তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব-১৬+১৭

0
545

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১৬”

–” রুদ্র খাম’টা খুলে দেখতেই চমকে উঠে। স্থীর চাহনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে খামের ভেতরের বস্তু গুলোর দিকে। হিংস্রতা আবারো চোখ মুখে জেগে উঠে। চোখ দুটো আগুনের ফুলকির ন্যায় দপদপ করে উঠে। রাগে চিৎকার করে ছুড়ে মারে খামটা। হঠাৎ রুদ্রর এমন কান্ডে চমকে উঠে রাজ। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে কৌতুহল নিয়ে বলে কি হয়েছে রুদ্র? তুই এমন করছিস কেনো? কি আছে খামে বলে রাজ খামের মধ্যে থাকা ছবিগুলো হাতে তুলে আঁতকে উঠে ভয়ার্ত চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে। রুদ্রর শরীর কাঁপছে রাগের কারণে।

– আমি আগেই জানতাম দোলা ঠক, প্রতারক। ও আমাকে ঠকিয়েছে। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও পর-পুরুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। তুই না আমাকে বলেছিলি রাজ” দোলা এমন ধরনের মেয়ে না। আমার ভুল হচ্ছে৷ আমি শুধু শুধু ওর উপর অত্যাচার করছি। এইগুলো কি তাহলে? আন্সার মি চিৎকার করে বলে রুদ্র।
– রুদ্র আমার কথাটা শুন। হয়তো সত্যি আমাদের ভুল হচ্ছে৷ দোলা এমন টাইপের মেয়ে নয়। কেউ ইচ্ছে… শাট আপ রাজ! জাস্ট শাট আপ। আমি আর একটাও কথা শুনতে চাইনা তোর মুখ থেকে। আমি আগে থেকে জানতাম দোলা সামিরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। দোলা কখনোই ভালো মেয়ে ছিলো না। যদি সে ভালো হতো তাহলে আরেকটা মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করতো না৷ আর এখন ” বিয়ের পরও পরোকিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ছিহ ধিক্কার জানায় রুদ্র।
– তুই শিওর কীভাবে হচ্ছিস রুদ্র যে এই ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি সামিরই?
– আমি জানি এটা সামির। তার জন্য আমার আলাদা ভাবে কোনো প্রমাণের দরকার নেই। আমি ওকে সুযোগ দিয়েছিলাম। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম৷ ওর সব ভুল ক্ষমা করে দিয়ে নতুন ভাবে পথ চলতে চেয়েছিলাম আর কি করলো দোলা এটা? কি প্রতিদান দিলো তার। ভার্সিটির নাম করে এইসব নোংরামি করে বেড়ায় ও। আমার নিজের প্রতি নিজেরই করুণা হচ্ছে আজ৷ আমি আবারও ঠকে গেলাম রাজ। আমি আমার ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম আবারও আজ ভেঙে পড়ে রুদ্র।

— রুদ্র আমার কথাটা শুন৷ তুই এত হাইপার কেনো হচ্ছিস। আমাদের বিষয়টা ভালো ভাবে দেখা উচিত। দরকার হয় দোলার সাথে কথা বলবো এই ব্যপারে আমরা।
রাজের কথা শুনে রুদ্র হাসে। পাগলের মতো হাসতে থাকে। রাজ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে।
তোর কি মনে হয় রাজ” আমি দোলাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো আজ। কোনো প্রশ্ন করবো না। আমার জবাব চাই জবাব। সব কিছুর উত্তর আজ দোলাকে দিতে হবে। সব কিছু আজ তার জানতে হবে কথাটা বলে রুদ্র রাজের হাত থেকে ছবিগুলো এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়৷ রাজ পিছু ডাকলেও রুদ্র কানে নেয় না। রাজ চিন্তিত হয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। কিছু একটা ভেবে বেরিয়ে আসে সেও।

— দোলা তার রুমে নির্বাক ভঙ্গিতে বসে আছে। এমন একটা সত্যের মুখোমুখি হবে সে ভাবতে পারিনি৷ রুদ্র তার থেকে এত বড় সত্যি লুকিয়ে যাবে কল্পনাও করেনি৷ দোলার মধ্যে ক্ষোভ, অভিমান, হীনতা আসে সবার প্রতি। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ তাকে ঠকিয়েছে৷ সত্যটা আড়াল করেছে । দোলার কান্না পাচ্ছে ভীষণ। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। দোলা বন্ধ ঘরের রহস্য জেনে যাওয়ায় এতো তোলপাড় তার মধ্যে। অনেক চেষ্টার পরে দোলা সফল হয় ওই ঘর পর্যন্ত যেতে। আর গিয়ে যা কিছু দেখে তার জন্য দোলা একদম প্রস্তুত ছিলো না। দোলা চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে। আজ সবার থেকে তার সব প্রশ্নের উত্তর চাই। কেনো তার থেকে সত্যটা আড়াল করা হয়েছে তার জবাব দোলার চাই। দোলা ঘর থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রুদ্র আসে। দোলা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। অভিমানটা যেনো রাগে আকার নেয়। কিন্তু দোলা লক্ষ্য করে রুদ্রকে অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে আজ৷ সেই হিংস্রতা তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কেনো? দোলার ভাবনার মাঝে রুদ্র হাতে থাকা ছবিগুলো ছুড়ে মারে দোলার দিকে। দোলা চমকে উঠে তাতে। রুদ্রর দিকে একবার তাকিয়ে নিচে তাকাতেই চোখ যেনো কপালে উঠে যায়। তার আর সামিরের ভার্সিটির সেই মুহুর্তের ছবি জ্বলজ্বল করছে এখানে। দোলার মধ্যে ভয় চেপে বসে। তার অভিমান তার প্রশ্ন গুলো আপাতত অবসান নেয়। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে দোলা। দোলা তো এই ভয়টাই করেছিলো যাতে রুদ্র না জানে কিছু। কিন্তু সেটাই হলো। কিন্তু এইভাবে ছবিগুলো কে তুলেছে৷ প্রতিটি ছবি এত নিখুঁত ভাবে তোলা হয়েছে যে! যে কেউ দেখলে বলবে সামির আর দোলা বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় সময় কাটিয়েছে৷ এমনকি কয়েকটা ছবিতে মনে হচ্ছে সামির দোলাকে কিস করছে। দোলা একবার রুদ্র তো একবার ছবি গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে আরও দুর্বল হয়ে উঠছে দোলা। হাত-পা রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। রুদ্রর চোখ মুখে যে হিংস্রতা বিরাজ করছে তাতে দোলা নিশ্চিত তার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না।

