা দেখে যদি পড়ে ঝামেলা করে। এই রাক্ষস’কে নিয়ে বিশ্বাস নেই৷ না বা আমি আগে ওড়নাটা বের করি। নাহলে দেখা যাবে ওই ওড়নার সাথে আমাকে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে।

– দোলা হাল্কা উঠে রুদ্রর হাত থেকে ওড়নাটা বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু সে বরাবরের মতো ব্যর্থ। দোলার টানাটানি তে রুদ্রর ঘুম ভেঙে যায়। চট করে চোখ খুলতেই দেখে দোলা রুদ্রর খুব কাছাকাছি।

– রুদ্রকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে দোলার চোখ বড় আকৃতি ধারণ করে। শুকনো ঢোক গিলে গোটা কয়েক। রুদ্র প্রথমে বুঝতে একটু সময় নেয় আসলে কি হয়েছে বা হচ্ছে। যখন তার মস্তিষ্ক জানান দেয় যে দোলা তার খুব নিকটে অবস্থান করছে। রুদ্র এক লাফে উঠে বসে রাগী কন্ঠে বলে এই কি করছিলে তুমি আমার কাছে? ইডিয়েট গার্ল তুমি আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিচ্ছিলে।

–রুদ্রর কথায় দোলা হা হয়ে যায়। অবাক হয় রুদ্রর কথা শুনে।
– এমন করে তাকিয়ে কি দেখছো হ্যাঁ। কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝতে পারবো না। তুমি যে সুবিধার মেয়ে না এটা অনেক আগেই বুঝেছিলাম। তুমি আমার সাথে আমার বিসানায় এত কাছে কেনো তার জবাব দাও আগে কটাক্ষ কন্ঠে বলে রুদ্র।

— কি যা-তা বলছেন সব। আমি কেনো আপনার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিতে যাবো।। আমি তো ওই বলে দোলা থেমে যায়। বাকিটা বলতে গিয়েও বলতে পারে না যেনো।

– ওই কি? বলো? আর বলবে বা কি। এখন তো ধরা পড়ে গেছো হাতেনাতে তাই না। বাজে মেয়ে একটা।

— রুদ্র শেষ কথায় দোলার রাগ সাথে খারাপও লাগে। তাই দোলা আর চুপ থাকে না।
– শুনুন আপনার কাছে যাওয়া বা আপনার থেকে সুযোগ নেওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই ওকে। আমার ওড়নাটা আপনার হাতের মুঠোয় ছিলো তাই সেটা বের করার চেষ্টা করছিলাম। আর আমি আপনার কাছে আপনার বিসানায় না।।
বরণ আপনি আমার কাছে আমার বিসানায় চলে আসছেন। না মানে বিসানা আপনারই তবে সেটা কাল রাতে ছিলো না৷ আপনি সোফায় শুয়েছিলেন। কিন্তু আপনি আমার পাশে কি করছেন আর আমার ওড়না ধরে বা ঘুমিয়ে ছিলেন কেনো। এর কোনো জবাব আছে আপনাদের কাছে?

– দোলার কথায় রুদ্র ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। সত্যি তো সে সোফায় গিয়েছিলো ঘুমাতে। তারপর সে তো নিজেই এসেছে এখানে। আর ওড়নাটাও ধরে ফেলেছে ঘুমের মধ্যে। শিট মনে মনে একটা ধিক্কার দেয় নিজেকে রুদ্র। আর দোলা সেতো এখনো কৌতুহল ভরা চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে।

– রুদ্রর জবাব দেওয়ার মতো কোনো ভাষা নেই আপাতত। তাই সে আর কিছু না বলে বিসানা ছেড়ে নেমে বারান্দায় চলে যায়। দোলা ওড়নাটা টেনে বারান্দায় একবার উঁকি দিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে যায়।

– দোলা রেডি হচ্ছে। কারণ সে কলেজে যাবে তাই। জাহির চৌধুরীর আদেশ দোলাকে পড়াশোনা ভালো ভাবে চালিয়ে যেতে হবে। যদিও দোলা অনেক মেধাবী ছাত্রী। আশা তো খুব খুশি শুনে যে দোলা নিয়মিত কলেজ করবে তাই।

