তুমিময় আসক্তি পর্ব-৩৭+৩৮

0
1171

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৩৭”

-” সকালের নাস্তা করে তানিয়া আর দোলা ড্রয়িং রুমে বসে আছে৷ সাথে আছেন তানভীর আহমেদ এবং জাহির চৌধুরী। তারা দুজন গল্প করছে। এইদিকে দোলা আর তানিয়া তাদের মতো কথা বলছে। এর মাঝে চার-পাঁচজন মানুষ এসে হাজির হয়। লোকগুলিকে দেখে সবাই-ই ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে তাকায়।

–‘ কে তোমরা? কি চাই? জাহির চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করেন। লোকগুলোর মাঝে একজন বলে উঠে! স্যার আমাদের আসতে বলেছেন? সবার কৌতুহল আরও বেড়ে যায়৷
– কোন স্যার? হুট করে তানিয়া বলে উঠে।
— আমি! উপর থেকে ভারী কন্ঠে বলে রুদ্র। সবার দৃষ্টি সেদিকে। এরপর লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলে আপনারা উপরে আসুন। রুদ্রর কথা মতো লোকগুলো চলে যায় উপরে।
–এরা কারা রুদ্র? হঠাৎ বাড়িতে ডাকার কারণ? তানভীর আহমেদ প্রশ্ন করে.।

— একটু পরেই বুঝতে পারবেন আঙ্কেল আমি আসছি বলে রুদ্র ঘরের মধ্যে চলে যায়। এইদিকে সবাই হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে উপরে। রুদ্র কি করছে কেউ বুঝতে পারছে না৷ দোলা তো প্রচন্ড বিরক্তমাখা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে৷
— মিনিট দুই যেতেই লোকগুলো রুদ্রর ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসে৷ এতে সবাই চমকে উঠে সাথে ভীষণ অবাকও হয়।

–‘ একি! ব্রোর রুমের জিনিসপত্র নিয়ে কোথায় যাচ্ছে এরা? মৃদু চিৎকার করে বলে তানিয়া বিষ্ময় চোখে। দোলা তো বেশ ঘাবড়ানো ফেস করে বসে আছে।
— এর মধ্যে আবার রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে আসে ওদের সাথে৷ লোকগুলো জিনিসপত্র নিয়ে নিচে নেমে আসে।

– রুদ্র এইসব কি হচ্ছে? কোথায় যাচ্ছো এইগুলো নিয়ে? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন জাহির চৌধুরী।
– আমরা নিচের ঘরে শিফট করছি ড্যাড। দোলার জন্য এখন উপর নিচ করা ঠিক হবে না৷ তাই আমরা এখন থেকে নিচে থাকবো বেবি না আসা পর্যন্ত। আমি চাইনা দোলার কোনো রকম কোনো অসুবিধা হোক। আমার বেবির কোনো রকম সমস্যা হোক। রুদ্রর কথায় সবাই যেনো স্বস্তি পায় সাথে ঠোঁটের কোণে আসে এক চিলতে হাসি। তানিয়া তো দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে বাহ! কি প্রেম! কি কেয়ার ব্রো। রুদ্র তানিয়ার কথার জবাব না দিয়ে চোখ গরম করে তাকায়। এতে তানিয়া চুপসে যায়। রুদ্র নিচের ঘরে চলে যায়। জিনিসপত্র কোথায় রাখবে তাই দেখানোর জন্য। এইদিকে বিশাল শক নিয়ে তাকিয়ে আছে দোলা। রুদ্রর কাজকর্মের মানে সে কিছু বুঝতে পারছে না। হঠাৎ এত কেয়ার দেখানোর মানে কি সেটাও বুঝছে না।

–‘ দোলার রাগ হয়। উঠে সে রুদ্রর কাছে যায়। রুদ্র জিনিসগুলো ঠিক করে রাখছে সবার সাথে। দোলাকে দেখে তার দিকে একবার তাকায় তারপর কাজে মন দেয় আবার। এতে দোলার রাগের পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি পায়।
– এইসবের মানে কি? আপনি কি প্রমাণ করতে চাইছেন এইসব করে। আপনি খুব পজেসিভ আমাকে নিয়ে। আমার অনেক কেয়ার করেন? বাচ্চার জন্য আপনার অনেক চিন্তা?

— রুদ্র কোনো কথা বলে না। তার মতো সে কাজ করে যাচ্ছে। দোলা এতে বিরক্ত হয়। রুদ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় দুইহাত ভাঁজ দিয়ে।
— আপনার কি মনে হয় আমি এখানে সারাজীবন থাকার জন্য এসেছি? আমাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিলো ভুলে গেছেন। সব ঠিক থাকার পরও এইসব আদেক্ষিতা করার মানে কি? দোলার কথায় রুদ্র আশাহত হয়ে তাকায়। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ দোলা তো বেকুব বনে যায়।

— অসভ্য একটা। সব সময় এটিটুডই থাকবেন। কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। আমিও এর শোধ নেবো। থাকবো না এইবাড়িতে। যত যায় করুন আমার কাজ শেষে আমি ঠিকই চলে যাবো আমার পুচকু সোনাকে নিয়ে। এরপর দোলাও বেরিয়ে আসে।

— রুদ্র কাজে ব্যস্ত। দোলা এই সুযোগে তানিয়াকে নিয়ে ছাদে যায়। এরপর সজলকে ফোন দিয়ে বলে রত্না চৌধুরীকে দিয়ে জেসমিন চৌধুরীর সাথে কথা বলানোর জন্য। সজল দোলার কথা মতো তাই করে।

— জেসমিন চৌধুরী এতখন রুদ্রর কান্ড দেখছিল দাঁড়িয়ে। সব কিছু তার অসহ্য লাগছে। দোলাকে নিয়ে সবার বাড়াবাড়ি একদম সহ্য হচ্ছে না তার৷ এর মাঝেই হাতের মধ্যে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। আননন নাম্বার থেকে ফোন আসায় জেসমিন চৌধুরী ভ্রু কুচকে কিছুখন সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। এরপর রুমের মধ্যে চলে যায় সে।

–” রত্না চৌধুরীর বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। নিজেকে যতই সাহসী করে প্রকাশ করুক না কেনো। মনের মধ্যে এক অজানা ভয় থেকেই যাচ্ছে তার।

— জেসমিন চৌধুরী ফোন উঠাতেই রত্না চৌধুরী নড়েচড়ে উঠে ভয়ার্ত চোখে সজলের দিকে তাকায়। সজল রত্না চৌধুরীর হাতের উপর হাত রেখে আস্বস্ত করে। এইপাশ থেকে জেসমিন চৌধুরী ভারী কন্ঠে হ্যালো বলে উঠলে রত্না চৌধুরী নিজেকে সামনে নিয়ে বলে কেমন আছো জেসমিন?

