তুমিময় আসক্তি পর্ব-১৮

0
1291

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১৮”

–” দোলা রাজের কাছ থেকে চলে এসেছে অনেক আগে। দোলার মনটা ভীষণ খারাপ। রুদ্রর পরিনতির কথা শুনে দোলার অনেক কষ্ট হচ্ছে রুদ্রর জন্য। রুদ্রর এমন হওয়াটা স্বাভাবিক এখন বুঝতে পারছে। কিন্তু একটা বা দুইটা মেয়ের জন্য সবাইকে বিচার করতে পারেন না তিনি। তাহলে তো পৃথিবীতে পুনরায় বিশ্বাস বলে কোনো শব্দ থাকতো না।

— আশা দোলার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। তার নিজেরও খারাপ লাগছে রুদ্রর জন্য। রুদ্রকে খারাপ বদমেজাজি জানতো সে। কিন্তু এর পেছনে যে এমন একটা কারণ থাকতে পারে ভাবিনি।

– দোলা বারান্দায় বসে আছে। দুপুরের খা খা রোদ্দুর। তপ্ত দুপুরের গরম আভাস ছুটে আসছে বারান্দা দিয়ে। কিন্তু সেটা যেনো দোলার গায়ে লাগছে না। দোলা আনমনে হয়ে বাইরের প্রকৃতিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। দোলার কাছে বাইরের পরিবেশটার চেয়ে তার মনের ভেতরের পরিবেশটা যেনো বেশি উত্তপ্ত লাগছে।

– রুদ্রর মায়ের ব্যাপারটা আমাকে জানতে হবে। উনি কেনো এমন করেছেন? সত্যি কি রুদ্রকে রেখে চলে গেছেন নাকি এখানে অন্য কোনো কাহিনি আছে আমাকে খুঁজতে হবে। আমি উনাকে আবার আগের মতো করে দিবো। হয়তো উনার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিতে পারব না৷ কিন্তু উনার মায়ের খোঁজ আমি করবো। আপন মনে বলে দোলা এই সব।

–“” রুদ্র আজ অফিসে এসে সারাদিন দোলার কথা ভেবেছে। দোলার বলা প্রতিটি কথা চাইলেও মন থেকে বের করতে পারছে না। দোলার সামনে দাঁড়ানোর মতো মুখ নেই তার কাছে৷ এখানে দোলার যে কোনো দোষ এটা অন্তত রুদ্র উপলব্ধি করতে পেরেছে।

— বিকালে তানিয়া আর দোলা শপিংয়ে যায় জাহির চৌধুরীকে বলে। জেসমিন চৌধুরী দোলাকে যেতে দেখে একটা ডেভিল হাসি দেয়।
–” গাড়ি নিয়ে এসেছে তারা। দোলা আর তানিয়া শপিংমলে প্রবেশ করে লিফট কর্ণারে যায়। মেয়েদের জিনিসপত্র আছে ৪ তলায়৷ তাই তারা লিফট করে ৪ তলায় যাবে। দোলা আগে লিফটে উঠে এরপর তানিয়া প্রবেশ করতে যাবে তখনই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে পিছু সরে আসে। লিফট কিছু সময়ের ব্যবধানে চলে যায়।

— আরে আমি যাবো বলে চিৎকার করে উঠে তানিয়া লিফট চলে যেতে দেখে।
– এই চোখে দেখেন বলে তানিয়া সামনে তাকিয়ে বলে আপনি?
— সজলও বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে আবার আপনি।
– আজ আর রক্ষা নেই আমার নির্ঘাত মনে মনে ভেবেই একটা শুকনো ঢোক গিলে সজল।

— এই কি সমস্যা আপনার বলুন তো। আপনি সব স্থানে শুধু আমার সাথেই ধাক্কা খান কেনো। নাকি ইচ্ছে করে করেন৷ ওই ওয়েট.. এরপর তানিয়া ভাবুক হয়ে বলে আপনি আমাকে ফলো করেন না তো? আপনার মতলব কি তাড়াতাড়ি বলুন চোখ পাকিয়ে বলে তানিয়া।

– “” তানিয়ার এমন কথায় জন্য সজল মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। রসগোল্লার সমান চোখ করে বলে কি বলছেন এই সব। আমি কেনো আপনাকে ফলো করতে যাব। তাছাড়া আপনার মতো ডেঞ্জারাস লেডির থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো মিনমিনে স্বরে বলে সজল কথাটা।

