তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব-১৪+১৫

0
359

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১৪”

–” তানিয়ার সাথে রোকনের বেশ ভাব জমে যায়। তানিয়া দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে আসে ভার্সিটি থেকে। এসেই দোলার বাবা আর ভাইকে দেখে খুশি হয়। এরপর রোকনের সাথে আলাপ হতেই বেশ ফ্রি হয়ে যায় দুজন। রুদ্র বিকালের দিকে বাড়ি ফিরে আসে অফিস থেকে। দোলা আজ সারাদিন ভীষণ হাসিখুশি হয়ে আছে। রাশেদ মিয়া চলে যেতে চাইলে রুদ্র যেতে দেয়না। রুদ্রর মতে আজ রাতটা অন্তত তাদের থাকতে হবে এখানে। কারণ রুদ্র বাড়ি ফিরে দোলার হাসিখুশি মুখটা দেখতে পেয়ে সার্থক। দোলাকে এত খুশি এর আগে হতে দেখেনি রুদ্র। তাই দোলার খুশির জন্য হলেও একটা রাত রাখতে চাই রাশেদ মিয়াকে। রোকন তো অনেক খুশি বোনের কাছে একদিন থাকতে পারবে ভেবে।

— সন্ধ্যার সময়! তানিয়া, রুদ্র, দোলা একসাথে বসে গল্প করছে। বিভিন্ন কথা বলে হাসাহাসি করছে তারা। আর একদিকে বড়রা গল্প করছে। জেসমিন চৌধুরী সারাদিন রুম বের হয়নি আজ।
— রুদ্র এতখন রুমে ছিলো। সেও নিচে নেমে আসে সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। রুদ্র নিচে আসতেই রোকন উল্লাসিত কন্ঠে বলে দুলাভাই আসুন না আমরা একসাথে বসে গল্প করি। রোকনের মুখে দুলাভাই শুনে রুদ্র নাক মুখ কুচকে বলে হোয়াট? হঠাৎ রুদ্রর এমন রিয়াক্টে সবাই ঘাবড়ে যায়। দোলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তাহলে কি এখন রোকনকে বকবে উনি? এটাই ভাবনা দোলার মধ্যে।
– রোকন ভয়ার্ত কন্ঠে বলে কি হয়েছে দুলাভাই? আমি কি কোনো ভুল করেছি। আবারও দুলাভাই ডাক শুনে রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে এইগুলো কি ডাক হ্যাঁ। শুনো রোকন আমাকে এইসব দুলাভাই বলবে না। গম্ভীর কন্ঠস্বর রুদ্রর। দোলা আর তানিয়া এতখনে বুঝতে পারে রুদ্রর রিয়াক্ট করার কারণ। ঠোঁট চেপে হাসে দুজন। আর রোকন বেচারা মলিন চেহারা নিয়ে বসে আছে।
— কেনো কি সমস্যা? দুলাভাই ডাক কত সুন্দর একটা ডাক বলুন তো। তাছাড়া আপনি তো আমার ভাইয়ের দুলাভাই হোন সম্পর্কে। তাহলে এতো রিয়াক্ট করার কি আছে বুঝলাম না। ভাই তুই দুলাভাই বলেই ডাকবি দোলা বলে মুচকি হেসে। তানিয়া ফিক করে হেসে দেয় দোলার কথায়। পাশে থেকে রাশেদ মিয়া,রত্না চৌধুরী আর তানভীর আহমেদ তারাও মুখ চেপে হাসছে। কিন্তু রুদ্রর অবস্থা হযবরল। দোলার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বলে আমি যখন বলেছি দুলাভাই বলবে না মানে বলবে না। রোকন তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে ওকে। স্রেফ ভাইয়া আর নয়তো জিজু বলতে পারো সমস্যা নেই৷ তবে দুলাভাই একদম নয়।

— আচ্ছা দুলাভাই আমি.. শাট আপ রোকনের কথায় রুদ্র ধমক দিয়ে উঠে। দোলা এবার রেগে বলে আপনি আমার ভাইয়ের সাথে এইভাবে কথা বলবেন না। আমার ভাইয়ের যা ইচ্ছে তাই বলবে আপনার কি হুম। গন্ডার একটা কথাটা জোরেই বলে ফেলে দোলা। কথাটা বলে দোলা জিভ কেটে ঘাবড়ে যাওয়া চোখে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র চোখ পাকিয়ে দোলার দিকে তাকিয়ে থেকে হনহন করে উপরে চলে যায়। রুদ্র যেতেই সেখানে একদফা হাসির রোল পড়ে যায়। তবে দোলার মধ্যে ভয় জাঁকে। কারণ রুদ্র যে রেগে গেছে বুঝতে পারছে৷ তাছাড়া দোলার তো একটা ধন্যবাদ দেওয়ার ছিলো রুদ্রকে। তার জন্য তো দোলা আজ এত সুন্দর একটা দিন উপহার পেয়েছে।
– তানিয়া তোমরা বসে গল্প করো আমি আসছি বলে দোলা উঠে দাঁড়ালে তানিয়া মিটিমিটি হেসে ভ্রু উঁচিয়ে বলে কি ব্যাপার ভাবি! যেই বর রাগ করেছে ওমনি তুমিও ছুটছো বরের রাগ ভাঙাতে৷ তা কি করে রাগ কমাবে তোমার গন্ডারের শুনি। আদর দিয়ে বুঝি ফিসফিস কন্ঠে বলে শেষের কথাটা। তানিয়ার কথায় দোলার কান গরম হয়ে আসে। লজ্জায় গাল দুটো টমেটোর ন্যায় লালাভ হয়ে আসে৷ লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলে তুমি খুব অসভ্য হয়ে যাচ্ছো তানিয়া। কথাটা বলে দোলা আর দাঁড়ায় না। তানিয়া শব্দ করে হেসে দেয়।