– – কথাটা শুনে জেসমিন চৌধুরী একটু চমকে উঠে। কন্ঠস্বরটা তার চেনা চেনা লাগছে। খুবই পরিচিত একটা কন্ঠস্বর মনে হচ্ছে তার। কিন্তু বুঝতে পারছে না কে? তাই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে! কে?
– এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে জেসমিন আমাকে। এবার জেসমিন চৌধুরী শিওর হয়ে যায় কে এটা। চমকে উঠে সাথে ভয়ের ছাপ চোখ মুখে।

– রত্না তু- তুমি? ঘাবড়ানো কন্ঠে বলে জেসমিন।
–‘ যাক অবশেষে চিনতে পারলে। আর চিনবে না কেনো৷ তোমার কত কিছুর সাক্ষি আমি বলো। যার জীবনটা নিজ হাতে তছনছ করে দিয়েছো তাকে চিনবে এটাই তো স্বাভাবিক।

– কি সব বলছো? আর এতদিন পর তুমি৷ তুমি না মারা গিয়েছো। তোমার তো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো? বিষ্ময় হয়ে বলে জেসমিন চৌধুরী।
– হুম সবই ঠিক জানো কিন্তু মারা গিয়েছি এটা বাদে৷ মারা গেলে তোমার সাথে কি কথা বলতে পারতাম। আচ্ছা মরা মানুষ কথা বলতে পারে ফোনে? হেয়ালি নিয়ে বলে রত্না চৌধুরী। এতখন তার মধ্যে ভয় কাজ করলেও এখনো বেশ মজা লাগছে জেসমিন চৌধুরীর ঘাবড়ানো কণ্ঠস্বর শুনে। তার যেনো শান্তি শান্তি লাগছে ভেতরে।

— একদম বাজে বকার চেষ্টা করবে না। তুমি এতদিন পরে আমাকে ফোন দিয়েছো কেনো? কি চাও?
– তোমার শাস্তি! ফিসফিসিয়ে কন্ঠস্বরে বলে রত্না চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী বড় বড় চোখ করে তাকায় এতে। মানে? উত্তেজিত হয়ে বলে।

–‘ মানে খুব সোজা। তুমি এতদিন যে সব পাপ করে এসেছো তার সকল শাস্তি এবার তুমি পাবে। তোমার করা পাপের দিন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দেওয়ার দাম তুমি পাবে। আমার স্বামী সন্তানের থেকে আমাকে আলাদা করার ফল তুমি পাবে তেজি কন্ঠে বলে রত্না চৌধুরী। তার মধ্যে এখন বিশাল ক্ষোভ আর রাগ কাজ করছে।

– ও তাই নাকি। তা কে দিবে আমাকে শাস্তি শুনি? তুমি? বলে হেসে উঠে জেসমিন চৌধুরী।
– রত্না চৌধুরী জানত জেসমিন এত সহজে মাথা নুয়ানোর মানুষ না। তাই সেও কন্ঠে প্রবল বিশ্বাস রেখে বলে যদি পারতাম আমি নিজ হাতে তোমাকে শাস্তি দিতে তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ হতো না। কিন্তু আফসোস আমি সেটা পারবো না। কিন্তু আদালত সেটা অবশ্যই পারবে।
– জেসমিন চৌধুরী এবার দ্বিগুণ কৌতুহল নিয়ে বলে কি বলতে চাইছো। আদালত নিশ্চয় তোমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না। এর জন্য যথেষ্ট প্রমাণ লাগবে। আছে তোমার কাছে কোনো প্রমাণ? সন্ধিহান হয়ে বলে জেসমিন।
– তোমার কি মনে হয়? আমি এত দিন পর তোমার সাথে মজা করতে এসেছি। ফাঁকা আওয়াজ দিতে তোমাকে ফোন করেছি। তোমার মতো মানুষের সাথে কথা বলার রুচিটা পর্যন্ত আমার নেই সেখানে তোমার সাথে হাসি ঠাট্টা করা তো দূরে থাক।

– কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে শুনি? ভয়ার্ত কন্ঠে বলে।
– সেটা নাহয় একবারে পুলিশের কাছে গিয়ে দেখো। আর যদি অনেক বেশি কৌতুহলী হয়ে থাকো তাহলে দেখা করে দেখে নাও কি কি প্রমাণ আমার কাছে আছে। এমন এমন প্রমাণ আমার কাছে আছে না! যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। তোমার সব কুকীর্তির প্রমাণ আমি যোগাড় করেছি এত গুলো বছর ধরে। সব কিছুকে এতটাও ঠুনকো ভেবো না। আর যদি ভেবেও থাকো তাও আমার কিছু যায় আসে না। সময় হলে সব দেখতে পাবে। রত্না চৌধুরী কথা গুলো এতটা বিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করে যে, জেসমিন চৌধুরীর সন্দেহ করার মতো কোনো অবকাশ রাখে না। রত্না চৌধুরীর কথা একদম গিলে খেয়েছে। তার মধ্যে ভয় জেঁকে বসেছে। কারণ একমাত্র রত্নাই তো তার সব কুকর্মের কথা জানে৷ তাই রত্না চৌধুরীর প্রমাণ যোগাড় করতে খুব একটা অসুবিধা হবে না এটাই মনে করে জেসমিন।

— আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। কোথায় আসতে হবে বলো। আমি এখুনি তোমার সাথে দেখা করতে চাই রত্না। ঘাবড়ানো গলায় বলে জেসমিন। এমন একটা পরিস্থিতি আসবে এতদিন পর সে ভাবিনি। জেসমিন চৌধুরীর কথায় সজল আর রত্না চৌধুরী দুজনের মুখেই তৃপ্তিকর হাসি। জেসমিন চৌধুরী এত সহজে টোপ গিলে ফেলবেন ভাবতেই পারিনি।

— উহু! এখন তো নয়। আমি চাইলেও এখন তোমার সাথে দেখা করতে পারব না। আমার একটা সময়ের ব্যাপার আছে৷ তুমি বিকালে আসতে পারো। আমি একটা ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি সেখানে সময় মতো চলে আসবে৷ ঠিক বিকেল ৫ টাই। যদি এক মিনিটও দেরি করো তাহলে কিন্তু আমাকে আর পাবে না।

— না না আমি যাবো একদম সময় মতো যাব। আমাকে তো যেতেই হবে। আমাকে ঠিকানা দাও আর হ্যাঁ একদম চালাকি করার চেষ্টা করবে না কিন্তু। জেসমিন চৌধুরী সাবধান করে বলে রত্না চৌধুরীকে।

