তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-১৬+১৭

0
678

#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহান নামক ভয়ংকর অতীতকে দেখে ছিটকে সরে গিয়ে দ্রুততার সাথে উঠে গেলো রিমি। ফারহান অদ্ভুদ দৃষ্টিতে রিমির পানে তাকিয়ে আছে। রিমি বেশ অনেকটাই দূরত্ব বাড়িয়ে নিলো ফারহানের থেকে।
নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ।রাস্তায় তেমন কেউ নেই। পিচঢালা রাস্তায় শুধু দুই -একটা গাড়ি চলাচল করছে। রিমি তখন দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে ফারহানের সাথে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়ে গিয়েছিলো।
ফারহানকে দেখে দ্রুত সে উঠে পড়ে। রিমিকে থামতে দেখে পিছনে থাকা মহিলা গার্ডগুলো দৌড়ে আসে। সবার মাথাই নিচু। একজন মহিলা গার্ড নিচু হয়েই বলে,

‘ ম্যাম! আপনার কোথায় লাগেনি তো? ‘

‘ ম্যাম প্লিয বলুন আপনার কি কোথায় লেগেছে?
লাগলে প্লিয আমাদের বলুন নাহলে স্যার আমাদের অবস্হা খারাপ করে দিবে। ‘

মহিলাগুলোর কথা শুনে রিমি চোখ বড় বড় করে বলে,

‘ মানে? কে আপনাদের স্যার? আর আপনারা কেন আমার পিছনে আসছেন? ‘

মহিলাগুলো আগের ন্যায় মাথা নিচু করেই বললো,

‘আপনি আমাদের দেখে পালাচ্ছেন কেন? আমরা তো আপনার সেফ্টির জন্যে আপনার পিছনে দৌড়াচ্ছিলাম। ‘

রিমিকে অবাক করে দিয়ে গম্ভীর পুরুষকন্ঠে কেউ বলে উঠে,

‘ ওরা আমার গার্ডস। ‘

রিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে অয়ন সাদা এপ্রোন পড়ে গম্ভীর মুখ করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন মহিলা গার্ডসগুলোকে চোখের ইশারা দিয়ে যেতে বলে। মহিলা গার্ডসগুলোও অয়নের চোখের ইশারায় চলে যায়।

‘ কিন্তু আপনি ওদের রেখেছেন কেন? আমার উপর নজরদারী করার জন্যে? ‘

রিমির প্রশ্নে অয়ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে, রিমির সামনে এসে,ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আজকালের কিছু মানুষের নজর একটু বেশিই পড়ছে তোমার উপর। তাদের নজর থেকে হেফাজত করার জন্যে তোমার জন্যে মহিলা গার্ডস রেখে দিয়েছি। যেন তোমার ২৪ ঘন্টার সব খবর আমি পেয়ে যাই। ‘

ফারহান দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অয়ন যে তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছে তা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি তার। অয়ন ফারহানের সামনেই রিমির হাত ধরে, গাড়ির দিকে একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেলো। ফারহান আবারোও মাথা তুলে একবার রিমি এবং অয়নকে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। ফারহানের চোখের সামনেই অয়ন গাড়িটা ঘুড়িয়ে নিজ গন্ত্যবের দিকে নিয়ে গেলো। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে দূরত্ব। তাইতো আজ আপন ভাই হয়েও ফারহান কিংবা অয়ন একে-অপরের খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না বরং অয়ন ফারহানকে খুঁচিয়ে কথা বললো। ফারহানের ভাবনার মাঝেই সানা দৌড়ে ফারহানের কাছে আসলো। ফারহান এবং সানা গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছিলো, কিন্তু হঠাৎ করে সানার চকলেট এর দোকান দেখে খুব চকলেট খেতে ইচ্ছে হলো।তাই সানা তখন চকলেটের দোকান দেখে ফারহানকে দেখে দাঁড়াতে
বলে চলে গিয়েছিলো। সেই মুহুর্তেই রিমি এসে হন্তদন্ত হয়ে ফারহানের সাথে ধাক্কা খায়। রিমিকে দেখেই স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো ফারহান। রিমিকে দেখলেই তার মস্তিষ্কে শুধু অতীতের কিছু স্মৃতি এসে হানা দেয়, কিন্তু ফারহান রিমিকে যা ভাবছে আদোও কি তা রিমির সঠিক পরিচয়? কে এই রিমি? তার আসল পরিচয় টা কী? রিমি নাকি জান্নাত? বিভিন্ন প্রশ্নে এসে ঘিড়ে ধরেছে ফারহানকে। যা ফারহান চাইলেও এড়াতে পারছে না।