— এইগুলোর মানে কি দোলা? শান্তশিষ্ট কন্ঠস্বর রুদ্রর? কিন্তু দোলা আঁতকে উঠে রুদ্রর কথায়। কিছু একটা বলার মতো অবস্থাও তার মধ্যে নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ কোনো রকম আওয়াজ চাইলেও বের করতে পারছে না। শুধু ভয়ার্ত চোখ দুটো রুদ্রর দিকে দিয়ে রেখেছে।

– উত্তর দাও দোলাপাখি। এইগুলোর মানে কি? কেনো করলে তুমি এমন? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম৷ তোমাকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম আর তার প্রতিদান তুমি এইভাবে দিলে। পুরাতন প্রেমিকের সাথে এইভাবে সময় স্পেন্ড করলে। রুদ্রর ঠোঁটে হাসি। কিন্তু এটা কোনো সুখকর হাসি নয়৷ তাচ্ছিল্যের হাসি,ঘৃণার হাসি, রাগ, জেদ অভিমান সব মিশ্রিত তার মধ্যে। রুদ্রর শান্ত থাকাটা দোলার মধ্যে তীব্র ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।

– কি হলো দোলা কিছু বলো। আজ তোমার চুপ থাকলে তো চলবে না। এতদিন আমি বলে এসেছি আমি সব কিছু করে এসেছি৷ আজ তুমি বলবে আমি শুনবো। বলো বলো। দোলা এখনো চুপ৷ দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রর রাগের মাত্রা বেড়ে যায়। মাথায় যেনো আগ্নেয়গিরির লাভা ফুটন্ত।

– চুপ করে আছো কেনো উত্তর দাও আমায়? কেনো ঠকালে আমায়? কেনো প্রতারণা করলে আমার সাথে। স্বামী থাকা সত্ত্বেও পর-পুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখার কি মানে দোলা? আমি জানতাম তোমার আর সামিরের রিলেশন আছে কিন্তু সেটা তো বিয়ের আগে ঠিক ছিলো। বিয়ের পরেও কেনো করলে এমন? কেনো আমার ভালোবাসাকে অপমান করলে তুমি? রুদ্রর চোখে পানি চলে আসে অজান্তে। ভালোবাসার কাছে পরাজিত হলে হৃদয় জুড়ে কি ক্ষত হয় সেটা একমাত্র হৃদয় ভাঙা ব্যক্তিটায় জানে।

— আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করুন রুদ্র। এইসব মিথ্যা অনেক কষ্টে বলে দোলা।
– এখনো মিথ্যা বলছো দোলা। কীভাবে? কীভাবে পারছো এত কিছুর পরেও মিথ্যা বলতে৷ আচ্ছা কোনটা অস্বীকার করবে তুমি? এই ছবিগুলো, সামিরের সাথে তোমার গভীর সম্পর্ক আছে সেটা। নাকি তুমি নিজ হাতে একটা মেয়ের জীবন শেষ করেছো সেটার। দোলা অবাক হয়ে তাকায়। বিস্মিত কন্ঠে বলে আমি কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি?
– হ্যাঁ করেছো। তুমি জেনে বুঝে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছো৷ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো তাকে। তুমি শুধু ঠক-প্রতারকই না দোলা৷ তুমি একজন খুনি।