– এই কি বলছেন জোরে বলুন। আপনার জন্য লিফটটা চলে গেলো। আপনাকে তো আমি বলে তানিয়া দুই হাত তুলে সজলের গলা বরাবর নিয়ে যেতে যায় তখনই তার ফোনটা বেজে উঠে।

– দোলা ফোন করেছে দেখে তানিয়া সজলের দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করতেই দোলা ব্যস্ত স্বরে বলে তানিয়া কোথায় তুমি। তাড়াতাড়ি এসো আমি তো ফোর্থ ফ্লোরে চলে এসেছি। তানিয়া একটা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে তুমি ওইখানে থাকো আমি আসছি। এরপর লিফট আসলে তানিয়া লিফটে উঠে। সজলও তানিয়ার সাথে লিফটে যেতে চাই কিন্তু তানিয়া আঙ্গুল উঠায় বলে এই খবরদার আমার সাথে আসবেন না। তাহলে একদম গলা টিপে মেরে দেবো লিফটের ভেতর। তানিয়া হুমকিতে সজল ভয়ে একটা ঢোক গিলে বলে আপনি যান আমি পরে আসছি।
-তানিয়া চলে গেলে সজল যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে

— কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা। আল্লাহ এই মেয়ের মুখোমুখি আর যেনো না হয় মিনতি করে বলে সজল উপরে হাত উঠিয়ে।

–” তানিয়া রাগে গজগজ করতে করতে দোলার কাছে যায়৷ দোলা ভ্রু কুচকে বলে কি হয়েছে? এমন রেগে আছো কেনো?
– আর বলো না বউমনি যেদিন থেকে ওই উজবুকটার সাথে দেখা হয়েছে সেদিন থেকে আমার ব্যাডলাক।
– –“” কার কথা বলছো? কৌতুহলী হয়ে বলে দোলা।

– আরে ওই যে সেদিন ক্যানটিনে যে ছেলেটা ধাক্কা দিয়েছিলো ভুলে গেলে। দোলা একটু ভাবুক হয়ে মনে করার চেষ্টা করে।

– ষ্টুপিড একটা আজও ধাক্কা দিয়েছে৷ তানিয়া বলে রেগে। তখনই দোলা সামনে সজলকে দেখতে পাই। সজলও দোলাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়।

– দোলা তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে তুমি কি ওই ছেলেটার কথা বলছো? তানিয়া দোলার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে সামনে সজল একটা ক্যাবলাক্লান্ত হাসি মুখে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

– তানিয়া একটা বিরক্ত সূচক নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে ইডিয়ট একটা।

– সজল একটু সামনে এগিয়ে এসে দোলাকে বলে আপনি এখানে? আবার দেখা হয়ে গেলো৷ কি যে ভালো লাগছে।

— দোলাও মুচকি হেসে বলে সেম টু। তা আপনি এখানে যে? এটা তো মেয়েদের ফ্লোর কৌতুহল নিয়ে বলে দোলা।

–” দেখো হয়তো নিজেই পড়বে মেয়েদের ড্রেস নিয়ে। নাহলে গার্লফ্রেন্ড কে দিবে। তবে এমন একটা উজবুকের গার্লফ্রেন্ড কেউ হবে বলে মনে হয়না আমার। মুখ বেকিয়ে বলে তানিয়া। দোলা তানিয়ার হাত টেনে ধরে চুপ করতে বলে সজলের আড়ালে। কিন্তু সজল সবই দেখতে পাই।

– “” সজল তানিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে দোলাকে বলে আসলে আমি একটা শাড়ি নেওয়ার জন্য এসেছি। আমার তো মেয়েদের ড্রেস সম্পর্কে আইডিয়া নেই৷ কখনো নেয়নি আমি। কিন্তু এবার আমি মনিমা কে জন্মদিনে একটা শাড়ি গিফট করতে চাই। আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো হলো। প্লিজ একটা শাড়ি পছন্দ করে দিবেন আমার মনিমার জন্য।

— আমরা কেনো দেবো। নিজেরটা নিজে পছন্দ করে নেন যান। আমরা এখানে আমাদের জিনিস নেওয়ার জন্য আসছি আপনার শাড়ি পছন্দ করার জন্য নয়।

– আপনি এত ঝগড়ুটে কেনো বলুন তো? কথাটা বলে সজল মুখ চেপে ধরে। আর তানিয়া রাগী লুকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে এই কি বললেন আপনি আমাকে। আমি ঝগড়ুটে?