‘ স্যার! আমাদের বেশি দেরী হয়ে যাচ্ছে। ‘

সানার কথায় হুশ আসে ফারহানের। সানার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে সায় দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে ফারহান। সেই হাসি দেখে এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলো সানা। মানুষের হাঁসি এতো সুন্দরও হয়?

______________

গাড়ির এক কোণে বসে আছে রিমি। তার চোখ বার বার যাচ্ছে তার সামনে থাকা যুবকের দিকে। যুবকের চোখের ঘন ঘন পাপড়ি দ্বারা বার বার পলক ফেলছে। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরেছে নিজের অধরজোড়া। চুলগুলো এক হাত দিয়ে খামচে ধরে বার বার পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসহ্য রাগ হচ্ছে অয়ন নামক যুবকের। যা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রিমি।

‘ সবাই কেন তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকে? এই লজিকটা আজকেও বুঝলাম না। অসহ্য লাগে৷ সবার চোখ উপড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। তোমার দিকে শুধু আমি তাকাবো বুঝলে? ‘

অয়ন রিমির দিকে কটমট করে তাকিয়ে কথাটি বলে। রিমি বিরক্তির সাথে বলে,

‘ একজন প্রয়োজনে আরেকজনের দিকে তাকাইতেই পারে। তাই বলে এতো রেগে যাচ্ছেন কেন আপনি? সাইকো লোক একটা! ‘

অয়ন রাগে হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষে, জোড়ে ঘুষি মারে গাডির হ্যান্ডেলে। হঠাৎ ব্রেক কষাতে রিমি মাথা গাড়ির সিটে এসে বারি খায়,কিন্তু রিমি ব্যাথা পায় না
কেননা অয়ন সিটে নিজের হাত পেতে রেখেছে। তাই রিমির মাথায় ব্যাথা পায় না৷ রিমি অয়নের দিকে তাকাতেই অয়ন রিমির কাছে এসে রিমির ললাটে ধরে ঠোটজোড়া ছুইয়ে দেয়। স্বামীর গভীর ভালোবাসাময় স্পর্শে রিমির হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হয়। ছেয়ে যায় হৃদয় অদ্ভুদ ভালো লাগার স্পর্শে। অয়ন রিমির ললাটে ধরেই বলে,

‘ তোমার সাইকো থাকতে তোমাকে কখনো ব্যাথা পেতে দিবে না রিমিপরী। হাজারো প্রতিকূলতায়
হাজারো বিপদে তোমার ঢাল হয়ে সর্বদা দাঁড়িয়ে থাকবে তোমার সাইকো।’

____________________

রিমির মামা নিজের রুমে এসে একটা চেয়ারে বসে ধপ করে বসে পড়লো। মুখ তার বেজায় গম্ভীর। ললাটের বলিরেখায় হাজানো চিন্তার ভাজ পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। রিমির মা রিমির মামাকে দেখেই ছুটে এসে বললেন,

‘ কি হলো ভাই? তোমার হঠাৎ চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? মিসেস রুহানার সাথে কথা বলেছিলে তুমি? কি বলেছেন উনি? ‘

‘ আমাদের মেয়েটা সুখে নেই রে। ওর সংসার ভাঙ্গতে বসেছে। ‘

কথাটি বলেই রিমির মামা হু হু করে কেঁদে ফেললেন।

রিমির মা তার ভাইয়ের পাশে বসে অস্হির হয়ে বললেন,

‘ কি হয়েছে টা কী? একটু খুলে বলো আমাকে। সংসার ভাঙ্গতে চলেছে মানে কি? ‘

রিমির মামা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘ আজকে রুহানা চৌধুরীকে ফোন দিয়েছিলাম তখনি তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তখন অয়ন এবং রিমির বিয়ে শুধু সম্মান বাঁচানোর জন্যে দিয়েছিলেন। অয়ন এবং রিমির ডিভোর্স নাকি দুই তিনদিনের মধ্যে করিয়ে দিবেন এবং অয়নের বিয়ে অন্যকারো সাথে দিবেন। আমাদের মেয়ের সংসারটা শেষ রে! ‘