– চালাকি করা তো তোমার কাজ জেসমিন। তাই তুমি সাবধান থেকো। আমি ওইখানে একাই যাবো। আশা করি তুমিও একা থাকবে। শেষ বারের মতো কেনো জানি তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। তাছাড়া আমার সাথে যাওয়ার মতো তেমন কেউ নেই ও। তাই চিন্তা করো না৷ আমি একাই থাকব সাথে তোমার প্রমাণ।

– রত্না চৌধুরীর কথায় জেসমিন একটা ডেভিল হাসি দিয়ে ফোন রেখে দেয়।
— আমার সাথে পাল্লা দিতে এসেছো। একবার মৃতুর পথ থেকে ফিরে এসেছো বলে ভেবোনা বারবার বাঁচবে। এবার তো আমি নিজ হাতে মা*র*বো তোমাকে। তুমি এবং তোমার প্রমাণ দুটোই ফুরুৎ বলেই জোরে হেসে উঠে জেসমিন চৌধুরী। এরপর শফিককে ফোন দেয়।

–‘ সজল রত্না চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে।
– মনিমা একদম ফাটিয়ে দিয়েছো। কি সুন্দর অভিনয় করলে তুমি। মিছামিছি ভয় পাচ্ছিলে প্রথমে। এখন আসল কাজটা বাকি। ওই মহিলার আসল রুপ সবার সামনে নিয়ে আসতে পারলে ব্যাস।

– আমি পারবো তো বাবা? চিন্তিত হয়ে বলে রত্না চৌধুরী।
– অবশ্যই পারবে মনিমা। তুমি অনেক সাহসী আর ইন্টেলিজেন্স। একদম ভয় পাবে না। ওই মহিলা তোমার সাথে কি কি করেছে মনে নাই। ওর শাস্তি তো দিতেই হবে।
– অবশ্যই দেবো সজল বাবা। আমি মন থেকে চাই ও শাস্তি পাক। আর আজই ওর হবে শেষ দিন দেখিস। আমি ওর আসল রুপ সবার নিয়ে আসবই এই আমার প্রতিঙ্গা।
আমি যায় দোলাকে সবটা জানায়। ওকে তো সব কিছু এরেঞ্জ করতে হবে। এরপর সজল ফোন হাতে চলে যায়।

–‘ দোলা আর তানিয়া ছাদে পায়চারি করছে। কি হলো ওইদিকে এইটা ভেবে দুজনেই ভীষণ চিন্তিত। জেসমিন চৌধুরী কি রাজী হয়েছে দেখা করতে৷ রত্না চৌধুরী কি পেরেছে সবটা মেনেজ করতে ভাবতেই মাথা ফেটে যাচ্ছে দোলার।
– বউমনি তুমি চুপটি করে বসো তো। একদম চিন্তা করবে না। মামি ঠিক পারবে দেখো। মা তো কখনোই তার ক্ষতি হোক চাইবে না। তাই মামি প্রমাণের কথা বললে দেখবে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আসলে পাপ তো মানুষের হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে দেয়। মন খারাপ হয়ে বলে তানিয়া। এর মধ্যে দোলার ফোন বেজে উঠে। চমকে উঠে তানিয়া আর দোলা এতে। সজলের ফোন দেখে তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করে। এরপর সব শুনে দোলার মুখের শান্তির প্রচ্ছাপ ফুটে উঠে। তানিয়াও খুশি হয়।

– এবার আমার কাজটা করতে হবে। চলো তানিয়া নিচে যায়। এরপর তারা ছাদ থেকে নেমে আসে।

— রুদ্রর নিচের রুমে শিফট করার সব কাজ শেষ। সব কিছু গুছিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে আরাম করে বসে একটা চেয়ারে। রুদ্র বসতেই দোলার কথা স্বরণ হয়। অনেকখন হলো দোলাকে দেখিনি। রুদ্র কাজের মধ্যে আরেকটা কাজ করতেও ভুলে গেছে। তাই ল্যাপটপটা নিয়ে বসে বিসানার উপর। জেসমিন চৌধুরী এতখন কি কি করেছে সবটার ফুটেজ চেক করবে রুদ্র। এটা রুদ্র প্রতিদিনই করে এখন। জেসমিন চৌধুরীকে এক মুহূর্তের জন্য নজর ছাড়া করতে চাইনা রুদ্র।

— রুদ্র কিছুখন আগের ফুটেজ চেক করতে গিয়ে তার মায়ের সাথে জেসমিনের সব কথোপকথন শুনতে পাই। রুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এতদিন পর মায়ের কথা শুনতে পেয়ে রুদ্র বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠে। চোখ ভরে আসে রুদ্রর। রুদ্র এইটুকু জানে এখন যে তার মা দোষী নয়। দোলার মতো যে সেও পরিস্থিতির স্বীকার এটা রুদ্র বুঝে গিয়েছে। কিন্তু ঠিক কি হয়েছিলো এটা জানে না। কিন্তু তার মা কোথায় আছে কেমন আছে আদো বেঁচে আছে কিনা রুদ্র এটা জানত না। জেসমিন চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তার মা বেঁচে আছে আর তার আশেপাশে কোথাও আছে।
– রুদ্রর ভাবনার ছেদ করে দোলা প্রবেশ করে ঘরে। দোলাকে দেখে রুদ্র ল্যাপটপটা বন্ধ করে দেয়। দোলা গভীর লুক নিয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে। রুদ্রকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে দোলার কাছে৷
– ঠিক আছেন আপনি? শরীর খারাপ লাগছে কি? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে। দোলার কথায় রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে আইম ফাইন।
–‘ এরপর দোলা কিছুখন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রুদ্রকে কথা গুলো কি করে বলবে বুঝতে পারছে না। দোলা চাই আজ সবার সামনে জেসমিনের মুখোশ খুলে দিতে৷ জেসমিন চৌধুরীর অপকর্মের সাক্ষী সবাইকে রাখতে চাই দোলা আজ।

— তুমি কি কিছু বলবে? দোলার দিকে তাকিয়ে বলে রুদ্র। রুদ্রর কথায় দোলা চমকে উঠে বলে এহ হ্যাঁ হ্যাঁ। আবেগে বলে উঠে দোলা। রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বলে তো বলো কি বলবে এতো ভাবছো কেনো?
–‘ আপনার সাথে আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে ছোট সাহেব। তবে প্লিজ এখন কোনো প্রশ্ন করবেন না আমাকে৷ আপনার মনের মধ্যে যে সকল প্রশ্ন জমা হবে সব জমিয়ে রাখবেন। সময় হলে একসাথে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। দোলার এমন ভিত্তিহীন কথার মানে বুঝতে পারে না রুদ্র।