– বউমণী তুমি কলেজে যাচ্ছো৷ এইদিকে আমি বাড়িতে একা একা বোরিং টাইম মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে তানিয়া।
– দুপুরের মধ্যে ফিরে আসবো তানিয়া। তুমি নাহয়
ততখন ফুপির সাথে সময় কাটাও। এসে আমরা আড্ডা দেবো কেমন?
– তানিয়া আর কিছু না বলে মুচকি হেসে বলে ওকে। কলেজ থেকে ফিরে কিন্তু আমাকে সময় দিতে হবে অনেক। তখন কোনো বারণ শুনবো না হুম।
– ওকে ডিয়ার। এসে আমরা কথা বলবো এখন আসি বলে দোলা বেরিয়ে যায় জাহির চৌধুরীকে বলে। রুদ্র একটু আগে বেরিয়ে গেছে অফিসে। দোলা যে কলেজ যাবে আজ থেকে এটা শুনেছে রুদ্র। কিন্তু দোলার কোনো বিষয়ে তার মাথা ব্যথা নেই। তাই কোনো মতামতও রাখেনি সে এখানে।

— দোলা রাস্ত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য সামনে থেকে রিকশা নেবে একটা কলেজ যাওয়ার জন্য। জাহির চৌধুরী দোলাকে বাড়ির গাড়ি নিয়ে যেতে বলেছিলো। কিন্তু দোলা রাজী হয়নি। সে চাই আগের মতো সব কিছু থাক তার। জাহির চৌধুরী আর জোরাজোরি ও করেনি দোলা। সেও চাই দোলা তার স্বাধীন মতো চালুক।

– দোলা রাস্তার মোড় ঘুরতেই একটা বড় গাড়ি তার সামনে ব্রেক করে। আচমকা এমন হওয়ায় দোলা ঘাবড়ে যাওয়া চোখ তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় কিছুটা। দোলা দু কদম পিছিয়েও আসে এতে করে।
– দোলার তো সেই পরিমাণ রাগ হচ্ছে গাড়ির মালিকের প্রতি। এমন করে কেউ গাড়ি চালায় রাস্তায়। দোলা কিছু বলার জন্য উদ্ধৃত হয় তখনই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একজন সুদর্শন পুরুষ।

– সরি সরি ভাবী আমি বুঝতে পারিনি। আসলে আপনাকে দেখে হঠাৎ ব্রেক করা তাই এমন হয়ে গেছে। আপনার কোথাও লাগেনি তো। দোলা তো পুরো বেকুব বনে দাঁড়িয়ে আছে।৷ চেনা নেই জানা নেই তাকে ভাবী বলছে। মাথায় কি সমস্যা আছে নাকি?৷ না সে আমাকে চিনে আমি তাকে চিনি না। এই সব ভাবনা চিন্তার মধ্যে রাজ বলে কি হলো কথা বলছেন না কেনো ভাবী। ওহ সরি আপনাকে তো আমার পরিচয়ই দেওয়া হয়নি। আমি রাজ আপনার একমাত্র স্বামী রুদ্রর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।

– রুদ্রর বন্ধু শুনে দোলা একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলে ওহ। আমি তো একটু অবাকই হয়ে ছিলাম আপনার কথায়।
– তো কেমন আছেন ভাবী? রাজের কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে জ্বি ভালো। আপনি?

– রাজ আর দোলা কিছুখন কৌশল বিনিময় করার পর দোলা বলে আচ্ছা ভাইয়া আমি আসি এখন। আমার কলেজে যাওয়ার দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে আসেন একদিন কথা হবে।
– রাজও হাসি মুখে দোলাকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে আবার থেমে যায়। দোলাকে আবার পিছু ডেকে উঠে। রাজের ডাকে দোলা ভ্রু কুচকে রাজের দিকে তাকালে, রাজ সংকোচ নিয়ে বলে সরি ভাবী পিছু ডেকে ফেললাম।

— সমস্যা নেই ভাইয়া৷ বলুন?