– রুদ্র! কি বাজে বকছেন এইগুলো। উত্তেজিত কন্ঠে বলে দোলা।
– একদম গলা তুলে কথা বলবে না আমার সাথে৷ অন্যায় করে আবার গলাবাজি হচ্ছে৷ তোমার মতো বাজে মেয়ের জন্য আজ সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো অবহেলিত। তোমরা তো ভালোবাসা নিয়ে খেলা করো শুধু আর ভোগান্তি তো হয় আমাদের মতো সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ গুলোর৷ যেমন ভালোবাসার প্রতিদান স্বরুপ জীবন দিতে হয়েছে নেহাকে। তার জন্য দায়ী তুমি। তুমি সামিরের সাথে রিলেশন করে নেহাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো। তুমি জানতে নেহা সামিরকে ভালোবাসে আর তুমি কি করলে৷ সব জেনে-বুঝে সামিরের সাথেই সম্পর্কে জড়ালে।
– রুদ্রর কথায় দোলা কি রিয়াকশন দেবে সেটাই ভুলে গেছে। শুধু বাকহারা হয়ে তাকিয়ে আছে।
– নেহা আমার সব চেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো। আমি রাজ নেহা একে অপরের ভালো বন্ধু ছিলাম। কিন্তু জানি না নেহা কীভাবে ওই সামির কু* বাচ্চার প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে যায়৷ আমরা প্রথমে কিছুই জানতাম না৷ কারণ নেহা আমাদের কিছু বলতে পারেনি সাহস করে আর সেটাও সামিরের জন্য। কারণ সামির জানতো আমরা যদি নেহার সাথে ওর রিলেশনের কথা জানি তাহলে নেহাকে সাবধান করে দেবো। সামিরের প্রতিটি কুকর্মের কথা ফাঁস করে দেবো। তাই কায়দা করে নেহাকে রাজি করায় যাতে ও আমাদের কিছু না বলে। এরপর সামির ভালোবাসার কথা বলে বিয়ের প্ররোচনা দিয়ে ভোগ করে নেহাকে। নেহা এইসবের কিছুই বুঝতে পারেনি। কারণ সে-তো সামিরকে সত্যি ভালোবেসেছিলো। এরপর যখন নেহা অজান্তে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় সামিরকে জানালে সামির সব অস্বীকার করে। এমনকি নেহা বিয়ের কথা বললে সেটাও অস্বীকার করে। দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে অবহেলা শুরু করে সামির নেহার প্রতি। নেহা যখন সামিরের মুখোমুখি হয় আবার তখন সামির জানায় তোমার সাথে নাকি সামিরের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক আছে। আর সেটা খুব শীগ্রই বিয়েতে পরিনতি নেবে৷ নেহা তার সম্মান তার ভালোবাসা তার অনাগত সন্তানের অধিকার পেতে যখন তোমার কাছে ছুটে যায় তখন তুমি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দাও। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কষ্ট বুঝোনি। উল্টো অপমান করে তাড়িয়ে দাও শূন্য হাতে। সামিরকে তুমি বিয়ে করবে এটা বলে দাও নেহাকে।

– দোলা কয়েক-পা পিছিয়ে যায়। আহত চোখে তাকিয়ে থাকে।
– জানো নেহার পরিণতি? কি হয়েছে তার সাথে জানো? জানবে কি করে? তোমাদের মতো মেয়েরা তো সম্পর্ক ভাঙতে জানে শুধু। কারো ব্যাপারে খবর নেওয়ার সময় কোথায়।

– দোলার মনে পড়ে যায় আজ থেকে প্রায় সাত-আট মাস আগের কথা৷ যখন সামির দোলাকে বলেছিলো একটা বাজে মেয়ে নাকি তার পিছু করেছে। অহেতুক দোষ দিচ্ছে। কিন্তু সামির মেয়েটাকে চিনে না। এরপর সামির নেহার ব্যাপার বুঝিয়ে বলে। তবে যা কিছু বলে সবই মিথ্যা দিয়ে ভরা৷ দোলা সরল মনে সব কিছু বিশ্বাস করে। কারণ সে সামিরের কোনো বাজে কাজ বা খারাপ কিছু দেখেনি। তাই সামির যে কোনো খারাপ কাজ করতে পারে সেটা কখনোই বিশ্বাস হয়না। এরপর দোলা যখন জানতে চাই তার কি করতে হবে এর জন্য। তখন সামির দোলাকে বলে নেহা তার কাছে আসলে যাতে এইগুলা বলে। তার সামিরের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে। নেহা যেনো সামিরের পিছু ছেড়ে দেয়। নেহা দোলার সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলো আর নেহা সামিরকে এটাও বলেছিলো যে সে দোলার কাছে গিয়ে সব কথা বলে দেবে। সব জানার পর সামির তার মতো করে সবটা সাঁজিয়ে নেয়৷ এরপর দোলাকে ভুলভাল বোঝায়। দোলা সামিরের কথা মতো কাজ করে। নেহা আসলে এইসব বলে অপমান করে। তবে দোলার অনেক খারাপ লেগেছিলো সেদিন নেহাকে দেখে। নেহা যখন দোলার পা ধরে সামিরকে ভিক্ষা চাই তখন দোলার ইচ্ছে করছিলো সব কিছু বলে দিতে। কিন্তু দোলা সামিরের কথা ভেবে আর কিছু বলতে পারে না। কিছু সময়ের জন্য দোলা মেনেই নেয় নেহা ভালো মেয়ে নয়। ছেলেদের ফাঁসানো তার স্বভাব। কিন্তু এর মধ্যে এত বড় ধোকা থাকবে দোলা কল্পনাও করেনি। সামির এত জঘন্য খারাপ একটা মানুষ দোলার কল্পনাতেও আসেনি কখনো। সব কিছুর জন্য দোলার নিজের প্রতি করুণ, ধিক্কার জানায়।

