তুমিময় আসক্তি পর্ব-৩৫+৩৬

0
1201

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৩৫”

–” সত্যি আমার সন্তান আসছে। আমার সন্তান আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে। ছোট ছোট পায়ে সারা ঘরময় ছুটে বেড়াবে। আধো আধো কন্ঠে আমাকে মা বলে ডাকবে! কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে দোলা কথা গুলো। তার যেনো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে সে মা হতে চলেছে। দোলার পুরো শরীর মৃদু কাঁপছে। পেটের উপর থেকে দোলা হাত সরাই না। সে যেনো এখনই তার বাচ্চাকে ফিল করতে পারছে। রুদ্র মোহিত চোখে সে সব দেখছে। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে ওইটা আমাদের সন্তান দোলা।
– রুদ্রর কথায় দোলা তেজী কন্ঠে বলে নাহ! ও শুধু আমার সন্তান। আমি ওর পরিচয়। কাউকে লাগবে না আমার ওর জন্য। ওর জন্য ওর মা’ই যথেষ্ট। এমন বাবার প্রয়োজন নেই আমার সোনাটার যার মায়ের প্রতি বিশ্বাস নেই, ভরসা নেই তার বাবার।

–” দোলা প্লিজ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো। আমার ভুল হয়ে গেছে আমি মানছি কিন্তু তুমি কি আমাদের সম্পর্কটা অস্বীকার করতে পারবে। আইন অনুযায়ী তুমি আমার স্ত্রী। তোমার প্রতি আমার অধিকার আছে। দেখো আমি ভুল করেছি এর জন্য আমি অনুতপ্ত ভীষণ। ক্ষমাও চাচ্ছি। আমি এমন ভুল আর দ্বিতীয়বার করব না প্রমিস তাও ফিরে চলো প্লিজ অনুনয় করে বলে রুদ্র। আজ বড় অসহায় লাগছে রুদ্রর নিজেকে।

— কিন্তু দোলা কোনো ভাবেই বুঝতে চাইনা৷ রুদ্র বলা প্রতিটি কথা দোলার চাইলেও ভুলতে পারছে না। তাই রুদ্রকে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না।
– চলে যান আপনি দয়া করে। আমি ফিরতে চাইনা। চাইনা আর মায়া বাড়াতে। আমি হাঁপিয়ে গেছি। এবার আমি মুক্তি চাই। আর যাই হোক আপনার মতো মানুষের সাথে সংসার করা যায় না। এক ছাদের নিচে বসবাস করা যায়। যে মানুষের মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান নেই তার সাথে কখনো একটা মেয়ে থাকতে পারে না। ফিরে যান আপনি চিৎকার করে বলে দোলা।

— অনেক বলেছো দোলা আর নয়। তোমাকে অনেক ভালো ভাবে বুঝিয়ে। ক্ষমাও চেয়েছি কিন্তু তুমি ভালো কথার মেয়ে নও। এত জেদ কিসের তোমার হ্যাঁ? বলছি তো আমি ভুল করেছি তার জন্য আইম সরি। কিন্তু তুমি বুঝতেই চাচ্ছো না। তুমি আমার সাথে যাবে এন্ড এখনই যাবে। তুমি আমার সাথে যেতে বাধ্য বুঝেছো। আমরা লিগেইলি হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফাই। সো আইনি মতে তুমি আমার সাথে থাকবে। নিজেকে শক্ত করে নিয়ে রেগে বলে কথা গুলো রুদ্র।
— আপনি কি আমাকে জোর করে নিয়ে যাবেন? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে দোলা।
– হ্যাঁ দরকার হলে তাই করব! সাবলীল ভাবে বলে রুদ্র। তাছাড়া আমাদের ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকবে। ডিভোর্স হলে যা খুশি করো এই রুদ্রনীল চৌধুরী দেখতেও আসবে না। এখন মানুষ আমার উপর আঙ্গুল তুলুক আমি চাইনা।

— দোলা অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে। ডিভোর্সের কথাটা শুনে দোলার মধ্যে ধক করে উঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, সেই আসল রুপ প্রকাশ পেয়ে গেলো মিস্টার রুদ্রনীল চৌধুরী। আপনার অনুনয়, অনুতপ্ত কোথায় গেলো। ওকে তাই হবে। আপনি চাচ্ছেন যেটা সেটাই হবে। ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত আমি ওই বাড়িতে থাকবো। আপনার সাথেই থাকবো। কিন্তু ডিভোর্স হওয়ার পর আমি এক সেকেন্ডও আপনার সামনে থাকতে চাইনা৷ আপনার মুখো দেখতে চাইনা। আর হ্যাঁ ডিভোর্সের পর আপনি আমার সন্তানের উপর জোর খাটাতেও পারবেন না। ও আমার! শুধু আমার। আপনার মতো একটা মানুষের ছায়া ওর উপর পড়ুক আমি সেটা চাইনা৷ কিন্তু আমি কখনো ক্ষমা করবো না আপনাকে এটা মনে রাখবেন। যত তাড়াতাড়ি পারবেন আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবেন কথাটা বলে দোলা দৌড়ে রুমের মধ্যে চলে আসে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। রুদ্র এখনো ডিভোর্সের কথা বলবে দোলা ভাবিনি।

–‘ আমাকে মাফ করে দিও দোলা। আমার এছাড়া উপায় ছিলো না। তোমাকে হার্ট করার একটু ইচ্ছে ছিলো না আমার। কিন্তু তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে এইসব কথা বলতে হলো। আমি জানি তুমি আবার কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার সব কষ্ট আমি ধুয়ে দেবো আমার ভালবাসা দিয়ে। আমি জানি তুমিও আমাকে ভালবাসো। তাই আমাকে উপেক্ষা করতে কখনোই পারবে না। তোমার অভিমান আমি ভেঙে দিবো। আমাকে শুধু একটু সময় দাও। কথা গুলো মনে মনে বলে রুদ্র।

