তুমিময় আসক্তি পর্ব-২+৩

0
1560

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“২ + ৩”

–” দোলা ছলছল চোখে তার বাবা রাশেদ মিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ছোট থেকে তোমার সব কথা শুনে আসছি, মেনে আসছি। কখনো কোনো কথার অবাধ্য হয়নি। আর এখনো হবো না বাবা। আমার জন্য তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেটাই মেনে নেবো।
–” আমি চাই না আমার জন্য আমার বাবা কারো কাছে অসম্মতি হোক বা কোথাও মাথা নিচু করে থাকুক। তোমার সব সিদ্ধান্তে আমি রাজী, মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে কথা গুলো দোলা।

– রাশেদ মিয়ার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা প্রাপ্তি অশ্রুজল। কিন্তু ভেতরে অশান্তির অবাধ ঝড়।

– দোলা কিছুখন থেমে আবার বলে, জানি না কি ভেবে তুমি আমার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছো তবে আমি কথা দিচ্ছি বাবা তোমার সিদ্ধান্ত আমি বিফলে যেতে দেবো না। আমি আমার সর্বচ্চ চেষ্টা করব তোমার বিশ্বাস রাখার, আমার সংসার’কে সামলিয়ে রাখার বলে দোলা দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে। রাশেদ মিয়ার সামনে তার কান্নামাখা মুখটা সে দেখাতে চাই না। দোলার ভেতর টা ভেঙে চুড়ে যাচ্ছে।

– বিয়ে নিয়ে একটা মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে। বিশেষ করে একটা মেয়ের স্বপ্ন তার স্বামী। ভালো জীবন সঙ্গী পাওয়ার আক্ষেপ সব মেয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু ভাগ্য সব সময় সহায় হয়না। দোলারও হয়তো ভাগ্য সহায় হয়নি এই ব্যাপারে আবার হতে পারে দোলায় সব থেকে বড় ভাগ্যবতী হয়ে উঠবে। সময় সব বুঝিয়ে দেয় কিন্তু সময়ের খারাপ দিকটা প্রথমে ভেঙে চুড়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকতে পারে তারই নাকি জয়।

– দোলা ঘরে দরজা বন্ধ করে সোজা গিয়ে বিসানায় পড়ে। একটা বালিশকে আঁকড়ে ধরে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে তার সাথে। তার চাওয়া পাওয়া তো বেশি ছিলো না৷ তাহলে কেনো ভাগ্য তার সাথে পরিহাস করছে৷ এই সব ভেবে দোলার আরও কান্না আসতে চাই।

– রাশেদ মিয়া চিন্তিত হয়ে চেয়ারে বসে পড়েন। দোলার মধ্যে যে কি চলছে রাশেদ মিয়া খুব ভালো করে জানে। সব জেনেও না জানার ভান করে থাকতে হবে তাকে।

— সাদা শার্ট তার উপর সাদা কোর্ট। হাতে হোয়াইট রিচওয়াচ, চুল গুলো গোছানো। বডি স্প্রে এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে একটা ফাইল। ফাইল দেখছে আর বডি স্প্রে সারা শরীর জুড়ে স্প্রে করে এক হাতে। রুদ্রর সাদা জিনিস খুব পছন্দ। তাই সে বেশির ভাব জিনিস সাদায় ব্যবহার করে। তার সব কিছু প্রায় সাদায় ধরতে গেলে।

– স্প্রে টা রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ফাইল’টা বন্ধ করে ব্যাগে নিয়ে গটগটে পায়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে রুদ্র।

– ডাইনিং টেবিলে জাহির চৌধুরী, জেসমিন চৌধুরী অপেক্ষা করছে রুদ্রর জন্য। এটা প্রতিদিনের কাজ।
– রুদ্র ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে একবারে নিচে নামে ১০টার দিকে। এরপর সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করে সোজা অফিস চলে যায়।

– রুদ্রকে আসতে দেখে জেসমিন চৌধুরী মুখে হাসি নিয়ে বলে ওইতো রুদ্র বাবা চলে এসেছে। জেসমিনের কথায় রুদ্র জেসমিনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে গুড মর্নিং পিপি। এরপর জাহির চৌধুরীর উদ্দেশ্য বলে তার নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে পড়ে।

– খাবার সার্ভ করার জন্য সে সার্ভেন্ট আছে সে সবাইকে খাবার সার্ভ করতে শুরু করে।

– জাহির চৌধুরী রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুখন। রুদ্রর কোনো দিকে খেয়াল নেই যেনো। খাবারের দিকে মনযোগ দিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।
– খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো ড্যাড। কিছু বলবে? খাবারের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে রুদ্র।

– রুদ্রর হঠাৎ এমন কথায় জাহির চৌধুরী চমকে উঠে বলে এএ, হ্যাঁ হ্যাঁ।

– রুদ্র এবার খাবারের দিক থেকে নজর উঠিয়ে জাহির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে। যেকোনো একটা বলো।.