— কি সব বলছো বলো তো। ক্লিয়ার করে বলো ভারী কন্ঠে বলে রুদ্র। দোলা একটা শুকনো ঢোক বলে! আমি আপনাকে একটা ঠিকানা দেবো আপনি বাবাকে সাথে নিয়ে সেখানে যাবেন বিকেলে। ঠিক বিকেলে ৫টাই বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হবেন প্লিজ।

– কিন্তু কেনো? রুদ্র প্রশ্ন করলে দোলা নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে আমি আগেই বলেছি কোনো প্রশ্ন করবেন না। ওইখানে গেলেই আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি। আমি আর তানিয়া আগে বেরিয়ে যাব। আপনি বাবাকে নিয়ে পরে আসবেন।

— রুদ্র দোলার দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকে। দোলা ঠিক কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না রুদ্র৷ অনেক চিন্তা হচ্ছে এবার তার৷ কিন্তু দোলা যেহেতু বলেছে তাই রুদ্র আর কোনো প্রশ্ন এখন করে না। কিন্তু তার বাবাকে কেনো নিয়ে যেতে বলছে রুদ্র এটা বুঝে উঠে না।

— বিকেল ৪টা। দোলা আর তানিয়া বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে দেখে গেছে জেসমিন চৌধুরী কি করছেন৷ দোলারা যাওয়ার আগে বলে গেছে তারা শপিংয়ে যাচ্ছে৷ যাতে করে জেসমিন চৌধুরীর কোনো সন্দেহ না হয়। তাছাড়া তানিয়া আছে সাথে তাই জেসমিন চৌধুরীর সন্দেহ করার প্রশ্নই আসে না।

–রুদ্র অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত সময়ের। দোলা যখন বের হয় তখন অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কি করতে চলেছে দোলা? দোলা শুধু একটাই কথা বলে গেছে৷ সময় হলে জানতে পারবেন। রুদ্র আর কিছু বলে না এরপরে। কারণ সে জানে দোলাকে এখন হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলবে না।

– চলবে…

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৩৮”

— একটা পোড়া বাড়িতে দোলা,সজল,তানিয়া আর রত্না চৌধুরী অপেক্ষা করছে। বাড়িটা অনেক পুরাতন আর পরিত্যক্ত বাড়ি। এটা সজলের এলাকা থেকে একটু দূরে। মানুষজন খুব কম চলাচল করে এ’পাশে। সজল আগে থেকেই জানতো এই বাড়িটার কথা। তাই সে দোলাকে জানায় এখানে আসার জন্য। দোলাও চাইছিলো কোনো নিরিবিলি সুনশান জায়গা। যাতে করে কারোই কোনো সমস্যা না হয়। রত্না চৌধুরী অপেক্ষা করছে জেসমিন চৌধুরীর জন্য। রত্না চৌধুরীর সাথে একটা মেয়েও আছে। যার বয়স চৌদ্দ কি পনেরো হবে। মেয়েটা রত্না চৌধুরীর হুইলচেয়ার ধরে আছে৷ যাতে জেসমিন চৌধুরী কোনো সন্দেহ করতে না পারে তাকে।

— সময়টা প্রায় ৫টার দিকে গড়াই। দোলা বারবার ঘড়ি দেখছে৷ সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। রত্না চৌধুরীও খানিকটা ঘাবড়ে আছে।

— মায়ের তো এতখনে চলে আসার কথা। কিন্তু আসছে না কেনো? সংশয় নিয়ে বলে তানিয়া। দোলা তানিয়ার দিকে একবার শুধু অসহায় ফেস করে তাকায়।
— আচ্ছা রুদ্রর আসার কথা ছিলো না। ওরাই বা কোথায় এখন? সজল বলে এবার৷

— উনি আসছেন হয়তো। আচ্ছা ৫টা বাজতে আর কতক্ষন আছে? চিন্তিত কন্ঠে বলে দোলা।
– তানিয়া তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে এইতো আর মিনিট দশেক।

— আচ্ছা যে যার পজিশনে চলে যাও তোমরা। একসাথে থাকা ঠিক হবে না৷ দোলার কথায় তানিয়া আর সজল একপাশে যায়৷ আর দোলা একপাশে। রত্না চৌধুরী ওই পোড়া বাড়িটার মধ্যখানে অবস্থান করছে। দেখে মনে হচ্ছে ওইটা ড্রয়িং রুম ছিলো একসময়। বাড়িটা অনেক বড় আর রাউন্ড দিয়ে করা।

–এর মধ্যে কারো আসার আওয়াজ পাওয়া যায়। এতে সবাই নড়েচড়ে উঠে। খুবই সাবধানে দাঁড়ায় তারা। বাড়িটার মধ্য আসতেই দোলা দেখে রুদ্র আর তার বাবা এসেছে৷ ওদের দেখে দোলা বেরিয়ে আসে৷ ছুটে আসে তাদের কাছে। ওঁরা দোলাকে দেখে স্বস্তি পায়। সামনে কে আছে না সেদিকে তারা খেয়াল করে না।

–দোলা মা। তুই আমাদের এখানে আসতে বলেছিস কেনো? জাহির চৌধুরী প্রশ্ন করলে দোলা বলে বাবা এখন কথা বলার সময় নয়। প্লিজ সাইডে আসুন। একটু পরে বুঝতে পারবেন সব৷ হাতে সময় একদম কম।
– রুদ্রর এবার রাগ হয় একটু। তাই দোলার হাত টেনে ধরে বলে কি শুরু করেছো তুমি ? কি বলছো এসব তুমি ই, এখানে নিয়েই বা আসলে কেন আর তুমি এখানে কিন্তু তানিয়া কোথায়?
–‘ দেখুন ছোট সাহেব আমার উপর একটু ভরসা রাখুন৷ প্লিজ চলুন এখানে থেকে বলে রুদ্র আর জাহির চৌধুরীকে এক পাশে দাঁড়াতে বলে। বাইরে গাড়ির শব্দ শোনা যায়৷ এতে সবাই বুঝে যায় জেসমিন চৌধুরী আসছে।।রুদ্র আর জাহির চৌধুরী কিছুই বুঝতে পারছে না। রুদ্র সামনে তাকাতে দেখে একজন মহিলা হুইলচেয়ারে বসে। কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছে না। কারণ রুদ্রর দিকে পিছন দিয়ে আছে৷ রুদ্র আর জাহির চৌধুরী বোঝার চেষ্টা করছে কে হতে পারে।। জাহির চৌধুরীর খুব চেনা চেনা লাগছে তাকে পেছন থেকে।