–“” আমাকে তো ফিরতে হবে ওই বাড়িতে। আমার কাজ শেষ করার জন্য হলেও আমাকে ফিরতে হবে। জেসমিন চৌধুরীকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে, মাকে তার স্থান বুঝিয়ে দিয়ে, সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসব আমি। আমাকে আটকাতে পারবেন না তখন। তাছাড়া আপনি তো চানই না আমি থাকি আপনার সাথে। মানুষের কাছে সম্মানহানি হওয়ার ভয়ে আপনি আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন। সেই ঘুরে ফিরে ডিভোর্সের কথা মনে করিয়ে দিলেন আপনি আবার। আমিও চাইনা আর এই টানাপোড়েনের সম্পর্ক। ভীষণ ক্লান্ত আমি এবার সত্যি আমার বিশ্রামের দরকার ছোট সাহেব। দোলাও বলে মনে মনে কথা গুলো। এরপর ফোন হাতে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। এখনই চলে যাবে সে রুদ্রর সাথে।

–” দোলা রাশেদ মিয়াকে বলে চলে আসে রুদ্রর সাথে। রাশেদ মিয়া দোলাকে থাকার জন্য অনেকবার বলে কিন্তু দোলা তাকে বুঝিয়ে চলে আসে। রুদ্র কোনো কথা বলেনি। কারণ সে জানে দোলা সব কিছু রাগ, অভিমান থেকে করছে। তবে রুদ্র জেসমিন চৌধুরীর উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত। তার জন্য আজ তার আর দোলার সম্পর্কটা এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। জেসমিনকে ছাড়বে না । ভেতর ভেতর প্রতিজ্ঞা করে সে।

— সারা রাস্তা দোলা আর রুদ্র নিশ্চুপ ভাবে এসেছে। দোলা একবারের জন্যও রুদ্রর দিকে তাকায়নি। সারাটা পথ রাস্তার দিকে তাকিয়ে এসেছে। রুদ্র ড্রাইভ করতে করতে অনেকবার দোলার দিকে তাকায়। দোলা মন খারাপ করে বাইরে তাকিয়েছিলো। রুদ্রর অনেক খারাপ লাগে দোলাকে এইভাবে দেখে।

— রুদ্র দোলাকে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে আসতেই তানিয়া ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দোলাকে। কিন্তু দোলা তাতে কোনো রিয়াকশন দেখায় না। জাহির চৌধুরী খুশি হয় দোলাকে দেখে। তানভীর আহমেদ বেজায় খুশি। তার মুখে হাসি যেনো সরে না দোলাকে দেখার পর।
— বউমনি তুমি এসেছো। যাক বাবা মাথা থেকে চিন্তা নামলো। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবেই না। কত দুঃচিন্তায় ছিলাম জানো। এখন কি যে খুশি লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো বলে তানিয়া টাইট করে জড়িয়ে ধরে দোলাকে। কিন্তু দোলার কোনো হেলদোল নেই।
– আমি অনেক খুশি হয়েছি রে মা তুই ফিরে আসায়। সব থেকে বেশি খুশি হয়েছি আমার দাদুভাইয়ের কথা শুনে। আমার দাদুভাই আসছে এই বাড়িতে৷ আমি দাদু হবো। আমাকে দাদুভাই বলে ডেকে উঠবে সারাক্ষণ ভাবতেই আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে রে মা। তুই সত্যি আমার জীবনটা সার্থক করে দিয়েছিস রে মা। আমি তোর কাছে কৃতজ্ঞ! খুশিতে আত্মহারা হয়ে কথা গুলো বলেন জাহির চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী এখনো জানে না দোলা এসেছে৷ রুদ্র যে দোলাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গেছে এটাও জানে না। সবার কথায় ভাঁজ পেয়ে তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এসে দোলাকে দেখে থমকে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রর জেসমিন চৌধুরীকে দেখে হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে। ইচ্ছে করছে এখনই শাস্তি দিতে তাকে।

— রুদ্র এই মেয়েটা আবার এই বাড়িতে কেনো? ওকে কেনো ঢুকতে দিয়েছিস। ও কি করেছে ভুলে গেছিস। এখনই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দে ওই দুঃচরিত্র মেয়েকে।
– শাট আপ পিপি। মুখ সামলে কথা বলো। তুমি ভুলে যাচ্ছো যে তুমি কার সমন্ধে কথা বলছো। দোলা আমার ওয়াইফ। ওকে বাজে কথা বলার অধিকার তোমার নেই। দোলা কি করেছে না করেছে সেটা আমি বুঝব তোমার এই বিষয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। কঠিন ভাবে জবাব দেয় রুদ্র। জেসমিন চৌধুরী এতে ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। এই রুদ্রকে জেসমিন চৌধুরী আগে দেখেনি। দোলাও অবাক হয় রুদ্রর কথায়৷ জেসমিন চৌধুরীর সাথে রুদ্র এইভাবে কথা বলছে দোলা যেনো বিশ্বাসী করতে পারছে না। তানভীর আহমেদ অনেক খুশি রুদ্রর কথায়। জাহির চৌধুরীও জেসমিনের কথায় রেগে যায়। রুদ্রর কথায় তিনি স্বস্তি পায়।
— কিন্তু রুদ্র বাবা.. বাকিটা বলার আগেই জাহির চৌধুরী ধমকে থামিয়ে দেয় জেসমিন চৌধুরীকে। জেসমিন চৌধুরী আর কিছু বলার সাহস পায়না।
–‘ উপস্থিত সবাইকে একটা কথা জানিয়ে রাখি।।দোলার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যে ছবি গুলো পাঠানো হয়েছে সে গুলো সব মিথ্যা। কেউ ইচ্ছে করে আমার আর দোলার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার জন্য করেছে। আমি সেটা বুঝতে না পেরে দোলাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিই। তার জন্য আমি সরি। সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি সাথে দোলার কাছেও। আমি অন্যায় করেছি ভুল করেছি আমাকে মাফ করে দিও। দোলা রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে এখনো। রুদ্রর অভিনয় করছে নাকি সত্যি বলছে বুঝতে পারছে না দোলা। কিন্তু রুদ্রর বলা ডিভোর্স কথাটা তো মিথ্যা নয়। তাই দোলা আনমনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।