– দোলা তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলে আমি কিছু করিনি রুদ্র। নেহাকে আমি এইসব বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমাকে এইগুলো সামির… তার আগে রুদ্র দোলার গলা চেপে ধরে।
– একটাও কথা শুনতে চাইনা আর। তোর মতো বাজে মেয়ের মুখ দিয়ে আর নেহার নাম নিবি না। আমার ভুল ছিলো তোকে বিয়ে করা৷ তোকে ভালোবাসা। আমি যদি জানতাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যার জন্য জীবন দিয়েছে যার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে সেটা তুই ছিলিস। তাহলে তোকে বিয়ে তো দূর তোকে সেদিনই মেরে পুতে রাখতাম। কিন্তু আফসোস আমি প্রথম দেখায় তোকে ভালোবেসে ফেলি দ্বিতীয়বারের মতো। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আমার মনে নতুন করে ভালোবাসার জন্ম নেয় তোকে দেখে। তোকে দেখে আমার মনে হয়েছিলো আমার নতুন জীবনের সূচনার নতুন অধ্যায় তুই। কিন্তু না তুই সেই বিষাক্ত কাটা। যা একবার বিঁধলে মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তুই আমার জীবনের কোনো সজীবতা বয়ে আনার জন্য নয় বরং আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য আগত হয়েছিস। তোকে নিয়ে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখাটা ছিলো আমার বোকামি। কিন্তু যখন সবটা জানতে পারি ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়৷ নতুন জীবনে পদার্পণ হয়ে যায় আমার তোকে নিয়ে। তখন ইচ্ছে করছিলো নিজের চুল নিজে ছিড়ি। যাকে ঘৃণা করি তাকেই ভালোবাসতে হবে ভাবিনি। নতুন করে কোনো প্রতারক আমার জীবনে আসবে আমি ভাবিনি। তখন না পারতাম সইতে আর না পারতাম মানিয়ে নিতে আর না পারতাম এড়িয়ে যেতে। একদিকে ভালোবাসা আরেক দিকে ঘৃণা। হাঁপিয়ে উঠি আমি সব কিছুতে৷ এরপরও আমি কিছু জানতে বা বুঝতে দিইনি তোকে। ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজেকে শোধরাই নিবি তুই। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল ছিলো তার প্রমাণ এই ছবিগুলো।

– দোলা আজ বুঝতে পারে রুদ্র কেনো তার সাথে এমন করতো। কেনো অল্পতে সন্দেহ করতো। কিন্তু এখানে তো তার কোনো দোষ নেই। তাহলে কেনো তার শাস্তি সে পাবে?

— দোলা রুদ্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। রুদ্র খুবই শক্ত করে দোলার গলা চেপে ধরে আছে৷ এখনই দোলার প্রাণ পাখি উড়াল দেবে যা ভাব। রুদ্র চাইলেও আজ নিজেকে সামলাতে পারবে না। তার মধ্যে যে ঝড় বয়ছে সেটা সহজে থামার নয়।

— দোলা নিজের সর্বস্ব দিয়ে রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। রুদ্রর থেকে ছাড়া পেয়ে গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। লাল হয়ে উঠেছে দুটো চোখ। জোরে জোরে টানা শ্বাস নিতে থাকে।

— তোকে আজ আমি নিজ হাতে শেষ করবো। ভাবিস না আমাকে ঠকিয়ে পার পেয়ে যাবি৷ সব কিছুর মূল্য আজ তোকে দিতে হবে বলে রুদ্র কোমর থেকে বেল্ট খুলতে থাকে৷ দোলা তাই দেখে আরও ঘাবড়ে যায়। দেয়ালের সাথে শিটে দাঁড়ায় গিয়ে। শরীর খারাপ করতে থাকে দোলার। রুদ্র বেল্ট খুলে উপরে উঠায় দোলাকে মারার জন্য এমন সময় রত্না চৌধুরী রুদ্র বলে চিৎকার করে ডেকে উঠে। তানিয়া ছুটে এসে দোলাকে জড়িয়ে ধরে। মায়ের ডাকে রুদ্রর হাত থেমে যায়। দোলা জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়ে নিচে।

— চলবে….

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১৭’

-” এইসব কি হচ্ছে রুদ্র? তুই দোলার গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলি। এত অধঃপতনে চলে গেছিস তুই। আমি তো তোকে এই শিক্ষা দিইনি কখনো রেগে বলে রত্না চৌধুরী। দোলা গুটিশুটি মেরে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। রুদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলে আমি আবারও ঠকে গেছি মা। মিথ্যে ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা প্রতারিত হয়েছে আবাবো। রুদ্রর কথায় রত্না চৌধুরী বিস্ময় নিয়ে বলে কি বলছিস রুদ্র? কি হয়েছে তোর? রুদ্র ফ্লোরে থাকা ছবিগুলো তুলে রত্না চৌধুরীর সামনে ধরলে রত্না চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
– দোলা আমাকে ঠকিয়েছে আবার। আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে। আমি হেরে গেছি আবারও মা। ভেঙে পড়ে রুদ্র। তানিয়া ছবিগুলোর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ দোলা মাটির দিকে তাকিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। কি বলবে এখানে সে। কাকে বিশ্বাস করাবে। তাছাড়া বললে বিশ্বাস কেনো করবে সবাই? কারণ বিশ্বাস করানোর মতো আপাতত তার কাছে কিছু নেই।
–;দোলা এইসব কি? তুমি এমনটা কেনো করলে রুদ্রর সাথে? আমার ছেলেটা তো তোমায় কম ভালোবাসা দেয়নি। তাহলে এর প্রতিদান কেনো এইভাবে দিলে। বিয়ের পরও তুমি বাইরে… কথাটা বলতেও বিবেকে বেঁধে যায় রত্না চৌধুরীর। দোলা আজ অপরাধী সবার কাছে৷ সবার অভিযোগ শোনা ছাড়া কিছু করার নাই আজ৷
– ব্রো আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ভাবি এমন কখনোই করতে পারে না৷ আর কেউ না জানুক আমি জানি ভাবি তোমাকে ভালোবাসে। হয়তো বিয়েটা তোমাদের মতের বিরুদ্ধে হয়েছে ভাবির। কিন্তু পরে ভাবি তোমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছে৷ তোমার সাথেই সংসার গুছিয়ে নিতে চাই।
– তুই চুপ কর তানিয়া। এইসবের পরেও তোর মনে হয় দোলা এই সংসারে থাকতে চাই। আমাকে ভালোবাসে ও? যদি তাই হতো তাহলে এইভাবে অন্য পুরুষের সাথে মিলামিশা করতো না। রুদ্রর এই কথাটা দোলার হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করে।
— আজ ওকে উত্তর দিতে হবে। কেনো করেছে এমন? কেনো আমাকে ঠকিয়েছে তার জবাব দিতে হবে৷ আমার ভালোবাসাকে অমর্যাদা করেছে তার প্রতিদানও দিতে হবে ওকে দোলার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। দোলা এবার উঠে দাঁড়ায়৷ চোখের পানি মুছে চোখ মুখে তিক্ততা এনে বলে শুধু আমি একাই ঠকিয়েছি আপনাকে৷ আর আপনি কি করেছেন আমার সাথে? আপনি কি আমাকে ঠকান’নি? এই পরিবারের সবাই আমাকে ঠকিয়েছে, সত্যটা আড়াল করেছে। এর প্রতিদান কে দেবে আমায় বলতে পারেন?
– দোলার কথায় সবাই কৌতুহলী হয়ে বলে মানে?
– দোলা আলমারি থেকে একটা ছবি বের করে সবার সামনে ধরলে আঁতকে উঠে সবাই৷ রুদ্র হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে ছবির ফেমের দিকে।

– এইগুলো কি বলুন আমায়। আপনি যে আগেও একটা বিয়ে করেছেন সেটা বলেছেন আমায়? আমি ছাডাও আপনার জীবনে আরো একটা মানুষের জায়গা আছে সেটা কি জানিয়েছেন আমায়? আমি বলেছিলাম রুদ্র আপনাকে! যদি কোনো অতীত থেকে থাকে তাহলে আমাকে সেটা বলুন৷ আপনি এড়িয়ে গেছেন। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ আমাকে এড়িয়ে গেছে৷ ওই বন্ধ ঘরের আশেপাশেও যেতে দেয়নি কেউ আমায়। কারণ আমি যদি একবার ওই ঘরে যায় তাহলে তো আপনার সব সত্যি জেনে যাবো। কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না রুদ্র। ওই ঘরের প্রতিটি কোণায় কোণায় আপনার আর এই মেয়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। প্রতিটি দেয়ালে তাকে নিয়ে আপনার অনুভূতি জ্বলজ্বল করছে। এরপরও বলবেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন। মনটা তো একটাই রুদ্র তাহলে কয়জনের জন্য ভালোবাসা আপনার মনে বলুন আমায়?

– রুদ্র অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে৷ দোলার মধ্যে প্রবল উত্তেজনা, কষ্টের ভরাক্রান্ত স্রোত। দোলা তো অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে ওই ঘরে এইসব গুলো দেখে৷ একটা মেয়ে আর যাই হোক নিজের স্বামীকে কখনো অন্য মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারে না৷ হোক সেটা তার স্ত্রী বা বিশেষ কেউ।

– তুমি এই ছবি কোথায় পেলে? আমি তো বলেছিলাম তোমায় ওই ঘরে না যেতে তাহলে কেনো গিয়েছিলে তুমি? শান্ত কন্ঠে বলে রুদ্র।
— কেনো! গিয়ে কি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি আমি৷ আপনার গোপন তথ্য জেনে ফেলেছি সেটা খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে আমার তাই না। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন। সব কিছু আমার থেকে আড়ালে রাখতে দৃঢ় কন্ঠে বলে দোলা।
— আমি বলেছিলাম তোমায় ওই ঘরে না যেতে তারপরও কেনো গিয়েছো তুমি? চিৎকার করে বলে রুদ্র। হঠাৎ রুদ্রর এমন খেঁপে ওঠাতে দোলা ভয়ে কেঁপে উঠে চমকে যায়। রত্না চৌধুরী, তানিয়া আঁতকে উঠে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মজা লুটছে জেসমিন চৌধুরী। কারণ ঘরটা খুলতে সেই সাহায্য করে দোলাকে। দোলা যখন চাবি না পেয়ে হতাশ হয়। কেউ তাকে সাহায্য করেনা৷ ওই ঘর সম্পর্কে জানায় না৷ তখন সুযোগটা কাজে লাগায় জেসমিন চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী যখন বুঝতে পারে দোলা ওইঘরে যেতে চাই তখন সে আগ বাড়িয়ে আসে দোলাকে ঘরটা খোলার জন্য সাহায্য করতে। তিনি চাই রুদ্র আর দোলার মধ্যে দ্বন্দ্ব হোক৷ দোলা যেকোনো মূল্যে এই বাড়ি থেকে চলে যাক।

— এই মুখটাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। দেখতে চাইনা কখনো এই মুখটা আর তুমি আবারও তাকে আমার সামনে নিয়ে আসলে৷ কেনো করলে এমন? কেনো করছো তুমি এমন? রুদ্র পাগলামি করতে থাকে৷
– দোলা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলে যদি ঘৃণায় করবেন তাহলে এত যত্ন করে সাঁজিয়ে রেখেছেন কেনো স্মৃতি গুলো। কেনো এত ভালোবাসা, এত আবেগ প্রকাশ তাকে নিয়ে। দোলার মধ্যেও অস্থিরতা বিরাজমান

রুদ্র শান্ত হো বাবা তুই। রত্না চৌধুরী বলেন কান্নারত কন্ঠে। রুদ্র,রত্না চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেন৷ নিজেকে সামলাতে পারে না আর।
– আমি চাইনা এই মুখটা দেখতে মা৷ তারপরও কেনো বারবার আমার সামনে আসে৷ এই মুখটা আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেয় কেনো বুঝো না৷ চাইনা দেখতে আমি বলে রুদ্র দোলার থেকে ছবির ফেম নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। ফেমটা ভেঙে কুচি হয়ে যায়৷ দোলা কেঁপে উঠে শাড়ির দুই পাশ চেপে ধরে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। এবার দোলার দিকে তেড়ে এসে দোলার দুই বাহু চেপে ধরে বলে আই হেট ইউ? আই হেট হিম! আন্ডারস্ট্যান্ড? তোমরা সবাই বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতকতা করেছো আমার সাথে। তুমি আর রোজার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ তোমরা দুজনেই বেইমান। ঘৃণা করি তোমাদের কথাটা বলে রুদ্র দোলাকে ছেড়ে দিয়ে মাথা চেপে ধরে মুখ দিয়ে আহ শব্দ করে উঠে। রত্না চৌধুরী আর তানিয়া আঁতকে ওঠা চোখে তাকায়। দোলা ভয় পেয়ে যায় রুদ্রর এমন অস্থিরতা দেখে।
– ব্রো! তানিয়া রুদ্রকে ধরে এসে। রত্না চৌধুরী এগিয়ে আসে রুদ্রর দিকে৷
– আমি সহ্য করতে পারছি না এদের। চলে যাও আমার সামনে থেকে। মুখও দেখতে চাইনা আমি তোমার রুদ্র মাটিতে পড়ে যায় মাথা ধরে। রত্না চৌধুরী ডুকরে কেঁদে উঠে। দোলা স্থীর চাহনিতে তাকিয়ে। রুদ্রর এমন পরিস্থিতি হবে কল্পনাও করেনি সে।

– এর মধ্যে রাজের আগমন হয় সেখানে৷ রুদ্রকে ফ্লোরে দেখে রাজ ঘাবড়ে যায়। রুদ্র বলে ডেকে ছুটে আসে। ততখনে রুদ্র সেন্সলেস হয়ে যায়৷ সেই পুরোনো ক্ষত, পুরোনো স্মৃতি সব কিছু আবারো ক্ষতবিক্ষত করে দেয় তাকে৷ নতুন করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় হৃদয় জুড়ে।
– দোলা নিরুপায় ভঙ্গিতে সবটা দেখছে। কি হতে হয়ে গেলো বুঝতেই তার বেশ বেগ পোহাতে হয়।
— রাজ আমার ছেলেটাকে বাঁচা বাবা৷ আমার রুদ্রটা এবার শেষ হয়ে যাবে৷ দ্বিতীয়বার এই আঘাত কিভাবে মেনে নেবে আমার রুদ্র।।তুই এমনটা না করলেও পারতি দোলা’মা৷ কেনো এমনটা করলি আমার রুদ্রর সাথে৷ সেই পুরোনো ক্ষতটা খুঁচিয়ে ঘা করে তুললি তুই। আমার ছেলের সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেও ক্ষান্ত হতে পারলি না৷ কেনো যেতে গেলি ওই ঘরে। কি দরকার ছিলো এই ছবিটা ওর সামনে নিয়ে আসার৷ আমার ছেলেটা আর বাঁচবে না। এত ভালোবাসা, এত যত্নের এই প্রতিদান দিলি আমায়। রত্না চৌধুরী কান্নায় ভেঙে পড়েন৷

– আমি আগেই জানতাম এই মেয়ে সুবিধার না৷ রুদ্রকে একবারে শেষ করে দেওয়ার জন্য এসেছে৷ আমার কথা তো তখন শুনোনি তোমরা। মাথায় তুলে রেখেছো সবাই মিলে৷ আজ তার দাম তোমাদের দিতে হচ্ছে৷ কে জানে রুদ্র আর সুস্থ হতে পারবে কি-না। নাকি এই আঘাত না মানতে পেরে উপরে… ফুপি! চিৎকার করে উঠে দোলা জেসমিন চৌধুরীকে থামিয়ে দিয়ে।
– জেসমিন চৌধুরী চমকে উঠে দোলার কথায়।
– একদম বাজে কথা বলবেন উনাকে। কিছু হবে না উনার। উনি ঠিক হয়ে যাবে। দোলা এবার রুদ্রর কাছে ছুটে আসে৷ রাজ আর রুদ্রকে ধরে আছে।
– রাজ ভাইয়া কি হয়েছে উনার? উনি এমন কেনো করছেন? কি হয়েছে উনার বলবেন কেউ কথাটা বলে দোলা ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। রত্না চৌধুরী, তানিয়া সবাই কান্না করছে।

– রাজ ভাইয়া! ব্রোকে হসপিটাল নিতে হবে। এইভাবে রাখাটা ঠিক হবে না৷ তুমি কিছু একটা করো প্লিজ কান্নারত কন্ঠে বলে তানিয়া। রাজ রুদ্রকে দোলার কাছে দিয়ে ফোন বের করতে করতে বাইরে চলে যায়।

– সব কিছু এলোমেলো করে দিয়ে এখন ন্যাকামি করা হচ্ছে৷ দরদ দেখানো হচ্ছে। তোমার জন্য রুদ্র আজ জ্ঞ্যানহীন হয়ে পড়ে আছে৷ তোমার মতো মেয়ে মানুষ গুলো শুধু মানুষকে আঘাত দিতে পারে। কষ্ট দিতে পারে৷ কিন্তু ভালোবেসে সাথে থাকার যোগ্যতা রাখে না৷ জেসমিন চৌধুরী বলেন কটাক্ষ কন্ঠে।
– মা চুপ করবে প্লিজ৷ এখন এইসব কথা বলার মুডে নেই আমরা। এই নিয়ে পড়ে কথা বলা যাবে৷ তানিয়ার কথায় একটা ভেংচি কেটে চুপ হয়ে যায় জেসমিন চৌধুরী।

– তানিয়া উনার কি হয়েছে আমাকে বলো না। কেনো উনি এতটা অসুস্থ হয়ে পড়লেন৷ আমি তো এমনটা চাইনি৷ উনি কেনো এতটা হাইপার হয়ে গেলো ওই ছবিটা দেখেন। উনি তো ভালোবাসতেন মেয়েটাকে। তাহলে কেনো এমন হলো? দোলার মধ্যে অনেক অনেক কৌতুহল, প্রশ্ন, জানার আগ্রহ।
– এর মধ্যে রাজ হন্তদন্ত হয়ে আসে আবার।
– তানিয়া রুদ্রকে ধরতে সাহায্য করো আমায়। আর একটু বাদে এম্বুলেন্স চলে আসবে৷ ততখন রুদ্রকে বিছানায় শুয়ে রাখি৷ রাজের কথায় তানিয়া চোখ মুছে রুদ্রকে ধরে। দোলা সহ ধরতে গেলে রত্না চৌধুরী হুংকার ছেড়ে বলে খবরদার আমার ছেলেকে স্পর্শ করবি না তুই৷ আমি চাইনা আমার ছেলেটা তোর স্পর্শে একবারে শেষ হয়ে যাক। শেষ যাত্রায় অন্তত এতটুকু সুখ দে আমার ছেলেটাকে। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা অবাক হয়ে বলে মা এই কথাটা বলতে পারলেন আমায়। আমি আপনার ছেলেকে শেষ করে দেবো এটা ভাবলেন কি করে?

– রত্না চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে নেয় দোলার দিক থেকে। ছেলের শোকে কাতর তিনি৷ কি বলছেন কি করছেন মাথায় কাজ করছে না যেনো। তানিয়া দোলার দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করে চুপ হতে বলে। দোলার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে শুধু৷ রুদ্রর ঘুমন্ত মুখটার দিকে মায়া নিয়ে তাকায় দোলা। নিজের করা কাজের জন্য এখন নিজেরই খুব আফসোস হচ্ছে দোলার৷ মনে হচ্ছে এইগুলো না করলে হয়তো রুদ্রর এমন অবস্থা হতো না৷ কিন্তু রুদ্র কেনো এতটা ভেঙে পড়লো? কেনো এত রিয়াক্ট করলো ছবিটা দেখে দোলা এটাই বুঝতে পারছে না।

— রাতে! রুদ্রর কাছে রাজ, তানিয়া আর তানভীর আহমেদ আছেন৷ রুদ্রর এখনো জ্ঞ্যান ফিরেনি। রত্না চৌধুরী আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাজ বারণ করে। রত্না চৌধুরীর ওই অবস্থায় হসপিটাল না আসাটা ঠিক হবে ভেবে আর আসতে দেয়না৷ তবে রাজ প্রতি মুহুর্তে খবর দিতে থাকে তাকে। দোলা রুদ্রর সাথে যেতে চাইলে রত্না চৌধুরী তখনো বাধা দেয়। রুদ্রর আশেপাশে আর দেখতে চাইনা দোলাকে। রুদ্র যাওয়ার পর থেকে ঘরেই বসে আছে দোলা। রুদ্রর কোনো রকম খবর তার জানা নেই আর না সেই সাহস আছে কারো থেকে জানার মতো। রত্না চৌধুরীও এখন সহ্য করতে পারছে না তাকে৷ পারবে কি করে। তার সন্তানের এই করুণ পরিস্থিতির জন্য যে সে দায়ী৷

— দোলার নজর যায় ফ্লোরে পড়ে থাকা ভাঙা ছবির ফেমটার দিকে৷ এখানে রুদ্র আর মেয়েটাকে অনেক হাসিখুশি দেখাচ্ছে৷ দুজন বিয়েতে যে অনেক হ্যাপি ছিলো ছবি তার প্রমাণ। তাহলে কি এমন হয়েছিলো তাদের মধ্যে? কেনো রুদ্র সহ্য করতে পারছে না তাকে। আচ্ছা উনি কি যেনো নাম বলেন মেয়েটার। দোলা ভাবতে থাকে৷
– রোজা! হ্যাঁ রোজা মেয়েটার নাম৷ নাহ এই ভাবে বসে থাকলে হবে না। আমাকে সত্যিটা জানতে হবে৷ উনি কেমন আছেন এটাও জানতে হবে আমাকে। দোলা উঠে দাঁড়ায়৷ চোখ মুছে ওয়াসরুমে যায়। চোখ মুখে পানির ছিঁটে দিয়ে বেরিয়ে আসে৷ উদ্দেশ্য এখন রত্না চৌধুরীর কাছে যাবে৷ সব কিছু জেনেই ছাড়বে দোলা।

— আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল। রুদ্র আর দোলার সম্পর্ক প্রায় শেষ। রুদ্র তো এখন আর দোলার মুখটাও দেখতে চাইনা। রুদ্র সুস্থ হয়ে আসলে দোলাকে বের করে দিবে আমি নিশ্চিত খুশিতে গদগদ হয়ে বলে জেসমিন চৌধুরী। সামনে থাকা ব্যক্তি টি সার্থক হাসি দিয়ে বলে রুদ্র আর দোলা আলাদা হওয়া র জন্য বিশেষ ক্রেডিট তোমার পিপি। ব্যক্তিটির কথায় জেসমিন চৌধুরী দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে তুমি কি আমার পর নাকি রোজা। যা কিছু করেছি সবই তো তোমার জন্য। তুমি শুধু আমার দিকটা একটু দেখো তাহলে হবে৷ জেসমিন চৌধুরীর কথায় রোজা হো হো করে হেসে বলে চিন্তা করো না পিপি। তুমি তোমার কাজের মুল্য পেয়ে যাবে সময় হলে। এর মধ্যে সামির আসে সেখানে। এতদিন পেছনে থেকে যে কলকাঠি নাড়ছিলো সেটাই রোজায়। রুদ্রর প্রথম স্ত্রী।

– আসো সামির আসো। আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল। রুদ্র আর দোলা এখন দুই মেরুর মানুষ। রুদ্র তার পিয়ারের দোলাকে রিজেক্ট করেছে। এখন তুমি দোলাকে সহজেই পেয়ে যাবে। রোজার কথায় সামির মুচকি হেসে বলে এত তাড়াতাড়ি আর এত সহজে কাজটা হয়ে যাবে ভাবিনি৷ এবার আর একটু কাজ বাকি। সামিরের কথায় রোজা ভ্রু কুচকে বলে কি?
– রুদ্রর নামে আর একটু বিষ দোলার কানে দেওয়া বাকি। তাহলে দোলা আর কখনো রুদ্রর মুখ দেখবে না৷ সামিরের কথায় রোজা মুচকি হেসে বলে এবার রুদ্রর জীবনে এন্ট্রি নিবে রোজা। আবারও রুদ্রকে নতুন করে ভেঙেচূড়ে একদম নিঃশেষ করে দেবো। রোজার কথায় সবাই শব্দ করে হেসে উঠে একসাথে।
– আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো রোজা আপু? সামিরের কথায় রোজা ভ্রু কুচকে বলে কি?
– তুমি কেনো রুদ্রর ক্ষতি করতে চাও? আই মিন তোমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসতে। তাহলে কেনো করলে এমন? কৌতুহল জেসমিন চৌধুরীর মধ্যেও। রোজা মৃদু হেসে বলে সেটা সময় আসলে জানতে পারবে৷ আপাতত আমাদের পরবর্তী কাজের জন্য রেডি হতে হবে।

— রত্না চৌধুরী তার ঘরে বসে আছে৷ মনটা বড়ই অস্থির রুদ্রর জন্য। ইচ্ছে করছে এখুনি ছুটে যেতে ছেলের কাছে। এমন সময় একজন সার্ভেন্ট এসে রত্না চৌধুরীকে জানায় হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে৷ রুদ্রকে ফোনে না পেয়ে বাড়িতে ফোন দেয় তারা।
– রত্না চৌধুরী কিছুক্ষণ ভাবান্তর হয়ে থেকে বেরিয়ে আসেন ঘর থেকে। ড্রয়িং রুমে এসে ফোন রিসিভ করতেই জানতে পারে দোলা প্রেগন্যান্ট। খবরটা শুনে রত্না চৌধুরী কি রিয়াকশন দেবে সেটাই ভুলে গেছে৷ চোখের কোণে আবারও পানিতে চিকচিক করে উঠে। এটা অতি আনন্দের কান্না। এত কষ্টের মধ্যে ঠোঁটের কোণে হাসি আসে তার। ওই মুহুর্তে হাজির হয় দোলা সেখানে৷ চোখ মুখ কুচকে রত্না চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থাকে দোলা। দোলাকে দেখা মাত্র রত্না চৌধুরী খুশিতে আত্মহারা হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে দোলা তুই মা হতে চলেছিস মা। আমার এই ঘর আলো করে ছোট একটা সন্তান আসতে চলেছে তোর কোল জুড়ে। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলার হাতটা আপনাআপনি পেটে চলে যায়। পেটে হাত রাখতেই দোলার মধ্যে অন্য রকম একটা অনুভূতি আসে৷ শরীর জুড়ে একটা কম্পনের সৃষ্টি হয়৷ মনে একরাশ প্রশান্তি, ভালোলাগা, সুখ অনুভব। ঠোঁটের কোণে সেই প্রত্যাশিত হাসি।

— চলবে…

— ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