-জাহির চৌধুরী নিজেকে সামলে নিয়ে বলে আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই রুদ্র। কন্ঠে একটু দৃঢ়তা ভাব নিয়ে আসে জাহির চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী বুঝতে পারে তার ভাই কি বলতে চাই রুদ্রকে তাই জেসমিন চৌধুরী জাহির চৌধুরী উদ্দেশ্যে বলে, আহ ভাইজান এখন এইসব কথা না বললে নয়। তাছাড়া তুমি সব জানার পরও কেনো এমন পাগলামি করছো বুঝতে পারছি না।

– জেসমিন চৌধুরীর কথায় রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে পাগলামি মানে। কি নিয়ে কথা বলছো তোমরা। ড্যাড আমাকে কি কথা বলবে? রুদ্রর কথায় জাহির চৌধুরী সোজা ভাবে জবাব দিয়ে বলে, আমি তোমার বিয়ে দিতে চাই রুদ্র।

– জাহির চৌধুরীর কথা শোনা মাত্র রুদ্র হোয়াট বলে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। জেসমিন চৌধুরী ভয় পেয়ে যায় রুদ্রকে দেখে। রুদ্র হাতের মুঠো শক্ত করে নিয়ে বলে তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো ড্যাড। আমার মনে হয়না তুমি সজ্ঞানে আছো। প্লিজ কাম বেক রিয়েলিটি।.

— আমি যা বলছি জেনে বুঝে সজ্ঞানে বলছি রুদ্র। আমি চাই তুমি বিয়ে করো। আর এটাই আমার শেষ কথা। রুদ্র এবার দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলে আমি বিয়ে করবো না ড্যাড। এটা তোমরা প্রত্যেকে খুব ভালো করে জানো। এরপরও এমন কথা বলার কোনো মানে হয়না। আই হেট গার্লস। জাস্ট হেট দেম।
– এরপর রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে দেখো ড্যাডি আমি লাস্টবার বলছি আমাকে বিয়ের কথা কখনো বলবে না। আমি এই শব্দটা শুনতে চাই না বলে রুদ্র বেরিয়ে যায়। জাহির চৌধুরী আহত চোখে রুদ্রর চলে যাওয়া দেখে হতাশ হয়ে।

– আমি বলেছিলাম ভাইজান রুদ্র কখনো রাজী হবে না৷ শুধু শুধু ছেলেটাকে খেপিয়ে দিলে। কি দরকার অযথা ঝামেলা বাড়ানোর। ওকে ওর মতো থাকতে দাও না। জেসমিন চৌধুরীর কথা শেষ না হতেই গরম চোখে তার দিকে তাকায় জাহির চৌধুরী। এতে জেসমিন চৌধুরী চুপসে গিয়ে খাবারে মনযোগ দেয়। জাহির চৌধুরী খাবার রেখে উঠে যায়।

– বুড়ো বয়সে এসে ভীমরতি ধরেছে ভাইজানের। আমিও দেখে নেবো রুদ্রকে কি করে বিয়ে করাও তুমি। রুদ্র কখনো রাজী হবে না আমি জানি আর যদি তোমার চাপে কখনো রাজী হয়ও আমি হতে দেবো না। আর যদি বিয়ে হয় তো আমার মেয়ের সাথে হবে। আমার মেয়ে এই বাড়ির রাজরানী হয়ে আসবে। সমস্ত সম্পদ আমার মেয়ের নামে হবে। ওই ফকন্নির মেয়েকে কিছুতেই আমি এখানে আসতে দেবো না বলে জেসমিন চৌধুরী উঠে চলে যায়।

— দোলা ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করে রোকনকে টিফিন করে দিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়। রাশেদ মিয়া অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন। কারণ রুদ্রকে অফিসে তিনি নিয়ে যায়। দোলা সব কিছু গুছিয়ে নিজে অল্প একটু খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়।

– দোলার মনটা একদম ভালো নেই কাল থেকে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে সবার সামনে। নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করছে এটাই যে, তার জন্য এটাই শেষ কথা। জীবন তাকে যে পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করাচ্ছে সেটা তাকে মেনে নিয়ে চলতে হবে।

– রুদ্র অফিসে ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ায়। সবার হাটু যেনো কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সবাই সালাম দেয় রুদ্রকে। রুদ্র মুখটা গম্ভীর রেখে সোজা তার কেবিনে ঢুকে যায়। অফিসের সবাই রুদ্রকে ভয় পাই। বিশেষ করে তার করে রাখা গম্ভীর মুখোচিত্র এইটা সবাইকে ভয় পাওয়াতে বাধ্য করে।

– রুদ্র কেবিনে যেতেই গা এলিয়ে দিয়ে চেয়ারে বসে বেল চাপে তখনই হাসি মুখে কেবিনে ঢুকে আসাদ। রুদ্রর পিএ আসাদ। একমাত্র আসাদই রুদ্রকে ভয় পায়না। ভয় পায়না এমন না, তবে আসাদ রুদ্রর মন যুগিয়ে চলে সব সময় আর রুদ্র আসাদকে যথেষ্ট সম্মান করে ভালোবাসে। তাই আসাদ রুদ্রর সাথে খুব ফ্রি-লি থাকতে পারে।

– আসাদকে আসতে দেখে রুদ্র গভীর কন্ঠে বলে মিটিংয়ের জন্য সব ফাইল রেডি করো। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে মিটিং কনফারেন্স রুমে যাবো।

– রুদ্রর কথায় আসাদ জ্বি স্যার বলে বেরিয়ে যায়। রুদ্র চেয়ারের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

– দোলা একটা ক্লাস করে ক্যানটিনে বসে আছে। তার ক্লাসে মন বসছে না আর না ভালো লাগছে ক্লাস করতে। দোলার পাশে বসে আছে দোলার বেস্ট ফ্রেন্ড আশা।

– কি হয়েছে দোলা? তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেনো। কোনো সমস্যা?
– আশার কথায় দোলা মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে আমার আবার কি হবে। কিছু না। আমি ঠিক আছি। আচ্ছা তুই তো ক্লাস করতে পারতি৷ আমার সাথে চলে আসলি কেনো?