– আসলে ভাবী, আমি জানি রুদ্র আপনার সাথে অনেক মিস বিহেভ করে। ওর ব্যবহারে আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। ও কিন্তু ভালো। ওর মনটাও অনেক নরম৷ তবে কিছু ঘটনা ওর জীবন কে বদলে দিয়েছে৷ এত কঠিন মানুষে পরিনত করে দিয়েছে।৷ মেয়েদের কিন্তু রুদ্র এত ঘৃণা করতো না আগে জানেনে৷ কিন্তু ওর জীবন ওকে নিয়ে উপহাস করেছে। যার জন্য রুদ্র এখন কোনো মেয়েকেই বিশ্বাস করতে পারে না। তবে আমি জানি আপনি অনেক ভালো। আমি আপনার কথা শুনেছি আঙ্কেলের কাছ থেকে। আঙ্কেল বিশ্বাস করেন যে রুদ্রকে একমাত্র আপনি পারবেন ঠিক করতে৷ ওর ভুল ধারণা গুলো আপনি ভাঙতে পারবেন৷ এমনকি সে বিশ্বাস আমারও আছে আপনার উপর। সাবলীল ভাষায় বলে কথা গুলো রাজ।

– দোলা কৌতুহল নিয়ে বলে আচ্ছা ভাইয়া উনার সাথে কি এমন হয়েছিলো যার জন্য উনি এমন। উনি মেয়েদের ঘৃণা করে কি এমন কারণ থাকতে পারে?

– দোলার কথায় রাজ করুণ চাহনি নিয়ে বলে সে অনেক কথা ভাবি৷ অন্য একদিন বলব সময় করে। আপনার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ যদি কোনো সাহায্য লাগে অবশ্যই আমাকে বলবেন। আমার বন্ধুকে ঠিক করার জন্য আমি সব রকম কাজ করতে রাজী। আমি চাই ওর মুখে হাসি ফিরে আসুক। ওর মধ্যেকার চাপা কষ্ট গুলো দূর হয়ে নতুন করে বাঁচুক আপনাকে আক্রে ধরে। শুধু আপনার কাছে একটা অনুরোধ ভাবী। রুদ্রর ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে ওকে ছেড়ে যাবেন না। সব কিছু উপেক্ষা করে আপনি রুদ্র পাশে থাকবেন। দেখবেন রুদ্র একদিন আপনাকে ভালোবাসবে ঠিক।

;– উনি আপনার বন্ধু হতে পারে কিন্তু এখন আমার স্বামী ভাইয়া। তাই আমার দায়িত্ব টা অনেক। একজন স্ত্রী কখনোই তার স্বামীকে ছেড়ে যায় না যতই খারাপ সময় আসুক তার। আমি একজন বাঙ্গালী মেয়ে। বিয়ে সংসারে আমিও অভ্যস্ত। তাই আমি আমার স্বামীর পাশে থাকতে চাই সব সময়। সে আমার সাথে যেমন ব্যবহার করুক সেটা যায় আসে না। তাছাড়া আমি তো সব আগে থেকে জেনেই বিয়েটা করেছি। তাহলে এখন আমার সমস্যা থাকার কথাও নেই। তাই বলব চিন্তা করবেন না। আমি আপনার বন্ধুর ভুল ধারণা গুলো ভেঙে তবে যাবো। তার আগে যাবো না। এখন আসি বলে দোলা একটা রিকশা নিয়ে চলে যায়।

– রাজ মুগ্ধ নয়নে দোলার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে বন্ধু তুই এবার খাটি সোনাটা পেয়েছিস। আমার বিশ্বাস ভাবী তোকে নিরাশ করবে না। তুই ভাবীর প্রেমে আবদ্ধ হবি। আর সেটা খুব শীগ্রই। এরপর রাজও উঠে চলে যায় গাড়ি করে।

–“””রুদ্র কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে অফিসের চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে। দোলার কাজকর্ম খুব করে ভাবাচ্ছে তাকে। দোলার অত্যাচারের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। রুদ্র কোনো ভাবে দোলাকে জব্দ করতে পারছে না। চোখের সামনে সব সময় সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।