— রুদ্র এসে বারান্দায় বসে। রাগে ফুঁসতে থাকে রুদ্র।
খুব সাহস বেড়ে গেছে। আমার সাথে রসিকতা করা। ওকে ফাইন! টাইম আমারও আসবে দোলা পাখি। আর তখন তোমায় বোঝাবো। এর মধ্যে দোলা এসে হাজির হয়৷ রুদ্রকে একা একা বিড়বিড় করতে দেখে ভ্রু কুচকে থাকে। রুদ্র বারান্দা থেকে ঘরে আসার উদ্যোগ নিতে দেখে দোলা দাঁড়িয়ে আছে সামনে। রুদ্রকে তাকাতে দেখে দোলা নড়েচড়ে উঠে।
– তুমি? তুমি এখানে কেনো এসেছো? রাগী গলায় বলে রুদ্র।
– সরি! হুট করে বলে উঠে দোলা। রুদ্র বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বলে কেনো?
– এই যে আপনাকে এতখন রাগানোর চেষ্টা করলাম তার জন্য। আমি মজা করছিলাম আপনার সাথে বিশ্বাস… কথা শেষ করার আগে রুদ্র দোলা হাত টেনে নিজের সাথে আবদ্ধ করে নেয় দোলাকে। দোলা হকচকিয়ে উঠে ভয়ার্ত চোখে রুদ্রর চোখে চোখ রাখে।
– রুদ্রনীল চৌধুরীর সাথে মজা করার সাহস দেখিয়ে একদম ভালো করোনি দোলাপাখি। রুদ্রর কথায় দোলা আমতাআমতা করে বলে সরি তো বললাম তার জন্য। আর কখনো এমনটা করবো না বিশ্বাস করুন৷ দোলার চোখ মুখে প্রচন্ড ভয়ের ছাপ। রুদ্রর বেশ মজা লাগছে দোলাকে এইভাবে দেখতে।
– এবার শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও দোলা-পাখি ফিসফিস কন্ঠে বলে রুদ্র। দোলা চমকে যাওয়া চোখে তাকিয়ে বলে শা-শাস্তি। কি শাস্তি দেবেন আপনি। দেখুন এটা কিন্তু ঠিক না৷ আমি তো সরি বলেছি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে দোলা।

– রুদ্র দোলার কথায় পাত্তা না দিয়ে টুপ করে একটা চুমু এঁকে দেয় দোলার গালে। দোলা বড় বড় চোখ করে তাকায় রুদ্রর দিকে। রুদ্র হো হো করে হেসে উঠে দোলার এমন রিয়াকশনে। দোলা বিস্ময় কাটিয়ে মুগ্ধ চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে৷ এই প্রথম সে রুদ্রকে এইভাবে প্রাণ খুলে হাসতে দেখছে। রুদ্র ছেড়ে দেয় দোলাকে। কোমরে হাত দিয়ে রুদ্র হেসে চলেছে। দোলা ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে মোহনীয় দৃষ্টি রাখে রুদ্রর পাণে।
– রুদ্র হাসি থামিয়ে বলে সিরিয়াসলি দোলা, তুমি শাস্তির কথা শুনে এতটা ঘাবড়ে যাবে ভাবিনি। আমার তো বেশ ইন্টারেস্ট লাগছিলো ব্যাপারটা। তোমার মুখটা তো দেখার মতো ছিলো কথাটা বলে রুদ্র আবার হাসতে শুরু করে।
– দোলাও এবার হেসে দেয় মাথা নিচু করে। ভালো লাগছে ভীষণ। মনটা কেমন জানি হাল্কা হাল্কা লাগছে দোলার৷ দোলা রুদ্রর দিকে আবার তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখেই বলে ধন্যবাদ! হঠাৎ দোলার মুখে ধন্যবাদ শুনে রুদ্র হাসি থামানোর চেষ্টা করে বলে কোন আনন্দে?
– এই যে আপনি আমাকে খুশি করার জন্য আমার বাবা ভাইকে এখানে আসতে বলেছেন। তাদের আসার অনুমতি দিয়েছেন তার জন্য। আমি সত্যি অনেক কৃতজ্ঞ রুদ্র আপনার কাছে। বাবাকে দেখে আমি যে কি পরিমাণ খুশি হয়েছি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো। ধন্যবাদ রুদ্র! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। রুদ্র বিমুঢ় চাহনিতে দোলার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কোনো কথা বলে না। রুদ্রকে এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে দোলা ভ্রু কুচকে তাকায়।