– আহহ তানিয়া৷ কি হচ্ছে৷ বিরক্ত নিয়ে নিয়ে বলে দোলা।
– তুমি দেখলে বউমনি উনি আমাকে কি বলে অপমান করলো ন্যাকাকান্না জুড়ে বলে তানিয়া।

– আচ্ছা হয়েছে৷ চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের৷ আর আপনি আসুন আমি পছন্দ করে দিচ্ছি। এরপর তিনজন ভেতরে যায়।

– “” দোলা সজলকে একটা সুন্দর শাড়ি পছন্দ করে দেয় তার মনিমার জন্য। সজল দোলাকে ধন্যবাদ দিয়ে একটা কার্ড দিয়ে বলে তার মনিমার জন্মদিনে যাওয়ার জন্য। দোলা প্রথমে না না করলেও সজলের অনুরোধে রাজী হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পরে সজলের মনিমার জন্মদিন। সজল ব্যস্ত থাকবে ক’দিন। তাই আগেই শাড়িটা নিয়ে যায়। এরপর দোলারা নিজেদের জন্য কেনাকাটা করে চলে আসে ফুসকা খেতে। তানিয়া ফুসকা খাবে তাই দোলাও না করতে পারে না। কারণ দোলাও ফুসকা খেতে ভালোবাসে।

–” সব কিছু শেষ করে দোলা আর তানিয়া বাড়ির ফিরে৷ বাড়ির মধ্যে আসতেই তানিয়া সোফায় বসে পড়ে ক্লান্ত হয়ে।
– একি বসলে যে? ফ্রেস হয়ে এসো একবারে। দোলা বলে তানিয়াকে।

– জেসমিন চৌধুরী ড্রয়িং রুমেই ছিলেন।

– “” তোদের শপিং শেষ? জাহির চৌধুরীর কথায় দোলা হেসে বলে জ্বি বাবা। সরি বাবা একটু দেরি হয়ে গেলো।

–“” ইটস ওকে মা৷ যা ফ্রেস হয়ে আয়।
— দোলা তানিয়ার পাশে বসে ফিসফিস করে বলে তানিয়া তুমিও চলো না আমার সাথে আমার ঘরে। দোলার এমন কথায় তানিয়া চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে মানে?

— দোলা অসহায় ফেস করে বলে তোমার ভাইয়া হয়তো এতখনে চলে এসেছে। আমার না ভয় করছে উনার সামনে একা যেতে। আবার যদি সকালে কথা জিগ্যেস করে।

–“” আরে বউমনি তুমি মিছেমিছি ভয় পাচ্ছো কিছু হবে না যাও তো। আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে। আমি একটু রেস্ট নিয়ে তারপর ঘরে যাব।

–” দোলা মুখটা বাংলার পাঁচের ন্যায় করে তানিয়ার দিকে তাকায়।
– মামু ব্রো কি চলে এসেছে? তানিয়ার কথায় জাহির চৌধুরী ফোনে দৃষ্টি রেখেই বলে না রে এখনো তো রুদ্র ফিরেনি।

– রুদ্র ফিরেনি কথা শুনে দোলা স্বস্তি পায়। খুশি মনে উপরে যায় এবার সে।

– দোলাকে উপরে যেতে দেখে জেসমিন চৌধুরী মুচকি হাসে সবার আড়ালে।
– দোলা তিন থেকে চার সিঁড়ি মাড়িয়ে পঞ্চমতম সিঁড়িতে পা রাখতেই দোলার পা পিছলে যায়। দোলা নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎকার দিয়ে নিচে পড়ে যায় গড়তে গড়তে। দোলার চিৎকারে সবাই সিঁড়ির দিকে তাকায়েই চমকে উঠে। দোলা নিচে সিঁড়ির পাশে পড়ে আছে অজ্ঞান হয়ে। আসলে মাথায় আঘাত লাগে দোলার। যার ফলে জ্ঞ্যান হারায় সে.।

-“”” তানিয়া আর জাহির চৌধুরী ছুটে আসে দোলার কাছে। জেসমিন চৌধুরী একটা স্বার্থক হাসি দিয়ে মুখে দুঃখী ভাব নিয়ে এগিয়ে আসে।

– “”” বউমনি,, বউমনি চোখ খোলো। কি হয়েছে তোমার? পড়লে কি করে তুমি। কান্নারত কন্ঠে ডাকে তানিয়া দোলাকে। জাহির চৌধুরীর চোখ মুখে অস্থিরতার ছাপ। হঠাৎ এমন একটা কান্ড হয়ে যাবে কেউ কল্পনা করেনি।