– কথা ঘুরানোর জন্য বলে দোলা কথাটা।
– দোলার কথায় আশা মুখটা বাংলার পাঁচের ন্যায় করে বলে তোকে ছাড়া আমি একা কোন ক্লাসটা কবে করেছি। শুন দোলা একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না। আমি তোকে জানি এবং বুঝিও। তোর সাথে আমার বন্ধুত্বটা ৮ বছরের। এই দীর্ঘ সময় তোর আমার জার্নি। তাই এতদিনে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে চিনি ঠিক আছে। কি হয়েছে সোজাভাবে বলে দে এটাই ভালো হবে।

– দোলা মায়াভরা চোখে আশার দিকে তাকায়। দোলা মনে মনে গর্ববোধ করে আশার মতো একটা বন্ধু পেয়ে।। আজ পর্যন্ত দোলার যখনই মন খারাপ হয়েছে আশা ঠিক বুঝে গেছে। এটাই হয়তো সত্যিকারের বন্ধুত্ব। বন্ধুর হয়ে যদি একটা বন্ধুর মন না বুঝে তাহলে সেখানে কিসের বন্ধুত্ব।

– দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে আশা। দোলার কথা শুনে আশা ও আচ্ছা বলার পর কিহহ বলে চিৎকার করে উঠে। আশার চিৎকারে দোলা তেমন কোনো রিয়াকশন দেয় না। কারণ সে জানতো আশা এমন কিছু করবে।

-তোর বিয়ে? আঙ্কেল ঠিক করেছেন?

– দোলা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললে আশা হাসি মুখে বলে কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত। আশার কথায় দোলা মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে বলে বিয়েটা কার সাথে শুনবি না একবার।
– আশা নিজের মাথায় একটা মেরে বলে এই রে এটাই ভুলে গেছি। ছেলে কে রে দোলা। নিশ্চয় তোর স্বপ্নের দেখা রাজকুমার। আপন মনে যার প্রতিচ্ছবি এঁকে রেখছিস ঠিক তেমন নিশ্চয়। আমি জানি আঙ্কেল তোর জন্য খারাপ কিছু চয়েজ করবে না। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে কথাটা আশা।

– আশার কথায় দোলা একটা মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে আমার বিয়ে ঠিক করেছে বাবা বিশিষ্ট শিল্পপতি রুদ্রনীল চৌধুরীর সাথে। দোলার থেকে রুদ্রর নাম শোনা মাত্র আশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে এমন। চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে কি বলছিস এই সব দোলা। এটা কেমন করে কিভাবে সম্ভব?

– সবই আমার কপাল রে। আল্লাহ হয়তো আমার জন্য এই মানুষটাকে রেখেছে জীবন সঙ্গী হিসেবে তাই হয়তো আমরা অদ্ভুত ভাবে জুড়ে যাচ্ছি।

– কিন্তু দোলা এটা হয়না। কখনোই হয়না। যে মানুষ মেয়েদের সম্মান দিতে যানে না। মেয়েদের মানুষ বলে গণ্য করে না তেমন একটা মানুষ তোর মতো মেয়ের স্বামী হতে পারে না। তুই আজ পর্যন্ত কোনো রিলেশনে যাস নাই তোর সবটুকু ভালোবাসা তোর স্বামীকে দেওয়ার জন্য। আর কেউ না জানুক আমি জানি বিয়ে,বর নিয়ে তোর কি স্বপ্ন সেখানে আঙ্কেল এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তোর জীবনটা একবারে নষ্ট হয়ে যাবে দোলা। আচ্ছা তুই কি আঙ্কেলকে কিছু বলিসনি। তোর যে মতামত নেই এটা জানাসনি?

– কে বলেছে আমার মত নেই। আমি তো বাবাকে বলে দিয়েছি বাবা যেটা বলবে আমি সেটাই করবো। তার সিদ্ধান্ত আমার সিদ্ধান্ত।

– দোলার কথায় আশা আশাহত হয়ে বলে এটা জেদ বা অভিমানের সময় না দোলা। একবার সবটা ভেবে দেখ। এটা সারাজীবনে প্রশ্ন। বিয়ে কোনো খেলাচুড়ি কাজ নয়।

– আমি সব জানি আর বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেখ আমার কাছে আমার বাবা সব। তাই আমার জীবনে বাবা যা বলবে তাই হবে। বাবা যদি আমাকে নিজ হাতে বিষ দিয়ে বলে পান করতে তাও আমি রাজী আছি। আমি চাই বাবা সম্মান নিয়ে সবার সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচুক। কেউ যেনো তাকে কখনো আঙুল তুলে কিছু বলতে না পারে আমাকে নিয়ে।

– আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না আঙ্কেল কেনো এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলো। সব জানার পরও আঙ্কেল কেনো তোর জীবন টা নষ্ট করে দিচ্ছেন।