– শুকনো ধন্যবাদে তো হবে না দোলা-পাখি। আমার তো অন্য কিছু লাগবে ঠোঁটের কোণে দুষ্টামি হাসি নিয়ে বলে রুদ্র। দোলা ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে কি চাই আপনার?
– রুদ্র দোলার দিকে ঝুকলে দোলা কয়েক-পা পিছিয়ে যায় ভয়ে। রুদ্র দোলার হাত টেনে ধরে কাছে নিয়ে কানের পাশে মুখ লাগিয়ে আগের ন্যায় ফিসফিসিয়ে বলে আদর লাগবে আমার। রুদ্রর এতটুকু কথায় যথেষ্ট ছিলো দোলার মধ্যে শিহরণ জাগানোর জন্য। মুঠো বন্দী করে নেয় শাড়ির দুইপাশ। লজ্জা মিশ্রিত চাহনিতে মুচকি একটা হাসি রাখে। রুদ্রর ঠোঁট জুড়েও কাঙ্ক্ষিত হাসি।
– কি হলো করো! রুদ্রর কথায় দোলা হকচকিয়ে উঠে ব্যস্ত সুরে বলে কি?
– কি আবার আদর! সাবলীল ভাবে বলে রুদ্র। দোলা দ্বিগুণ লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে বলে ধ্যাত আপনি অনেক খারাপ। রুদ্র হেসে দেয় দোলার কথায়।
– তাহলে আমি করি আদর। তোমার দ্বারা সম্ভব না আগেই জানতাম। আমার পাওনা আমি নিজেই নিয়ে নিই বলে রুদ্র এগুতে গেলে দোলা রসগোল্লার ন্যায় চাহনি রেখে বলে ভালো হবে না কিন্তু। দোলা পিছু হঁটে দৌড় লাগাতে যাবে তখনই মাথাটা ঘুরিয়ে উঠে দোলার। সাথে গা গুলিয়ে আসে। দোলা মুখ চেপে ধরে ওয়াসরুমে ছুট লাগায়। হঠাৎ দোলার এমন হওয়াতে রুদ্র ঘাবড়ে যায়৷ চিন্তিত হয়ে সেও দোলার পিছু পিছু ওয়াসরুমে যায়।
– দোলা কি হয়েছে? শরীর খারাপ করছে? দোলাকে ধরে রুদ্র। দোলা বমির জন্য কিছু বলতে পারে না। বেশ কিছুখন পর দোলা স্বাভাবিক হয়। চোখ মুখে পানি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়৷ তবে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ে দোলা। রুদ্র দোলাকে ধরে বিছানায় বসায়।
– কি হয়েছে দোলা৷ তোমার শরীর কি বেশি খারাপ করছে। আমি ডক্টরকে কল করছি বলে রুদ্র উঠতে গেলে দোলা হাত চেপে ধরে ইশারা করে বলে ডক্টর না ডাকতে। রুদ্র ভ্রু কুচকে চিন্তিত দৃষ্টি রাখে।

– আমি ঠিক আছি রুদ্র। প্লিজ ডক্টর ডাকবেন না। মনে হচ্ছে উল্টো পালটা খাওয়া হয়ে গেছে বেশি। তাই এমন রিয়াকশন দেখা দিচ্ছে। আজ তো ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া হয়েছে৷ হয়তো গ্যাস্টিকের সমস্যা। ঠিক হয়ে যাবে আবার চিন্তা করবেন না। রুদ্র আহত চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। হুট করে দোলার শরীর খারাপ রুদ্র যেনো মানতে পারছে না। আর কেউ না জানুক রুদ্র তো জানে দোলা তার কাছে কতটা ইমপোর্টেন্ট।
– আমি একবার ডক্টর ডেকে চেকাপ করি দোলা। আমার মনে হচ্ছে তোমার শরীর ঠিক নেই। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তোমার শরীর ঠিক আছে তো। আই মিন আজই কি এমন হলো! নাকি? সন্ধিহান চাহনি রাখে রুদ্র৷ দোলা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে আমি ঠিক আছি রুদ্র। আমার কিছু হয়নি। বললাম তো গ্যাস্টিকের প্রবলেম। কিছুটা উত্তেজনার সাথে বলে দোলা। রুদ্র অবাক হয় দোলার কথায়৷ রেগে যাওয়ার মতো কি বলেছে রুদ্র বুঝতে পারছে না।
– রুদ্র আর জোর করে না দোলাকে। এক গ্লাস স্যালাইন পানি করে দোলাকে দেয়। তবে রুদ্রর মধ্যে টেনশন এক চুল পরিমাণ কমেনি।

– এইভাবে কেটে যায় দুদিন। সেদিনের পরেরদিন রাশেদ মিয়া চলে যায় রোকনকে নিয়ে। রুদ্র রাশেদ মিয়াকে কথা দেয় কিছুদিন পর সে দোলাকে সাথে করে ওই বাড়িতে যাবে৷ রাশেদ মিয়া খুবই খুশি হয় রুদ্রর কথায়৷ যে রুদ্রকে চিনতো জানতো সেই রুদ্রকে সবাই যেনো আবার নতুন করে চিনছে জানছে।