মেয়ের সংসার শেষ হয়ে যাবে শুনে রিমির মা হু হু করে কেঁদে উঠলেন। কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ ভাই! আমাদের দ্বারা অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে রে। আমার মেয়েটা তো বিয়েটাই করতে চাইছিলো না। আমার মেয়ের জীবনটা শেষ হয়ে গেলো। ‘

রিমির মামা ও মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। অতঃপর কিছু একটা ভেবে বললেন,

‘ ভুল যখন আমরা করেছি তখন আমরাই শুধরে নিবো সেই ভুল। ‘

রিমির মামার কথা বুঝতে পারলেন না রিমির মা। শুধু চেয়ে রইলেন ভাইয়ের দিকে।

_____________

পায়েল রুহানা চৌধুরীর কথায় আজকে চৌধুরী বাড়িতে এসেছে। রুহানা চৌধুরী অয়ন এবং রিমির ডিভোর্স এর পেপার রেডি করে ফেলছেন ইতিমধ্যে। অয়নের মতিগতি সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে তাই তিনি দ্রুত কাগজ তৈরি করে ফেলেছেন। পায়েল শুধু
মনে মনে একটা কথাই ভাবছে ‘ ভালোই ভালোই অয়ন রিমির ডিভোর্স টা হয়ে গেলেই সে নিশ্চিন্ত,কিন্তু রিমির প্রতি অয়ন যে কতটা পাগল তার সাক্ষ্যি পায়েল নিজে। অয়ন কি আদোও রিমিকে ডিভোর্স দিবে? সেই প্রশ্ন ঘিড়ে ধরে পায়েলকে। নিজের ক্ষত হওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুগ গিললো পায়েল। অয়নের করা সেই ভয়ংকর কান্ডের কথা মনে পড়তেই ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় পায়েলের। তখনি সেখানে রিমি এবং অয়ন উপস্হিত হয়। রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখে রুহানা এবং পায়েল দুজনেরই মুখ কালো হয়ে যায়। অয়ন উকিলকে দেখেই বললেন,

‘ উনি এখানে কেন? ‘

রুহানা চৌধুরী…….

চলবে কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুহানা চৌধুরী অয়নের হাতে ডিভোর্সের কাগজ ধরিয়ে তাতে সাইন করে দিতে বলেন। অয়নের অগোচরে রুহানা চৌধুরী এতো দ্রুততার সাথে ডিভোর্স পেপার তৈরি করায় রাগে কপালের বলিরেখায় গম্ভীর্যপূর্ন ভাজ পড়ে অয়নের।অয়ন রাগে হাতজোড়া মুঠো করে নেয়। ডিভোর্স পেপারটার দিকে তাকিয়ে রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার কাজই তো শেষ হলো এখন অব্দি। এখন যদি তার এবং অয়নের ডিভোর্সটা হয়ে যায় তাহলে তো সে বাড়িতে থাকতে পারবে না। এতে রিমির উদ্দেশ্যও সফল হবেনা। কথাটি ভেবেই রিমি নখ কামড়াতে থাকে। রুহানা চৌধুরী এইবার পায়েলের হাত ধরেই
অয়নের সামনে নিয়ে আসে। অতঃপর ধীর কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ দেখো তো অয়ন! মেয়েটা তোমাকে কতটা ভালোবাসে। তোমাকে ছাড়া এখন সে কোন শ্যুট ও করবে না। তাই আমি দ্রুততার সাথে তোমার এবং রিমির ডিভোর্স পেপার টা রেডি করেছি। এখন তোমরা পেপারে সাইন করে দাও। তারপর তো
তোমার এবং পায়েলের বিয়ের ব্যাবস্হা ও করে ফেলতে হবে। তোমাদের একবার বিয়ে হয়ে গেলেই
আমি নিশ্চিন্ত। ‘

অয়ন অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে পায়েলের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি খুন করে ফেলবে অয়ন। পায়েল তো ভয়ার্থ মুখশ্রীতে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ-মুখে তার একরাশ ভয়। উকিল সাহেব এক পলক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, রুহানা চৌধুরীকে তাড়া দিয়ে বললেন,