– দোলাকে কিভাবে দূরে সরানো যায় সেই চিন্তায় মগ্ন রুদ্র। আপাতত রুদ্রর মাথায় কিছু আসছে না। রুদ্র একটা ব্ল্যাক কফি দিতে বলে ফাইল নিয়ে বসে। দোলার চিন্তা সে মাথা থেকে আপাতত ঝেড়ে ফেলতে চাই। কিন্তু রুদ্র এটা বুঝতে পারছে না দোলা আস্তে আস্তে কিভাবে তার মস্তিষ্কে জায়গা করে নিচ্ছে। দোলা জ্বালাতন করেও রুদ্র চিন্তার মধ্যে ঢুকে আছে। রুদ্র যত চায় দোলাকে দূরে করতে কিন্তু তার চিন্তাটা কিন্তু দোলাকে ঘিরেই। আর দোলাও এটাই চাই। রুদ্র যেনো তাকে নিয়ে ভাবে। তাতে অভ্যস্ত হয়। যাতে করে দোলা দূরে গেলে, রুদ্র দোলার জন্য আকুল হয়ে যায়। দোলার বিরক্ত করা, জ্বালানো এই গুলা মিস করে।

– সব সময় সব বিরক্ত খারাপ হয়না। কিছু কিছু বিরক্তিকর জিনিস কাছের মানুষ গুলো আরো কাছে নিয়ে আসার পথ তৈরি করেও দেয়।

— রাশেদ মিয়া বসে আছেন জাহির চৌধুরীর সামনে।থমথমে পরিবেশ। জাহির চৌধুরী গম্ভীর মুখে বসে আছে রাশেদ মিয়ার দিকে তাকিয়ে। আর রাশেদ মিয়া অপরাধ সুচক দৃষ্টিনত করে বসে আছে জাহির চৌধুরীর সামনে।

– তাহলে তোমার সিদ্ধান্ত এটাই রাশেদ। তুমি আর এখানে ড্রাইভারি করবে না?

– আমি তো আমার ব্যক্তব দিয়ে দিয়েছি বড় সাহেব। আমার সমস্যা টাও বলেছি আপনাকে। দেখুন যতই হোক আমি মেয়ের বাবা। জামাইয়ের বাড়িতে আমি কাজ করে হাত পেতে টাকা নিতে পারি না। আমার মেয়ের একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। এমনকি আমার জামাইয়ের ও দৃষ্টিকটু লাগতে পারে৷। তাই আমি সব দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বড় সাহেব। আপনি দয়া করে আর দ্বিমত করবেন না। আমাকে মাফ করুন বলে হাত জোড় করে রাশেদ মিয়া।

– জাহির চৌধুরী একটা টানা নিশ্বাস ফেলে বলে,আমি সবই বুঝতে পারছি রাশেদ। কিন্তু তুমি আমার অনেক পুরানো ড্রাইভার। তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও যায় না। রুদ্রও তোমাকে ভরসা করে। সেখান হঠাৎ করে এমন একটা সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবু কি করার। তুমি যেটা বলেছো ভুল বলোনি। কিন্তু তুমি এরপর করবে কি?

– জাহির চৌধুরীর কথায় রাশেদ মিয়া অসহায় ফেস করে তাকায়।

– রাশেদ মিয়ার মুখের রিয়াকশন দেখে বুঝে যায় যা বোঝার।

; শুনো রাশেদ আমি তোমার কথায় রাজী হতে পারি তবে একটা শর্তে।

– জাহির চৌধুরীর কথায় রাশেদ মিয়া আঁতকিত কন্ঠে বলে কি শর্ত বড় সাহেব?

– তুমি যতদিন না কোনো কাজ পাচ্ছো ততদিন তোমার বেতন অব্যাহত থাকবে। মানে তুমি আর কাজ করবে না ঠিক আছে কিন্তু আমি তোমাকে তোমার প্রতিমাসের বেতনটা পাঠিয়ে দেবো। আর এটা ততদিন হবে যতদিন না তুমি অন্য কোনো কাজ পাচ্ছো।

-জাহির চৌধুরীর কথায় রাশেদ মিয়া অবাক হয়ে বলে কিন্তু বড় সাহেব। রাশেদ মিয়াকে বাকিটা বলতে না দিয়ে হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয় তাকে।
– আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে রাশেদ। এর বাইরে আর কোনো কথা আমি শুনতে চাইনা।

– বাহ বাহ বেশ সুবিধা পেয়েছো রাশেদ মিয়া তুমি। বড়লোক বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন তার ফায়দা উঠাচ্ছো। বসে বসে মাসের বেতন আর কি লাগে তোমার বলতে বলতে আসেন কথা গুলো জেসমিন চৌধুরী।