– আহারে মেয়েটার হঠাৎ কি হলো। এইতো এখনই হেসে হেসে কথা বলছিলো। আহাজারি করে বলে জেসমিন চৌধুরী।

– দোলা মা চোখ খুল। কি হয়েছে তোর ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে জাহির চৌধুরী।

– মামু তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স খবর দাও৷ বউমনিকে এখনই হসপিটাল নিতে হবে। জাহির চৌধুরী সোফা থেকে ফোন নিয়ে এম্বুলেন্সে খবর দেয়। তানিয়া দোলার মাথাটা তার কোলে রেখে কান্না করছে আর দোলাকে ডাকছে। দোলার কপালে আর গালে চোট লাগায় রক্ত বের হচ্ছে সেখান থেকে। হাত আর পায়ের কাছে ছিলে গিয়েছে একটু।

— কিছুখনের মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসে। তানিয়া আর জাহির চৌধুরী দোলার সাথে যায়।

— ওরা যেতেই জেসমিন চৌধুরী উচ্চস্বরে হেসে উঠেন।

– সবে শুরু তোমার দোলা রানী। এরপর দেখো আরো কত কি অপেক্ষা করে তোমার জন্য। আমার রাস্তায় যে বা যারা আসে৷ আমি তাদের কাউকে রাখিনা। আপাতত একটু কষ্ট দিলাম তোমায়৷ এরপর যদি মানে মানে না কেটে পড়ো তাহলে একদম উপরে পাঠিয়ে দেবো বলে জেসমিন চৌধুরী সিঁড়িতে ফেলা তেল গুলো মুছতে লাগে।

– একজন সার্ভেন্ট আড়াল থেকে জেসমিন চৌধুরীর সব কথা শুনে এবং জেসমিন চৌধুরীকে তেল মুছতে দেখে। এরপর যা বোঝার সে বুঝে যায়।

– “” তানিয়া আর জাহির চৌধুরী হসপিটালের বারান্দায় আনাগোনা করছে চিন্তিত হয়ে। দোলার এখনো জ্ঞ্যান ফিরেনি। ডক্টর দেখছে দোলাকে ভেতরে। জাহির চৌধুরী রুদ্রকে ফোন করে কিন্তু রুদ্র ফোন ধরেনি।

–“” মামু আমার কিন্তু এবার খুব চিন্তা হচ্ছে। বউমনি ভালো হয়ে যাবে তো৷ ছলছল চোখ বলে তানিয়া। জাহির চৌধুরী করুণ স্বরে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে মা চিন্তা করিস না। আমার দোলা মায়ের কিছু হবে না।

– আচ্ছা মামু বউমনি হঠাৎ পড়লো কি করে বলো তো? বউমনি তো সাবধানেই যাচ্ছিলো ঘরে। তাহলে হঠাৎ কি সে বেধে পড়লো মাথায় আসছে না।

– আমিও কিছু বুঝতে পারছি না রে মা।

— এর মধ্যে ডক্টর বেরিয়ে আসে। জাহির চৌধুরী ডক্টরকে দেখে তার কাছে যায়। তানিয়াও ছুটে এসে বলে আঙ্কেল বউমনি কেমন আছে। কোনো সমস্যা নেই তো। বউমনি সুস্থ আছে তো?

– আস্তে তানিয়া মা ডক্টর খান বলেন। তোমার বউমনি ভালো আছে৷ আপাতত জ্ঞান ফিরেনি এখনো। কিন্তু ফিরে যাবে চিন্তা করো না। তবে ওর মাথায় একটু আঘাত টা গভীর ভাবে লেগেছে। আর ডান পায়ে চট পেয়েছে বেশি। ভাগ্য ভালো পা’টা ভেঙে যায়নি। চট লেগেছে জাস্ট৷ কিছুদিন রেস্ট নিলে একদম ঠিক হয়ে যাবে। তবে ও এখন এক সপ্তাহ হাঁটাচলা করতে পারবে না কোনো ভাবে।

– আচ্ছা এইসব নিয়ে চিন্তা করবেন না৷ আমরা দেখে রাখব বউমনিকে। আমি একটু দেখা করতে পারি বউমনির সাথে?