‘ মিসেস চৌধুরী একটু তাড়াতাড়ি করুন প্লিয। আমার আরো কয়েকটা জায়গায় যেতে হবে। ‘

রুহানা চৌধুরী তার কথায় সায় দিয়ে অয়নকে নিয়ে উকিলের সামনাসামনি বসালেন। অয়ন ও খুবই ভদ্রতার সাথে বসে পড়লো। উকিল সাহেব রিমিকেও অয়নের পাশে বসতে বললেন। মেঘ এবং তার মা রুজা চৌধুরীও চলে এলেন। মেঘ বার বার চাইছে যেন ডিভোর্সটা না হয়। রুজা চৌধুরী শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন একটা জিনিসই দেখার প্রয়াসে ‘জল
কতদূর গড়ায়। ‘ রুজা চৌধুরী অয়নকে খুব ভালো করেই চিনেন। শান্তভাবে সবকিছু মেনে নেওয়ার ছেলে সে নয় যদিও রুহানা চৌধুরীর কথাই সে সবসময় মেনে চলে, কিন্তু রিমির বেলায় আদোও কি তা মানবে? রিমি চাতকপাখির ন্যায় বার বার শুধু অয়নের পানে তাকাচ্ছে, কিন্তু অয়নের মতিগতি বুঝতে সে ব্যর্থ। রিমির এইবার কান্না পাচ্ছে। যাকে বলে গলা ধরে চিৎকার করে কান্না আসছে। না শুধু উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে যে রিমির চোখমুখে বিষন্নতার ছাপ তা নয়। আরো একটা কারণ আছে যার জন্যে রিমি আজ ভিতরে ভিতরে খুব অস্হির।
তার কারণ কি অয়ন নিজেই? রিমি জানেনা। শুধু জানে কিছুক্ষন আগের মুহুর্তটা যদি ফিরে পাওয়া যেত তাহলে হয়তো খুব ভালো হতো। রিমি মনের ভিতরে অজেনা এক অস্হিরতা এসে বাসা বেঁধেছে।
উকিল সাহেব অয়নের দিকে কলমটি এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ ডক্টর এয়ারসি প্লিয দ্রুত সাইন করে দিন। আমাকে আরো জায়গায় যেতে হবে। ‘

অয়ন কলমটি হাতে নিয়ে একপলক তাকিয়ে প্রথমে রিমির দিকে এগিয়ে দিলো। রিমির দিকে এইভাবে এগিয়ে দেওয়াতে রিমিসহ সবাই বিস্মিত হয়ে অয়নের পানে তাকায়। অয়ন পায়ের উপর পা রেখে খুব সহজ ভাবেই রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমিই আগে সাইন করো রিমিপরী। তারপর না হয় আমি করবো। ‘

অয়ন যে রিমিকে এতো কঠিন কাজের দায়িত্ব দিবে তা কখনোই ভাবেনি রিমি। রিমি কাঁপাকাঁপা হাতে
কমলটা নেয়। কলমটা নিলেও তার হাত কাঁপছে। নেত্রকোণায় সামান্য জল এসে টলমল করছে। রিমি নিজেকে সামলিয়ে নেয়। তাকে দূর্বল হলে চলবে না। রিমি বুকে পাথর দিয়ে সাইন করতে নিলে, কেউ তার থেকে কলমটি কেড়ে নেয়। রিমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে,অয়ন ভয়ংকর রাগান্বিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

‘ এইটা কি করছেন আপনি? কলম কেড়ে নিলেন কেন আপনি? আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো। ‘

____লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

উকিলের কথায় অয়ন তার পাশে থাকা কাচের গ্লাস টা উকিলের টাকের মাঝ বরাবর ছুড়ে মারে। উকিল মাথায় হাত দিয়ে ব্যাথায় চিৎকার করে। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে ডিভোর্সের কাগজটা নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় পায়েল এবং রুহানা চৌধুরীর সামনেই। অতঃপর উকিলের কলার উচু করে নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলে,

‘ তুই আমার আর আমার রিমিপরীর ডিভোর্স করাবি? তোর দেরী হওয়া বের করছি আমি। গার্ডস কাম ফার্স্ট! ‘

অয়নের হুংকারে কয়েকজন কালো পোষাক পরিহিত গার্ডস এসে উকিলকে ধরে নিয়ে যেতে থাকে। উকিল চিৎকার করতে করতে বলে,