– বাদ দে আশা। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আমি সব মেনে নিয়েছি। ভাগ্যর উপর ছেড়ে দিয়েছি সব৷ এখন ভাগ্য আমাকে যেভাবে চালাবে আমি সেভাবে চলব। চল বাড়ি যায়। আজ আর ক্লাস করব না বলে দোলা উঠে দাঁড়ায় সাথে আশাও। আশা এখনো সম্পুর্ণ বিষয় টা মানতে পারছে না। আশা দোলাকে যথেষ্ট ভালবাসে। বন্ধুর থেকে বেশি কিছু মনে করে সে দোলাকে। আর তার জীবনে এমন একটা পরিস্থিতি আসতে চলেছে এটা যেনো আশা কিছুতেই মানতে পারছে না। দোলা আর আশা ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়।

– জাহির চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে পেপার পড়ছে। এর মধ্যে রাশেদ মিয়া উপস্থিত হয় সেখানে। রাশেদ মিয়াক দেখা মাত্র জাহির চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে উঠে।
– আরে রাশেদ তুমি। এসো এসো। কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষার করছি। তা কি ভাবলে তুমি। মানে কি ডিসিশন নিলে। তোমার মেয়েটা আমাকে দিবে তো ভাই?
– রাশেদ মিয়া অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুখন জাহির চৌধুরীর দিকে। আর জাহির চৌধুরী অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে রাশেদ মিয়ার দিকে। তার মন ছটফট করছে রাশেদ মিয়ার উত্তর পাওয়ার জন্য।

– আমি রাজী বড় সাহেব। আমি আমার মেয়ের বিয়ে ছোট সাহেবের লগে দিতে রাজী। কিন্তু ছোট সাহেব কি রাজী হবে আমার মেয়েরে বিয়ে করতে?
– রাশেদ মিয়ার কথা শুনে জাহির চৌধুরী একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাশেদ মিয়াকে জড়িয়ে ধরে। এতে করে রাশেদ মিয়া চমকে উঠে অবাক হয়ে।

– আমি যে আজ কি পরিমাণ খুশি রাশেদ তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে আজ। আমি তোমার এই উপকারের কথা কখনো ভুলব না। তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করবে না। সে অনেক সুখে থাকবে আমার বাড়িতে। সে দায়িত্ব আমি নিজে নেবো। আমি চাই দোলা মা শুধু আমার ছেলেটা ঠিক পথে নিয়ে আসুক। তাকে সঠিকটা বুঝতে বাধ্য করুক। আর আমার বিশ্বাস দোলা মা ঠিক পারবে রুদ্রর মন জয় করতে। রুদ্রকে সঠিকটা বুঝাতে।
– আর থাকলো রুদ্রকে বিয়েতে রাজী করানোর ব্যাপার। ওইটা আমার উপর ছেড়ে দাও৷ আমি ঠিক সামলে নেবো। হাসি মুখ রেখেই বলে সব কথা জাহির চৌধুরী। রাশেদ মিয়া শুধু আহত চোখে সব দেখে গেছে আর শ্রবণ করেছে।

— রুদ্র মিটিং শেষ করে সবে কেবিনে এসে বসেছে এর মধ্যে তার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন স্ক্রিনে পিপি দিয়ে সেভ করা নাম ভেসে উঠতেই রুদ্র ভ্রু কুচকে রিসিভ করে।

; ফোন রিসিভ করতেই জেসমিন চৌধুরী কান্নারত কন্ঠে বলে, রুদ্র ভাইজানের শরীর টা ভালো না৷ তুই তাড়াতাড়ি আয় বাবা। ভাইজানের হঠাৎ করে বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়েছে। আমি ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে ভাইজানকে ডক্টরের কাছে নিয়ে এসেছি।

– জেসমিন চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে এই সব কি করে হলো পিপি। বাবা তো সকালেও ভালো ছিলো। হঠাৎ এত শরীর খারাপ কি করে হলো?
– আমি কিছু জানি না রুদ্র। তুই প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আয় এখানে। আমার খুব ভয় করছে। ভাইজানের কিছু হবে না তো। সে কখন থেকে ডক্টর দেখছেন। এখনো বের হননি।

– তুমি চিন্তা করো না পিপি আমি এখনই আসছি। বাবার দিকে খেয়াল রেখো বলে রুদ্র ফোন কেটে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে অফিস থেকে।

বিঃদ্রঃ রহিম মিয়ার নাম চেঞ্জ করে রাশেদ মিয়া রাখা হলো। কেউ এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না।
চলবে…….