– জ্ঞ্যান ফিরুক তারপর ডেকে দেওয়া হবে তোমাদের। এরপর ডক্টর খান জাহির চৌধুরীর সাথে কথা বলে চলে যায়।

— দুজনেই একটু স্বস্তি পায় দোলা ভালো আছে জেনে। কিন্তু দোলার আঘাত গুলোর কথা শুনে আপসেট হয় তারা।

— রাশেদ মিয়া দোলার হাত ধরে বসে আছে। জাহির চৌধুরী তাকে খবর দেওয়াতে ছুটে আসে। রোকন আসতে চেয়েছিলো কিন্তু রাশেদ মিয়া তাকে নিয়ে আসেনি।
— দোলার জ্ঞ্যান ফিরেছে কিছুখন আগে।
– রাশেদ মিয়া ছলছল চোখ বসে আছে মেয়ের সামনে।

– বাবা তুমি মন খারাপ করো না প্লিজ। দেখো আমি ভালো আছি সুস্থ আছি।
– একদম চুপ দোলা মা৷ কোনো কথা বলবি না।।তুই কতটা সুস্থ আছিস আমি দেখতে পাচ্ছি। একটু দেখেশুনে চলবি না। যদি বড় কিছু হয়ে যেতো তখন?

– দোলা অসহায় চোখে তাকিয়ে বকা শুনছে তার বাবার।
-আর বকিস না মেয়েটাকে রাশেদ। তাছাড়া ও তো ইচ্ছে করে এটা করেনি৷ এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে৷ কিন্তু হঠাৎ করে এমন একটা কান্ড হবে সত্যি ভাবতে পারছি না।

– দোলাও বুঝতে পারছে না সে হঠাৎ পড়ল কি করে । তবে পায়ের নিচে তৈলাক্ত একটা কিছু ছিলো এটা দোলা বুঝতে পারে।

– “” রুদ্র আসেনি? রাশেদ মিয়ার কথায় জাহির চৌধুরী আর তানিয়া চমকে তাকায়।

– দোলা ওদের মুখোভঙ্গি দেখে ঠিকই বুঝতে পারছে।

– আসলে রুদ্র এখনো জানে না দোলার এমন এক্সিডেন্ট হয়েছে। ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু রিসিভ করেনি। হয়তো ব্যস্ত আছে কিছু নিয়ে। খবর পেলে ঠিক চলে আসবে।

— রাশেদ মিয়া চলে যায় দোলার সাথে কথা বলে। রোকন বাড়িতে একা আছে বিধায় দোলা তাকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়৷ দোলাকে একদিন রেখে ডিসচার্জ দেওয়া হবে।

– রাত প্রায় ৯টার কাছাকাছি। তানিয়া বসে আছে দোলার পাশে সোফায়। জাহির চৌধুরীও চলে গেছেন৷ তানিয়া জোর করে পাঠিয়েছেন তাকে। বয়স্ক মানুষ তার এখানে থাকা ঠিক হবে না ভেবে তানিয়া তাকে পাঠিয়ে দেয়।

– দোলা চোখ বন্ধ করে আছে। রুদ্রর জন্য খারাপ লাগছে৷ তার এমন অবস্থা আর রুদ্র একবারও আসলো না৷ এতখনে নিশ্চয় শুনেছে দোলার এক্সিডেন্টের কথা।

– দোলা মনে মনে কষ্ট পায় এটা ভেবে। রুদ্রর কাছে সত্যি তার কোনো মুল্য নেই৷ এতদিনে কি একটু মায়া জন্মায়নি তার মনে?

– রাত সাড়ে ১০টা। তানিয়া ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে যায় সোফাতে। দোলা চোখ বন্ধ করে আছে৷ কিন্তু তার ঘুম আসছে৷ ওয়াসরুমে যাওয়াও দরকার তার।

– দোলা চোখ খুলে দেখে তানিয়া ঘুমাচ্ছে সোফাতে । দোলা তানিয়াকে ঘুমাতে দেখে আর ডাকে না। একা একা উঠে নিচে নামার চেষ্টা করে।

– “” ফ্লোরে এক পা রেখে ডান পা রাখতেই দোলা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে পড়ে যেতে নেয়৷ তখনই এক জোড়া হাত এসে শক্ত করে চেপে ধরে দোলাকে। দোলা পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে। সাথে ব্যথাটাও সহ্য করার চেষ্টা করছে।

— দোলা অনুভব করে কেউ তাকে শক্ত হাতে ধরে আছে৷ কৌতুহল নিয়ে সামনে তাকিয়ে যাকে দেখে তাতে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। একরাশ ভালো লাগা কাজ করে ভেতরে…

–” চলবে..