– দোলা,তানিয়া, আশা ভার্সিটির ক্লাস রুমে বসে আছে। ক্লাস শেষ তবে তারা সেখানেই বসে আড্ডা দিচ্ছে। দোলার শরীরটা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারপরও দোলা সেসবে পাত্তা দিচ্ছে না। ভালো হয়ে যাবে এই ভেবে দিন পার করছে।
— ভাবি আমার একটা ক্লাস আছে এখন৷ তোমরা থাকো আমি ক্লাসটা করে আসছি। এরপর বাড়ি ফিরবো একসাথে। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে আচ্ছা যাও। আমরা বাইরে থাকছি। তানিয়া চলে যায় সেখানে থেকে।
– দোলা আর আশা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে আশা ওয়াসরুমে ছুট লাগায় দোলাকে অপেক্ষা করতে বলে। দোলা ক্লাসরুমের সামনে বারান্দায় অপেক্ষা করছে। অতঃপর সেখানে সামির হাজির হয়৷ দোলাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয় সে। বিপরীতে দোলাও একটা হাসি দেয়।
– কি ব্যাপার দোলা। এই দুইদিন ভার্সিটি আসোনি যে? সামিরের কথায় দোলা হাসিটা বজায় রেখে বলে ব্যস্ত ছিলাম একটু তাই আশা হয়নি।
– সামির বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে।
– আচ্ছা সামির তুমি থাকো আমি যাই। কথাটা বলে দোলা সরে আসতে চাই। কারণ সে চাইনা রুদ্র আর তার মাঝে নতুন করে আর কোনো ঝামেলা হোক কাউকে নিয়ে। দোলা আসতে গেলে সামির পথ আগলে দাঁড়ায়। দোলা ভ্রু কুচকে তাকায়।
– আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে দোলা। সামিরের সিরিয়াস কথায় দোলা ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে প্লিজ সরে যাও সামির। আমার সাথে এই ভাবে হুটহাট করে কথা বলতে এসো না৷ তাহলে তোমার বিপদ হবে। চিন্তিত দেখায় দোলাকে।
কে করবে আমার বিপদ। তোমার স্বামী রুদ্রনীল চৌধুরী? সামিরের কথায় দোলা অবাক হয়ে বলে তুমি চেনো তাকে?
– রুদ্রনীল চৌধুরীকে কে না চেনে এই শহরে। নামকরা বিজনেসম্যান সেই সাথে একজন ঠক প্রতারক, খুনি। সামিরের কথায় দোলা রাগী গলায় বলে সামির কি বাজে বকছো এইসব।
– জানি আমার কথা বিশ্বাস করবা না তুমি৷ তাই তো তোমাকে আমি কিছু প্রমাণ দেখাবো আজ। তার আগে আমাকে এটা বলো দোলা। তুমি কেনো রুদ্রকে বিয়ে করতে গেলে। আমার জানা মতে তুমি তো তেমন মেয়ে নও। যার মধ্যে নেই কোনো অর্থের লোভ না আছে কোনো বেশি এক্সপেক্টেশন। তাহলে তুমি কেনো রুদ্রর মতো একটা মানুষকে বিয়ে করতে গেলে?

– এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নয় সামির। তাছাড়া তুমি কে আমাকে এইসব জিজ্ঞেস করার। আমি তোমাকে বন্ধুত্বের জায়গা দিয়েছি তাই বলে এই নয় তুমি আমার পার্সোনাল ম্যাটার নিয়ে কথা বলবে। তাছাড়া তুমি এখন যার সম্পর্কে কথা বলছো সে আমার স্বামী হয় ভুলে যেওনা। উত্তেজিত হয়ে বলে দোলা।

– তুমি শুধু শুধু আমার উপর রাগ করছো দোলা। আমি তোমার ভালো চাই তাই তোমাকে আমি এইসব কথা বলছি৷ তুমি যাকে স্বামী বলে দাবী করছো তার সম্পর্কে তোমার জানা উচিত। সে কেমন মানুষ তোমার জানা উচিত দোলা। দৃঢ় কন্ঠে বলে সামির।
– আমাকে যেতে দাও সামির৷ তোমার এইসব বাজে কথা শোনার সময় নেই আমার। কথাটা বলে দোলা চলে যেতে নিলে সামির বলে, পালাতে চাইছো তুমি দোলা। কিন্তু কেনো?

– দোলা চমকে যাওয়া চোখে তাকিয়ে বলে কি বলতে চাইছো?
– বলতে তো অনেক কিছু চাই। কিন্তু তুমি শুনলে তবে।
– জানোই তো আমি চাইনা শুনতে। তাহলে কেনো ফ্রোস করছো আমায়। দেখো সামির আমার কাছে এসো না আর। এতে তোমার আমার দুজনেরই ভালো হবে।
– সামির হুট করে দোলার হাত চেপে ধরে। এতে দোলা রেগে যায় অনেক।
– কি হচ্ছে সামির। হাত কেনো ধরছো আমার? ছাড়ো বলছি।
– আমার কথা না শুনলে আমি তোমাকে ছাড়বো না দোলা। প্লিজ একটি বার আমাকে বলার সুযোগ দাও। দোলা সামিরের হাত থেকে ছাড়ার চেষ্টা করে। সামির দোলাকে রুমের মধ্যে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে। দোলা ভয়ার্ত চোখে তাকায় সামিরের দিকে।

– সামির বাড়াবাড়ি হচ্ছে এটা৷ ছাড়ো আমাকে। কেউ দেখে ফেললে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
– কেউ দেখবে না। তুমি আগে আমার কথা শুনো। তোমার স্বামী কেমন মানুষ সেটা তোমার জানা উচিত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে সামির।
– আমি কিছু শুনতে চাইনা৷ ছাড়ো আমাকে চিৎকার করে বলে দোলা। দোলার মধ্যে ভয় একটাই যে সামির তার হাত ধরেছে এটা যদি রুদ্রর কান অব্দি যায় তাহলে রুদ্র আবার হিংস্র হয়ে উঠবে৷ দোলাকে ভুল বুঝবে। সাথে সামিরেরও ক্ষতি করবে। কিন্তু সামির কি বলতে চাই। রুদ্র ঠক প্রতারক খু/নি কেনো বলছে এইসব? দোলার মধ্যে দোটানা! ভয়, সংশয়।

– চলবে……

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১৫”