‘ আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেউ বলো না?
আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
আরে ভাই আমার বউ বাসায় ঝাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেরী করে বাসায় ফিরলে পিটাবে। ‘

উকিলের এমন কথায় মেঘ এমন একটা কঠিন পরিস্হিতিতেও হু হা করে হেঁসে উঠে।
অয়ন উকিলের কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ আপনার বউয়ের দিকটা আমরা দেখে নিবো। এখন আপনি আপনার আসল জায়গায় যান। ‘

‘ আসল জায়গা মানে? ‘

উকিলের প্রশ্নে অয়ন শুধু বাঁকা হাসে। গার্ডসগুলো উকিলকে নিয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী এইবার রেগে অয়নের কাছে গিয়ে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে অয়নকে ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠে,

‘ এই দুইদিনের সাধারণ মেয়ের জন্যে তুমি আমাকে আজ অপমান করলে অয়ন? এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে আমি? আজ তুমি তোমার গ্রেন্ডমার অসম্মান করলে? ‘

অয়ন দ্বিগুন ক্ষোভ নিয়ে চিৎকার করে বলে,

‘ জাস্ট স্টপ গ্রেন্ডমা। একদম আমাকে রিমিপরীকে
সাধারণ বলবে না। ‘

অয়নের চিৎকার দমে যায় রুহানা চৌধুরী। অয়ন রিমির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে,

‘ আমার স্ত্রী অন্যন্যা। অসাধারণ আমার স্ত্রী। আমার রিমিপরী। তাইতো তার নেশায় আসক্ত হয়ে এক নেশাক্ত প্রেমিকে পরিনত হয়েছি আমি৷ ‘

অয়নের কথায় সবাই কেমন একটা ঘোরে চলে যায়। সবার কেমন একটা লাগছে। পায়েলের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। রুহানা চৌধুরীর মাথায় হাত! তিনি যা সন্দেহ করেছিলেন তাই হলো। অয়ন অবশেষে রিমিকে ভালোই বেসেই ফেললো। যাকে বলে পাগলামো ভালোবাসা।

অয়ন মুখে সম্পূর্ন গাম্ভীর্য এঁটে বললো,

‘ আমি পায়েলকে কিছুতেই বিয়ে করবো না। এইসব বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো সবাই। ‘

কথাটি বলে সকলের সামনেই রিমিকে কোলে তুলে উপরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। মেঘ পারছে না এই মুহুর্ত নাঁচতে। নাহলে সে অবশ্যই নাঁচতো।

______________

আমান সবেমাত্র বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছে। দেশে এসেই প্রানভরে নিঃশ্বাস নিলো সে। অনেক ভালো লাগছে তার। কতদিন পর ফিরে এলো সে। এইবার শুধু সে তার রিমিপাখির সাথে দেখা করে সবকিছু বলে দিবে তার রিমিপাখিকে। কথাটি ভেবেই মুচকি হেসে একটা টেক্সি ডেকে তাতে উঠে রওনা দিলো আমান ।

__________

অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরের এনে দাঁড় করিয়ে, দরজা খট করে বন্ধ করে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর শুরু করে। রিমি তাজ্জব বনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন কিছুক্ষন জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে,
রিমির কাছে গিয়ে,রিমিকে জোড়ে চেপে ধরে বলে,

‘ কেন সাইন করতে গিয়েছিলে তুমি? বলো কেন?’

‘ আপনিই তো সাইন করতে বললেন…

রিমির কথাকে সম্পূর্ন করতে না দিয়ে, অয়ন দাঁত দাঁত চেপে বললো,

‘ ডোন্ট এক্সকিউজ মি রিমিপরী। আমি বললাম বলেই তুমি সাইন করে দিবে? এতো বাধ্য মেয়ে তো তুমি নই। আমার প্রতি কি তোমার কোন অধিকার নেই? এই পরী বলো না? ‘

রিমি নিষ্চুপ। অয়নও থেমে যায়। অতঃপর কিছু একটা ভেবে রিমির কপালের সাথে নিজের কপাল মিশিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

‘ আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাব্বে না রিমিপরী। তুমি হিনা তোমার সাইকো যে বড্ড অসহায়। বড্ড একা।একদম অসম্পূর্ন। ‘

চলবে কী?