( ❌❌কপি করা নিষেধ,❌❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন আর অবশ্যই গল্প নিয়ে মতামত জানাবেন।)

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৩”

–” রুদ্র হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে। জাহির চৌধুরীর কেবিনের সামনে আসতেই দেখে জেসমিন চৌধুরী আর রাশেদ মিয়া উপস্থিত সেখানে। জেসমিন চৌধুরী রুদ্রকে দেখা মাত্র দৌড়ে যায় রুদ্রর কাছে। এরপর ন্যাকা কান্না জুড়ে বলে রুদ্র বাবা এসেছিস তুই। ভাইজানের হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো বুঝলাম।

– পিপি ড্যাড এখন কেমন আছে? কোথায় আছে ড্যাড আমাকে নিয়ে চলো বলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রুদ্র। আসলে রুদ্র তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে৷ পৃথিবীর সব কিছু একদিকে আর তার বাবা একদিকে সমান। রুদ্রর চোখ মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
– জেসমিন চৌধুরী রুদ্রকে জাহির চৌধুরীর কেবিনে নিয়ে যায়। একটু আগে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে৷ রুদ্র দ্রুত পায়ে কেবিনে ঢুকে দেখে জাহির চৌধুরী চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। পাশে ডক্টর খান দাঁড়িয়ে জাহির খানের কিছু রিপোর্ট দেখছে৷

– ডক্টর খানকে দেখে রুদ্র ব্যস্ত কণ্ঠে বলে আঙ্কেল ড্যাড এর কি হয়েছে? কেমন আছে ড্যাড এখন?
– রুদ্রর কণ্ঠস্বর পেয়ে ডক্টর সেন ঘুরে হাসি মুখে বলে আর রুদ্রনীল। এতখনে সময় হলো আসার।

– রুদ্র মুখটা আগের তুলনায় আরও গম্ভীর করে বলে আসলে আঙ্কেল রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো। বাই দ্যা ওয়ে ড্যাড এখন কেমন আছে?

– ডক্টর খান রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুখন তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে তোমার বাবা এখন ভালো আছে। তবে তার ভালো থাকা ততখন পর্যন্ত নির্ভর করছে যতখন সে চিন্তামুক্ত, রিলাক্স মুডে থাকবে। ডক্টর খানের কথায় রুদ্র, জেসমিন চৌধুরী দুজনেরই ভ্রু কুচকে আসে।

– রুদ্র কৌতুহল নিয়ে বলে ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা আঙ্কেল।
– দেখো রুদ্র তোমার বাবার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এই সময় তাকে যত টেনশন ফ্রি রাখা যাবে তত মঙ্গল। তোমার বাবা ছোটখাটো একটা স্টোক হয়েছে। আর এটা হয়েছে অতিরিক্ত চিন্তা আর উত্তেজিত হওয়ার ফলে। কি নিয়ে তার মধ্যে এত চিন্তা উত্তেজনা সেটা তোমার বাবা এবং তোমরা জানো। তবে যদি এইভাবে চলতে থাকে তাহলে তোমার বাবার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে ভবিষ্যতে। তাই আগে থেকে সাবধান করে দিচ্ছি৷ জাহিরকে সব সময় হাসিখুশি আর ভালো রাখার দায়িত্ব তোমাদের। ওকে কোনো রকম দুঃচিন্তা বা উত্তেজিত হতে দেওয়া যাবে না। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছো?

– রুদ্র তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে জ্বি আঙ্কেল বুঝতে পারছি আপনার কথা। আমরা খেয়াল রাখবো ড্যাডের৷ আচ্ছা এখন কোনো সমস্যা নেই তো আর? মানে আর কোনো সমস্যা আপাতত হবে না আশা করি?

– সে তো নির্ভর করছে তোমাদের ভালো রাখার উপর। ওই যে বললাম যত হাসিখুশি চিন্তামুক্ত রাখা যায়৷ জাহিরের জন্য উত্তেজনা একদম ভালো হবে না৷

– জেসমিন চৌধুরী ঠিক হজম করতে পারছে না ডক্টরের কথা গুলো। তার মনে সন্দেহর বাসা বেধেছে। জাহির চৌধুরীর অসুস্থতা নিয়ে এখন তার যথেষ্ট ডাউট হচ্ছে৷ ডক্টর খানের দিকে একবার আরেকবার জাহির চৌধুরীর দিকে তাকাচ্ছে জেসমিন চৌধুরী। মুলত বোঝার চেষ্টায় আছে সে ব্যাপারটা। ডক্টর খান জাহির চৌধুরীর খুব ভালো বন্ধু। তাই জেসমিন তার কথায় ভরসা পাচ্ছে না।

– ওকে রুদ্র আমি এখন আসছি। তোমরা চাইলে জাহিরকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারে৷ তবে অবশ্যই ওর খেয়াল রাখবে৷ কোনো কিছু নিয়ে যেনো ও চিন্তা না করে। আমি বারবার এক কথা বলছি তোমাদের বলে, ডক্টর খান বেরিয়ে যেতে নেয়। রুদ্রর মাথায় চলছে না চিন্তা ভাবনা৷ তার চিন্তা ভাবনায় এত মগ্ন হয়ে আছে যে ডক্টর আর খান আর জাহির চৌধুরীর ইশারায় অল দ্যা বেস্ট বলাটা চক্ষুগোচর হয়না। কিন্তু জেসমিন চৌধুরীর চোখে ঠিকই সব ধরা পড়েছে। আর এতে সে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে তার ভাই সব কিছু অভিনয় করছে।