–” দোলা সামিরের থেকে ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সামির যেনো পণ করেছে! তার কথা না শোনা পর্যন্ত দোলাকে সে ছাড়বে না।
– কেনো করছো এমন সামির? প্লিজ আমাকে যেতে দাও। অসহায় কন্ঠস্বর দোলার।
– আমার কথাটা শুনো দোলা। আমি তোমার ভালো চাই বিশ্বাস করো। আহত কন্ঠে বলে সামির।

— দোলা নিজেকে শান্ত করে বলে আচ্ছা বলো কি বলবে।
– আমি জানি তুমি রুদ্রর সাথে ভালো নেই। আমি এটাও জানি যে রুদ্র তোমার উপর অত্যাচার করে। তুমি বাধ্য হয়ে রুদ্রর সাথে আছো। কারণ তুমি রুদ্রকে ভালোবাসো না। আর রুদ্র এটারই যোগ্য। ও কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। দৃঢ় কন্ঠে বলে সামির।

— তুমি কীভাবে জানলে যে রুদ্র আমার উপর অত্যাচার করে? আমি রুদ্রর সাথে বাধ্য হয়ে থাকছি। আমি কি কখনো বলেছি তোমাকে এইসব সামির? দোলার কথায় হকচকিয়ে উঠে সামির। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে তুমি না বললেও আমি সব জানি দোলা।
কীভাবে? সেটাই জানতে চাচ্ছি আমি। দোলার মধ্যে বিশাল কৌতুহল।
— যাকে ভালোবাসি তার খোঁজ রাখবো না! তার সম্পর্কে জানবো না তাই কখনো হয় দোলা। সাবলীল ভাবে সামির। কিন্তু দোলার ঠিক বোধগম্য হয়না সামিরের কথা।

– ভালোবাসো মানে? কি বলতে চাইছো তুমি সামির?চোখ মুখ কুচকে যায় দোলার।
– সামির মাথা নিচু করে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি দোলা। আর সেটা আজ নয় অনেক আগে থেকে। আমাদের বন্ধুত্বের শুরু থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম সময় মতো তোমার কাছে আমার মনের কথাগুলো প্রকাশ করবো। কিন্তু তার আগে তুমি রুদ্রকে বিয়ে করে নাও।
— আর এই জন্যই তুমি আমার আর উনার সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাও। এখন আমি সবটা বুঝতে পারছি সামির। এই হলো তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা। তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে আমাকে পেতে চাও এখনো। আর তার জন্যই তুমি উনার নামে উল্টো পালটা কথা বলে আমার মনটা বিষিয়ে তুলতে চাও উনার সম্পর্কে।

– দোলার কথায় সামির আঁতকে ওঠা চোখে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলে না না দোলা। তুমি আমাকে ভুল ভাবছো। আমি সে জন্য কিছু করছি না। সত্যি রুদ্র তোমার যোগ্য নয়৷ ও ভালো নয় দোলা। আর তার প্রমাণ আমি তোমাকে দেখাবো ওয়েট বলে সামির পকেট থেকে ফোন বের করতে যায় তখনই দোলা ধাক্কা দিয়ে সামিরকে সরিয়ে দেয়। অবাক চোখে তাকায় সামির।
– আমি খুব ভালো করে বুঝে গেছি সামির৷ তুমি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এইসব করছো। তুমি আমার আর উনার সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে চাও। যাতে তোমার পথ ক্লিয়ার হয়ে যায়৷ কিন্তু এমনটা কখনোই হবে না সামির। তবে একটা জিনিস হবে আজ থেকে। তোমার সাথে আমার যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো সেটা আর থাকবে না৷ তুমি বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারোনি সামির কথাটা বলে দোলা ছুটে বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। সামির নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে।

– দোলা দুইতলায় ছিলো। আশা দোলাকে খুঁজতে খুঁজতে নিচে চল আসে৷ ওয়াসরুম থেকে এসে দোলাকে না দেখতে পেয়ে ভাবে দোলা হয়তো নিচে চলে গেছে৷ তাই সে নিচে চল আসে।
– দোলাকে ছুটে আসতে দেখে আশা দোলাকে থামিয়ে দেয়।
– দোলার চোখের মধ্যে পানিতে টলমল।
– কি হয়েছে দোলা? তুই এইভাবে ছুটছিস কেনো? আর কোথায় ছিলিস তুই। আমি তো তোকে উপরে দেখলাম না। দোলা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে আমি বাড়ি যাবো আশা। আমার কিছু কাজ আছে। তুই তানিয়াকে প্লিজ বলে দিবি কথাটা বলে দোলা দাঁড়ায় না এক মুহুর্ত। হনহন করে চলে আসে৷ দোলা আসতেই তানিয়া বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। আশা অবাক হয়ে দোলার পাণে চেয়ে। হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারছে না।
– একি আশা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে যে? ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় আশা মুখটা মলিন করে বলে দোলা এই মাত্র চলে গেলো।
– চলে গেলো? উত্তেজিত কন্ঠে বলে তানিয়া। ভাবি আমাকে না নিয়ে চলে গেলো? কিন্তু কেনো?