– জেসমিন চৌধুরীর কথায় কষ্ট পায় রাশেদ মিয়া। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।।তার মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনা কখনোই ছিলো না আর না এখন আছে।

– তুই চুপ কর জেসু। এই ব্যাপারে তোকে কথা বলতে কে বলেছে শক্ত কন্ঠে বলে জাহির চৌধুরী।
– কেনো ভাইয়া আমি কথা বলব না। ওরা বাপ মেয়ে চালাকি করে এই সব করছে। যাতে কাজ না করেও টাকা ইনকাম করা যায়। আসলে তুমি তো সহজ সরল ভাইজান। তাই বুঝতে পারছো না এদের প্ল্যানিং। এই সব ছোট লোক গুলো অনেক চালাক চতুর হয়।

— আমাকে মাফ করবেন ম্যাম সাহেব।।তবে আপনি যেমন টা ভাবছেন আমি তেমন নয়। আমরা গবির হতে পারি কিন্তু কারো টাকার দিকে কুনজর আমাদের নেই। আর বড় সাহেব আমাকে মাফ করবেন আমি হয়তো আপনার কথাটা রাখতে পারবো না। আল্লাহর দুনিয়ায় ঠিক কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।।তিনি আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। আমি আসি বলে রাশেদ মিয়া চলে যেতে যায় তখনই দোলা প্রবেশ করে বাড়ির মধ্যে। কলেজ থেকে ফিরে দোলা।বাবাকে দেখে চোখ ছলছল করে উঠে তার.।

-দোলা ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। রাশেদ মিয়া পরম আবেশে দোলাকে জাপ্টে ধরে। আজ তিনদিন পর মেয়েকে দেখছেন তিনি। অপরাধবোধ আর লজ্জার কারণে দোলার সামনে আসার সাহস পাননি তিনি। দোলার জীবনটা তার জন্য নষ্ট হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন তিনি।

– কেমন আছো বাবা। কখন এসেছো তুমি? একবারও আসোনি কেনো আমার সাথে দেখা করতে। বিয়ে দিয়ে একবারে পর করে দিলে আমাকে বাবা।অভিমান নিয়ে বলে কথা গুলো দোলা।

.. দোলার কথায় রাশেদ মিয়ার কান্না আসতে চাই ভীষণ। রাশেদ মিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে বলে না রে আসলে দুদিন সময় পাইনি আসার।। তুই কেমন আছিস মা।।সব ঠিক আছে তো?

– দোলা বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে বেঠিক থাকার কথা ছিলো নাকি বাবা?
; দোলার এই অভিমান মিশ্রিত কথার জবাব রাশেদ মিয়ার কাছে নেই।
– জেসমিন চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে বলে যতসব ন্যাকামি বলেই তিনি আবার চলে যান সেখান থেকে ।

– তুমি দুপুরে খেয়েছো কিছু বাবা। আসো খাবে তুমি। আমি তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবো আজ। তুমি কিন্তু খেয়ে যাবে, একদমে বলে কথা গুলো দোলা।
— জাহির চৌধুরী হাস্যমুখে বাবা মেয়ের মিলন উপভোগ করছে।
–” না রে মা৷ আজ খাবো না আমি।।আমাকে একটা কাজে বাইরে যেতে হবে। তাছাড়া আমি খেয়ে এসেছি।তুই যা ফ্রেস হয়ে আয়। আমি অন্য দিন আসব কেমন বলে রাশেদ মিয়া বেরিয়ে যায় দোলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
– দোলা তার বাবার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কান্না করে দৌড়ে উপরে চলে আসে রুমে। তার বাবা যে তার থেকে পালিয়ে গেলো এটা বেশ বুঝতে পারছে দোলা।

– তুমি কেনো নিজেকে দোষী ভাবছো বাবা। আমি তো মেনে নিয়েছি সব কিছু। আমার ভাগ্যকে আমি আপন করে নিয়েছি তাহলে তুমি কেনো সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে পারছো না বলে বিসানার চাদর খামচে ধরে কেঁদে উঠে দোলা। দোলার তার বাবার চোখে লুকায়িত অশ্রু গুলো ঠিকই উপলব্ধি করেছে। যার জন্য দোলার মধ্যে এত কষ্ট হচ্ছে।

— চলবে…