-‘ জেসমিন চৌধুরীর প্রবেশ হয় সেখানে। রুদ্র আর জাহির চৌধুরী অবাক চোখে তাকায় জেসমিন চৌধুরীর দিকে। জেসমিন চৌধুরী ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই চারিদিকে তাকায়। কেউ আছে কিনা গভীর দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু দোলা তো এত কাচা কাজ করেনি। সবাই পিলারের পেছনে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আছে৷ জেসমিন চৌধুরী চাইলেও কাউকে দেখতে পাবে না। পিলার গুলো বড় আর মোটা হওয়াতে বেশ সুবিধা হয়েছে।

– জেসমিন চৌধুরী এবার সামনে তাকায়। সামনে দেখতেই তার ভ্রু আপনাআপনি কুচকে আসে। রত্না চৌধুরী তো অন্য দিকে ঘুরে আছে। তাই জেসমিন চৌধুরী দেখতে পাচ্ছে না কে ওইটা। সাথে মেয়েটা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
– কে? আলতো স্বরে বলে উঠে জেসমিন চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরীর কথায় রত্না চৌধুরী চেয়ারটা ঘুরে জেসমিন চৌধুরীর সামনাসামনি হতেই জেসমিন চৌধুরী চমকে উঠে রত্না চৌধুরীকে দেখে। কিছু সময় থমকে থেকে হো হো করে হেসে উঠে। এতে সবাই আশ্চর্য হয়। আর রত্না চৌধুরী তো সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে আছে৷ এইদিকে রুদ্র আর জাহির চৌধুরী বিশাল শক পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে রত্না চৌধুরীকে দেখে। জাহির চৌধুরীর চোখে পানি টলমল করে এতদিন পর রত্নাকে দেখার পর৷ তার বেশি খারাপ লাগছে রত্না চৌধুরীকে এইভাবে দেখে। রুদ্রর মধ্যে তোলপাড় করা উত্তেজনা। জাহির চৌধুরী রত্না চৌধুরীকে দেখে বেরিয়ে আসতে গেলে রুদ্র তাকে বাধা দেয়।

— বাবা প্লিজ এখন যেও না। আগে সবটা দেখতে দাও৷ চুপ করে দাঁড়াও ফিসফিস করে বলে রুদ্র। জাহির চৌধুরী রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।

— মা সব স্বীকার করবে তো। আমরা সফল হবো তো সজল? তানিয়া জিজ্ঞেস করে সজলকে। অনেক চিন্তা হচ্ছে তার। যদি আজ সব সত্য সামনে না আসে। তাহলে আর সম্ভব হবে না। রত্না চৌধুরীকেও আর নির্দোষ প্রমাণ করা যাবে না। তার মাকেও শাস্তি দেওয়া যাবে না। দোলাকে সবাই আবার ভুল বুঝবে।

–” একি হাল তোমার রত্না৷ তুমি তো অর্ধেক মারায় গেছো দেখছি৷ এখন পুরোটা মরা বাকি তোমার। শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে জেসমিন। রত্না চৌধুরী কিছু বলে না। স্থীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে শুধু।
– তোমার সাথে ওই মেয়েটা কে? তুমি না বলেছি এখানে একা আসবে। তাহলে এই মেয়েটা এখানে কেনো? রাগী কন্ঠে বলে জেসমিন চৌধুরী।
– আমার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছো নিজ চোখে। তুমি আমার যে অবস্থা করেছো তাতে এতটা পথ আমার একা আসা কি আদো সম্ভব জেসমিন। তাছাড়া আমার একমাত্র ভরসা এই মেয়েটাই। এখানে আসার জন্য ওর সাহায্য নিয়েছি শুধু। ভয় পেও না। ও একটা ছোট শিশু। তোমার সাথে পেরে উঠা এর সাধ্যি নেই। সাবলীল ভাবে বলে রত্না চৌধুরী।
— শুধু ওর কেনো৷ তোমারও সাধ্যি নেই আমার সাথে লড়াই করার। তুমি কিসের ভরসায় আমার সাথে লড়াই করতে এসেছো সেটাই ভাবছি শুধু। নিজ পায়ে তো দাঁড়ায়ে পারো না৷ আবার এসেছো আমার সাথে লড়াই করতে। তোমার মরার খুব শখ তাই না? গম্ভীর স্বরে বলে জেসমিন।

— মৃত্যু তো উপর আল্লাহর হাতে। যদি সে চাইতো তাহলে তো আমি আজ থেকে ২২ বছর আগেই মারা যেতাম তোমার লোকের হাতে। তিনি চাননি বলেই আমি এখনও বেঁচে আছি। তোমার করা প্রত্যেকটা পাপের শাস্তি দিতে হবে আমাকে। তাই তো এতদিন বেঁচে আছি এইভাবে। আর দেখো আজ তোমার সামনে।

— তাতে লাভ? মুচকি হেসে বলে জেসমিন চৌধুরী। রত্না চৌধুরী কৌতুহলী হয়ে তাকায়।
– তাতে আদ্যেও কি লাভ আছে রত্না? তবে সেদিন যদি তুমি, আমার কথা শুনতে। নারীপাচারকারী লোকগুলোর থেকে না পালিয়ে যদি ওইখানেই থাকতে তাহলে কিন্তু আজ তোমার এই দিন দেখতে হতো না। অন্তত নিজের পায়ে চলাফেরা করতে পারতে। অনেক টাকাও ইনকাম করতে পারতে। এইভাবে পথের ভিখারি হয়ে কাটাতে হতো না তোমাকে।

– জেসমিন চৌধুরীর কথায় রত্না চৌধুরী মৃদু হেসে বলে আত্মসম্মানবোধ খুয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া শ্রেয়। তারপরও যে নিজ সম্মান বাঁচিয়ে আজো বেঁচে আছি এতেই তো আলহামদুলিল্লাহ নয়কি?

— এটাকে বেঁচে থাকা বলে? উপহাস করে বলে জেসমিন। সে যাই হোক কাজের কথায় আসি। কই দেখি দাও আমার বিরুদ্ধে কি কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে। যদি তোমার থেকে বড় প্রমাণ আর কিছু হতে পারে না৷ আমার সব পাপের সাক্ষী তো তুমি নিজে। এরপরও যে আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ যোগাড় করেছো সত্যি তুমি বাহবা পাওয়ার যোগ্য। তবে আমি যদি জানতাম না তুমি এখনো বেঁচে আছো তাহলে অনেক আগেই তোমাকে শেষ করে দিতাম। এই পর্যন্ত আসার সুযোগই দিতাম না চোখ লাল করে বলে জেসমিন চৌধুরী।

— দোলার মুখে প্রাপ্তির হাসি। সজল, তানিয়ারও সেম। রুদ্র আর জাহির চৌধুরী শুধু অবাকের পর অবাক হচ্ছে। কি বলছে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে রুদ্র ঠিকই আন্দাজ করতে পারছে সব কিছু।

— মানুষ হত্যা করা তো তোমার বা হাতের ময়লা জেসমিন। এটা আমার থেকে ভালো আর কে জানে? যে মেয়ে নিজ হাতে নিজের জন্মদাতা পিতাকে খু/ন করতে পারে৷ সে যে আমাকে খু/ন করতে পারবে না৷ এটা অবিশ্বাস্য কিছু নয়। রত্না চৌধুরীর মুখে এই কথা শুনার পর জাহির চৌধুরী আর রুদ্র দুজনের পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে যায়। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে তারা। জেসমিন চৌধুরী তার বাবাকে মেরে ফেলেছে জাহির চৌধুরী যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।

— আমার সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে দেখছি তোমার। তবে তুমি কিন্তু একদম ঠিক বলেছো। যেখানে নিজের বাবাকে হত্যা করতে পিছুপা হয়নি৷ সেখানে তুমি তো কিছুই না। কিন্তু আমার ভুল একটা! ২২ বছর আগে যদি তোমাকেও মে/রে ফেলতাম তাহলে আমাকে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না। কিন্তু সমস্যা নেই সেদিন যে কাজটা করতে পারিনি আজ সেটা নিশ্চয় করতে পারবো। বেশ সাবলীল ভাবে বলে জেসমিন চৌধুরী।

– আর ভয় পাই না আমি। যদি ভয় পেতাম তাহলে তোমার সামনে কখনোই আসতাম না। তবে একটা কথা কি জানো রাখে আল্লাহ তো মারে কে। আমাকে যদি ওই উপর আল্লাহ রাখতে চাই তাহলে তোমার সাধ্যি নেই আমাকে মা/রা/র।

— রত্না চৌধুরীর কথায় জেসমিন চৌধুরী ভিলেনী হাসি দেয় একটা। রত্না চৌধুরী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে এতে। সবাই বোঝার চেষ্টা করছে জেসমিন চৌধুরী আসলে কি করতে চাইছে৷

— তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো এই জেসমিন চৌধুরী নিজের মর্জি মালিক। যখন যেটা চাই তখন সেটাই করে। আজ আমি তোমাকে মা/র/বো আর সেটা এখানেই । দেখি তোমার আল্লাহ কি করে বাঁচায় তোমাকে আমার হাত থেকে। তবে তার আগে কিছু কথা জেনে যাও। নাহলে তো সারাজীবন আফসোস করবে ঐ উপরে গিয়ে।

–এবার সবাই নড়েচড়ে উঠে সাথে রত্না চৌধুরীও।

— তোমার স্বামী আর সন্তান দুজনেই তোমাকে ঘৃণা করে। অনেক অনেক ঘৃণা করে। আর সে ব্যবস্থাও করেছি আমি। তাই আজ তোমাকে মা/রা/র পর যখন নিউজে দেখাবে। যদিও জানি না তোমার লাশের সন্ধান ওরা পাবে কিনা৷ যদি পায়! তাহলে তোমার মৃত মুখখানা দেখে না ওরা অনেক শান্তি পাবে। এবার আসি নেক্সট কথায়.। তোমার ছেলে রুদ্র সে তো আমি বলতে অজ্ঞান। আমি যা বলি তাই করে। এমন ভাবে তৈরি করেছি তোমার ছেলেকে৷ সে আমার হাতের পুতুল। মেয়েদের নামে কুমন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে মেয়েদের প্রতি ঘৃণার প্রচ্ছেদ তৈরি করেছি। সে কিন্তু একদম মেয়েদের সহ্য করতে পারতো না৷ কিন্তু কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে আমার এতদিনের করা কাজ সব জলাঞ্জলি দিয়ে রুদ্রকে আবার ঠিক পথে নিয়ে আসলো। আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়ে তানিকে রুদ্রর সাথে বিয়ে দিয়ে সব সম্পত্তির মালিক হতে৷ কিন্তু ভাইজান সেটা হতে দিলো না৷ ওই ভিখারির মেয়েটাকে বাড়ির বউ করে নিয়ে এসে আমার প্ল্যানে পানি ঢেলে দিলো। এরপরও হাল ছাড়েনি৷ প্রতিপদে ওই মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মেয়েটা খুবই চালাক আর ধুরন্ধর মেয়ে। ঠিক বেঁচে ফিরে আসে৷ তবে বেশিদিন পারবে না।

— একটা খুশির সংবাদ দিই তোমার তোমার ছেলে রুদ্র বাবা হতে চলেছে। এতে ওই বাড়ি তো খুশিতে আটখানা হয়ে আছে৷ যা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। তবে এই খুশি বেশিদিন থাকবে না। আমি খুব শীগ্রই দোলা আর তার বাচ্চাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবো৷ তারপর রুদ্রর সাথে আবার আমার মেয়ের বিয়ে দেবো। এরপর রুদ্রর সব সম্পত্তি হবে আমার মেয়ের। আমি হবো মালকিন। যে সম্পত্তির জন্য এতদিন কষ্ট করে আসছি৷ অনেক অপমান সহ্য করে পড়ে আছি ওই বাড়িতে৷ এমনকি নিজের সংসারও বিসর্জন দিয়েছি এই সম্পত্তির জন্য সে সম্পত্তি আমি এত সহজে হাত ছাড়া হতে দেব না। যদি রুদ্র তানিয়াকে বিয়ে করতে রাজী না হয়। তাহলে ওকেও শেষ করে দেবো। রুদ্র কিছু হলে ভাইজান এমনি শেষ হয়ে যাবে ছেলের শোকে কথাটা বলে হো হো করে হেসে উঠে জেসমিন চৌধুরী।

— জাহির চৌধুরীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তার বোন এতটা খারাপ, এত জঘন্য হতে পারে ভাবেনি। রুদ্রর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে রাগে। হাতের মুঠো কঠিন শক্ত রুপ নিয়েছে। সজল হতাশ হয় জেসমিন চৌধুরীর কথা শুনে। তানিয়া অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে তার মায়ের এমন রুপ দেখে।

— দোলার মুখে তৃপ্তির হাসি লেগেই আছে। আর রত্না চৌধুরী তো বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে আছে জেসমিন চৌধুরীর দিকে। সে তো সবই জানে তারপর চোখ মুখে এমন একটা ভাব ধরে রেখেছে যে এই প্রথম শুনছে সব কথা।

— যাই হোক অনেকটা সময় দিয়ে ফেলেছি তোমাকে। এবার তোমার টাইম শেষ। দাও তাড়াতাড়ি কি কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে৷ যদিও ওইসব প্রমাণ নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। কারণ যদি তুমি না থাকো তাহলে প্রমাণ গুলো দিয়ে কি হবে? কই দাও বলছি ধমকের স্বরে বলে জেসমিন চৌধুরী।
– তুমি ভাবলে কি করে আমি এখানে প্রমাণ নিয়ে আসব।। আমি তোমাকে খুব ভালো করে চিনি। এটাও জানি তুমি আমাকে কখনো সুস্থ ভাবে ফিরতে দেবে না৷ তাই প্রমাণ গুলো সেভ জায়গায় রেখে এসেছি।।যদি আমার মৃতুও হয়না৷ তাও সমস্যা নাই। প্রমাণ কিন্তু ঠিকই পুলিশের হাতে চলে যাবে৷ দৃঢ়তার সাথে বলে রত্না চৌধুরী।

– তানিয়া চোখের পানি মুছে তার বাবাকে ফোন দিয়ে বলে আসার জন্য। তানভীর আহমেদ বাইরে অপেক্ষা করছিলো সাথে পুলিশ নিয়ে। তানিয়া গতরাতে তানভীরকে সব বলে। তানভীর আহমেদ জেসমিন চৌধুরীর কৃতকর্ম সম্পর্কে আগেই জানতো সব। তাই তার কোনো রিয়াকশন ছিলো না তানিয়ার কথায়৷ তানিয়ার কথা মতো এখন কাজ করে শুধু।

— আমার সাথে গেম খেলতে চাও। তুমি ভুলে যেওনা গেম এই জেসমিন চৌধুরী খেলে সবার সাথে৷ তার সাথে নয়। আগে তোমার ব্যবস্থা করি এরপর প্রমাণের ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলবো। শফিক ভেতরে এসো। জেসমিন চৌধুরী শফিককে ডাক দেয়। জেসমিন চৌধুরীর ডাকে শফিক দ্রত পায়ে ভেতরে আসে৷ রত্না চৌধুরী শফিককে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। কারণ রত্না চৌধুরীকে যখন নারীপাচারকারীর হাতে দেওয়া হয় তখন শফিকও ছিলো।
– শফিক রত্না চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে কি ম্যাডাম চিনতে পারছেন আমায়৷ জানি আমাকে কখনো ভুলবেন না তারপর একটু মনে করায় দিই।

– শফিক বড্ড বেশি কথা বলো তুমি৷ যে কাজে জন্য ডেকেছি সে কাজটা আগে করো ধমক দিয়ে বলে জেসমিন চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরীর ধমকে শফিক চুপসে যায়। এরপর একটা রিভলবার বের করে জেসমিন চৌধুরী হাতে দেয়।

— তোমাকে আজ নিজ হাতে মা/র/বো আমি। তোমাকে নিজ হাতে না মা/র/তে পারলে আমার শান্তি হবে না। কথাটা বলে জেসমিন চৌধুরী রত্না চৌধুরীর দিকে রিভোলবার তাক করে তখনই জাহির চৌধুরী বেরিয়ে এসে গর্জে জেসমিন চৌধুরীকে ডেকে উঠে। জাহির চৌধুরীকে দেখে জেসমিন চৌধুরী চমকে তাকায়। জাহির চৌধুরীকে একদম আশা করেনি এখানে সে। এরপর একে একে সবাই বেরিয়ে আসে। সবাইকে দেখে জেসমিন চৌধুরী হতভম্ব হয়ে যায়। চরম মাত্রার শকড নিয়ে তাকায় সবার দিকে। শফিকও বেশ ঘাবড়ে গেছে। জেসমিন চৌধুরী এখনো রিভলবার তাক করে আছে রত্না চৌধুরীর দিকে।

— তুই এতো নিচ আর জঘন্য মানুষ জানা ছিলো না আমার। আমার সংসারটা তছনছ করে দিয়েছিস তুই। রত্নার সম্পর্কে দিনের পর দিন ভুল বুঝিয়ে এসেছিস আমাকে। তোর সম্পত্তির দরকার ছিলো আমাকে বলতে পারতি। আমি তোকে নিজ ইচ্ছায় তোকে সব দিয়ে দিতাম। তুই এমন একটা খারাপ মানুষ যে সম্পত্তির জন্য নিজের বাবাকেও ছিহ বলে ধিক্কার দিয়ে উঠে জাহির চৌধুরী।

— তুমি এত জঘন্য মানুষ ভাবতেও পারিনি৷ আমাদের সুযোগের সৎ ব্যবহার করে এসেছো এতদিন।।আমাকে মায়ের থেকে দূরে রেখেছো। তার সম্পর্কে আমাকে ভুল বুঝিয়েছো। তোমার লজ্জা করে না পিপি নিজের ভাই আর তার সন্তানের সাথে এমন বেইমানি করতে। আমরা তো তোমার নিজের মানুষ ছিলাম। কি করে পারলে এমন করতে। আজ তোমার প্রতি আমার ঘৃণা হচ্ছে৷ সব থেকে বেশি ঘৃণা হচ্ছে আজ তোমার প্রতি বলে চেচিয়ে উঠে রুদ্র।

— তোমাকে আমি বলেছিলাম জেসু তোমার করা পাপের দিন শেষ হবে একদিন৷ আর সেদিন কাউকে পাশে পাবে না। আজ সেদিন টা চলে এসেছে। দেখো কেউ তোমার পাশে নাই। না তোমার ভাই, ভাইপো আর না তোমার সন্তান স্বামী। তোমার মেয়ের দিকে একবার দেখো কতটা ঘৃণা জমে আছে তোমার জন্য তার মধ্যে। কথা গুলো বলতে বলতে তানভীর আহমেদ প্রবেশ করে সাথে পুলিশ নিয়ে। তানভীর আহমেদের সাথে পুলিশ দেখে জেসমিন চৌধুরী আর শফিক দুজনেই ভীষণ ঘাবড়ে যায়। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।

–‘ তুমি যে আমার সেটা ভাবতেও আমার গা গুলিয়ে আসে। আমি কেনো তোমার সন্তান হলাম এটা ভাবলে আমার নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হয়৷ করুণা হয়। তুমি কেনো ভালো হলে না মা? কি পেলে এইসব করে। সবার ঘৃণার পাত্রী হওয়া ছাড়া তোমার ভান্ডারে কিছুই আছে বলে দেখছি না আমি। এত লোভ কেনো করলে। বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসে৷ তার কম কিছু নেই৷ তারপর কেনো সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে না। কেনো মামুর জীবনটা নষ্ট করলে। সাথে ব্রো কে তুমি মাতৃ হারা করে রেখেছিলে। এত জঘন্য, নিচ তুমি। তোমার মুখ দেখতেও ঘৃণা আসছে আজ। তানিয়ার কথায় আহত চোখে তাকায় জেসমিন চৌধুরী।

— এবার তুমি তোমার অপকর্মের শাস্তি পাবে জেসু। তোমার পাশে আর কেউ নেই৷ না কেউ ছিলো। আমার জীবনটা তুমি নষ্ট করে দিয়েছো। আমি যদি তোমাকে ভালো না বাসতাম , তোমার মোহে না পড়তাম তাহলে আজ আমার জীবনটা সুন্দর হতো ক্ষীনস্বরে বলে তানভীর আহমেদ। আজ তার অনেক কষ্টে হচ্ছে। জেসমিন চৌধুরীকে ফেরানোর অনেক চেষ্টাও করেছেন তিনি কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয় সে।

— চুপ করো। একদম কথা বলবে না। সবাই জ্ঞ্যান দিতে এসেছো আমাকে। আমার যা ভালো মনে হয়েছে আমি তাই করেছি। এর জন্য আমার একটু অনুশোচনা নেই৷ আমার সাথে কে থাকলো আর কে থাকলো না আই ডোন্ট কেয়ার। আমার তো সম্পত্তি চাই শুধু সম্পত্তি বলে উন্মাদের মতো হাসতে থাকে জেসমিন চৌধুরী।
– তুই পাগল হয়ে গেছিস জেসু। এখনো তোর মুখ দিয়ে এইসব কথা বের হয় কি করে। তুই সত্যি অনেক লোভী আর স্বার্থপর একটা মানুষ। তোর কি একটি বারের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে না তোর করা অপকর্মের জন্য। এই যে তোর মেয়ে স্বামী তোকে ঘৃণা করে এখন এতে কি কিছু যায় আসে না তোর?
– না আসে না। আমার কোনো কিছুতে যায় আসে না। তোমরা সবাই মিলে আমাকে ঠকিয়েছো৷ আর তুই.. তানিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে! তুই আমার মেয়ে হয়ে মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলি সবার সাথে।।আমি তো সব কিছু তোর জন্য করছিলাম আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে বড় বড় লেকচার দিচ্ছিস উচ্চ স্বরে বলে উঠে জেসমিন চৌধুরী।

– একদম না মা৷ খবরদার বাজে কথা বলবে না। তুমি এই সব আমার জন্য। বরং তোমার সার্থসিদ্ধ করার জন্য করেছো। লোভী তুমি ছিলে আমি নয়। আমি কখনো তোমাকে বলিনি আমার অনেক টাকা চাই সম্পত্তি চাই। তুমি করেছো সব তোমার চাহিদা মেটাতে। আর এতকিছু করতে করতে তুমি আজ তোমার জীবনের শেষ পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছো। তোমার খেলা শেষ মা৷ দেখো পুলিশ রেডি৷ প্রমাণও রেডি। তোমার নিজ মুখে করা স্বীকারোক্তি আছে আমাদের কাছে৷ এখন তুমি গারদের ওইপারে দিন গুনবে৷ তোমার শাস্তি হলে আমার একটুও খারাপ লাগবে না৷ না কখনো অনুশোচনা হবে।

— কে ধরবে আমায়৷ এই পুলিশ। কি ভেবেছিস সবাই মিলে আমাকে এইভাবে ফাসিয়ে দিবি৷ আমি যদি মরি তো রত্নাকে সাথে নিয়ে মরবো। আজ ওর জন্য এত কিছু হয়েছে৷ আমার সাথে চালাকি করেছে ও। ওকে তো আমি ছাড়বো না বলে জেসমিন চৌধুরী আবার রিভলবার তাক করে গুলি করার জন্য। সবাই চমকে উঠে জেসমিন চৌধুরীর কাজে৷ পুলিশ,রুদ্র সজল এগুতে গেলে জেসমিন চৌধুরী তাদের থামিয়ে দেয়।

– একদম এগুনোর চেষ্টা করবে না কেউ। তাহলে আমি সত্যি সত্যি রত্নাকে মে/রে দেবো। আমাকে এখান থেকে ভালোই ভালোই বের হতে দাও৷ নাহলে তোমাদের এতদিন পর মিলনমেলা রত্নার লাশের সাথে হবে। তাই এখনো সময় আছে আমাকে যেতে দাও৷ এক পা আগাবে না কেউ খবরদার। কথা গুলো বলে যায় জেসমিন চৌধুরী। এইদিকে সবাই ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে৷ সত্যি যদি রত্না কে গুলি করে দেয়৷ শফিক মুচকি হাসে৷ পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।।

— দোলা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সে জেসমিন চৌধুরীর পেছনে থাকায় ওকে খেয়াল করে না জেসমিন। দোলা পেছন থেকে এসে জেসমিন চৌধুরীর হাত চেপে ধরে এতে সবাই বড় বড় চোখ করে তাকায়৷ জেসমিন চৌধুরী চমকে উঠে দোলার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে।
– ফুপি রিভলবার টা দিয়ে দাও আমাকে। গম্ভীর কন্ঠে বলে দোলা।
– আমাকে ছাড়ো দোলা৷ তোমার জন্য আজ আমার মুখোশ খুলে গেছে সবার সামনে।। যেদিন থেকে তুমি ওই বাড়িতে এসেছো আমার সব প্ল্যান শেষ করে দিয়েছো৷ তোমার জন্য আমি আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারিনি৷ আমি তোমাকে আগে শেষ করব তারপর বাকিদের দেখে নেবো বলে জেসমিন চৌধুরী রিভলবার নিয়ে ধস্তাধস্তি করে। দোলা ধরে আছে সাথে জেসমিন চৌধুরীও। দুজনেরি রিভলবারটা নিজের দিকে নেওয়ার চেষ্টায়। এই সুযোগে পুলিশ গিয়ে শফিককে ধরে।
— দোলা সরে এসো। লেগে যাবে তোমার। আমি দেখে নিচ্ছি ওই মহিলাকে বলে রুদ্র এগুতে যায় তখনই রিভলবার থেকে একটা গুলি শব্দ বেরিয়ে যায়। গুলির শব্দে সবাই চমকে উঠে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে যায়৷

— চলবে