-ওর নাকি কি একটা কাজ আছে। আর তাই তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো৷ আশার কথায় তানিয়া ভাবনায় পড়ে যায়। দোলার আবার কি এমন কাজ আছে এখন৷ এরপর তানিয়াও বেরিয়ে যায় সাথে আশাও।

— দোলা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। দোলাকে একা ফিরে আসতে দেখে বিস্মিত চোখে তাকায় রত্না চৌধুরী। তিনি ড্রয়িংরুমেই বসা ছিলেন।
— আমার কি সামিরের কথাগুলো শোনা উচিত ছিলো? কি বলতে চেয়েছিলো সামির? আর আমাকে কি দেখাতে চাই। কি প্রমাণের কথা বলছিলো সে? উফফ মাথা গরম করে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। আমার আর একটু সময় দেওয়া উচিত ছিলো সামিরকে। এইসব ভাবতে ভাবতে আসে দোলা। দোলার শরীরটা খারাপ করছে খুব। হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে। দোলা প্রচন্ড ঘেমে আছে।
– কি রে দোলা মা৷ তুই একা কেনো? তানিয়া কোথায়?
রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা চমকে উঠে। কারণ সে অন্যমনস্ক থাকায় রত্না চৌধুরীকে খেয়াল করেনি প্রথমে। দোলা পিছু ঘুরে কিছু বলতে যাবে তার আগে মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠে। দোলা একহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। দোলাকে এমন করতে দেখে রত্না চৌধুরী ঘাবড়ে যাওয়া গলায় বলে কি হয়েছে দোলা? তুই ঠিক আছিস। রত্না চৌধুরীর কথার জবাব দেওয়া হয়ে উঠে না দোলার! মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
– দোলায়ায়া চিৎকার করে উঠে রত্না চৌধুরী। রত্না চৌধুরীর চিৎকারে দুজন সার্ভেন্ট ছুটে আসে। সাথে সাথে তানিয়াও হাজির হয় সেখানে৷ দোলার পেছনেই ছিলো সে। তাই বাড়ি ফিরতে বেশি সময় লাগে না। দোলাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তানিয়া চমকানো চোখে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ভাবি বলে উঠে ছুটে আসে। রত্না চৌধুরী হুইলচেয়ার নিয়ে এগিয়ে আসে। সবার মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা। জেসমিন চৌধুরী সবার চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। দোলাকে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকায় শুধু এরপর একটা ভেংচি কেটে বলে যতসব ঢং এরপর আবারও ঘরে চলে যায়। তানভীর আহমেদ বা রুদ্র কেউ-ই বাড়িতে নাই।

— হসপিটালের করিডোরে অপেক্ষা করছে সবাই। রুদ্র খবরটা শোনামাত্র ছুটে আসে। তার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো দোলার শরীর ভালো নেই। শুধুমাত্র দোলার জেদের জন্য রুদ্র ডক্টর দেখাতে পারে না৷ রুদ্রর মধ্যে ভীষণ টেনশন, হারানোর ভয়। কি হয়েছে দোলার ভাবতেই ঘামছুটে যায় যেনো রুদ্রর। তানিয়া আর তানভীর আহমেদও আছে সাথে৷ তানিয়া এম্বুলেন্স খবর দিলে তারাই দোলাকে নিয়ে আসে এখানে। এরপর রুদ্রকে খবর দেয়।

… দোলাকে নিয়ে আসা হয়েছে একঘন্টা হয়েছে। অতিরিক্ত ট্রেস নেওয়াতে দোলা জ্ঞ্যান হারায়। তাছাড়া আগে থেকে শরীর খারাপ তো আছেই৷ ডক্টর দোলার সমস্ত রকম টেস্ট করান। কিছুখন বাদে দোলার জ্ঞ্যান ফিরে। খবরটা রুদ্রর কান অব্দি আসতেই ছুটে যায় রুদ্র। এতখন তার প্রাণ’টা যেনো সাথে ছিলো না৷ দোলার জ্ঞ্যান ফিরেছে শুনে স্বস্তি পাই একটু।

— আমি জানতাম তোমার শরীর ঠিক নেই। বলেছিলাম ডক্টর কল করি। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনোনি৷ তুমি আমার একটাও কথা শোনো না দোলা। এই যে শরীর খারাপ নিয়ে হসপিটাল আছো খুব ভালো লাগছে এখন তাই না। মনোক্ষুন্ন হয়ে বলে রুদ্র। দোলা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে শুধু। রুদ্রর মধ্যে স্পষ্ট আতংক দেখতে পাচ্ছে দোলা। রুদ্র দোলার হাত চেপে ধরে কোমল কন্ঠে বলে এখন কেমন আছো দোলাপাখি? দোলা কিছু বলে না। শুধু মোহময় চাহনিতে রুদ্রকে উপলব্ধি করছে। সত্যি এই মানুষটা এত চিন্তিত আমাকে নিয়ে? আমার জন্য এত অস্থিরতা? আর সেই মানুষটা কীভাবে খারাপ হতে পারে? সামির কেনো এইগুলো বলছিলো। কি এমন আছে? দোলার মধ্যে আবারও একই ভাবনা। দোলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে কি হলো দোলা কিছু বলো। কোনো সমস্যা নেই তো আর। তুমি ঠিক আছো?
– আমি ঠিক আছি রুদ্র! চিন্তা করবেন না। রোদের মধ্যে এসেছি তার জন্য.. আর একটাও এক্সকিউজ শুনতে চাইনা দোলা। এবার যা বলার ডক্টর বলবে। তোমার নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নয়তো এতটা দুর্বল তুমি কীভাবে হবে। দোলাকে থামিয়ে দিয়ে বলে রুদ্র। এর মধ্যে তানিয়া আসে।
– ব্রো ডক্টর তোমায় ডেকেছে। তানিয়ার কথায় রুদ্র দোলার হাতটা মুঠো বন্দী করে বলে তুমি বসো আমি আসছি। এরপর দোলার হাতের তালুতে ঠোঁট স্পর্শ করে চলে যায় রুদ্র। তানিয়া এসে বসে দোলার পাশে।