– আসলে ব্যাপারটা কি হয়েছে বলি আপনাদের…

— রাশেদ মিয়া তার মতামত জানানোর পর থেকে জাহির চৌধুরী ভাবতে থাকে রুদ্রকে নিয়ে। আসলে রুদ্রকে সহজে বিয়েতে রাজী করানো যাবে না। এর জন্য বড় কোনো প্ল্যান করতে হবে যাতে রুদ্র নিজ থেকে রাজী হয়ে যায়। জাহির চৌধুরী জানেন তার ছেলে তাকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই জাহির চৌধুরী সেটাই অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগায়। অসুস্থতার নাটক করে রুদ্রকে বিয়েতে রাজী করানোর জন্য আগে থেকে ডক্টর খানকে সব জানিয়ে রাখে৷ ডক্টর খান এতখন যে সকল কথা বললেন রুদ্রকে সব জাহির চৌধুরীর সাজিয়ে দেওয়া কথা।

– জাহির চৌধুরী এবার আস্তে আস্তে চোখ খোলে। তাকে তাকাতে দেখে রুদ্র গিয়ে বাবার পাশে বসে হাত ধরে একটা। জাহির চৌধুরী মায়াভরা চোখে রুদ্রর দিকে তাকায়।

– এখন কেমন আছো ড্যাড? কোথাও সমস্যা হচ্ছে না তো?
– জাহির চৌধুরী মুখে হাসি নিয়ে এসে মাথা ঝাকিয়ে না বলে।
– হঠাৎ করে এইসব কি করে হলো। তুমি তো সকালেও ভালো ছিলে। কি নিয়ে এত চিন্তা তোমার। কিসের অভাব তোমার যার জন্য তোমাকে চিন্তায় থাকতে হয়। রুদ্রর কথায় জাহির চৌধুরী সোজা ভাবে জবাব দিয়ে বলে আমার একটা বউমার অভাব। আমার নাতি-নাতনীদের অভাব। আমি চাই তুই একটা বিয়ে বউ নিয়ে আয় বাবা।

– জাহির চৌধুরীর কথায় রুদ্র রেগে যায় আবার। কিন্তু সে রাগটা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে শান্ত গলায় বলে কেনো এমন পাগলামো করছো ড্যাড৷ তুমি খুব ভালো করে জানো আমি বিয়ে কখনোই করবো না। আমার দ্বারা এই সব হবে না।।আমি কোনো নারীকে আমার জীবনে নিয়ে আসতে পারবো না৷ তাও কেনো জেদ ধরছো তুমি। তুমি এই একটা জিনিস বাদে যা চাও আমি সব করবো। দরকারে আমার জান টা চাও, তাও দিতে রাজী তাও এটা আমাকে করতে বলো না ড্যাড প্লিজ।

– তুই কি চাস আমি অপুর্ণতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করি। বুকের মধ্যে একটা আক্ষেপ নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করি। জাহির চৌধুরীর এই কথা শুনে রুদ্র চমকানো চোখে তাকায় তার বাবার দিকে৷ অবাক হওয়া কন্ঠে বলে এইসব কি বলছো তুমি ড্যাড। প্লিজ এমন কথা বলো না আমার খারাপ লাগে শুনতে।

– আর আমার কেমন অনুভূতি হয় সেটা বুঝিস। এই সব কিছু আমাকে কত কষ্ট দেয় এটা একবারও ভেবেছিস৷ ঠিক আছে আমি আর তোকে বলব না কখনো বিয়ের কথা৷ তোর যা ইচ্ছে তাই কর৷ আমি আর কখনো তোর জীবনে ইন্টাফেয়ার করতে যাবো না। তবে আমার মৃত্যুতে কিন্তু আফসোস করতে পারবি না বলে রাখছি আমি।
– ড্যাড জোরের সাথে বলে উঠে কথাটা রুদ্র। কি এক কথা বলছো বারবার। শুনো তুমি এখন অসুস্থ। তোমার জন্য বেশি কথা ভালো না এখন। আমরা এই নিয়ে পরেও আলোচনা করতে পারবো৷ তুমি রেস্ট করো আমি তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি বলে রুদ্র উঠে দাঁড়ায়। এরপর গটগটে পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

– জাহির চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার এতকিছু করা যার জন্য সেটা কি আদো সফল হবে এইসব ভাবনা চিন্তা এখন তার মাথায় চলছে।

— দোলা রাতের রান্না শেষ করে ঘরে আসে। রাশেদ মিয়া এখনো বাড়ি ফিরেনি। প্রতিদিন রাত আট’টার মধ্যে চলে আসে৷ আজ নয়টা পার হয়ে গেছে তাও বাড়ি ফিরেনি। তাই দোলার একটু চিন্তাও হচ্ছে বাবার জন্য। রোকন তার ঘরে পড়তে বসেছে। রোকন পড়াশোনায় অনেক ভালো। মেধাবী স্টুডেন্ট। সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করছে।

– রোকন বইটা বন্ধ করে দোলার ঘরে যায়।
– রোকনকে আসতে দেখে দোলা মুচকি হেসে বলে ভাই কিছু বলবি?
– রোকন ঘরে ঢুকে দোলার বিসানার উপর পা ঝুলিয়ে বসে বলে আপু বাবা এখনো আসলো না কেনো? প্রতিদিন তো এত দেরি করে না।

; কি জানি ভাই আমিও বুঝতে পারছি না। হয়তো কোনো কাজে আটকে পড়েছে। ছোট সাহেব তো কত জায়গা যায়। হয়তো আছেন কোথাও চলে আসবে চিন্তা করিস না। আমি কি তোকে খাবার দিয়ে দেবো?

-রোকন কিছুখন মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলে নাহ থাক। বাবা আসলে একসাথে খাবো। আমি পড়তে বসি আবার বলে উঠে দাঁড়ায় রোকন।
– দু কদম যেতে রোকন দাঁড়িয়ে যায় তাই দেখে দোলা ভ্রু কুচকে বলে কিছু বলবি?

– আপু শুনলাম তোর নাকি বিয়ে ঠিক করেছে বাবা। তাও ছোট সাহেবের সাথে৷ তুই এই বিয়ে করিস না আপু।।ওই লোকটাকে আমার একদম ভালো লাগে না৷ মুখটা কেমন গম্ভীর করে রাখে সব সময়। একটু হাসি নেই মুখে। আমার তো দেখলে ভয় করে লোকটাকে।

– এমন করে বলতে নাই ভাই৷ উনি তোর বড় তাই ছোট সাহেব বলবি। আর যেনো লোকটা কথাটা না শুনি ঠিক আছে৷ আর এই সব নিয়ে একদম ভাববি না। তোর আপুর ভাগ্য উপর থেকে সেট করে দিছে। তাই যা হবে মানতেই হবে। তবে এটা তো জানিস তোর আপু খুব স্টোং আর অনেক বুদ্ধিমতী। ওই গম্ভীর মুখে ঠিক হাসি ঝুলিয়ে দেবো বলে হাসার চেষ্টা করে দোলা।
— দোলার কথায় রোকন অসহায় ফেস করে বলে তবুও বিয়েটা কি করতেই হবে তোকে আপু?
– রোকনের এই কথাটা যেনো দোলার মনে সজোরে আঘাত করে গিয়ে। দোলা আহত চোখে তাকিয়ে মিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে জানি না রে ভাই। ভাগ্য আমাকে নিয়ে কোথায় দাঁড় করাবে কিছু জানি না তবে যেটাই হোক না কেনো আমি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত আছি। আচ্ছা যা তুই পড়তে বস গিয়ে। বাবা আসলে খেতে দিয়ে দেবো কেমন। রোকন আর কিছু না বলে বেরিয়ে যায় দোলার ঘর থেকে। দোলা জানালার পাশে গিয়ে জানালার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ ভরা পুর্ণ চাঁদ। তার আলোয় আলোকিত হয়ে আছে সর্ব ধরণী। দোলা চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছুড়ে। যেটার সাথে বেরিয়ে আসে হতাশা, আক্ষেপ কষ্টর রেস।

–এইভাবে কেটে যায় একদিন। জাহির চৌধুরীকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে রুদ্র গতদিনই। জাহির চৌধুরী বাড়ি এসে কারো সাথে কথা বলেনি। চুপচাপ আছে সব সময়। খাবার দিলে একবার খাচ্ছে আবার ঘুরিয়ে দিচ্ছে। ভালো লাগছে না কিছু তার বলে বাহানা জুড়ে দিচ্ছে। কিন্তু রুদ্র তার বাবার মনের অবস্থা সবই বুঝতে পারছে। রুদ্র পড়ে গেছে বিপাকে। সে কি করবে এই নিয়ে তার চিন্তার অন্ত নেই।

একদিকে তার বাবাকে হারানোর ভয় মনে জেঁকে বসেছে ভালো করে আরেকদিনে জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত কি করে মেনে নিবে সে এটা নিয়ে দুঃচিন্তায় আছে সে। যেখানে সে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না সেখান একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে সারাজীবন তার দায়িত্ব নেওয়া। আবার সেই মানুষটা যদি বেইমান স্বার্থপর হয়। যদিও রুদ্রর এইসবে কিছু মাথা ব্যথা নেই। কারণ কোনো মেয়ে মানুষকে নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। এটাই মনে করে সে।

– জেসমিন চৌধুরী তার ফোন নিয়ে বারান্দায় আসে। এরপর কল করে একটা নাম্বারে। কিছুখন বাদে ফোন টা রিসিভ করে ওপর পাশে হেসে বলে কেমন আছো মা?
– তানিয়ার কথায় জেসমিন চৌধুরী মুখটা মলিন করে বলে আর কেমন থাকা। হাতের মধ্যে থেকে সব বেরিয়ে যাচ্ছে আর তুই আমেরিকা বসে থাক তোর বাবার সাথে। তোদের দিয়ে কিছু হবে না তানি। আমি একা একা আর কত সামলাবো সব কিছু।

– জেসমিন চৌধুরীর কথা বুঝতে না পেরে তানিয়া কৌতুহল নিয়ে বলে তুমি কিসের কথা বলছো মা।।কি বেরিয়ে যাচ্ছে হাত থেকে?

– রুদ্রর বিয়েটা মনে হচ্ছে এবার হয়ে যাবে তানিয়া। আর রুদ্রর বিয়ে মানে বুঝতে পারছিস সব সম্পত্তি আমার বেহাতি হওয়া।
– রুদ্রর বিয়ের কথা শুনে তানিয়া খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলে কিহ সত্যি বলছো মা ব্রো’র বিয়ে। আমি তো বিশ্বাসী করতে পারছি। অবশেষে ব্রো বিয়েতে রাজী হয়েছে?

– এখনো রাজী হয়নি তবে তোর মামা যা শুরু করেছে রাজী হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু তোর এতে লাফানোর কি আছে বুঝলাম না তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে জেসমিন চৌধুরী।
– ওমা আমি খুশি হবো না৷ ব্রো’র বিয়ে বলে কথা। আমি তো ভেবেছি ব্রো কখনোই বিয়ে করবে না। জীবনটা এইভাবে কাটিয়ে দেবে। যাক অবশেষে সুবুদ্ধি হয়েছে।

– তানিয়ার কথায় জেসমিন চৌধুরী রেগে একটা ধমক দেন। মায়ের ধমকে চুপসে যায় তানিয়া।
– আমি এখানে দিনের পর দিন পড়ে আছি সম্পত্তি হাতানোর জন্য। চাকরের মত দিনরাত খাটছি তোর ভালোর জন্য। আর তুই কি-না আমার আশায় পানি ঢালছিস। কোথায় ভেবেছিলাম রুদ্রর বিয়েটা তোর সাথে দেবো। তাহলে সব কিছু তোর হয়ে যাবে৷ আমার আর কোনো চিন্তা থাকবে না তোকে নিয়ে। কিন্তু তোদের দিয়ে কিছু হবে না। যা করার আমাকে করতে হবে দেখছি৷ ওই ফকন্নির মেয়েটাকে কিছুতেই এই বাড়িতে এসে রাজ করতে দেবো না আমি।

-তোমার লোভ তোমাকে একদিন ধ্বংস করে দেবে মা। আমাদের যতটুকু যা আছে যথেষ্ট আছে। তারপরও কেনো তুমি মামার সম্পত্তিতে নজর দিয়ে আছো। তোমার এই লোভ আর পাপের জন্য বাবা তোমার সাথে থাকে না। আজ আমরা এতদুরে আছি তোমাকে ছাড়া শুধু মাত্র তোমার জন্য। এরপরও তুমি শুধরালে না। আর কবে ঠিক হবে তুমি। এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও। এই সব লোভ লালসা থেকে বেরিয়ে আসো প্লিজ মা।

– বেশি জ্ঞ্যান দিতে আসবি না তানি। এইসব কিছু কি আমি আমার জন্য করছি৷ আমি কি মরার পর সাথে নিয়ে যাবো সব৷ আমি তো তোর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এইসব কিছু করছি৷ আর রইলো তোর বাবার কথা সে নিজে কিছু করতে পারবে না আর না আমাকে করতে দেবে। তোর বাবার আশায় থাকলে আমাদের পথে বসে ভিক্ষা করতে হবে। শুন টাকায় সব বুঝলি। যার টাকার নাই এই দুনিয়ায় তার কোনো মুল্য নেই।

– তানিয়া হতাশ হয় তার মায়ের কথায়। এটা আজ নতুন না৷ তানিয়া প্রায় তার মাকে বোঝায় কিন্তু সে বোঝার পাত্রী নয়। লোভ মানুষকে এত অন্ধ করে দিতে পারে সেটা নিজের মাকে না দেখলে বুঝতো না তানিয়া।

– শুন তানি যত তাড়াতাড়ি পারিস দেশে ফিরে আয়। রুদ্র বিয়েতে রাজী হয়ে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। আর যদি রুদ্র বিয়ে করেও আমি তোর সাথে রুদ্রর বিয়ের ব্যবস্থা করবো।
– কখনো না মা। আমি ব্রোকে নিজের ভাইয়ের মতো ভাবি৷ সেখানে তাকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া আমার এমন মুডি গম্ভীর টাইপের বর একদম চাইনা। মা জীবনে টাকা পয়সা সব না। যদি প্রকৃত সুখইটাই না থাকে একটা সংসারে সেখানে ধন সম্পদ কিছু করতে পারে না। জানি না কোন মেয়ের সাথে ব্রোর বিয়ের কথা হচ্ছে। তবে যেই হোক আল্লাহ যেনো তাকে সুখ দেয় অন্তত এই কামনা করি।। আমি রাখছি মা এখন আমার ক্লাস আছে৷ আর পরে জানাবো বাবার সাথে কথা বলে দেশে যাব কি-না। এরপর তানিয়া ফোন কেটে দেয়৷

– মেয়ের কথায় জেসমিন রাগ সাথে হতাশও হয়।

–“” জেসমিন চৌধুরীর একটা মেয়ে আছে নাম তানিয়া আহমেদ। তানিয়া তার বাবার সাথে আমেরিকা থাকে। তানিয়া আর দোলা একই ক্লাসে পড়াশোনা করছে। তানিয়ার বাবা জেসমিন চৌধুরীর উপর রাগ করে বিদেশ চলে যান তানিয়াকে নিয়ে। পাঁচ বছর হলো তানিয়া তার বাবার কাছেই আছে৷ তানিয়ার বাবা তানভির আহমেদ। সে অত্যন্ত ভালো মানুষ। জেসমিন চৌধুরীকে ভালোবেসেই বিয়েটা করেছিলেন। বিয়ের আগে তিনি জানতেন না জেসমিনের মধ্যে এত লোভ লালসা বিদ্যমান আছে। এই সব কিছু সহ্য করে আসলেও এক সময় তিনি তিক্ত হয়ে উঠেন সব কিছুতে তাই বাধ্য হয়ে তিনি দূরে চলে যায়। কিন্তু এতে কোনো প্রভাবই পড়েনি জেসমিন চৌধুরীর উপর। তার মতো সে দিব্যি আছে বেশ।

…চলবে