–” তবে যে এই কাজটা করেছে তাকে আমি শাস্তি দেবো। কঠিন শাস্তি দেবো। জেসমিন চৌধুরী ভয়ে ঢোক গিলে রুদ্রর কথা শুনে৷ মুখটা শুকিয়ে ছোট হয়ে আসে। ঘামতে শুরু করে। তানভীর আহমেদ জেসমিন চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসেন।
— কে.কে করেছে এইটা রুদ্র জানতে পেরেছিস কৌতুহল নিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে জেসমিন চৌধুরী। রুদ্র জেসমিন চৌধুরীর দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে বলে না পিপি এখনো পায়নি৷ তবে খুব শীগ্রই পেয়ে যাবো। রুদ্র কথা শুনে জেসমিন চৌধুরী যেনো নিস্তার পাই। ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওহ বলে থেমে যায়।

— বউমনি জানো আমার নাচতে ইচ্ছে করছে। যখন থেকে শুনেছি আমি পিপি হবো আমার মধ্যে কি যে অনুভূতি হচ্ছে আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না। আমি তো মনে মনে আমার পুচু সোনাকে কল্পনাও করে ফেলেছি। কেমন হবে দেখতে, ও আসার পর আমার সাথে কি কি করবে। আমি তো অনেক অনেক আদর করবো সাথে দুই গাল ধরে চটকাবো। বেবিদের গাল কত সফট হয় বলো? তানিয়ার কথায় উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠে। দোলা মুচকি হেসে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। কিন্তু জেসমিন চৌধুরী যেনো বিশাল বড় একটা শক পেয়েছেন। আনএক্সপেক্টেড কন্ঠে বলে পুচু মানে? তানিয়া কি বলছিস এই সব৷ এই বাড়িতে বাচ্চা আসবে কোথায় থেকে?

— কেনো আমাদের দোলা আর রুদ্রর বেবি। তুমি জানো না দোলা মা হতে চলেছে? তানভীর আহমেদ ব্যঙ্গ করে বলে জেসমিন চৌধুরীকে। তানভীর আহমেদের মুখে কথাটা শুনে জেসমিন চৌধুরীর যেনো পায়ের তলে মাটি সরে যায়। তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। দোলা মা হবে অথচ সে জানেই না৷ জেসমিন চৌধুরীর নিজের উপর রাগ হচ্ছে এখন।
–“” আবার একটা ঝামেলা, আরও একটা অংশীদার। আমি তো এই বাড়িতে কোনো বেবি আসতে দেবো না। সব হাতের মুঠোয় এসেও বেরিয়ে যাচ্ছে। এই দোলা এসে আমার সব তছনছ করে দিলো। এবার ওকে আর ছাড়বো না। জানে মে*রে দেবো একদম। এরপর জেসমিন চৌধুরী আর দাঁড়ায় না। সোজা তার ঘরে চলে যায়। তারপর সবাই একে একে যে যার ঘরে যায়। রাত অনেক হওয়ায় সবাই ঘুমাতে যায়। রুদ্র দোলার জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু দোলা সেটা খাইনি। দোলাকে এখন জোর দিয়েও কোনো লাভ হবে না রুদ্র জানে৷ তাই আর কিছু বলেও নিই।

–‘ পরেরদিন থেকে যথা নিয়মে সব কিছু চলতে থাকে আবার৷ শুধু রুদ্রর সাথে কথাটা হয়না দোলার। রুদ্র অনেকবার চেষ্টা করে কথা বলার জন্য কিন্তু দোলা বার বার এড়িয়ে যায়। দোলা কোনো ভাবে চাইনা রুদ্রর সাথে কথা বলতে। রুদ্র ঘরে আসলে দোলা বেরিয়ে যায়। রাতে রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। রুদ্র বুঝতে পারে না কি করবে কিভাবে দোলাকে মানাবে। রুদ্র দোলার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছে না। প্রতিটি মুহূর্তে ছটফট করছে দোলার সাথে কথা বলার জন্য। দোলার মুখ থেকে একটা কথা শোনার জন্য। আর সবার সাথে দোলা বেশ স্বাভাবিক হাসিখুশি। কিন্তু রুদ্রর সাথে তার কোনো লেনাদেনা নেই যেনো।

— রুদ্র জেসমিন চৌধুরীর উপর সব সময় নজর রাখার জন্য তার ঘরে ক্যামেরা সেট করে গোপনে৷ রুদ্র দোলাকে নিয়েও ভয়ে আছে৷ না জানি কখন কি ক্ষতি করে বসে দোলার৷ দোলার মা হওয়ার কথাটা শুনে জেসমিন চৌধুরী যে একটু খুশি হয়নি রুদ্র জানে। যদি তার বেবির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে তখন কি হবে। তাই রুদ্র জেসমিন চৌধুরী এবং তার নিজের ঘরে ক্যামেরা রাখেন৷ যাতে অফিসে থাকলেও জেসমিন চৌধুরীর উপর নজর রাখতে পারে সাথে দোলাকে দেখতে পাই সব সময়।

— দোলা সজলের বাড়ি যাবে বলে ঠিক করে। সজলের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করবে দোলা। নাহলে কোনো উপায় দেখছে না। যতদিন যাচ্ছে জেসমিন চৌধুরী ভয়ংকর হয়ে উঠছে সাথে তার শাস্তির দিন কমে আসছে। এত এত অপরাধ করেও সাচ্ছন্দ্য জীবন পার করছে। সবার জীবন দুর্বিষহ করে দিয়ে সে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করছে। আর বাকি মানুষ গুলো গুমরে মরছে ভেতর ভেতর।

— দোলা কি বলে বাইরে যাবে বুঝতে পারছে না। কলেজে যাওয়ার নাম করে বের হলে তো তানিয়াও যাবে সাথে। কিন্তু দোলা চাচ্ছে না তানিয়াকে সাথে নিতে। তানিয়া আবার নতুন করে কষ্ট পাবে দোলা চাইনা।
“””” দোলা মনে মনে ঠিক করে সে ওই বাড়ি যাওয়ার কথা বলে যাবে ( বাবার বাড়ি)। নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে জাহির চৌধুরী সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দোলাকে দেখে জাহির চৌধুরী মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেয়৷ বিপরীতে দোলাও মুচকি হাসে৷