– হঠাৎ কি এমন হলো বলো তো ভাবি। তুমি ভার্সিটি থেকে এইভাবে চলে আসলে। বাড়িতে এসে দেখি তুমি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে। মামি খুব চিন্তায় আছে তোমাকে নিয়ে। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম অনেক। তোমার শরীর খারাপ করছে সেটা তো আমাকে জানাতে পারতে। গাড়ি না নিয়ে হুট করে চলে এসেছো। এটা যদি ব্রো জানতে পারে তাহলে কি হবে ভাবতে পারছো। তুমি তো বকুনি খাবে সাথে আমিও। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে কিছু হবে না তানিয়া৷ চিন্তা করো না৷ তাছাড়া আমি ঠিক আছি দেখো।।

— মিস্টার চৌধুরী! আমরা আপনার ওয়াইফের বেশ কিছু টেস্ট করিয়েছি। সেগুলোর রিপোর্ট আসতে দুদিন লাগবে। এরপর আমরা আপনাকে ইনফর্ম করবো ওকে। তবে চিন্তা করবেন না। আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছে। তেমন কোনো চিন্তার বিষয় নেই।
– যদি ঠিকই থাকবে তাহলে হঠাৎ এমন হওয়ার মানে কি ডক্টর? ডক্টরের কথার বিপরীতে বলে উঠে রুদ্র৷

– আমার মনে হয় উনি ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করেন না। আর কোনো কিছু নিয়ে অনেক টেনস থাকেন৷ যার ফলে এমন সমস্যা উনার। কয়দিন রেস্ট নিলে আর ঠিকঠাক ভাবে খাওয়া দাওয়া করলে আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন উনি। তাছাড়া আমরা অন্য কিছুও ভাবছি সেটা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত শিওর হতে পারছি না। এই কথাটা শুনে রুদ্র ঘাবড়ে যায়। ভয়ার্ত ফেসে তাকিয়ে বলে অন্য কোনো সমস্যা? কি হয়েছে ডক্টর দোলার।
– আরে মিস্টার চৌধুরী ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আপনার ওয়াইফের সিরিয়াস কিছুই হয়নি৷ আর রিপোর্ট আসলে আমরা আপনাকে শিওর জানাবো। এখন উনাকে নিয়ে যেতে পারেন সমস্যা নেই। ডক্টরের কথায় রুদ্র মুচকি হেসে বলে থ্যাঙ্কিউ ডক্টর। এরপর রুদ্র বেরিয়ে আসে চেম্বার থেকে।

— রুদ্রর ঘরে রত্না চৌধুরী, রাশেদ মিয়া, রোকন, তানিয়া তানভীর আহমেদ সবাই উপস্থিত আছে। সময়টা সন্ধ্যার পর। দোলার শরীর খারাপ খবরটা পেয়ে রাশেদ মিয়া ছুটে আসে মেয়েকে দেখার জন্য। রুদ্র এই সময় বাড়িতে নেই। একটা কাজের জন্য বেরুতে হয় তাকে। তবে এই সময়টা দোলাকে ছেড়ে কোথাও যেতে একদম নারাজ রুদ্র। কিন্তু কি করার কাজের জন্য তো যেতেই হবে।

– আমি আর খাবো না মা। বাড়ি এসে পর্যন্ত তোমরা আমাকে এটা ওটা খাওয়ায় চলেছো। এত খেলে আমি তো একদিনে মটু হয়ে যাবো। গাল ফুলিয়ে বলে দোলা।
– কোনো কথা শুনবো না দোলা। ডক্টর স্ট্রেট জানিয়ে দিয়েছে তোমাকে ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। কারণ তোমার শরীর প্রচন্ড উইক। তাছাড়া রুদ্রর কড়া নির্দেশ যে একদম অনীহা করা যাবে না খাবার নিয়ে। মৃদু হেসে বলে রত্না চৌধুরী।
– দোলা অসহায় চাহনি রাখে রত্না চৌধুরীর দিকে।

– জামাই যা বলে তাই শুনবি দোলা মা। আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বলতো। হঠাৎ তোর এমন শরীর খারাপ হলো কীভাবে?.
– আমি ঠিক আছি বাবা চিন্তা করোনা। আমার জন্য তোমার শরীর খারাপ করবে এবার। দোলার কথায় রাশেদ মিয়া হাসার চেষ্টা করে।

