#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম
“২৫” (বোনাস পর্ব)
–” রুদ্র দোলাকে শুয়ে দিয়ে বুঝতে পারে না কি করবে এখন। দোলার শরীরের তাপ এত পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। হঠাৎ এত জ্বর আসায় রুদ্র ঘাবড়ে যায়। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে এখন তার। এত বাড়াবাড়ি না করলে মনে হয় ভালো হতো৷ দোলার কথা গুলো একবার শোনা উচিত ছিলো। কিন্তু সে কি করতো৷ রাগ উঠে গেলে যে হিতাহিতজ্ঞ্যান থাকে না তার মাঝে।
–‘ রুদ্র লক্ষ্য করে দেখে দোলা কাঁপছে। এত জ্বর শরীরে কাঁপোনি হওয়াটাই স্বাভাবিক। রুদ্র দেরি না করে একটা কম্বল নিয়ে দোলার শরীরে জড়িয়ে দেয়৷
–‘ দোলার জ্বর ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রুদ্র দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। দোলার মুখ শুকিয়ে গেছে৷ ঠোঁট দুটি যেনো পানিশূন্যতায় ভুগছে এমন কাঠ হয়ে আছে শুকিয়ে। রুদ্রর একটু ভালো লাগছে না দোলাকে এইভাবে দেখতে৷ নিজেকে অপরাধী লাগছে তার৷ রুদ্র আর বসে থাকে না। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় তানিয়ার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তানিয়ার কাছে মোটামুটি সব রকম ওসুধ থাকে সব সময় তাই রুদ্র জ্বরের ওসুধ নেওয়ার জন্য তানিয়ার কাছে যায়।
— এত রাতে তানিয়াকে বিরক্ত করতে একদম ইচ্ছুক নয় রুদ্র। কিন্তু দোলার জন্য তাকে করতেই হবে। রুদ্র তানিয়ার দরজায় গিয়ে নক করে। বেশ কয়েকবার নক করার পর তানিয়া ঘুম চোখে দরজা খুলে রুদ্রকে দেখে অবাক হয়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে ব্রো তুমি এত রাতে, কোনো সমস্যা?
-‘ রুদ্র দেরি না করে বলে আমাকে কিছু জ্বরের ওসুধ দে জলদি। দোলার অনেক জ্বর এসেছে। কেয়ারলেস মেয়ে একটা। এত জ্বর নিয়ে বারান্দায় ফ্লোরে ঘুমিয়েছিলো জানিস৷ কথাটা একটু দৃঢ় কন্ঠে বলে রুদ্র।
–‘ তানিয়া ছুটে রুমের মধ্যে এসে ওসুধের বক্স খুলে খুজতে থাকে। কিন্তু আফসোস জ্বরের ওসুধ নেই তার মধ্যে। তানিয়া ফোস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে মুখটা মলিন করে বলে ব্রো জ্বরের ওসুধ নেই।
–‘ ওহ শিট বলে রুদ্র একটা হাত ঝাড়া দেয়। এত রাতে ডক্টর কোথায় পাবো। দেখি আঙ্কেল কে ফোন দিয়ে আসতে বলি বলে রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে আসে তখনই তানিয়া পিছু ডাকে।
—‘ ব্রো এত রাতে মনে হয় না কেউ আসবে৷ চলো আমি দেখছি বলে তানিয়া রুদ্রর আগে আসে ঘরে । দোলা এখনো কেঁপে যাচ্ছে। তানিয়া দোলার গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠে। এত জ্বর কিভাবে আসলো? রুদ্র চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ দোলার জন্য অনেক খারাপ লাগছে তার।
-‘ তানিয়া নিচে থেকে একটা জায়গায় পানি আর শুকনো কাপড় নিয়ে আসে। এরপর দোলার মাথায় পানিপট্টি দিতে থাকে৷
ব্রো তুমি বউমনির হাতটা ধরে মাসাজ করতে থাকো। রুদ্র তানিয়ার কথায় তাই করে। আসলে রুদ্রর মাথায় কাজ করছে না আপাতত। মনে মনে তার আফসোসের শেষ নেই।
–‘ তখন এমন বিহেভ না করলেও পারতে ব্রো। জানো বউমনির কপাল থেকে কত রক্ত পড়েছে আজ। মনে হচ্ছে ওই ব্যথায় জ্বরটা এসেছে৷ রাগটা কোন্ট্রল করতে শেখো। আমি মামুর থেকে শুনেছি সব। বউমনির এখানে দোষ নেই একটুও। ছবিটা মামুর আলমারিতে ছিলো। মামু রেখেছিলো ছবিটা সবার অগোচরে। বউমনি ওইটা মামুর ঘর থেকে পেয়েছে। তুমি শুধু শুধু এমন বিহেভ করলে বউমনির সাথে। মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না প্লিজ ব্রো। এরপর তানিয়া নিজের কাজে মন দেয়।
–‘ রুদ্র তানিয়ার কথায় কোনো জবাব দিতে পারিনি। কারণ কি বলবে সে। ভুল তো সে করেছে৷ দোলা বারবার তাকে বলতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু সে তো শুনিনি দোলার কথায়। রুদ্র দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
–” রাত প্রায় ২ টা। তানিয়ার চোখে আবার ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে৷ রুদ্র এখনো একই ভাবে দোলার হাত ধরে বসে আছে৷ রুদ্রর চোখে বিন্দু পরিমান ঘুম নেই৷
–‘ তুই ঘরে যা। বাকিটা আমি সামলে নেবো৷ রুদ্রর কথায় তানিয়া চমকে তাকায়। আসলে তানিয়াকে ঢুলতে দেখে কথাটা বলে রুদ্র।
–‘ খুব ঘুম পাচ্ছে, সরি ব্রো৷ মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে তানিয়া।
– ইটস ওকে। যা আমি দেখছি দোলাকে। ঠিক সামলাতে পারব চিন্তা করিস৷ তানিয়া আর কিছু না বলে চলে যায় দোলার দিকে একবার তাকিয়ে।
–” রুদ্র দোলার মাথার পাশে এসে বসে৷ দোলার জ্বরটা একটু কমে এসেছে৷ হাত গুলো ঠান্ডা হয়েছে একটু। রুদ্র দোলার হাতটা শক্ত করে ধরে।
–‘ সরি দোলা৷ আমি জানি আমার জন্য তোমার এমন অবস্থা। আমাকে মাফ করে দিও প্লিজ৷ আমি জানি না আমার মধ্যে কি হয় মাঝে মাঝে৷ আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা রাগ উঠলে৷ আমাকে প্লিজ মাফ করে দিও। আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছো তুমি। আমি সত্যি এমন কিছু চাইনি৷ প্লিজ ক্ষমা করে দিও৷ রুদ্রর কথায় গুলো দোলার কাছে অজানায় থেকে গেলো। কারণ দোলার জ্ঞ্যান নেই রুদ্রর কথা শোনা বা বোঝার মতো এখন৷ রুদ্র কিছুখন পানিপট্টি দিয়ে দেখে দোলার জ্বরটা অনেক কম। তাই পানিপট্টি দেওয়া অফ করে দেয় সে৷ দোলা এখন ঘামতে শুরু করেছে৷ রুদ্র কম্বলটা সরিয়ে দেয় দোলার গায়ে থেকে।
–” সকাল ৭ নাগাদ দোলার ঘুম ভাঙে। দোলার মাথাটা এখনো ভাড় হয়ে আছে। চোখ দুটো ভারি হয়ে আছে৷ মাথার ব্যথাটা আগের তুলনায় বেড়েছে। দোলা শরীরে অসম্ভব ব্যথা অনুভব করে। মুলত জ্বরের কারণে এমনটা লাগছে তার।
-” দোলা পাশ ফিরে ঘুরতে গিয়ে বাধা পায়। কারণ রুদ্র তার ডান হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দোলা মাথা উঁচু করে রুদ্রকে এইভাবে দেখে চমকে উঠে।
— উনি এখানে এইভাবে কেনো? আর আমি বা এখানে আসলাম কি করে। উনিকি সারারাত এভাবেই ছিলো এখানে মনে মনে ভাবে দোলা। দোলা রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয় একটা। কারণ রুদ্র দোলার হাতটা শক্ত করে ধরে বেবিফেস করে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু দোলার মুখের হাসিটা বেশিখন স্থায়িত্ব হয়না৷ গতদিনের করা রুদ্রর বিহেভিয়ার মনে পড়তেই দোলা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রুদ্রর সামনে সে আপাতত আসতে চাইনা। আর না তার দিকে তাকাতে চাই। কিন্তু রুদ্র যেভাবে তার হাত ধরে আছে৷ উঠতে গেলেই জেগে যাবে। দোলা কি করবে বুঝতে পারছে না।
–” দোলার ভাবনা চিন্তার মধ্যে রুদ্রর ঘুম ভেঙে যায়। রুদ্র ঝটপট উঠেই দোলার কপালে হাত দিয়ে একটা স্বস্তি শ্বাস ছাড়ে। দোলার জ্বরটা এখন একদম নেই।
–” দোলা অন্যদিকে ফিরে আছে৷ রুদ্র যখন বুঝতে পারে দোলা জেগে আছে তখন একটু দূরে সরে এসে বলে তোমার শরীর কেমন লাগছে এখন? দোলা জবাব দেয়না।
–‘ রুদ্র আরো একবার জিজ্ঞেস করে। কিন্তু এবারও দোলা উত্তর করে না৷ রুদ্র একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। দোলার যে অভিমান হয়েছে তার উপর রুদ্র বেশ বুঝে গিয়েছে। অভিমান হওয়াটাই স্বাভাবিক। রুদ্র আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে যায়। দোলা রুদ্র চলে যাওয়ার পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। গতদিনের কথা মনে হলেই দোলার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
— তানিয়া এসে দেখে গেছে দোলাকে৷ দোলা তানিয়ার সাথে কথা বলেছে স্বাভাবিক ভাবে কিন্তু রুদ্রর সাথে কথা বলে না আর না তার দিকে তাকায়। রুদ্র দোলার কাজে হতাশ হয়। বারবার করুণ চোখে তাকায় তার দিকে।।কিন্তু দোলার ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে।
–” এইভাবে কাটে দুদিন৷ দোলা একবারের জন্য রুদ্রর সাথে কথা বলেনি এই দুদিনে৷ রুদ্র যতবার কথা বলতে গিয়েছে ততবারই এড়িয়ে গেছে দোলা। রুদ্রকে সরি বলার সুযোগটাও দেয় না দোলা। রাতে রুদ্র আসার আগেই ঘুমানোর ভান করে থাকে৷ যাতে রুদ্র তাকে কিছু বলতে না পারে৷ রুদ্র দোলাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলো৷ সাথে তানিয়াও ছিলো অবশ্য। রুদ্র এখন দোলাকে নিয়ে বেশ পজেসিভ।
—” রুদ্র অফিসে বসে আছে। কোনো কিছু ভালো লাগছে না। দোলা কথা না বলা পর্যন্ত সে শান্তি পাচ্ছে না৷ এর আগে চাইতো দোলা চুপ থাক তার থেকে দূরে থাক। আর এখন যখন দোলা চুপ হয়ে গেছে তখন রুদ্র খুব করে চাইছে দোলা কথা বলুক তার সাথে। তাকে জ্বালাক আগের মতো। রুদ্র কি করবে বুঝতে পারছে। কি করলে দোলা তার সাথে কথা বলবে। আগের মতো সব স্বাভাবিক হবে। রুদ্র যখনই দোলার আশেপাশে যাওয়ার চেষ্টা করছে তখনই দোলা রুদ্রকে এড়িয়ে চলছে। যার ফলে রুদ্র কিছু বলতে পারছে না। রুদ্র নিজেকে উন্মাদের মতো লাগছে দোলা ছাড়া।
–” তানিয়া আর দোলা বসে আছে রুদ্রর ঘরে। সময়টা বিকেল। দোলা এখন মোটামুটি সুস্থ সব দিক দিয়ে।
–‘ তানিয়া তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে কিছু। সিরিয়াস ভাব নিয়ে এসে বলে দোলা। তানিয়াও দোলার কথায় পুর্ণ আগ্রহ নিয়ে তাকায়।
— আমি সজলের সাথে কথা বলতে চাই আর সেটা একা কোথাও দেখা করে। আমাকে সব কিছু জানতে হবে রত্না চৌধুরীর ব্যপারে।
–” কিন্তু বউমনি এখন তোমার বাড়ি থেকে বের হওয়া ঠিক হবে। তাছাড়া উনি যদি তোমাকে কিছু না বলে?
— আমার মনে হয়না আমি নিরাশ হবো। তাছাড়া আমাকে তো চেষ্টা করতে হবে তানিয়া। এইভাবে বসে থাকলে হবে না। আসল সত্যিটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে দোলা বলে।
–‘ ওকে বউমনি যা করবে সাবধানে। ব্রো যেনো এইসব ভুলেও জানতে না পাই। তাহলে কিন্তু আবার ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় নিবে।
— তুমি চিন্তা করো না৷ তোমার ভাইয়া কিছু জানবে না।আমি খুব সাবধানে এগোবো এবার৷ তার আগে আমাকে সজলের সাথে কথা বলতে হবে। তাই আমরা বাইরে মিট করবো। কালই আমি মিট করবো সজলের সাথে৷ তুমি ওর নাম্বারটা আমাকে সেন্ড করো ওকে। দোলার কথায় তানিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
— কিন্তু কি বলে যাবে বাইরে। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে কলেজের নাম করে চলে যাব সমস্যা হবে না।
– দোলার শেষের কথাটা জেসমিন চৌধুরী শুনে নেন। সে রুদ্রর ঘরেই আসছিলো তানিয়ার কাছে। জানে যে তানিয়া এখন রুদ্রর ঘরে আছে৷ এসে দোলার কথা শুনে নেয়।
–‘ জেসমিন চৌধুরী ঘুরে চলে যায় সেখান থেকে।
–‘ জেসমিন চৌধুরী ঘরে এসে তার ফোনটা হাতে নেয়। এরপর একটা নাম্বারে ডায়াল করে৷ কিছুখন রিং বাজতেই অপরপাশে ফোন রিসিভ করে খুবই গদগদ কন্ঠে বলে আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম। কেমন আছেন? অনেক দিন পর এই অধমের কথা মনে পড়লো তাহলে। লোকটার কথায় জেসমিন চৌধুরী বিরক্ত হয় কিন্তু সেটা আর প্রকাশ করলো না।
-‘ তোমাকে তো সব সময়ই মনে পড়ে শফিক। তুমি ছাড়া আমার কোনো কাজ হয়েছে নাকি কখনো আর না হবে। জেসমিন চৌধুরীর কথায় শফিক হেসে বলে যাক শুনেও ভালো লাগলো৷ তা হঠাৎ আমাকে স্বরণ করার কারণ?
–” আমার কিছু কাজ করে দিতে হবে তোমাকে আবার৷ তাই তোমাকে ফোন দেওয়া। জেসমিন চৌধুরীর কথায় শফিক উচ্চ স্বরে হেসে বলে জানি তো ম্যাডাম কাজ ছাড়া আপনি কখনো আমার কাছে ফোন দিবেন না। ঝটপট বলে ফেলুন কি করতে হবে। এই বান্দা সব সময় হাজির আপনার জন্য।
-‘ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি শফিক ধমকের স্বরে বলে জেসমিন চৌধুরী। শুনো এবারের কাজটাও মন দিয়ে করবে আর সফল আমাদেরই হতে হবে মাথায় থাকে যেনো। টাকা সময় মতো পাঠিয়ে দেব আমি চিন্তা করো না। কিন্তু কাজ আমার হওয়া চাই।
–. এমন কখনো হয়েছে ম্যাডাম আপনি কাজ দিয়েছেন আর আমি সেটা শেষ করিনি?
-‘ ওই জন্য তো তোমাকে আমার এত ভালো লাগে শফিক। যাই হোক শুনো আমি একটা মেয়ের ছবি পাঠাবো৷ এই মেয়েকে সব সময় ফলো করবে তুমি। কবে কোথায় যাচ্ছে, কি করছে সব কিছু আপডেট আমার চাই। যদি একটু নড়চড় হয়েছে তাহলে তোমার সেদিনই শেষ দিন হবে এটা মাথায় রেখো।
— ওকে ম্যাডাম কাজ হয়ে যাবে চিন্তা করবেন না৷ আপনি শুধু ছবি আর টাকা টা সময় মতো দিয়েন তাহলে হবে। রাখছি বলে শফিক ফোন কেটে দেয়। জেসমিন চৌধুরী একটা ডেভিল হাসি দিয়ে আরাম করে বিসানার উপর বসে৷
–‘ শফিক উদ্দিন৷ বয়স এখন প্রায় ৪৫ হবে৷ জেসমিন চৌধুরীর অনেক পুরানো লোক শফিক। জেসমিন চৌধুরী সব কাজ শফিককে দিয়ে করায়।
–” রাতে… দোলা শুয়ে আছে। রুদ্র এখনো ফিরেনি। দোলার মনটা খারাপ হয়ে যায় সজলের সাথে কথা বলার পর থেকে। কারণ সজল একটা কাজের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে আসতে বেশ কিছুদিন লেট হবে। দোলার কাজের সূচনাতেই বাধা৷ অপেক্ষা করতে হবে সজল না আসা পর্যন্ত কি করার৷ কিন্তু রুদ্র এখনো কেনো ফিরলো না দোলা বুঝতে পারছে না৷ দোলা উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে ঘড়ির কাটা ১১টার পার করে গেছে৷ এটা দেখে দোলার ভ্রু আপনাআপনি কুচকে আসে৷ রুদ্রর সাথে কথা না বলায় দোলার ও ভালো লাগছে না৷ কিন্তু অভিমান’রাও ছাড় দিতে ইচ্ছুক না৷ দোলা রুদ্রকে দেখছে আড়ালে৷ রুদ্রর হাবভাব সবই বুঝতে পেরেছে৷ রুদ্র যে তার কাজে অনুতপ্ত তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে এটা দোলা জানে৷ তাই তো দোলা ইচ্ছে করেই রুদ্রকে এভয়েড করে চলছে।
—“” দোলা খায়নি এখনো। কারণ রুদ্র খায়নি এখনো তাই৷ যদিও প্রতিদিন একসাথে খাই সবাই৷ কিন্তু আজ রুদ্র দেরি করে আসায় দোলা পরে খাবে বলে উপরে চলে এসেছে। রুদ্র এখনো কেনো আসছে না এটা নিয়ে দোলা চিন্তায় পরে যায় এবার৷ দোলা কৌতুহল দমাতে না পেরে রাজের কাছে ফোন দেয়৷ একমাত্র রাজই দিতে পারবে রুদ্রর খবর। দুইবার রিং বাজতেই রাজ ফোন রিসিভ করে। দোলার নাম্বার সেভ থাকাই রাজের চিনতে অসুবিধা হয়না দোলাকে.।
–‘ দোলা প্রথমে একটু কৌশল বিনিময় করে আমতাআমতা করে বলে ভাইয়া আপনার বন্ধু কোথায় আছে বলতে পারবেন৷ উনি না এখনো বাড়ি ফিরেনি। উনি কি আপনার সাথেই আছে বেশ সংকোচ নিয়ে বলে দোলা।
– দোলার কথায় রাজ অবাক হয়ে বলে রুদ্র বাড়ি ফিরেনি এখনো৷ রাজের কথায় দোলা শিওর হয় রাজও জানে না রুদ্রর খবর। এবার দোলার মধ্যে ভয় জেকে বসে৷ কিছু হলো না তো রুদ্রর ভেবে দোলা ঘামতে শুরু করে । রাজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে রাত তো ১২ টা বাজে৷ এখনো বাইরে কি করছে ও। আচ্ছা ভাবি চিন্তা করো না আমি দেখছি রুদ্র কোথায় বলে ফোন কেটে দেয় রাজ।
–‘ এইদিকে দোলা অস্থির হয়ে উঠে রুদ্রর জন্য। রুদ্র হঠাৎ গেলো কোথায় কিছুই বুঝতে পারছে৷ মিনিট দশ পর রুদ্র ঘরে প্রবেশ করে ঢুলতে ঢুলতে। দোলা কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে ছিলো মাথা নিচু করে। দরজায় জোরে শব্দ হওয়ায় চমকে উঠে সামনে তাকাতেই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। কারণ রুদ্র আজও ড্রিংক করে এসেছে। দোলার বেশ রাগ হয় রুদ্রকে এইভাবে দেখে।
— রুদ্র ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছে না। এক কদম সামনে আসছে তো আবার দু কদম পিছিয়ে যাচ্ছে। রুদ্র ঘরের মধ্যে এসে সামনে এগুতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় তখনই দোলা ছুটে গিয়ে ধরে ফেলে রুদ্রকে।। রুদ্র মায়াভরা চোখে দোলার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুখন।
–‘ দোলা রাগী লুকে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। কিন্তু রুদ্রর এতে কিছু যায় আসে না।
— রুদ্র দোলার হাত সরিয়ে দেয় ঝ্যাকটা মেরে। এতে দোলা একটু না অনেকটাই অবাক হয়। ছোট ছোট চোখ করে তাকায় রুদ্রর দিকে।
–” ছাড়ো আমাকে৷ ধরবে না একদম৷ দরদ দেখাতে হবে না আমাকে। তুমি যাও না তোমার মতো থাকো। এই দুদিন যেমন আছো। কেনো এসেছো আমার কাছে বাঁধা বাঁধা গলায় বলে রুদ্র কথা গুলো। কিন্তু দোলা রুদ্রর কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝে না। তাই এখনো কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে আছে।
–” রুদ্র খাটের কাছে এসে বসতেই আবার পড়ে যেতে নেয় এবারও দোলা ধরে রুদ্রকে। রুদ্র দোলার হাত ছাড়াতে গেলে দোলা শক্ত করে ধরে থাকে। রুদ্রও করুণ চোখে তাকায় দোলার দিকে৷ কিন্তু দোলার চোখে অভিমান সাথে রাগের রেশ একসাথে জোট বেঁধেছে।
–” আপনি আজো ড্রিংক করেছেন? কেনো করেন এইগুলো?
– রুদ্র দোলার কথার জবাব দেয়না। দোলা আগের চেয়ে দ্বিগুণ রাগী কন্ঠে বলে কি হলো কিছু বলছেন যে? উত্তর দিন কেনো করেছেন এইসব.?
–‘ বেশ করেছি। আমার যা ইচ্ছে হবে তাই করবো৷ তাতে তোমার কি? আমার কোনো কিছুতে তোমার যায় আসে নাকি৷ থাকো না তুমি তোমার মতো। আমার সাথে কথা বলতে আসছো কেনো। রুদ্রর এমন বাচ্চামো কথা শুনে দোলা রাগী লুকটা বেশিখন বজায় রাখতে পারে না৷ ফিক করে হেসে উঠে। দোলার মুখে হাসি দেখে রুদ্র তো অপলক ভাবে তাকিয়ে থেকে দেখে। রুদ্রকে তাকিয়ে থাকতে দেখে দোলা মুখটা আবার গম্ভীর করার চেষ্টা করে।
– হ্যাঁ হ্যাঁ হাসো। তোমার তো এখন হাসি পাবে। আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন তো তোমার হাসি আসবে জানি। হাসো তুমি মন ভরে হাসো। রুদ্র বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলে কথাটা।
–‘ তা কি কষ্ট দিয়েছি আমি আপনাকে শুনি? দোলার কথায় রুদ্র দোলাকে ধরে খাটে বসিয়ে দেয়। রুদ্রর কান্ডে দোলা অবাক হয়ে তাকায়। এরপর রুদ্র ফ্লোরে বসে দোলার দুইহাত মুঠোয় ভরে দোলার হাঁটুর সাথে মাথা ঠেকায়৷ এতে দোলা মৃদু কেঁপে উঠে।
–‘ রুদ্র মাথা উঠিয়ে বলে তুমি আমার সাথে কথা বলছো কেনো? জানো তুমি কথা না বললে আমার একদম ভালো লাগে না এখন। দোলা তো অবাক হয়ে শুনছে রুদ্রর কথা৷ রুদ্র যে এত ভালো করে কথা বলতে পারে দোলার জানা ছিলো না। দোলার মনে হচ্ছে সে একটা ঘোরের মধ্যে আছে৷ ঘোরটা কেটে গেলে সব হারিয়ে যাবে।
–” চলবে……
— ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।