-‘ কিছু কি বলবি দোলা মা? জাহির চৌধুরীর প্রশ্নে দোলা আমতাআমতা করে বলে আসলে বাবা আমি একটু বাবার কাছে যেতে চাই। যাব দেখা করে চলে আসব। একদম দেরি করবো না। বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে৷ সেদিন গিয়ে ওইভাবে চলে আসলাম বাবার হয়তো মন খারাপ হয়েছে। খুবই সাবলীল ভাবে বলার চেষ্টা করে কথা গুলো দোলা। যাতে জাহির চৌধুরীর একটু সন্দেহ না হয়। জাহির চৌধুরী দোলার কথায় মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে এতে এতো সংকোচের কি আছে রে পাগলী। তুই তোর বাবার বাড়ি যাবি তার জন্য আমার পারমিশন লাগবে কেনো? আচ্ছা যা বিকালের দিকে আসিস এই বেলাটা থেকে। জাহির চৌধুরীর কথায় দোলা অত্যন্ত খুশি হয়। দোলা মনে মনে স্থীর করে সজলের বাড়ি থেকে সত্যি ওই বাড়িতে যাবে তার বাবার সাথে দেখা করতে৷ সেদিন আসার পর দোলার আর কথা হয়নি তার বাবার সাথে।

–” দোলা রেডি হয়ে বের হয়ে যায়। সজলকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সে আসছে তার বাড়িতে। রত্না চৌধুরীর সাথে কথা বলতে হবে দোলাকে৷ কারণ এবার সব কাজ তো রত্না চৌধুরীকেই করতে হবে।

— রুদ্র মন খারাপ করে বসে আছে। দোলা কোনো ভাবেই রুদ্রকে কথার বলার সুযোগ দিচ্ছে না। রুদ্র কিছু বললে তার জবাব ও দেয় না। রুদ্রবই খুবই আপসেট এইসবে। রুদ্র রাজকে আসতে বলেছে৷ কি করবে সে একা বুঝতে পারছে না। তাই রাজের থেকে বুদ্ধি নেবে। যদি কোনো আইডিয়া দিতে পারে রাজ।

–‘ রুদ্র ভাবনার মাঝে রাজ এসে উপস্থিত হয়।।রাজকে দেখে রুদ্র একটা করুণ লুক নিয়ে তাকায়৷ রুদ্রকে দেখে রাজের হাসি পাচ্ছে ভীষণ ৷
–‘ কি রে এমন দেবদাস লুক নিয়ে আছিস কেনো। ছ্যাকা খেয়েছিস নাকি আবার চেয়ারে বসতে বসতে বলে রাজ। রাজের কথায় রুদ্র একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ভাব তেমনই রে ভাই। একটা ভুল করেছি তার শাস্তি দোলা আমাকে প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে।
রুদ্রর কথায় রাজের ভ্রু কুচকে আসে৷ রাজ এইসবের কিছু জানেই না। তাই কৌতুহল নিয়ে বলে আবার কি করেছিস৷ এই ওয়েট তুই ভাবিকে প্রপোজ করিস নাই। ভাবি কি তোকে রিজেক্ট করে দিয়েছে ভাবান্তর হয়ে বলে রাজ।
— রুদ্র আহত চোখে তাকায় রাজের দিকে৷ এতে রাজ বিরক্ত নিয়ে বলে কি হয়েছে সেটা তো বল?
— এরপর রুদ্র ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একে একে খুলে বলে। সব শোনার পর রাজের ও রাগ হয় রুদ্রর উপর। রুদ্র জেসমিন চৌধুরীর কথাসহ বলে রাজকে। রাজ তো বিশ্বাসী করতে পারছে না জেসমিন চৌধুরী এমন একটা কাজ করতে পারে।

— কি করবি এখন তাহলে ? দোলা তো অনেক অভিমান করে আছে তোর উপর বুঝতে পারছি। এখন এই অভিমান ভাঙাবি কি করে?
– আমি জানি না দোস্ত। এই জন্য তোকে ডাকা।।প্লিজ তুই একটা উপায় বল আমাকে। আমি আর পারছি না এইভাবে থাকতে৷ দোলা কথা না বললে আমার ভালো লাগে না৷ দম বন্ধ হয়ে আসে৷ আমি অনেক চেষ্টা করছি ওর সাথে কথা বলার৷ ওকে বুঝানোর কিন্তু আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

-‘ রাজ গালে হাত রেখে বলে ভাবতে দে বন্ধু। যে জটিল সমস্যা বাধিয়েছো এত সহজে কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে দোলা ভাবি তোকে ভালোবাসে আমি এটা শিওর। আচ্ছা শুন ভাবিকে নিয়ে বাইরে গেলে কেমন হয়। কোথাও ঘুরে আয় ক’দিনের জন্য। ওইখানে ভাবিকে তোর মনের কথাটাও বলে দিবি৷ সব মান অভিমান মিটিয়ে নিবি।

— হবে না রে এইভাবে৷ দোলা এখন কোথাও যাবে না আমার সাথে। আমি ওকে ডিভোর্সের কথা বলে নিয়ে এসেছি৷ অনেকটা খেপে আছে আমার উপর। কি করবো কিছু মাথায়া আসছে না বলে চুল টেনে ধরে রুদ্র।

— আচ্ছা ভাবি তোর থেকে এখন ডিভোর্স চাই তাই না? প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে রাজ৷ রুদ্র মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললে রাজ মুচকি হেসে বলে একটা কাজ কর। এরপর রাজ রুদ্রকে একটা আইডিয়া দেয়। যেটা রুদ্রর ভীষণ ভালো লাগে। রুদ্র উঠে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরে।

— আমি জানতাম তোকে ডাকলে একটা না একটা উপায় ঠিক পাবো৷ থ্যাংকস ইয়ার৷ এবার দেখবো দোলা বেবি তুমি কি করে ডিভোর্স চাও এরপর রাজ আর রুদ্র একসাথে একটা হাসি দেয়।

চলবে….

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৩৬”

–“‘ রত্না চৌধুরীর সাথে বসে আছে দোলা আর সজল। রত্না চৌধুরী ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। সে কোনো ভাবেই জেসমিন চৌধুরীর সামনে যেতে রাজি নয়। জেসমিন চৌধুরীর ভয়ংকর রুপের কথা মনে পড়লে রত্না চৌধুরীর গায়ে কাটা দিয়ে উঠে বারবার। দোলা আর সজল হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে রত্না চৌধুরীর দিকে।

–” দেখুন মা! আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই এই ছাড়া। তাছাড়া আপনি ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমরা তো থাকবো সেখানে৷ জেসমিন চৌধুরী আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
– না না বউমা। আমি পারবো না ওর সামনে দাঁড়াতে। ও আমার ক্ষতি করতে না পারলেও আমার রুদ্রর ক্ষতি করবে। আমি চাইনা আমার জন্য আমার সন্তানের ক্ষতি হোক। আমার সন্তানের কথা ভেবে আজ এতটা বছর আমি দূরে সরে আছি শুধুমাত্র আমার ছেলে আর স্বামীকে ভালো রাখার জন্য। আমি চাইনা এতদিন পরে এসে আমার জন্য ওদের কিছু হোক। জেসমিন চৌধুরী খুবই খারাপ মানুষ। ও পারে না এমন কাজ নেই কথাটা বলে রত্না চৌধুরী কেঁদে উঠেন।
– তাছাড়া ও যদি একবার জানতে পারে এইসবের পেছনে তুমিও আছো তাহলে তোমারও ক্ষতি করে দিবে মা। আমি আর কারো ক্ষতি চাইনা। আমাকে মাফ করে দাও হাত জোড় করে হবে রত্না চৌধুরী।
দোলা আহত চোখে তাকায় রত্না চৌধুরীর দিকে। সজল নিরাশ হয়। রত্না চৌধুরী যে ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছেন বুঝতে পারছে৷ কিন্তু এটা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই জেসমিন চৌধুরীর পর্দা ফাঁস করার।

–‘ সজল রত্না চৌধুরীর কাছে গিয়ে দুটো হাত শক্ত করে ধরে বলে! মনিমা। তোমার কি আমার উপর বিশ্বাস নেই। ভরসা নেই আমাদের উপর। তোমার মনে হয় আমরা থাকতে তোমার স্বামী সন্তানের ক্ষতি হতে দেবো? ওই জেসমিন চৌধুরী আর যাতে কারো ক্ষতি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করছি আমরা। এর জন্য আমাদের তোমার সাহায্য লাগবে। তুমি ছাড়া সে কাজটা সম্পুর্ণ করা সম্ভব নয়৷ একটু বোঝার চেষ্টা করো। আচ্ছা একটা কথা বলো। জেসমিন চৌধুরী তোমার স্বামী সন্তানের কখনো যে ক্ষতি করবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে। এই যে দোলাকে দেখো। তাকে সরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ওই মহিলা। তোমার ছেলেকে সুখে সংসার করতে দিবে না ওই মহিলা। তুমি কি চাও তোমার ছেলের জীবনটাও তোমাদের মতো হোক। রত্না চৌধুরী চমকানো চোখে তাকায় সজলের দিকে৷ এরপর দোলার দিকে তাকায়।
–” দোলা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রত্না চৌধুরীর দিকে।

–‘ দোলা মা কি করেছে তোর সাথে জেসমিন? ও কেনো তোর ক্ষতি করতে চাই? ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে রত্না চৌধুরী।
-‘ এরপর দোলা রত্না চৌধুরীকে সব খুলে বলে। সব শোনার পর রত্না চৌধুরী ভীষণ আপসেট হয়ে যান। সাথে জেসমিনের উপর রাগটাও বৃদ্ধি পায়।

–‘ অনেক হয়েছে৷ আর কোনো সুযোগ দেবো না আমি জেসমিনকে। আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি করতে চাইলে আমি ওকে ছেড়ে কথা বলব না। ওর পাপের ঘড়া পুর্ণ হয়ে এসেছে। এবার ওর শাস্তি পাওয়ার অপেক্ষা। আমি আমাকে নিয়ে কখনোই ভাবিনি। আর ভাবতে চাইও না। জেসমিন কে শাস্তি দেওয়ার জন্য যদি আমাকে জীবনও দিতে হয় তাও আমি প্রস্তুত। তবু আমি ওর শাস্তি চাই৷ ওর মধ্যে আমি ভয় দেখতে চাই। আমাকে কি করতে হবে দোলা বল? আমি সব কিছু করতে রাজী আছি! চোখের পানি মুছে দৃঢ় কন্ঠে বলে রত্না চৌধুরী।

–‘ রত্না চৌধুরীর কথা শুনে সজল আর দোলার মুখে হাসি ফুটে উঠে। দুজনেই স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে দুজনের দিকে তাকায়। এরপর কি কি করতে হবে রত্না চৌধুরীকে বুঝিয়ে বলে দোলা। তারপর দোলা সেখান থেকে বেরিয়ে আসে রাশেদ মিয়ার বাড়ি যাওয়ার জন্য।

–” জেসমিন চৌধুরী ছক কষতে থাকে কিভাবে দোলাকে সরানো যায়। দোলার বাচ্চাকে কোনো ভাবেই সে এই পৃথিবীতে আসতে দেবে না। তার আগেই দোলা আর তার বেবিকে শেষ করে দিবে।

— দোলা বিকালের দিকে বাড়ি ফিরে আসে। রুদ্র অনেক আগে অফিস থেকে চলে এসেছে। এসে দোলাকে না দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যায়। অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছিলো। জাহির চৌধুরী আশ্বস্ত করেন দোলা বাপের বাড়ি গেছে বলে। তবু রুদ্র স্বস্তি পায়না৷ তাই রোকনের কাছে ফোন দিয়ে শুনে দোলা ঠিক আছে নাকি৷ ওইখানে পৌছায়ছে নাকি। রোকন জানায় দোলা ভালো আছে আর ঠিক আছে তখন যেনো রুদ্র তার মধ্যে প্রাণ ফিরে পায় এমন। এরপর গাড়ি পাঠিয়ে দেয় সাথে সাথে দোলাকে নিয়ে আসার জন্য। রুদ্র নিজে যেতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু দোলা রিয়াক্ট করতে পারে ভেবে আর সে যায় না।

–” রুদ্র তার রুমে শুয়ে আছে৷ দোলা বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকতেই রুদ্রকে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সাথে তার ভ্রু কুচকে আসে৷ রুদ্র এই সময় কখনো বাড়ি আসে না৷ আজ হঠাৎ বাড়িতে তাও এসে শুয়ে আছে ভেবে দোলার মধ্যে সংশয় কাজ করে রুদ্র ঠিক আছে তো এটা ভেবে। দোলা রুদ্রর দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে ফ্রেশ হতে যায়। রুদ্র সবই দেখছিলো দোলার আড়ালে। দোলা যখন রুমে আসে তখনই রুদ্র বুঝতে পেরেছিলো। তারপর ও সে দোলাকে না দেখার ভান করে ছিলো। দোলা ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তানিয়ার সাথে তার কথা আছে অনেক। তাই তানিয়ার ঘরের দিকে যায়। একটু পর সন্ধ্যা নেমে আসবে৷ তখন সবার জন্য নাস্তা করতে হবে। যদিও জাহির চৌধুরীর কড়া নির্দেশ দোলা কোনো কাজে হাত দিবে না এখন থেকে আর। কিন্তু দোলা তো চুপ করে বসে থাকার মেয়ে নয়। আবার কাজ না করলেও তার ভালো লাগে না। তাই জাহির চৌধুরীকে বলে সকালে আর সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করার দায়িত্বটা নেয়। জাহির চৌধুরী দোলার আবদার ফেলতে পারেনি৷ দোলা যদি এইসবে ভালো থাকে তো তাই হোক।

–‘ দোলা তানিয়াকে সবটা খুলে বলে তাদের প্ল্যানের কথা। সব শুনে তানিয়া স্তব্ধ হয়ে থাকে কিছুখন। তার মা এত জঘন্য খারাপ মানুষ সেও চাইনা তার মাকে ক্ষমা করতে। এত গুলো মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে আরো যে করবে না তার গ্যারান্টি নেই। সে অলরেডি দোলার ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তানিয়া দোলাকে বলে তাদের যা ইচ্ছে করতে। এতে তার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ থাকবে না। তার মা যা করেছে তাতে শাস্তি তার যোগ্য। তানিয়ার মনের মধ্যে খারাপ লাগছে অনেক। তারপর নিজেকে শক্ত রাখতে চাই। কোনো স্বার্থপর মানুষের জন্য তানিয়া কষ্ট পেতে চাই না। হোক না সে তার মা। কিন্তু অপরাধী সব সময় অপরাধীই হয়।

-তানিয়ার কথায় দোলা খুশি হয়। দোলা জানত তানিয়ার কখনো দ্বিমত থাকবে না এই বিষয়ে। তারপর মা তো। কষ্ট একটু হবে স্বাভাবিক।

–” রাতে সবাই খাবার খাই একসাথে। জেসমিন চৌধুরী বারবার দোলার দিকে তাকাচ্ছে৷ রুদ্র আসেনি এখনো। দোলা খেতে বসে বারবার উপরের দিকে তাকায়৷ রুদ্র না আসায় দোলা একটু অবাকই হয়৷ এসে পর্যন্ত রুদ্র ঘর থেকে বের হয়নি। সন্ধ্যার নাস্তা তার ঘরে পাঠানো হয়েছিলো সার্ভেন্ট দিয়ে। খেয়েছে কিনা তাও জানে না দোলা। কারণ সে তো আর ঘরে যায়নি।

–” কি ব্যাপার রুদ্র এখনো আসছে না কেনো? দোলা মা রুদ্র কি ঘরে নেই? জাহির চৌধুরী প্রশ্ন করে। জাহির চৌধুরীর কথায় দোলা চমকে উঠে বলে হ্যাঁ বাবা। উনি তো ঘরেই আছেন।

— তাহলে খেতে আসছে না যে। রুদ্র কি ডিনার করবে না?
– কি জানি বাবা৷ আমি তো ঘরে যায়নি আর সন্ধ্যার পর। আচ্ছা আমি দেখছি বলে দোলা উঠতে গেলে তানিয়া থামিয়ে দিয়ে বলে বউমনি তুমি বসো আমি দেখছি। এরপর তানিয়া উঠে যায় রুদ্রকে ডাকতে।
— কিছুখন পর তানিয়া চিন্তিত হয়ে ফিরে আসে। তাকে দেখে ভীষণ অস্থিরও লাগছে।

— মামু ব্রোর তো অনেক জ্বর। সন্ধ্যায় যে নাস্তা দেওয়া হয়েছে সেটাও খাইনি দেখলাম। তানিয়ার কথায় দোলার বুকের মধ্যে ধক করে উপর। চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে কি বলছো তানিয়া৷ উনি তো সকালেও ভালো ছিলেন। অবশ্য আমি বাড়ি আসার পর দেখেছিলাম উনি শুয়ে ছিলেন৷ ভেবেছিলাম হয়তো ক্লান্ত তাই রেস্ট করছেন।

–‘ জ্বর কি অনেক বেশি তানু? জাহির চৌধুরী উৎসুক কন্ঠে বলেন।
— হ্যাঁ মামু অনেক জ্বর দেখলাম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
– দোলার খুব খারাপ লাগছে এখন রুদ্রর জন্য। একটা বারের খোঁজও নেয়নি মানুষটার। রুদ্র তো কখনো এমন করে না। আজ দোলার একটু বোঝা উচিত ছিলো। নিজের উপর রাগ হয় দোলার। খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সবারই খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়৷ জেসমিন চৌধুরী যেনো তামাশা দেখছেন সবার এমন ভাব।।তিনি বেশ সাদরে খেয়ে যাচ্ছেন।

— আমি ডক্টরকে কল করছি৷ চিন্তা করবেন। ডক্টর দেখে ওসুধ দিলে রুদ্র সুস্থ হয়ে যাবে তানভীর আহমেদ বলে জাহির চৌধুরীকে।
– দোলা ছুটে রুমে আসে। রুদ্র এক হাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। গায়ের উপর চাদরটা কোমড় পর্যন্ত টানা।
– দোলা রুদ্র মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড। এরপর আস্তে আস্তে রুদ্রর কাছে এগিয়ে যায়। পাশে টেবিলেই নাস্তার ট্রে পড়ে আছে। একটুও খাবার মুখে তুলেনি রুদ্র৷

-” দোলা রুদ্রর কপালে হাত রাখলে রুদ্র চোখ খুলে তাকায়। দোলাকে দেখে চোখ নামিয়ে নেয়।
— এতটা জ্বর কিভাবে আসলো। একবার বলতে তো পারতেন কাউকে?
– কাকে বলব? সাথে সাথে জবাব দেয় রুদ্র। রুদ্রর কথায় দোলা ব্যথিত চোখে তাকায়। এরপর জ্বরের ওসুধ খুঁজতে থাকে।
— আমার জন্য কাউকে ব্যস্ত হতে হবে না৷ আর চিন্তা করতে হবে রুদ্রনীল চৌধুরী এতটাও দুর্বল নয় যে সামান্য জ্বরে তাকে কিছু করতে পারবে৷ তুমি যাও তোমার কাজ করো৷ আমার জন্য তোমার না ভাবলেও চলবে দোলাকে উদ্দেশ্য করে বলে রুদ্র৷ দোলা থেমে যায়। রুদ্রর যে অভিমান হয়েছে দোলা জানে। তবে দোলারও খারাপ লাগছে রুদ্রর শরীর খারাপ দেখে৷ হঠাৎ করে রুদ্রর শরীর খারাপ হবে ভাবতে পারিনি দোলা।

— রুদ্রর জ্বরটা হুট করে আসে৷ রুদ্র অফিসে কাজ করা সময় শরীরটা খারাপ করতে ছিলো তার। এরপর রুদ্রর শরীরের উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। রুদ্র থাকতে না পেরে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর যখন দোলা একটি বারের জন্য ঘরে আসেনা তখন রুদ্রর রাগ হয়। রুদ্র ভেবেছিলো তাকে শুয়ে থাকতে দেখে দোলা হয়তো কিছু বলবে বা তার উপর নজর রাখবে। কিন্তু দোলা তার অভিমানে এতটা আবদ্ধ হয়ে আছে যে রুদ্রর দিকে খেয়াল রাখার সময় তার নেই।

— রুদ্রর কথায় দোলা কিছু না বলে আবার ওসুধ খুঁজতে থাকে ওসুধের বক্সে। ওসুধ পেয়ে গেলে দোলা নিচে যায় রুদ্রর জন্য খাবার নিয়ে আসতে। খালি পেটে ওসুধ খাওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া রুদ্র এসে পর্যন্ত কিছু খাইও নি। তাই দোলা খাবার নিয়ে আসতে যায় রুদ্র। দোলাকে রুম থেকে বের হতে দেখে রুদ্র একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এরপর সে পাশ ফিরে শোই।

— বউমনি ঘরে জ্বরের ওসুধ থাকলে ব্রোকে খাওয়াই৷ ডক্টর একটু পর আসবেন বলেছে। দোলা মাথা ঝাকিয়ে রুদ্রর জন্য খাবার বাড়তে থাকে।

–‘ দোলা খাবার এনে দেখে রুদ্র পাশ দিরে শুয়ে আছে৷ খাবারটা টেবিলে রেখে রুদ্রকে খেয়ে নিতে বলে। কিন্তু রুদ্রর কোনো হেলদোল নেই দোলার কথাতে। দোলা আশাহত হয় এতে৷ তারপর রুদ্রকে হাত ধরে টেনে উঠায়৷ রুদ্র এখন বেশ ভালোই লাগছে দোলার কেয়ার গুলো দেরিতে হোক তাও তো সে রুদ্রর কেয়ার করছে। তাছাড়া রুদ্রকে দোলা যে ভালোবাসে না এমন তো না।।অভিমানের জন্য দূরে দূরে থাকে৷ কিন্তু মনটা তো রুদ্রতেই পড়ে থাকে দোলার।

— দেখুন একদম ন্যাকামি করবেন না। চুপচাপ খাবারটা শেষ করে ওসুধ খেয়ে নিবেন। দোলার শান্ত হুমকিতে রুদ্র ভ্রু কুচকে আসে। কৌতুহলী কন্ঠে বলে তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো। যদি না খাই তাহলে কি করবে শুনি? রুদ্রর কথায় দোলা ঘাবড়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ দোলা আর কথা না বাড়িয়ে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে নিজে রুদ্রকে খাওয়াতে শুরু করে। এক লোকমা ভাত রুদ্রর সামনে ধরলে রুদ্র মোহিত নয়নে দোলার দিকে তাকায়। রুদ্রর মধ্যে কি পরিমাণ ভালো লাগা কাজ করছে তা প্রকাশ করার মতো না৷ রুদ্রর বেশ ভালোই লাগছে দোলাকে তার জন্য চিন্তিত দেখতে। দোলা ভাত সামনে নিয়ে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে রুদ্রর মুখের দিকে। এরপর দোলা ইশারা করলে রুদ্র দোলার হাত থেকে খাবারটা খেয়ে নেয়।

*- আমি জানি তুমি যতই রাগ অভিমান দেখাও না কেনো৷ আমার জন্য তোমার চিন্তা হয়। আমাকে নিয়ে তুমি ভাবো। উপর উপর রাগ দেখালেও ভেতরে তো আমি আছি তোমার। তাহলে কেনো উপরের অভিমানটা জমিয়ে রেখেছো। ক্ষমা কেনো করছো না দোলা। আমি যে সত্যি অসুস্থ তোমার অবহেলার কাছে৷ তোমার অভিমানের কাছে আমি অসহায়। প্লিজ মাফ করে দাওনা৷ সব ভুলে চলো না নতুন করে শুরু করি আমরা৷ কিন্তু রুদ্র কথা গুলো দোলার সামনে বলতে পারে না৷ মনে মনে বলে কথা গুলো। রুদ্রকে খাওয়ানো শেষ হলে দোলা ওসুধ খায়ে দিয়ে নিচে যায়। রুদ্রর এখন অনেকটা ভালো লাগছে দোলার কেয়ার দেখে।

–‘ রাতে রুদ্রর জ্বরটা বৃদ্ধি পায়৷ ডক্টর এসে দেখে যায় রুদ্রকে। ইঞ্জেকশন দিতে হয় রুদ্রকে। জ্বরটা এত পরিমাণ বেড়েছিলো যে ডক্টর ইঞ্জেকশন দিতে বাধ্য হয়। এরপর ওসুধ দিয়ে যায় রুদ্রর জন্য। ডক্টর জানায় এটা এক ধরনের ভাইরাস জ্বর৷ যেটা হুট করে হয়ে থাকে৷ চিন্তার কোনো কারণ নেই৷ দুদিন রেস্ট নিলে আর ঠিক মতো ওসুধ খেলে রুদ্র সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর দোলা সারারাত বসে পানিপট্টি দিয়েছে রুদ্রকে৷ জ্বরের প্রকোপ এত ছিলো যে দোলা পানিপট্টি না দিয়ে থাকতে পারে না৷ তানিয়াও ছিলো দোলার সাথে। ভোর রাতে সে তার ঘরে চলে যায়। রুদ্রর জ্বরটা নেমে গেলে তানিয়াকে ঘরে পাঠিয়ে দেয় দোলা। আগেই যেতে বলেছিলো। কিন্তু তানিয়া যায়নি রুদ্রর জন্য তারও অনেক চিন্তা হতে ছিলো৷ পরে দোলা আর জোর করেনি৷ রুদ্র জ্বরের ঘোরেও অনেকবার মাফ চাই দোলার কাছে৷ যদিও সেটা জ্ঞ্যানে বলেনি রুদ্র৷ তারপরও সে তার কাজে অনুতপ্ত। তাই জ্বরের ঘোরেও দোলার কাছে সে ক্ষমা চাই। রুদ্রর কথা গুলো শুনে দোলার অনেক খারাপ লেগেছিলো৷ অনেক কষ্টও হচ্ছিলো। তারপরও রুদ্রকে ক্ষমা করতে কোথাও একটা সংশয় থেকে যায় তার।

-” পরের দিন সকালে দোলা ঘুম থেকে উঠে রুদ্রর কপালে হাত রাখতে খুশি হয়। কারণ রুদ্রর জ্বরটা এখন একদম নেই। দোলা রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় রুদ্রর চোখের পাতা গুলো নড়ে নড়ে উঠছে৷ ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গেছে অনেক। জ্বরের জন্য হয়েছে এমনটা দোলা বুঝতে পারছে। মুখটা মলিন হয়ে আছে৷

— রুদ্রনীল চৌধুরী দুর্বল নয়৷ তাকে জ্বরে কিছু করতে পারবে না। একদিনের জ্বরে তো মুখের দিকের তাকানোর মতো অবস্থা নেই৷ আর ভাব! উনার বড় মানুষী কখনো যাবে বলে দোলা একটা ভেংচি কাটে।

– কি বললে তুমি! আমি বড় মানষী দেখায়। আমি ভাব নিই। হঠাৎ রুদ্র কথায় দোলা চমকে উঠে রুদ্রর দিকে তাকায়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে এই রে উনি কি জেগে ছিলেন নাকি। সবটা শুনে নিয়েছে তার মানে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে দোলা। রুদ্র উঠে বসে বলে! কি বলছিলে যেনো? আরেকবার বলো। দোলা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে, ক..কই কি বলছিলাম। দেখছিলাম আপনার জ্বর আছে কি-না। আমি যায় বলে দোলা তাড়াহুড়ো করে খাট থেকে নামতে গিয়ে বাধে আরেক বিপত্তি। ওড়নার সাথে পা বেধে পড়ে যেতে নিলে রুদ্র শক্ত করে ধরে ফেলে দোলা বলে চিৎকার করে উঠে। দোলা তো অনেক ভয় পেয়ে যায় পড়ে যাওয়াতে। দোলার শরীর কাঁপছে ভয়ে। এমন ভাবে পড়তে যাচ্ছিলো যে পড়লে দোলা পেটে আঘাত পেতো।
– কি করছিলে? এখুনি তো একটা অঘটন ঘটাতে যাচ্ছিলে। এত তাড়াহুড়ো কিসের তোমার। যদি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো ভাবতে পারছো। দোলাকে ধরে সোজা করে বসিয়ে বলে কথা গুলো রুদ্র৷ রুদ্রও অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। দোলা কান্না করে তার পেটে হাত দেয়৷ রুদ্র ক্লান্ত চোখে দোলার দিকে তাকায়।
– দোলা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। কারণ সে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছে৷ যদি পড়ে যেতে তাহলে তার বেবির কি হতো ভাবতেই শিউরে ওঠে দোলা।

— কেঁদো না দোলা। দেখো কিছু হয়নি৷ সব ঠিক আছে । প্লিজ কেঁদোনা এইভাবে। রুদ্রর কথায় দোলা নিজেকে ধরে রাখতে পারে না৷ রুদ্রর বুকে মাথা রেখে একহাতে রুদ্রর শার্ট খামচে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠে। রুদ্রর দোলার মাথায় হাত রেখে দোলাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

– পড়ে গেলে আমার বেবি কি হতো। ওর যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। ওকে ছাড়া আমিও বাঁচতাম না। যদি সত্যি কোনো অঘটন ঘটতো তাহলে কি হতো?

– আহ দোলা৷ এইসব কেনো ভাবছো তুমি? কিছু তো হয়নি৷ তুমি এবং বেবি দুজনেই ঠিক আছো। আমি থাকতে তোমাদের কিছু হতে দেবো না প্রমিস। কেঁদো না প্লিজ। রুদ্রর খুব খারাপ লাগছে৷ একটু আগে যেটা হতে যাচ্ছিলো ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে রুদ্ররও।
— এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবে। এখন তুমি একা নও দোলা৷ তোমার মধ্যে আরেকটা প্রাণ আছে বুঝতে হবে। তাই যা করবে সাবধানে বুঝেছো? রুদ্রর কথায় দোলা বাচ্চাদের মতো ফেস করে মাথা ঝাকায়৷ এতে রুদ্র মুচকি হাসে৷ দোলার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে কি বাচ্চাদের মতো কান্না করো সব সময় বলো তো। তুমি নাকি মা হতে যাচ্ছো৷ যে নিজেই বাচ্চাদের মতো যখন তখন কেঁদে উঠে সে নাকি আরেকটা বাচ্চা সামলাবে? দোলাকে রাগানোর জন্য বলে রুদ্র। দোলা ঠোঁট উল্টিয়ে গাল ফুলিয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে৷ এতে রুদ্র উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। দোলার মুখে হাসি ফুটে রুদ্রর হাসিতে। পরোক্ষে দোলার মনে পড়ে যায় সে এতখন কি করেছে৷ রুদ্রকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে৷ আবার কাছে চলে যাচ্ছে। রুদ্রর প্রতি সে আবারও আসক্ত হয়ে যাচ্ছে৷ দোলা খাট থেকে নেমে দাঁড়ায় এরপর দ্রুত পায়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। দোলার এহেন কান্ডে রুদ্র অবাক হয়। কৌতুহলে ভরা লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
চলবে।