— রাত দশটায় রুদ্র বাড়ি ফিরে। রাশেদ মিয়া একটু আগে চলে গেছে রোকনকে নিয়ে। দোলা পড়ে গেছে বিপাকে। এসে পর্যন্ত ঘরে শুয়ে বসে আছে। এইভাবে ঘরে বসে থাকতে কার ভালো লাগে। তানিয়া এতখন দোলার সাথে ছিলো৷ রুদ্র আসায় বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
– রুদ্র ফ্রেস হয়ে এসে দোলার পাশে বসে। দোলা মুখটা গোমড়া করে বসে আছে।
– কি সমস্যা? ভ্রু উঁচিয়ে বলে রুদ্র দোলাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে।
— আপনার জন্য সবাই আমাকে এইভাবে ঘরে বসিয়ে রেখেছে। কেউ কিছু করতে দিছে না আবার একটু পর পর খাওয়া। এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে নাকি মলিন কন্ঠে বলে দোলা।
– সেটা তোমার আগে ভাবা ছিলো দোলা-পাখি। রুদ্রর কথায় দোলা বিস্ময় নিয়ে বলে মানে?
– মানে খুবই সিম্পল! শরীর খারাপ করার আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার। যেহেতু শরীর খারাপ করেছো এখন রেস্ট করতে হবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।
– কিন্তু আমি তো সুস্থ! করুণ স্বরে বলে দোলা।
– সেটা তুমি বললে তো হবে না। যখন আমার মনে হবে তুমি সুস্থ তখনই তুমি অন্য কিছু করবে। তার আগে প্রোপার রেস্ট নিবে৷ একদম কোনো কথা শুনবো না।

– জানি না কখনো সুস্থ হবো কি-না আপনার চোখে বিড়বিড় করে বলে দোলা। দোলার কথায় মুচকি হাসে রুদ্র দোলার অগোচরে।
– আচ্ছা রুদ্র একটা কথা বলব?
– দোলার হঠাৎ এমন কথায় রুদ্র কৌতুহলী হয়ে বলে হুম বলো। পারমিশন নেওয়ার কি আছে দোলাপাখি। তোমার যা ইচ্ছে তাই বলতে পারো। রুদ্রর কথায় দোলা কিছুক্ষন অপলক ভাবে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আচ্ছা রুদ্র আপনার মধ্যে এমন কিছু আছে যা আমি জানি না। হঠাৎ দোলার এমন কথায় ঘাবড়ে যায় রুদ্র। কিছুটা সংশয়, ভয়ের ছাপও বিদ্যমান হয়।
– কি হলো বলুন না৷ আপনার কি কোনো অতীত আছে যেটা আপনি আমার থেকে লুকিয়ে গেছেন? দোলার মধ্যে প্রবল কৌতুহল জানার।
– রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু দোলা হঠাৎ এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করছে এটাও রুদ্রর ভাবনা ছাড়া হয়না।
– আমার আবার কি অতীত থাকবে। কি যা-তা বলছো দোলা? তোতলানো স্বরে বলে রুদ্র। দোলা সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে আপনি এতটা ঘাবড়ে কেনো আছেন রুদ্র? আমি তো জাস্ট এমনি জানতে চাইলাম।
– তুমি রেস্ট করো দোলা। আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো শেষ করি বলে রুদ্র উঠে ল্যাপটপ হাতে বারান্দায় চলে যায়। দোলা প্রশ্ন গুলো নিজের মধ্যে রেখে আশাহত হয়ে বসে থাকে৷
– রুদ্রর মধ্যে উত্তেজনা। হঠাৎ দোলা এইসব কথা কেনো জানতে চাইছে? কি হয়েছে। রুদ্রর মধ্যে আবার ও একটা ভয় কাজ করে।

— একটা কাজও ঠিক ভাবে করতে পারো না তুমি। আবার স্বপ্ন দেখো দোলাকে পাওয়ার। কি করতে বললাম আর কি করলে তুমি? দোলাকে সামান্য প্রমাণ গুলো দেখাতে পারলে না। ক্রোধান্বিত হয়ে বলে ব্যক্তিটি।
– আমি কি করবো যদি দোলা রাজি নাহয়। আমি তো অনেক ট্রাই করেছিলাম সবটা বলার। করুণ স্বরে বলে সামির।
– এবার যা করার আমাকেই করতে হবে দেখছি। শুনলাম দোলার নাকি শরীর খারাপ হঠাৎ করে। রুদ্র তো এখন দোলাকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত।
– কিহ! দোলার শরীর খারাপ? কি হয়েছে দোলার। আর তোমাকে কে বলল? উত্তেজিত কন্ঠে বলে সামির।
– আমাকে কে বলল সেটা বড় বিষয় না। এখন আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে৷ রুদ্র আর দোলাকে আলাদা করতে হবে এটাই মূল কথা৷ নাহলে কিন্তু তুমি কখনোই দোলাকে পাবে না সামির।
– আমাকে কি করতে হবে এখন? সামিরের কথায় ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বলে তোমাকে আর কিছুই করতে হবে না৷ যা করার আমি করবো এবার। ওয়েট এন্ড সি বলে শব্দ করে হাসতে থাকে সে।

— এইভাবে চলে যায় আরো দুদিন। দোলা এখন সুস্থ পুরোপুরি। সবাই বিশেষ ভাবে খেয়াল রেখেছে দোলার। তবে অপেক্ষা দোলার রিপোর্ট গুলো আসার। রুদ্র অফিসে বসে আছে৷ সামনে আছে রাজ। এই সময় একজন কর্মচারী আসে রুদ্রর রুমে।
– স্যার আপনার জন্য একটা পার্সেল এসেছে। কর্মচারীর কথায় রাজ এবং রুদ্র দুজনেই ভ্রু কুচকায়। হঠাৎ পার্সেল আবার কে পাঠালো ভাবে রুদ্র। এরপর পার্সেলটা হাতে নিয়ে ওই লোকটাকে চলে যেতে বলে। বাদামি রঙের খাম একটা।

– এই সময় পার্সেল কে দেবে বলতো? রুদ্রর কথায় রাজ ঠোঁট উল্টোয়। রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্সেল আসা খামটা খুলে দেখতে থাকে।

— চলবে….

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন।